Ajker Patrika

ঢাকার রাস্তা ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত হবে কবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ০৭
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আধুনিক নগরসভ্যতায় পরিবহন মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধি হয়ে উঠছে যানজট, বায়ুদূষণ, জ্বালানি অপচয় এবং মানসিক চাপের প্রধান কারণ। আর এ কারণেই আজ (২২ সেপ্টেম্বর) পালিত হচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস। মূলত ব্যক্তিগত বাড়ির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে, গণপরিবহন, বাইসাইকেল ব্যবহার কিংবা হাঁটার ওপর জোর দিতেই এই দিনটি পালিত হয়।

এটি কেবল একটি প্রতীকী দিবস নয়, বরং টেকসই উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলন। বিশেষ করে ঢাকার মতো শহরে, যেখানে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের ভিড়ের কারণে প্রায় অচল হয়ে পড়ে প্রায় প্রতিটি ছোট রাস্তা, সেখানে এই দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম।

ইদানীং বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা শোনা গেলেও এই দিবস কিন্তু খুব একটা নতুন নয়। বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসের ইতিহাস প্রায় পাঁচ দশক পুরোনো। ১৯৭৪ সালে সুইজারল্যান্ডে প্রথমবার পরীক্ষামূলকভাবে গাড়িমুক্ত দিবস পালন করা হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন জ্বালানি তেল সংকট মোকাবিলা করা। পাশাপাশি শহরে যানবাহনের পরিবেশগত প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা, বিশেষ করে বায়ু ও শব্দদূষণ কতটা কমে যায় তা লক্ষ্য করা। পরবর্তীতে ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেনসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশ এই উদ্যোগে যোগ দেয়।

১৯৯৪ সাল থেকে ইউরোপের শহরগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এ আন্দোলন ইউরোপ ছাড়িয়ে লাতিন আমেরিকা, এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে শতাধিক দেশের হাজারো শহরে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

কেন প্রয়োজন গাড়িমুক্ত দিবস?

যানজট নিরসন: ঢাকা, দিল্লি, জাকার্তা, মুম্বাইয়ের মতো শহরে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষ যানজটে আটকে থাকে। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বেশি হওয়াকেই এর প্রধান কারণ হিসেবে অভিহিত করা হয়। একেকটি গাড়ি সাধারণত ১-২ জন যাত্রী বহন করে, অথচ এটি বাসের সমান জায়গা দখল করে। এর ফলে রাস্তার সক্ষমতা হ্রাস পায়, অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় এবং মানুষের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। যানজট শুধু সময়ের অপচয় নয়, বরং মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ও দৈনন্দিন জীবনেও গভীর প্রভাব ফেলে।

বায়ুদূষণ রোধ: জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত গাড়ি থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইডসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয়। এসব দূষিত গ্যাস মানুষের শ্বাসযন্ত্র, হৃৎপিণ্ড ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বায়ুদূষণজনিত রোগে প্রায় ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সমস্যাও বেড়ে যায় বাতাসের ক্ষতিকর পদার্থের কারণে।

জ্বালানি সাশ্রয়: বিশ্বের জ্বালানি সম্পদ সীমিত এবং তেলের দাম ক্রমশ বাড়ছে। ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমালে জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব, যা জাতীয় অর্থনীতিকেও লাভবান করবে।

পরিবেশবান্ধব শহর গঠন ও মানসিক স্বস্তি: গাড়ির সংখ্যা কমলে শুধু বায়ুদূষণ নয়, শব্দদূষণও কমে। এতে শহরকে হাঁটা ও বাইসাইকেল বান্ধব করে তোলা সহজ হয়। শান্ত, পরিচ্ছন্ন ও সবুজ শহর মানসিক স্বস্তি দেয় এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি

বাংলাদেশ, বিশেষ করে ঢাকা, বিশ্বের অন্যতম যানজটপূর্ণ শহর। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার যানজটে বছরে প্রায় ৩ বিলিয়ন কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। বর্তমানে মোট নিবন্ধিত যানবাহনের প্রায় ৬৫ লাখের মধ্যে ৫৩ শতাংশই মোটরসাইকেল এবং ১৫ শতাংশ প্রাইভেটকার ও জিপ। প্রতিদিন গড়ে ৪০০টিরও বেশি নতুন গাড়ি ঢাকায় রাস্তায় নামছে, যার বড় অংশ ব্যক্তিগত গাড়ি। ফলে যানজট ও বায়ুদূষণ দিন দিন বেড়ে চলছে। ২০২২ সালে ঢাকায় সীমিত পরিসরে দিবসটি পালন করা হলেও নিয়মিত উদ্যোগের অভাবে এর কার্যকারিতা সীমিত।

সমাধান ও আন্তর্জাতিক উদাহরণ

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই সমস্যার সমাধানে গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি। আরামদায়ক, নিরাপদ ও সময়নিষ্ঠ গণপরিবহন যেমন মেট্রোরেল, ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট এবং এক্সপ্রেস বাস চালু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, সাইকেল লেন তৈরি এবং হাঁটার উপযোগী প্রশস্ত ফুটপাথ গড়ে তুলে মানুষকে হাঁটা ও সাইকেল ব্যবহারে উৎসাহিত করা যেতে পারে বলেও মনে করেন অনেকে।

প্যারিস, ফ্রান্স এবং বোগোটা, কলম্বিয়ার মতো শহরগুলো একাধিক দিন গাড়িমুক্ত থেকে প্রমাণ করেছে যে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সুপরিকল্পিত নীতিমালা থাকলে নগর পরিবহন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা সম্ভব।

সুফল ও সীমাবদ্ধতা

ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসের শহরের বায়ুমান সাময়িকভাবে উন্নত করে। পাশাপাশি মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ির বিকল্প পরিবহন ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়। দীর্ঘ মেয়াদে শহরগুলো আরও টেকসই, বাসযোগ্য ও সবুজ হয়। তবে সমালোচকেরা এটিকে কেবল একটি প্রতীকী দিবস মনে করেন এবং বলেন যে একদিন গাড়ি কম চালালেই সমস্যার সমাধান হবে না। উন্নয়নশীল দেশে পর্যাপ্ত বিকল্প গণপরিবহন না থাকায় এর কার্যকারিতা সীমিত—তা ও অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

এই বছর বাংলাদেশে ‘সমাজ, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার সীমিত করি’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ৬২টি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পদত্যাগ করলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকশ চৌধুরী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৪০
খোদা বকশ চৌধুরী। ফাইল ছবি
খোদা বকশ চৌধুরী। ফাইল ছবি

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন। তিনি প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতাপ্রাপ্ত ছিলেন।

খোদা বখশ চৌধুরীর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন জানিয়ে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে শেষ দিকে এসে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে গুঞ্জন ওঠে। ওই পদে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও গুঞ্জন ছিল।

সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছিল, গত মঙ্গলবার রাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার কথা ছিল খোদা বখশ চৌধুরীর। কিন্তু এ নিয়ে উপদেষ্টাদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হওয়ায় আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন প্রধান উপদেষ্টা।

একটি সূত্র বলছে, উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় খোদা বখশ চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন।

এর আগে গত ১০ মার্চ প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলামও এভাবে পদত্যাগ করেছিলেন।

অধ্যাপক আমিনুলকে শিক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু গত ৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও মানবাধিকারকর্মী সি আর আবরারকে শিক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পাঁচদিন পর পদত্যাগ করেন অধ্যাপক আমিনুল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই অভ্যুত্থানে চানখাঁরপুলে হত্যাকাণ্ডের রায় ২০ জানুয়ারি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ০১
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুলে ৬ জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আগামী ২০ জানুয়ারি রায় দেবেন ট্রাইব্যুনাল। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বুধবার রায়ের জন্য এই দিন ধার্য করেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

এই মামলায় আট আসামির বিরুদ্ধে গত ১৪ জুলাই অভিযোগ গঠন করা হয়। আট আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার থাকা শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, সাবেক কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। আর পলাতক রয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আক্তারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।

যাত্রাবাড়ীতে তাইম হত্যায় ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশ কর্মকর্তার ছেলে ইমাম হাসান তাইম হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১১ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। যাতে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারদের হাজিরের জন্য আগামী ৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পলাতকদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন ওসি আবুল হাসান ও তৎকালীন ওসি (তদন্ত) জাকির হোসাইন। আর পলাতক রয়েছেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, ওয়ারী জোনের সাবেক ডিসি ইকবাল হোসাইন ও এডিসি এস এম শামীম, ডেমরা জোনের তৎকালীন এডিসি মো. মাসুদুর রহমান মনির, তৎকালীন সহকারী পুলিশ কমিশনার নাহিদ ফেরদৌস, যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) ওহিদুল হক মামুন, এসআই (নিরস্ত্র) সাজ্জাদ উজ জামান ও মো. শাহদৎ আলী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিন উপলক্ষে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা বিনিময়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৫১
আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং
আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং

বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, বাংলাদেশের ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ, ন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান ফেলোশিপ অব বাংলাদেশের সভাপতি বিশপ ফিলিপ পি অধিকারী, খ্রিষ্টধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ড. বেনেডিক্ট আলো ডি রোজারিও, জাতীয় চার্চ পরিষদ বাংলাদেশের সভাপতি খ্রিস্টোফার অধিকারীসহ দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় খ্রিষ্টধর্মের নেতারা তাঁদের শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিশ্বজুড়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সুনাম এবং দেশের অর্থনীতি ও সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নে তাঁর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনও সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজিত হবে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন।

আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং
আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং

আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে যিশুখ্রিষ্টকে সর্বজনীন উল্লেখ করে বলেন, যিশুখ্রিষ্টের ক্ষমা ও মানবসেবার মহান আদর্শ সামনে রেখে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষও এ বছর উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে বড়দিন উদ্‌যাপন করছে।

প্রধান উপদেষ্টাকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে জনগণ আপনার ওপর আস্থা রেখেছিল। আপনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। আমরা প্রার্থনা করি, একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আপনার প্রচেষ্টা সফল হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত নেতৃবৃন্দসহ সবাইকে বড়দিন ও আসন্ন নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আপনারাই সমাজের প্রতিবিম্ব। আপনাদের দেখলে বুঝতে পারি, সবকিছু ঠিক আছে কি না।’

আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং
আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে চাই। সে জন্যই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে জুলাই সনদ প্রস্তুত করা হয়েছে। এই সনদের ওপর গণভোটের মাধ্যমে দেশ আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে জনগণ যে রায় দেবে, পরবর্তী সময়ে সংসদ সেভাবেই সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

প্রধান উপদেষ্টা এ সময় আসন্ন নির্বাচন ও গণভোটের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করে তুলতে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে আড়াই কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার জন্য অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান ট্রাস্টের নেতৃবৃন্দ। দেশব্যাপী ৮০০টি চার্চের মধ্যে তিন ধাপে এই অনুদান বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানান তাঁরা।

পরে বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে সরকার: প্রেস সচিব

বাসস, ঢাকা  
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০২
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ বুধবার বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ বুধবার বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁর বাংলাদেশে ফেরাকে স্বাগত জানাই। তাঁর জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে।’

প্রেস সচিব আরও জানান, সরকার তাঁর নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়টি বিএনপির সঙ্গে পরামর্শ করছে এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।’

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকারীদের বিচারের বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘এ বিষয়ে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। আমরা গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পাচ্ছি এবং ঘটনার তদন্তে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাকশ্রমিক দীপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, ‘সরকার হত্যাকাণ্ডকে নিন্দা জানিয়েছে। ভিডিও বিশ্লেষণের মাধ্যমে অন্তত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা আজ উপদেষ্টা পরিষদকে জানিয়েছেন, দীপু হত্যার বিচার দ্রুত বিচার আইনের আওতায় সম্পন্ন হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি।’

প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনার বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকটি মামলা করা হয়েছে। সব দোষীকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত