Ajker Patrika

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ আগামী সপ্তাহ থেকে

  • ৫ কমিশনের সুপারিশগুলোর সারসংক্ষেপ ৩৭টি দলের কাছে পাঠানো হয়েছে।
  • রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেই আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে পদক্ষেপ।
  • দলগুলো আংশিকভাবে একমত যেসব বিষয়ে, সেগুলো নিয়েই বেশি আলোচনা হবে।
তানিম আহমেদ, ঢাকা 
আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৫, ১৩: ১৮
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পাঁচ সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে মতামত চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। দলগুলোকে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে মতামত জমা দিতে বলা হয়েছে। যেসব বিষয়ে দলগুলো একমত নয়, সেগুলোর সমাধানে ১৫ মার্চের পর থেকে দল বা রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে সংলাপ শুরু করবে কমিশন। তাঁরা বলছেন, পূর্বপরিকল্পিত কোনো কাঠামো নয়, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেই আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রথমে দল ও জোটগতভাবে আলোচনা করবে। তবে আমরা পূর্বপরিকল্পিত কোনো কাঠামো নিয়ে এগোচ্ছি না। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করব এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। এই আলোচনা খুব দ্রুত শুরু করতে চাই।’

রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনগুলো জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করে। এরপর সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে। সেখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। কোনো দল যদি একটি সংস্কার প্রস্তাবেও একমত না হয়, তাতেও অসুবিধা নেই। কোন দল কতটি প্রস্তাবে একমত হয়েছে, তা জানিয়ে দেওয়া হবে। ভিন্নমত থাকলে তা জানাতে পারবে কমিশনকে। কমিশন তা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলো ৬ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ছাপানো কপি সরবরাহ করার জন্য বলে। এরপর দলগুলোর কাছে তা পাঠানো হয়। পরে ৭ মার্চ পুলিশ সংস্কার কমিশন ছাড়া বাকি ৫ কমিশনের সুপারিশগুলোর সারসংক্ষেপ একটি স্প্রেডশিটে ছক আকারে ৩৭টি দলের কাছে পাঠানো হয়।

স্প্রেডশিটে প্রতিটি সুপারিশের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। প্রথমটি হলো, সংশ্লিষ্ট সুপারিশের ক্ষেত্রে একমত কি না। এতে তিনটি বিকল্প রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো ‘একমত’, ‘একমত নই’ এবং ‘আংশিকভাবে একমত’। এই তিনটি বিকল্পের যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত জানাতে বলা হয়েছে।

দ্বিতীয়তটি হলো, প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ছয়টি ঘর রয়েছে। সেগুলো হলো, সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়ন—‘নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে’, ‘গণপরিষদের মাধ্যমে’ ‘নির্বাচনের পর সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে’ এবং ‘গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে’। এসব ঘরের যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি সুপারিশের পাশে দলগুলোর ‘মন্তব্য’ দেওয়ার একটি জায়গা রাখা হয়েছে।

চলতি সপ্তাহের মধ্যেই দলগুলোর মতামত পাওয়া যাবে বলে মনে করছে কমিশন। তার ভিত্তিতে আগামী সপ্তাহ থেকে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরুর আশা করছেন তাঁরা, যা ২৪ মার্চ পর্যন্ত চলার সম্ভাবনা রয়েছে। রোজার ঈদের ছুটি শেষে ৭ এপ্রিল থেকে আবার সংলাপ করবে কমিশন। তবে সব বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত থাকবেন না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে সংলাপ হবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে। তাদের দু-তিনটি বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে, তা ছাড়া ব্যাপকভিত্তিক দ্বিমত আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্যগুলো দূর হবে আশা করছি। দলগুলো আংশিকভাবে একমত যেসব বিষয়ে, সেগুলো নিয়েই বেশি আলোচনা হবে। যেটাতে একমত নয়, সেটা নিয়েও আলোচনা হবে।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্রে জানা গেছে, যেসব দল আগে তাদের প্রস্তাবনা কমিশনে পাঠাবে, সেই দলের সঙ্গে আগেই আলোচনা শুরু করবে। প্রথমে দল, জোটগত সংলাপ করা হবে। এরপর যেসব দল একই মতের হবে, তাদের সঙ্গে বসবে কমিশন। এর মধ্যে একাধিক দলের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে বলেও সূত্রে জানা গেছে। কমিশনের এক সদস্য বলেন, এটা এমন একটা কাজ, যার জন্য অনেক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করতে হয়, সেটা নিয়ে বলার কিছুই নেই।

সংস্কারের বিষয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা নানা কথা বলছেন। অনেকে বলছেন, সংস্কারের নামে সরকার নির্বাচনকে পেছাতে চায়। নেতাদের এসব কথাবার্তাকে ‘মেঠো বক্তব্য’ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

মনির হায়দার বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, সংস্কারের সুপারিশের বিষয়ে তাঁদের বড় রকমের দ্বিমত নেই।

এদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে মতামত তুলে ধরতে দলীয় ফোরাম ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কাজ চলছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে সময়মতো আমাদের প্রস্তাব ও মতামত লিখিতভাবে জানাব। এটা নিয়ে দলের বিশেষজ্ঞ প্যানেল কাজ করছে।’

বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের ওপর মতামত দিতে খুব দ্রুত বৈঠক বসবে দলটি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অসুস্থ থাকায় বৈঠকে বসতে দেরি হচ্ছে বলেও সূত্রটি জানিয়েছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবনার বিষয়ে এখনো দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। খুব বেশি সময় লাগবে না। হয়তো দু-এক দিনের মধ্যেই হয়ে যাবে। পরে তা লিখিত আকারে জানানো হবে।

কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে দলীয় মতামত কী হবে, তা নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) আলোচনা করছে বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, যেসব সংস্কার সংবিধানসম্পর্কিত নয়, সেগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে করার প্রস্তাব করব, যা পরের সরকার আইনে পরিণত করবে। সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার গণপরিষদ ও নির্বাচিত আইনসভার মাধ্যমে করার প্রস্তাব দেব। একই সঙ্গে জুলাই চার্টারকে গণভোটে দেওয়ার প্রস্তাব থাকবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের অপেক্ষায় আছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাঁচটি কমিশনের যেসব প্রস্তাব গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি, সেগুলোর মতামত জানানোর জন্য বলেছি। কারণ এগুলোর জন্য কাঠামোগত ও সাংবিধানিক পরিবর্তনের প্রয়োজন, সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চেয়েছি। চাইলে বাইরের বিষয়েও তাদের মতামত দিতে পারবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাবধান! ৯৯৯ ক্লোন করে বিকাশ-নগদের পিন চাচ্ছে প্রতারকেরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৩৭
সাবধান! ৯৯৯ ক্লোন করে বিকাশ-নগদের পিন চাচ্ছে প্রতারকেরা

সম্প্রতি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বর ক্লোন করে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতারকেরা ৯৯৯ নম্বর ব্যবহার করে বিকাশ, নগদ, রকেটসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর ও ব্যাংকের কার্ডসংক্রান্ত তথ্য জানতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর প্রধান অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মহিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কখনোই কোনো নাগরিকের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট বা ব্যাংক কার্ডের পিন নম্বর জানতে চায় না। নাগরিকদের চাহিদা অনুযায়ী জরুরি মুহূর্তে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্সসেবা দেওয়া হয়।

আজ সকাল ১০টার দিকে এ ধরনের দুটি প্রতারণার ঘটনা ঘটে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কাশিয়াডাঙ্গা থানার আরপুর বাগানপাড়া এলাকার এক বাসিন্দাকে প্রতারকেরা ৯৯৯ নম্বর ক্লোন করে ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টের তথ্য জানতে চায়। তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে সরাসরি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করেন। পরে ৯৯৯ থেকে স্থানীয় থানার সঙ্গে ভুক্তভোগীর যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয় এবং ঘটনাটি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।

আরও এক ঘটনায় এক ব্যক্তিকে ৯৯৯ নম্বর থেকে ফোন করে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানানো হয় এবং বিকাশ অ্যাকাউন্টের তথ্য দাবি করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট ও ব্যাংকের কার্ডের পিন নম্বর কোনো অবস্থায় কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। এ ধরনের প্রতারক চক্র থেকে সতর্ক থাকা ও তাদের সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট থানা বা ৯৯৯ নম্বরে জানাতে জনগণকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা বানানো সেই ইউএনও ওএসডি

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

নিজের চাচা-চাচিকে বাবা-মা সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেনকে ওএসডি করেছে সরকার। আজ বুধবার তাঁকে ওএসডি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

কামাল হোসেন তাঁর পিতা-মাতা মো. আবুল কাশেম ও মোছা. হাবীয়া খাতুনের পরিবর্তে নিজের চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আহসান হাবীব ও চাচি মোছা. সানোয়ারা খাতুনকে পিতা-মাতা দেখিয়ে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা নিতে জালিয়াতির অভিযোগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর দুদকের ঢাকা-১-এর সম্মিলিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. মনজুরুল ইসলাম মিন্টু বাদী হয়ে কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

কামাল হোসেনের প্রকৃত মা-বাবা কারা, তা নিশ্চিত হতে গত মঙ্গলবার ডিএনএ পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরদিন ইউএনও কামাল হোসেনকে ওএসডি করা হলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই বিপ্লবীরা নতুন সংবিধান চাইলে সেটাই হতো সংবিধান: অ্যাটর্নি জেনারেল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ফাইল ছবি
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ফাইল ছবি

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘জুলাই বিপ্লবীরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে বলত, “আমরা ৭২-এর সংবিধান চাই না, আমরা নতুন সংবিধান রচনা করতে চাই”—তাহলে সেটাই হতো সংবিধান। কিন্তু তাদের মধ্যে বিভেদ থাকলে হবে না। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে আজ বুধবার এসব কথা বলেন রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বিভাগে অষ্টম দিনের মতো এ বিষয়ে শুনানি হয়।

এদিন আরও শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আনীক আর হক এবং বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। খায়রুল হক সাহেবরা হুকুম নড়ায়ে দিয়েছেন সংক্ষিপ্ত রায় এবং পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্য দিয়ে; যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শাস্তি হতে পারে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড। সংবিধান একটা অরগানিক ডকুমেন্ট। এটা বিভিন্ন রকমভাবে উপস্থাপিত হয়। কোরআন কিংবা বাইবেল—কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। সংবিধান পরিবর্তনযোগ্য। আজকে সংবিধানের অ্যামেন্ডমেন্টে (সংশোধন) যদি বলে দেন, তত্ত্বাবধায়কে ফিরে গেলাম, সেটাই যে অ্যাবসোলিউট (যথাযথ) হবে—তাও না। এটাও জনগণের চাহিদা অনুসারে হবে। জনগণ যদি মনে করে, এটাতে তার ভোটাধিকার নিশ্চিত হচ্ছে না, জনগণ ইচ্ছা করলে এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে পারবে।’

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা মনে করি, ওই (তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল) রায় থাকা উচিত না। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রায়টা লেখা হয়েছে একটি বিশেষ দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য। এই রায় দুটি গ্রাউন্ডে বাতিল হবে। সাতজন মিলে ঘোষণা করলেন, আগামী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। সেখানে উনারা ডেভিয়েট (বিচ্যুত) করে পূর্ণাঙ্গ যে রায় দিলেন, তা ওপেন ঘোষণা রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ঘোষিত রায় পরিবর্তন করার জন্য রিভিউ করতে হবে। রিভিউ যেকোনো পক্ষ করতে পারে। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও করতে পারেন। খায়রুল হক সেই পথে না গিয়ে যে পথে হেঁটেছেন, তা আইনের ব্যত্যয়। রিভিউ না করে উনি রায় পরিবর্তন করেছেন। এটা দণ্ডবিধির ২১৯ ধারা অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উনি পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে জানতেন, এ ধরনের পরিবর্তন করা আইনে সম্ভব নয়। তারপরও উনি সেটা করেছেন।’

আসাদুজ্জামান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাংলাদেশে আসার পরে যেভাবে দেশের গণতন্ত্র উন্নত হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলোপের পরে সেই সুযোগ হয়নি। এই ব্যবস্থা বাতিল করার পর হত্যা, গুম, রাতের বেলায় ভোট দেওয়া, মিথ্যা মামলায় মানুষকে কারাগারে পাঠানো—এ ধরনের রাজনীতি শুরু হয়। ৭০ লাখের মতো মানুষ গায়েবি মামলায় আসামি হয়। সেই কারণে এটা ২১৯ ধারার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিচারকদের পারিতোষিক ও ছুটিসংক্রান্ত আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের পারিতোষিক, ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকারসংক্রান্ত আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়েছে। ১৩ জনের পক্ষে এ রিট করা হয়েছে বলে আজ বুধবার জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

রিটকারীরা হলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, আবদুল্লাহ সাদিক, মো. মিজানুল হক, আব্দুল ওয়াদুদ, রহিম উল্লাহ, আমিনুল ইসলাম শাকিল, ঢাকার জেলা জজ আদালতের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ, শিক্ষানবিশ আইনজীবী সাব্বির রহমান, মাহমুদুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত জাকারিয়া, রাফিউল সাব্বির, শামিম সাহিদি ও হাবিবুর রহমান আল হাসান।

রিট আবেদনে বলা হয়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ। সংবিধানের ৯৪(৪) ও ১৪৭(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের আর্থিক স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। তবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২১ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৩ অনুযায়ী বিচারকদের বেতন, পেনশন ও বিশেষাধিকার এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বাস্তবে তাঁদের আর্থিক স্বাধীনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করছে।

আবেদনে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রধান বিচারপতি ও বিচারকদের বেতনকাঠামো তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের আর্থিক অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় নিম্ন স্তরে রয়েছে। এই অসামঞ্জস্য শুধু আর্থিক নয়, বরং বিচার বিভাগের মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের মানের প্রতি সাংঘর্ষিক।

রিটে আরও বলা হয়, সংবিধানে প্রদত্ত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার বিভাজনের নীতিকে উপেক্ষা করে সংসদ তার সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে উক্ত আইন দুটি প্রণয়ন করেছে। এর ফলে বিচারপতিদের জন্য এক অন্যায্য ও বৈষম্যমূলক বেতনকাঠামো সৃষ্টি হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত