Ajker Patrika

এক মাসের ব্যবধানে সাংবাদিকদের প্রতি সহিংসতা বেড়েছে তিন গুণ: এমএসএফ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
এক মাসের ব্যবধানে সাংবাদিকদের প্রতি সহিংসতা বেড়েছে তিন গুণ: এমএসএফ

চলতি মাসে নির্যাতন, হামলা, মামলাসহ নানাভাবে সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১০১ জন সাংবাদিক। জুলাই মাসে এই সংখ্যা ছিল ৩৫। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে সাংবাদিকদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে প্রায় তিন গুণ।

মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) আগস্ট মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। আজ রোববার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সই করা প্রতিবেদনে বলা হয়, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে যেভাবে শারীরিক, মানসিক এবং আইনি হয়রানি, আক্রমণ, হুমকি ও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে, তা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং সৎ সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। গণমাধ্যম যখন অবাধে কাজ করতে পারে, তখন মানবাধিকারের সুরক্ষা, দুর্নীতির উন্মোচন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সহজতর হয়।

‌অপর দিকে সাংবাদিকদের ওপর যখন হামলা, হুমকি, নির্যাতন, নিপীড়ন, মামলা, গ্রেপ্তার, সেন্সরশিপ বা ভীতি প্রদর্শনের সংস্কৃতি চালু হয়, তখন তা কেবল সংবাদপত্র নয়; সমগ্র গণতান্ত্রিক সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কথা ব্যক্ত করলেও বাস্তব ক্ষেত্রে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। এ মাসেও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র ছিল অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

প্রতিবেদনে সাংবাদিকদের প্রতি সহিংসতার বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ৩৩টি ঘটনায় ৯৬ সাংবাদিক নানাভাবে হামলা, আইনি হয়রানি, হুমকি হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আক্রান্ত সাংবাদিকদের সংখ্যা গত মাসের তুলনায় প্রায় তিন গুণ। আক্রান্ত সাংবাদিকদের মধ্যে একজনকে হত্যা, ৩৬ জন সাংবাদিক আইনি হয়রানির শিকার হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

২৩ জন সাংবাদিক তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আহত ও হামলার শিকার হয়েছেন। লাঞ্ছিত ও হুমকির শিকার হয়েছেন ১৬ জন সাংবাদিক এবং ২০ জন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে হত্যা, চাঁদাবাজি ও মানহানির মামলা। এই মাসের ৩৩টি সাংবাদিক নির্যাতন-সংক্রান্ত ঘটনায় সাতটিতে বিএনপি, ছয়টিতে পুলিশ, তিনটি ঘটনায় শিক্ষক, পাঁচটি ঘটনায় সন্ত্রাসী বাহিনী, দুটিতে চোরাকারবারি, একটি ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মামলার শিকার, একটিতে এনজিও, একটিতে পেশকার, চারটিতে দুষ্কৃতকারী, একটিতে পত্রিকা অফিস এবং দুটিতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা ছিল।

এমএসএফ বলছে, আগস্ট মাসে অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েছে। গণপিটুনি ও মব সহিংসতার মতো আইন হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা বন্ধ হয়নি; বরং নিহত ও আহতের সংখ্যা বেড়েছে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় এ বিষয়ে নাগরিকদের জীবনে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে।

এমএসএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্ট মাসে কারা হেফাজতে মোট ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ও মামলার সংখ্যা কমে গেলেও দুষ্কৃতকারী কর্তৃক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাসহ রাজনৈতিক দলসমূহের নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্ব অব্যাহত রয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিএনপির দলীয় কর্মীদের অন্তর্দ্বন্দ্ব লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে। আগস্ট মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনায় শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। তাঁদের মধ্যে দুজন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহতরা বিএনপির কর্মী সমর্থক।

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে সারা দেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত এবং অন্যান্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৭ হাজার ৯২৮ জন। এ মাসে সীমান্তে বিএসএফের ছোড়া গুলিতে দুজন নিহত, গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন এক বাংলাদেশি নাগরিক, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী এলাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত এলাকা থেকে চার ঘণ্টার ব্যবধানে দুই বাংলাদেশির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের শরীরে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন ছিল।

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্ট মাসে বিভিন্ন পর্যায়ে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ১০টি ঘটনা ঘটেছে। এ মাসে ৩৪৯টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা গত মাসের তুলনায় তিনটি কম। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ৪৭টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৯টি, ধর্ষণ ও হত্যা চারটি। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৯ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী। আগস্ট মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ২০ জন নারী ও ৪৫ জন পুরুষসহ মোট ৬৫টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ মাসে অন্তত ৩৮টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এতে ২৩ জন নিহত ও ৪৩ জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের আগমনে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে বলে মনে করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রাণী গির্জায় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান শফিকুল আলম। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা তাঁকে (তারেক রহমান) স্বাগত জানাই। উনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলের নেতা এবং আমি বলব তাঁর বাংলাদেশে আসা খুবই একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশে তো সত্যিকার অর্থে কিছু রাজনৈতিক শূন্যতা আছে। উনি আসলে সেটা পূরণ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে আমাদের একটা বড় ইলেকশন, আমরা একটা ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনে (গণতান্ত্রিক উত্তরণে) আছি। আমরা আশা করছি, আমাদের এই ট্রানজিশনটা আরও স্মুথ হবে।’

তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘তাঁর নিরাপত্তা তো তাঁর পার্টি দেখছেন, তবে তাঁরা আমাদের কাছে যেই ধরনের সহযোগিতা চাচ্ছেন, আমরা সব সহযোগিতাই করছি।’

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে সিলেটে আসে। সিলেটে যাত্রাবিরতি শেষে ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে তাঁর বাসটি সংবর্ধনাস্থলে আসে। কিছুক্ষণ আগে তিনি মঞ্চে অবস্থান নিয়ে তিনি বক্তব্য শুরু করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনে বঙ্গভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন রাষ্ট্রপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎস বড়দিনে খ্রিষ্টান ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে তিনি এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বলে বঙ্গভবনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেখানে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ বিশ্ববাসীর প্রতি বড় দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান। জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চিরকাল অটুট ও অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফোনে কথা বললেন তারেক রহমান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১৭ বছর নির্বাসনে থাকার পর এখন দেশের মাটিতে। আজ বৃহস্পতিবার ১১টায় ৫৪ মিনিটে তিনি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে ভেতরে প্রবেশ করেন। প্রথমেই তিনি বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জড়িয়ে ধরেন। পরে স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তারেক রহমানের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

এরপর তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ফোনে কুশল-বিনিয়ম করেন। নিরাপত্তা ও বিভিন্ন ধরনের সহায়তার জন্য এ সময় তিনি সরকারপ্রধানের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

কথোপকথনে তারেককে বলতে শোনা যায়, ‘জি জি...আমার জন্য আমার...জি জি...আপনার শরীর কেমন আছে?’

...

‘হ্যাঁ, দোয়া করবেন, দোয়া করবেন।’ ...

‘আমি আমার পক্ষ থেকে এবং আমার পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনি আপনার পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকম আয়োজন করেছেন, বিশেষ করে আমার নিরাপত্তার জন্য। অ্যান্ড উই আর থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ...থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ। সব রকম আয়োজনের জন্য।’

...

‘নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। জি নিশ্চয়ই...ইনশাল্লাহ...ইনশাল্লাহ।’

ভিআইপি লাউঞ্জে তারেক রহমানকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তারেক রহমানের সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান।

এরপরই তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু ফুলের মালা পরিয়ে জামাতাকে বরণ করেন নেন। নাতনি জাইমাকেও আদর করতে দেখা যায়। তারেক রহমান এ সময় তাঁর পাশে কিছু সময় বসে থাকেন। এরপর বেলা ১২টা ২০ মিনিটে তারেক রহমানে স্ত্রী ও তাঁর মেয়ে সাদা রঙের একটি জিপ গাড়িতে উঠে বসেন।

দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমান বেলা ১২টা মিনিটে ৩২ মিনিটে লাল সবুজ রঙে একটি বুলেটপ্রুফ বাসে উঠেন। ২ মিনিট পরে বাসটি বিমানবন্দর থেকে পূর্বাচলের ৩০০ ফিটের সংবর্ধনা মঞ্চের দিকে যেতে শুরু করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যাকাণ্ড: ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীর দোষ স্বীকার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
হাদি হত্যাকাণ্ড: ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীর দোষ স্বীকার

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, তাঁর বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা ও তাঁর শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন আদালত।

অন্যদিকে ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে জব্দ করা ফায়ার কার্তুজ ও ফায়ার বুলেট সদৃশ বস্তুর ব্যালিস্টিক পরীক্ষা করে বিস্তারিত মতামত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গতকাল বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনজন। একইদিনে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে জব্দ করা কার্তুজ ও বুলেট পরীক্ষার নির্দেশ দেন আদালত।

ঢাকার মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনজনের জবানবন্দি

গতকাল বুধবার সামিয়া, মারিয়া ও সিপুকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি। মামলার তদন্তকর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ তিনজনের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন। পরে আসামি মারিয়া ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কামাল উদ্দিনের আদালতে এবং সামিয়া ও সিপু ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম জুনাঈদের আদালতে জবানবন্দি দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

জবানবন্দিতে তিনজন কী বলেছেন তা জানা যায়নি। তবে বিশ্বস্ত এক সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার আগে ও পরে ফয়সাল কি করেছে এবং কি বলেছে সে সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন তিনজন।

এর আগে, গত ১৫ ডিসেম্বর এই তিনজনকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। পরে ২০ ডিসেম্বর তিনজনকে আবার দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। গত ১৪ ডিসেম্বর সামিয়া ও সিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে আটক করে পল্টন থানায় হস্তান্তর করা হয়।

উল্লেখ্য, এ মামলায় গ্রেফতার ফয়সালের মা ও বাবাও স্বীকোরোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

কার্তুজ-বুলেট ব্যালিস্টিক পরীক্ষা

বুধবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মোহাম্মদ জুনায়েদ ঘটনাস্থলে জব্দ করা ফায়ার কার্তুজ ও বুলেট সদৃশ বস্তু পরীক্ষার নির্দেশ দেন।

আবেদনে বলা হয়, শরিফ ওসমান হাদি ওরফে ওসমান গণি (৩৩) গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটের দিকে পল্টন থানাধীন বিজয়নগর বক্স কালভার্ট রোড সংলগ্ন ডিআর টাওয়ারের সামনে দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরবর্তীতে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যোগে গত ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে নিয়ে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃতদেহ বাংলাদেশ বিমান যোগে দেশে এনে ২০ ডিসেম্বর সকালে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়।

মামলায় ঘটনাস্থল হতে ফায়ার কার্তুজ ও ফায়ার বুলেট সদৃশ বস্তু আলামত জব্দ করা হয়। মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আলামতসমূহ ব্যালিস্টিক পরীক্ষা করে বিস্তারিত মতামত প্রদান করার জন্য সিআইডির ব্যালিস্টিক শাখার বিশেষ পুলিশ সুপারকে নির্দেশ প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত সিআইডিকে নির্দেশ দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত