Ajker Patrika

৭ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি

পানিবন্দী হাজারো পরিবার, মিলছে না ত্রাণ, দুর্ভোগ

  • পানিতে ডুবে যাওয়ায় অনেকে কাঁচা ধান কেটে ঘরে তুলছে।
  • শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে।
  • রাজশাহীর বাঘায় তলিয়েছে ফসলি জমি।
  • ভাঙন-আতঙ্কে গাইবান্ধার নদীর তীরের মানুষ।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। বাধ্য হয়ে অপরিপক্ব ধান কাটছেন এক দম্পতি। ছবি: আজকের পত্রিকা
পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। বাধ্য হয়ে অপরিপক্ব ধান কাটছেন এক দম্পতি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দফায় দফায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে ছয় জেলার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কয়েকটি স্থানে ইতিমধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে পানি। এতে ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও ফসলের খেত। বাধ্য হয়ে অনেকে কাঁচা ধান কেটে ঘরে তুলছে। অনেকেই পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে নিরাপদ স্থানে। এর মধ্যে খবর পাওয়া গেছে, কোথাও কোথাও শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। মিলছে না ত্রাণও।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ এবং দক্ষিণ ওডিশা উপকূলের অদূরে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। মৌসুমি বায়ু ভারতের রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে ভারতের আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর প্রভাবে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আজ বৃহস্পতিবার রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হতে পারে।

পদ্মার পানিতে তলিয়ে গেছে বাঘার ফসলি জমি

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নে পদ্মার আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে শত শত হেক্টর ফসলি জমি। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৬০০ পরিবার। বন্যা ও নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বহু বাড়িঘর। ফসল হারিয়ে দিশেহারা কৃষক এখন কাঁচা ধান গরুর খাবার হিসেবে কেটে নিচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, চকরাজাপুর ইউনিয়নের মাঠগুলোয় এখন শুধু পানি আর পানি। নিচ পলাশী ফতেপুর মাঠে সবচেয়ে বেশি ফসলহানি হয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউনিয়নের পলাশী ফতেপুর, কালিদাসখালী, আতারপাড়া, চৌমাদিয়া এবং দিয়াড় কাদিরপুরের প্রায় ৬০০ বাড়িঘর পানিতে ডুবে গেছে। চকরাজাপুর উচ্চবিদ্যালয়সহ প্রায় ৫০টি পরিবার নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাম্মী আক্তার বলেন, প্রাথমিকভাবে ২২০টি পরিবারের পানিবন্দী হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

শুকনা খাবারের সংকট, মিলছে না ত্রাণও

চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুই উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১১ হাজার পরিবার অতিবৃষ্টি আর উজানের ঢলে বেশ কিছুদিন ধরেই পানিবন্দী হয়ে রয়েছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধের সংকট। কিন্তু চাহিদার তুলনায় তেমন কিছুই পাচ্ছে না বন্যাকবলিত এসব এলাকার বাসিন্দারা। তবে প্রশাসন বলছে, বরাদ্দ কম। তাই যতটা সম্ভব বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের কানছিড়া জ্যাটপাড়া এলাকার বাসিন্দা রুলিয়া বেগম বলেন, ‘হামার বাড়িতে এক সপ্তাহ থেকে পানি ঢুকে গেছে। খাবারদাবার কিছুই নাই। পরের কাছে চেয়েচিন্তে খাচ্ছি। এখন পর্যন্ত কেহু হামাকে খাবার দিতে আসেনি। হামাদের এখানকার কেহু খাবার পায়নি।’

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, জেলায় ২৮ টন চাল ও ২৩০ পরিবারকে শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চার পরিবারকে আট বান্ডিল টিন ও ২৪ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

এদিকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় শিবগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ফসলের। সরেজমিনে দেখা গেছে, আউশ ধান, আখ, হলুদ ও বিভিন্ন শাকসবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকেই তলিয়ে যাওয়া ধান গবাদিপশুকে খাওয়ার জন্য কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

লালমনিরহাটে পানিবন্দী ২০ হাজার পরিবার

টানা তিন দিনের ভারী বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা দুই দিন বিপৎসীমার ওপরে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহে চরম অবনতি ঘটেছে লালমনিরহাটের বন্যার পরিস্থিতি। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

গতকাল বেলা ৩টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৯ মিটার; যা বিপৎসীমার ৪ সেমি ওপরে।

ঘরে পানি, তলিয়ে গেছে ফসলের খেত

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তাবেষ্টিত চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক শ পরিবার। তলিয়ে গেছে আমন ধান ও সবজিখেত। উপজেলার লক্ষ্মীটারী, কোলকোন্দ, নোহালী, গজঘণ্টা ও মর্নেয়া ইউনিয়নে তিস্তা নদীর নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দী হয়ে পড়েছে মানুষজন।

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলী গ্রামের কুমোবালা বলেন, ‘বুধবার সকাল থেকে বাড়িতে পানি ওঠে। পানি ওঠায় কষ্টে আছি। এর আগেও পানি উঠে দুদিন কষ্টে থাকলেও কোনো সহায়তা পাইনি।’

কুড়িগ্রামে বন্যার পদধ্বনি

কুড়িগ্রামে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। গতকাল বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে এমন তথ্য জানিয়েছে কুড়িগ্রাম পাউবো।

ব্রহ্মপুত্রতীরবর্তী উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা মতিয়ার রহমান বলেন, ‘পানি বাড়তেছে। নদের মাঝের কিছু নিচু চরে পানি ঢুকতেছে। তবে এখনো বাড়িঘরে পানি ওঠে নাই। এমন করি বাড়তে থাকলে বন্যা হইতে পারে।’

পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, পানি বাড়ছে। বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

ভাঙন-আতঙ্কে নির্ঘুম রাত

দফায় দফায় বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধার সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টি হয়েছে ৪০ মিলিমিটার। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তীরের মানুষগুলো ভাঙনের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে।

ফুলছড়ি উপজেলার গুপ্তমণি চরের বাসিন্দা ইমন মিয়া বলেন, ‘নদীতে পানি বাড়ছে। পানি বাড়লেই আমরা আতঙ্কে থাকি ভিটেমাটি হারানোর ভয়ে।’

দৌলতপুরে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি আরও ১০ সেমি বেড়েছে। এতে চিলমারী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ইউনিয়নের মোট ১৯টি গ্রাম পানিবন্দী হয়ে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ১৬টি গ্রামে আরও প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে।

এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বন্যাকবলিত দুই ইউনিয়নের ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকায় আজকের পত্রিকা'র প্রতিনিধিরা]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

জি এম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা ও মামলা প্রত্যাহার

ভারতকে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

প্লট–ফ্ল্যাট বরাদ্দে সচিব, এমপি, মন্ত্রী, বিচারপতিসহ যাঁদের কোটা বাতিল

জর্ডান-মিসরকে নিয়ে বৃহত্তর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা করতে চান নেতানিয়াহু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত