Ajker Patrika

সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ৩৮
মঙ্গলবার মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। ছবি: স্ক্রিনশট
মঙ্গলবার মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। ছবি: স্ক্রিনশট

গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তনের পর বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়েছে। তবে কিছু বিষয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। দেশের ২০২৪ সালের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার–বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, ছাত্র আন্দোলন এবং ব্যাপক সহিংসতায় শত শত মানুষের মৃত্যুর পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যান। এরপর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এই সরকার দেশের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি সাবেক সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্তে কাজ শুরু করেছে।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড

সাবেক সরকারের অধীনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং বেআইনিভাবে মানুষ হত্যার অসংখ্য অভিযোগ ছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)-এর অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৬ জুলাই থেকে ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ছাত্র, শিশু, রাজনৈতিক কর্মী, শ্রমিক ও পুলিশসহ অন্তত ৯৮৬ জন নিহত হয়েছেন।

ছাত্রদের সমন্বয়কারী সংগঠন ‘স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট ডিসক্রিমিনেশন’-এর তথ্যমতে, এই সময়ে ১ হাজার ৪২৩ জন নিহত এবং ২২ হাজার জন আহত হয়েছেন। নিহতদের ৭৭ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে গুলিবিদ্ধ হয়ে এবং ৭০ শতাংশের বয়স ছিল ৩০ বছরের নিচে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২৪ সেপ্টেম্বর একটি খসড়া তালিকা প্রকাশ করে, যেখানে ৭০৮ জনের মৃত্যুর তথ্য দেওয়া হয় এবং জনসাধারণের কাছে আরও সঠিক তথ্য সংগ্রহের জন্য আহ্বান জানানো হয়।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের অধিকার

সাবেক সরকারের অধীনে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ ছিল। সাংবাদিক ও ব্লগাররা হয়রানি ও মামলার ভয়ে স্ব-আরোপিত সেন্সরশিপে ভুগছিলেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ) ব্যবহার করে সরকারের সমালোচনাকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা করা হয়েছিল।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেপ্টেম্বরে ডিএসএ, সিএসএ এবং আইসিটি আইনের অধীনে দায়ের করা ১ হাজারের বেশি ‘বাক-স্বাধীনতা সম্পর্কিত’ মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসব মামলায় আটক ব্যক্তিদের পর্যায়ক্রমে মুক্তি দেওয়া হবে।

তবে, সরকার পরিবর্তনের পর সাবেক সরকারের সমর্থক হিসেবে বিবেচিত ১৬৭ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে তারা সরকারি অনুষ্ঠানে প্রবেশাধিকার হারিয়েছেন। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ফারজানা রূপা, শাকিল আহমেদ, মোজাম্মেল বাবু এবং শ্যামল দত্তসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্রমিক অধিকার এবং কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ

সাবেক সরকারের অধীনে শ্রমিকদের ইউনিয়ন গঠনের অধিকার এবং যৌথ দর-কষাকষির স্বাধীনতা সীমিত ছিল। আইনগতভাবে ইউনিয়ন গঠনের অনুমতি থাকলেও, বাস্তবে নানা ধরনের বাধা দেওয়া হতো। বিশেষ করে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)-এর শ্রমিকদের জন্য ইউনিয়ন গঠনের অনুমতি ছিল না।

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। পোশাক ও বস্ত্র শিল্প, নির্মাণ, জাহাজ ভাঙা এবং অনানুষ্ঠানিক খাতগুলোতে পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য (ওএসএইচ) লঙ্ঘনের ঘটনা ছিল ব্যাপক। সেপ্টেম্বরে একটি জাহাজ ভাঙা কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে সাতজন শ্রমিক নিহত হন। এর প্রতিক্রিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট চালু করেছে।

গুম এবং দীর্ঘস্থায়ী আটক

সাবেক সরকারের আমলে গুমের অসংখ্য অভিযোগ ছিল, যার বেশির ভাগ শিকার ছিলেন বিরোধী দলের নেতা, কর্মী ও ভিন্নমতাবলম্বীরা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই গুমের ঘটনাগুলো তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করেছে। কমিশনটি ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা এবং এর আশপাশে আটটি গোপন বন্দিশালা খুঁজে পেয়েছে এবং গুমের ১ হাজার ৬০০ টিরও বেশি অভিযোগ পেয়েছে।

সরকার পরিবর্তনের পরপরই, কিছু গোপন বন্দিশালা থেকে কিছু গুমের শিকার ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চাকমা সম্প্রদায়ের অধিকারকর্মী মাইকেল চাকমাও ছিলেন, যিনি পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে গোপন আটক কেন্দ্রে ছিলেন। তবে এখনো প্রায় ১০০ জন গুমের শিকার ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে।

সংবিধানে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারকের সামনে হাজির করার বিধান থাকলেও, সাবেক সরকারের অধীনে এই নিয়ম প্রায়শই লঙ্ঘিত হতো। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই নিয়ম মেনে চলতে শুরু করেছে।

শরণার্থীদের সুরক্ষা

বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) এবং অন্যান্য মানবিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে। যদিও বাংলাদেশ ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী নয়, তবুও সরকার ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। ২০২৪ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বৃদ্ধির পর ৬৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব নতুন আসা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। ভাসান চরে বর্তমানে ৩৬ হাজার ৫৯৩ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছে এবং সরকার ও ইউএনএইচসিআর-এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী তাদের সুরক্ষা ও সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

ট্রান্সন্যাশনাল দমন-পীড়ন

সাবেক সরকারের আমলে বিদেশে অবস্থানরত ভিন্নমতাবলম্বী, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের জন্য ট্রান্সন্যাশনাল দমন-পীড়নের অভিযোগ ছিল। তবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই ধরনের কোনো ঘটনা রিপোর্ট করা হয়নি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫৪ জন বাংলাদেশি শ্রমিককে ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে প্রতিবাদ করার কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আলোচনার পর আমিরাতের প্রেসিডেন্ট তাঁদের ক্ষমা করে দেন।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

জি এম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা ও মামলা প্রত্যাহার

ভারতকে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

প্লট–ফ্ল্যাট বরাদ্দে সচিব, এমপি, মন্ত্রী, বিচারপতিসহ যাঁদের কোটা বাতিল

জুলাই সনদের বৈধতা নিয়ে আদালতেও প্রশ্ন তোলা যাবে না

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত