Ajker Patrika

কফির গল্প: ইথিওপিয়ার ছাগল পালক থেকে মহাকাশের কফি মেশিন অবধি

ফিচার ডেস্ক
আজ বিশ্ব কফি দিবস। ছবি সূত্র: পেক্সেলস
আজ বিশ্ব কফি দিবস। ছবি সূত্র: পেক্সেলস

জানেন মহাকাশের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল কফি মেশিন? কিংবা সারা বিশ্বেই কি কফিকে কফিই উচ্চারণ করে কিনা? আচ্ছা বলুন তো কফির ইতিহাস কত বছরের পুরনো? জানেন কি? কফির গুঁড়োয় দেখা যায় আপনার ভাগ্য বা ভবিষ্যৎ। বিশ্বে এমন জাতিও আছেন যারা কফির প্রেমে মুগ্ধ হয়ে বানিয়েছেন আস্ত থিম পার্ক। জানতে না ই পারেন। এটা দোষের কিছু নয়। আজ বিশ্ব কফি দিবস। কফির স্বাস্থ্য উপকারিতা জানার পাশাপাশি কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে জেনে নিন এর সম্পর্কে মজাদার কিছু তথ্য।

কবে থেকে শুরু কফি পান

কফির ইতিহাস কমপক্ষে ৮৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে জানা গেলেও, কিছু ঐতিহাসিকের মতে এর শুরুটা ইথিওপিয়ায় ৫৭৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দেও হতে পারে। সবচেয়ে জনপ্রিয় গল্পটি হলো এক ছাগল পালককে নিয়ে। কালদি নামের সেই রাখাল দেখেন, তার ছাগলগুলো এক বিশেষ ফল (কফি ফল) খাওয়ার পর অদ্ভুত আচরণ শুরু করেছে। কৌতূহলী কালদি নিজেও সেই ফল চিবিয়ে খান এবং এক অভাবনীয় উত্তেজনা অনুভব করেন। পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যে কফি গাছ আফ্রিকা থেকে বর্তমান ইয়েমেনে নিয়ে যাওয়া হয়। ষোড়শ শতাব্দীতে মধ্যপ্রাচ্য পেরিয়ে ইউরোপে পৌঁছায় এবং অষ্টাদশ শতাব্দীতে এটি দক্ষিণ আমেরিকায় প্রচলিত হয়।

২০১৫ সালে আইএসএসপ্রেসো নামের একটি বিশেষ কফি মেশিন ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে চালু করা হয়। ছবি: উইকিপিডিয়া
২০১৫ সালে আইএসএসপ্রেসো নামের একটি বিশেষ কফি মেশিন ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে চালু করা হয়। ছবি: উইকিপিডিয়া

মহাকাশেও তৈরি হয়েছে কফির বিশেষ যন্ত্র

কফি সংক্রান্ত সবচেয়ে মজার তথ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো, এটি আক্ষরিক অর্থেই 'আউট অফ দিস ওয়ার্ল্ড'। পৃথিবীর অন্য সব কর্মচারীর মতো নভোচারীরাও কফির তীব্র আকাঙ্ক্ষা অনুভব করেন। চাঁদে প্রথম যাওয়া অ্যাপোলো ১১ মিশনে ইনস্ট্যান্ট কফির পাউচে গরম জল মিশিয়ে গরম কফি দেওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালে আইএসএসপ্রেসো নামের একটি বিশেষ কফি মেশিন ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে চালু করা হয়। এই অনন্য মেশিনে প্রি-গ্রাউন্ডেড কফি পড এবং প্রচণ্ড গরম পানি ব্যবহার করা হতো, যা মহাকর্ষহীন অবস্থায় কফি তৈরির এক দুর্দান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে।

কফি ও তার বৈচিত্র্যময় ডিএনএ

সাধারণ কফি পানকারীরাও মূলত দুই ধরনের কফি বিনের নাম জানেন: অ্যারাবিকা এবং রোবাস্টা। তবে মূলত কফি বিন চার ধরনের হয়। অন্য দুটি হলো লিবারিকা ও এক্সেলসা। অ্যারাবিকার স্বাদ এবং সুগন্ধ এত জটিল ও স্বতন্ত্র হওয়ার কারণ এর অনন্য ডিএনএ কাঠামো। ওই বিনের ডিএনএ কাঠামো অবিশ্বাস্যভাবে স্বতন্ত্র। রোবাস্টা কফি বিনে ২২টি ক্রোমোজোম থাকে। অন্যদিকে, অ্যারাবিকা বিনে থাকে ৪৪টি ক্রোমোজোম। যা এর ফ্লেভার প্রোফাইল থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতায় প্রভাব ফেলে।

মূলত কফি বিন চার ধরনের হয়। ছবি সূত্র: পেক্সেলস
মূলত কফি বিন চার ধরনের হয়। ছবি সূত্র: পেক্সেলস

কফি হাউজের সংস্কৃতি

পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো কফি হাউসটি রয়েছে ইতালিতে। বুদাপেস্টের নিউ ইয়র্ক ক্যাফে, এডিনবার্গ-এর এলিফ্যান্ট হাউস, প্যারিসের ক্যাফে দে ফ্লোর কফি শপগুলো সবসময়ই লেখক, পণ্ডিত এবং সমাজপতিদের মিলনস্থল ছিল। ১৪৭৫ সালে কনস্টান্টিনোপল-এ (যা বর্তমানে ইস্তাম্বুল নামে পরিচিত) কিভা হান নামে পৃথিবীর প্রথম কফি শপটি আধুনিক কফি সংস্কৃতির সূচনা করেছিল। তবে ১৭২০ সালে ফ্লোরেন্সে চালু হওয়া ক্যাফে ফ্লোরিয়ান হলো বিশ্বের প্রাচীনতম অবিচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত কফি শপ।

প্রাণীদের ভূমিকা

কফি ফল সংগ্রহে প্রাণীদেরও আছে বিশেষ ভূমিকা। কফি ফলের স্বাদ মানুষ ছাড়াও অন্য প্রাণীরাও উপভোগ করে। কোস্টা রিকার মন্টেভার্দে অঞ্চলের এক খামারে বাদুড়রা কফি ফলের মাংসল অংশ খায় এবং বীজগুলো ফেলে দেয়। এরপর সেই বীজ সংগ্রহ করে, রোস্ট করে ও কফি তৈরি করা হয়। হাতিরাও নির্দিষ্ট জাতের কফির স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে। ব্ল্যাক আইভরি'স এলিফ্যান্ট পুপ কফি তৈরির জন্য হাতিদের কফি চেরি খাওয়ানো হয়। হজম প্রক্রিয়ার পর অক্ষত বীজগুলো হাতির মল থেকে সংগ্রহ করা হয়, যা বিশ্বের সবচেয়ে দামি কফির মধ্যে অন্যতম।

কফির কাপে ভবিষ্যৎ দেখা যায়

যদি আপনি চা পাতার সাহায্যে ভাগ্য গণনা, অর্থাৎ ট্যাসিওগ্রাফির সঙ্গে পরিচিত হন, তাহলে জেনে রাখুন, কফির গুঁড়ো দিয়েও এটি করা যায়। অটোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকে চলে আসা এই প্রাচীন প্রথাটি তুরস্কে আজও ব্যবহৃত হয়। তুর্কি কফি পান শেষ হওয়ার পর, কাপের উপর একটি সসার রেখে মনোযোগের সঙ্গে একটি প্রশ্ন বা ইচ্ছের কথা ভাবা হয়। এরপর কাপটি উল্টে দেওয়া হয়, যাতে কফির গুঁড়ো সসারের উপর একটি নকশা তৈরি করে। এই নকশা বা ছবিগুলোর অর্থ ব্যাখ্যা করা হয়, যা ভবিষ্যতে নতুন কোনো উদ্যোগের ইঙ্গিত থেকে শুরু করে অশুভ সংকেত পর্যন্ত হতে পারে।

কফির জন্য নিবেদিত থিম পার্ক পার্কে ডেল ক্যাফে। ছবি: ব্লগডট গো ইন ট্রাভেল
কফির জন্য নিবেদিত থিম পার্ক পার্কে ডেল ক্যাফে। ছবি: ব্লগডট গো ইন ট্রাভেল

কফির প্রতি ভালোবাসা

কলম্বিয়ান কফি বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত এবং এটি বিশ্বের প্রায় ১০ শতাংশ কফি উৎপাদন করে। তাদের কফি-প্রেম এতটাই তীব্র যে সেখানে রয়েছে একটি থিম পার্ক। দেশটির কফি উৎপাদন শিল্পের প্রাণকেন্দ্র হলো কফি অ্যাক্সিস বা কফি ট্রায়াঙ্গেল। এই অঞ্চলে আন্তর্জাতিক পর্যটকরা প্রায়শই একটি বিশাল আকর্ষণ মিস করে যান। যা থাকে পার্কে ডেল ক্যাফেতে। যা কফির প্রতি নিবেদিত একটি সম্পূর্ণ থিম পার্ক। কুইন্ডিয়ো ডিপার্টমেন্টে অবস্থিত এই বিনোদন পার্কটিতে রোলার কোস্টার, ওয়াটার রাইড, এবং একটি ডেডিকেটেড শিশুদের এলাকা রয়েছে। এখানে ঘোড়ায় চড়ার ব্যবস্থা, কফি নিয়ে মজার তথ্যসহ একটি ইন্টারেক্টিভ কফি জাদুঘর, এবং অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে তাজা স্থানীয় কফি পানের সুযোগও মেলে।

সূত্রঃ ইনসাইটফুল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশের জন্য দুঃসংবাদ, শান্তি রক্ষা মিশনের এক-চতুর্থাংশ ছাঁটাই করছে জাতিসংঘ

১২ অক্টোবর থেকে ৫ কোটি শিশুকে বিনা মূল্যে টাইফয়েড টিকা, টাকা চাইলে ব্যবস্থা

গাজায় থেমে গেছে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান–কামানের গর্জন, ২ বছর পর শান্তির ঘুমে গাজাবাসী

৯ গোলের দুঃস্বপ্ন থেকে মশার যন্ত্রণা, বাংলাদেশ-হংকং লড়াইয়ে আরও যা ঘটেছে

সবচেয়ে প্রভাবশালী ৪ মিডিয়ার লাগাম এখন ৪ শীর্ষ ধনীর হাতে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত