জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব কেমন হবে, তা নিয়ে অবশেষে একটি সিদ্ধান্তে এসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে ১০০ আসনে উন্নীত করা হবে। নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার পক্ষে রাজনৈতিক মতৈক্য হলেও বেশির ভাগ দল ১০০ আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে। সংলাপে কিছু দল সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে এবং কিছু দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছে। এই অবস্থায় বিদ্যমান ৫০ সংরক্ষিত নারী আসন রাখার পাশাপাশি জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ৩০০ সংসদীয় আসনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কমিশন। সেই সঙ্গে চতুর্দশ জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
গতকাল ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে নারী আসন নিয়ে আলোচনার পর এসব সিদ্ধান্ত দেয় কমিশন। পরে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিয়ে কমিশনের প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয়, ১২টি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া দিতে পারবেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—অ্যাটর্নি জেনারেল; জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ; তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য; বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান; আইন কমিশনের চেয়ারম্যান; বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর; বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য; এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য; বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য; সশস্ত্র বাহিনীসমূহের (সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী) প্রধান, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) মহাপরিচালক নিয়োগ।
নারী আসনে নিয়ে বারবার প্রস্তাব পরিবর্তন: সংসদে নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার পক্ষে রাজনৈতিক মতৈক্য হলেও বেশির ভাগ দল ১০০ আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে। দলগুলোর অনাগ্রহের কারণে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বেশ কয়েকবার প্রস্তাবে সংশোধনী আনলেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রথমেই ১০০ আসনে নারীর সরাসরি ভোটের প্রস্তাব করেছিল। সংলাপে নারী আসনে নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দিলে ১৪ জুলাই নতুন প্রস্তাব হাজির করে কমিশন। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, কমপক্ষে ২৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রাজনৈতিক দলের মোট প্রার্থীর এক-তৃতীয়াংশ নারী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে নারীদের জন্য পৃথকভাবে কোনো সংরক্ষিত আসন থাকবে না। কিন্তু বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। পরের এক আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বিদ্যমান ৫০ সংরক্ষিত আসন বহাল রেখে ৫ শতাংশ আসনে সরাসরি নির্বাচনে নারীদের প্রার্থী করার প্রস্তাব দেন।
গতকাল বুধবার দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২২তম দিনের আলোচনায় নতুন প্রস্তাব হাজির করে ঐকমত্য কমিশন। পরিবর্তিত প্রস্তাবে বলা হয়, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমে ১০০ আসনে উন্নীত করা হবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫-এর দফা (৩)-এ প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে বিদ্যমান সংরক্ষিত ৫০টি আসন বহাল রেখে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষরের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে ৭ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। পরের নির্বাচন, অর্থাৎ চতুর্দশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ১৫ শতাংশ আসনে সরাসরি নির্বাচনের জন্য নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে। এভাবে প্রতি নির্বাচনে ৫ শতাংশ হারে বাড়িয়ে নারী প্রার্থী ১০০-তে উন্নীত করবে রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো এতেও রাজি হয়নি।
কমিশনসংশ্লিষ্ট একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা জুলাই আন্দোলনের চেতনা এবং নারীদের সঙ্গে বেইমানি করেছি। পুরুষতন্ত্রের কাছে নারীর সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’
গতকালের সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদে সংশোধনের প্রস্তাব দেন, যেখানে তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে প্রার্থী তালিকায় নারীদের জন্য ৫-৭ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলেন। তিনি প্রস্তাব করেন, চতুর্দশ সংসদ থেকে ধাপে ধাপে নারী প্রার্থী ১৫ শতাংশে উন্নীত হবে এবং এভাবেই শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো ১০০ জন নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিতে সক্ষম হবে। নিজের প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, বিএনপির পক্ষেও মোট প্রার্থীর ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া একটি চ্যালেঞ্জ হবে এখন।
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বিএনপির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং নারীদের অন্তর্ভুক্তির চেতনা সমুন্নত রেখে বিকল্প উপায়ে হলেও ১০০টি সংরক্ষিত আসন রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তাঁর দল সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে ১০০-তে বৃদ্ধির পক্ষে।
অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন জাতীয় ঐকমত্য কমিটির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং ১০০টি নারী সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে নিজের দলের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি জুলাই চার্টারের খসড়া বাস্তবায়ন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের তানিয়া রব এবং এনডিএমের মোমিনুল আমিন নারীদের মনোনয়ন-সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা কিছুটা শিথিল করার প্রস্তাব দেন, যাতে দলগুলো ৫-৭ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের ‘সুযোগ’ তৈরি করার অঙ্গীকার করে। অন্যদিকে জাসদের মুশতাক হোসেন গভীর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ধারাবাহিকভাবে গণপ্রতিনিধিত্ব আইন (আরপিও) অনুযায়ী নিজেদের সংগঠনে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স কমিশনের প্রস্তাবে হতাশা জানিয়ে ১০০টি সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে মত দেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আশরাফ আলী আকন এই আসনগুলোয় ভোটভিত্তিক আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার পক্ষে মত দেন। নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার প্রস্তাবিত ৫ শতাংশ সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করেন। খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ১০০টি সংরক্ষিত নারী আসনে ভোটভিত্তিক সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা নিশ্চিত না হলে তাঁর দল প্রস্তাবে সই করবে না।
মুশতাক এই পরিমার্জিত প্রস্তাবের বিরোধিতা অব্যাহত রাখেন, আর গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রস্তাবটি সমর্থন করেন, তবে ১৪তম জাতীয় সংসদ থেকে নারীদের ১৫ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ জানান।
বিরতির পর আলী রীয়াজ জানান, সংসদে নারী প্রতিনিধির সংখ্যা ধাপে ধাপে ১০০ আসনে উন্নীত করার বিষয়টি কমিশনের নীতিগত অবস্থান। তিনি বলেন, কেউ পিআর চায়, কেউ চায় সরাসরি নির্বাচন—দুই ধরনের মতামতই সনদে উল্লেখ থাকবে।
আলী রীয়াজ রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সমঝোতার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে কমপক্ষে ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের জন্য উৎসাহিত করার আহ্বান জানান এবং বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত আসন রাখার পক্ষে মত দেন। প্রতি নির্বাচনে নারী প্রতিনিধিত্বে ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধির মাধ্যমে একসময় ৩০০টি সাধারণ আসনের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রস্তাব করেন।
আজ শেষ হচ্ছে সংলাপ
জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শেষ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। এদিনই গ্রহণযোগ্য খসড়া সনদ সব দলের কাছে তুলে দিতে চায় কমিশন। গতকাল পর্যন্ত সনদের খসড়া নিয়ে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল কমিশনে তাদের মতামত জানিয়েছে। তবে জুলাই সনদের খসড়া এবং এর বাস্তবায়ন নিয়ে আপত্তি ও ভিন্নমত থাকায় এখন পর্যন্ত মতামত দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ আরও অনেক দল। এদিকে গতকালের সংলাপে প্রথম পর্বের আলোচনায় ঐকমত্যে উপনীত হওয়া ৬২টি বিষয়ও উপস্থাপন করে কমিশন।
গতকাল আলোচনা শুরুর আগে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে, তার একটি তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেব। আশা করছি, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা একটি সমন্বিত ও গ্রহণযোগ্য খসড়া সনদ সব দলের কাছে তুলে দিতে পারব।’
রাষ্ট্রের মূলনীতি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বসহ অমীমাংসিত বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গতকাল দ্বিতীয় ধাপের ২২তম দিনে বৈঠকে বসে কমিশন। বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রাখা বিষয়গুলো ছিল—সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব; সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান-সম্পর্কিত; রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব [অনুচ্ছেদ ৪৮(৩)]; রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি, ইলেকটোরাল কলেজ ইত্যাদি; উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি, এখতিয়ার ইত্যাদি; নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ-সম্পর্কিত প্রস্তাব এবং রাষ্ট্রের মূলনীতি।
এখন পর্যন্ত যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান, হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যায়ে নিম্ন আদালত স্থানান্তর, জরুরি অবস্থা জারি, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ , ইসি গঠনের পদ্ধতি, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান।
এর আগে প্রথম পর্বের আলোচনায় যে ৬২ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—আইনসভা গঠন, জাতীয় সংসদে নারী আসনের বিধান, ডেপুটি স্পিকার পদে বিরোধী দল থেকে মনোনয়ন, রাষ্ট্রপতির অভিশংসন প্রক্রিয়া, সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অধীনে ন্যস্ত করা, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, স্বাধীন ও স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন, কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুটি প্রশাসনিক বিভাগ গঠন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ধারা ৩২ক বিলুপ্ত করা।

জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব কেমন হবে, তা নিয়ে অবশেষে একটি সিদ্ধান্তে এসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে ১০০ আসনে উন্নীত করা হবে। নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার পক্ষে রাজনৈতিক মতৈক্য হলেও বেশির ভাগ দল ১০০ আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে। সংলাপে কিছু দল সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে এবং কিছু দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছে। এই অবস্থায় বিদ্যমান ৫০ সংরক্ষিত নারী আসন রাখার পাশাপাশি জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ৩০০ সংসদীয় আসনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কমিশন। সেই সঙ্গে চতুর্দশ জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
গতকাল ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে নারী আসন নিয়ে আলোচনার পর এসব সিদ্ধান্ত দেয় কমিশন। পরে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিয়ে কমিশনের প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয়, ১২টি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া দিতে পারবেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—অ্যাটর্নি জেনারেল; জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ; তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য; বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান; আইন কমিশনের চেয়ারম্যান; বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর; বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য; এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য; বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য; সশস্ত্র বাহিনীসমূহের (সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী) প্রধান, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) মহাপরিচালক নিয়োগ।
নারী আসনে নিয়ে বারবার প্রস্তাব পরিবর্তন: সংসদে নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার পক্ষে রাজনৈতিক মতৈক্য হলেও বেশির ভাগ দল ১০০ আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে। দলগুলোর অনাগ্রহের কারণে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বেশ কয়েকবার প্রস্তাবে সংশোধনী আনলেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রথমেই ১০০ আসনে নারীর সরাসরি ভোটের প্রস্তাব করেছিল। সংলাপে নারী আসনে নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দিলে ১৪ জুলাই নতুন প্রস্তাব হাজির করে কমিশন। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, কমপক্ষে ২৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রাজনৈতিক দলের মোট প্রার্থীর এক-তৃতীয়াংশ নারী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে নারীদের জন্য পৃথকভাবে কোনো সংরক্ষিত আসন থাকবে না। কিন্তু বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। পরের এক আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বিদ্যমান ৫০ সংরক্ষিত আসন বহাল রেখে ৫ শতাংশ আসনে সরাসরি নির্বাচনে নারীদের প্রার্থী করার প্রস্তাব দেন।
গতকাল বুধবার দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২২তম দিনের আলোচনায় নতুন প্রস্তাব হাজির করে ঐকমত্য কমিশন। পরিবর্তিত প্রস্তাবে বলা হয়, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমে ১০০ আসনে উন্নীত করা হবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫-এর দফা (৩)-এ প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে বিদ্যমান সংরক্ষিত ৫০টি আসন বহাল রেখে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষরের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে ৭ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। পরের নির্বাচন, অর্থাৎ চতুর্দশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ১৫ শতাংশ আসনে সরাসরি নির্বাচনের জন্য নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে। এভাবে প্রতি নির্বাচনে ৫ শতাংশ হারে বাড়িয়ে নারী প্রার্থী ১০০-তে উন্নীত করবে রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো এতেও রাজি হয়নি।
কমিশনসংশ্লিষ্ট একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা জুলাই আন্দোলনের চেতনা এবং নারীদের সঙ্গে বেইমানি করেছি। পুরুষতন্ত্রের কাছে নারীর সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’
গতকালের সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদে সংশোধনের প্রস্তাব দেন, যেখানে তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে প্রার্থী তালিকায় নারীদের জন্য ৫-৭ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলেন। তিনি প্রস্তাব করেন, চতুর্দশ সংসদ থেকে ধাপে ধাপে নারী প্রার্থী ১৫ শতাংশে উন্নীত হবে এবং এভাবেই শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো ১০০ জন নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিতে সক্ষম হবে। নিজের প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, বিএনপির পক্ষেও মোট প্রার্থীর ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া একটি চ্যালেঞ্জ হবে এখন।
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বিএনপির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং নারীদের অন্তর্ভুক্তির চেতনা সমুন্নত রেখে বিকল্প উপায়ে হলেও ১০০টি সংরক্ষিত আসন রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তাঁর দল সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে ১০০-তে বৃদ্ধির পক্ষে।
অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন জাতীয় ঐকমত্য কমিটির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং ১০০টি নারী সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে নিজের দলের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি জুলাই চার্টারের খসড়া বাস্তবায়ন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের তানিয়া রব এবং এনডিএমের মোমিনুল আমিন নারীদের মনোনয়ন-সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা কিছুটা শিথিল করার প্রস্তাব দেন, যাতে দলগুলো ৫-৭ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের ‘সুযোগ’ তৈরি করার অঙ্গীকার করে। অন্যদিকে জাসদের মুশতাক হোসেন গভীর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ধারাবাহিকভাবে গণপ্রতিনিধিত্ব আইন (আরপিও) অনুযায়ী নিজেদের সংগঠনে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স কমিশনের প্রস্তাবে হতাশা জানিয়ে ১০০টি সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে মত দেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আশরাফ আলী আকন এই আসনগুলোয় ভোটভিত্তিক আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার পক্ষে মত দেন। নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার প্রস্তাবিত ৫ শতাংশ সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করেন। খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ১০০টি সংরক্ষিত নারী আসনে ভোটভিত্তিক সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা নিশ্চিত না হলে তাঁর দল প্রস্তাবে সই করবে না।
মুশতাক এই পরিমার্জিত প্রস্তাবের বিরোধিতা অব্যাহত রাখেন, আর গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রস্তাবটি সমর্থন করেন, তবে ১৪তম জাতীয় সংসদ থেকে নারীদের ১৫ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ জানান।
বিরতির পর আলী রীয়াজ জানান, সংসদে নারী প্রতিনিধির সংখ্যা ধাপে ধাপে ১০০ আসনে উন্নীত করার বিষয়টি কমিশনের নীতিগত অবস্থান। তিনি বলেন, কেউ পিআর চায়, কেউ চায় সরাসরি নির্বাচন—দুই ধরনের মতামতই সনদে উল্লেখ থাকবে।
আলী রীয়াজ রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সমঝোতার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে কমপক্ষে ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের জন্য উৎসাহিত করার আহ্বান জানান এবং বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত আসন রাখার পক্ষে মত দেন। প্রতি নির্বাচনে নারী প্রতিনিধিত্বে ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধির মাধ্যমে একসময় ৩০০টি সাধারণ আসনের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রস্তাব করেন।
আজ শেষ হচ্ছে সংলাপ
জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শেষ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। এদিনই গ্রহণযোগ্য খসড়া সনদ সব দলের কাছে তুলে দিতে চায় কমিশন। গতকাল পর্যন্ত সনদের খসড়া নিয়ে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল কমিশনে তাদের মতামত জানিয়েছে। তবে জুলাই সনদের খসড়া এবং এর বাস্তবায়ন নিয়ে আপত্তি ও ভিন্নমত থাকায় এখন পর্যন্ত মতামত দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ আরও অনেক দল। এদিকে গতকালের সংলাপে প্রথম পর্বের আলোচনায় ঐকমত্যে উপনীত হওয়া ৬২টি বিষয়ও উপস্থাপন করে কমিশন।
গতকাল আলোচনা শুরুর আগে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে, তার একটি তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেব। আশা করছি, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা একটি সমন্বিত ও গ্রহণযোগ্য খসড়া সনদ সব দলের কাছে তুলে দিতে পারব।’
রাষ্ট্রের মূলনীতি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বসহ অমীমাংসিত বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গতকাল দ্বিতীয় ধাপের ২২তম দিনে বৈঠকে বসে কমিশন। বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রাখা বিষয়গুলো ছিল—সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব; সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান-সম্পর্কিত; রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব [অনুচ্ছেদ ৪৮(৩)]; রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি, ইলেকটোরাল কলেজ ইত্যাদি; উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি, এখতিয়ার ইত্যাদি; নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ-সম্পর্কিত প্রস্তাব এবং রাষ্ট্রের মূলনীতি।
এখন পর্যন্ত যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান, হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যায়ে নিম্ন আদালত স্থানান্তর, জরুরি অবস্থা জারি, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ , ইসি গঠনের পদ্ধতি, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান।
এর আগে প্রথম পর্বের আলোচনায় যে ৬২ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—আইনসভা গঠন, জাতীয় সংসদে নারী আসনের বিধান, ডেপুটি স্পিকার পদে বিরোধী দল থেকে মনোনয়ন, রাষ্ট্রপতির অভিশংসন প্রক্রিয়া, সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অধীনে ন্যস্ত করা, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, স্বাধীন ও স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন, কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুটি প্রশাসনিক বিভাগ গঠন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ধারা ৩২ক বিলুপ্ত করা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব কেমন হবে, তা নিয়ে অবশেষে একটি সিদ্ধান্তে এসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে ১০০ আসনে উন্নীত করা হবে। নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার পক্ষে রাজনৈতিক মতৈক্য হলেও বেশির ভাগ দল ১০০ আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে। সংলাপে কিছু দল সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে এবং কিছু দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছে। এই অবস্থায় বিদ্যমান ৫০ সংরক্ষিত নারী আসন রাখার পাশাপাশি জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ৩০০ সংসদীয় আসনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কমিশন। সেই সঙ্গে চতুর্দশ জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
গতকাল ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে নারী আসন নিয়ে আলোচনার পর এসব সিদ্ধান্ত দেয় কমিশন। পরে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিয়ে কমিশনের প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয়, ১২টি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া দিতে পারবেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—অ্যাটর্নি জেনারেল; জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ; তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য; বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান; আইন কমিশনের চেয়ারম্যান; বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর; বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য; এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য; বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য; সশস্ত্র বাহিনীসমূহের (সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী) প্রধান, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) মহাপরিচালক নিয়োগ।
নারী আসনে নিয়ে বারবার প্রস্তাব পরিবর্তন: সংসদে নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার পক্ষে রাজনৈতিক মতৈক্য হলেও বেশির ভাগ দল ১০০ আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে। দলগুলোর অনাগ্রহের কারণে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বেশ কয়েকবার প্রস্তাবে সংশোধনী আনলেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রথমেই ১০০ আসনে নারীর সরাসরি ভোটের প্রস্তাব করেছিল। সংলাপে নারী আসনে নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দিলে ১৪ জুলাই নতুন প্রস্তাব হাজির করে কমিশন। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, কমপক্ষে ২৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রাজনৈতিক দলের মোট প্রার্থীর এক-তৃতীয়াংশ নারী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে নারীদের জন্য পৃথকভাবে কোনো সংরক্ষিত আসন থাকবে না। কিন্তু বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। পরের এক আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বিদ্যমান ৫০ সংরক্ষিত আসন বহাল রেখে ৫ শতাংশ আসনে সরাসরি নির্বাচনে নারীদের প্রার্থী করার প্রস্তাব দেন।
গতকাল বুধবার দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২২তম দিনের আলোচনায় নতুন প্রস্তাব হাজির করে ঐকমত্য কমিশন। পরিবর্তিত প্রস্তাবে বলা হয়, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমে ১০০ আসনে উন্নীত করা হবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫-এর দফা (৩)-এ প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে বিদ্যমান সংরক্ষিত ৫০টি আসন বহাল রেখে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষরের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে ৭ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। পরের নির্বাচন, অর্থাৎ চতুর্দশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ১৫ শতাংশ আসনে সরাসরি নির্বাচনের জন্য নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে। এভাবে প্রতি নির্বাচনে ৫ শতাংশ হারে বাড়িয়ে নারী প্রার্থী ১০০-তে উন্নীত করবে রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো এতেও রাজি হয়নি।
কমিশনসংশ্লিষ্ট একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা জুলাই আন্দোলনের চেতনা এবং নারীদের সঙ্গে বেইমানি করেছি। পুরুষতন্ত্রের কাছে নারীর সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’
গতকালের সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদে সংশোধনের প্রস্তাব দেন, যেখানে তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে প্রার্থী তালিকায় নারীদের জন্য ৫-৭ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলেন। তিনি প্রস্তাব করেন, চতুর্দশ সংসদ থেকে ধাপে ধাপে নারী প্রার্থী ১৫ শতাংশে উন্নীত হবে এবং এভাবেই শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো ১০০ জন নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিতে সক্ষম হবে। নিজের প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, বিএনপির পক্ষেও মোট প্রার্থীর ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া একটি চ্যালেঞ্জ হবে এখন।
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বিএনপির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং নারীদের অন্তর্ভুক্তির চেতনা সমুন্নত রেখে বিকল্প উপায়ে হলেও ১০০টি সংরক্ষিত আসন রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তাঁর দল সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে ১০০-তে বৃদ্ধির পক্ষে।
অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন জাতীয় ঐকমত্য কমিটির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং ১০০টি নারী সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে নিজের দলের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি জুলাই চার্টারের খসড়া বাস্তবায়ন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের তানিয়া রব এবং এনডিএমের মোমিনুল আমিন নারীদের মনোনয়ন-সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা কিছুটা শিথিল করার প্রস্তাব দেন, যাতে দলগুলো ৫-৭ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের ‘সুযোগ’ তৈরি করার অঙ্গীকার করে। অন্যদিকে জাসদের মুশতাক হোসেন গভীর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ধারাবাহিকভাবে গণপ্রতিনিধিত্ব আইন (আরপিও) অনুযায়ী নিজেদের সংগঠনে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স কমিশনের প্রস্তাবে হতাশা জানিয়ে ১০০টি সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে মত দেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আশরাফ আলী আকন এই আসনগুলোয় ভোটভিত্তিক আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার পক্ষে মত দেন। নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার প্রস্তাবিত ৫ শতাংশ সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করেন। খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ১০০টি সংরক্ষিত নারী আসনে ভোটভিত্তিক সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা নিশ্চিত না হলে তাঁর দল প্রস্তাবে সই করবে না।
মুশতাক এই পরিমার্জিত প্রস্তাবের বিরোধিতা অব্যাহত রাখেন, আর গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রস্তাবটি সমর্থন করেন, তবে ১৪তম জাতীয় সংসদ থেকে নারীদের ১৫ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ জানান।
বিরতির পর আলী রীয়াজ জানান, সংসদে নারী প্রতিনিধির সংখ্যা ধাপে ধাপে ১০০ আসনে উন্নীত করার বিষয়টি কমিশনের নীতিগত অবস্থান। তিনি বলেন, কেউ পিআর চায়, কেউ চায় সরাসরি নির্বাচন—দুই ধরনের মতামতই সনদে উল্লেখ থাকবে।
আলী রীয়াজ রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সমঝোতার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে কমপক্ষে ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের জন্য উৎসাহিত করার আহ্বান জানান এবং বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত আসন রাখার পক্ষে মত দেন। প্রতি নির্বাচনে নারী প্রতিনিধিত্বে ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধির মাধ্যমে একসময় ৩০০টি সাধারণ আসনের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রস্তাব করেন।
আজ শেষ হচ্ছে সংলাপ
জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শেষ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। এদিনই গ্রহণযোগ্য খসড়া সনদ সব দলের কাছে তুলে দিতে চায় কমিশন। গতকাল পর্যন্ত সনদের খসড়া নিয়ে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল কমিশনে তাদের মতামত জানিয়েছে। তবে জুলাই সনদের খসড়া এবং এর বাস্তবায়ন নিয়ে আপত্তি ও ভিন্নমত থাকায় এখন পর্যন্ত মতামত দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ আরও অনেক দল। এদিকে গতকালের সংলাপে প্রথম পর্বের আলোচনায় ঐকমত্যে উপনীত হওয়া ৬২টি বিষয়ও উপস্থাপন করে কমিশন।
গতকাল আলোচনা শুরুর আগে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে, তার একটি তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেব। আশা করছি, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা একটি সমন্বিত ও গ্রহণযোগ্য খসড়া সনদ সব দলের কাছে তুলে দিতে পারব।’
রাষ্ট্রের মূলনীতি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বসহ অমীমাংসিত বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গতকাল দ্বিতীয় ধাপের ২২তম দিনে বৈঠকে বসে কমিশন। বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রাখা বিষয়গুলো ছিল—সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব; সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান-সম্পর্কিত; রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব [অনুচ্ছেদ ৪৮(৩)]; রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি, ইলেকটোরাল কলেজ ইত্যাদি; উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি, এখতিয়ার ইত্যাদি; নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ-সম্পর্কিত প্রস্তাব এবং রাষ্ট্রের মূলনীতি।
এখন পর্যন্ত যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান, হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যায়ে নিম্ন আদালত স্থানান্তর, জরুরি অবস্থা জারি, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ , ইসি গঠনের পদ্ধতি, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান।
এর আগে প্রথম পর্বের আলোচনায় যে ৬২ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—আইনসভা গঠন, জাতীয় সংসদে নারী আসনের বিধান, ডেপুটি স্পিকার পদে বিরোধী দল থেকে মনোনয়ন, রাষ্ট্রপতির অভিশংসন প্রক্রিয়া, সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অধীনে ন্যস্ত করা, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, স্বাধীন ও স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন, কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুটি প্রশাসনিক বিভাগ গঠন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ধারা ৩২ক বিলুপ্ত করা।

জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব কেমন হবে, তা নিয়ে অবশেষে একটি সিদ্ধান্তে এসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে ১০০ আসনে উন্নীত করা হবে। নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার পক্ষে রাজনৈতিক মতৈক্য হলেও বেশির ভাগ দল ১০০ আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে। সংলাপে কিছু দল সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে এবং কিছু দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছে। এই অবস্থায় বিদ্যমান ৫০ সংরক্ষিত নারী আসন রাখার পাশাপাশি জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ৩০০ সংসদীয় আসনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কমিশন। সেই সঙ্গে চতুর্দশ জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
গতকাল ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে নারী আসন নিয়ে আলোচনার পর এসব সিদ্ধান্ত দেয় কমিশন। পরে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিয়ে কমিশনের প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয়, ১২টি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া দিতে পারবেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—অ্যাটর্নি জেনারেল; জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ; তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য; বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান; আইন কমিশনের চেয়ারম্যান; বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর; বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য; এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য; বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য; সশস্ত্র বাহিনীসমূহের (সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী) প্রধান, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) মহাপরিচালক নিয়োগ।
নারী আসনে নিয়ে বারবার প্রস্তাব পরিবর্তন: সংসদে নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার পক্ষে রাজনৈতিক মতৈক্য হলেও বেশির ভাগ দল ১০০ আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে। দলগুলোর অনাগ্রহের কারণে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বেশ কয়েকবার প্রস্তাবে সংশোধনী আনলেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রথমেই ১০০ আসনে নারীর সরাসরি ভোটের প্রস্তাব করেছিল। সংলাপে নারী আসনে নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দিলে ১৪ জুলাই নতুন প্রস্তাব হাজির করে কমিশন। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, কমপক্ষে ২৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রাজনৈতিক দলের মোট প্রার্থীর এক-তৃতীয়াংশ নারী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে নারীদের জন্য পৃথকভাবে কোনো সংরক্ষিত আসন থাকবে না। কিন্তু বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। পরের এক আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বিদ্যমান ৫০ সংরক্ষিত আসন বহাল রেখে ৫ শতাংশ আসনে সরাসরি নির্বাচনে নারীদের প্রার্থী করার প্রস্তাব দেন।
গতকাল বুধবার দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২২তম দিনের আলোচনায় নতুন প্রস্তাব হাজির করে ঐকমত্য কমিশন। পরিবর্তিত প্রস্তাবে বলা হয়, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমে ১০০ আসনে উন্নীত করা হবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫-এর দফা (৩)-এ প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে বিদ্যমান সংরক্ষিত ৫০টি আসন বহাল রেখে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষরের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে ৭ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। পরের নির্বাচন, অর্থাৎ চতুর্দশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ১৫ শতাংশ আসনে সরাসরি নির্বাচনের জন্য নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে। এভাবে প্রতি নির্বাচনে ৫ শতাংশ হারে বাড়িয়ে নারী প্রার্থী ১০০-তে উন্নীত করবে রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো এতেও রাজি হয়নি।
কমিশনসংশ্লিষ্ট একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা জুলাই আন্দোলনের চেতনা এবং নারীদের সঙ্গে বেইমানি করেছি। পুরুষতন্ত্রের কাছে নারীর সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’
গতকালের সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদে সংশোধনের প্রস্তাব দেন, যেখানে তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে প্রার্থী তালিকায় নারীদের জন্য ৫-৭ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলেন। তিনি প্রস্তাব করেন, চতুর্দশ সংসদ থেকে ধাপে ধাপে নারী প্রার্থী ১৫ শতাংশে উন্নীত হবে এবং এভাবেই শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো ১০০ জন নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিতে সক্ষম হবে। নিজের প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, বিএনপির পক্ষেও মোট প্রার্থীর ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া একটি চ্যালেঞ্জ হবে এখন।
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বিএনপির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং নারীদের অন্তর্ভুক্তির চেতনা সমুন্নত রেখে বিকল্প উপায়ে হলেও ১০০টি সংরক্ষিত আসন রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তাঁর দল সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে ১০০-তে বৃদ্ধির পক্ষে।
অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন জাতীয় ঐকমত্য কমিটির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং ১০০টি নারী সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে নিজের দলের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি জুলাই চার্টারের খসড়া বাস্তবায়ন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের তানিয়া রব এবং এনডিএমের মোমিনুল আমিন নারীদের মনোনয়ন-সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা কিছুটা শিথিল করার প্রস্তাব দেন, যাতে দলগুলো ৫-৭ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের ‘সুযোগ’ তৈরি করার অঙ্গীকার করে। অন্যদিকে জাসদের মুশতাক হোসেন গভীর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ধারাবাহিকভাবে গণপ্রতিনিধিত্ব আইন (আরপিও) অনুযায়ী নিজেদের সংগঠনে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স কমিশনের প্রস্তাবে হতাশা জানিয়ে ১০০টি সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে মত দেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আশরাফ আলী আকন এই আসনগুলোয় ভোটভিত্তিক আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার পক্ষে মত দেন। নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার প্রস্তাবিত ৫ শতাংশ সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করেন। খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ১০০টি সংরক্ষিত নারী আসনে ভোটভিত্তিক সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা নিশ্চিত না হলে তাঁর দল প্রস্তাবে সই করবে না।
মুশতাক এই পরিমার্জিত প্রস্তাবের বিরোধিতা অব্যাহত রাখেন, আর গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রস্তাবটি সমর্থন করেন, তবে ১৪তম জাতীয় সংসদ থেকে নারীদের ১৫ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ জানান।
বিরতির পর আলী রীয়াজ জানান, সংসদে নারী প্রতিনিধির সংখ্যা ধাপে ধাপে ১০০ আসনে উন্নীত করার বিষয়টি কমিশনের নীতিগত অবস্থান। তিনি বলেন, কেউ পিআর চায়, কেউ চায় সরাসরি নির্বাচন—দুই ধরনের মতামতই সনদে উল্লেখ থাকবে।
আলী রীয়াজ রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সমঝোতার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে কমপক্ষে ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের জন্য উৎসাহিত করার আহ্বান জানান এবং বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত আসন রাখার পক্ষে মত দেন। প্রতি নির্বাচনে নারী প্রতিনিধিত্বে ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধির মাধ্যমে একসময় ৩০০টি সাধারণ আসনের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রস্তাব করেন।
আজ শেষ হচ্ছে সংলাপ
জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শেষ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। এদিনই গ্রহণযোগ্য খসড়া সনদ সব দলের কাছে তুলে দিতে চায় কমিশন। গতকাল পর্যন্ত সনদের খসড়া নিয়ে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল কমিশনে তাদের মতামত জানিয়েছে। তবে জুলাই সনদের খসড়া এবং এর বাস্তবায়ন নিয়ে আপত্তি ও ভিন্নমত থাকায় এখন পর্যন্ত মতামত দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ আরও অনেক দল। এদিকে গতকালের সংলাপে প্রথম পর্বের আলোচনায় ঐকমত্যে উপনীত হওয়া ৬২টি বিষয়ও উপস্থাপন করে কমিশন।
গতকাল আলোচনা শুরুর আগে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে, তার একটি তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেব। আশা করছি, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা একটি সমন্বিত ও গ্রহণযোগ্য খসড়া সনদ সব দলের কাছে তুলে দিতে পারব।’
রাষ্ট্রের মূলনীতি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বসহ অমীমাংসিত বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গতকাল দ্বিতীয় ধাপের ২২তম দিনে বৈঠকে বসে কমিশন। বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রাখা বিষয়গুলো ছিল—সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব; সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান-সম্পর্কিত; রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব [অনুচ্ছেদ ৪৮(৩)]; রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি, ইলেকটোরাল কলেজ ইত্যাদি; উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি, এখতিয়ার ইত্যাদি; নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ-সম্পর্কিত প্রস্তাব এবং রাষ্ট্রের মূলনীতি।
এখন পর্যন্ত যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান, হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যায়ে নিম্ন আদালত স্থানান্তর, জরুরি অবস্থা জারি, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ , ইসি গঠনের পদ্ধতি, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান।
এর আগে প্রথম পর্বের আলোচনায় যে ৬২ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—আইনসভা গঠন, জাতীয় সংসদে নারী আসনের বিধান, ডেপুটি স্পিকার পদে বিরোধী দল থেকে মনোনয়ন, রাষ্ট্রপতির অভিশংসন প্রক্রিয়া, সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অধীনে ন্যস্ত করা, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, স্বাধীন ও স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন, কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুটি প্রশাসনিক বিভাগ গঠন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ধারা ৩২ক বিলুপ্ত করা।

আসাদুজ্জামান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাংলাদেশে আসার পরে যেভাবে দেশের গণতন্ত্র উন্নত হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলোপের পরে সেই সুযোগ হয়নি। এই ব্যবস্থা বাতিল করার পর...
৮ মিনিট আগে
সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের পারিতোষিক, ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকারসংক্রান্ত আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়েছে। ১৩ জনের পক্ষে এ রিট করা হয়েছে বলে আজ বুধবার জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
১৯ মিনিট আগে
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) কর জালিয়াতি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অনৈতিক অর্থ সুবিধা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ৮ জনের...
১ ঘণ্টা আগে
দেশে দ্রুত বাড়ছে তামাক চাষ। কৃষিজমি দখল করে তামাকের এই সম্প্রসারণ শুধু কৃষিকে নয়, দেশের খাদ্যনিরাপত্তাকেও ভয়াবহ হুমকির মুখে ফেলছে। তামাক কোম্পানিগুলোর প্রচারণায় বলা হয়, তামাক চাষে কর্মসংস্থান বাড়ে এবং কৃষকের আয় বৃদ্ধি পায়।
২ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘জুলাই বিপ্লবীরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে বলত, “আমরা ৭২-এর সংবিধান চাই না, আমরা নতুন সংবিধান রচনা করতে চাই”—তাহলে সেটাই হতো সংবিধান। কিন্তু তাদের মধ্যে বিভেদ থাকলে হবে না। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে আজ বুধবার এসব কথা বলেন রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বিভাগে অষ্টম দিনের মতো এ বিষয়ে শুনানি হয়।
এদিন আরও শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আনীক আর হক এবং বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। খায়রুল হক সাহেবরা হুকুম নড়ায়ে দিয়েছেন সংক্ষিপ্ত রায় এবং পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্য দিয়ে; যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শাস্তি হতে পারে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড। সংবিধান একটা অরগানিক ডকুমেন্ট। এটা বিভিন্ন রকমভাবে উপস্থাপিত হয়। কোরআন কিংবা বাইবেল—কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। সংবিধান পরিবর্তনযোগ্য। আজকে সংবিধানের অ্যামেন্ডমেন্টে (সংশোধন) যদি বলে দেন, তত্ত্বাবধায়কে ফিরে গেলাম, সেটাই যে অ্যাবসোলিউট (যথাযথ) হবে—তাও না। এটাও জনগণের চাহিদা অনুসারে হবে। জনগণ যদি মনে করে, এটাতে তার ভোটাধিকার নিশ্চিত হচ্ছে না, জনগণ ইচ্ছা করলে এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে পারবে।’
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা মনে করি, ওই (তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল) রায় থাকা উচিত না। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রায়টা লেখা হয়েছে একটি বিশেষ দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য। এই রায় দুটি গ্রাউন্ডে বাতিল হবে। সাতজন মিলে ঘোষণা করলেন, আগামী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। সেখানে উনারা ডেভিয়েট (বিচ্যুত) করে পূর্ণাঙ্গ যে রায় দিলেন, তা ওপেন ঘোষণা রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ঘোষিত রায় পরিবর্তন করার জন্য রিভিউ করতে হবে। রিভিউ যেকোনো পক্ষ করতে পারে। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও করতে পারেন। খায়রুল হক সেই পথে না গিয়ে যে পথে হেঁটেছেন, তা আইনের ব্যত্যয়। রিভিউ না করে উনি রায় পরিবর্তন করেছেন। এটা দণ্ডবিধির ২১৯ ধারা অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উনি পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে জানতেন, এ ধরনের পরিবর্তন করা আইনে সম্ভব নয়। তারপরও উনি সেটা করেছেন।’
আসাদুজ্জামান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাংলাদেশে আসার পরে যেভাবে দেশের গণতন্ত্র উন্নত হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলোপের পরে সেই সুযোগ হয়নি। এই ব্যবস্থা বাতিল করার পর হত্যা, গুম, রাতের বেলায় ভোট দেওয়া, মিথ্যা মামলায় মানুষকে কারাগারে পাঠানো—এ ধরনের রাজনীতি শুরু হয়। ৭০ লাখের মতো মানুষ গায়েবি মামলায় আসামি হয়। সেই কারণে এটা ২১৯ ধারার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘জুলাই বিপ্লবীরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে বলত, “আমরা ৭২-এর সংবিধান চাই না, আমরা নতুন সংবিধান রচনা করতে চাই”—তাহলে সেটাই হতো সংবিধান। কিন্তু তাদের মধ্যে বিভেদ থাকলে হবে না। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে আজ বুধবার এসব কথা বলেন রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বিভাগে অষ্টম দিনের মতো এ বিষয়ে শুনানি হয়।
এদিন আরও শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আনীক আর হক এবং বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। খায়রুল হক সাহেবরা হুকুম নড়ায়ে দিয়েছেন সংক্ষিপ্ত রায় এবং পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্য দিয়ে; যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শাস্তি হতে পারে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড। সংবিধান একটা অরগানিক ডকুমেন্ট। এটা বিভিন্ন রকমভাবে উপস্থাপিত হয়। কোরআন কিংবা বাইবেল—কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। সংবিধান পরিবর্তনযোগ্য। আজকে সংবিধানের অ্যামেন্ডমেন্টে (সংশোধন) যদি বলে দেন, তত্ত্বাবধায়কে ফিরে গেলাম, সেটাই যে অ্যাবসোলিউট (যথাযথ) হবে—তাও না। এটাও জনগণের চাহিদা অনুসারে হবে। জনগণ যদি মনে করে, এটাতে তার ভোটাধিকার নিশ্চিত হচ্ছে না, জনগণ ইচ্ছা করলে এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে পারবে।’
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা মনে করি, ওই (তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল) রায় থাকা উচিত না। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রায়টা লেখা হয়েছে একটি বিশেষ দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য। এই রায় দুটি গ্রাউন্ডে বাতিল হবে। সাতজন মিলে ঘোষণা করলেন, আগামী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। সেখানে উনারা ডেভিয়েট (বিচ্যুত) করে পূর্ণাঙ্গ যে রায় দিলেন, তা ওপেন ঘোষণা রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ঘোষিত রায় পরিবর্তন করার জন্য রিভিউ করতে হবে। রিভিউ যেকোনো পক্ষ করতে পারে। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও করতে পারেন। খায়রুল হক সেই পথে না গিয়ে যে পথে হেঁটেছেন, তা আইনের ব্যত্যয়। রিভিউ না করে উনি রায় পরিবর্তন করেছেন। এটা দণ্ডবিধির ২১৯ ধারা অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উনি পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে জানতেন, এ ধরনের পরিবর্তন করা আইনে সম্ভব নয়। তারপরও উনি সেটা করেছেন।’
আসাদুজ্জামান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাংলাদেশে আসার পরে যেভাবে দেশের গণতন্ত্র উন্নত হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলোপের পরে সেই সুযোগ হয়নি। এই ব্যবস্থা বাতিল করার পর হত্যা, গুম, রাতের বেলায় ভোট দেওয়া, মিথ্যা মামলায় মানুষকে কারাগারে পাঠানো—এ ধরনের রাজনীতি শুরু হয়। ৭০ লাখের মতো মানুষ গায়েবি মামলায় আসামি হয়। সেই কারণে এটা ২১৯ ধারার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

সংস্কারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ৩০টি দলের প্রতিনিধিরা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। গতকাল ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে।
৩১ জুলাই ২০২৫
সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের পারিতোষিক, ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকারসংক্রান্ত আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়েছে। ১৩ জনের পক্ষে এ রিট করা হয়েছে বলে আজ বুধবার জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
১৯ মিনিট আগে
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) কর জালিয়াতি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অনৈতিক অর্থ সুবিধা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ৮ জনের...
১ ঘণ্টা আগে
দেশে দ্রুত বাড়ছে তামাক চাষ। কৃষিজমি দখল করে তামাকের এই সম্প্রসারণ শুধু কৃষিকে নয়, দেশের খাদ্যনিরাপত্তাকেও ভয়াবহ হুমকির মুখে ফেলছে। তামাক কোম্পানিগুলোর প্রচারণায় বলা হয়, তামাক চাষে কর্মসংস্থান বাড়ে এবং কৃষকের আয় বৃদ্ধি পায়।
২ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের পারিতোষিক, ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকারসংক্রান্ত আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়েছে। ১৩ জনের পক্ষে এ রিট করা হয়েছে বলে আজ বুধবার জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
রিটকারীরা হলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, আবদুল্লাহ সাদিক, মো. মিজানুল হক, আব্দুল ওয়াদুদ, রহিম উল্লাহ, আমিনুল ইসলাম শাকিল, ঢাকার জেলা জজ আদালতের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ, শিক্ষানবিশ আইনজীবী সাব্বির রহমান, মাহমুদুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত জাকারিয়া, রাফিউল সাব্বির, শামিম সাহিদি ও হাবিবুর রহমান আল হাসান।
রিট আবেদনে বলা হয়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ। সংবিধানের ৯৪(৪) ও ১৪৭(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের আর্থিক স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। তবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২১ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৩ অনুযায়ী বিচারকদের বেতন, পেনশন ও বিশেষাধিকার এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বাস্তবে তাঁদের আর্থিক স্বাধীনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করছে।
আবেদনে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রধান বিচারপতি ও বিচারকদের বেতনকাঠামো তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের আর্থিক অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় নিম্ন স্তরে রয়েছে। এই অসামঞ্জস্য শুধু আর্থিক নয়, বরং বিচার বিভাগের মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের মানের প্রতি সাংঘর্ষিক।
রিটে আরও বলা হয়, সংবিধানে প্রদত্ত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার বিভাজনের নীতিকে উপেক্ষা করে সংসদ তার সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে উক্ত আইন দুটি প্রণয়ন করেছে। এর ফলে বিচারপতিদের জন্য এক অন্যায্য ও বৈষম্যমূলক বেতনকাঠামো সৃষ্টি হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের পারিতোষিক, ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকারসংক্রান্ত আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়েছে। ১৩ জনের পক্ষে এ রিট করা হয়েছে বলে আজ বুধবার জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
রিটকারীরা হলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, আবদুল্লাহ সাদিক, মো. মিজানুল হক, আব্দুল ওয়াদুদ, রহিম উল্লাহ, আমিনুল ইসলাম শাকিল, ঢাকার জেলা জজ আদালতের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ, শিক্ষানবিশ আইনজীবী সাব্বির রহমান, মাহমুদুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত জাকারিয়া, রাফিউল সাব্বির, শামিম সাহিদি ও হাবিবুর রহমান আল হাসান।
রিট আবেদনে বলা হয়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ। সংবিধানের ৯৪(৪) ও ১৪৭(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের আর্থিক স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। তবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২১ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৩ অনুযায়ী বিচারকদের বেতন, পেনশন ও বিশেষাধিকার এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বাস্তবে তাঁদের আর্থিক স্বাধীনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করছে।
আবেদনে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রধান বিচারপতি ও বিচারকদের বেতনকাঠামো তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের আর্থিক অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় নিম্ন স্তরে রয়েছে। এই অসামঞ্জস্য শুধু আর্থিক নয়, বরং বিচার বিভাগের মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের মানের প্রতি সাংঘর্ষিক।
রিটে আরও বলা হয়, সংবিধানে প্রদত্ত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার বিভাজনের নীতিকে উপেক্ষা করে সংসদ তার সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে উক্ত আইন দুটি প্রণয়ন করেছে। এর ফলে বিচারপতিদের জন্য এক অন্যায্য ও বৈষম্যমূলক বেতনকাঠামো সৃষ্টি হয়েছে।

সংস্কারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ৩০টি দলের প্রতিনিধিরা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। গতকাল ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে।
৩১ জুলাই ২০২৫
আসাদুজ্জামান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাংলাদেশে আসার পরে যেভাবে দেশের গণতন্ত্র উন্নত হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলোপের পরে সেই সুযোগ হয়নি। এই ব্যবস্থা বাতিল করার পর...
৮ মিনিট আগে
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) কর জালিয়াতি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অনৈতিক অর্থ সুবিধা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ৮ জনের...
১ ঘণ্টা আগে
দেশে দ্রুত বাড়ছে তামাক চাষ। কৃষিজমি দখল করে তামাকের এই সম্প্রসারণ শুধু কৃষিকে নয়, দেশের খাদ্যনিরাপত্তাকেও ভয়াবহ হুমকির মুখে ফেলছে। তামাক কোম্পানিগুলোর প্রচারণায় বলা হয়, তামাক চাষে কর্মসংস্থান বাড়ে এবং কৃষকের আয় বৃদ্ধি পায়।
২ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) কর জালিয়াতি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অনৈতিক অর্থ সুবিধা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ৮ জনের নামে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পুতুল সিআরআইয়ের ট্রাস্টি ও ভাইস চেয়ারম্যান।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে মামলাটি অনুমোদনের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। তিনি জানান, জনকল্যাণের নামে গঠিত এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কমিশন থেকে মামলা করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অন্য যে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, তাঁরা হলেন সিআরআইয়ের ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি (শেখ রেহানার ছেলে), নসরুল হামিদ বিপু (সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী), নির্বাহী পরিচালক শাব্বির বিন শামস, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর আপিল) রওশন আরা আক্তার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩-১৪ থেকে ২০২৩-২৪ কর বর্ষ পর্যন্ত সিআরআই ২৩টি কোম্পানির কাছ থেকে ৪৫ কোটি ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে নেয়। এ ছাড়া একই সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনুদান হিসেবে ১০০ কোটি ৩১ লাখ ৪০ হাজার ৪৮৬ টাকা নেয়। বৈধ ব্যয় বাদে হিসাব অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাবে ৭০ কোটি ৮০ লাখ ৪২ হাজার ৩৯০ টাকা স্থিতি থাকার কথা। কিন্তু পাওয়া গেছে ৫৫ কোটি ১১ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৬ টাকা। অর্থাৎ ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫২১ টাকা কম; যা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমাজসেবা অধিদপ্তরে নিবন্ধিত না থাকা সত্ত্বেও সিআরআই কর সুবিধা লাভের জন্য চাপ প্রয়োগ, প্রতিষ্ঠানটি সুনির্দিষ্ট এসআরও জারি করিয়ে সরকার থেকে কর মওকুফের সুযোগ নিয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটি জনকল্যাণের নামে প্রাপ্ত তহবিলকে নিজের সুবিধার্থে ব্যবহার করেছে এবং বহু কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় ও আত্মসাৎ করেছে।
দুদক বলছে, অভিযুক্তরা ২৫টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৪৩৯ কোটি ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪৮০ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন এবং আয়কর পরিশোধ না করে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি করেছেন।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) কর জালিয়াতি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অনৈতিক অর্থ সুবিধা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ৮ জনের নামে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পুতুল সিআরআইয়ের ট্রাস্টি ও ভাইস চেয়ারম্যান।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে মামলাটি অনুমোদনের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। তিনি জানান, জনকল্যাণের নামে গঠিত এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কমিশন থেকে মামলা করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অন্য যে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, তাঁরা হলেন সিআরআইয়ের ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি (শেখ রেহানার ছেলে), নসরুল হামিদ বিপু (সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী), নির্বাহী পরিচালক শাব্বির বিন শামস, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর আপিল) রওশন আরা আক্তার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩-১৪ থেকে ২০২৩-২৪ কর বর্ষ পর্যন্ত সিআরআই ২৩টি কোম্পানির কাছ থেকে ৪৫ কোটি ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে নেয়। এ ছাড়া একই সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনুদান হিসেবে ১০০ কোটি ৩১ লাখ ৪০ হাজার ৪৮৬ টাকা নেয়। বৈধ ব্যয় বাদে হিসাব অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাবে ৭০ কোটি ৮০ লাখ ৪২ হাজার ৩৯০ টাকা স্থিতি থাকার কথা। কিন্তু পাওয়া গেছে ৫৫ কোটি ১১ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৬ টাকা। অর্থাৎ ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫২১ টাকা কম; যা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমাজসেবা অধিদপ্তরে নিবন্ধিত না থাকা সত্ত্বেও সিআরআই কর সুবিধা লাভের জন্য চাপ প্রয়োগ, প্রতিষ্ঠানটি সুনির্দিষ্ট এসআরও জারি করিয়ে সরকার থেকে কর মওকুফের সুযোগ নিয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটি জনকল্যাণের নামে প্রাপ্ত তহবিলকে নিজের সুবিধার্থে ব্যবহার করেছে এবং বহু কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় ও আত্মসাৎ করেছে।
দুদক বলছে, অভিযুক্তরা ২৫টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৪৩৯ কোটি ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪৮০ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন এবং আয়কর পরিশোধ না করে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি করেছেন।

সংস্কারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ৩০টি দলের প্রতিনিধিরা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। গতকাল ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে।
৩১ জুলাই ২০২৫
আসাদুজ্জামান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাংলাদেশে আসার পরে যেভাবে দেশের গণতন্ত্র উন্নত হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলোপের পরে সেই সুযোগ হয়নি। এই ব্যবস্থা বাতিল করার পর...
৮ মিনিট আগে
সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের পারিতোষিক, ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকারসংক্রান্ত আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়েছে। ১৩ জনের পক্ষে এ রিট করা হয়েছে বলে আজ বুধবার জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
১৯ মিনিট আগে
দেশে দ্রুত বাড়ছে তামাক চাষ। কৃষিজমি দখল করে তামাকের এই সম্প্রসারণ শুধু কৃষিকে নয়, দেশের খাদ্যনিরাপত্তাকেও ভয়াবহ হুমকির মুখে ফেলছে। তামাক কোম্পানিগুলোর প্রচারণায় বলা হয়, তামাক চাষে কর্মসংস্থান বাড়ে এবং কৃষকের আয় বৃদ্ধি পায়।
২ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দেশে দ্রুত বাড়ছে তামাক চাষ। কৃষিজমি দখল করে তামাকের এই সম্প্রসারণ শুধু কৃষিকে নয়, দেশের খাদ্যনিরাপত্তাকেও ভয়াবহ হুমকির মুখে ফেলছে। তামাক কোম্পানিগুলোর প্রচারণায় বলা হয়, তামাক চাষে কর্মসংস্থান বাড়ে এবং কৃষকের আয় বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বাস্তবে যেসব জেলায় তামাক চাষ হয়, সেসব এলাকায় দারিদ্র্যের হার তুলনামূলকভাবে বেশি; যা কোম্পানির প্রচারণার সম্পূর্ণ বিপরীত। তামাকপাতা রপ্তানিতে শুল্ক প্রত্যাহার ও কোম্পানির আগ্রাসী প্রভাব কৃষকদের বিভ্রান্ত করছে, স্থানীয় অর্থনীতিতে বাড়ছে ক্ষতি।
গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) মিলনায়তনে আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা। কর্মশালার আয়োজন করে বিইআর, বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) এবং বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)। কর্মশালার বিষয় ছিল, ‘কোম্পানির আগ্রাসনে বাড়ছে তামাক চাষ, জনস্বাস্থ্য ও খাদ্যনিরাপত্তায় হুমকি’। এতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ৩৫ সাংবাদিক অংশ নেন।
কর্মশালার সেশন পরিচালনা করেন তামাক নিয়ন্ত্রণবিষয়ক গবেষক ও বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য সুশান্ত সিনহা। তিনি বলেন, তামাকপাতা রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার তামাক চাষ বৃদ্ধির প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। শুল্ক প্রত্যাহারের পর তামাক রপ্তানির পাশাপাশি চাষও বেড়েছে, যা পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনছে। কোম্পানিগুলো ‘তামাক চাষ লাভজনক’—এমন একটি মিথ্যা তথ্য মানুষকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয়েছে। বাস্তবতা হলো, যেসব জেলায় তামাক চাষ হয়, দারিদ্র্য সূচকে সেসব জেলার অবস্থান সবার ওপরে।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক ড. রুমানা হক বলেন, তামাক চাষ থেকে বের হয়ে আসার উপায় খুঁজতে হবে। এর প্রথম পদক্ষেপ হলো, দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা। কৃষকেরা যেন বিকল্প ফসলের ন্যায্যমূল্য পান, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে তামাকপাতা ও তামাকজাত পণ্যের রপ্তানিতে পুনরায় ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে হবে। কারণ, তামাক থেকে যে রাজস্ব আয় হয়, তার দ্বিগুণের বেশি ব্যয় হয় তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায়।
বিএজেএফ সভাপতি সাহানোয়ার সাইদ শাহীন বলেন, তামাক কোম্পানি ১০টি খাতে ব্যাপক ক্ষতি করছে। তাদের কর ফাঁকির প্রকৃত হিসাব নেই। তামাক চাষের কারণে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজস্ব ফাঁকিও বাড়ছে। তামাক চাষের কারণে দেশে প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
সাহানোয়ার সাইদ শাহীন অভিযোগ করেন, তামাকপাতার দাম নির্ধারণে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কমিটিতে কোম্পানির প্রতিনিধিরাই প্রভাবশালী। যাঁরা তামাক কিনবেন, তাঁরাই আবার দাম ঠিক করবেন—এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
জনস্বাস্থ্যবিষয়ক নীতি বিশ্লেষক ও বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, হাইকোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের আদেশে বলা হয়েছিল, দেশে তামাক চাষ কমাতে হবে এবং নতুন কোনো তামাক কোম্পানিকে অনুমতি দেওয়া যাবে না। কিন্তু সেই আদেশ অমান্য করে নতুন করে নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।

দেশে দ্রুত বাড়ছে তামাক চাষ। কৃষিজমি দখল করে তামাকের এই সম্প্রসারণ শুধু কৃষিকে নয়, দেশের খাদ্যনিরাপত্তাকেও ভয়াবহ হুমকির মুখে ফেলছে। তামাক কোম্পানিগুলোর প্রচারণায় বলা হয়, তামাক চাষে কর্মসংস্থান বাড়ে এবং কৃষকের আয় বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বাস্তবে যেসব জেলায় তামাক চাষ হয়, সেসব এলাকায় দারিদ্র্যের হার তুলনামূলকভাবে বেশি; যা কোম্পানির প্রচারণার সম্পূর্ণ বিপরীত। তামাকপাতা রপ্তানিতে শুল্ক প্রত্যাহার ও কোম্পানির আগ্রাসী প্রভাব কৃষকদের বিভ্রান্ত করছে, স্থানীয় অর্থনীতিতে বাড়ছে ক্ষতি।
গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) মিলনায়তনে আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা। কর্মশালার আয়োজন করে বিইআর, বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) এবং বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)। কর্মশালার বিষয় ছিল, ‘কোম্পানির আগ্রাসনে বাড়ছে তামাক চাষ, জনস্বাস্থ্য ও খাদ্যনিরাপত্তায় হুমকি’। এতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ৩৫ সাংবাদিক অংশ নেন।
কর্মশালার সেশন পরিচালনা করেন তামাক নিয়ন্ত্রণবিষয়ক গবেষক ও বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য সুশান্ত সিনহা। তিনি বলেন, তামাকপাতা রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার তামাক চাষ বৃদ্ধির প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। শুল্ক প্রত্যাহারের পর তামাক রপ্তানির পাশাপাশি চাষও বেড়েছে, যা পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনছে। কোম্পানিগুলো ‘তামাক চাষ লাভজনক’—এমন একটি মিথ্যা তথ্য মানুষকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয়েছে। বাস্তবতা হলো, যেসব জেলায় তামাক চাষ হয়, দারিদ্র্য সূচকে সেসব জেলার অবস্থান সবার ওপরে।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক ড. রুমানা হক বলেন, তামাক চাষ থেকে বের হয়ে আসার উপায় খুঁজতে হবে। এর প্রথম পদক্ষেপ হলো, দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা। কৃষকেরা যেন বিকল্প ফসলের ন্যায্যমূল্য পান, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে তামাকপাতা ও তামাকজাত পণ্যের রপ্তানিতে পুনরায় ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে হবে। কারণ, তামাক থেকে যে রাজস্ব আয় হয়, তার দ্বিগুণের বেশি ব্যয় হয় তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায়।
বিএজেএফ সভাপতি সাহানোয়ার সাইদ শাহীন বলেন, তামাক কোম্পানি ১০টি খাতে ব্যাপক ক্ষতি করছে। তাদের কর ফাঁকির প্রকৃত হিসাব নেই। তামাক চাষের কারণে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজস্ব ফাঁকিও বাড়ছে। তামাক চাষের কারণে দেশে প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
সাহানোয়ার সাইদ শাহীন অভিযোগ করেন, তামাকপাতার দাম নির্ধারণে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কমিটিতে কোম্পানির প্রতিনিধিরাই প্রভাবশালী। যাঁরা তামাক কিনবেন, তাঁরাই আবার দাম ঠিক করবেন—এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
জনস্বাস্থ্যবিষয়ক নীতি বিশ্লেষক ও বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, হাইকোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের আদেশে বলা হয়েছিল, দেশে তামাক চাষ কমাতে হবে এবং নতুন কোনো তামাক কোম্পানিকে অনুমতি দেওয়া যাবে না। কিন্তু সেই আদেশ অমান্য করে নতুন করে নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।

সংস্কারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ৩০টি দলের প্রতিনিধিরা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। গতকাল ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে।
৩১ জুলাই ২০২৫
আসাদুজ্জামান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাংলাদেশে আসার পরে যেভাবে দেশের গণতন্ত্র উন্নত হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলোপের পরে সেই সুযোগ হয়নি। এই ব্যবস্থা বাতিল করার পর...
৮ মিনিট আগে
সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের পারিতোষিক, ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকারসংক্রান্ত আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়েছে। ১৩ জনের পক্ষে এ রিট করা হয়েছে বলে আজ বুধবার জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
১৯ মিনিট আগে
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) কর জালিয়াতি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অনৈতিক অর্থ সুবিধা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ৮ জনের...
১ ঘণ্টা আগে