Ajker Patrika

শিলিগুড়ির শেষ দিন: পর্ব-৭

আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩: ৩৬
শিলিগুড়ির শেষ দিন: পর্ব-৭

সকালের নাশতা খাওয়ার সময়ও মুখে রুচি ফিরল না। বরাবরের মতো আমি জোর করে খাওয়ার চেষ্টা করলাম আর ভুবন পারল না। সারা দিন ধরে ওঁকে বলতে লাগলাম পিয়ালকে ফোন দিতে। সমবয়সী কেউ এসে দেখা করলে অন্তত মনটা একটু ভালো হয়। পিয়াল সাহা আমাদের ব্যাচমেট। বারো-চৌদ্দ বছরে ওর চেহারাটা ভুলে গিয়েছিলাম। নামটা পর্যন্ত মনে ছিল না। কিন্তু যেদিন গ্যাংটক থেকে লাচুং যাব, সেদিন হঠাৎ করেই ফোন দিয়েছিল ভুবনকে। ফেসবুকে ভুবনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। ভুবন ফেসবুকে চেক-ইন দেওয়ায় পিয়াল নিজে থেকে ফোন করে জানিয়েছিল সে গ্যাংটকে আছে। পরে লাচুংয়ে রওনা দেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে এসে দেখা করে গিয়েছিল। আমাদের কিছু ডলার ভাঙানোর দরকার ছিল। ছেলেটা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রুপি দিয়ে ডলার নিয়ে চলে গেল। যাওয়ার আগে বলেছিল, ‘আরও টাকা লাগলে আমাকে বলিস। ছোটখাটো ব্যবসা আছে আমার শিলিগুড়িতে। মন্দ কামাই না।’ এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পরপরই নাকি শিলিগুড়িতে এসে বসবাস শুরু করেছে পিয়াল। সেখানে নিজের ভালোই পরিচিতি আছে তার। এক বন্ধুকে গ্যাংটক পর্যন্ত বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিল। ভুবনকে বলছিল, ‘আরে, তুই এখানে বেড়াবি, আমাকে আগে বলবি না? বন্ধু হয়ে এতটুকু উপকার কি করতে পারব না? তোদের সব ব্যবস্থা অল্প খরচে করে দিতাম।’ ভুবন লজ্জায় শুধু বলল, ‘সরি দোস্ত, একদম মাথায় ছিল না তুই যে এখানে।’ পিয়াল বারবার করে বলে দিয়েছিল যেকোনো সমস্যা হলে ওকে জানাতে। তাই ওকে ফোন দেওয়ার জন্য ভুবনকে খোঁচাচ্ছিলাম। অচেনা জায়গায় বড্ড অসহায় লাগছিল আমার। সেই সঙ্গে ভুবনের অবস্থার অবনতি আমাকে আরও বেশি কাবু করে দিচ্ছিল। আমি মনের জোরে সুস্থ থেকে ওর সেবা করার চেষ্টা করছিলাম। আমার জ্বর সেদিন চলে গিয়েছিল। ভুবনের অবস্থা খারাপ। শেষমেশ পিয়ালকে ফোন দিল ভুবন। পিয়াল জানাল কাজের অনেক চাপ, কিন্তু শেষ করে আসবে যত রাতই হোক। আমাকে আমার সহকর্মী দেবারতি দিদি ফোন দিলেন। ‘তোমরা এত অসুস্থ আগে জানাওনি কেন? আহারে, আমি মুম্বাই থেকে এত দূর আসতেও পারছি না।’ আফসোস করছিলেন তিনি। আমি তাঁকে অভয় দিয়ে বললাম প্রার্থনা করতে।

দুপুরে সৌরভ ভাইয়েরা চলে যাওয়ার আগে দেখা করতে এসেছিলেন। আমরা কিছুই খেতে পারছিলাম না বলে সৌরভ ভাই লেক্সাস বিস্কুটের বড় একটা প্যাকেট আর আলুর বিস্কুটের একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে গেলেন, রীতিমতো জোর করে। সঙ্গে সেই সুন্দর বোতলটায় পানি ভরে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে গেলেন। পানিটা দুজনে মিলেই খেয়েছিলাম। বোতলে অর্ধেক পানি রয়ে গিয়েছিল। সেটা আবার বাংলাদেশে বয়ে নিয়ে এসেছিলাম।

সকালের দিকে একবার মিলন ভাই দেখা করে খোঁজ নিয়ে গিয়েছিলেন। দুপুরের পর আবার এসেছিলেন অমরদাকে সঙ্গে নিয়ে। অমরদা খুব দুঃখ প্রকাশ করছিলেন সময়মতো খোঁজ নিতে পারছিলেন না বলে। আবার গেলে যেন তাঁকে ফোন করি, সে কথাও বললেন। কথায় কথায় জানালেন, তিনি আসলে আমাদের বাংলাদেশেরই নাগরিক। বিগত কয়েক বছর ধরে ভারতের বাসিন্দা। এখন নাকি ভারতেরও নাগরিকত্ব আছে। বাংলাদেশের প্রতি তাঁর যেমন মায়া আছে, আছে অভিমানও কিছুটা। কেন এই অভিমান? অমরদা বলছিলেন, ‘আমার স্ত্রী তখন অন্তঃসত্ত্বা। আমি চাকরি করতাম গ্রামীণ ফোনে। বেশ ভালোই সংসার চলছিল আমাদের। একদিন আমার স্ত্রীর পানি ভেঙে গেল। সঙ্গে প্রচুর রক্ত যাচ্ছিল। বিশ্বাস করেন, আমি এত রক্ত আগে দেখি নাই। দুই হাতে স্ত্রীকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে ছুটলাম হাসপাতাল যাব বলে। সিঁড়ির গায়ে রক্ত গড়াচ্ছিল। আমি অসহায়ের মতো নামছিলাম। দেরি হয়ে যাচ্ছিল, কারণ তখন আমার স্ত্রীর শরীর অনেক ভারী হয়ে গিয়েছিল। ওঁকে নিয়ে ঠিকমতো চলতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল পৌঁছালে চিকিৎসকেরা জানালেন মা অথবা বাচ্চা যেকোনো একজনকে বাঁচাতে হবে। এসব তো সিনেমায় দেখতাম রে ভাই। আমি বললাম, আমার বাচ্চার দরকার নাই। আমার স্ত্রীকে বাঁচান। আমার স্ত্রী বেঁচে যায়। কিন্তু তাঁদের কিছু ভুল চিকিৎসার কারণে পরে আবারও আমার স্ত্রীকে অনেক অসুস্থ হয়ে যেতে হয়। তাই অভিমান করে দেশ, চাকরি ছেড়ে চলে আসি ভারতে। এখানে এসে স্ত্রীর চিকিৎসা করালাম। এবার সেটা সঠিক হলো। ডাক্তাররাও ভালো। আমি এদিকে এসে শুরু করলাম ট্যুরিস্ট গাইডের কাজ। কাজটা আমি আনন্দ নিয়ে করি। খারাপ লাগে না। প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়। একেক জন একেক রকম। কিন্তু কেউ খুব অপমান করলেও সহ্য করে থাকি। আমাদের সহ্য করে থাকতে হয়। এ কাজে রেগে গেলে হেরে যেতে হবে। বিনয়ী হতে হয়। এখন আমার একটা মেয়ে আছে। সুখেই আছি। জীবন মন্দ না।’ বলতে বলতে অমরদার চোখ ভিজে আসছিল। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, তিনি বাংলাদেশকে খুব মনে করেন, ভালোবাসেন। কিন্তু ওই যে অভিমান। দেশে তাঁর আত্মীয়স্বজন আছে। সময় পেলে বেড়াতে যান।

অমরদার যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিল। ভুবন অনুরোধ করল, ‘দাদা আমাকে একটু আনারসের জুস এনে দেবেন, যদি কিছু মনে না করেন! আমরা তো বাইরে যেতে পারছি না।’ অমরদা খুশি হয়ে বললেন, ‘কেন দেব না? জ্বরের মুখে আনারস তো খুব ভালো। আমি এক্ষুনি এনে দিচ্ছি।’ বলে তিনি বের হয়ে গেলেন। দুই লিটারের পানির বোতলে আনারসের জুস নিয়ে দুলতে দুলতে ফিরে এলেন কিছুক্ষণ পর। এতগুলো! কে খেয়ে শেষ করবে? আর এই রাতটাই তো হাতে আছে আমাদের। পরদিন দেশে ফিরে যাব। কিন্তু অমরদা বারবার বলছিলেন, ‘ভাই, আপনারা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত দয়া করে যাবেন না। আপনার শরীর তো বেশি খারাপ।’ কিন্তু ভুবন নাছোড়বান্দা। পারলে সেদিনই ফিরে আসে। ওর এক কথা, ‘দেশে গেলেই সুস্থ হয়ে যাব।’ সময় আর শরীরের চিন্তা করে আমরা বিমানযাত্রার খোঁজ খবর নিলাম। কিন্তু নাহ, বিমানে ভ্রমণের মতো বাজেট আমাদের ছিল না। কারণ আমাদের প্রস্তুতি ছিল বাসে ভ্রমণ করার। সেদিন ফিরে আসার মতো কোনো সুযোগ ছিল না। অমরদা খোঁজ করে দিয়েছিলেন।

অমরদা চলে যাওয়ার কিছু সময় পর দেবারতি দিদির বড় ভাই ফোন দিলেন। জানতে চাইলেন আমরা কোন হোটেলের কত নম্বর কক্ষে আছি। কিছুক্ষণের মধ্যে কিংশুকদা চলেও এলেন। তিনি অজানা দেশের অচেনা মানুষ হয়েও খুব বিনয়ের সঙ্গে আমাদের খোঁজ নিয়েছেন। দেখা করতে গিয়েছেন। এমনকি পরদিন বাসে তুলে বিদায়ও জানিয়েছেন। সবচেয়ে বড় উপকার করেছেন সেদিন ভুবনকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে। দাদা ওকে দেখেই বলছিলেন, ‘আপনার তো খুব বেশি খারাপ অবস্থা। ডাক্তার না দেখালেই নয়। এখানে নিচেই একটা ওষুধের দোকানে ডাক্তার বসেন। জরুরি অবস্থায় তাঁকে আগে দেখিয়ে নিন।’ ডাক্তার আসবেন সন্ধ্যার পর। ৭টার দিকে। ততক্ষণে কিংশুকদাকে চা খাওয়ালাম। বিস্কুট খেতে চাইলেন না। তবে সৌরভ ভাইয়ের দেওয়া লেক্সাস বিস্কুটের পুরো প্যাকেটটাই দাদাকে যাওয়ার সময় উপহার হিসেবে দিয়ে দিলাম। আসলে মাথায় ছিল না। উচিত ছিল তাঁর জন্য বাংলাদেশ থেকে কিছু উপহার কিনে নিয়ে যাওয়া। কিংশুকদা কথায় কথায় বলছিলেন, ‘আপনাদের দেশের বিস্কুট তো খুব ভালো।’ তাই বিস্কুটের প্যাকেটটা দাদাকে দিয়ে দিলাম। দাদা গল্প করলেন তাঁর স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে, স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে আর বোনকে নিয়ে। একদম যেন আমার ভাইয়ের মতো। খুব শ্রদ্ধা হলো। দেবারতি দিদিও আগে বলেছিলেন তাঁর দাদা তাঁকে কতটা ভালোবাসেন। পরিবারের সবাই যখন দিদির সাংবাদিকতায় লেখাপড়ার ইচ্ছার বিরুদ্ধে, তখন এই বড় ভাই তাঁর পাশে ছিলেন। সবাইকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়ে বোনকে ভর্তি করিয়েছিলেন সাংবাদিকতা বিষয়ে। বোন এখন অন্য দেশের স্বনামধন্য পত্রিকার সাংবাদিক। নিজ দেশের প্রতিনিধি। এই অর্জনে বড় ভাই যারপরনাই খুশি। কিংশুকদার কথা শুনতে শুনতে আমার নিজের বড় ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল। ভাইয়াও তো সবাইকে রাজি করিয়ে আমার ইচ্ছামতো পড়াশোনা করিয়েছেন। নিজ সন্তানের মতো লালনপালন করেছেন। আমার চোখ ধরে আসছিল এসব কথা ভেবে।

৭টা বাজার আগেই কিংশুকদা নিচে নেমে গেলেন। বলে গেলেন, ‘ডাক্তার এলে আমি ফোন দিচ্ছি। আপনারা নিচে নেমে আসবেন তখন।’ কয়েক মিনিট পর দাদা ফোন দিয়ে জানালেন ডাক্তার চলে এসেছেন। ভুবন ঠিকমতো উঠে দাঁড়াতে পারছিল না। হাঁটবে কী করে? আমি সেদিন ওর চেয়ে সুস্থ ছিলাম। ও আমার কাঁধে ভর দিয়ে হেঁটেছিল। হোটেল থেকে বের হয়ে হাতের বাঁ দিকে কয়েক কদম হাঁটলেই ওই ওষুধের দোকান। কিংশুকদা পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন। দোকানের ভেতরের দিকে ছোট্ট একটা খুপরি। সেখানে ছোট একটা টেবিল বিছিয়ে বসেছেন ডাক্তার। তাঁর উল্টো পাশে দুটো চেয়ার। কিংশুকদা বসতে চাইলেন না। দরজার দিকে আমাদের পেছনে দাঁড়িয়ে রইলেন। দুটো চেয়ারে আমরা দুজনে বসলাম। ডাক্তার মশাইকে ভুবনের রোগের ইতিহাস বললাম। কী কী ওষুধ খাওয়া হয়েছে সেটাও জিজ্ঞেস করলেন। জানার পর ভ্রু কুচকে বললেন, ‘ডায়াবেটিসের রোগীর এসব ওষুধে তো কাজ হবে না। আমি ওষুধ লিখে দিচ্ছি, সেটা আশা করি দ্রুত কাজ করবে।’ সত্যিই কাজ হয়েছিল। সেদিন রাতে আর পরদিন সকালে খাওয়ার পর ভুবন প্রায় সুস্থ হয়ে উঠছিল।

ওষুধ কেনা হয়ে গেলে কিংশুকদা সেখান থেকেই বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। আমরা হোটেলে চলে গেলাম। আমি আমার দুর্বল দেহ আর শক্ত মন নিয়ে আমাদের ব্যাগ গুছিয়ে ফেললাম ওই রাতে। খুব খুশি লাগছিল পরদিন বাড়ি ফিরব বলে। ভুবনের মতো আমারও মনে হচ্ছিল বাড়ি ফিরে গেলেই আমরা সুস্থ হয়ে যাব। এদিকে দেশে কাউকে জানাইনি আমাদের দুরবস্থার কথা। নইলে দুশ্চিন্তায় আধমরা হয়ে থাকবে সবাই!

বাড়ি যাওয়ার উত্তেজনায় রাতের বেশ খানিকটা সময় বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করছিলাম। পরিকল্পনার অনেক কিছু বাকি ছিল। জুতা কেনা হলো না, গ্যাংটক ঘোরা হলো না, শিলিগুড়ি ঘোরা হলো না, বাবার জন্য দার্জিলিংয়ের গ্রিন টি কেনা হলো না। এসব আফসোস নিয়ে ফিরতে হবে ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়লাম।

চলবে...

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চালের কেজি ১৩ হাজার টাকা, পেছনের কারিগর কে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ২২
বিশ্বের সবচেয়ে দামি চাল জাপানের কিনমেমাই প্রিমিয়াম। ছবি: উবাই ডট কম
বিশ্বের সবচেয়ে দামি চাল জাপানের কিনমেমাই প্রিমিয়াম। ছবি: উবাই ডট কম

হংকং শহরের ব্যস্ত বিকেলে ছোট্ট এক সুশি রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে জাপানি শেফ কেনইচি ফুজিমোতো হাতে নিলেন একটি কালো বাক্স। তার ওপর সোনালি অক্ষরে লেখা ‘ওয়ার্ল্ডস বেস্ট রাইস’, কেজি ১০৯ ডলার!

ফুজিমোতো ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ‘মিশেলিন তারকা’ পাওয়া সুশি মাস্টারদের অধীনে কাজ করেছেন। অসংখ্য জাতের জাপানি চাল তাঁর হাতে রান্না হয়েছে। তবু আজকের বাক্সটি তাঁর কাছে নতুন। বাক্সের ভেতর রয়েছে ২০১৬ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস স্বীকৃত বিশ্বের সবচেয়ে দামি চাল—কিনমেমাই প্রিমিয়াম।

কিন্তু দাম বেশি হলেই কি স্বাদে শ্রেষ্ঠ হওয়া যায়? ফুজিমোতো সেই উত্তর খুঁজতে হাঁড়িতে চাল চড়ালেন। তিনি হাতে পেয়েছিলেন মাত্র ৪২০ গ্রাম চাল। পরীক্ষা করার সুযোগ কম। তিনি দ্রুত চাল ধুয়ে, অল্প সময় ভিজিয়ে রেখে হাঁড়িতে চাপালেন। ঢাকনা খোলার পর রান্না করা দানাগুলো ঝিনুকের মুক্তার মতো চকচক করছিল। আকার নিখুঁত, হালকা ঘ্রাণ, পরিষ্কার ঝিলিক! তবে রেস্তোরাঁয় এই চাল যে চলবে না, সেটি বুঝতে পারলেন। দাম এত বেশি যে অতিথিদের বাজেট তিন গুণ হয়ে যাবে। এত দামে কে খাবে!

জাপানের চাল

জাপানে চাল দিয়ে তৈরি খাবারের ইতিহাস অনেক পুরোনো। সুশির স্বাদের ৮০ শতাংশ নির্ভর করে চালের ওপর। এমনটাই বলেন জাপানের শীর্ষস্থানীয় শেফরা। তিন হাজার বছর ধরে জাপানে চালকে পবিত্র খাবার হিসেবে মনে করা হয়। আজ দেশটিতে তিন শর বেশি জাতের ধান উৎপন্ন হয়। বৈচিত্র্য, স্বাদ, ঘ্রাণ—সব মিলিয়েই জাপানি চালের নিজস্বতা তৈরি হয়েছে। সুশি, সাকে, মোচি ইত্যাদি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়লেও জাপানি চালের রপ্তানি তেমন সফলতা পায়নি। এই হতাশাই একজন মানুষকে নতুন পথে চিন্তা করতে বাধ্য করে।

কেইজি সাইকা, চেয়ারম্যান, টয়ো রাইস করপোরেশন। ছবি: সিএনএন
কেইজি সাইকা, চেয়ারম্যান, টয়ো রাইস করপোরেশন। ছবি: সিএনএন

এক স্বপ্নবাজ বৃদ্ধের উদ্যোগ

ওয়াকায়ামা প্রিফেকচারের টয়ো রাইস করপোরেশনের চেয়ারম্যান কেইজি সাইকা। এখন তাঁর বয়স ৯১ বছর। তাঁর এই অভিনব উদ্যোগের গল্পটা শুরু হয় ২০১৬ সালে। সাইকার স্বপ্ন ছিল, বিজ্ঞাপনে টাকা খরচ না করে জাপানি চালকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরা। তখনই তাঁর মনে হলো গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের কথা। তিনি ভাবলেন, এমন কিছু তৈরি করতে হবে, যা আগে কেউ করেনি। এটি বেশ সাহসী উদ্যোগ ছিল। তিনি তৈরি করলেন কিনমেমাই প্রিমিয়াম, যার দাম রাখা হলো প্রকৃত মূল্যের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি, প্রতি কেজি ১০৯ ডলার। বিক্রি হবে কি? এ নিয়ে সন্দেহ ছিল।

শুধু দাম বাড়িয়ে নয়, গুণেও বিশ্বের সেরা

কিনমেমাই প্রিমিয়াম আসলে শুধু দামি চাল নয়; এটি তৈরির প্রতিটি ধাপে রয়েছে ভীষণ যত্ন ও বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া।

কিনমেমাই প্রিমিয়াম চালের প্যাকেট। এ চালের প্রতি কেজির দাম ১০৯ মার্কিন ডলার। ছবি: সংগৃহীত
কিনমেমাই প্রিমিয়াম চালের প্যাকেট। এ চালের প্রতি কেজির দাম ১০৯ মার্কিন ডলার। ছবি: সংগৃহীত

বাছাই: প্রতিবছর প্রায় ৫ হাজার জাতের চাল থেকে ৪ থেকে ৬টি সেরা জাত বেছে নেওয়া হয়। স্বাদের পাশাপাশি দানার এনজাইম কার্যকারিতা পর্যন্ত পরীক্ষা করেন সাইকা।

মজুত করা: চালের দানা কয়েক মাস রেখে দেওয়া হয়। এতে চালের মধ্যে মিষ্টতা, ঘ্রাণ ও পুষ্টিগুণ বাড়ে।

সীমিত উৎপাদন: কিনমেমাই প্রিমিয়াম খুব সীমিত পরিমাণে উৎপন্ন হয়। প্রতিবছর মাত্র কয়েক শ বাক্স। এর বিশেষত্ব হলো, প্রতিবছর এই চালের মিশ্রণ বদলে যায়। যে বছর যেসব জাতের চাল সবচেয়ে মানসম্পন্ন হয়, সেগুলো বেছে নতুন বার্ষিক ব্লেন্ড তৈরি করা হয়। এই চাল সাধারণত দামি উপহার বা বিশেষ উৎসবে দেওয়া হয়। নির্বাচিত কৃষকদের টোকিওতে ডেকে সম্মান জানানো হয়।

যুদ্ধোত্তর দুর্ভিক্ষ থেকে চালের প্রতি প্রেম

সাইকাকে চালের প্রতি গভীর আগ্রহী করে তুলেছিল শৈশবের এক ঘটনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সেই সময় ঘূর্ণিঝড় টাইফুন মাকুরাজাকির কারণে চারদিকের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বীজ, মাছ, পাখি ইত্যাদি যে যা সংগ্রহ করতে পারতেন, সেগুলো দিয়ে কোনোভাবে দিন পার করতেন। সেই দুর্ভিক্ষের অভিজ্ঞতা চালের প্রতি তাঁর আবেগ তৈরি করে দেয়। খাবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং বাঁচার তাগিদ থেকে জন্ম নেয় তাঁর আজীবনের লক্ষ্য—জাপানি চালকে আরও উন্নত করা।

৯১ বছর বয়সেও প্রতিদিন কারখানায়

৯১ বছর বয়সেও সাইকা আজও প্রতিদিন কাজ করেন। বয়স বাড়লেও তাঁর গতি কমেনি। জীবনের অভিজ্ঞতা তাঁকে আরও দৃঢ় করেছে। তাই এখনো একই উদ্যমে তিনি কর্মক্ষেত্রে হাজির হন, নিজের কাজ শেষ করেন এবং আশপাশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে যান।

কিনমেমাই প্রিমিয়াম শুধু দামি চাল নয়, এটি একজন মানুষের জীবনের গল্প, বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন, কৃষকের পরিশ্রম এবং জাপানের চাল-সংস্কৃতির ঐতিহ্যের প্রতীক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসন মাজার স্পঞ্জ কখন পাল্টাবেন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
অপরিষ্কার স্পঞ্জগুলো জীবাণু ছড়ায়। সে জীবাণুতে আক্রান্ত হতে পারেন আপনি। ছবি: পেক্সেলস
অপরিষ্কার স্পঞ্জগুলো জীবাণু ছড়ায়। সে জীবাণুতে আক্রান্ত হতে পারেন আপনি। ছবি: পেক্সেলস

রান্নাঘরে থালাবাটি পরিষ্কার করার জন্য এখন স্পঞ্জের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়; বিশেষ করে শহরের বেশির ভাগ বাসাবাড়িতে খাবারের নোংরা এই স্পঞ্জের মাধ্যমে পরিষ্কার করা হয়। এগুলোতে আপনার ধারণার চেয়ে বেশি ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া লুকিয়ে থাকে। শক্তপোক্ত স্পঞ্জও একসময় পরিষ্কার করার ক্ষমতা হারায়। এর চেয়ে খারাপ বিষয়টি হলো, অপরিষ্কার স্পঞ্জগুলো জীবাণু ছড়াতে শুরু করে। বাসনপত্র ধোয়ার জন্য যদি আপনি স্পঞ্জের ওপরই ভরসা রাখেন, তবে জেনে রাখুন, কখন এটি পাল্টানো জরুরি। কারণ, বদলানোর এই কাজ সঠিক সময়ে না করলে আপনি এবং আপনার পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হতে পারেন।

যেসব লক্ষণ দেখলে স্পঞ্জ বদলাতে হবে—

দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে কি না

যদি আপনার রান্নাঘরে স্পঞ্জটির কারণে বাজে গন্ধ হয়, তবে বুঝবেন একে বদলানোর সময় এসেছে। এটিই সম্ভবত স্পঞ্জ বদলানোর প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। জার্মস্মার্ট কমার্শিয়াল ক্লিনিংয়ের বিশেষজ্ঞ টেইলর রাইলি বলেন, ‘যদি আপনি ঘন ঘন স্পঞ্জ না পাল্টান, তবে এটি ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক (মোল্ড) এবং ইস্টের আঁতুড়ঘর হয়ে ওঠে। সেগুলো আপনার বাসন, কাউন্টার টপ, এমনকি হাতেও ছড়িয়ে যেতে পারে।’

কাজ শেষে পানি জমে থাকে এমন জায়গায় বা পাত্রে স্পঞ্জ রাখবেন না। ছবি: পেক্সেলস
কাজ শেষে পানি জমে থাকে এমন জায়গায় বা পাত্রে স্পঞ্জ রাখবেন না। ছবি: পেক্সেলস

স্পঞ্জ দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. শানিনা সি. নাইটন কিছু পরামর্শ দেন। সেগুলো হলো—

  • ভিজে স্পঞ্জ এক থেকে দুই মিনিটের জন্য মাইক্রোওয়েভে গরম করে জীবাণুমুক্ত করুন। এতে উচ্চ তাপে সব ব্যাকটেরিয়া মরে যায়।
  • স্পঞ্জ ব্যবহারের পরে সম্পূর্ণ শুকিয়ে নিন।
  • পানি জমে থাকে এমন জায়গায় বা পাত্রে এটি রাখবেন না।

স্পঞ্জটি দৃশ্যমান দাগযুক্ত হলে

বাসন ধোয়ার পরেও যদি স্পঞ্জে দাগ থেকে যায়, তবে একে বাদ দেওয়াই ভালো। এলপিন মেইডসের প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস উইলাট বলেছেন, ‘যে বস্তু পরিষ্কার করছেন, তার ময়লা যদি স্পঞ্জে আটকে যায়, তবে সেই ময়লা পরেরবার পরিষ্কার করা পৃষ্ঠেও আটকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’ এই সমস্যা সমাধানের জন্য স্পঞ্জ ব্যবহার করার আগে একটি ডিশ স্ক্রাবিং ব্রাশ ব্যবহার করে প্লেট ও প্যান থেকে বেশির ভাগ খাদ্যকণা সরিয়ে নিলে স্পঞ্জে দাগ লাগা এবং ময়লা জমে থাকা কিছুটা কমানো যেতে পারে।

স্পঞ্জটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বা ছিঁড়ছে কি না

স্পঞ্জের বড় অসুবিধা হলো, এটি একসময় ভেঙে যেতে শুরু করে, ছিঁড়ে যায় বা আকার হারায়। ফ্রেশ স্পেস ক্লিনিংয়ের কোয়ালিটি লিড ক্লিনার রুন্ডা উইলসন বলেন, ‘যদি এটি ভেঙে যেতে শুরু করে, রং বদলায় বা তার আকৃতি হারায়, তবে বুঝতে হবে, এর আয়ু শেষ।’ একটি জীর্ণ স্পঞ্জ ঠিকমতো পরিষ্কার করতে পারে না।

স্পঞ্জটি পিচ্ছিল বা চটচটে অনুভূত হলে

স্পঞ্জ যদি শামুকের মতো চটচটে বা পিচ্ছিল লাগে, তবে তা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। ফ্যান্টাস্টিক সার্ভিসেসের পেটিয়া হোলেভিচ সতর্ক করেন, যদি এটি পিচ্ছিল বা চটচটে মনে হয়, তবে সম্ভবত এর ভেতরে এক স্তরের ময়লা জমে আছে, যা পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। আপনি যদি এটি খুব বেশি দিন ব্যবহার করেন, তবে দাগযুক্ত কাউন্টার টপের চেয়ে বেশি ঝুঁকি নিচ্ছেন। পুরোনো স্পঞ্জ ই. কোলাই ও সালমোনেলার মতো ব্যাকটেরিয়া বহন করতে পারে।

ভালো হয় প্রতি সপ্তাহে বাসন পরিষ্কারের স্পঞ্জ বদলে ফেলা। তাতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমে। ছবি: পেক্সেলস
ভালো হয় প্রতি সপ্তাহে বাসন পরিষ্কারের স্পঞ্জ বদলে ফেলা। তাতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমে। ছবি: পেক্সেলস

কাঁচা মাংস বা ছত্রাকের সংস্পর্শে এসেছে কি না

জীবাণুমুক্ত করার গুরুত্বপূর্ণ নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হলে, কাঁচা মাংস বা ছত্রাকের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো কিছু পরিষ্কার করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার স্পঞ্জ বদলে ফেলা উচিত। ক্রিস উইলাট সতর্ক করে বলেন, ‘কাঁচা মাংস বা ছত্রাকযুক্ত জিনিসপত্র থেকে ব্যাকটেরিয়া সহজে আপনার স্পঞ্জে স্থানান্তরিত হয়। সেই ব্যাকটেরিয়া নিশ্চয় আপনি আপনার অন্য প্লেট বা পাত্রে পেতে চান না!’ এই ধরনের নোংরা পরিষ্কার করার সময় একাধিক জিনিসপত্রের দূষণ রোধ করতে স্পঞ্জের পরিবর্তে একবার পেপার টাওয়েল ব্যবহার করুন।

ঘষে পরিষ্কার করার ক্ষমতা নেই

স্পঞ্জ যদি ঘষে পরিষ্কার করতে না পারে, তবে তার কার্যকারিতা কী? ড. শানিনা নাইটন পরামর্শ দেন, এর টেক্সচার নরম হয়ে গেলে সেটি বাসনপত্র ঘষে পরিষ্কার করার অবস্থায় থাকে না। এর রুক্ষ দিকটি মসৃণ হয়ে গেলে বা স্পঞ্জটি আঁশ, গুঁড়া বা ময়লা দিয়ে ভরে গেলে আপনার রান্নাঘরের স্পঞ্জটি বদলে ফেলার সময় এসেছে।

চেষ্টা করুন সপ্তাহে পাল্টানোর

আপনার স্পঞ্জ এক সপ্তাহ ব্যবহারের পর দেখতে যেমনই লাগুক, এটিকে বদলানো জরুরি। ক্রিস উইলাট বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমি প্রতি সপ্তাহের শেষে একটি স্পঞ্জ ফেলে দিয়ে নতুন স্পঞ্জ নিতে পরামর্শ দিই। এক সপ্তাহের ময়লা, ব্যাকটেরিয়া এবং নোংরা পরিষ্কার করার পরে একটি নতুন স্পঞ্জ ব্যবহার করা দরকার। এমনকি যদি এটি পরিষ্কারও দেখায়, তবু এক সপ্তাহ পরে এটি ফেলে দেওয়া উচিত।’

সূত্র: হোমস অ্যান্ড গার্ডেনস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে প্রচুর লাইক পাবেন, সেন্স অব হিউমার না থাকলে বিয়ের সম্বন্ধ নাকচ করুন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ০৫
আজকের রাশিফল: ফেসবুকে প্রচুর লাইক পাবেন, সেন্স অব হিউমার না থাকলে বিয়ের সম্বন্ধ নাকচ করুন

মেষ

আজকের দিনটি আপনার জন্য পুরোপুরি অ্যাকশন-প্যাকড, তবে অ্যাকশন মানে মারপিট নয়, স্রেফ জটিলতা! কর্মক্ষেত্রে পরিস্থিতি একটু ‘জট পাকানো সুতার মতো’, মানে আপনি যা করতে যাবেন, সেটাই ডবল কাজ হয়ে যাবে। ‘শত্রুরা’ আজ ক্ষতি করার চেষ্টা করবে, তবে সম্ভবত তারা আপনার অফিসের প্রিন্টার। মানসিক উদ্বেগ বাড়বে, কিন্তু টেনশন নেবেন না—এত টেনশন নিলে ওজন বাড়ে না, এটা অন্তত ভালো খবর। পুরোনো কোনো অসুখের প্রকোপ বাড়তে পারে, তাই আজ রাতে তেল-মসলাদার খাবার থেকে দূরে থাকুন। ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত আজ নয়, কালকের জন্য ফেলে রাখুন। কারণ, আজকের প্ল্যানিংয়ে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আপনি স্বভাবগতভাবেই নেতা, কিন্তু আজ বসের সামনে মাথা গরম না করে একটা ‘কুল’ ভাব ধরে থাকুন।

বৃষ

বৃষ রাশির জাতকদের জন্য সুখবর! পৈতৃক ব্যবসায় উন্নতি হবে, আর পারিবারিক যে দ্বন্দ্ব চলছিল, তা মিটে যাওয়ার একটা দারুণ সুযোগ আসছে। তার মানে হয়তো খালা-ফুফুদের ঝগড়া বন্ধ হবে, যা সত্যিই একটা অলৌকিক ঘটনা! সামাজিক প্রতিপত্তি বাড়বে, তাই আজ ফেসবুকে আপনার স্ট্যাটাসগুলো বেশি লাইক পেতে পারে। তবে সাবধান, অতিরিক্ত ব্যয় সঞ্চয়ে বাধা! মানিব্যাগ আজ চিৎকার করে কাঁদবে। কারণ, সম্ভবত একটা অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে ফেলবেন। চাকরির খোঁজ যাঁরা করছেন, তাঁদের কপালে নতুন চাকরির যোগ আছে, তবে বেতন কত, সেটা আগে ভালো করে বুঝে নেবেন। আজ ধার দেওয়া টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেই টাকাটা হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লুকিয়ে ফেলুন, নয়তো খরচ হয়ে যাবে!

মিথুন

আজ মনটা বেশ হালকা থাকবে এবং উপভোগ করার সঠিক মেজাজে থাকবেন। হয়তো বহুদিন পর আবিষ্কার করবেন যে মাথায় চুল এখনো আছে! সাংসারিক সমস্যাগুলো আজ মিটে যাবে। অবিবাহিতদের জন্য বিয়ের সম্বন্ধ আসতে পারে, কিন্তু সম্বন্ধ ঠিক করার আগে পাত্র/পাত্রীর সেন্স অব হিউমার আছে কি না, সেটা যাচাই করে নিন। পাওনা টাকা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, অর্থাৎ বহু বছর আগে যে বন্ধুকে ১০০ টাকা ধার দিয়েছিলেন, সে অবশেষে মনে করতে পারে! নিজের কাজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আপনার চঞ্চলতা আজ একটু কমবে। পুরোনো কোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে নিজেদের পুরোনো কৌতুকগুলো আওড়াতে ভুলবেন না।

কর্কট

কর্কট রাশির সংবেদনশীল মানুষেরা, আজ একটু সতর্ক থাকুন। সরলতার সুযোগ নিয়ে কেউ আপনাকে ঠকাতে পারে। সম্ভবত কেউ আপনাকে দিয়ে তার সব কাজ করিয়ে নেবে, আর আপনি ‘না’ বলতে না পেরে অসহায়ের মতো হাসবেন। উচ্চশিক্ষায় সাফল্য পাওয়ার সুযোগ থাকলেও তার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। গুরুজনদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন—তাঁরা হয়তো শুধু আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাচ্ছেন। গলা বা মুখ-সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগতে পারেন, তাই আজ একটু কম কথা বলুন। কারও কাছে ‘না’ বলতে শেখাটা আজ আপনার সবচেয়ে বড় অর্জন হতে পারে। রাতে ঘুমের আগে মেডিটেশন করুন, টেনশন কমে যাবে।

সিংহ

সিংহ রাশির জাতক, আপনার রাশির নাম ‘সিংহ’, তাই গর্জন করাটা আপনার স্বভাব। কিন্তু আজ গ্রহরা বলছে, ‘থামো!’ কথাবার্তায় অসংযমের কারণে শত্রু বাড়তে পারে। তাই বসের সামনে নিজের মতামতটি আজ একটু নরম সুরে প্রকাশ করুন। হঠকারিতায় বিয়ের সম্বন্ধ পাকা করলে তা ভুল সিদ্ধান্ত হতে পারে—প্রথমে ভালো করে জেরা করুন। ক্রনিক রোগের সমস্যা বাড়তে পারে, বিশেষত অহংজনিত সমস্যা। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতভেদ বাড়তে পারে। সবকিছুতে ‘প্রাইড’ বা অহংকার দেখানোর প্রয়োজন নেই। একটু নম্র হন, দেখবেন পরিস্থিতি আপনা-আপনি নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে।

কন্যা

পরিবারে আজ সুখবর আসতে পারে। হয়তো পুরোনো জামাকাপড়ের মধ্যে থেকে একটা নতুন ৫০০ টাকার নোট খুঁজে পাবেন। লটারি থেকে অর্থ প্রাপ্তির সম্ভাবনা আছে, তবে তার মানে এই নয় যে আজই কোটিপতি হচ্ছেন—একটা ১০ টাকার লটারি হলেও তো প্রাপ্তি! নতুন চাকরি পেতে পারেন বা কর্মস্থল পরিবর্তন হতে পারে। আজ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের (বা আপনার ফেসবুকের বন্ধুদের) অহেতুক মন্তব্য এড়িয়ে চলুন। দূরদেশে ভ্রমণের যোগ আছে, মানে হয়তো কাজের চাপে আপনাকে অন্য জেলায় যেতে হতে পারে! অতিরিক্ত বিশ্লেষণ করার স্বভাব আজ একটু কমাতে হবে। কম ভাবুন, বেশি হাসুন।

তুলা

স্বাস্থ্য আজ সুন্দর থাকবে, কিন্তু কিছু মানসিক চাপ থাকবেই। আপনি তো চিরকালই সবকিছুতে ভারসাম্য খুঁজছেন, তাই মন ও শরীরকে ব্যালেন্স করতে গিয়েই এই চাপ। বিদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো কাজে সুবিধা পেতে পারেন। প্রেমের সম্পর্কে নম্রতা বজায় রাখুন। আজ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারেন, যেমন ফ্রিজ থেকে কী বের করে খাবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারাই আজকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ধৈর্য ও বোঝাপড়া দিয়ে সব সামলে নিতে পারবেন। আপনি খুব ভালোভাবে বিতর্ক করতে পারেন, কিন্তু আজ প্রিয়জনের সঙ্গে তর্কে না গিয়ে বরং তাকে একটা কোল্ড ড্রিংকস কিনে দিন।

বৃশ্চিক

আজ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয়ে খুবই আগ্রহী হবেন। আজ আপনার রহস্যময় স্বভাব একটু কম কাজ করবে। কারণ, মন কেবল টাকা গুনতে ব্যস্ত। প্রিয়জনের সঙ্গে খুব ভালো সময় কাটাবেন এবং আন্তরিক চিন্তাগুলো তাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইবেন। বৃশ্চিকদের আবার আন্তরিক চিন্তা? সেটা নিশ্চয়ই পরের মাসে কত টাকা জমাবেন সেই প্ল্যান! কাছের মানুষের প্রতি আস্থা বজায় থাকবে এবং বন্ধুদের থেকে উপকার পাবেন। ব্যক্তিগত বিষয়ে ফোকাস রাখুন। আপনি খুব সাহসী এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আজ সেই শক্তি কাজে লাগান; কিন্তু কোনো বন্ধুর গোপন কথা ফাঁস করে দেবেন না!

ধনু

আজ আরাম করার দিন। পেশিগুলোকে আরাম দিতে তেল ম্যাসাজ করতে পারেন। দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত কাজগুলো আজ সময়মতো শেষ করার চেষ্টা করুন; যেমন ফ্রিজের ময়লা পরিষ্কার করা। অবিবাহিতরা সঙ্গীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তবে ভ্রমণের গল্প দিয়ে তাদের বিরক্ত করবেন না। বসের পরামর্শ উপেক্ষা করা এড়িয়ে চলুন, নয়তো বস আপনাকে দিয়ে আবার সব কাজ করিয়ে নিতে পারে। সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানো মানসিক শান্তি বজায় রাখবে। আপনার অ্যাডভেঞ্চারের নেশা আজ একটু নিয়ন্ত্রণে রাখুন। আজ আরাম করুন, কাল আবার নতুন অ্যাডভেঞ্চার খুঁজবেন।

মকর

আপনার কাঁধে আজ অনেক কিছু নির্ভর করবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আপনার জন্য আজ বড় পরীক্ষা। আপনি জন্মগতভাবেই দায়িত্ব নিতে ভালোবাসেন, তাই এই চাপের মধ্যেও বেশ আরাম বোধ করবেন। চাকরি বা ব্যবসায় লাভের লক্ষণ দেখা যায়। সন্তানদের সম্পর্কিত কিছু সুসংবাদ পেতে পারেন—হয়তো তারা আপনাকে বিরক্ত করা একটু কমিয়ে দিয়েছে। আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী হবে। একটি স্থগিত প্রকল্প আবার শুরু হতে পারে; যেমন আপনার পুরোনো জিমের সদস্যপদ! কাজের প্রতি আপনার মনোযোগ দারুণ, কিন্তু দিনে একবারের জন্য হলেও ফোন বন্ধ করে একটু চায়ে চুমুক দিন।

কুম্ভ

অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সমর্থন আজ আপনার সাহসকে বড় উৎসাহ দেবে। এই প্রভাবশালী ব্যক্তিটি হয়তো আপনার প্রতিবেশী, যার কাছে ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড আছে। আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী হবে। প্রেম জীবনে সুখ থাকবে, পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হতে পারে। তবে সেই পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর যেন পকেট খালি না হয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। নিজেকে শান্ত রাখতে এবং পরিবারের সঙ্গে কাটানোর জন্য সন্ধ্যাটি ভালো হবে। বৈপ্লবিক আইডিয়াগুলো আজ আপাতত কাগজে লিখে রাখুন। স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, তাই আজ দৌড়াতে যান বা অন্তত একটু হাঁটুন।

মীন

মীন রাশির জাতক, আজ আপনি হালকা বোধ করবেন এবং উপভোগ করার সঠিক মেজাজে থাকবেন। কল্পনা আজ আপনাকে নিয়ে যেতে পারে এক নতুন জগতে, যেখানে কোনো ইউটিলিটি বিল নেই, আছে শুধু মিষ্টি মিষ্টি স্বপ্ন। অর্থের গুরুত্বের দিকে মনোনিবেশ করবেন, যা আপনার জন্য খুবই দরকারি। আজ যা আপনাকে নিজের সম্বন্ধে ভালো বোধ করায়, এমন কিছু করার পক্ষে এটি চমৎকার দিন; যেমন পুরোনো সব দুঃখ ভুলে একটা চকলেট আইসক্রিম খেয়ে নিন! স্বপ্ন দেখুন, কিন্তু বাস্তবের পৃথিবীতে কে আপনাকে ঠকাচ্ছে, সেদিকেও নজর রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

থাই খাবারের স্বাস্থ্য রহস্য

থাইল্যান্ড ভ্রমণে খাবারের মেনু রাখুন স্বাস্থ্যকর

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
তাজা উপকরণে তৈরি দারুণ স্বাদের জন্য থাই খাবার বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। ছবি: পেক্সেলস
তাজা উপকরণে তৈরি দারুণ স্বাদের জন্য থাই খাবার বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। ছবি: পেক্সেলস

তাজা উপকরণে তৈরি দারুণ স্বাদের জন্য থাই খাবার বিশ্বজুড়ে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এর প্রাণবন্ত স্বাদ ও পুষ্টিগুণ মানুষকে আকৃষ্ট করছে। পুষ্টিবিদ কেরি বিসনের মতে, মসলা, ভেষজ ও তাজা উপাদানের এক প্রাণবন্ত মিশ্রণে তৈরি হয় থাই খাবার। কিন্তু এই খাবারের প্রেমে পড়া নুডলস অনুরাগীদের জন্য কিছুটা খারাপ খবর আছে। কারণ, অনেক সুস্বাদু থাই পদই ক্যালরির দিক থেকে বেশ ভারী হতে পারে।

কেন থাই খাবার স্বাস্থ্যকর

থাই খাবারের স্বাস্থ্যকর দিকগুলো এটিকে বিশ্বজুড়ে অন্যান্য হিসেবে পরিচিত ফাস্ট ফুডের চেয়ে এগিয়ে রাখে। থাই খাবারে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ব্রকলি, সবুজ মটরশুঁটির মতো প্রচুর সবজি ব্যবহার করা হয়, যেগুলো দ্রুত ভাজা বা গ্রিল করা হয়। এতে পুষ্টিগুণ বজায় থাকে। এ ছাড়া থাই খাবারে ব্যবহৃত বেগুন আঁশ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামে ভরপুর। থাই রান্নায় ব্যবহৃত রসুন, আদা ও ধনেপাতা খাবারে স্বাস্থ্যকর উপাদান যোগ করে। যেমন রসুন প্রাকৃতিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও প্রিবায়োটিক, যা পেটের স্বাস্থ্যের জন্য চমৎকার। আদা প্রদাহ কমাতে এবং হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

সবুজ পেঁপের সঙ্গে কাঁচা বা হালকা রান্না করা ফল ও সবজিতে ভরপুর টক সালাদ সোম তাম। ছবি: পেক্সেলস
সবুজ পেঁপের সঙ্গে কাঁচা বা হালকা রান্না করা ফল ও সবজিতে ভরপুর টক সালাদ সোম তাম। ছবি: পেক্সেলস

মরিচে ক্যাপসাইসিন থাকে, যা রক্তসঞ্চালন ভালো রাখে। খাবারে ব্যবহৃত ধনেপাতা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান; যেমন টারপিনিন, কুয়ারসেটিন এবং টোকোফেরলে সমৃদ্ধ। থাই অনেক ক্রিমজাতীয় পদে নারকেলের দুধ ব্যবহৃত হয়, যা ভেগান ও দুধ বা দুধ থেকে তৈরি খাবারে যাদের অ্যালার্জি আছে, তাদের জন্য উপযুক্ত। এতে লরিক অ্যাসিডের মতো মাঝারি-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।

থাই খাবার অর্ডারের সময় যা মনে রাখবেন

সুস্বাদু থাই খাবারের স্বাস্থ্যকর সুবিধা পেতে কিছু বিষয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন—

নারকেলের দুধের ক্যালরি: নারকেলের দুধ স্বাস্থ্যকর হলেও এটি স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ক্যালরিতে বেশ উচ্চ। এর প্রতি কাপে প্রায় ৪৪৫ ক্যালরি থাকে। তাই এটি অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়।

চাল ও নুডলস: অনেক থাই পদে পরিশোধিত সাদা চাল বা নুডলস ব্যবহার করা হয়। তাতে আঁশের উপস্থিতি কম, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে সম্ভব হলে সাদা চালের পরিবর্তে ব্রাউন রাইস বা ফুলকপির রাইস বেছে নিতে পারেন।

ভেষজ, ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সমৃদ্ধ খাবার টম ইয়াম গুং স্যুপ। ছবি: পেক্সেলস
ভেষজ, ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সমৃদ্ধ খাবার টম ইয়াম গুং স্যুপ। ছবি: পেক্সেলস

রান্নার পদ্ধতি ও সস: উচ্চ তাপমাত্রায় ডিপ-ফ্রাই করা খাবার তেল ও খাদ্যের পুষ্টিগুণ নষ্ট করে দিতে পারে। ঘন ও চর্বিযুক্ত সসগুলোতে প্রচুর চর্বি ও চিনি থাকতে পারে।

সোডিয়াম (লবণ): সয়া সস ও ফিশ সসের মতো সিজনিং থেকে থাই খাবার খুব বেশি লবণাক্ত হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে ৬ গ্রামের বেশি লবণ না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বেশির ভাগ থাই খাবার তাজা তৈরি হয়। তাই আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কম তেল, লবণ বা সস ছাড়া রান্না করতে অনুরোধ করতে পারেন।

থাইল্যান্ড ভ্রমণকারীদের জন্য সেরা ৫টি পদ

সি বাস বা অন্য মাছ আদা, লাইম জুস, রসুন ও মরিচ দিয়ে ম্যারিনেট করে ভাপিয়ে রান্না করা হয় স্টিমড ফিশ। ছবি: পেক্সেলস
সি বাস বা অন্য মাছ আদা, লাইম জুস, রসুন ও মরিচ দিয়ে ম্যারিনেট করে ভাপিয়ে রান্না করা হয় স্টিমড ফিশ। ছবি: পেক্সেলস

আপনি যদি থাইল্যান্ড ভ্রমণে যান এবং সুস্বাদু থাই খাবার চেখে দেখার পাশাপাশি সুস্থ থাকতে চান, তবে পুষ্টিবিদ কেরি বিসনের সুপারিশ অনুযায়ী এই ৫টি পদ আপনার খাদ্যতালিকায় যুক্ত করতে পারেন।

সোম তাম: এটি মূলত সবুজ পেঁপের সালাদ। এর সঙ্গে থাকে কাঁচা বা হালকা রান্না করা ফল ও সবজি। এর স্বাদ খানিক টক। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি-তে ভরপুর। এতে চর্বি ও ক্যালরি কম। ২২০ গ্রাম সোম তামে মাত্র ১১১ ক্যালরি থাকে। তবে চিনি বেশি থাকতে পারে। তাই তৈরির সময় জানিয়ে দিন, কেমন মিষ্টি খাবেন।

টম ইয়াম গুং স্যুপ: এটি মূলত চিংড়ি স্যুপ। চিংড়ি, মরিচ, লেমন গ্রাস ও গ্যালানগ্যালযুক্ত টক ও ঝাল ঝোল থাকে এতে। এ খাবারের চর্বি ও ক্যালরি প্রাকৃতিকভাবে কম। আর এটি ভেষজ, ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সমৃদ্ধ খাবার। ২৪০ গ্রাম স্যুপে মাত্র ৫০ ক্যালরি থাকে। তবে খাওয়ার আগে সতর্ক থাকবেন লবণের পরিমাণ নিয়ে। এতে সাধারণত লবণের পরিমাণ বেশি থাকে।

স্টিমড ফিশ: সি বাস বা অন্য মাছ আদা, লাইম জুস, রসুন ও মরিচ দিয়ে ম্যারিনেট করে ভাপানো হয়। খাবারটিতে চর্বি ও ক্যালরি কম। এটি লিন প্রোটিনের উৎস। এ ছাড়া এটি ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ। এর ১০০ গ্রাম ফিলেতে থাকে প্রায় ১৩০ ক্যালরি। তবে চর্বি ৭ গ্রামের বেশি নয়।

স্টার-ফ্রায়েড ভেজিটেবল তৈরি করা হয় তাজা সবজি ভেষজ ও মসলা দিয়ে। ছবি: পেক্সেলস
স্টার-ফ্রায়েড ভেজিটেবল তৈরি করা হয় তাজা সবজি ভেষজ ও মসলা দিয়ে। ছবি: পেক্সেলস

গ্রিলড চিকেন: রসুন, ধনেপাতা ও লেমন গ্রাস দিয়ে ম্যারিনেট করা মুরগির মাংস বা চিংড়ি গ্রিল করা হয়। লিন প্রোটিন ও ভিটামিন বি এর উচ্চমাত্রা উপস্থিত থাকে এতে। তবে চর্বি ও শর্করার পরিমাণ কম। সস ছাড়া খেলে ক্যালরিও কম থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম গ্রিলড চিকেনে থাকে প্রায় ২৩০ ক্যালরি।

স্টার-ফ্রাইড ভেজিটেবলস: এই খাবারে থাকে তাজা সবজি, ভেষজ ও মসলা। সব মিশিয়ে একটু নাড়াচাড়া। এটি খাদ্যতালিকাগত আঁশ, ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস। ২৪০ গ্রাম খাবারে থাকে প্রায় ২০০ ক্যালরি। তবে সে ক্ষেত্রে কম তেল ও লবণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

সূত্র: ডেইলি মেইল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত