Ajker Patrika

সংসদীয় আসন পুনর্নির্ধারণে দ্বিতীয় দিনের শুনানি চলছে, মারামারির পর পক্ষে-বিপক্ষে আলাদা ডায়াস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ৩৪
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

সংসদীয় আসন পুনর্নির্ধারণে দ্বিতীয় দিনের শুনানি চলছে। এদিন, দাবি আপত্তিকারী বা আবেদনকারীরা পৃথক ডায়াসে তাদের যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। গতকাল রোববার বিকেলে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি আসনের শুনানিতে মারামারি হওয়ার পর সেদিন বিকেল থেকেই অবশ্য পক্ষ-বিপক্ষের জন্য পৃথক ডায়াসের ব্যবস্থা করা হয়।

আজ সোমবার সকাল ১০টা থেকে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে শুনানি শুরু হয়। এতে জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদের সঞ্চালনায় শুনানিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত আছেন। নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে শুনানির সময় দাবি-আপত্তিকারী বা আবেদনকারীর কৌঁসুলি নির্ধারিত স্থানে দাঁড়িয়ে নিজের যুক্তি তর্ক তুলে ধরেন।

সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের শুনানির প্রথম দিন গতকাল রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের শুনানিতে পক্ষে-বিপক্ষের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি ঘটনা ঘটে। সেদিন এক ডায়াসেই দুই পক্ষের লোকজন তাদের বক্তব্য তুলে ধরছিলেন। সেই ঘটনার পর আজ সোমবার শুনানির দ্বিতীয় দিনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত খসড়ার ‘পক্ষে’র জন্য একটি এবং ‘বিপক্ষে’র জন্য পৃথক ডায়াস রেখেছে।

সংসদীয় আসনের খসড়া সীমানা নিয়ে ইসিতে আপত্তি আবেদনের শুনানিতে বাগেরহাটের ৪টি আসন বহাল দাবি জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা।

এবার নির্বাচন কমিশন সীমানা নির্ধারণে ভোটার সংখ্যার সমতা আনতে গিয়ে গাজীপুর জেলায় একটি আসন বাড়িয়ে ছয়টি এবং বাগেরহাটের আসন চারটি থেকে কমিয়ে তিনটির প্রস্তাব করা হয়। খসড়া প্রকাশের পর দাবি-আপত্তি জানানোর সুযোগ রয়েছে ১০ আগস্ট পর্যন্ত। এরপর শুনানি করে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি।

বাগেরহাটে আগে চারটি আসন ছিল-বাগেরহাট-১ (মোল্লারহাট-ফকিরহাট-চিতলমারী) ; বাগেরহাট-২ (সদর ও কচুয়া) ; বাগেরহাট-৩ (রামপাল ও মোংলা) এবং বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা)। এবার বাগেরহাট-১ আগের মতো বহাল রাখা হয়েছে। বাগেরহাট সদর, কচুয়া, রামপাল নিয়ে বাগেরহাট-২ আসন এবং মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলা নিয়ে বাগেরহাট-৩ প্রস্তাব করা হয়েছে।

শুনানি শেষে ব্রিফিংয়ে বাগেরহাট-৩ আসনের প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট ওয়াহিদুজ্জামান দিপু সাংবাদিকদের বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাগেরহাটে চারটি আসন। হঠাৎ করে ইসি আমাদের বলেছেন চারটি আসন থাকবে না। একটি আসন বাদ দেওয়া বাগেরহাটবাসী মানে না। এটা অযৌক্তিক, আইন পরিপন্থী এবং বাস্তবসম্মত নয়। ইসির এ সিদ্ধান্ত জনস্বার্থের পরিপন্থী।

তাঁর দাবি, বাগেরহাট জেলায় চারটি আসন আগের মত বহাল থাকবে। এ বিষয়ে ইসি যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবে।

একই আসনের প্রতিনিধি ব্যারিস্টার মো. জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন সেই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। তারা সেটা না দিয়ে উনারা বাগেরহাটের জনগণের যে চারটি আসন ছিল, সেখান থেকে একটি আসন কমিয়েছে। আসন কমিয়ে বাগেরহাটবাসীর যে অধিকার সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।

তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট বিরোধী কাজ করছে ইসি। আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের দিকে ঠেলে দেবেন না বা আমাদের আদালতের দিকে ঠেলে দেবেন না। যাতে ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কোনোভাবে বিঘ্নিত না হয়। বিএনপির নেতা কাজী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, বাগেরহাটে ৪টি আসন নয়, দরকার পাঁচটি আসন।

এদিকে, বাগেরহাট-৩ আসনের প্রতিনিধি হিসেবে আসা এনসিপি যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মোল্লা রহমতুল্লাহ অভিযোগ করেন, সংসদীয় আসন নিয়ে গতকাল আমরা আমাদের বক্তব্য পেশ করতে পারিনি। আজও কিন্তু আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারিনি। নির্বাচন কমিশন শুধু একটি দলের জন্যই কাজ করে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে আমাদের। ভোটারের হিসাব কেন্দ্র করে তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা আমাদের যৌক্তিক বলে মনে হয় না।

আজ খুলনা অঞ্চলের ৭টি আসন থেকে ১০১টি, বরিশাল অঞ্চলের ৬টি আসন থেকে ৩৯২টি ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৭টি আসন থেকে আসা ২০টি দাবি-আপত্তির শুনানি হবে। এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সাতক্ষীরা-৩ ও ৪; যশোর-৩ ও ৬; বাগেরহাট-১,২ ও ৩ আসনের শুনানি হওয়ার কথা। আড়াইটা থেকে ৫টা পর্যন্ত ঝালকাঠি-১; বরগুনা-১ ও ২; পিরোজপুর-১,২ ও ৩; চট্টগ্রাম-৩,৫, ৮ ও ১৯; এবং খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান আসনের শুনানি হবে।

আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকা অঞ্চলের ২৮টি আসন থেকে আসা ৩০৯টি দাবি-আপত্তির শুনানি হবে। এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মানিকগঞ্জ-১,২, ৩, নরসিংদী-৪,৫, নারায়ণগঞ্জ-৩,৪, ৫; আড়াইটা থেকে ৫টা পর্যন্ত ঢাকা-১,২, ৩,৪, ৫,৬, ৭,১০, ১৪,১৫, ১৬,১৮ ও ১৯ আসনের শুনানি হবে।

শেষদিন বুধবার রংপুর অঞ্চলের চারটি আসন থেকে আসা ৭টি, রাজশাহী অঞ্চলের ৪টি আসন থেকে আসা ২৩১টি, ময়মনসিংহ অঞ্চলের ৩টি আসন থেকে আসা ৩টি, সিলেট অঞ্চলের ১টি আসন থেকে আসা ২টি ও ফরিদপুর অঞ্চলের ৬টি আসন থকে আসা ১৭টি দাবি-আপত্তির শুনানি হবে। এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পঞ্চগড়-১,২; রংপুর-১, কুড়িগ্রাম-৪, সিরাজগঞ্জ-২,৫, ৬; পাবনা-১; আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টাঙ্গাইল-৬, জামালপুর-২, কিশোরগঞ্জ-১, সিলেট-১, ফরিদপুর-১,৪, মাদারীপুর-২,৩; শরীয়তপুর-২ ও ৩ আসনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জুলাই ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ৩৯ টির সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া প্রকাশ করে কমিশন। এতে গাজীপুর জেলায় একটি আসন বাড়িয়ে ৬টি এবং বাগেরহাট থেকে একটি কমিয়ে তিনটির প্রস্তাব করা হয়। পরবর্তীতে ইসির পক্ষ থেকে দাবি-আপত্তি আহ্বান করা হয়। যার জন্য নির্ধারিত সময় ছিল ১০ আগস্ট। এই সময়ে ৮৩টি আসন থেকে দাবি-আপত্তি জানিয়ে ইসিতে ১ হাজার ৮৯৩টি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে সীমানায় পরিবর্তন আনা এবং বর্তমান সীমানা বহাল রাখার আবেদনও রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত