Ajker Patrika

এমপি আনোয়ারুল হত্যা: আদালতে স্বীকারোক্তি দিলেন আরেক আসামি তানভীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৪ জুন ২০২৪, ১৯: ৫২
এমপি আনোয়ারুল হত্যা: আদালতে স্বীকারোক্তি দিলেন আরেক আসামি তানভীর

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারকে প্রলুব্ধ করে কলকাতায় নেওয়া হয়। অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার তানভীর ভূঁইয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আদালতকে এ কথা জানিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন গ্রেপ্তার তানভীর ভূঁইয়া। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের খাস কামরায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি।

দুপুরের আগেই তানভীরকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিনিয়র এএসপি মাহফুজুর রহমান আদালতে হাজির করেন। তিনি এক আবেদনে উল্লেখ করেন, আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি এমপি আনোয়ারুলকে হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করেন। তিনি আদালতেও দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে ইচ্ছুক।

পরে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

ঢাকার আদালতের শেরেবাংলা নগর থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই জালাল উদ্দিন স্বীকারোক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত সোমবার এই মামলায় গ্রেপ্তার শিলাস্তি রহমানও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

তানভীর ভূঁইয়া খুলনার ফুলতলা থানার দামোদর গ্রামের হানিফ মো. লাকি ভূঁইয়া ওরফে লাকি ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়ার ভাতিজা। দুজনের বাড়ি একই গ্রামে। শিমুল ভূঁইয়ার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এই তানভীর ভূঁইয়া।

শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে ভারতে গিয়ে এমপি আনোয়ারুল আজীম হত্যাকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে বলে আদালতকে জানিয়েছেন তানভীর ভূঁইয়া।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তানভীর ভূঁইয়া আদালতকে বলেছেন, তাঁর চাচা আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ওরফে মাহমুদ হাসান শিমুলের পরিকল্পনায় গত ৬ মে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তিনি কলকাতায় যান। কলকাতার নিউটাউন ও সল্ট লেকের মাঝামাঝি ত্রিশিব নামক একটি হোটেলে ওঠেন। ওই হোটেলে অবস্থান করেই তিনি বিভিন্ন সময়ে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে দেখা করেন এবং শিমুল ভূঁইয়ার পরিকল্পনা ও নির্দেশ মতো কাজ করতে থাকেন।

জবানবন্দিতে তানভীর বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন স্থানে বসেই আখতারুজ্জামান শাহিনের নির্দেশনা মতে শিমুল ভূঁইয়া এমপি আনোয়ারুলকে হত্যার পরিকল্পনার ছক আঁটেন। এমপিকে হত্যার উদ্দেশ্যে সর্বশেষ কলকাতা বিমানবন্দরের পাশে ওটু নামের একটি রেস্টুরেন্টে মিটিং হয়। ওই মিটিংয়ে আখতারুজ্জামান শাহিন ছিলেন। শিমুল ভূঁইয়া, মোস্তাফিজুর রহমান, জিহাদ, তানভীর, সিয়াম, শিলাস্তি রহমানসহ কয়েকজনও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনা হয়।

তানভীর জানান, শিমুল ভূঁইয়ার পরিকল্পনা মতে সবাই মিলেই এমপি আনোয়ারুল আজীমকে প্রলুব্ধ করে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় নেওয়া হয়। তবে কী বলে প্রলুব্ধ করা হয় তা সূত্রটি বলেনি। কলকাতায় তাঁর বন্ধুর বাড়ি থেকেও কৌশলে ডেকে নিয়ে কলকাতার নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনসের এক আবাসিক ভবনে আখতারুজ্জামান শাহিনের ভাড়া বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে খুন করে লাশ গুম করা হয়।

তানভীর বলেন, অন্যান্যদের সঙ্গে তানভীর নিজে ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন। ফ্ল্যাটে নেওয়ার পর আনোয়ারুল আজীমকে অজ্ঞান করা হয় এবং তাঁকে হত্যা করা হয়। আনোয়ারুল আজীমের মুখে ও গলায় বালিশ চাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন তানভীর।

সূত্রটি জানায়, তানভীর বাংলাদেশ থেকে কলকাতা পর্যন্ত হত্যার ধারাবাহিক পরিকল্পনার বর্ণনা দিয়েছেন। কার কী ভূমিকা ছিল তাও তিনি বর্ণনা দিয়েছেন। এর আগেও একাধিকবার আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার টার্গেট নেওয়া হয়। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি।

এ মামলায় আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ওরফে মাহমুদ হাসান শিমুল, শিলাস্তি রহমান ও তানভীর ভূঁইয়াকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয় গত ৩১ মে। এর আগে গত ২৪ মে এই তিনজনকে আট দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। পাঁচ দিনের রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই শিলাস্তি স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেন। একদিন পর তানভীরও জবানবন্দি দিলেন। অন্য আসামি আমান উল্লা ডিবির হেফাজতে রয়েছেন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। এই তিনজনকে গত ২২ মে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।

আনোয়ারুল আজীম ভারতে খুন হওয়ার ঘটনায় গত ২২ মে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণের পর বাবাকে গুম করার অভিযোগে মামলা করেন তাঁর মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

মামলার এজাহারে এমপির মেয়ে উল্লেখ করেন, ৯ মে রাত ৮টার দিকে তাঁর বাবা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর সংসদ সদস্য ভবনের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ১১ মে ৪টা ৪৫ মিনিটে তাঁর বাবার সঙ্গে মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্নতা মনে হয়। এরপর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলে বন্ধ পান।

গত ১৩ মে আনারের ভারতীয় নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ আসে। মেসেজে লেখা ছিল—‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছে। আমি অমিত শাহের কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। পরে ফোন দেব।’ এ ছাড়াও আরও কয়েকটি মেসেজ আসে। মেসেজগুলো মুনতারিনের বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে বলে এজাহারে বলা হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়, বাদীর বাবা ভারতে খুন হয়েছেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তবে এখনো বাবার লাশ পাননি তাঁর পরিবার। তাঁর বাবাকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।

আনোয়ারুল আজীম গত ১২ মে দর্শনা–গেদে সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। বরাহনগরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু ১৬ মে থেকে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে না পারায় নিখোঁজ জানিয়ে ১৮ মে বরাহনগর থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস।

গত ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আনোয়ারুল আজীম খুন হওয়ার খবর আসে। এরপর তার মেয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণের পর গুম করার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে আইএসআইপ্রধান

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত