Ajker Patrika

জুলাই সনদ: বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে অনড় দলগুলো

  • দলগুলোর কাছে সনদে স্বাক্ষরের জন্য দুজন করে নেতার নাম চাওয়া হয়।
  • রোববার দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসবে ঐকমত্য কমিশন।
  • ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের বিকল্প নেই: প্রধান উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জুলাই সনদ: বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে অনড় দলগুলো

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে নিজ নিজ অবস্থানে অনড় রয়েছে বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার আলোচনায়ও রাজনৈতিক দলগুলো পুরোনো অবস্থান জানিয়েছে।

বিএনপি চায়, সাংবিধানিক বিষয়গুলো নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে। কিন্তু বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায় জামায়াত। এদিকে নতুন সংবিধানের দাবিতে গণপরিষদ নির্বাচন চেয়েছে এনসিপি। সাংবিধানিক বিষয় ছাড়া অন্য বিষয়গুলো নির্বাহী আদেশ ও অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়নে একমত দলগুলো।

দলগুলোর কাছে গতকাল চূড়ান্ত জুলাই সনদ পাঠিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। দলগুলোকে সনদে স্বাক্ষরের জন্য দুজন করে নেতার নাম ১৩ সেপ্টেম্বরের (আগামীকাল শনিবার) মধ্যে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে। রোববার দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসবে কমিশন।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গতকাল আলোচনার শুরুতে জুলাই সনদের সাংবিধানিক বিষয়গুলো সম্পর্কে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামতের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। বলা হয়, দলগুলো জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ছয়টি পদ্ধতির কথা বলেছে। এর মধ্যে রয়েছে গণভোট, অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ, সংসদকে সংবিধান সংস্কার সভারূপে প্রতিষ্ঠা এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া। বিশেষজ্ঞ প্যানেল আলোচনার পর চূড়ান্তভাবে চারটি পদ্ধতির সুপারিশ করেছে। এগুলো হলো অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, গণভোট ও বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ।

বৈঠক শেষে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, সুপারিশের যেসব বিষয় সংবিধান-সংশ্লিষ্ট নয়, সেসব বিষয় বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি করতে পারে এবং সুপারিশের যেসব বিষয় সরকারি বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আদেশ ও বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করতে পারে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে অধ্যাদেশ জারি ও যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।

দেশে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা আছে উল্লেখ করে আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এটি না থাকলে অন্তর্বর্তী সরকারসহ সব অবৈধ। সবাই সনদে সই করে প্রতিশ্রুতিগুলো নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করবে। যারাই সংসদে যাবে, তারা এটার বাস্তবায়ন করবে। এখন প্রশ্ন আসে, এটা বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা কী? এই প্রশ্ন করা হলে এর জবাব আমরা দিতে পারব না। আমরা শুধু কমিটমেন্ট দিতে পারব।’ তিনি বলেন, সনদ বাস্তবায়নের আইনগত ভিত্তি বের করতে পারলে বিএনপি তাতে একমত হবে। কিন্তু তা কি হয়েছে? এখন এই সনদ বাস্তবায়ন হলে যেকোনো নাগরিক আদালতে যেতে পারেন। সংবিধান কি দুটি? বর্তমান সংবিধানের কী হবে? দুটি সংবিধান চলার মতো অবস্থা হবে। তখন আদালত প্রশ্ন করবেন, কে সংবিধান পরিবর্তন করল, কীভাবে করল, কার এই এখতিয়ার আছে।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, গণ-অভ্যুত্থানকে প্রাধান্য দেওয়া হবে নাকি সংসদকে। অভ্যুত্থানকে প্রাধান্য দিলে সংস্কারকে প্রাধান্য দিতে হবে। এটি পরবর্তী সংসদের হাতে ছেড়ে দিলে গণ-অভ্যুত্থানের প্রতি ইনজাস্টিস করা হবে। নামমাত্র সংস্কার হলে হবে না। এর আইনি ভিত্তি লাগবে। তার ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হবে। তিনি বলেন, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ দেশে অতীতেও হয়েছে। ১৯৭২, ১৯৭৭ সালেও হয়েছিল।

হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, সংস্কার বাস্তবায়ন বিশেষ আদেশের মাধ্যমে হতে পারে। গণভোটের মাধ্যমে হতে পারে। গণভোটের মাধ্যমে হলে সেটা টেকসই হবে। প্রথমে বিশেষ আদেশের মাধ্যমে করা হোক। পরে প্রয়োজনে গণভোট করা যেতে পারে। তিনি বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না থাকলে সবকিছু বিফলে যাবে। বিপ্লবটাই ধ্বংস হয়ে যাবে।

সংবিধানের সংশোধনী অতীতে আদালতে চ্যালেঞ্জ হওয়ার কথা জানিয়ে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘বর্তমান বাংলাদেশ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন গাঠনিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করেছে। সেটাকে যদি আমরা আমাদের ঐকমত্য কমিশনের আলোচনাগুলোকে, সংস্কার প্রস্তাবগুলোকে, যা কিছু সংবিধানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সেগুলোকে টেকসইভাবে বাস্তবায়ন করতে চাই, তাহলে নতুন সংবিধানই আমাদের জন্য একমাত্র পথ।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যদি নতুন করে সংবিধান লিখতে পারি, যা কিছু নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি এবং কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, সেগুলো যদি নতুন সংবিধানে আমরা অন্তর্ভুক্ত করতে পারি, তাহলেই কেবল আমরা টেকসইভাবে এই বিধানগুলোকে ভবিষ্যতে জাতির কাছে বাস্তবায়ন উপযোগী করে তুলতে পারব।’

কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ জানান, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে আগামী রোববার বেলা আড়াইটায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আলোচনায় বসবে। কমিশন গতকাল দলগুলোর কাছে চূড়ান্ত জুলাই সনদ পাঠিয়েছে। এই সনদে সকলের মতের প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। তিনি বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে সনদে স্বাক্ষরের জন্য দলগুলোর কাছে ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে দুজন প্রতিনিধির নাম পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।

গতকালের বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দার অংশ নেন।

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের বিকল্প নেই: প্রধান উপদেষ্টা

বাসস জানায়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন শুধু একটি সাধারণ নির্বাচনই নয়, এটি হচ্ছে একটি ফাউন্ডেশনাল ইলেকশন, যার মাধ্যমে আগামীর বাংলাদেশের পথরেখা নির্ধারিত হবে। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের অবশ্যই মৌলিক সংস্কারগুলো চূড়ান্ত করে ফেলতে হবে। একই সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের কোনো বিকল্প আমাদের হাতে নেই। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে ড. ইউনূস এ কথা বলেন। দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব এবং এ-সংক্রান্তে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে গঠিত ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটির প্রস্তাবনাগুলোও উপস্থাপন করা হয়।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম তিনটি ম্যান্ডেটের অন্যতম হচ্ছে সংস্কার। তাই নির্বাচন ও বিচারের মতোই সমান গুরুত্ব দিয়ে জুলাই সনদের বিষয়টিকে দেখতে হবে।’

কমিশনের সদস্যরা জানান, শিগগির কমিশন তাদের প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেবে। বিষয়টিকে সামনে এগিয়ে নিতে আগামী রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবারও বৈঠক করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, ড. আসিফ নজরুল, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বৈঠকে অংশ নেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডাকসুতে শিবিরের জয়ে উদ্বেগ শশী থারুরের, জবাব দিলেন মেঘমল্লার

‘বেয়াদবি ছুটায় দেব’: সরি বলতে অসুবিধা নেই, বললেন সেই জামায়াত নেতা

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির হোতা মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু গ্রেপ্তার

নতুন ট্রেন্ড ন্যানো ব্যানানা, নিজের থ্রিডি ফিগারিন বানাবেন যেভাবে

ইসরায়েলের হামলার কী জবাব হবে—আরব-ইসলামিক সম্মেলন ডাকল কাতার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত