Ajker Patrika

আইভীসহ তিন জনের দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আইভীসহ তিন জনের দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ তিন জনের দুর্নীতির অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

নাসিকের সাবেক মেয়র ছাড়াও অভিযুক্ত অন্য দুজন হলেন- নোয়াখালী ৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আয়শা ফেরদৌস ও যশোর ৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রনজিত কুমার রায়। 

আকতারুল ইসলাম জানান, দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের অনুসন্ধানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা থাকায় তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

দুদকের প্রতিবেদনে আইভীর মালিকানাধীন ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সাততলা বাড়ি, ১৮ একর জায়গা দখল শেখ রাসেল পার্ক নির্মাণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার ভাইদের নামে কোটি কোটি টাকা অপ্রদর্শিত আয় করেছেন মর্মে উল্লেখ করা হয়। 

অভিযোগের বিষয়ে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে যে সাততলা বাড়ির কথা দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে এটাই সেই বাড়ি। কিন্তু দুঃখের বিষয় তারা জানেন না বাড়িটি সাত তলা নয়, চারতলা। দুদক অনেক কম বলেছে, শামীম ওসমান ভাই বলেন এটা শত কোটি টাকার হোয়াইট হাউস। 

শত কোটি টাকার বাড়ির রহস্য জানতে চাইলে সাবেক এই মেয়র বলেন, বাড়িটি আমার না, এটা আমাদের পৈত্রিক বাড়ি। আমাদের ভাই বোন সবার। আমি ভাইদের সঙ্গে থাকি। বাবার তিনটি জমি বিক্রি করে বাড়িটি করেছে ভাইয়েরা। 

তিনি আরও বলেন, রহমতুল্লাহ ইনস্টিটিউট ভেঙে দখল, ১৮ একর জায়গা দখল করে শেখ রাসেল পার্ক তৈরির অভিযোগটি করেছে, সেটিও সত্য। জায়গাটি আমি নারায়ণগঞ্জের মানুষকে নিয়ে দখল করেছি। দখল করে কাদের জন্য একটি পার্ক করে দিয়েছি। জায়গাটা আগে মাদকের আখড়া ছিল। একইভাবে রহমতুল্লা ইনস্টিটিউট সরকারের দুটি জায়গা দখল করে ব্যবসা করত, এটা ভেঙে পার্ক করে দিয়েছি মানুষের জন্য। 

তার দুই ভাই আলী রেজা রিপন ও আহমেদ আলী রেজা উজ্জ্বলের বিরুদ্ধেও অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইভী বলেন, আমি থাকতে আমার ভাইয়েরা কখনো সিটি করপোরেশনে যাননি। তারা কতটা সহজ সরল এই শহরের মানুষ সবাই জানে। তবু দুদক চাইলে আমি তাদের ফেস করব। গত ২০১৭ সালে তদন্ত করে তারা কিছুই পায়নি, আবার পিছু লেগেছে। 

সূত্র জানায়, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ রয়েছে আইভীর  আয়কর নথিতে। তবে প্লটটি তিনি একটি মাদ্রাসাকে দান করেছেন। 

অন্যদিকে নোয়াখালী-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আয়শা ফেরদৌসের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে। উল্লেখ যোগ্য সম্পদের মধ্যে রয়েছে হাতিয়াববাজারে বহুতল ভবন, ভূঁইয়ার হাট নামক স্থানে ৩তলা বাড়ি, পুশালী বাজারে ৪তলা মার্কেট। তার স্বামীর নামেও বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের অর্জনের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। 

এছাড়া রনজিত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সক্ষমতার অপব্যবহারের করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। নিজ নামে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ও স্ত্রীর নামে ৭০ হাজার টাকা ও ১৫ হাজার টাকা মূল্যের ৫ তোলা স্বর্ণ। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৮ হাজার টাকা ও স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা। 

অভিযোগ রয়েছে, তার ছেলে রাজিব কুমার রায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ শতাংশ হারে কমিশন গ্রহণ করতেন। তার নিজ ও ছেলের নামে ভারতের সল্টলেক এলাকায় বাড়িও রয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জমি দখল, মানিলন্ডারিং, নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজিসহ নানাবিধ দুর্নীতির মাধ্যমে তারা দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন। 

তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার মোবাইলে কল দিলেও নোয়াখালী-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আয়শা ফেরদৌস ও যশোর-৪ আসনের সাবেক এমিপ রনজিত কুমারকে পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করলেন প্রাথমিক শিক্ষকেরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ সোমবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে অর্থ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন শিক্ষকদের নেতা খায়রুন নাহার লিপি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে অর্থ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন শিক্ষকদের নেতা খায়রুন নাহার লিপি। ছবি: আজকের পত্রিকা

একাদশ গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। আজ সোমবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে অর্থ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে এ ঘোষণা দেন তাঁরা।

সভা শেষে আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর মোর্চা ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের একাদশ গ্রেডে বেতন দেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, এমনটা কখনো দেয়নি। তাই আমরা আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করব। শহীদ মিনারে গিয়ে নেতারা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। আগামীকাল থেকে আমরা ক্লাসে ফিরে যাব।’

গত শনিবার থেকে দশম গ্রেডের দাবিতে শিক্ষকেরা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে তাঁরা গতকাল রোববার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন। দশম গ্রেডে বেতন, চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছিলেন তাঁরা।

তৃতীয় দিনের অবস্থান ও দ্বিতীয় দিনের কর্মবিরতি শেষে অর্থ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা শেষে তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন।

শিক্ষকদের ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতা প্রসঙ্গে অর্থসচিব বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে অর্থ বিভাগে একটি প্রস্তাব করলে অর্থ বিভাগ বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতির বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান বিধিমালার আলোকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেবে।

এর আগে গতকাল রোববার সারা দেশে কর্মবিরতি ও শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির পর সন্ধ্যায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই বৈঠকে আশানুরূপ সমাধান না এলেও প্রথমে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন শিক্ষকেরা। তবে গভীর রাতে ফের কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতারা।

এ ঘোষণার পর আজ দেশের প্রায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কোটালীপাড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ওলিউল্লাহ হাওলাদার বলেন, ‘আমরা উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন সফল করার জন্য শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বিরতিতে রয়েছি।’ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্ত বলেন, ঢাকার আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে কোটালীপাড়ায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি করছেন শিক্ষকেরা। তবে তাঁরা বিদ্যালয়েই আছেন।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. ময়নুর রহমান মিলন জানান, প্রাথমিকের কেন্দ্রীয় শিক্ষক সংগঠনগুলোর ঘোষিত কর্মসূচি সফল করার জন্য গাইবান্ধায় সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলছে। তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন হলেই তাঁরা পুনরায় ক্লাসে ফিরবেন।

এই তিন দফা দাবিতে গত শনিবার সকাল থেকে শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। ওই দিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তাঁরা ‘কলমবিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া শুরু করেন। বিকেল ৪টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসে কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায় শিক্ষকদের। এ সময় দেড় শতাধিক শিক্ষক আহত হওয়ার পাশাপাশি পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষক নেতারা। এরপর ওই দিন রাতেই শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি দেশজুড়ে কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের বিধান কেন অবৈধ নয়—জানতে চেয়ে হাইকোর্টের রুল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাদ দেওয়া-সংক্রান্ত বিধান কেন আইনগত কর্তৃত্ব-বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ-সংক্রান্ত করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মো. আসিফ হাসানের বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।শিক্ষাসচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব এবং সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

গত ২৮ আগস্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫-এর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছিল। এর দুই মাসের মধ্যে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায়’ সংশোধন আনা হয়। সংশোধিত বিধিমালায় সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাদ দেওয়া হয়। সংশোধিত বিধিমালা গেজেটে ২ নভেম্বর প্রকাশ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

পরে সংশোধিত ওই বিধিমালার গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারওয়াত সিরাজ শুক্লা। রিটের পক্ষে শুক্লা নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাজারে থাকা সব হ্যান্ডসেটের বৈধতা দিতে এনবিআরকে বিটিআরসির চিঠি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাজারে থাকা অননুমোদিত সব মোবাইল হ্যান্ডসেটের বৈধতা দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। চিঠিতে মোবাইল ফোন সেট ও ফোন সেট উৎপাদনের যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক এবং দেশে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের ভ্যাট কমানোর কথাও বলা হয়েছে।

৪ নভেম্বর বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিনুল হক স্বাক্ষরিত চিঠিটি এনবিআর চেয়ারম্যানকে পাঠানো হয়। একই চিঠি অর্থসচিবের কাছেও পাঠানো হয়েছে।

আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে দেশে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে বিটিআরসির এমন পদক্ষেপের তথ্য সামনে এল। এনইআইআর কার্যকর হলে ১৬ ডিসেম্বর থেকে চালু হওয়া প্রতিটি হ্যান্ডসেট নিবন্ধিত হতে হবে। না হলে সেগুলো নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। চাইলেই একজনের সিম কার্ড আরেকজনের হ্যান্ডসেটে ব্যবহার করা যাবে না। তবে ১৬ ডিসেম্বরের আগপর্যন্ত নেটওয়ার্কে ব্যবহার হতে থাকা ফোনগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধন হবে। বিটিআরসি চাইছে, ব্যবহার হতে থাকা ফোনগুলোর পাশাপাশি যেগুলো ইতিমধ্যে দেশের বাজারে প্রবেশ করেছে, সেগুলোকেও বৈধ করা হোক।

বিটিআরসির চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের বাজারে দীর্ঘ সময় ধরে একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক স্মার্টফোন হ্যান্ডসেট অবৈধ পথে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এই খাতের সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাজারে যে সংখ্যক অননুমোদিত হ্যান্ডসেট রয়েছে, তার একটি বিশাল অংশ আগামী ১৬ ডিসেম্বর এনইআইআর সিস্টেম চালু হলে অবিক্রীত থেকে যাবে। পরবর্তী সময়ে এই হ্যান্ডসেটগুলো নেটওয়ার্কে ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না। বিশাল আর্থিক লোকসান থেকে রক্ষা পেতে এই খাতের ব্যবসায়ীরা বিটিআরসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে। কারিগরি দিক বিবেচনায় অননুমোদিত হ্যান্ডসেটগুলোর আইএমইআই (ইউনিক কোড, যা প্রতিটি মোবাইল ফোনকে শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়) বিটিআরসির ডেটাবেইসে সংযুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। অননুমোদিত হ্যান্ডসেটগুলোর তথ্য বিটিআরসির ডেটাবেইসে সংযুক্ত হলে সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শুল্কায়নের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতামতসহ সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।

চিঠিতে মোবাইল ফোন ও ফোন উৎপাদনের যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক এবং দেশে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের ভ্যাট কমানোর বিষয়ে বলা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন এবং আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আমদানি শুল্ক এবং উৎপাদিত পণ্যের ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) বেশি। তাই মোবাইল হ্যান্ডসেটের দাম অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। তাই এ ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যকরী ভূমিকার মাধ্যমে শুল্কহার যৌক্তিকভাবে পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ রয়েছে।

চিঠিতে জানানো হয়, বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানি করা মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটের আমদানি শুল্ক প্রায় ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ। এনইআইআর সিস্টেম চালু হলে দেশে অবৈধ পথে হ্যান্ডসেট আনা বন্ধ হবে। ফলে দেশে মোবাইলের উৎপাদন বাড়বে। একই সঙ্গে যেসব ব্র্যান্ডের বা মডেলের মোবাইল হ্যান্ডসেট দেশে উৎপাদন হয় না, সেগুলোর বৈধভাবে আমদানির পরিমাণ বাড়বে। তাই মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানির ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রযোজ্য উচ্চ আমদানি শুল্ক কমিয়ে আনা প্রয়োজন বলে মনে করে কমিশন।

চিঠিতে বিটিআরসি বলেছে, ‘বাংলাদেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন এবং আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আমদানি শুল্ক এবং উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজন কর কমানোর জন্য যদি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, তবে তা এমনভাবে সমন্বয় করতে হবে যাতে দেশের অভ্যন্তরে স্থাপিত মোবাইল হ্যান্ডসেট শিল্প এবং এ খাতে কর্মরত সকলের স্বার্থ রক্ষা হয়।’

সার্বিক দিক বিবেচনায় তিনটি বিষয়ে এনবিআরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানিয়েছে বিটিআরসি। এগুলো হলো ইতিমধ্যে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা অননুমোদিত হ্যান্ডসেটগুলো বিটিআরসির ডেটাবেইসে সংযুক্ত করা হলে সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শুল্কায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত, দেশের অভ্যন্তরে কারখানায় মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন এবং বিদেশ থেকে হ্যান্ডসেট আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর ব্যবস্থা এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা ও দেশের অভ্যন্তরে তৈরি মোবাইল সেটের শুল্কের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

বিটিআরসির উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. জাকির হোসেন খান এনবিআরের চেয়ারম্যানকে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি এ বিষয়ে এর বেশি কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিইসির সঙ্গে বিজিবি মহাপরিচালকের বৈঠক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
এএমএম নাসির উদ্দিন ও বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী । ছবি: সংগৃহীত
এএমএম নাসির উদ্দিন ও বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী । ছবি: সংগৃহীত

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।

আজ সোমবার সকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সিইসির কার্যালয়ে ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেন তিনি। এ সময় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

তবে কী বিষয় নিয়ে বিজিবি মহাপরিচালক সিইসির সঙ্গে বৈঠক করেন, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত