মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
সব ধরনের ওষুধের মধ্যে দেশে পরিপাকতন্ত্রের জটিলতাবিষয়ক ওষুধ বিক্রিতে রয়েছে তৃতীয় সর্বোচ্চ স্থানে। সরকারি গবেষণায় উঠে এসেছে, এসব ওষুধ বিক্রির অঙ্ক বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, জনসংখ্যার একটা বিশাল অংশ পরিপাকতন্ত্রের সমস্যায় ভুগছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভেজাল খাবার গ্রহণ ও সার্বিক খাদ্যাভ্যাস, অস্বাস্থ্যকর জীবনাচার ও অসংক্রামক রোগের বিস্তার বাড়ার কারণে পরিপাকতন্ত্রের রোগের ঘটনা বেড়েছে। নিজে নিজে ওষুধ সেবনের প্রবণতা বাড়াও এই রোগের ওষুধের বিক্রি বেড়ে চলার একটি কারণ।
সরকারের তথ্য বলছে, বছরে দেশের ওষুধের বাজারের আকার ৩৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর ৯৪ শতাংশই ব্যয় হয় ব্যক্তি উদ্যোগ বা পরিবারের মাধ্যমে। সরকারি ব্যয় মাত্র ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
একটি জরিপের অংশ হিসেবে সরকারের এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট। ‘বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল এক্সপেন্ডিচার ট্র্যাকিং বাই ডিজিজেস ২০২০’ নামের জরিপটি ২০২৩ সালের শেষে এসে প্রকাশ করা হয়। এটাই এ-বিষয়ক সর্বশেষ জরিপ। আর ওষুধের মোট ব্যয় নিয়ে এমন বড় জরিপ বাংলাদেশে প্রথম। এতে খুচরা পর্যায়ে ওষুধের দোকান, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত ওষুধের ব্যয়ের বিবরণ উঠে এসেছে। গবেষণাটিতে রোগভেদে ওষুধের বিভাজনও দেখানো হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হচ্ছে পেশিতন্ত্র ও সংযোগকারী টিস্যুর রোগের ওষুধে। এসব রোগসংক্রান্ত ওষুধের বাজার ৬ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকার। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সংবহনতন্ত্র অর্থাৎ হৃৎপিণ্ড, রক্তনালির যাবতীয় রোগের ওষুধের বাজার। এর আকার ৬ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে থাকা পরিপাকতন্ত্রের রোগের ওষুধের পেছনে ব্যয় হয় ৫ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা, যা মোট ওষুধের বাজারের ১৪ শতাংশ।
২১ এপ্রিল বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির এক কর্মশালায় বলা হয়, দেশের ওষুধের বাজারের সবচেয়ে বড় অংশ খাদ্যনালি ও বিপাকীয় নিরাময়ের ওষুধ নিয়ে। এর আকার মোট বাজারের ৩৫ শতাংশ।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয় ৭৭ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। এর ৫০ শতাংশই চলে যাচ্ছে ওষুধের বাজারে।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের গবেষণায় পরিপাকতন্ত্রের যেসব রোগব্যাধি ও সমস্যার উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বমি সিনড্রোম, ডায়রিয়া, খাদ্যে বিষক্রিয়া, পিত্তথলিতে পাথর, গ্যাস, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, খারাপ খাদ্যাভ্যাস, ভুল খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়ামের অভাব এবং মানসিক চাপের মতো রোগ। নিজের উদ্যোগেই ওষুধ কেনা, তাৎক্ষণিক প্রতিকারের সন্ধান খোঁজা, নৈমিত্তিক অ্যাসিড ও পেট ফাঁপা এবং আলসার নিরাময়ের ওষুধের উচ্চ ব্যবহারের মতো কয়েকটি কারণে পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের বাজারের আকার এত বড় হয়েছে। দরকারে-অদরকারে ওষুধ কেনায় অপচয় ও সাধারণ স্বাস্থ্যগত বিপত্তি হওয়া ছাড়াও উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের কারণে ওষুধের বিরুদ্ধে জীবাণুর প্রতিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে। কমছে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের কার্যকারিতা।
পরিপাকতন্ত্রের রোগগুলোকে ১০টি ভাগ করে ওষুধের ব্যয়ের বিভাজন করেছে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট। তাদের জরিপ বলছে, পরিপাকনালির রোগের কারণেই বিক্রি হচ্ছে সোয়া দুই হাজার কোটি টাকার ওষুধ। ব্যবহৃত ওষুধের ৪২ শতাংশই অ্যাসিড, গ্যাস ইত্যাদির কারণে। এসব ওষুধের ভোক্তার ৫৭ শতাংশ নারী এবং ৪৩ শতাংশ পুরুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস হপকিন্স মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী, হজমজনিত রোগগুলোই পরিপাকতন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। এর সঙ্গে খাদ্যনালি, লিভার, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র, পিত্তথলি এবং অগ্ন্যাশয়ের সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণ হজমজনিত ব্যাধির মধ্যে রয়েছে খাদ্যনালি ও পাকস্থলীর মধ্যবর্তী পেশির বিভিন্ন রোগ, ক্যানসার, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম, ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স (দুধজাতীয় খাদ্য হজমে অক্ষমতা) এবং হাইটাল হার্নিয়া। হজমজনিত অসুখের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণের মধ্যে রয়েছে রক্তপাত, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, বুক জ্বালা, ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমি।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টসের ফোকাল পয়েন্ট ডা. সুব্রত পাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় জাতীয় স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক ব্যয়ের তথ্য প্রকাশ করলেও ওষুধজনিত খরচ নিয়ে এমন কাজ প্রথম। ওষুধের ব্যয় কোথায় কত হচ্ছে, তা এই গবেষণায় উঠে এসেছে। এর মানে অবশ্য এই নয় যে সব ওষুধ ভোক্তা নিজেই কিনেছে। এর মধ্যে রপ্তানিও রয়েছে। ওষুধ কেনার কারণে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয়ের অঙ্ক প্রভাবিত হচ্ছে, এটিও গবেষণায় দেখানো হয়েছে। আমরা কিছু সুপারিশও দিয়েছি।’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ‘উইলি’তে প্রকাশিত প্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশিদের বিপাকীয় সমস্যাবিষয়ক একটি গবেষণায় বলা হয়, বিপাকীয় উপসর্গগুলো হৃদ্রোগ, স্ট্রোক এবং টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিদের মধ্যেও ২০ শতাংশের শরীরে বিপাকীয় উপসর্গ ছিল। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপে ভোগা ব্যক্তিদের মধ্যে ৭০ শতাংশের এবং ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ৪৭ শতাংশের বিপাকীয় উপসর্গ ছিল। পুরুষের চেয়ে নারীদের মধ্যে বিপাকীয় জটিলতা বেশি দেখা গেছে।
জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম কিবরিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পরিপাকতন্ত্রের যেসব রোগ রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অ্যাসিডিটির ওষুধের সেবন বেশি। এটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ নিজ ইচ্ছায় খায়। এসব ওষুধ শুধু ওটিসি (যা ওভার দ্য কাউন্টার অর্থাৎ ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কেনা যায়) বলেই যে মানুষ ইচ্ছেমতো কিনতে পারছে, বিষয়টা এমন নয়। বাংলাদেশে ওষুধের দোকানে ব্যবস্থাপত্র দেখার বিষয়টা তো তেমনভাবে মানাই হয় না। এসব ওষুধের এত বেশি সেবন অস্বাভাবিক।’
পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের অতিমাত্রায় সেবনের কারণ হিসেবে এসব ওষুধের সহজলভ্যতা এবং লোকের অসচেতনতা ও অজ্ঞতার কথা বলেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক বিএসএমএমইউ) প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদের ডিন ও পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘মানুষ এসব ওষুধ মুড়ির মতো খায়। খাদ্যাভ্যাস, জীবনাচারের কারণে অ্যাসিডিটি, পেটে ব্যথা হলেই তারা এসব ওষুধ খায়। অথচ এসব সমস্যা খুব সহজে রোধ করা যায়। আমাদের খাদ্যাভ্যাস গ্যাসের সৃষ্টি করে। আমরা ডালজাতীয় খাবার বেশি খাই। নিশ্চল জীবনাচার এবং মানসিক চাপ গ্যাসের সৃষ্টি করে। রাতে পেটভরে খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়লেও পেটে ব্যথ্যা ও গ্যাস হয়।’
অতিমাত্রায় গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়ে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ নির্বিচার ওষুধ গ্রহণের ফলাফল জানে না। যেমন রেনিটিডিন নামের ওষুধ এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। কেননা এতে ক্যানসার ঘটানোর মতো উপাদান পাওয়া গেছে। মানুষ নিত্যনতুন গ্যাসের ওষুধ খাচ্ছে। কোন ওষুধে কী আছে, তা এক দিনে জানা যায় না। ওটিসি হিসেবে ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই এ ধরনের যেসব ওষুধ বিক্রি হচ্ছে, তা বন্ধ হওয়া উচিত।’
সব ধরনের ওষুধের মধ্যে দেশে পরিপাকতন্ত্রের জটিলতাবিষয়ক ওষুধ বিক্রিতে রয়েছে তৃতীয় সর্বোচ্চ স্থানে। সরকারি গবেষণায় উঠে এসেছে, এসব ওষুধ বিক্রির অঙ্ক বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, জনসংখ্যার একটা বিশাল অংশ পরিপাকতন্ত্রের সমস্যায় ভুগছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভেজাল খাবার গ্রহণ ও সার্বিক খাদ্যাভ্যাস, অস্বাস্থ্যকর জীবনাচার ও অসংক্রামক রোগের বিস্তার বাড়ার কারণে পরিপাকতন্ত্রের রোগের ঘটনা বেড়েছে। নিজে নিজে ওষুধ সেবনের প্রবণতা বাড়াও এই রোগের ওষুধের বিক্রি বেড়ে চলার একটি কারণ।
সরকারের তথ্য বলছে, বছরে দেশের ওষুধের বাজারের আকার ৩৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর ৯৪ শতাংশই ব্যয় হয় ব্যক্তি উদ্যোগ বা পরিবারের মাধ্যমে। সরকারি ব্যয় মাত্র ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
একটি জরিপের অংশ হিসেবে সরকারের এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট। ‘বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল এক্সপেন্ডিচার ট্র্যাকিং বাই ডিজিজেস ২০২০’ নামের জরিপটি ২০২৩ সালের শেষে এসে প্রকাশ করা হয়। এটাই এ-বিষয়ক সর্বশেষ জরিপ। আর ওষুধের মোট ব্যয় নিয়ে এমন বড় জরিপ বাংলাদেশে প্রথম। এতে খুচরা পর্যায়ে ওষুধের দোকান, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত ওষুধের ব্যয়ের বিবরণ উঠে এসেছে। গবেষণাটিতে রোগভেদে ওষুধের বিভাজনও দেখানো হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হচ্ছে পেশিতন্ত্র ও সংযোগকারী টিস্যুর রোগের ওষুধে। এসব রোগসংক্রান্ত ওষুধের বাজার ৬ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকার। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সংবহনতন্ত্র অর্থাৎ হৃৎপিণ্ড, রক্তনালির যাবতীয় রোগের ওষুধের বাজার। এর আকার ৬ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে থাকা পরিপাকতন্ত্রের রোগের ওষুধের পেছনে ব্যয় হয় ৫ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা, যা মোট ওষুধের বাজারের ১৪ শতাংশ।
২১ এপ্রিল বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির এক কর্মশালায় বলা হয়, দেশের ওষুধের বাজারের সবচেয়ে বড় অংশ খাদ্যনালি ও বিপাকীয় নিরাময়ের ওষুধ নিয়ে। এর আকার মোট বাজারের ৩৫ শতাংশ।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয় ৭৭ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। এর ৫০ শতাংশই চলে যাচ্ছে ওষুধের বাজারে।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের গবেষণায় পরিপাকতন্ত্রের যেসব রোগব্যাধি ও সমস্যার উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বমি সিনড্রোম, ডায়রিয়া, খাদ্যে বিষক্রিয়া, পিত্তথলিতে পাথর, গ্যাস, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, খারাপ খাদ্যাভ্যাস, ভুল খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়ামের অভাব এবং মানসিক চাপের মতো রোগ। নিজের উদ্যোগেই ওষুধ কেনা, তাৎক্ষণিক প্রতিকারের সন্ধান খোঁজা, নৈমিত্তিক অ্যাসিড ও পেট ফাঁপা এবং আলসার নিরাময়ের ওষুধের উচ্চ ব্যবহারের মতো কয়েকটি কারণে পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের বাজারের আকার এত বড় হয়েছে। দরকারে-অদরকারে ওষুধ কেনায় অপচয় ও সাধারণ স্বাস্থ্যগত বিপত্তি হওয়া ছাড়াও উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের কারণে ওষুধের বিরুদ্ধে জীবাণুর প্রতিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে। কমছে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের কার্যকারিতা।
পরিপাকতন্ত্রের রোগগুলোকে ১০টি ভাগ করে ওষুধের ব্যয়ের বিভাজন করেছে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট। তাদের জরিপ বলছে, পরিপাকনালির রোগের কারণেই বিক্রি হচ্ছে সোয়া দুই হাজার কোটি টাকার ওষুধ। ব্যবহৃত ওষুধের ৪২ শতাংশই অ্যাসিড, গ্যাস ইত্যাদির কারণে। এসব ওষুধের ভোক্তার ৫৭ শতাংশ নারী এবং ৪৩ শতাংশ পুরুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস হপকিন্স মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী, হজমজনিত রোগগুলোই পরিপাকতন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। এর সঙ্গে খাদ্যনালি, লিভার, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র, পিত্তথলি এবং অগ্ন্যাশয়ের সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণ হজমজনিত ব্যাধির মধ্যে রয়েছে খাদ্যনালি ও পাকস্থলীর মধ্যবর্তী পেশির বিভিন্ন রোগ, ক্যানসার, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম, ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স (দুধজাতীয় খাদ্য হজমে অক্ষমতা) এবং হাইটাল হার্নিয়া। হজমজনিত অসুখের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণের মধ্যে রয়েছে রক্তপাত, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, বুক জ্বালা, ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমি।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টসের ফোকাল পয়েন্ট ডা. সুব্রত পাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় জাতীয় স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক ব্যয়ের তথ্য প্রকাশ করলেও ওষুধজনিত খরচ নিয়ে এমন কাজ প্রথম। ওষুধের ব্যয় কোথায় কত হচ্ছে, তা এই গবেষণায় উঠে এসেছে। এর মানে অবশ্য এই নয় যে সব ওষুধ ভোক্তা নিজেই কিনেছে। এর মধ্যে রপ্তানিও রয়েছে। ওষুধ কেনার কারণে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয়ের অঙ্ক প্রভাবিত হচ্ছে, এটিও গবেষণায় দেখানো হয়েছে। আমরা কিছু সুপারিশও দিয়েছি।’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ‘উইলি’তে প্রকাশিত প্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশিদের বিপাকীয় সমস্যাবিষয়ক একটি গবেষণায় বলা হয়, বিপাকীয় উপসর্গগুলো হৃদ্রোগ, স্ট্রোক এবং টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিদের মধ্যেও ২০ শতাংশের শরীরে বিপাকীয় উপসর্গ ছিল। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপে ভোগা ব্যক্তিদের মধ্যে ৭০ শতাংশের এবং ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ৪৭ শতাংশের বিপাকীয় উপসর্গ ছিল। পুরুষের চেয়ে নারীদের মধ্যে বিপাকীয় জটিলতা বেশি দেখা গেছে।
জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম কিবরিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পরিপাকতন্ত্রের যেসব রোগ রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অ্যাসিডিটির ওষুধের সেবন বেশি। এটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ নিজ ইচ্ছায় খায়। এসব ওষুধ শুধু ওটিসি (যা ওভার দ্য কাউন্টার অর্থাৎ ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কেনা যায়) বলেই যে মানুষ ইচ্ছেমতো কিনতে পারছে, বিষয়টা এমন নয়। বাংলাদেশে ওষুধের দোকানে ব্যবস্থাপত্র দেখার বিষয়টা তো তেমনভাবে মানাই হয় না। এসব ওষুধের এত বেশি সেবন অস্বাভাবিক।’
পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের অতিমাত্রায় সেবনের কারণ হিসেবে এসব ওষুধের সহজলভ্যতা এবং লোকের অসচেতনতা ও অজ্ঞতার কথা বলেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক বিএসএমএমইউ) প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদের ডিন ও পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘মানুষ এসব ওষুধ মুড়ির মতো খায়। খাদ্যাভ্যাস, জীবনাচারের কারণে অ্যাসিডিটি, পেটে ব্যথা হলেই তারা এসব ওষুধ খায়। অথচ এসব সমস্যা খুব সহজে রোধ করা যায়। আমাদের খাদ্যাভ্যাস গ্যাসের সৃষ্টি করে। আমরা ডালজাতীয় খাবার বেশি খাই। নিশ্চল জীবনাচার এবং মানসিক চাপ গ্যাসের সৃষ্টি করে। রাতে পেটভরে খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়লেও পেটে ব্যথ্যা ও গ্যাস হয়।’
অতিমাত্রায় গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়ে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ নির্বিচার ওষুধ গ্রহণের ফলাফল জানে না। যেমন রেনিটিডিন নামের ওষুধ এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। কেননা এতে ক্যানসার ঘটানোর মতো উপাদান পাওয়া গেছে। মানুষ নিত্যনতুন গ্যাসের ওষুধ খাচ্ছে। কোন ওষুধে কী আছে, তা এক দিনে জানা যায় না। ওটিসি হিসেবে ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই এ ধরনের যেসব ওষুধ বিক্রি হচ্ছে, তা বন্ধ হওয়া উচিত।’
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই পুলিশকে স্বাধীন ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য পদক্ষেপ নিতে প্রস্তাব দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। এ জন্য তাঁরা দ্রুত স্বাধীন কমিশন গঠনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জোর দাবি জানান। পুলিশ সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে ‘স্বাধীন কমিশন’ গঠনের...
৪ ঘণ্টা আগেতিন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুতিতে নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ দাবি করেন।
৫ ঘণ্টা আগেপ্রশিক্ষণ, সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজন এবং গবেষণার মাধ্যমে শ্রম অধিকার, শ্রম নীতিমালা, শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক, শ্রম অসন্তোষ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের...
৬ ঘণ্টা আগেবিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লন্ডন থেকে ঢাকায় আনার জন্য কাতার সরকারের কাছে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছে সরকার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন আজ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত করা হচ্ছে।
৭ ঘণ্টা আগে