Ajker Patrika

সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে ‘রাজাকার’ আখ্যা দিয়ে ন্যায্যতা নস্যাৎ করা হতো: নাহিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ফাইল ছবি
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ফাইল ছবি

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘গত বছরের ১৪ জুলাই রাতে শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা এবং রাজাকারের নাতিপুতি অভিহিত করে কোটা প্রথার পক্ষে অবস্থান নেন। মূলত এই বক্তব্যের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণের একটি বৈধতা প্রদান করা হয়। কারণ, আমরা সব সময় দেখেছি, সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ন্যায্য আন্দোলন করা হলে, তাদের রাজাকার আখ্যা দিয়ে আন্দোলনের ন্যায্যতা নস্যাৎ করা হতো। সেই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে রাস্তায় নেমে আসে।’

আজ বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় জুলাই-আগস্টে সারা দেশে চালানো হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

এ নিয়ে এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৪৭ জন। মামলার আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক রয়েছেন। অপর আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন।

নাহিদ ইসলাম তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, ‘২০১৮ সালে কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে একটি বড় ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। ওই সময় আন্দোলন দমনে পুলিশ ও ছাত্রলীগ শাহবাগ এলাকায় হামলা করে। হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন আরও তীব্র হয়। একপর্যায়ে শেখ হাসিনা সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন। যদিও আমরা চেয়েছিলাম কোটা সংস্কার। কিছুদিন পর শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনি রাগের বশবর্তী হয়ে কোটা বাতিলের কথা বলেছেন।

‘২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন হয়। আমি সে নির্বাচনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্যানেল থেকে কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। নির্বাচনে অনিয়মের মাধ্যমে আমাদেরকে জিততে দেওয়া হয়নি। বেশির ভাগ পদে ছাত্রলীগকে জিতিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের গণরুম-গেস্টরুম নির্যাতন কালচারসহ অন্যান্য অনিয়ম অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হই। ২০২৩ সালে আমরা গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি নামে একটি ছাত্রসংগঠন প্রতিষ্ঠা করি। ছাত্রদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করা এবং বিভিন্ন অনিয়ম দূর করাই ছিল এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য।’

তিনি বলেন, ‘রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গত বছরের ৫ জুন কোটা বাতিলসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিল করে কোটা প্রথা পুনর্বহাল করেন। ওই দিনই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করি। পরবর্তীতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ হয়। সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে কোটা সংস্কারসংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করার জন্য আলটিমেটাম দিয়েছিলাম। সরকার সাড়া না দেওয়ায় আমরা ১ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে আন্দোলন শুরু করি। ২, ৩, ৪ জুলাই আমাদের আন্দোলনের ধারাবাহিক কর্মসূচি ছিল। আন্দোলন তীব্রতর করার লক্ষ্যে “বাংলা ব্লকেড” নামে ৭ জুলাই সারা দেশে কর্মসূচি ঘোষণা করি। সারা দেশের শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।’

জবানবন্দিতে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ১৭ জুলাই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দিই। তখন ইউজিসি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেয়। সেদিন বিজিবি, পুলিশ ও র‍্যাব সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় ঘেরাও করে ফেলে। গায়েবানা জানাজা শেষে কফিন মিছিল শুরু করলে পুলিশ মিছিলের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সেদিন ডিজিএফআই আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করার এবং সরকারের সঙ্গে সংলাপের জন্য চাপ দেয়।’

তিনি বলেন, ‘১৭ জুলাই রাতে দেশব্যাপী “কমপ্লিট শাটডাউন” কর্মসূচি ঘোষণা করি এবং সারা দেশের সকল শিক্ষার্থী ও সর্বস্তরের জনগণকে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানাই। ১৮ জুলাই সারা দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসে। বিশেষ করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা সেদিন রাজপথে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

‘সেদিন রাতে সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯ জুলাই পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে অনেকে আহত ও নিহত হয়। আমরা বুঝতে পারি, সরকার ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে। কারণ, আমাদের আন্দোলনের এবং আহত ও নিহতদের কোনো খবর কোনো মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছিল না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশসহ ৫ প্রতিবেশীকেই নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করছে ভারত

পাসপোর্ট ছাড়াই ফ্লাইটে ক্যাপ্টেন মুনতাসির, জেদ্দায় আটক

হইচই ফেলেছে ন্যানো ব্যানানা, চ্যাটজিপিটিকে টপকাল জেমিনি

বিজিবির একজন আর্মি অফিসারকে এখনো গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না: নাহিদ

জুলাই সনদ কার্যকরে সংবিধান আদেশ জারি ও বৈধতায় গণভোটের সুপারিশ আইন বিশেষজ্ঞদের

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত