Ajker Patrika

স্বরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের চার বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন

  • বর্জ্য পরিশোধনাগার, লিফট, চিপযুক্ত আইডি কার্ড নিয়ে সফর।
  • নেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞতা।
  • গন্তব্য ইতালি, জাপান ও চীন।
  • কর্মকর্তাদের কেউ কেউ ‘জানেনই না’।
আয়নাল হোসেন, ঢাকা 
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫: ০৪
স্বরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের চার বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন

যৌক্তিক কারণ ছাড়াও সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশভ্রমণের প্রবণতা নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সাম্প্রতিককালে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের মধ্যে বিদেশভ্রমণকে সরকার নিরুৎসাহিত করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক বা অভিজ্ঞতা না থাকা কয়েকজন কর্মকর্তার বিদেশ সফরের প্রক্রিয়া চলছে।

বর্জ্য পরিশোধনাগার (এসটিপি) স্থাপনের প্রশিক্ষণ নিতে এক আমলা ও র‍্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ চারজন যাচ্ছেন জাপানে। পুলিশের পরিচয়পত্রের চিপস কার্ডের কারখানা পরিদর্শনে ইতালি ও চীন যাচ্ছেন ছয় পুলিশ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা। এ ছাড়া পুলিশের আবাসিক ভবনের জন্য লিফট কিনতে চীনের কারখানা পরিদর্শনে যাচ্ছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজন।

বর্জ্য পরিশোধনাগার কেনা ও তা স্থাপনে গ্রহণযোগ্যতা পরীক্ষা (এফএটি), চিপস কার্ড তৈরির কাজ দেখা এবং লিফটের কারখানা পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে কারিগরি বিশেষজ্ঞ জ্ঞান না থাকা কর্মকর্তাদের বিদেশভ্রমণের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

গত ৩০ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা-১ শাখার এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, র‍্যাবের একটি প্রশিক্ষণ স্কুল ভবনে বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপনের জন্য ১ থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনের জন্য জাপান সফরে যাবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আতাউর রহমান খান, র‍্যাবের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মো. জিল্লুর রহমান, র‍্যাবের ভবন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আলী এবং র‍্যাব সদর দপ্তরের মেজর সৈয়দ মাইদুল ইসলাম।

এসটিপি নির্মাণের সূত্রে বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত সচিব আতাউর রহমান খানের মোবাইল ফোনে কয়েক দফা কল করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি। প্রকল্প পরিচালক র‍্যাবের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আলীর মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ডিআইজি মো. জিল্লুর রহমান আজকের পত্রিকাকে শুধু বলেন, এখনো এ সফরে কেউ বিদেশে যাননি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) তৈরি করার কথা গাজীপুরে র‍্যাব ট্রেনিং স্কুলসহ পাঁচটি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের।

পুলিশের পরিচয়পত্রের চিপ আইডি কার্ডের কারখানা পরিদর্শনে চীন যাচ্ছেন তিন পুলিশ কর্মকর্তা এবং জননিরাপত্তা বিভাগের এক কর্মকর্তা। ৩ ফেব্রুয়ারি জারি করা প্রজ্ঞাপনের তথ্য অনুযায়ী, এ সফরের সময়কাল ২০-২২ ফেব্রুয়ারি। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপ্ট্যান্স টেস্টের (এফএটি) জন্য পুলিশের বিশেষ শাখার উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মো. মাহমুদুর রহমান, সদর দপ্তরের সহকারী মহাপুলিশ পরিদর্শক (এআইজি) মো. কামরুল ইসলাম, পুলিশের বিশেষ শাখার এসপি আসমা আখতার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএস) মো. রাহাত বিন কুতুব এই সফরে যাবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ সচিবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএস) রাহাত বিন কুতুব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চীন যাচ্ছি কি না, সে বিষয়ে আমি অবগত নই। কবে যাচ্ছি?’

৯ ফেব্রুয়ারি আরেক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব এবং পুলিশের তিনজন কর্মকর্তা ইতালি যাচ্ছেন। তাঁরা হচ্ছেন জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. মাহবুবুর রহমান, ডিআইজি কাজী মো. ফজলুল করিম, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার জান্নাত আফরোজ এবং পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রেজা সারোয়ার।

জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশের জন্য তথ্যযুক্ত চিপ কার্ডের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কার্ডে পুলিশ সদস্যের নাম, পদবি, আইডি নম্বরসহ সংক্ষিপ্ত তথ্য থাকবে। এই কার্ড তৈরির কারখানা পরিদর্শনেই চীন যাচ্ছেন কয়েকজন।

একই কার্ডের বিষয়ে দুটি পৃথক দলের ইতালি ও চীন যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি জানি না। কোথা থেকে এ তথ্য পেলেন?’ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেই তথ্যটি থাকার কথা জানানো হলে তিনি বলেন, ‘এসব দেখার সময় নেই আমার। তবে শুনেছি, কার্ড তৈরি হয় এক দেশে, আর কারখানা রয়েছে আরেক দেশে।’

আরেকটি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, পাঁচ দিনের জন্য চীন সফরে যাচ্ছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব গুল্লাল সিংহা, রাজারবাগ টেলিকমের ডিআইজি মো. রফিকুল হাসান গনি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএস) মনিরুজ্জামান বকাউল। তাঁরা ঢাকা মহানগর পুলিশের জন্য নির্মিতব্য ৯টি আবাসিক ভবনের লিফট কিনতে যাচ্ছেন।

চারটি প্রজ্ঞাপনেই বলা হয়েছে, কর্মকর্তাদের ভ্রমণের সব ধরনের ব্যয় ঠিকাদার বহন করবে। কেউ নির্ধারিত সময়ের বেশি ভ্রমণ করতে পারবেন না। তাঁদের এই ভ্রমণকাল দায়িত্ব পালন হিসেবে গণ্য করা হবে।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে অনিয়ম-দুর্নীতির ওপর নজরদারি করা প্রতিষ্ঠান ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রকল্পের মালপত্র কেনাকাটায় বিদেশ যাওয়ার চর্চা বন্ধ করতে হবে। ঠিকাদারি কোম্পানি কোনো দাতা প্রতিষ্ঠান নয় যে, লাভ ছাড়াই কাউকে বিদেশে নেবে। যাঁরা বিদেশ যাচ্ছেন তাঁদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান, দায়িত্ব ও দক্ষতা রয়েছে কি না, তা দেখতে হবে। এখন যেকোনো কারিগরি বিষয়ে সরেজমিনে না গিয়ে ভার্চুয়ালি ডিভিও কলের মাধ্যমে বুঝে নেওয়া সম্ভব। নতুন সরকারের কর্মকর্তাদের অবাধে বিদেশে যাওয়ার চর্চা থেকে বের হয়ে আসা উচিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিআরআইয়ের অর্থ আত্মসাৎ: জয়, পুতুলসহ ৮ জনের নামে মামলা করবে দুদক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। ছবি: সংগৃহীত
সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। ছবি: সংগৃহীত

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) কর জালিয়াতি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অনৈতিক অর্থ সুবিধা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ৮ জনের নামে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পুতুল সিআরআইয়ের ট্রাস্টি ও ভাইস চেয়ারম্যান।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে মামলাটি অনুমোদনের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। তিনি জানান, জনকল্যাণের নামে গঠিত এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কমিশন থেকে মামলা করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

অন্য যে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, তাঁরা হলেন সিআরআইয়ের ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি (শেখ রেহানার ছেলে), নসরুল হামিদ বিপু (সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী), নির্বাহী পরিচালক শাব্বির বিন শামস, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর আপিল) রওশন আরা আক্তার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩-১৪ থেকে ২০২৩-২৪ কর বর্ষ পর্যন্ত সিআরআই ২৩টি কোম্পানির কাছ থেকে ৪৫ কোটি ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে নেয়। এ ছাড়া একই সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনুদান হিসেবে ১০০ কোটি ৩১ লাখ ৪০ হাজার ৪৮৬ টাকা নেয়। বৈধ ব্যয় বাদে হিসাব অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাবে ৭০ কোটি ৮০ লাখ ৪২ হাজার ৩৯০ টাকা স্থিতি থাকার কথা। কিন্তু পাওয়া গেছে ৫৫ কোটি ১১ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৬ টাকা। অর্থাৎ ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫২১ টাকা কম; যা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমাজসেবা অধিদপ্তরে নিবন্ধিত না থাকা সত্ত্বেও সিআরআই কর সুবিধা লাভের জন্য চাপ প্রয়োগ, প্রতিষ্ঠানটি সুনির্দিষ্ট এসআরও জারি করিয়ে সরকার থেকে কর মওকুফের সুযোগ নিয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটি জনকল্যাণের নামে প্রাপ্ত তহবিলকে নিজের সুবিধার্থে ব্যবহার করেছে এবং বহু কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় ও আত্মসাৎ করেছে।

দুদক বলছে, অভিযুক্তরা ২৫টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৪৩৯ কোটি ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪৮০ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন এবং আয়কর পরিশোধ না করে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তামাক চাষ দারিদ্র্য কমায় না, উল্টো খাদ্য নিরাপত্তায় বড় হুমকি— কর্মশালায় বক্তারা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশে দ্রুত বাড়ছে তামাক চাষ। কৃষিজমি দখল করে তামাকের এই সম্প্রসারণ শুধু কৃষিকে নয়, দেশের খাদ্যনিরাপত্তাকেও ভয়াবহ হুমকির মুখে ফেলছে। তামাক কোম্পানিগুলোর প্রচারণায় বলা হয়, তামাক চাষে কর্মসংস্থান বাড়ে এবং কৃষকের আয় বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বাস্তবে যেসব জেলায় তামাক চাষ হয়, সেসব এলাকায় দারিদ্র্যের হার তুলনামূলকভাবে বেশি; যা কোম্পানির প্রচারণার সম্পূর্ণ বিপরীত। তামাকপাতা রপ্তানিতে শুল্ক প্রত্যাহার ও কোম্পানির আগ্রাসী প্রভাব কৃষকদের বিভ্রান্ত করছে, স্থানীয় অর্থনীতিতে বাড়ছে ক্ষতি।

গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) মিলনায়তনে আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা। কর্মশালার আয়োজন করে বিইআর, বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) এবং বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)। কর্মশালার বিষয় ছিল, ‘কোম্পানির আগ্রাসনে বাড়ছে তামাক চাষ, জনস্বাস্থ্য ও খাদ্যনিরাপত্তায় হুমকি’। এতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ৩৫ সাংবাদিক অংশ নেন।

কর্মশালার সেশন পরিচালনা করেন তামাক নিয়ন্ত্রণবিষয়ক গবেষক ও বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য সুশান্ত সিনহা। তিনি বলেন, তামাকপাতা রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার তামাক চাষ বৃদ্ধির প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। শুল্ক প্রত্যাহারের পর তামাক রপ্তানির পাশাপাশি চাষও বেড়েছে, যা পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনছে। কোম্পানিগুলো ‘তামাক চাষ লাভজনক’—এমন একটি মিথ্যা তথ্য মানুষকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয়েছে। বাস্তবতা হলো, যেসব জেলায় তামাক চাষ হয়, দারিদ্র্য সূচকে সেসব জেলার অবস্থান সবার ওপরে।

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক ড. রুমানা হক বলেন, তামাক চাষ থেকে বের হয়ে আসার উপায় খুঁজতে হবে। এর প্রথম পদক্ষেপ হলো, দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা। কৃষকেরা যেন বিকল্প ফসলের ন্যায্যমূল্য পান, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে তামাকপাতা ও তামাকজাত পণ্যের রপ্তানিতে পুনরায় ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে হবে। কারণ, তামাক থেকে যে রাজস্ব আয় হয়, তার দ্বিগুণের বেশি ব্যয় হয় তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায়।

বিএজেএফ সভাপতি সাহানোয়ার সাইদ শাহীন বলেন, তামাক কোম্পানি ১০টি খাতে ব্যাপক ক্ষতি করছে। তাদের কর ফাঁকির প্রকৃত হিসাব নেই। তামাক চাষের কারণে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজস্ব ফাঁকিও বাড়ছে। তামাক চাষের কারণে দেশে প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।

সাহানোয়ার সাইদ শাহীন অভিযোগ করেন, তামাকপাতার দাম নির্ধারণে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কমিটিতে কোম্পানির প্রতিনিধিরাই প্রভাবশালী। যাঁরা তামাক কিনবেন, তাঁরাই আবার দাম ঠিক করবেন—এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

জনস্বাস্থ্যবিষয়ক নীতি বিশ্লেষক ও বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, হাইকোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের আদেশে বলা হয়েছিল, দেশে তামাক চাষ কমাতে হবে এবং নতুন কোনো তামাক কোম্পানিকে অনুমতি দেওয়া যাবে না। কিন্তু সেই আদেশ অমান্য করে নতুন করে নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এমপিওভুক্তির দাবিতে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিক্ষোভ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ বুধবার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ছবি: ফোকাস বাংলা
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ বুধবার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ছবি: ফোকাস বাংলা

দেশের সব বিশেষ (অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী) বিদ্যালয়কে এমপিওভুক্ত করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা। এ সময় দাবি মানা না হলে আগামী রোববার থেকে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে আজ বুধবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

কর্মসূচিতে পরিষদের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন এর সভাপতি মো. ইলিয়াস রাজ।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—সব বিশেষ (অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী) বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি, এমপিওভুক্তি ও প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামো সুনিশ্চিত করতে হবে; বিশেষ শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম শিক্ষা ভাতা তিন হাজার টাকা নিশ্চিত করা; শিক্ষার্থীদের মিড-ডে মিলসহ শিক্ষা উপকরণ ও খেলাধুলার সরঞ্জাম প্রদান; থেরাপি সেন্টার বাস্তবায়ন করা; ছাত্রছাত্রীদের ভোকেশনাল শিক্ষা কারিকুলামের আওতায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিশেষ ব্যক্তিদের কোটা অনুযায়ী চাকরি সুনিশ্চিত করতে হবে।

কর্মসূচিতে ইলিয়াস রাজ বলেন, ‘আমাদের যৌক্তিক দাবি সরকারকে মেনে নিতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি ফিরব না।’

পরিষদের নেতারা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৯ শতাংশ জনগণ কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধী। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রেখে দেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সম্ভব নয়। শিশুদের মা-বাবার পরেই প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তাদের মানসিক উন্নয়নে কাজ করেন।

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিমা খাতুন জানান, ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোর স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তির জন্য একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে এবং অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। এতে ২ হাজার ৭৪১টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে, যার মধ্যে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে ১ হাজার ৭৭২টি আবেদন গৃহীত হয়। পরে অফলাইনে আরও প্রায় ২০০টি আবেদন নেওয়া হয়। এরপর বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা, ২০১৯ অনুযায়ী জাতীয় স্বীকৃতি ও এমপিও কমিটি গঠন করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক, খ, গ–এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করে কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু তা অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। এর ফলে প্রায় ৬৩ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী মানবেতর জীবন যাপন করছেন এবং শিক্ষা কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানে ১ কোটি শ্রমবাজারের সুযোগ কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
জাপানের কৃষি, বন ও মৎস্য মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিকবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার ওয়াতানাবে ইয়োইচির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত
জাপানের কৃষি, বন ও মৎস্য মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিকবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার ওয়াতানাবে ইয়োইচির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের দক্ষ জনশক্তিকে জাপানের শ্রমবাজারে আরও বেশি অন্তর্ভুক্ত করতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া।

আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) টোকিওতে জাপানের কৃষি, বন ও মৎস্য মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিকবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার ওয়াতানাবে ইয়োইচির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। এ সময় জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী উপস্থিত ছিলেন।

সাক্ষাৎকালে সিনিয়র সচিব বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং বিশেষ করে, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে জাপান সরকারের অব্যাহত সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে জাপানের প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ শ্রমিকের প্রয়োজন হবে—বাংলাদেশ এই বিশাল সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে চায়।

সিনিয়র সচিব জানান, বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে দুটি সহযোগিতা স্মারক ও দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। একই সঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষ ‘জাপান সেল’ গঠন করা হয়েছে, যা জাপানি ভাষা ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্প্রসারণে কাজ করছে।

সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা স্পেসিফায়েড স্কিল্ড ওয়ার্কার (এসএসডব্লিউ) কর্মসূচির অধীনে বাংলাদেশে পাঁচটি ক্ষেত্রে দক্ষতা পরীক্ষা চালু করায় জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি খাদ্য ও পানীয় উৎপাদন, খাদ্য পরিবেশন শিল্প, বনশিল্পসহ আরও কিছু ক্ষেত্রে এই পরীক্ষার পরিধি বাড়ানোর অনুরোধ জানান।

ভাইস মিনিস্টার ওয়াতানাবে ইয়োইচি এ প্রস্তাবে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে জাপান দূতাবাস নতুন খাত অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে।

সাক্ষাৎ শেষে সিনিয়র সচিব ভাইস মিনিস্টারকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান, যাতে দক্ষতা উন্নয়ন ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানে দুই দেশের সহযোগিতা আরও জোরদার হয়।

পরে ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া জাপানের শীর্ষ জনশক্তি গ্রহণকারী সংস্থা আইএম জাপান অফিস পরিদর্শন করেন এবং সংস্থার প্রধান নির্বাহী কানামোরি হিতোশির সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠকে জানানো হয়, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ থেকে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেইনি ও এসএসডব্লিউ কর্মীর সংখ্যা বাড়িয়ে অন্তত ৩০০ জনে উন্নীত করা হবে।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সিনিয়র সচিব টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসের অডিটরিয়ামে আয়োজিত বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত