Ajker Patrika

বিগত বঞ্চনার ক্ষোভে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা

উবায়দুল্লাহ বাদল, ঢাকা
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১৫: ২৭
বিগত বঞ্চনার ক্ষোভে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা

শেখ হাসিনার সরকারের পতন ও জাতীয় সংসদ বিলুপ্তির পর প্রশাসনে একধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে প্রশাসনে পদোন্নতিবঞ্চিত ভিন্নমতের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে পদোন্নতি-পদায়নের দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার বিভিন্ন দপ্তরের বঞ্চিত ২৮ জন সিনিয়র সহকারী সচিব ও উপসচিবকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

ওই কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে যোগদানও করেছেন। এদিকে গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। সূত্র বলেছে, শিগগির গুরুত্বপূর্ণ সব চুক্তির নিয়োগ বাতিল করা হবে।

এদিকে ক্যাডার কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও) এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও), কম্পিউটার অপারেটর কাম মুদ্রাক্ষরিক, অফিস সহায়কসহ বিভিন্ন পদের কর্মচারীরাও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দাবিদাওয়া বাস্তবায়নে স্মারকলিপি দিয়েছেন। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে নিজেদের বঞ্চনা তুলে ধরে এ দাবি জানান। এ ছাড়া বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য ৯ দফা দাবিসংবলিত স্মারকলিপি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি।

সকাল ৯টা থেকেই আওয়ামী সরকারের আমলে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তারা আসতে শুরু করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ এপিডি (নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রেষণ) অনুবিভাগের কোনো কর্মকর্তা ছিলেন না মন্ত্রণালয়ে। এ সময় বঞ্চিত কর্মকর্তারা সচিবের দপ্তর ও এপিডি শাখার প্রতিটি রুমে অবস্থান নিয়ে ব্যাচভিত্তিক বঞ্চিত কর্মকর্তার তালিকা করেন। এপিডি রুমে অবস্থান নিয়ে অনেকে টেবিল চাপড়িয়ে বিগত দিনের রাগ-ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় হাসিনা সরকারের আজ্ঞাবহ কর্মকর্তাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ না করার হুঁশিয়ারি দেন কেউ কেউ। দুপুর সাড়ে ১২টায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব দপ্তরে আসেন। এর পরই বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পক্ষে সচিবের রুমে প্রবেশ করেন নবম ব্যাচের ফারুক হোসেন ও আনোয়ারুল ইসলাম, দশম ব্যাচের মুজিবুর রহমান ও হেকমতুল্লাহ, ১১ ব্যাচের নজরুল ইসলাম ও দেলোয়ার হোসেন, ১৩তম ব্যাচের মাহবুবুর রহমান, ইকবাল হোসেন, আনোয়ার হোসেনসহ বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তা। এ সময় সচিবের রুমের বাইরে ৯ দফা দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সদস্যরা। পরে তারাও সচিবের রুমে প্রবেশ করে লিখিত দাবিনামা পেশ করেন।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত ১৩ ব্যাচের সিনিয়র সহকারী সচিব মাহবুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সচিব স্যার আমাদের দাবির প্রতি সহমত প্রকাশ করে বলেছেন, আপনারা ১৫ বছর ধরে পদোন্নতিবঞ্চিত ছিলেন। বিষয়টি ভবিষ্যতে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করব। আপনার ধৈর্য ধরে একটু সময় দিন।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, সচিবালয়ে অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ের সচিব অফিস করেছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সরকার পতনের পর থেকে অফিসে না গেলেও গতকাল সারা দিন বঙ্গভবনে শপথের কাজে ব্যস্ত ছিলেন বলে তাঁর একান্ত সচিব কাজী শাহজাহান নিশ্চিত করেছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসানও অফিস করেছেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, মৎস্য ও পশুসম্পদ সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর, খাদ্যসচিব ইসমাইল হোসেন, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব গোলাম সারোয়ার, লেজিসলেটিভ সচিব হাফিজ উদ্দিন আহমদ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হ‌ুমায়ূন কবীর খোন্দকারসহ বেশির ভাগ সচিবই অফিস করেছেন।

তবে অফিসে ছিলেন না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. জাহাংগীর আলম ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মশিউর রহমান। দুদিন ধরে অফিস করছেন না কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার।

এদিকে সকালের দিকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পদোন্নতিবঞ্চিত প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের একটি দল সিনিয়র সচিব মো. হ‌ুমায়ূন কবীর খোন্দকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁদের দাবিদাওয়া তুলে ধরেন। বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও দল বেঁধে কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গতকালও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের লাইব্রেরিতে মিটিং করেছেন। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, অফিস সহায়কেরা আজকের মধ্যে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দক্ষ জনশক্তি ও চিকিৎসা খাতে সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ ও জাপানের বৈঠক

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
টোকিওতে বৃহস্পতিবার জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিকবিষয়ক জ্যেষ্ঠ সহকারী মন্ত্রী আকিয়ামা শিনইচির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া। ছবি: প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়
টোকিওতে বৃহস্পতিবার জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিকবিষয়ক জ্যেষ্ঠ সহকারী মন্ত্রী আকিয়ামা শিনইচির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া। ছবি: প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়

দক্ষ জনশক্তি ও চিকিৎসা খাতে সহযোগিতা জোরদারে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার টোকিওতে জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিকবিষয়ক জ্যেষ্ঠ সহকারী মন্ত্রী আকিয়ামা শিনইচির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া।

বৈঠকে বাংলাদেশের দক্ষ জনশক্তি প্রেরণ এবং জাপানের শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের ক্রমবর্ধমান অবদান তুলে ধরেন নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরকালে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে এক লাখ বাংলাদেশি কর্মী জাপানে পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

তিনি আলোচনায় উল্লেখ করেন, জাপানি ভাষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণকে আরও সমন্বিতভাবে পরিচালনার জন্য মন্ত্রণালয়ে একটি ‘জাপান সেল’ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশের ভেতরে স্পেসিফায়েড স্কিল্ড ওয়ার্কার ফিল্ড টেস্ট চালু করার জন্য জাপান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

একই সঙ্গে খাদ্য ও পানীয় উৎপাদন, খাদ্য পরিবেশন, শিল্পজাত পণ্য উৎপাদন, মোটরগাড়ি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ, বিমান পরিষেবা ও জাহাজ নির্মাণশিল্পসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে পরীক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণের অনুরোধ জানান জ্যেষ্ঠ সচিব।

নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া বিশেষভাবে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধশিল্প খাতে অধিকতর সহযোগিতার প্রস্তাব দেন। তিনি জাপানকে চিকিৎসা প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং বাংলাদেশ থেকে উচ্চমানের ওষুধ আমদানির আহ্বান জানান।

জাপানের জ্যেষ্ঠ সহকারী মন্ত্রী আকিয়ামা শিনইচি বাংলাদেশের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, জাপানে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ফলে দক্ষ বিদেশি কর্মীর চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাস্থ্য ও জনশক্তি খাতে সহযোগিতা আরও বাড়ানোর আশ্বাস দেন তিনি।

পরে আইএম জাপান আয়োজিত মানবসম্পদবিষয়ক সেমিনারে অংশ নেন নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া, যেখানে প্রায় ২০০টি জাপানি কোম্পানি উপস্থিত ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গুমের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, অধ্যাদেশ অনুমোদন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩০
গুমের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, অধ্যাদেশ অনুমোদন

গুমের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রেখে গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়।

পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ সময় এই অধ্যাদেশকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।

গুম নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে এটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

শফিকুল আলম আরও জানান, গুম কমিশনে প্রায় দুই হাজার অভিযোগ এসেছে। তবে গুমের সংখ্যা চার হাজারের মতো হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

এর আগে গত ২৮ আগস্ট মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিসি ক্যামেরা থাকা ভোটকেন্দ্রের তালিকা চেয়েছে ইসি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা রয়েছে, সেগুলোর বিস্তারিত তালিকা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য জরুরি নির্দেশনার চিঠি সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এই চিঠি পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সিসি ক্যামেরা রয়েছে—এমন ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করে হার্ড কপি ও নিকস ফন্টে সফট কপি ১২ নভেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্বাচন সহায়তা-১ শাখায় প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

সূত্র জানায়, এর আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিসি ক্যামেরার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জানান, সিসিটিভি কেনা ব্যয়বহুল। তাই স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরা সচল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে নির্বাচনী কাজে তা ব্যবহার করা যায়।

তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংগ্রহে থাকা ড্রোন এবং কিছু ড্রোন ভাড়া করে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হবে, যাতে গ্রেপ্তার বা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দেশজুড়ে নির্বাচনী আমেজ

  • বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলো এখন নির্বাচনমুখী।
  • বিএনপিসহ কয়েকটি দল ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকাও প্রকাশ করেছে।
  • জামায়াত শিগগির তালিকা চূড়ান্ত করবে, এনসিপি প্রার্থী দেবে ৩০০ আসনে।
  • প্রার্থী ঘোষণা করেছে আরও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।
রেজা করিম, ঢাকা 
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে বেজে উঠেছে নির্বাচনী সুর। রাজনৈতিক দলগুলো হঠাৎ নির্বাচনমুখী হয়ে উঠেছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি সারছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন এবং গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার মধ্যেও দেশজুড়ে এখন নির্বাচনী আমেজ।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সূত্র বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ, গণভোটসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগে পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোলা হচ্ছিল। সংশয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয় নির্বাচন নিয়ে। এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা কয়েকটি দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। তাঁদের প্রচেষ্টাতেই দলগুলো মতবিরোধ পাশে রেখে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই সংসদ নির্বাচন।

বিএনপিসহ কয়েকটি দল ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকাও ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা করেছে। শিগগির তালিকা চূড়ান্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। এ দুই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগও শুরু করেছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) প্রাথমিকভাবে কয়েকজনের নাম বলেছে।

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো আগে থেকে প্রার্থী বাছাই, দল গোছানোসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি শুরু করে। বিএনপি গত সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭টিতে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে। দলটির নেতারা বলছেন, এটি সম্ভাব্য তালিকা। তফসিল ঘোষণার পর প্রয়োজনে এই তালিকায় অদলবদল হতে পারে। এর মধ্যে মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থীর নাম মঙ্গলবার স্থগিত করেছে দলটি।

বিএনপি প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর এনসিপিও প্রাথমিকভাবে কয়েকজন প্রার্থীর নাম বলেছে। দলটি ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার কথা জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী শিগগির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগবিহীন ভোটের মাঠে এই তিন দলের বাইরেও ৫০ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে গণঅধিকার পরিষদ। ১৩৮ আসনে প্রার্থী দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চে থাকা ৬ দল। গণসংহতি আন্দোলন গতকাল বুধবার ৯১টি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এবি পার্টি ১০৯, খেলাফত মজলিস ২৫৬, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ২৬৮ এবং ইসলামী আন্দোলন প্রায় ৩০০ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এর বাইরেও অধিকাংশ দল সম্ভাব্য একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। নির্বাচনমুখী এসব দলের প্রার্থী, নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের গণসংযোগে সাধারণ মানুষ পাচ্ছেন ভোটের আমেজ।

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে আর সংশয় নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল চট্টগ্রাম নগরের মেহেদীবাগের বাসভবনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার মাধ্যমে দেশের মানুষ পুরোপুরি নির্বাচনী ট্রেনে উঠে গেছে। ফেব্রুয়ারিতে এই ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছাবে। এখানে আর কোনো সংশয় নেই।’

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা করে সময় নষ্ট করার সুযোগ এখন আর নেই। অনেক আলোচনা হয়েছে, যতটুকু ঐকমত্য হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করেই ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৮ বছর পর জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে উন্মুখ হয়ে আছে।’

নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিতে এখনো অনড় থাকলেও পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি থেকে সরে এসেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি এখন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানকেই যুক্তিযুক্ত মনে করছে। গতকাল সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘সবাইকে নিয়েই আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আদায় করে ছাড়ব। এটা দেরি হলেই বিভিন্ন ধরনের আশঙ্কা ও বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার দাবি বাস্তবায়ন হতে হবে এমনটি নয়। আমি বলব, আমার দাবিটাই মনে করি শ্রেষ্ঠ দাবি, জনগণ এইটা বিবেচনায় নেবে। আমরা যা করি, জনগণকে নিয়ে করব। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই করব না।’

এনসিপিও নড়েচড়ে বসেছে। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ১৫ নভেম্বরের মধ্যে দলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত গাজী সালাহউদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে গতকাল সাক্ষাৎ করেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমরা এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্য আমাদের।’

ঘোষিত সময়ে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশনও। কমিশন ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছে। সম্প্রতি নির্বাচন ভবনে এক বৈঠক শেষে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ সেনাসদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন দেড় লাখ পুলিশ সদস্য। এ ছাড়া সারা দেশে দায়িত্ব পালন করবেন সাড়ে ৫ লাখ আনসার সদস্য।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পক্ষে সেনাবাহিনীও। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদরের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং, সদর দপ্তর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (জিওসি আর্টডক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান বলেন, ‘দেশের জনগণ যেমন চায়, সেনাবাহিনীও চায় সরকারঘোষিত রূপরেখা অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। নির্বাচন হলে দেশের স্থিতিশীলতা আরও ভালো হবে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে বলে আশা করে সেনাবাহিনী।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দেশের স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক সরকারের বিকল্প নেই। এই অবস্থায় নির্বাচনের প্রশ্নে সবার এক জায়গায় আসাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, একটি রাষ্ট্রের জন্য রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যাওয়া খুব জরুরি। দায়বদ্ধতার জায়গা শক্তিশালী করতে হলে দরকার নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার। এই বিবেচনায় নির্বাচনেই স্বস্তি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত