Ajker Patrika

সরকারি চাকরি আইনে সংশোধন

বিভাগীয় মামলা ছাড়াই চাকরিচ্যুত করতে পারবে সরকার

  • আইন সংশোধনে নতুন খসড়া করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
  • শৃঙ্খলাভঙ্গ ও দায়িত্বে অবহেলায় প্রথমে নোটিশ দেওয়া হবে।
  • নোটিশ পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে হবে।
  • জবাব পাওয়ার দিন থেকে ২০-২৫ কার্যদিবসে অভিযোগ নিষ্পত্তি।
শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ১২: ৪৬
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দায়িত্বে অবহেলা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে বিভাগীয় মামলা না করেই সরকারি কর্মচারীদের যেকোনো সময় চাকরিচ্যুত করতে পারবে সরকার। সর্বোচ্চ ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করে এই পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে এমন বিধান যুক্ত করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সরকারি চাকরি আইন সংশোধনে গত এপ্রিলের মাঝামাঝি খসড়া করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে খবর প্রকাশের পর আলোচনা-সমালোচনা হয়। পরে সরকারের চারজন উপদেষ্টার নির্দেশনায় নতুন খসড়া চূড়ান্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

চূড়ান্ত খসড়ায় বলা হয়েছে, শৃঙ্খলাভঙ্গ ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে নোটিশ দেওয়া হবে। নোটিশ পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে তার জবাব দিতে হবে। নোটিশের জবাব পাওয়ার দিন থেকে ২০-২৫ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলার প্রয়োজন হবে না। কেউ সাত কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব না দিলে ওই কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতেই অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হবে।

শৃঙ্খলাভঙ্গ, অসদাচরণ ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে এখনো সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। তবে বর্তমান আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী বিভাগীয় মামলা দিয়ে এসব অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে অনেক সময় দুই বছরের বেশি সময় লেগে যায়। অভিযোগ নিষ্পত্তির পর রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল ছাড়াও প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সুযোগ পান সরকারি কর্মচারীরা।

গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পেশাগত দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেন ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। সচিবালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দপ্তর ঘেরাও, হট্টগোল তৈরি ও নজিরবিহীন শোডাউন করেন তাঁরা। অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে, অনেককে ওএসডি করেছে। ৫ আগস্টের পর পুলিশের বিভিন্ন স্তরের ১৮০ জন এখনো কাজে যোগ দেননি। অনেকে অনুমতি না নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।

সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী, কারও চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হলে সরকার কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়েই চাকরি থেকে অবসরে পাঠাতে পারে। সে ক্ষেত্রে ওই কর্মকর্তা পুরো পেনশন পান। আর বিভাগীয় মামলার মাধ্যমে কাউকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠালে চাকরিকাল অনুযায়ী পেনশন সুবিধা পান তিনি। তবে চাকরি থেকে বরখাস্ত বা অপসারণ করলে কোনো অবসর সুবিধা পাওয়া যায় না।

নতুন আইন কার্যকর হলে বিভাগীয় মামলা ছাড়াই যাঁদের চাকরিকাল ২৫ বছরের কম, তাঁদেরও সহজে চাকরিচ্যুত করা যাবে। এ ক্ষেত্রে তাঁরা অবসর সুবিধা পাবেন কি না, সে বিষয়ে খসড়ায় কিছু বলা হয়নি।

সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে ২০১৮ সালে বাতিল হওয়া সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯-এর কিছু ধারা যুক্ত করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর ওই অধ্যাদেশের চারটি ধারা যোগ করে খসড়া করা হয়।

সূত্র জানায়, খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে গত শুক্রবার বৈঠক করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ ও জনপ্রশাসনসচিব মো. মোখলেস উর রহমান। ওই সভায় এই চার উপদেষ্টা সরকারি চাকরি আইনে কী কী সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেসব বিষয়ে অবহিত হন। কিছু কিছু বিষয়ে তাঁরা লিখিত মতামত দেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চারজন উপদেষ্টার মতামতের আলোকে নতুন করে খসড়া চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে। এখন এটি পাসের জন্য উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তোলা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি কর্মচারীদের দলবদ্ধ আন্দোলন, সভা-সমাবেশ, কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচির পথ বন্ধ করতে আইনে নতুন বিধান যোগ করা হচ্ছে বলে তাঁরা মনে করেন। কোনো কর্মচারীকে সভা-সমাবেশ বা কর্মবিরতির মতো কর্মসূচিতে যোগ দিতে প্ররোচনা দিলেও একই সাজা দেওয়া হবে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হয়, যার কারণে অন্য কোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে আনুগত্য সৃষ্টি হয়, শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়, কর্তব্য পালনে বাধার সৃষ্টি হয়, তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। ছুটি না নিয়ে বা যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে এবং অন্য কর্মচারীকে কাজে অনুপস্থিত থাকতে প্ররোচিত করলে; অন্যদের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে ও কোনো কর্মচারীকে তাঁর কর্তব্য পালন না করতে উসকানি দিলে তা-ও অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। এ জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত, অব্যাহতি এবং পদের অবনমন বা বেতন কমানোর সাজা দেওয়া যাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, সরকারি চাকরি আইনের খসড়া পাসের জন্য এর আগে একবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঠানো হয়েছিল। তখন উপদেষ্টা পরিষদ তা অনুমোদন না দিয়ে আরও পর্যালোচনার নির্দেশনা দেয়। নতুন আইন প্রণয়ন বা কোনো আইন সংশোধনের আগে খসড়া প্রকাশ করে সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হলেও সরকারি চাকরি আইনের খসড়ার ওপর মতামত নেওয়া হয়নি।

অপর এক কর্মকর্তা বলেন, আগে যে খসড়া করা হয়েছিল, সেখানে কর্মচারীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ রাখা ছিল না। নতুন খসড়ায় অনেক বিষয় নমনীয় করা হয়েছে। কারণ, আইন সংশোধনের পর আন্দোলন হোক, সরকার তা চায় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ ছিল একটি কালাকানুন। ওই ধরনের কোনো আইন এখন করলে সেটিও কালাকানুন হবে। এই সরকারের প্রধান একটি অঙ্গীকার ছিল সব জঙ্গি আইন ও কালাকানুন বাতিল করবে। বিশেষ ক্ষমতা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হয়নি। তারা এখন আরেকটা কালাকানুন করার পথে হাঁটছে, যেটা সংবিধানবিরোধী।

গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন দমানো, কথায় কথায় কলমবিরতি বন্ধ করা এবং ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে যারা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে, তাদের দমাতে আইন সংশোধন করছে বলে মনে করেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, স্বাভাবিক কোনো কাজের জন্য যেন এই বিধান প্রয়োগ না করা হয়। ২৫ কর্মদিবসের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করলে সমস্যা নেই, যদি তদন্তের বিধান রাখা হয়। অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা বানানো সেই ইউএনও ওএসডি

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

নিজের চাচা-চাচিকে বাবা-মা সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেনকে ওএসডি করেছে সরকার। আজ বুধবার তাঁকে ওএসডি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

কামাল হোসেন তাঁর পিতা-মাতা মো. আবুল কাশেম ও মোছা. হাবীয়া খাতুনের পরিবর্তে নিজের চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আহসান হাবীব ও চাচি মোছা. সানোয়ারা খাতুনকে পিতা-মাতা দেখিয়ে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা নিতে জালিয়াতির অভিযোগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর দুদকের ঢাকা-১-এর সম্মিলিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. মনজুরুল ইসলাম মিন্টু বাদী হয়ে কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

কামাল হোসেনের প্রকৃত মা-বাবা কারা, তা নিশ্চিত হতে গত মঙ্গলবার ডিএনএ পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরদিন ইউএনও কামাল হোসেনকে ওএসডি করা হলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই বিপ্লবীরা নতুন সংবিধান চাইলে সেটাই হতো সংবিধান: অ্যাটর্নি জেনারেল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ফাইল ছবি
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ফাইল ছবি

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘জুলাই বিপ্লবীরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে বলত, “আমরা ৭২-এর সংবিধান চাই না, আমরা নতুন সংবিধান রচনা করতে চাই”—তাহলে সেটাই হতো সংবিধান। কিন্তু তাদের মধ্যে বিভেদ থাকলে হবে না। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে আজ বুধবার এসব কথা বলেন রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বিভাগে অষ্টম দিনের মতো এ বিষয়ে শুনানি হয়।

এদিন আরও শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আনীক আর হক এবং বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। খায়রুল হক সাহেবরা হুকুম নড়ায়ে দিয়েছেন সংক্ষিপ্ত রায় এবং পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্য দিয়ে; যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শাস্তি হতে পারে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড। সংবিধান একটা অরগানিক ডকুমেন্ট। এটা বিভিন্ন রকমভাবে উপস্থাপিত হয়। কোরআন কিংবা বাইবেল—কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। সংবিধান পরিবর্তনযোগ্য। আজকে সংবিধানের অ্যামেন্ডমেন্টে (সংশোধন) যদি বলে দেন, তত্ত্বাবধায়কে ফিরে গেলাম, সেটাই যে অ্যাবসোলিউট (যথাযথ) হবে—তাও না। এটাও জনগণের চাহিদা অনুসারে হবে। জনগণ যদি মনে করে, এটাতে তার ভোটাধিকার নিশ্চিত হচ্ছে না, জনগণ ইচ্ছা করলে এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে পারবে।’

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা মনে করি, ওই (তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল) রায় থাকা উচিত না। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রায়টা লেখা হয়েছে একটি বিশেষ দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য। এই রায় দুটি গ্রাউন্ডে বাতিল হবে। সাতজন মিলে ঘোষণা করলেন, আগামী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। সেখানে উনারা ডেভিয়েট (বিচ্যুত) করে পূর্ণাঙ্গ যে রায় দিলেন, তা ওপেন ঘোষণা রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ঘোষিত রায় পরিবর্তন করার জন্য রিভিউ করতে হবে। রিভিউ যেকোনো পক্ষ করতে পারে। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও করতে পারেন। খায়রুল হক সেই পথে না গিয়ে যে পথে হেঁটেছেন, তা আইনের ব্যত্যয়। রিভিউ না করে উনি রায় পরিবর্তন করেছেন। এটা দণ্ডবিধির ২১৯ ধারা অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উনি পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে জানতেন, এ ধরনের পরিবর্তন করা আইনে সম্ভব নয়। তারপরও উনি সেটা করেছেন।’

আসাদুজ্জামান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাংলাদেশে আসার পরে যেভাবে দেশের গণতন্ত্র উন্নত হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলোপের পরে সেই সুযোগ হয়নি। এই ব্যবস্থা বাতিল করার পর হত্যা, গুম, রাতের বেলায় ভোট দেওয়া, মিথ্যা মামলায় মানুষকে কারাগারে পাঠানো—এ ধরনের রাজনীতি শুরু হয়। ৭০ লাখের মতো মানুষ গায়েবি মামলায় আসামি হয়। সেই কারণে এটা ২১৯ ধারার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিচারকদের পারিতোষিক ও ছুটিসংক্রান্ত আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের পারিতোষিক, ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকারসংক্রান্ত আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়েছে। ১৩ জনের পক্ষে এ রিট করা হয়েছে বলে আজ বুধবার জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

রিটকারীরা হলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, আবদুল্লাহ সাদিক, মো. মিজানুল হক, আব্দুল ওয়াদুদ, রহিম উল্লাহ, আমিনুল ইসলাম শাকিল, ঢাকার জেলা জজ আদালতের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ, শিক্ষানবিশ আইনজীবী সাব্বির রহমান, মাহমুদুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত জাকারিয়া, রাফিউল সাব্বির, শামিম সাহিদি ও হাবিবুর রহমান আল হাসান।

রিট আবেদনে বলা হয়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ। সংবিধানের ৯৪(৪) ও ১৪৭(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের আর্থিক স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। তবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২১ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৩ অনুযায়ী বিচারকদের বেতন, পেনশন ও বিশেষাধিকার এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বাস্তবে তাঁদের আর্থিক স্বাধীনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করছে।

আবেদনে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রধান বিচারপতি ও বিচারকদের বেতনকাঠামো তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের আর্থিক অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় নিম্ন স্তরে রয়েছে। এই অসামঞ্জস্য শুধু আর্থিক নয়, বরং বিচার বিভাগের মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের মানের প্রতি সাংঘর্ষিক।

রিটে আরও বলা হয়, সংবিধানে প্রদত্ত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার বিভাজনের নীতিকে উপেক্ষা করে সংসদ তার সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে উক্ত আইন দুটি প্রণয়ন করেছে। এর ফলে বিচারপতিদের জন্য এক অন্যায্য ও বৈষম্যমূলক বেতনকাঠামো সৃষ্টি হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিআরআইয়ের অর্থ আত্মসাৎ: জয়, পুতুলসহ ৮ জনের নামে মামলা করবে দুদক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। ছবি: সংগৃহীত
সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। ছবি: সংগৃহীত

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) কর জালিয়াতি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অনৈতিক অর্থ সুবিধা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ৮ জনের নামে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পুতুল সিআরআইয়ের ট্রাস্টি ও ভাইস চেয়ারম্যান।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে মামলাটি অনুমোদনের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। তিনি জানান, জনকল্যাণের নামে গঠিত এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কমিশন থেকে মামলা করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

অন্য যে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, তাঁরা হলেন সিআরআইয়ের ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি (শেখ রেহানার ছেলে), নসরুল হামিদ বিপু (সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী), নির্বাহী পরিচালক শাব্বির বিন শামস, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর আপিল) রওশন আরা আক্তার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩-১৪ থেকে ২০২৩-২৪ কর বর্ষ পর্যন্ত সিআরআই ২৩টি কোম্পানির কাছ থেকে ৪৫ কোটি ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে নেয়। এ ছাড়া একই সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনুদান হিসেবে ১০০ কোটি ৩১ লাখ ৪০ হাজার ৪৮৬ টাকা নেয়। বৈধ ব্যয় বাদে হিসাব অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাবে ৭০ কোটি ৮০ লাখ ৪২ হাজার ৩৯০ টাকা স্থিতি থাকার কথা। কিন্তু পাওয়া গেছে ৫৫ কোটি ১১ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৬ টাকা। অর্থাৎ ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫২১ টাকা কম; যা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমাজসেবা অধিদপ্তরে নিবন্ধিত না থাকা সত্ত্বেও সিআরআই কর সুবিধা লাভের জন্য চাপ প্রয়োগ, প্রতিষ্ঠানটি সুনির্দিষ্ট এসআরও জারি করিয়ে সরকার থেকে কর মওকুফের সুযোগ নিয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটি জনকল্যাণের নামে প্রাপ্ত তহবিলকে নিজের সুবিধার্থে ব্যবহার করেছে এবং বহু কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় ও আত্মসাৎ করেছে।

দুদক বলছে, অভিযুক্তরা ২৫টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৪৩৯ কোটি ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪৮০ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন এবং আয়কর পরিশোধ না করে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত