Ajker Patrika

রান্নাঘরের যুগান্তকারী কিছু উদ্ভাবন

ফিচার ডেস্ক
১৯৬০-এর দিকে ছোট এবং সাশ্রয়ী ঘরোয়া মাইক্রোওয়েভ বাড়িতে পৌঁছে যায়। ছবি: পেক্সেলস
১৯৬০-এর দিকে ছোট এবং সাশ্রয়ী ঘরোয়া মাইক্রোওয়েভ বাড়িতে পৌঁছে যায়। ছবি: পেক্সেলস

রান্নাঘরকে বলা হয় বাড়ির প্রাণকেন্দ্র। প্রতিদিন সকালে নাশতার তাড়াহুড়া থেকে শুরু করে রাতের খাবারের প্রস্তুতি আর পারিবারিক জমায়েত, সবকিছুর সাক্ষী এই রান্নাঘর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রান্নার কাজ হয়তো খুব বেশি পাল্টায়নি, কিন্তু আমাদের খাবার তৈরি এবং খাওয়ার অভ্যাস পুরোপুরি বদলে দিয়েছে গত এক শতাব্দীর কিছু অসাধারণ উদ্ভাবন। ১৯০০ সাল থেকে রন্ধনশিল্পের কিছু উদ্ভাবন এখনো আমরা ব্যবহার করি, যা অবিস্মরণীয়। এই উদ্ভাবনগুলো আমাদের শুধু সময় বাঁচায়নি, বরং আমরা কী খাই, কীভাবে খাই এবং কীভাবে খাবার নিয়ে ভাবি সবকিছু বদলে দিয়েছে।

সংরক্ষণ ও বহনে যুগান্তকারী পরিবর্তন

রান্নাঘরের সবচেয়ে বড় বিপ্লবটি এসেছে খাবার তাজা রাখা এবং বহন করার ক্ষেত্রে। খাবার ঠান্ডা রাখার ধারণা অনেক পুরোনো হলেও ১৯১৩ সালে আমেরিকান আবিষ্কারক ফ্রেড ডব্লিউ উলফ প্রথম ঘরোয়া বৈদ্যুতিক রেফ্রিজারেটর নিয়ে আসেন। এটি খাবারকে দীর্ঘকাল তাজা রাখতে অত্যাবশ্যক ছিল। প্রথম দিকে এটি ধনীদের বিলাসিতা হলেও এখন প্রতিটি বাড়িতেই এটি একটি সাধারণ যন্ত্র। বর্তমানে অনেকে মটরদানা ফ্রোজেন করে রেখে সারা বছর খেয়ে থাকেন। কিন্তু এটা কোনো নতুন আবিষ্কার নয়, ১৯২০ সালের দিকে মিস্টার বার্ডসাই ব্লাঞ্চিং এবং দ্রুত হিমায়িত করার কৌশল ব্যবহার করে ফ্রোজেন মটর তৈরির প্রক্রিয়া তৈরি করেন। আর এটি আজকের ফ্রোজেন ফুডের ভিত্তি। তারও আগে ১৯০৩ সালে চলে আসে থার্মাস, যা মূলত বাইরে পিকনিক করতে যাওয়ার সময় পানীয়কে ঠান্ডা কিংবা গরম রাখার জন্য ব্যবহার করা হতো।

১৯০০ সাল থেকে ফ্রান্সে তৈরি টিন বা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল বেকিং প্যানে আস্তরণ দেওয়া, খাবার মুড়ে রাখা, বা সবজি ভাপ দেওয়ার মতো কাজে ব্যবহৃত হয়। ১৯৪৬ সালে আর্ল টাপার উদ্ভাবন করেন টাপারওয়্যার। পণ্যটি খাদ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে চমৎকার উদ্ভাবন। এর নকশা এতটা আধুনিক ছিল যে এটি ব্যবহারের জন্য ডেমোনেস্ট্রেশনের প্রয়োজন হতো। স্টিলের ক্যানের ধাতব স্বাদ এড়িয়ে পানীয়কে দীর্ঘক্ষণ ঠান্ডা রাখতে ১৯৫০-এর দিকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য ক্যান বাজারে আসে এবং দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

১৯০০ সাল থেকে রন্ধনশিল্পের কিছু উদ্ভাবন এখনো আমরা ব্যবহার করি, যা অবিস্মরণীয়। ছবি: পেক্সেলস
১৯০০ সাল থেকে রন্ধনশিল্পের কিছু উদ্ভাবন এখনো আমরা ব্যবহার করি, যা অবিস্মরণীয়। ছবি: পেক্সেলস

রান্নার কাজে সময় সাশ্রয়ের জাদু

সময় বাঁচানো এবং রান্নার প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য কিছু যন্ত্রপাতি রন্ধনশিল্পকে বদলে দিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আবিষ্কার হলেও ১৯৬০-এর দিকে ছোট এবং সাশ্রয়ী ঘরোয়া মাইক্রোওয়েভ বাড়িতে পৌঁছে যায়। এটি রান্নার সময়কে ঘণ্টা থেকে মিনিটে নামিয়ে এনে আমাদের খাবার তৈরি ও খাওয়ার পদ্ধতিকে আমূল পরিবর্তন করে। ১৯৭১ সালে পিয়েরে ভার্ডন আবিষ্কার করেন ফুড প্রসেসর। এ যন্ত্রটি কাটার, ডাইস করা বা স্লাইস করার কাজকে সহজ করে খাদ্য প্রস্তুতির সময়কে কমিয়ে দেয়। পাইরেক্স এমন এক বিশেষ কাচ, যা তাপমাত্রার চরম পরিবর্তন সহ্য করতে পারে। ১৯১০ সালের দিকে এই ডিশগুলো ওভেনে ব্যবহারের জন্য রান্নার জগতে হিট আইটেম হয়ে ওঠে। ১৯৭৪ সালে উদ্ভাবিত ব্রেভিল স্যান্ডউইচ টোস্টার সাধারণ স্যান্ডউইচকে ক্রিসপি পকেটে পরিণত করে, যা দ্রুত নাশতা বা জলখাবারের জন্য আজও জনপ্রিয়। প্রায় ১০০ বছর ধরে প্রচলিত জুসার ২০০০ সালের দিকে স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে ফিরে আসে। ফল এবং সবজি থেকে রস নিষ্কাশন করে সব পুষ্টিগুণ ধরে রাখার ক্ষমতা এর জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে তোলে।

১৯২৮ সালে অটো ফ্রেডেরিক রোহওয়েডার উদ্ভাবন করেন ব্রেড স্লাইসার। ছবি: পেক্সেলস
১৯২৮ সালে অটো ফ্রেডেরিক রোহওয়েডার উদ্ভাবন করেন ব্রেড স্লাইসার। ছবি: পেক্সেলস

তৈরি খাবার ও সহজলভ্যতা

১৯১৯ সালে হ্যান্ডলি পেজ বাইপ্লেন ফ্লাইটে পরিবেশিত প্রথম স্যান্ডউইচ। রান্নাঘরে প্রস্তুতির সময় কমিয়ে সরাসরি প্রস্তুত বা আধা প্রস্তুত খাবার গ্রহণের প্রবণতা বাড়ে। মানুষ হাজার বছর ধরে রুটি তৈরি করলেও ১৯২৮ সালে অটো ফ্রেডেরিক রোহওয়েডার উদ্ভাবন করেন ব্রেড স্লাইসার। যা দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করে তোলে। ১৯৮০ সালে মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সের প্রিপ্যাকেজড স্যান্ডউইচ চালু করে, যা বিশেষ করে কর্মজীবী মানুষের জন্য একটি দ্রুত এবং সহজ মধ্যাহ্নভোজের বিকল্প তৈরি করে। ১৯৯০-এর দশকের স্ন্যাকসগুলো মূলত পপ সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত। চটকদার রং এবং ফ্লেভারযুক্ত এই খাবারগুলো ছিল শিশুদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়।

প্রযুক্তি ও সাংস্কৃতিক প্রভাব

রান্নাঘরের এই বিপ্লবে ইন্টারনেট এবং টেলিভিশনও বড় ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৯০-এর দশকে ইন্টারনেটের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে রেসিপি খোঁজা সাধারণ হয়ে ওঠে। কুকিং ওয়েবসাইট এবং ব্লগগুলো বিশ্বজুড়ে মানুষকে খাদ্য, রেসিপি এবং রান্নার কৌশল নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ করে দেয়। মাস্টারশেফের মতো টিভি সিরিজগুলোর হাত ধরে জেমি অলিভার এবং গর্ডন রামসের মতো নতুন ধারার সেলিব্রিটি শেফরা জনপ্রিয় হন। তাঁরা রান্নাকে বিনোদন এবং শিল্প হিসেবে তুলে ধরেন।

সূত্র: লাভ ফুড

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব এহসানুল হক

লন্ডনে ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে দেখা করে চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছিলেন রোজিনা

তেল আবিবে মহাসমাবেশ: নেতানিয়াহুর নাম বলতেই মার্কিন দূতকে থামিয়ে দুয়োধ্বনি, ট্রাম্পের নামে স্লোগান

সায়েন্স ল্যাবে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, ভোগান্তি

গাজায় অবস্থান পুনরুদ্ধার করছে হামাস, ইসরায়েলপন্থীদের দিচ্ছে শাস্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত