Ajker Patrika

ভোটের মাঠে জোটের আলাপ

  • তিন দলের একই কর্মসূচিতে জোটের আলাপ চাঙা।
  • বিএনপি ও জামায়াত ভাবছে সমমনাদের নিয়ে।
  • যদিও দলগুলো বলছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের সময় আসেনি।
  • জোট না করে স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার কথা বলছে এনসিপি।
রেজা করিম অর্চি হক, ঢাকা 
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১: ২২
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ঘোষণা অনুযায়ী পাঁচ মাস পর আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। সে হিসাবে ভোটের তফসিল ঘোষণার সময় হাতে আছে আর মাত্র তিন-সাড়ে তিন মাস। কিন্তু জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও ভোটের পদ্ধতিসহ কিছু বিষয় নিয়ে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এখন পরিষ্কার দুই ধারায় বিভক্ত। এ বিষয়ে আলোচনা ও দর-কষাকষির মধ্যে একই দাবি ও কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ তিনটি দল।

ভোটের মাঠে তাই হঠাৎ করে চাঙা হয়েছে জোটের আলাপ। তবে কি দলগুলো সমমনাদের সঙ্গে নিয়ে শক্তি বাড়াতে চাইছে? ভোট সামনে রেখে দলগুলো কি জোট গড়ার চেষ্টায় আছে?

গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগবিহীন ভোটের মাঠে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে প্রধান দল হয়ে উঠেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। মূলত এই তিন দলকেই ভোটের মাঠের প্রধান শক্তি হিসেবে ধরা হচ্ছে, আর নির্বাচনী জোটের আলাপও ঘুরছে তাদের কেন্দ্র করে।

বিগত সরকারের সময় সমমনা দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে ছিল বিএনপি। সেই দলগুলোকে নিয়ে এখনো এক ছাতার নিচেই আছে দলটি। পাশাপাশি অন্য আরও দলকে কীভাবে এই ছাতার নিচে আনা যায়, সে নিয়ে ভেতরে-ভেতরে চেষ্টা চলছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

একইভাবে জামায়াতে ইসলামীও তাদের সমমনাদের সঙ্গে নিয়ে যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। তবে নির্বাচন ঘিরে দলগুলোর সম্মিলিত যাত্রা জোট-মোর্চায় গড়াবে নাকি, অন্য কোনো কাঠামোয় রূপ নেবে, তা এখনো ঠিক হয়নি বলে জানিয়েছেন দলগুলোর নেতারা।

বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোকে সঙ্গে নিয়েই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে বিভিন্ন সময়ে। এসব আলোচনার ভিত্তিতেই বিএনপি ও সমমনারা একসঙ্গে নির্বাচন করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। তবে জোট হবে, নাকি আসন সমঝোতা হবে—সে নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এক্ষেত্রে অন্তত অর্ধশত আসন ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স গতকাল মঙ্গলবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, জোটের বিষয়ে এখনো বলার সময় আসেনি। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর এ বিষয়টি দৃশ্যমান হবে। তবে সব ধরনের চিন্তা মাথায় রেখে কাজ করতে হয়, বিএনপি তা-ই করছে।

বিএনপির সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়ে সমমনা দলের নেতাদের অনেকে বলেছেন, নির্বাচনে তাঁরা একসঙ্গে কাজ করবেন। এ নিয়ে পারস্পরিক আলোচনা চলছে। তবে এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে জোট-মোর্চা হবে, নাকি আসন সমঝোতা হবে—এসব নিয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করব। এরপর এ বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে কথা বলব, যুগপৎ আন্দোলনে আরও যারা শরিক রয়েছে বা প্রগতিশীল দল রয়েছে, তাদের সঙ্গেও আলোচনা করব।’

নির্বাচনে জয়ের পাল্লা ভারী করতে ইসলামপন্থী দলগুলোকে নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী জোট করার আলাপ এর মধ্যেই বেশ পুরোনো হয়ে গেছে। দলটির সূত্র বলছে, এককভাবে নির্বাচন করে বড় জয় পাওয়া বর্তমান বাস্তবতায় বেশ দুরূহ। এ বাস্তবতা মেনে নিয়েই ইসলামপন্থী দলগুলোকে শেষ পর্যন্ত কাছে রাখার চেষ্টা করছে জামায়াত। দীর্ঘদিন ধরে দলগুলোর সঙ্গে চলছে আলোচনা ও নিবিড় যোগাযোগ। এর মধ্যেই অভিন্ন দাবিতে রাজপথে পৃথক কর্মসূচি দিয়েছে জামায়াত এবং আরও দুটি ইসলামপন্থী দল—ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও খেলাফতে মজলিস। এভাবেই একসঙ্গে থেকে মাঠ গরম রেখে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

জোট গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘এটা (নির্বাচনী জোট) আরও পরের কথা। জুলাই চেতনার সঙ্গে থাকা সব দলের সঙ্গে আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করছি।’

এদিকে নির্বাচনী জোট নিয়ে বেশি না ভেবে আপাতত সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় রয়েছে এনসিপি। জোটে যাওয়ার আগে নিজেদের সাংগঠনিক ভিত্তি আরও মজবুত করতে চাইছেন দলটির নেতারা।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো জোটের কথা আমরা এখনো ভাবছি না। আমরা এখন আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং ভিত্তি শক্ত করতে চাচ্ছি। আপাতত আমাদের মূল লক্ষ্য, ঢাকা এবং সারা দেশে সাংগঠনিক ভিত্তি সুদৃঢ় করা।’

তবে এনসিপিসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনী জোটের বিষয়ে দলের নেতাদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা চলছে। একটি অংশ জামায়াতের সঙ্গে জোট বাঁধতে আগ্রহী। বাম ঘরানার আরেকটি অংশ আবার জামায়াতের মতো ইসলামপন্থী দলের সঙ্গে জোট চায় না। তারা এনসিপির স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করতে চায়। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা দুই ছাত্র উপদেষ্টার একজন বিএনপির সঙ্গে এনসিপির জোট চান বলে দলটির ভেতর থেকে শোনা যাচ্ছে।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সে অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করার কথা বলছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু জুলাই সনদের বিষয়টি সুরাহা হয়নি। সনদের কাঠামো ঠিক হয়ে গেলেও গোল বেধেছে বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে। নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দাবি করছে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) আরও কয়েকটি দল। অন্যদিকে পিআর পদ্ধতি নিয়েও বিএনপির সঙ্গে মতভিন্নতা চলছে দলগুলোর। এসব বিষয় নিয়ে যখন আলোচনা চলছ, তখন দাবি আদায়ে রাজপথে কর্মসূচি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ তিনটি দল। আবার এই কর্মসূচি ঘিরে পাল্টা বক্তব্য আসছে বিএনপির পক্ষ থেকেও। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে একমত থাকলেও আলোচনার মধ্যেই রাজপথের কর্মসূচির বিষয়ে দলটির সঙ্গে দ্বিমত রয়েছে এনসিপির।

গতকাল গুলশানের বাসায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ প্রস্তুত হয়ে গেছে। এখন তা স্বাক্ষরের অপেক্ষার আছে। বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে আন্দোলন বা রাজপথে নামা অনুচিত। নির্বাচনকে বিলম্বিত অথবা বাধাগ্রস্ত করার জন্য যেকোনো কৌশলকে দেশের জনগণ প্রতিহত করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন বিএনপির এই নেতা।

এ প্রসঙ্গে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘জামায়াতের যুগপৎ আন্দোলনে আমরা আপাতত যাচ্ছি না। কিন্তু তাদের একটি দাবির সঙ্গে আমরা সহমত, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। আরেকটি দাবি হচ্ছে, জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, সেটাও আমরা সমর্থন করি। তবে আলোচনা চলাকালে রাস্তায় আন্দোলন স্ববিরোধী অবস্থান সৃষ্টি করতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‎ডিভোর্সের পরও জোর করে রাতযাপন, বর্তমান স্বামীকে নিয়ে প্রাক্তন স্বামীকে হত্যা ‎

৯ পুলিশ পরিদর্শক বাধ্যতামূলক অবসরে

গণবিক্ষোভ আতঙ্কে মোদি সরকার, ১৯৭৪-পরবর্তী সব আন্দোলন নিয়ে গবেষণার নির্দেশ

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের ‘সন্ত্রাসী খেল’ ফাঁস করে দিলেন জঙ্গিগোষ্ঠী জইশের সদস্য

নিজের বিচারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি কলেজশিক্ষকের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত