Ajker Patrika

চীনের ‘নিষিদ্ধ শহর’ কেন নিষিদ্ধ

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ২১: ১১
ছবি: উইকিপেডিয়া
ছবি: উইকিপেডিয়া

চীনের বেইজিং শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত ‘নিষিদ্ধ শহর’ বা ফরবিডেন সিটি চীনের ইতিহাস ও স্থাপত্যের এক অমূল্য সম্পদ। ১৬৪৪ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত মিং ও কিং রাজবংশের সম্রাটদের আবাসস্থল হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়েছিল।

নিষিদ্ধ শহরটি প্রায় ১৭৮ একর বিস্তৃত। এটি ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে প্রায় ১ হাজার ভবন, যা মূলত কাঠের বিম, জটিল খোদাই ও হলুদ-চকচকে টাইলস দিয়ে নির্মিত। ভবনগুলোর নকশা শুধু দর্শনীয়ই নয়, এটি প্রাচীন চীনা নীতি ও ফেং শুইয়ের প্রভাবও বহন করে।

ইতিহাসের সাক্ষ্য

মিং রাজবংশের ইয়ংলি সম্রাট ১৪০৬ সালে শহরের নির্মাণকাজ শুরু করেন। প্রায় ১৪ বছর ধরে নির্মাণকাজ চলার পর শহরটি ব্যবহারের উপযোগী হয়। পরবর্তী পাঁচ শতক ধরে এটি চীনের সম্রাটদের ক্ষমতার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই সময়ে ২৪ জন সম্রাট এখানে বসবাস করেছেন।

ছবি: উইকিপেডিয়া
ছবি: উইকিপেডিয়া

নিষিদ্ধ শহরের স্থাপত্য ও নির্মাণসম্পর্কিত অনেক বিষয় এখনো রহস্যময়। কাঠের এই ভবনগুলো গত পাঁচ শ বছরে চীনের ছোট-বড় সব ভূমিকম্প সহ্য করেছে। শহরের ‘হল অব সুপ্রিম হারমনি’র আঙিনায় গাছ নেই, কেন তা আজও অজানা। এ ছাড়া ভবনের মাপের নিখুঁত অনুপাত ও নকশাকারদের পরিচয় নিয়েও অনেক ধাঁধা রয়েছে। পূর্বের ধারণা অনুসারে, মিং রাজবংশের খ্যাতনামা শিল্পী কুয়াই জিয়ঙ শহরের নকশাকার ছিলেন। তবে সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে প্রকৃত নকশাকার ছিলেন কাই জিন নামের অন্য একজন।

বহু গবেষক মনে করেন, ভবনের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৬ অনুপাত ১১ রাখা হয়েছে। এমনকি আঙিনার মাপও একই অনুপাতে। এই নিখুঁত জ্যামিতিক ব্যবস্থা প্রাচীন চীনা গুপ্তজ্ঞান বা প্রতীকের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।

প্রতীকের ব্যবহার

শহরের ছাদ, দেয়াল ও অন্যান্য স্থানে ড্রাগন, ফিনিক্স এবং অন্যান্য পৌরাণিক প্রাণীর ভাস্কর্য বা চিত্র ব্যবহার করা হয়েছে। প্রাচীন চীনে এসব প্রতীকের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এগুলো শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, অনেক ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা, শক্তি ও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হতো। এই প্রতীকগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্রাটের ক্ষমতা, প্রাসাদের নিরাপত্তা ও সৌভাগ্য বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্য। তাই এই ভাস্কর্য বা চিত্রগুলো শুধু নান্দনিকতার জন্য নয়, বরং প্রতীকের মধ্য দিয়ে সম্রাট ও প্রাসাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক সামাজিক ও ধর্মীয় ধারণা প্রকাশ পেত।

আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র

১৯১২ সালে চীনের রাজবংশ পতনের পর ১৯২৫ সালে নিষিদ্ধ শহরকে জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আজ এখানে দর্শনার্থীরা সম্রাটদের জীবনধারা, প্রাসাদের স্থাপত্যশৈলী, পেইন্টিং, ক্যালিগ্রাফি, সিরামিকস, ব্রোঞ্জ মূর্তিসহ নানান শিল্পকর্ম উপভোগ করতে পারেন। সম্রাটদের ব্যক্তিগত সংগ্রহও সংরক্ষিত আছে সেখানে। এটি চীনের বড় জাদুঘরগুলোর একটি।

ছবি: উইকিপেডিয়া
ছবি: উইকিপেডিয়া

শহরের আলো, সোনালি ছাদ এবং জটিল নকশা পর্যটকদের অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়। চীনা শিল্প, সংস্কৃতি ও ইতিহাসে আগ্রহী যে কেউ এখান থেকে সমৃদ্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন।

অতীত ও প্রাচীন শিকড়

গত বছর চীনা প্রত্নতাত্ত্বিকেরা শহরের কেন্দ্রস্থলে খনন কাজ চালিয়েছিলেন। সে খনন থেকে কিছু নতুন তথ্য পেয়েছেন তাঁরা। সে তথ্য জানাচ্ছে, বর্তমান নিষিদ্ধ শহর ১৩ শতকের কুবলাই খানের রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষের ওপর গড়ে উঠেছে। এটি প্রমাণ করে যে শহরের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। এটি বহু যুগ ধরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে।

নিষিদ্ধ শহর বলা হয় কেন

এই শহরে সম্রাট স্বয়ং বসবাস করতেন। ফলে অন্যান্য জায়গার চেয়ে এখানে তাঁর নিয়ন্ত্রণ ছিল সরাসরি। এখানে তাঁর কথাই ছিল আইন। সাধারণ প্রজা বা রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যের জন্যও শহরটিতে প্রবেশের অধিকার ও চলাচল ছিল সীমিত। শুধু সম্রাটই যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে যেতে পারতেন। এ কারণে এটিকে ‘নিষিদ্ধ শহর’ বলা হয়।

ছবি: উইকিপেডিয়া
ছবি: উইকিপেডিয়া

চীনের নিষিদ্ধ শহর কেবল ইতিহাসের সাক্ষ্য নয়, এটি স্থাপত্য, শিল্প এবং রাজকীয় জীবনধারার এক প্রতীক। সম্রাটদের ক্ষমতা, রহস্যময় স্থাপত্য, জটিল নকশা এবং সাংস্কৃতিক প্রতীকের মাধ্যমে শহরটি দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।

চীনের ইতিহাস, স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এই শহর আজ বিশ্বের পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত। বেইজিংয়ের কেন্দ্রে অবস্থিত এই নগরীর সৌন্দর্য ও রহস্য পর্যটকেরা একবার দেখে চিরকাল মুগ্ধ থাকবেন।

সূত্র: সিএনএন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণা দিতেই ভারতে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে এএসআই উধাও, থানায় শ্বশুরের জিডি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত