Ajker Patrika

অধিদপ্তরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেয় না মন্ত্রণালয়

আজাদুল আদনান ও আশিকুর রিমেল
আপডেট : ২১ জুন ২০২১, ২১: ২৮
অধিদপ্তরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেয় না মন্ত্রণালয়

ঢাকা: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিস্তার ঠেকাতে আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় দেশ। এরপরও লাগাম টানা যায়নি এই ভাইরাসের। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নতুন করে দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। আগের সব নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে আজকের এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না। তাই, সংক্রমণ ঠেকাতে নির্দেশনা নয় বাস্তবায়নই জরুরি বলে মনে করছেন তাঁরা।

দেশের অভ্যন্তরে নির্দেশনাগুলো ঢিলেঢালাভাবে মানা হলেও শুরু থেকেই সীমান্তে জারি হওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নে ছিল জটিলতা। যার ফলে এপ্রিলের আগ পর্যন্ত ভাইরাসটির কেন্দ্র ঢাকা হলেও বর্তমানে সেটির উৎস সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো।

চলমান ভয়াবহ এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখনই যদি কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়া না হয় তাহলে ঈদের আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বর্তমানে আক্রান্তদের অধিকাংশই সীমান্ত দিয়ে আসা ভারতীয় ডেলটা ধরনের শিকার। যা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। মৃত্যুও দ্রুত বাড়ছে সেসব জেলায়। বিশেষ করে আসন্ন কোরবানির ঈদকে ঘিরে রাজধানীসহ সব জেলায় ভারতীয় ধরনের ব্যাপক বিস্তারের শঙ্কা জনস্বাস্থ্যবিদদের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে মৃতদের মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত সীমান্তবর্তী দুই বিভাগ রাজশাহী ও খুলনায় মৃত্যু হয়েছে ৫২ জনের। এর মধ্যে ঢাকায় ২৩, উত্তরের বিভাগ রাজশাহীতে ১৫ জন ও খুলনায় ১৪ জন।

একই সঙ্গে বেড়েছে সংক্রমণের হার। গত একদিনে দেশে ৪ হাজার ৬৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ঢাকাসহ সীমান্তবর্তী ওই দুই বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৫৮১ জন। শনাক্তের হারে যা ৮০ শতাংশের কাছাকাছি। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে খুলনায় (৪০ দশমিক ০৪ শতাংশ)।

করোনা প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়হীনতার কারণেই আজকে এই অবস্থা। নির্দেশনা তো আগেও অনেক হয়েছে। কিন্তু কোনটিরই সঠিক বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাইনি। প্রধানমন্ত্রী গত বছর সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি জেলায় আইসিইউ স্থাপনসহ অনেকগুলো নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমরাও পরামর্শ দিয়েছি কিন্তু কোনটি বাস্তবায়ন হয়নি।

সমন্বয়হীনতার কথা স্বীকার করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, করোনার শুরু থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শ নিয়ে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে সেগুলো পাঠালে সে অনুযায়ী নির্দেশনা দেওয়া হয় না। আমরা ১৪ দিনের বিধিনিষেধ দিলে মন্ত্রণালয় থেকে আসে সাত দিনের। আবার পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হয়। এটাতো আসলে নিয়ম না।

ঈদকে সামনে রেখে নতুন কোনো পরিকল্পনা আছে কী–না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা পরিকল্পনা নিলেও সেটি বাস্তবায়ন হয় না। যারা ব্যবস্থা নেবেন তারা সেটির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেন না। তাই, সমন্বয়হীনতার অভাবে কোনো পরিকল্পনায় কাজে আসছে না। নতুন করে কিছু নেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি।

গত ৫ এপ্রিল ঘোষণা করা হয় কঠোর বিধিনিষেধ। কয়েক দফা বাড়িয়ে যা আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত করা হয়েছে। সীমান্তের প্রভাবে রাজধানী ঢাকায় আগের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে সংক্রমণ। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা হিসেবে পার্শ্ববর্তী সাত জেলা–নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, রাজবাড়ী ও মাদারীপুরে মঙ্গলবার থেকে ৯ দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই সময়ে এসব জেলায় গণপরিবহন থেকে শুরু করে অফিস–আদালত বন্ধ থাকবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

পিটুনিতে নিহত সেই শামীম মোল্লাকে বহিষ্কার করল জাবি প্রশাসন, সমালোচনার ঝড়

চিন্ময় দাসের জামিন স্থগিতের আবেদন, শুনানি রোববার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত