প্রতিবছর অন্তত কিছুদিনের জন্য ফরাসি কায়দায় ছুটি কাটানোর বিলাসী ইচ্ছাকে পরিহার করতে পারি না। এবার ঠিক করেছি নগরী থেকে দূরে, পর্বতে যাব। জায়া, কন্যা, পুত্রসহ আমরা চারজন। গন্তব্য সাঁ-মার্তা। পিরেনিজ পর্বতমালার অদূরে ছবির চেয়ে সুন্দর ফ্রান্সের একটি ছোট্ট গ্রাম। আমাদের বর্তমান আবাস তুলুজ শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে।
মহাসড়কের দুই পাশে অনুচ্চ পাহাড়, পাহাড়ের বিস্তীর্ণ ঢালে নতজানু সূর্যমুখীর খেত রোদের সঙ্গে হলুদের আভায় উজ্জ্বল। খানিকটা এগিয়ে গেলে দূর আকাশে হেলান দিয়ে আছে পিরেনিজ পর্বতমালা। মেঘ ছাড়িয়ে তুষার ঢাকা চূড়ায় ঠিকরে পড়ছে সূর্যের অকৃপণ রশ্মি। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য।
বিকেলের পড়ন্ত রোদে পথ ধরে ঘণ্টাখানেক সময়ে আমরা পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। আগে থেকেই একটি বাড়ি ভাড়া করে রাখা হয়েছিল। নিচে রান্না আর বসার ঘর। দোতলায় দুটি রুম। বাড়িটির সঙ্গে একচিলতে মাঠ। গা এলিয়ে বসার জন্য আরামকেদারা রাখা আছে, আছে একটি আখরোটের গাছ। দূর পাহাড়ের গা ঘেঁষে ছবির মতো বাড়ি, রাস্তা, চোখের ক্লান্তি দূর করা সবুজে ঢাকা। গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপন, শান্তিময় স্নায়বিক বিশ্রামের জন্য চমৎকার পাহাড়ি অঞ্চল। চারজনের এক সপ্তাহের জন্য বেশ সাজানো-গোছানো এমন বাড়ির জন্য গুনতে হবে ৫০০ ইউরো।
আমরা ঠিক করে রেখেছিলাম, ফোঁয়া শহর থেকে ৬ কিলোমিটার বা ৪ মাইল দূরে লাবোউইচ এলাকায় ভূগর্ভস্থ নদীটি দেখব। এটি ইউরোপের দীর্ঘতম নৌ চলাচলযোগ্য ভূগর্ভস্থ নদী। ভূত্বক থেকে ৬০ মিটার অর্থাৎ প্রায় ২০০ ফুট গভীরে এ নদী পিরেনিজ পর্বতমালার অদূরে প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। ১৯০৮ সালের আগস্ট মাসে জুল ডুনাক নামে এক চিকিৎসক সেনাবাহিনীতে কাজ করা তাঁর দুই তরুণ পুত্রকে নিয়ে জঙ্গলে বেড়াতে গিয়েছিলেন। গাছগাছড়ায় ঢাকা একটি গুহামুখে ঢুকতেই নদীটি আবিষ্কার করেন তাঁরা। ১৯৩৮ সাল থেকে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় সেটি।
সকাল সকাল সেখানে পৌঁছে গেলাম। গাছের ছায়ায় প্রশস্ত পার্কিং, একটি স্যুভেনির বুটিক আর টিকিট ঘর। আছে একটি রেস্তোরাঁ—এখানে ১৫ থেকে ২০ ইউরো হলে একজনের দুপুরের খাবার হয়ে যায়। মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত। তবে জুলাই এবং আগস্ট মাসে সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
নদীতে যেতে একটি পাহাড়ি গুহার মুখে পৌঁছার পর খাড়া সিঁড়ির ২৪০টি ধাপ ধরে পাতালে নামতে হবে। পাতালপুরীতে দেড় কিলোমিটার অর্থাৎ প্রায় এক মাইল নৌবিহারের জন্য মাথাপিছু গুনতে হবে ১৪ দশমিক ৮০ ইউরো। ১২ জন পর্যটকের একটি করে দল নৌকায় উঠবে। ফরাসি, ইংরেজি এবং স্প্যানিশ ভাষায় দক্ষ একজন মাঝি কাম গাইড থাকবে সঙ্গে। আরও জানিয়ে দেওয়া হলো, মাটির অতটা নিচে সারা বছর তাপমাত্রা থাকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর কোনো হেরফের হয় না। ফলে নিচে নামার আগেই আমাদের দলের সবাই গরম কাপড় গায়ে চড়িয়ে নিলাম।
ভূগর্ভস্থ নদীটির সর্বোচ্চ গভীরতা ৩ মিটার বা ১০ ফুট। পাঁচটি মহল বা গ্যালারির মধ্য দিয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার অর্থাৎ আড়াই মাইল দীর্ঘ স্ফটিক স্বচ্ছ ফিরোজা রঙের জলের পাতাল নদী। নদীটি উপনদীতে বিভক্ত। নানা জায়গায় রয়েছে গুপ্ত সুড়ঙ্গ। আছে অঝোর জলধারার একটি চমৎকার জলপ্রপাত। এক জায়গায় মাথার ওপরের ছাদ ৩৫ মিটার বা ১১৫ ফুট উঁচুতে। নিস্তব্ধ, নিশ্চুপ একেকটি মহল। শুধু টুপটাপ পানি পড়ার শব্দ। লাখ লাখ বছর ধরে এই টুপটাপ শব্দ একটানা হয়ে চলছে, এক মুহূর্তের জন্যও থামেনি। আলো-আঁধারিতে এক অদ্ভুত রহস্যময় পরিবেশ।
মানুষ তখনো পৃথিবীতে পা রাখেনি, সেই আদিকাল থেকে বৃষ্টির পানি মাটি চুইয়ে চুনাপাথরের অংশ ক্ষয় করার কারণে মাটির নিচে বহু ফাঁকফোকরের সৃষ্টি হয়। পানি তার নিজস্ব পথ তৈরি করে নিয়েছে ভূগর্ভস্থ এই অগভীর নদীটিতে। গড়ে উঠেছে বিভিন্ন আকার-আকৃতির অসংখ্য চিত্তাকর্ষক স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট।
তিনবার নৌকা বদলিয়ে দেড় কিলোমিটার পাতাল নৌভ্রমণে সময় লাগবে প্রায় দেড় ঘণ্টা। আমাদের গাইড ছিলেন প্রাণবন্ত তরুণ আনাস। আমাদের বলছিলেন, কোটি কোটি বছরের ইতিহাস লেখা আছে এখানকার কংক্রিটের কঠিন দেয়ালে। সত্যিই অপূর্ব সুন্দর এক পাতালপুরীর দেশ, অলৌকিক পরাবাস্তব জগৎ। রূপকথাতেও এমন জগতের বর্ণনা পাওয়া যাবে না। মোহাবিষ্ট হতেই হবে।
প্রতিবছর অন্তত কিছুদিনের জন্য ফরাসি কায়দায় ছুটি কাটানোর বিলাসী ইচ্ছাকে পরিহার করতে পারি না। এবার ঠিক করেছি নগরী থেকে দূরে, পর্বতে যাব। জায়া, কন্যা, পুত্রসহ আমরা চারজন। গন্তব্য সাঁ-মার্তা। পিরেনিজ পর্বতমালার অদূরে ছবির চেয়ে সুন্দর ফ্রান্সের একটি ছোট্ট গ্রাম। আমাদের বর্তমান আবাস তুলুজ শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে।
মহাসড়কের দুই পাশে অনুচ্চ পাহাড়, পাহাড়ের বিস্তীর্ণ ঢালে নতজানু সূর্যমুখীর খেত রোদের সঙ্গে হলুদের আভায় উজ্জ্বল। খানিকটা এগিয়ে গেলে দূর আকাশে হেলান দিয়ে আছে পিরেনিজ পর্বতমালা। মেঘ ছাড়িয়ে তুষার ঢাকা চূড়ায় ঠিকরে পড়ছে সূর্যের অকৃপণ রশ্মি। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য।
বিকেলের পড়ন্ত রোদে পথ ধরে ঘণ্টাখানেক সময়ে আমরা পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। আগে থেকেই একটি বাড়ি ভাড়া করে রাখা হয়েছিল। নিচে রান্না আর বসার ঘর। দোতলায় দুটি রুম। বাড়িটির সঙ্গে একচিলতে মাঠ। গা এলিয়ে বসার জন্য আরামকেদারা রাখা আছে, আছে একটি আখরোটের গাছ। দূর পাহাড়ের গা ঘেঁষে ছবির মতো বাড়ি, রাস্তা, চোখের ক্লান্তি দূর করা সবুজে ঢাকা। গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপন, শান্তিময় স্নায়বিক বিশ্রামের জন্য চমৎকার পাহাড়ি অঞ্চল। চারজনের এক সপ্তাহের জন্য বেশ সাজানো-গোছানো এমন বাড়ির জন্য গুনতে হবে ৫০০ ইউরো।
আমরা ঠিক করে রেখেছিলাম, ফোঁয়া শহর থেকে ৬ কিলোমিটার বা ৪ মাইল দূরে লাবোউইচ এলাকায় ভূগর্ভস্থ নদীটি দেখব। এটি ইউরোপের দীর্ঘতম নৌ চলাচলযোগ্য ভূগর্ভস্থ নদী। ভূত্বক থেকে ৬০ মিটার অর্থাৎ প্রায় ২০০ ফুট গভীরে এ নদী পিরেনিজ পর্বতমালার অদূরে প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। ১৯০৮ সালের আগস্ট মাসে জুল ডুনাক নামে এক চিকিৎসক সেনাবাহিনীতে কাজ করা তাঁর দুই তরুণ পুত্রকে নিয়ে জঙ্গলে বেড়াতে গিয়েছিলেন। গাছগাছড়ায় ঢাকা একটি গুহামুখে ঢুকতেই নদীটি আবিষ্কার করেন তাঁরা। ১৯৩৮ সাল থেকে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় সেটি।
সকাল সকাল সেখানে পৌঁছে গেলাম। গাছের ছায়ায় প্রশস্ত পার্কিং, একটি স্যুভেনির বুটিক আর টিকিট ঘর। আছে একটি রেস্তোরাঁ—এখানে ১৫ থেকে ২০ ইউরো হলে একজনের দুপুরের খাবার হয়ে যায়। মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত। তবে জুলাই এবং আগস্ট মাসে সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
নদীতে যেতে একটি পাহাড়ি গুহার মুখে পৌঁছার পর খাড়া সিঁড়ির ২৪০টি ধাপ ধরে পাতালে নামতে হবে। পাতালপুরীতে দেড় কিলোমিটার অর্থাৎ প্রায় এক মাইল নৌবিহারের জন্য মাথাপিছু গুনতে হবে ১৪ দশমিক ৮০ ইউরো। ১২ জন পর্যটকের একটি করে দল নৌকায় উঠবে। ফরাসি, ইংরেজি এবং স্প্যানিশ ভাষায় দক্ষ একজন মাঝি কাম গাইড থাকবে সঙ্গে। আরও জানিয়ে দেওয়া হলো, মাটির অতটা নিচে সারা বছর তাপমাত্রা থাকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর কোনো হেরফের হয় না। ফলে নিচে নামার আগেই আমাদের দলের সবাই গরম কাপড় গায়ে চড়িয়ে নিলাম।
ভূগর্ভস্থ নদীটির সর্বোচ্চ গভীরতা ৩ মিটার বা ১০ ফুট। পাঁচটি মহল বা গ্যালারির মধ্য দিয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার অর্থাৎ আড়াই মাইল দীর্ঘ স্ফটিক স্বচ্ছ ফিরোজা রঙের জলের পাতাল নদী। নদীটি উপনদীতে বিভক্ত। নানা জায়গায় রয়েছে গুপ্ত সুড়ঙ্গ। আছে অঝোর জলধারার একটি চমৎকার জলপ্রপাত। এক জায়গায় মাথার ওপরের ছাদ ৩৫ মিটার বা ১১৫ ফুট উঁচুতে। নিস্তব্ধ, নিশ্চুপ একেকটি মহল। শুধু টুপটাপ পানি পড়ার শব্দ। লাখ লাখ বছর ধরে এই টুপটাপ শব্দ একটানা হয়ে চলছে, এক মুহূর্তের জন্যও থামেনি। আলো-আঁধারিতে এক অদ্ভুত রহস্যময় পরিবেশ।
মানুষ তখনো পৃথিবীতে পা রাখেনি, সেই আদিকাল থেকে বৃষ্টির পানি মাটি চুইয়ে চুনাপাথরের অংশ ক্ষয় করার কারণে মাটির নিচে বহু ফাঁকফোকরের সৃষ্টি হয়। পানি তার নিজস্ব পথ তৈরি করে নিয়েছে ভূগর্ভস্থ এই অগভীর নদীটিতে। গড়ে উঠেছে বিভিন্ন আকার-আকৃতির অসংখ্য চিত্তাকর্ষক স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট।
তিনবার নৌকা বদলিয়ে দেড় কিলোমিটার পাতাল নৌভ্রমণে সময় লাগবে প্রায় দেড় ঘণ্টা। আমাদের গাইড ছিলেন প্রাণবন্ত তরুণ আনাস। আমাদের বলছিলেন, কোটি কোটি বছরের ইতিহাস লেখা আছে এখানকার কংক্রিটের কঠিন দেয়ালে। সত্যিই অপূর্ব সুন্দর এক পাতালপুরীর দেশ, অলৌকিক পরাবাস্তব জগৎ। রূপকথাতেও এমন জগতের বর্ণনা পাওয়া যাবে না। মোহাবিষ্ট হতেই হবে।
ভিয়েতনামসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রন্ধনবিষয়ক পর্যটন বা কালিনারি ট্যুরিজমের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ভিয়েতনাম ভ্রমণকারীরা এমন হোটেলগুলোকে বেছে নিচ্ছেন, যেখানে বিনা মূল্যে সকালের নাশতার ব্যবস্থা আছে। ভিয়েতনামের মানুষের কাছে সকালের নাশতা হলো দিনের গুরুত্বপূর্ণ খাবার।...
৭ ঘণ্টা আগেরান্নাঘরকে বলা হয় বাড়ির প্রাণকেন্দ্র। প্রতিদিন সকালে নাশতার তাড়াহুড়া থেকে শুরু করে রাতের খাবারের প্রস্তুতি আর পারিবারিক জমায়েত, সবকিছুর সাক্ষী এই রান্নাঘর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রান্নার কাজ হয়তো খুব বেশি পাল্টায়নি...
১৩ ঘণ্টা আগেআমরা যারা অফিস করি বা যাদের শারীরিক কর্মকাণ্ড বেশ কম, তাদের জিমে যাওয়া জরুরি। দীর্ঘ সময় বসে থাকা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যালরি খাওয়া, তা বার্ন করতে না পারা, কম হাঁটা—এসব কারণে শরীরে মেদ জমে যায়। এই বাড়তি ওজনের কারণে হাঁটু ও গোড়ালিতে পানি জমতে শুরু করা ও ব্যথা হওয়ার মতো বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে।
১৬ ঘণ্টা আগেএই মৌসুমে অনেকেরই জ্বর হচ্ছে। আর জ্বর হলে আনারস খেলে আরামবোধ হয়। শুধু কেটে খেতে ভালো না লাগলে আনারসের টক ঝাল মিষ্টি ভর্তা বানিয়েও খেতে পারেন। আপনাদের জন্য রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
১৯ ঘণ্টা আগে