Ajker Patrika

বিদেশে বাজেয়াপ্ত অর্থ বাংলাদেশে ফেরত আনতেই হবে: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারপারসন ভ্যালেরিয়াঁ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৭
রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে বৃহস্পতিবার ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে কথা বলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) আন্তর্জাতিক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে বৃহস্পতিবার ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে কথা বলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) আন্তর্জাতিক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিদেশে বাজেয়াপ্ত হওয়া অর্থ উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোকে সমৃদ্ধ করার জন্য নয়; তা অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) আন্তর্জাতিক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ। তিনি বলেছেন, প্রতিবছর বিদেশে যে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়, সেটি কেবল একটি সংখ্যা নয়; ওই অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার হলে বাংলাদেশের জিডিপি আরও বড় হতো। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়ত এবং জনগণের জীবনমান উন্নত হতো।

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ বাংলাদেশে ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন টিআইয়ের এ কর্মকর্তা।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে ভ্যালেরিয়াঁ এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও বোর্ড সদস্য ড. সুমাইয়া খায়ের।

ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ বলেন, দুর্নীতি কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতি করে না, বরং গণতন্ত্রের ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয়। গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের ওপর হামলা, হুমকি ও হয়রানি বাড়তে থাকলে রাষ্ট্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। সহিংসতা ও ভয়ের পরিবেশে কখনোই গণতন্ত্র পুনর্গঠন সম্ভব নয়।

গোপনীয়তাই দুর্নীতির প্রধান চালিকাশক্তি। তাই ‘বেনিফিশিয়াল ওনারশিপ ট্রান্সপারেন্সি’ নিশ্চিত করতে খসড়া আইন দ্রুত পাস করতে হবে।

বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, হয়রানি ও হত্যার ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভ্যালেরিয়াঁ বলেন, সাংবাদিকেরা তথ্য গোপনের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়ছেন। অথচ তাঁদের হয়রানি ও হত্যার ঘটনা বেড়ে চলেছে। ভয় ও সহিংসতার পরিবেশে কখনোই গণতন্ত্র পুনর্গঠন সম্ভব নয়।

অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হয়, তা কেবল অঙ্কের হিসাব দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়। এই অর্থ দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না হওয়ায় জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, বর্তমানে দুর্নীতি দমনে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনো কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত হয়নি। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা। এর ব্যত্যয় ঘটলে যেকোনো সংস্কার উদ্যোগ টেকসই হবে না।’

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণে স্বার্থের দ্বন্দ্ব আছে কি না—সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমি সরকারের কাছ থেকে এ কাজের জন্য কোনো সম্মানী নিইনি। দুদকের জন্মলগ্ন থেকে টিআইবি যুক্ত রয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমরা দুদকের সঙ্গে কাজ করছি। দুদক গঠনে আমাদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। খসড়াটি আমরাই দিয়েছিলাম।

‘সহায়তার জন্য দুদক আমাদের সাধুবাদ দিয়েছে, আবার সমালোচনার জন্য তিরস্কারও করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে টিআইবির সম্পর্কটা “লাভ-হেট” রিলেশনশিপ। আমরা যেমন সব সময় দুদককে সহযোগিতা করেছি, তেমনি তাদের কাজের সবচেয়ে বড় সমালোচক আমরাই। এ দায়িত্ব গ্রহণের আগে আমি অনেক চিন্তাভাবনা করেছি।’ বলেন ইফতেখারুজ্জামান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত