Ajker Patrika

গা ছমছম পাতাল কালী

মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম 
আপডেট : ২৬ জুন ২০২৫, ০৮: ০৩
ছবি: দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ
ছবি: দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ

প্রথম পছন্দ দুর্গম অঞ্চল। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার পাতাল কালী তেমনই দুর্গম। এর পাশে রয়েছে পরিচিত চন্দ্রনাথ পাহাড়। আমার মতো রোমাঞ্চপ্রিয়দের জন্য সেটা আগ্রহের জায়গা নয়। তাই চন্দ্রনাথে ওঠার আগে সিএনজিচালিত অটোরিকশাস্ট্যান্ডের ঠিক বাঁ পাশ দিয়ে ঢুকে যাই বন পথে। যাচ্ছি তো যাচ্ছি।

কোথাও কোথাও পথটা এত সরু যে বাঁক নেওয়ার পরে পেছনে থাকা সঙ্গীকেও দেখা যায় না। এ রকম পথ বেশ টানে আমাকে। এ পথও টানতে টানতে আমলকীবাগানের নিচে নিয়ে গেল। দু-চারটি আমলকী পেড়ে চিবিয়ে খাই। তারপর গাছতলায় জিরোনো বাদ দিয়ে এগিয়ে যাই। পাহাড়ের চূড়ায় বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বটগাছের তলায় বসে পড়ি। ডানে উঁচু পাহাড়, বাঁয়ে গভীর খাদ। পেছনে বঙ্গোপসাগর। ওখান থেকে সাগরের নোনাজলের দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। ঠিক কতটা উঁচুতে ছিলাম, জানা নেই। তবে মাথার কাছাকাছি থাকা নীল আসমান দেখে আন্দাজ করতে পেরেছিলাম, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কমপক্ষে আট শ ফুট ওপরে বসে আছি। উঠি এবার। বেশি জিরোলে শরীর নেতিয়ে পড়ে। হালকা-পাতলা খাবার পেটে পুরে আবার এগিয়ে যাই।

সামনের পথ যেন আরও বেশি রোমাঞ্চকর। ঝোপঝাড়ের ভেতর দিয়ে ট্রেকিং শুরু হলো। কখনো কখনো পথটা এত সরু যে একটু এদিক-সেদিক হলেই সোজা নিচের বাঁশবাগানে! অজানাকে জানা আর অচেনা পথ আবিষ্কারের আনন্দই সম্ভবত ভ্রমণের প্রধান বিষয়। জঙ্গলের মাঝ দিয়ে এগোতে এগোতে একবার পেছনে তাকিয়ে দেখি, উঁচু পাহাড় থেকে অনেকখানি পথ নিচে নেমে এসেছে! বুঝলাম, দৃষ্টিভ্রম হচ্ছে। তাই খানিক দাঁড়িয়ে মুখে চকলেট পুরে আবারও ট্রেকিং শুরু করলাম। এবার শুধু নিচের দিকেই নামছি। নামতে নামতে হঠাৎ ওপর দিকে তাকিয়ে দেখি, আমরা সবুজে ঘেরা এক কূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি! পাতাল কালী পৌঁছার কিছু আগে এ রকম দৃশ্যের অবতারণা হয়, জানতাম। জায়গাটা চারদিকে পাহাড়বেষ্টিত। ঘন সবুজ অরণ্যে ঘেরা।

এ রকম অদ্ভুত নয়নজুড়ানো দৃশ্য দেখে পাহাড় ট্রেকিংয়ের ক্লান্তি নিমেষে উবে গেল। পাহাড়-জঙ্গলে ভ্রমণের তৃপ্তিটা ঠিক এ রকম দৃশ্যপটের মাঝেই লুকিয়ে থাকে। বেশ কিছু সময় নিয়ে নানান ভঙ্গিমায় ফটোশুট চলে।

পাতাল কালী যে খুব কাছাকাছি, তা আর বুঝতে বাকি রইল না। ডানে-বাঁয়ে থাকা পাহাড়ের ওপরে মাঝেমধ্যে ছোট ছোট মন্দিরের দেখা পাচ্ছি। কিন্তু একি! সাপের তো দেখা পাচ্ছি না। আসার আগে জানতে পেরেছিলাম, এ-পাশটায় থাকা মন্দিরগুলোতে সাপের বিচরণ রয়েছে বেশ। হতাশ মনেই কিছুক্ষণ ট্রেকিং করার পর পাতাল কালীর দেখা পাই।

ছবি: দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ
ছবি: দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ

জায়গাটা পাহাড়বেষ্টিত ঝিরির পাশে। খাদের কিনারাও বলা যেতে পারে। বিশাল এক পাথরখণ্ড রয়েছে। দেখতে কুচকুচে কালো। লাল কাপড় দিয়ে ঘেরা পাথরের পাশে বসে একজন পুরোহিত পূজা অর্চনা করছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পদচারণা রয়েছে এখানে। জায়গাটাকে স্থানীয়দের মধ্যে কেউ কেউ উল্টা কালী নামেও চেনে-জানে। লোকমুখে প্রচলিত আছে, একসময় এখানে মানুষ বলি দেওয়া হতো। ঘটনার সত্যতা এবং আরও নির্ভরযোগ্য তথ্য জানার আগ্রহ থেকে পুরোহিতের কাছে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি চেয়ে পেলাম না। আমিও আর চেষ্টা করলাম না।

পরিবেশটা গা ছমছম। পাঁঠা বলি দেওয়ার উপকরণ দৃশ্যমান। এরপর ঠিক লাল কাপড়ে ঘেরা পাথরখণ্ডের পাশ দিয়ে এগোতে থাকলাম। কিছুদূর যাওয়ার পরেই চোখ ছানাবড়া। জংলি গাছের ভেতর দিনের আলো চোর-পুলিশ খেলছে। এঁকেবেঁকে যাওয়া ঝিরিতে সারি সারি পাথর। সেসব বড় পাথরের ফাঁক গলে গড়িয়ে যাওয়া পানির কলকল শব্দ। বাতাসে গাছের পাতা এবং ঝিরিতে পানির শব্দ মিলেমিশে এক অপার্থিব পরিবেশ। মনে আনন্দ হলো। যেতে যেতে চোখে পড়ে লালসালু দিয়ে ঘেরা শিবলিঙ্গ। বিশালাকার কুচকুচে কালো পাথরটার প্রাকৃতিক অবয়ব বেশ চমৎকার। পর্যটকেরা তা দেখে পুলকিত হবে নিশ্চিত। পাথরটা ঘিরে চলে কিছুক্ষণ ফটোসেশন। এরপর আরও কিছুটা সময় ট্রেকিং। ঝিরিটা চলে গেছে সোজা নাক বরাবর। ঝিরির রূপের প্রেমে পড়ে গেলাম। তখন দলের কেউ একজন ‘সন্ধ্যার মধ্যে ফিরতে হবে’ কথাটা মনে করিয়ে দিল।

আসলে কিছু কিছু দুর্গম জায়গায় ভ্রমণকালে জন্তু জানোয়ারের ভয়ে নয়, মানুষের ভয়েই দ্রুত ফিরতে হয়। পাতাল কালী অভিযানটা শুরু করতে হয়েছে ডাকাতের আক্রমণের ব্যাপারটা বিবেচনায় রেখে। তাই সঙ্গে নেওয়া বাজারসদাই সুবিধাজনক জায়গায় রেখে চুলা বানিয়ে রান্না চড়িয়ে দেওয়া

হলো। ঝিরির পানি ফ্রি। হাঁড়ি-পাতিল স্থানীয় গাইডের। থালা হিসেবে কলাপাতা। সব মিলিয়ে জম্পেশ খানাপিনা। খেয়েদেয়ে অরণ্যঘেরা পাহাড়ি পথে ফেরার আয়োজন।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো রাতের বাসে চড়ে ভোর ৫ থেকে সকাল ৬টার মধ্যে সীতাকুণ্ড পৌঁছানো যায়। বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজি কিংবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চন্দ্রনাথ। সেখানে মিলবে স্থানীয় গাইড।

সময় ও খরচাপাতি

ভোরে নেমে সারা দিন ঘুরে আবার ফিরে আসা যাবে। জনপ্রতি দুই হাজার টাকা যথেষ্ট।

সতর্কতা

এখানে পেশাদার কোনো গাইড পাবেন না। স্থানীয় মানুষজনই সেখানে গাইড হিসেবে কাজ করেন। সে কারণে নিজ নিজ নিরাপত্তার বিষয়ে আপনাকেই বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। তবে গাইডরা পথপ্রদর্শক মাত্র।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অনলাইনে আ.লীগকে সংগঠিত করার চেষ্টা, অধ্যক্ষ আটক

এক মাস আগে কলেজে আত্মহত্যার চেষ্টা ইপ্সিতার, ভিডিও ভাইরাল

ভারতীয় বিমানবন্দরে ১১ দিন ধরে পড়ে আছে ব্রিটিশ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, ঘনাচ্ছে রহস্য

সারজিস আলমের পোস্ট: সেই সাবরেজিস্ট্রারের অফিসে দুদকের অভিযান

জোহরান মামদানি শতভাগ কমিউনিস্ট উন্মাদ, চেহারা বাজে ও বুদ্ধি কম: ট্রাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত