Ajker Patrika

রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগে চাপ, বঙ্গভবন ঘিরে রাতভর উত্তেজনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৮: ৪৯
রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগে চাপ, বঙ্গভবন ঘিরে রাতভর উত্তেজনা

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়েছে রাজপথে। এ দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবন অবরোধ করা হয়। এ ছাড়া রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন।

বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এ সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা, সংবিধান বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে।

এর আগে বিকেলে ইনকিলাব মঞ্চ, রক্তিম জুলাই-২০২৪, সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রথমে তারা রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়। পরে সরকারের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাসে বিক্ষোভকারীদের একাংশ কর্মসূচি স্থগিত করলেও আরেক পক্ষ বিক্ষোভ চালিয়ে যায়।

এই অবস্থায় রাতে বঙ্গভবনের আশপাশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বঙ্গভবনের সামনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও কিছু পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছার চেষ্টা করেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের একটি অংশ পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ভ্যানের ওপরও হামলা চালানো হলে পুলিশ সদস্যরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তখন বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন।

একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা বঙ্গভবনের ভেতরে চলে যান। হামলার মুখে কয়েকজন পুলিশ সদস্য অস্ত্র ফেলে চলে যান। পরে আন্দোলনকারীরা অস্ত্রগুলো সেনাবাহিনীর কাছে জমা দেন। এ সময় সেনাসদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলে নিরাপত্তা ব্যারিকেডে কড়া অবস্থান নেয় সেনাবাহিনী।

আহতদের মধ্যে সাংবাদিকসহ পাঁচজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন শ্যামপুর বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বিশাল (২৪), হকার শফিকুল ইসলাম (৪৫), বার্তা ২৪ এর স্টাফ রিপোর্টার রাজু আহমেদ (২৫), ভিডিও জার্নালিস্ট রিপন রেজা (২৮), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী আরিফ খান (২০)।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস আলম বঙ্গভবনের সামনে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সারজিস বলেন, ‘আমরা আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিনকে সময় দিয়েছি। এর মধ্যে এই ঘটনার সুরাহা হবে।’

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, পরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে কে আসবে। বুধ ও বৃহস্পতিবারের মধ্যেই নতুন রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করা হবে।’

সবাইকে আন্দোলন প্রত্যাহার করে ঘরে ফেরার আহ্বান জানান ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তবে রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কিছু বিক্ষোভকারী সেখানে অবস্থান করছিলেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। তখন এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু কয়েক দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তিনি পাননি। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন এবং এর মাধ্যমে তাঁর শপথ ভঙ্গ হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে আইন উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে সরকার একমত।

এদিকে রাষ্ট্রপতির ওই মন্তব্যের পর বিক্ষোভ শুরু হয় রাজপথে। কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। তারা দ্রুত রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি তোলে।

ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা ৩টার দিক থেকে বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে দলে দলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করেন ছাত্র-জনতা। শহীদ মিনারে অবস্থান ও সমাবেশ শেষে বিকেলে ৫টার দিকে শহীদ মিনার থেকে একটি মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়।

এর আগে শহীদ মিনারে কর্মসূচিতে ৫ দফা দাবি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে এই সপ্তাহের মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে; অবিলম্বে সংবিধান বাতিল করে গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে নতুন সংবিধান লিখতে হবে; ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে এই সপ্তাহের মধ্যে নিষিদ্ধ করতে হবে; এই সপ্তাহের মধ্যে জুলাই বিপ্লবের আলোকে ‘প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক’ ঘোষণা করতে হবে। এ ছাড়া গণতন্ত্রকামী ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ চলবে এবং ২০১৪ সাল, ২০১৮ সাল এবং ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত যথাক্রমে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। এই তিন নির্বাচনে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং তাঁরা যেন কখনো বাংলাদেশে নির্বাচন করতে না পারেন, সে জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘যে শহীদ মিনার থেকে আমরা ১ দফা দাবি তুলেছিলাম, সেই শহীদ মিনার থেকে আমরা ৫ দফা ঘোষণা দিচ্ছি। এই সপ্তাহের মধ্যে আমাদের ৫ দফা দাবি না মানা হলে আমরা আবার রাজপথে নামব।’

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যে ছাত্রলীগের হাতে মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। 

পদ ছাড়তে রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
বিকেলে রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবিতে বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন ছাত্র-জনতা। বঙ্গভবনের সামনে ইনকিলাব মঞ্চ, রক্তিম জুলাই-২০২৪, সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। নিরাপত্তার জন্য বঙ্গভবনের সামনে ব্যারিকেড, সাঁজোয়া যান ও জলকামান রাখা হয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা।

দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল শুরু করে বঙ্গভবনের দিকে যাত্রা শুরু করে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটি। হাইকোর্ট মাজার মোড়ে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে বঙ্গভবনের সামনের মোড়ে অবস্থান নেয় তারা।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, বঙ্গভবন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের লোকজন দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাই কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কিছু যাতে না ঘটে, সে জন্য পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র‍্যাবের সদস্য রাখা হয়।

বঙ্গভবনের সামনে কয়েক ঘণ্টা আন্দোলনের পর সন্ধ্যায় উপদেষ্টাদের আশ্বাসে আন্দোলনকারীদের একাংশ ইনকিলাব মঞ্চ তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে।

ইনকিলাব মঞ্চ কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও বঙ্গভবনের সামনে রয়ে যান রক্তিম জুলাই-২০২৪ সংগঠনের সদস্যরা। তাঁরা রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।

আন্দোলনকারীরা বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার দোসর। তাঁর এমন বক্তব্যের পর তিনি রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারেন না। তাই তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে। তিনি যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ না করেন, তাহলে তাঁকে কীভাবে পথ থেকে সরাতে হয়, তা ছাত্র-জনতা জানেন। 

দুই দলের বিক্ষোভ 
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীর বিজয়নগরে বিক্ষোভ মিছিল করে এবি পার্টি। মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসে গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী চক্রান্ত করার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।

এরপর একই এলাকায় লাঠি মিছিল করে গণঅধিকার পরিষদ। এ ছাড়া সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের সামনে পদত্যাগের দাবিতে রাষ্ট্রপতির কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ। 

ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে গাইবান্ধা, পিরোজপুর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গতকাল দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে মো. সাহাবুদ্দিন বক্তব্য দিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ এবং সর্বস্তরের আওয়ামী সন্ত্রাসী-কুশীলবদের বিচার করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট ঘোষণা দিতে চাই, কোনো অবস্থাতেই আর কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র হতে দেওয়া হবে না।’

একই দাবিতে গতকাল বিকেলে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিক্ষোভ মিছিল বের করে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ করে তারা। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তিনিও আওয়ামী লীগের দোসর। শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়ে তিনি দুই রকম কথা বলেছেন। আমরা তাঁর অপসারণ চাই। একই সঙ্গে ছাত্রলীগ ১৫ বছর সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে। তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।’

পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল বের হয়ে শহরে বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে।

দুপুরে বরিশালে নগরের অশ্বিনীকুমার টাউন হলের সামনে বিক্ষোভ ও লাঠি মিছিল করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ব্যানারে বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। একই দাবিতে বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, চিকেনস নেকের কাছে নতুন তিন গ্যারিসন

‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’

নুর না মামুন—বিতর্কে আবারও সংঘর্ষে বিএনপি–গণঅধিকার, আহত ৩১

১০-২০ কোটি টাকা না থাকলে নির্বাচন করা কঠিন: আসিফ মাহমুদ

রিজভীর পা ছুঁয়ে সালাম করা ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল প্রত্যাহার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মামলার তদন্ত: অভিযোগপত্রে মৃতদের নাম থাকলে তদন্ত কর্মকর্তাকে শাস্তি

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা 
মামলার তদন্ত: অভিযোগপত্রে মৃতদের নাম থাকলে তদন্ত কর্মকর্তাকে শাস্তি

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক সহিংসতার মামলার অভিযোগপত্রে মৃত, নিখোঁজ ও অনিবাসী ব্যক্তির নাম এবং বিচারে তাঁদের সাজা হওয়ার কিছু নজির রয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পরও কিছু মামলায় মৃত ব্যক্তিদের আসামি করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগপত্রে মৃত, অনাবাসী ব্যক্তির নাম ঠেকাতে পুলিশ সদর দপ্তর ৯টি নির্দেশনা দিয়েছে।

সূত্র বলেছে, নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো মৃত ব্যক্তিকে আদালতে দেওয়া চূড়ান্ত অভিযোগপত্রে বা তদন্ত প্রতিবেদনে আসামি করা হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁদের শাস্তি পেতে হবে।

অভিযোগপত্রে মৃত, নিখোঁজ ও ঘটনার সময় প্রবাসী ব্যক্তিদের নাম থাকাকে তদন্তে ঘাটতি, গাফিলতি বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, গত (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ) নির্বাচনের আগে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির চাপের কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদা বলেন, মৃত ও অনিবাসী মানুষকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেওয়া শুধু প্রশাসনিক ত্রুটি নয়, এটি আইনি প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থার সংকট তৈরি করে। পুলিশ সদর দপ্তরের নজরদারির উদ্যোগ ইতিবাচক হলেও বাস্তবে কতটা পরিবর্তন আসবে, সময়ই তা বলে দেবে।

পুলিশের সূত্র জানায়, বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, হামলা, লুট, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগে সারা দেশের থানায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর অসংখ্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামির তালিকায় মৃত ব্যক্তির নামও দিয়েছেন বাদীরা। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশ। এ জন্যই পুলিশ সদর দপ্তর ইউনিটগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের রিসার্চ, প্ল্যানিং ও ইনোভেশন বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) আহমেদুল কবীর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সম্প্রতি পুলিশের সব ইউনিটকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনার ৩ নম্বর ক্রমিকে বলা হয়েছে, ভুয়া, গায়েবি মামলায় অনিবাসী, মৃত, নিরাপরাধ নাগরিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়টি প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য হবে। কোনো পুলিশ সদস্য যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কাউকে এ ধরনের মামলায় হয়রানি করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চাকরির জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন এক মাসের মধ্যেই দিতে হবে।

বাংলাদেশের ফৌজদারি আইনে স্পষ্ট বলা আছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি মারা গেলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলারও নিষ্পত্তি হয়ে যায়। কিন্তু পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানায়, ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন থানার তদন্তকারী কর্মকর্তারা অন্তত ১১ জন মৃত ব্যক্তির নাম অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী। এ ছাড়া অভিযোগের ঘটনার সময় নিখোঁজ বা প্রবাসে ছিলেন এমন বেশ কয়েকজনের নামও রয়েছে আদালতে দেওয়া কিছু অভিযোগপত্রে। তাঁরা মারা যাওয়ার, নিখোঁজ ও প্রবাসে থাকার বিষয়টি পুলিশ অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেনি। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগপর্যন্ত ১১ মৃত ব্যক্তির নামে অভিযোগপত্র দাখিল ও সাজা হওয়ার ঘটনা ঘটে।

যেমন রাজধানীর নিউমার্কেট থানার ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন মো. আবু তাহের দাইয়া। তাঁর মৃত্যুর চার বছর পর ২০২৩ সালের নভেম্বরে একটি রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে ঢাকার একটি আদালত দেড় বছরের কারাদণ্ড দেন। তাঁর বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেন আদালত। অভিযোগপত্র ও মামলার নথিতে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখ করেনি পুলিশ। বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর বনানী থেকে নিখোঁজ হন। তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জাকির ২০১৫ সালের এপ্রিলে নিখোঁজ হন। তাঁদের বিরুদ্ধেও পুলিশ অভিযোগপত্র দেয়। সেই অভিযোগপত্র ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এ দুজনের সাজাও হয়। এসব ঘটনায় পুলিশের তদন্তপ্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন ওঠে।

ফৌজদারি অপরাধ বিশেষজ্ঞ এস এম শাহজাহান বলেন, এমন ঘটনায় পুলিশের তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে সাধারণ মানুষের চরম আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। ভুলক্রমে মৃত মানুষের নাম অভিযোগপত্রে উঠে আসা কেবল প্রশাসনিক ত্রুটি নয়, এটি তদন্তপ্রক্রিয়ার গভীর অব্যবস্থাপনার ইঙ্গিত।

এদিকে জুলাই-আগস্টের হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে করা কিছু মামলায় মৃত ব্যক্তিদের আসামি করার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ জানায়, ফৌজদারি মামলায় নিষ্পত্তির আগে আসামির নাম প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্রে এমন ব্যক্তিদের অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা যায়। আর অভিযোগপত্রে নাম থাকলে মামলা নিষ্পত্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এমন কোনো কোনো মামলার বাদী ভুল স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গাজীপুরের শ্রীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে কলেজছাত্র আসীর ইনতিশারুল হক (২১) হত্যার ঘটনায় ওই বছরের ৬ অক্টোবর শ্রীপুর থানায় মামলা করেন তাঁর বাবা। ওই মামলায় অন্যদের সঙ্গে আবুল কালাম ওরফে কালা মিয়ার (৫৫) নামও আসামি হিসেবে দেওয়া হয়। তবে তিনি মামলা করার আগেই ২৫ সেপ্টেম্বর মারা যান। এ নিয়ে ক্ষোভ জানান মৃত কালামের ছেলে আলমগীর হোসেন।

এ প্রসঙ্গে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, নাম দেওয়ার বিষয়টি একমাত্র বাদীর এখতিয়ার। বাদীর দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু হয়। মৃত ব্যক্তির নাম মামলায় থাকলে তদন্ত করে বাদ দেওয়া হবে।

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় একটি হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে ২০২১ সালের ১৮ মার্চ মারা যাওয়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চকবাজারের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর সায়িদ গোলাম হায়দার মিন্টুকে। ২০২৪ সালের ৪ আগস্টের একটি হত্যার অভিযোগে চলতি বছরের ২২ মার্চ এনামুল হক নামের এক ছাত্রপ্রতিনিধি বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা করেন। এই মামলার আসামির তালিকায় রয়েছে জাফর আলমের নাম। জাফর আলম মারা গেছেন বলে জানান তাঁর ছেলে সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, তাঁর বাবা জাফর আলম ঈদগাঁও উপজেলার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।

পুলিশের সূত্র জানায়, মামলায় মৃত, নিখোঁজ ও অনিবাসী ব্যক্তির নাম থাকলেও অভিযোগপত্রে যেন না থাকে সে জন্যই পুলিশ সদর দপ্তর এই উদ্যোগ নিয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, বড় ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার পর দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার চাপ থাকে তদন্ত কর্মকর্তাদের ওপর। এই তাড়াহুড়োয় যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ কম থাকে। এতে ‘তালিকা-নির্ভর’ ও ‘কপি-পেস্ট’ তথ্য ব্যবহার করা হয়। ফলে মৃত বা অনুপস্থিত ব্যক্তির নাম ঢুকে যায় অভিযোগপত্রে।

সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই ভুলগুলোকে দুর্ঘটনা বলা যায় না। তদন্তে গাফিলতি বা অসততা আছে কি না, তা সদর দপ্তরের অভ্যন্তরীণ তদন্তে বের করা দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, চিকেনস নেকের কাছে নতুন তিন গ্যারিসন

‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’

নুর না মামুন—বিতর্কে আবারও সংঘর্ষে বিএনপি–গণঅধিকার, আহত ৩১

১০-২০ কোটি টাকা না থাকলে নির্বাচন করা কঠিন: আসিফ মাহমুদ

রিজভীর পা ছুঁয়ে সালাম করা ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল প্রত্যাহার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: আইনি প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার

  • চলতি সপ্তাহের মধ্যে দলগুলো ঐকমত্যে না এলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে
  • আদেশ জারির প্রস্তুতি নিতে আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ
  • জামায়াতে ইসলামীর আলোচনার আমন্ত্রণে সাড়া দিচ্ছে না বিএনপি
তানিম আহমেদ, ঢাকা 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর তীব্র মতভিন্নতায় জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে জটিল পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দলগুলোর এমন বিভেদ চলতে থাকলে আগামী দিনে জাতীয় নির্বাচনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়বে সরকারের জন্য। এমনটি যাতে না হয়, সে জন্য দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন প্রধান উপদেষ্টা। চলতি সপ্তাহের মধ্যে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না এলে সরকারকেই নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তখন আদেশ জারির ক্ষেত্রে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সে জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে গত ২৭ অক্টোবর দুটি সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এরপরই গণভোট এবং নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) ইস্যুতে বিপরীত অবস্থানে চলে যায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। এমন অবস্থায় ৩ নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক হয়। যেখানে দলগুলোকে আলোচনা করে সাত দিনের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে অনুরোধ জানানো হয়। এরই মধ্যে পাঁচ দিন কেটে গেছে, কিন্তু দলগুলোর মধ্যে আলোচনায় বসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আলোচনার জন্য জামায়াতের পক্ষ থেকে বিএনপিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হলেও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি তাতে।

এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ মতের জন্য অপেক্ষার পাশাপাশি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির প্রস্তুতিও চলছে সরকারের ভেতরে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে এবং আদেশ জারির বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

সূত্র জানিয়েছে, কমিশনের দ্বিতীয় প্রস্তাবের আলোকে সরকার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে ২৭০ দিনের স্থলে যত দিন লাগে, তত দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কারের কাজ শেষ করার কথা বলা থাকতে পারে। একই সঙ্গে পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার প্রস্তাব ছাড়া বাকি প্রস্তাবগুলোতে নোট অব ডিসেন্ট উল্লেখ থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংবিধান সংস্কার পরিষদ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে বিল পাস করবে।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, দলগুলোকে আলোচনার জন্য সাত দিনের কথা বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো কোনো সিদ্ধান্ত দিতে না পারলে অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। সে সিদ্ধান্তের জন্য প্রস্তুতিমূলক অনেক বৈঠক হচ্ছে। তারা (উপদেষ্টা পরিষদ) আশা করে, দলগুলো নিজেরা নিজেরা এই পুরো বিষয়গুলো নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসবে। পুরো জাতি এখন নির্বাচনের জন্য অধীর আগ্রহে আছে।

সরকারের এক কর্মকর্তা বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ ঘোষিত সাত দিনের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত না দিলে চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে সব দল নিয়ে বৈঠক করার চিন্তাভাবনা করছেন প্রধান উপদেষ্টা। কারণ, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন করার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বন্ধ পরিকর। সে অনুযায়ী ডিসেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণার চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সমাধান ধীরগতি হলে তফসিল ঘোষণা পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের বিষয়ে সমঝোতার জন্য আলোচনায় বসতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গত বৃহস্পতিবার রাতে ফোন করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। গতকাল শুক্রবার এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া দেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া (বিএনপির) পাইনি।’ আলোচনায় না বসলে জুলাই সনদ নিয়ে তৈরি হওয়া সংকটের সমাধান কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তাহের বলেন, ‘আমরা তাদের সাড়ার অপেক্ষায় আছি, দেখা যাক। এ নিয়ে কাল্পনিকভাবে আগাম কিছুই বলতে চাই না।’

আলোচনায় বসার বিষয়ে সরকারের অনুরোধ ও জামায়াতের আমন্ত্রণের বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সেখানে বিএনপি জুলাই সনদ ইস্যুতে আর আলোচনায় বসবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

জামায়াত ও এনসিপির একাধিক নেতা দাবি করেছেন, বিএনপি আলোচনায় বসতে চায় না। এনসিপির এক নেতা বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনায় বসার কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। তারা তো দেখি এখন গণভোটকে অস্বীকার করা শুরু করেছে। এটা তো অসুবিধার বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা হলেও আনুষ্ঠানিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চভুক্ত ছয় দল এবং এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করেছে এনসিপি। সেখানে বাস্তবায়ন ইস্যুতে দলগুলো এক থাকবে বলে জানা গেছে। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ আছে। তারপরও সরকারের অনুরোধে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা মনে করি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। সিদ্ধান্ত সরকারের কাছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, চিকেনস নেকের কাছে নতুন তিন গ্যারিসন

‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’

নুর না মামুন—বিতর্কে আবারও সংঘর্ষে বিএনপি–গণঅধিকার, আহত ৩১

১০-২০ কোটি টাকা না থাকলে নির্বাচন করা কঠিন: আসিফ মাহমুদ

রিজভীর পা ছুঁয়ে সালাম করা ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল প্রত্যাহার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাবেক মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মারা গেছেন

খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি 
আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ছবি: সংগৃহীত
আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ছবি: সংগৃহীত

সা‌বেক পররাষ্ট্র ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী (৮৩) মারা গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি স্ত্রী ও দুই পুত্রসন্তান রেখে গেছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মরহুমের এক নিকটাত্মীয় আজকের পত্রিকাকে জানান, মাহমুদ আলী দীর্ঘদিন ধরে কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। ১৩ দিন ধরে তিনি বারডেম হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গতকাল রাতে ধানমন্ডির নিজ বাসার সামনে জানাজা শেষে মরহুমকে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

আবুল হাসান মাহমুদ আলী ১৯৪৩ সালের ২ জুন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ডাক্তারপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দিনাজপুর-৪ (খানসামা-চিরিরবন্দর) আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক ও ১৯৬৩ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে যোগ দেন আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি ওই বছরের মে মাসে মুজিবনগরে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত হন।

১৯৬৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি যুক্তরাজ্যে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল, জার্মানিতে ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল ও ভুটানে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, চিকেনস নেকের কাছে নতুন তিন গ্যারিসন

‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’

নুর না মামুন—বিতর্কে আবারও সংঘর্ষে বিএনপি–গণঅধিকার, আহত ৩১

১০-২০ কোটি টাকা না থাকলে নির্বাচন করা কঠিন: আসিফ মাহমুদ

রিজভীর পা ছুঁয়ে সালাম করা ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল প্রত্যাহার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানের জনশক্তির ঘাটতি পূরণে পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
বাংলাদেশি ও জাপানি সংস্থার মধ্যে চারটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশি ও জাপানি সংস্থার মধ্যে চারটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

২০৪০ সালের মধ্যে জাপানের শ্রমবাজারে সৃষ্ট ১ কোটি ১০ লাখ জনশক্তির ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশ সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া।

আজ শুক্রবার (৭ নভেম্বর) জাপানের নাগোয়া শহরে টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত ‘বাংলাদেশ জাপানের জন্য দক্ষ মানবসম্পদসমৃদ্ধ একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় উৎস’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

জাপান আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণার্থী ও দক্ষ কর্মী সহযোগিতা সংস্থা জিটকোর সহযোগিতায় আয়োজিত এ সেমিনার ও পরবর্তী ম্যাচিং ইভেন্টে দুই দেশের প্রায় ২৫০টি জনশক্তি রপ্তানিকারক ও নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।

স্বাগত বক্তব্যে জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী বলেন, জাপানে দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে দূতাবাস সব ধরনের সহায়তা দেবে।

সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া জানান, ২০৪০ সালের মধ্যে জাপানের প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ বিদেশি কর্মীর প্রয়োজন হবে, অন্যদিকে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ২ কোটি ৫০ লাখ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী রয়েছে—এ প্রবণতা ২০৪০ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

নেয়ামত উল্যা বলেন, বাংলাদেশ সরকার জাপানের শ্রমবাজারে দক্ষ কর্মী সরবরাহে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবে এবং এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ড. নেয়ামত আরও জানান, জাপানের শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী কর্মী প্রস্তুতের জন্য বাংলাদেশে ৩৩টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) নির্ধারণ করা হয়েছে, প্রয়োজনে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। এ ছাড়া প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে একটি ‘জাপান সেল’ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা জাপানি শ্রমবাজারের সঙ্গে সমন্বয় ও যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে।

সেমিনারে জিটকোর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শিগেও মাতসুতোমি আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের বর্তমান অবস্থা ও জাপানের সম্ভাবনা নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।

পরে বাংলাদেশি জনশক্তি প্রেরণকারী ও জাপানি নিয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সেমিনারে টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, চিকেনস নেকের কাছে নতুন তিন গ্যারিসন

‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’

নুর না মামুন—বিতর্কে আবারও সংঘর্ষে বিএনপি–গণঅধিকার, আহত ৩১

১০-২০ কোটি টাকা না থাকলে নির্বাচন করা কঠিন: আসিফ মাহমুদ

রিজভীর পা ছুঁয়ে সালাম করা ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল প্রত্যাহার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত