Ajker Patrika

তুলির আঁচড়ে জীবন্ত লাইলি–মজনুর প্রেমকাহিনি, দেখুন ২০টি বিরল চিত্র

জিন্নাত আরা ঋতু, ঢাকা
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৭: ৫১
তুলির আঁচড়ে জীবন্ত লাইলি–মজনুর প্রেমকাহিনি, দেখুন ২০টি বিরল চিত্র

সপ্তম শতকের আরব বেদুইন কবি কায়েস ইবনে আল-মুলাওয়াহ ও তাঁর প্রেমিকা লাইলি বিনতে মাহদির প্রেমকাহিনি ‘লাইলি ও মজনু’। এটি বিশ্বের অন্যতম করুণ ও বিখ্যাত প্রেমগাথা হিসেবে পরিচিত। গল্পটি আরব উপদ্বীপে উদ্ভূত হয়ে বিভিন্ন যুগে নানা সংস্কৃতিতে ছড়িয়ে পড়েছে।

একবিংশ শতাব্দীতেও তাঁদের প্রেমের কাহিনি ব্যাপক জনপ্রিয় ও প্রায়ই প্রেমে পাগল যুগলদের ‘লাইলি-মজনু’ বলে অভিহিত করা হয়। এটি এমন এক গল্প, যা কেবল প্রেমেরই নয়, বিচ্ছেদ, দুঃখ ও আত্মত্যাগেরও প্রতীক হয়ে উঠেছে।

শুনতে শুনতে কখনো কি আপনিও কল্পনার জগতে হারিয়ে গেছেন, ভাবছেন—কেমন ছিল সেই যুগ? কেমন ছিলেন লাইলি ও মজনু? তাঁদের জীবনযাপন কেমন ছিল? ইশ যদি রংতুলির আঁচড়ে সেই সময়টিকে জীবন্তভাবে দেখতে পারতাম! আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো লাইলি ও মজনুর করুণ প্রেমগাথার বিভিন্ন সময়ের অঙ্কিত চিত্র, যা এই অমর প্রেমকাহিনিকে আরও গভীরভাবে অনুভব করতে সাহায্য করবে।

নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টে রক্ষিত পাণ্ডুলিপি। ছবি: আল বাইত ফান
নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টে রক্ষিত পাণ্ডুলিপি। ছবি: আল বাইত ফান

কায়েস, যিনি মজনু নামেও পরিচিত, লাইলির প্রতি গভীর প্রেমে মগ্ন হয়ে পড়েন। অপ্রাপ্ত প্রেম তাঁকে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন করে ফেলে। তিনি ‘মজনু’ বা ‘উন্মাদ’ নামে পরিচিতি পান।

লাইলি ও মজনু, ইরান, ১৬ শতাব্দী, স্কটল্যান্ডের জাতীয় জাদুঘর, এডিনবার্গ। ছবি: আল বাইত ফান
লাইলি ও মজনু, ইরান, ১৬ শতাব্দী, স্কটল্যান্ডের জাতীয় জাদুঘর, এডিনবার্গ। ছবি: আল বাইত ফান

এই ফোলিও চিত্রটি তখনকার, যখন তাঁদের প্রথম দেখা হয় বিদ্যালয়ে (মাদ্রাসা)। যেখানে প্রথম দর্শনেই একে অন্যের প্রেমে পড়ে যান। যদিও গল্পের স্থান আরব, এই চিত্রকলার স্থাপত্যিক পটভূমি মূলত ফারসি।

‘বিদ্যালয়ে লাইলি ও মজনু’, গাঞ্জার নিজামির খামসা (কুইন্টেট) থেকে প্রাপ্ত ফোলিও, মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টে রক্ষিত ১৪৩১-৩২ খ্রিষ্টাব্দের পাণ্ডুলিপি। ছবি: আল বাইত ফান
‘বিদ্যালয়ে লাইলি ও মজনু’, গাঞ্জার নিজামির খামসা (কুইন্টেট) থেকে প্রাপ্ত ফোলিও, মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টে রক্ষিত ১৪৩১-৩২ খ্রিষ্টাব্দের পাণ্ডুলিপি। ছবি: আল বাইত ফান

লাইলি ছিলেন এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সুন্দরী ও গুণবতী নারী। কায়েসের প্রতি তাঁর প্রেম থাকলেও সামাজিক ও গোত্রীয় রীতিনীতির কারণে তাঁদের বিয়ে সম্ভব হয়নি। পাণ্ডুলিপি অনুযায়ী, ১৬ শতকের শেষার্ধে লাইলি ও মজনুকে নিয়ে লেখেন ইরানের খোরাসান অঞ্চলের লেখক ও পণ্ডিত মীর বাখরজি।

ষোড়শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে রচিত মীর বাখারজি রচিত লাইলি ও মজনুর পাণ্ডুলিপি। ভিক্টোরিয়া ও অ্যালবার্ট জাদুঘর। ছবি: আল বাইত ফান
ষোড়শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে রচিত মীর বাখারজি রচিত লাইলি ও মজনুর পাণ্ডুলিপি। ভিক্টোরিয়া ও অ্যালবার্ট জাদুঘর। ছবি: আল বাইত ফান

লাইলির বাবা তাঁকে অন্য এক ধনী পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেন, এতে মজনুর হৃদয় ভেঙে যায়।

লাইলির বাবা তাঁকে ইবনে সালামের সঙ্গে বিয়ে দেন (ব্রিটিশ লাইব্রেরি, ইসলামিক ৩৮৪, পৃষ্ঠা ২৩)। ছবি: আল বাইত ফান
লাইলির বাবা তাঁকে ইবনে সালামের সঙ্গে বিয়ে দেন (ব্রিটিশ লাইব্রেরি, ইসলামিক ৩৮৪, পৃষ্ঠা ২৩)। ছবি: আল বাইত ফান

বিচ্ছেদের পর মজনু মরুভূমিতে চলে যান, যেখানে তিনি পাগলের মতো জীবন যাপন করতে থাকেন। তিনি লাইলির প্রতি গভীর প্রেম নিয়ে আবেগময় কবিতা লিখতেন, যা পরে বিখ্যাত হয়ে ওঠে।

মরুভূমিতে মজনু। সুলতান ইব্রাহিম মির্জা আগা খান জাদুঘরে সংগৃহীত রচনার (দিবান) একটি পাণ্ডুলিপি থেকে ফোলিও। ছবি: আল বাইত ফান
মরুভূমিতে মজনু। সুলতান ইব্রাহিম মির্জা আগা খান জাদুঘরে সংগৃহীত রচনার (দিবান) একটি পাণ্ডুলিপি থেকে ফোলিও। ছবি: আল বাইত ফান

লাইলি যদিও বিবাহিত ছিলেন, তবুও মজনুর প্রতি তাঁর প্রেম অটুট ছিল এবং এই অপূর্ণ প্রেমের যন্ত্রণায় তিনি কষ্ট পেতেন।

ষোড়শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে রচিত মীর বাখরজি রচিত লাইলি ও মজনুর পাণ্ডুলিপি। ভিক্টোরিয়া ও আলবার্ট মিউজিয়াম। ছবি: আল বাইত ফান
ষোড়শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে রচিত মীর বাখরজি রচিত লাইলি ও মজনুর পাণ্ডুলিপি। ভিক্টোরিয়া ও আলবার্ট মিউজিয়াম। ছবি: আল বাইত ফান

‘মজনু’ নামটির আরবি অর্থ হলো ‘অভিভূত’ বা ‘উন্মাদ’, যা কায়েসের মানসিক অবস্থাকে প্রতিফলিত করে—লাইলির প্রতি তাঁর অপ্রতিরোধ্য ভালোবাসা ও আত্মবিস্মৃত আচরণের প্রকাশ হিসেবেই এই নাম পরিচিতি পায়।

নিজামির লেখা লাইলি ও মজনুর ফোলিও (মৃত্যু: ১২০৯) ; শায়খ সেলিম মরুভূমিতে মজনুর সঙ্গে দেখা করেন। ছবি: আল বাইত ফান
নিজামির লেখা লাইলি ও মজনুর ফোলিও (মৃত্যু: ১২০৯) ; শায়খ সেলিম মরুভূমিতে মজনুর সঙ্গে দেখা করেন। ছবি: আল বাইত ফান

লাইলি ও মজনুর গল্পকে প্রায়ই ভালোবাসার শক্তি ও সমাজের বিধিনিষেধের কারণে সেই ভালোবাসা প্রকাশে যে পরিণতি আসে, এর প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।

লাইলি ও মজনু মাদ্রাসায়। নিজামির খামসার (কুইন্টেট) একটি পাণ্ডুলিপির পৃষ্ঠা, ইরান, শিরাজ, ১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দ/ ৯২৪ হিজরি। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি মিউজিয়াম অব আর্টে সংরক্ষিত। ছবি: আল বাইত ফান
লাইলি ও মজনু মাদ্রাসায়। নিজামির খামসার (কুইন্টেট) একটি পাণ্ডুলিপির পৃষ্ঠা, ইরান, শিরাজ, ১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দ/ ৯২৪ হিজরি। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি মিউজিয়াম অব আর্টে সংরক্ষিত। ছবি: আল বাইত ফান

গল্পটির বিভিন্ন সংস্করণ হয়েছে। এর মধ্যে পারসি কবি নিজামি গনজাভি ও ভারতীয় কবি আমির খসরু রচিত রূপগুলো অন্তর্ভুক্ত। এই সংস্করণগুলোতে মূল গল্পে রচয়িতাদের নিজস্ব উপাদান যোগ হয়েছে। এতে গল্পটি আরও জনপ্রিয় হয়েছে।

লাইলি ও মজনু যখন শিশু। স্কুলে ছিল। ব্রিটিশ লাইব্রেরি আইও ইসলামিক ৩৮৪, পৃষ্ঠা ৭। ছবি: আল বাইত ফান
লাইলি ও মজনু যখন শিশু। স্কুলে ছিল। ব্রিটিশ লাইব্রেরি আইও ইসলামিক ৩৮৪, পৃষ্ঠা ৭। ছবি: আল বাইত ফান

পরে লাইলি–মজনু থিমটি আরবি থেকে ফারসি, তুর্কি ও ভারতীয় ভাষায় রূপান্তরিত হয়। পারস্যের কবি নিজামি গনজাভি রচিত বর্ণনামূলক কবিতা খামসা এর তৃতীয় অংশ।

লাইলি ও মজনুর চিত্রায়িত পাণ্ডুলিপি, হামদির রচনা, অটোমান যুগ, হার্ভার্ড আর্ট মিউজিয়ামে সংরক্ষিত। ছবি: আল বাইত ফান
লাইলি ও মজনুর চিত্রায়িত পাণ্ডুলিপি, হামদির রচনা, অটোমান যুগ, হার্ভার্ড আর্ট মিউজিয়ামে সংরক্ষিত। ছবি: আল বাইত ফান

এটি মজনু ও লাইলির প্রেমকাহিনিকে প্রশংসা করে রচিত একটি বিখ্যাত কবিতা। এই রোমান্টিক কবিতা রচনা করেছিলেন আমির খসরু। এই পাণ্ডুলিপির ক্যালিগ্রাফার ছিলেন সুলতান আলি মাশহাদি, যিনি সম্ভবত ১৫০৬ সালে হেরাতে এটি লিপিবদ্ধ করেন (ব্রিটিশ লাইব্রেরি আইও ইসলামিক ৩৮৩)। ছবি: আল বাইত ফান

এই প্রেমগাথাকে কেন্দ্র করে তিনি বহু মনোগ্রাহী চিত্রসহ পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছিলেন। ছবি: আল বাইত ফান
এই প্রেমগাথাকে কেন্দ্র করে তিনি বহু মনোগ্রাহী চিত্রসহ পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছিলেন। ছবি: আল বাইত ফান

লাইলি ও মজনুর গল্প পারস্য, মুঘল ও অটোমান (ওসামনীয়) সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পীদের অনুপ্রাণিত করেছিল।

লাইলি ও মজনু, তুরস্ক জন রাইল্যান্ডস লাইব্রেরি। ছবি: আল বাইত ফান
লাইলি ও মজনু, তুরস্ক জন রাইল্যান্ডস লাইব্রেরি। ছবি: আল বাইত ফান

লাইলি ও মজনুর চিত্রায়ণে পারস্যের ক্ষুদ্র চিত্রকলা (পার্সিয়ান মিনিয়েচার পেইন্টিং) বিশেষভাবে বিখ্যাত। এই ক্ষুদ্রাকৃতির শিল্পকর্মগুলো অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে আঁকা হয় এবং প্রায়ই গল্পের দৃশ্যাবলি চিত্রিত করা হয়েছে, যেখানে চরিত্রগুলোর আবেগ ও তাদের চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ নিখুঁতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

লাইলি ও মজনু মাদ্রাসায়। আনুমানিক ১৫৭০ সাল, রোড আইল্যান্ড স্কুল অব ডিজাইন মিউজিয়াম। ছবি: আল বাইত ফান
লাইলি ও মজনু মাদ্রাসায়। আনুমানিক ১৫৭০ সাল, রোড আইল্যান্ড স্কুল অব ডিজাইন মিউজিয়াম। ছবি: আল বাইত ফান

লাইলি ও মজনুর চিত্রায়িত পাণ্ডুলিপিগুলোর চিত্রকর্মে প্রায়ই তাঁদের প্রেমকাহিনির আবেগঘন মুহূর্তগুলো তুলে ধরা হয়। এসব চিত্রে উজ্জ্বল রং, বিস্তারিত বিবরণ ও মুখাবয়বের অভিব্যক্তির মাধ্যমে তাঁদের অনুভূতির গভীরতা প্রকাশ করা হয়।

লাইলি ও মজনু, আশমোলিয়ান জাদুঘর। ছবি: আল বাইত ফান
লাইলি ও মজনু, আশমোলিয়ান জাদুঘর। ছবি: আল বাইত ফান

লাইলি ও মজনুর গল্প সাহিত্যের অন্যান্য শাখাতেও জায়গা করে নিয়েছে, যার মধ্যে সুফি মরমী গ্রন্থও রয়েছে। এই প্রেমকাহিনিকে প্রায়ই রূপক অর্থে ব্যাখ্যা করা হয়, যেখানে লাইলির প্রতি মজনুর আকুলতা, সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে আত্মিক মিলনের আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

মজনু লাইলির সমাধির ওপর নিজেকে সঁপে দেন। ব্রিটিশ লাইব্রেরি, ইসলামিক ৩৮৪, পৃষ্ঠা ৪৮। ছবি: আল বাইত ফান
মজনু লাইলির সমাধির ওপর নিজেকে সঁপে দেন। ব্রিটিশ লাইব্রেরি, ইসলামিক ৩৮৪, পৃষ্ঠা ৪৮। ছবি: আল বাইত ফান

লাইলি ও মজনুর চিত্রায়িত পাণ্ডুলিপিগুলোতে প্রায়ই তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ, মজনুর লাইলি প্রতি আকুলতা, তাঁদের বিচ্ছেদ ও মরুভূমিতে মজনুর ভ্রমণের দৃশ্যাবলি চিত্রিত করা হয়।

লাইলি ও মজনু। জন রাইল্যান্ডস লাইব্রেরি, তুরস্ক। ছবি: আল বাইত ফান
লাইলি ও মজনু। জন রাইল্যান্ডস লাইব্রেরি, তুরস্ক। ছবি: আল বাইত ফান

পাণ্ডুলিপির চিত্রায়ণে প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো প্রায়ই সবুজ ও প্রাণবন্ত দেখা যায়—যা প্রাকৃতির সৌন্দর্যকে প্রতিফলিত করে এবং লাইলি ও মজনুর গল্পের পটভূমি হিসেবে কাজ করে। এসব প্রাকৃতিক দৃশ্যে বাগান, নদী, পর্বত ও মরুভূমির দৃশ্য থাকে।

প্রেমিক মজনু তাঁর প্রিয় লাইলির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, এটি নিজামি গনজাভির খামসা (কুইন্টেট) থেকে একটি পাণ্ডুলিপি (১১১৪–১২১৭)। ছবি: আল বাইত ফান
প্রেমিক মজনু তাঁর প্রিয় লাইলির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, এটি নিজামি গনজাভির খামসা (কুইন্টেট) থেকে একটি পাণ্ডুলিপি (১১১৪–১২১৭)। ছবি: আল বাইত ফান

লাইলি ও মজনুর গল্প সাংস্কৃতিক সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রসারিত হয়েছে এবং এটি পারসি (ইরান), আরব এবং মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াতে জনপ্রিয়তা পায়। এই থিম নিয়ে পাণ্ডুলিপি চিত্রকর্ম ও কবিতা বিভিন্ন শিল্পকর্মের ঐতিহ্যে পাওয়া যায়।

লাইলি ও মজনুর গল্প আজও মানুষের হৃদয়ে গভীরভাবে জড়িয়ে রয়েছে। যা প্রেমের শক্তি, বিচ্ছেদের বেদনা ও সমাজের আরোপিত সীমাবদ্ধতাগুলোর গুরুত্বকে তুলে ধরে। তাঁদের গল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত পাণ্ডুলিপির চিত্রায়ণ ও কবিতা তাঁদের প্রেমের চিরন্তন প্রকৃতি ও শিল্পীর কাব্যিক প্রকাশের নিদর্শন হয়ে রয়েছে।

নিজামির (মৃত্যু ১২০৯) লেখা খামসা (কুইন্টেট) থেকে ফোলিও। ছবি: আল বাইত ফান
নিজামির (মৃত্যু ১২০৯) লেখা খামসা (কুইন্টেট) থেকে ফোলিও। ছবি: আল বাইত ফান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চার জেলায় কর্মী নেবে সিটি ব্যাংক, আবেদন শেষ ১৬ নভেম্বর

বিএনপির ফাঁকা রাখা ঢাকার আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন তাসনিম জারা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসা থেকে ছাত্রদল নেতার লাশ উদ্ধার

কর্মী নিয়োগ দেবে কেয়ার বাংলাদেশ, বেতন ৪৫ হাজার টাকা

রাস্তার পাশে জ্বালানি তেল বিক্রি সাময়িক বন্ধ থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মানসিক চাপ কমাতে নতুন ট্রেন্ড ‘অন্ধকারে গোসল’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অন্ধকারে গোসল করলে প্রশান্তি মেলে। ছবি: পেক্সেলস
অন্ধকারে গোসল করলে প্রশান্তি মেলে। ছবি: পেক্সেলস

ব্যস্ততা-বিশৃঙ্খলায় ভরপুর এ জীবনে শান্তির খোঁজে হাসফাঁস করছি সবাই। কীভাবে মেলে শান্তি! কিন্তু শান্তির খোঁজ করতে যে সময় দেব সেই সময়টাও কই! এজন্য দৈনন্দিন কাজের মাঝেই শান্তি কীভাবে খুঁজে পাওয়া যায় সেটার উপায় খুঁজছেন বিশেষজ্ঞরা।

মানসিক চাপ ও ক্লান্তি দূর করতে অনেকে জীবনযাত্রায় আনছেন নতুন নতুন পরিবর্তন। সম্প্রতি অনলাইনে এমনই এক ট্রেন্ড বেশ চোখে পড়ছে। তা হলো—‘ডার্ক শাওয়ারিং’।

‘ডার্ক শাওয়ারিং’-এর মানে হলো সম্পূর্ণ অন্ধকারে গোসল করা। আপনি যখন গোসল করবেন তখন সেখানে কোনো আলো থাকবে না। অন্ধকারে শরীরের ইন্দ্রিয়গুলো গভীরভাবে কাজ করে। যার ফলে গোসলের অভিজ্ঞতা হয় আরও গভীর, মনোযোগী ও প্রশান্তিদায়ক।

অন্ধকারে গোসল করা শুধু নতুনত্ব নয়, এর রয়েছে বেশ কিছু শারীরিক ও মানসিক উপকারও। এই পদ্ধতিকে অনেকেই মানসিক স্বস্তি এবং স্ট্রেস কমানোর একটি সহজ উপায় হিসেবে দেখছেন।

ডার্ক শাওয়ারিং-এর উপকারিতা

১. সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি

চোখের দৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলে শরীরের অন্য ইন্দ্রিয়গুলো, বিশেষ করে হাতের স্পর্শে কিছু বোঝার অনুভূতি তীব্রভাবে সক্রিয় হয়। পানির স্পর্শ, উষ্ণতা বা ঠান্ডার অনুভূতি আরও গভীরভাবে টের পাওয়া যায়। এতে গোসলের অভিজ্ঞতা হয় অনেক বেশি তৃপ্তিদায়ক।

২. মানসিক প্রশান্তি ও ধ্যানের অনুভূতি

অন্ধকারে গোসল ধ্যানের মতো শান্ত ও মনোযোগী হওয়ার মতো অভিজ্ঞতা দেয়। মন শান্ত হয়, উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমে। ধীরে ধীরে শরীর ও মন দুটোই আরাম পায়।

৩. রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে

পানির তাপমাত্রার আকস্মিক পরিবর্তন এবং ত্বকে পানির প্রবাহ শরীরে রক্তসঞ্চালন বাড়াতে সহায়তা করে। এর ফলে শরীর সতেজ থাকে এবং পেশির টান কমে।

৪. মস্তিষ্কের অতিরিক্ত চাপ কমায়

ক্যালিফোর্নিয়ার এমেন ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাতা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. ড্যানিয়েল এমেন বলেন, হালকা আলো বা অন্ধকার পরিবেশ মস্তিষ্কের ‘হুমকি শনাক্ত করার রাডার’ বা ‘থ্রেট রাডার’-কে বিশ্রামের সুযোগ দেয়।

তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, আলো মস্তিষ্ককে শক্তিশালীভাবে প্রভাবিত করে। তাই আলো কমলে মস্তিষ্কে উত্তেজনা কমে এবং যুক্তিসংগত চিন্তা ফিরে আসে। অনেকের ক্ষেত্রে এটি শান্ত, স্পষ্ট ও স্থিতিশীল অনুভূতি দেয়।

ড. এমেনের মতে, দৃষ্টিগত তথ্য কমে গেলে মস্তিষ্কে সেন্সরি চাপও কমে যায়। ফলে ভয় ও স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণকারী অংশের প্রতিক্রিয়া কমে। যার প্রভাবে মন শান্ত ও ফুরফুরে হয়ে ওঠে।

‘ডার্ক শাওয়ারিং’ করবেন যেভাবে

অন্ধকারে গোসলে উপকার পেতে কিছু বিষয় অনুসরণ করতে হবে—

১. অন্ধকার পরিবেশ তৈরি

স্নানঘরের আলো নিভিয়ে দিতে হবে অথবা ভারী পর্দা বা গাঢ় রঙের পর্দা ব্যবহার করতে হবে যাতে ভেতরে যতটা সম্ভব অন্ধকার তৈরি করা যায়।

২. মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এমন সবকিছু থেকে দূরে

মোবাইল, মিউজিক বা অন্য কোনো ডিভাইস রাখবেন না যার শব্দে বা আলোতে মনোযোগ ব্যাহত হতে পারে। পুরোপুরি নিজের শরীর ও অনুভূতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে মন দিন।

৩. ইন্দ্রিয়গুলোর প্রতি মনোযোগ দিন

ত্বকে পানির স্পর্শ এবং পানির শব্দ আর সাবান বা শ্যাম্পুর গন্ধের দিকে মনোযোগ দিন। চাইলে ল্যাভেন্ডার বা ক্যামোমাইলের মতো সুগন্ধি রাখতে পারেন, যা প্রশান্তি দেয়।

৪. মস্তিষ্কের বিশ্রাম মেলে এমন পরিবেশ তৈরি করুন

ড. ড্যানিয়েল এমেনের ভাষায়, ‘মস্তিষ্ক পূর্বানুমান অনুযায়ী চলে। আপনি মস্তিষ্ককে শান্ত করতে কিছু করছেন না বরং এমন এক পরিবেশ তৈরি করছেন যেখানে মস্তিষ্ক নিজে থেকেই ধীরে বিশ্রামে চলে যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চার জেলায় কর্মী নেবে সিটি ব্যাংক, আবেদন শেষ ১৬ নভেম্বর

বিএনপির ফাঁকা রাখা ঢাকার আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন তাসনিম জারা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসা থেকে ছাত্রদল নেতার লাশ উদ্ধার

কর্মী নিয়োগ দেবে কেয়ার বাংলাদেশ, বেতন ৪৫ হাজার টাকা

রাস্তার পাশে জ্বালানি তেল বিক্রি সাময়িক বন্ধ থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বারান্দায় ফোটা ফুল দিয়েই হোক চুলের যত্ন

ফিচার ডেস্ক
ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

শখের বাগানির বারান্দায় দু-চারটা ফুলগাছ থাকবে না তা কি হয়? রোজই দুয়েকটা ফুল তো ফোটেই। তাজা ফুল ছিঁড়তে না চাইলে গাছে শুকিয়ে যাওয়া ফুলগুলো দিয়েও কিন্তু চুলচর্চা করতে পারেন। হয়তো আপনি জানেনও না, আপনার বারান্দাতেই এমন কিছু ফুল রয়েছে, যেগুলো বেটে ব্যবহার করলে চুল হাসবে নতুন ছন্দে। জেনে নিন বারান্দার কোন ফুলটি দিয়ে কোন ধরনের প্যাক তৈরি করে চুলে ব্যবহার করবেন।

অকালে চুল পাকা রোধে সহায়ক অপরাজিতা

অপরাজিতা ফুলের নির্যাস অকালে চুল পেকে যাওয়া রোধ করতে কুব ভালো কাজ করে। পাশাপাশি এটি চুল পড়াও কমায়। ৮-১০টি অপরাজিতা ফুল বাটা, ২ চামচ পেঁয়াজের রস ও ১ চামচ ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এ মিশ্রণটি মাথার ত্বক ও চুলে মেখে ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। অপরাজিতা ফুলের নির্যাস ব্যবহারে স্ক্যাল্পে রক্ত চলাচল বাড়ে। ফলে নতুন চুল গজায়। চুলে প্যাক হিসেবে ব্যবহার না করেও পানিতে অপরাজিতা ফুলের পাপড়ি ফুটিয়ে রং বের করে নিন। এরপর তা ঠান্ডা হলে বোতলে করে ফ্রিজে রেখে দিন। শ্যাম্পুর পর চুলের শেষ ধোয়ায় এই পানি ব্যবহার করুন। কন্ডিশনারের কাজ হবে।

ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

ঝলমলে চুল পেতে জবা ফুল

জবা ফুল দিয়ে চুলের যত্ন নেওয়ার চল বেশ পুরোনো। জবা ফুলে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড। এটি চুলে কেরাটিন প্রোটিনের উৎপাদন বাডায়। এই ফুলে আরও রয়েছে ভিটামিন ‘ই’, ভিটামিন ‘সি’, যা চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে, চুলের গোড়া মজবুত হয়।

৫-৬টি জবা ফুল, ৮-১০টি জবা ফুলের পাতা, ২-৩ টেবিল চামচ নারকেল তেল দিয়ে প্যাক তৈরি করে চুলে ব্যবহার করতে পারেন। প্যাক তৈরির জন্য জবা ফুল ও পাতাগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এবার একসঙ্গে বেটে মিহি মিশ্রণ তৈরি করুন। বাটার সময় সামান্য পানি যোগ করতে পারেন। সবশেষে নারকেল তেল মিশিয়ে দিন। এ প্যাকটি চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে রেখে দিন ৩০-৪০ মিনিট। এরপর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এ ছাড়াও চুলের মসৃণ ভাব ও জেল্লা ফিরে পেতে তিনটি জবা ফুল পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন ফুলগুলো বেটে তাতে ৩ টেবিল চামচ দুধ ও ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এ মিশ্রণ চুলে ভালোভাবে মেখে রাখুন আধা ঘণ্টা। এরপর স্বাভাবিক নিয়মে শ্যাম্পু করে নিন। ভালো ফলাফলের জন্য এ প্যাকটি মাসে দুবার ব্যবহার করুন।

ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

শীতে চুলের খুশি দূর করবে গাঁদা ফুল

গাঁদা ফুলে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য, যা খুশকি, মাথার ত্বকের শুষ্কতা এবং চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। হেয়ার প্যাক বানাতে ৪-৫টি গাঁদা ফুল ভালো করে ধুয়ে পাপড়ি বের করে নিন। এরপর এর সঙ্গে আধা কাপ টকদই ও ১ চামচ মধু মেশান। খুব ভালো করে বেটে বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। এ প্যাকটি চুলে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করলেই খুশকি দূর হবে। সঙ্গে অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যাও কমবে।

চুলের আগা ফাটা কমাবে গোলাপ

গোলাপ চুলকে আর্দ্র ও মসৃণ রাখে। পাশাপাশি মাথার ত্বকে যেকোনো রকম ফাঙ্গাল ইনফেকশনের চিকিৎসায় গোলাপের পাপড়ি দিয়ে তৈরি গোলাপজল খুব কার্যকর। চুল ধোয়ার আগে বা পরে দু-ভাবেই এই গোলাপজল ব্যবহার করা যায়। চুলের আগা ফাটা দূর করতে, চুল নরম ও উজ্জ্বল করতে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে তৈরি হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন। একমুঠ তাজা বা শুকনো গোলাপের পাপড়ি এক কাপ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন আধা ঘণ্টা। এরপর পাপড়িগুলো তুলে এর সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু ও ১ টেবিল চামচ বাদাম তেল মিশিয়ে ব্লেন্ড করুন। মাথার তালুতে, পুরো চুলে ও আগায় বেশি পরিমাণে লাগান। আধা ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করুন।

সূত্র: বি বিউটিফুল ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চার জেলায় কর্মী নেবে সিটি ব্যাংক, আবেদন শেষ ১৬ নভেম্বর

বিএনপির ফাঁকা রাখা ঢাকার আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন তাসনিম জারা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসা থেকে ছাত্রদল নেতার লাশ উদ্ধার

কর্মী নিয়োগ দেবে কেয়ার বাংলাদেশ, বেতন ৪৫ হাজার টাকা

রাস্তার পাশে জ্বালানি তেল বিক্রি সাময়িক বন্ধ থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জলপাইয়ের টক-মিষ্টি আচার

ফিচার ডেস্ক
ছবি পাঠিয়েন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা
ছবি পাঠিয়েন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা

জলপাইয়ের মৌসুমে অনেক পদের আচারের মধ্য়ে এক পদের টক-মিষ্টি আচার না হলে হয়? টক-মিষ্টি আচার বাড়ির সব বয়সীরা খেতে ভালোবাসে। আপনাদের জন্য জলপাইয়ের টক-মিষ্টি আচারের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা

উপকরণ

জলপাই সেদ্ধ এক কেজি, চিনি এক কাপ, লবণ ও বিট লবণ স্বাদমতো, ভাজা শুকনা মরিচের গুঁড়া এক টেবিল চামচ, সরিষাবাটা ২ টেবিল চামচ, পাঁচফোড়ন ২ টেবিল চামচ, সরিষার তেল ১ কাপ, জর্দা রং সামান্য বা ইচ্ছে অনুযায়ী।

প্রণালি

জলপাই সেদ্ধ করে চটকে নিন। অন্য একটি বাটিতে চিনি, লবণ, বিট লবণ, শুকনা মরিচ ভাজা গুঁড়া, সরিষা বাটা, পাঁচফোড়ন, সিরকা দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। এবার কড়াইতে সরিষার তেল গরম হলে রসুনের কোয়ার ফোড়ন দিন। পরে মাখিয়ে রাখা জলপাই দিয়ে নেড়েচেড়ে রান্না করুন। জলপাই থেকে তেল ছেড়ে এলে চুলার তাপ কমিয়ে সামান্য জর্দা রং দিয়ে নেড়েচেড়ে নামিয়ে নিন। তৈরি হয়ে গেল জলপাইয়ের টক-মিষ্টি আচার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চার জেলায় কর্মী নেবে সিটি ব্যাংক, আবেদন শেষ ১৬ নভেম্বর

বিএনপির ফাঁকা রাখা ঢাকার আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন তাসনিম জারা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসা থেকে ছাত্রদল নেতার লাশ উদ্ধার

কর্মী নিয়োগ দেবে কেয়ার বাংলাদেশ, বেতন ৪৫ হাজার টাকা

রাস্তার পাশে জ্বালানি তেল বিক্রি সাময়িক বন্ধ থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চালের কেজি ১৩ হাজার টাকা, পেছনের কারিগর কে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ২২
বিশ্বের সবচেয়ে দামি চাল জাপানের কিনমেমাই প্রিমিয়াম। ছবি: উবাই ডট কম
বিশ্বের সবচেয়ে দামি চাল জাপানের কিনমেমাই প্রিমিয়াম। ছবি: উবাই ডট কম

হংকং শহরের ব্যস্ত বিকেলে ছোট্ট এক সুশি রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে জাপানি শেফ কেনইচি ফুজিমোতো হাতে নিলেন একটি কালো বাক্স। তার ওপর সোনালি অক্ষরে লেখা ‘ওয়ার্ল্ডস বেস্ট রাইস’, কেজি ১০৯ ডলার!

ফুজিমোতো ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ‘মিশেলিন তারকা’ পাওয়া সুশি মাস্টারদের অধীনে কাজ করেছেন। অসংখ্য জাতের জাপানি চাল তাঁর হাতে রান্না হয়েছে। তবু আজকের বাক্সটি তাঁর কাছে নতুন। বাক্সের ভেতর রয়েছে ২০১৬ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস স্বীকৃত বিশ্বের সবচেয়ে দামি চাল—কিনমেমাই প্রিমিয়াম।

কিন্তু দাম বেশি হলেই কি স্বাদে শ্রেষ্ঠ হওয়া যায়? ফুজিমোতো সেই উত্তর খুঁজতে হাঁড়িতে চাল চড়ালেন। তিনি হাতে পেয়েছিলেন মাত্র ৪২০ গ্রাম চাল। পরীক্ষা করার সুযোগ কম। তিনি দ্রুত চাল ধুয়ে, অল্প সময় ভিজিয়ে রেখে হাঁড়িতে চাপালেন। ঢাকনা খোলার পর রান্না করা দানাগুলো ঝিনুকের মুক্তার মতো চকচক করছিল। আকার নিখুঁত, হালকা ঘ্রাণ, পরিষ্কার ঝিলিক! তবে রেস্তোরাঁয় এই চাল যে চলবে না, সেটি বুঝতে পারলেন। দাম এত বেশি যে অতিথিদের বাজেট তিন গুণ হয়ে যাবে। এত দামে কে খাবে!

জাপানের চাল

জাপানে চাল দিয়ে তৈরি খাবারের ইতিহাস অনেক পুরোনো। সুশির স্বাদের ৮০ শতাংশ নির্ভর করে চালের ওপর। এমনটাই বলেন জাপানের শীর্ষস্থানীয় শেফরা। তিন হাজার বছর ধরে জাপানে চালকে পবিত্র খাবার হিসেবে মনে করা হয়। আজ দেশটিতে তিন শর বেশি জাতের ধান উৎপন্ন হয়। বৈচিত্র্য, স্বাদ, ঘ্রাণ—সব মিলিয়েই জাপানি চালের নিজস্বতা তৈরি হয়েছে। সুশি, সাকে, মোচি ইত্যাদি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়লেও জাপানি চালের রপ্তানি তেমন সফলতা পায়নি। এই হতাশাই একজন মানুষকে নতুন পথে চিন্তা করতে বাধ্য করে।

কেইজি সাইকা, চেয়ারম্যান, টয়ো রাইস করপোরেশন। ছবি: সিএনএন
কেইজি সাইকা, চেয়ারম্যান, টয়ো রাইস করপোরেশন। ছবি: সিএনএন

এক স্বপ্নবাজ বৃদ্ধের উদ্যোগ

ওয়াকায়ামা প্রিফেকচারের টয়ো রাইস করপোরেশনের চেয়ারম্যান কেইজি সাইকা। এখন তাঁর বয়স ৯১ বছর। তাঁর এই অভিনব উদ্যোগের গল্পটা শুরু হয় ২০১৬ সালে। সাইকার স্বপ্ন ছিল, বিজ্ঞাপনে টাকা খরচ না করে জাপানি চালকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরা। তখনই তাঁর মনে হলো গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের কথা। তিনি ভাবলেন, এমন কিছু তৈরি করতে হবে, যা আগে কেউ করেনি। এটি বেশ সাহসী উদ্যোগ ছিল। তিনি তৈরি করলেন কিনমেমাই প্রিমিয়াম, যার দাম রাখা হলো প্রকৃত মূল্যের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি, প্রতি কেজি ১০৯ ডলার। বিক্রি হবে কি? এ নিয়ে সন্দেহ ছিল।

শুধু দাম বাড়িয়ে নয়, গুণেও বিশ্বের সেরা

কিনমেমাই প্রিমিয়াম আসলে শুধু দামি চাল নয়; এটি তৈরির প্রতিটি ধাপে রয়েছে ভীষণ যত্ন ও বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া।

কিনমেমাই প্রিমিয়াম চালের প্যাকেট। এ চালের প্রতি কেজির দাম ১০৯ মার্কিন ডলার। ছবি: সংগৃহীত
কিনমেমাই প্রিমিয়াম চালের প্যাকেট। এ চালের প্রতি কেজির দাম ১০৯ মার্কিন ডলার। ছবি: সংগৃহীত

বাছাই: প্রতিবছর প্রায় ৫ হাজার জাতের চাল থেকে ৪ থেকে ৬টি সেরা জাত বেছে নেওয়া হয়। স্বাদের পাশাপাশি দানার এনজাইম কার্যকারিতা পর্যন্ত পরীক্ষা করেন সাইকা।

মজুত করা: চালের দানা কয়েক মাস রেখে দেওয়া হয়। এতে চালের মধ্যে মিষ্টতা, ঘ্রাণ ও পুষ্টিগুণ বাড়ে।

সীমিত উৎপাদন: কিনমেমাই প্রিমিয়াম খুব সীমিত পরিমাণে উৎপন্ন হয়। প্রতিবছর মাত্র কয়েক শ বাক্স। এর বিশেষত্ব হলো, প্রতিবছর এই চালের মিশ্রণ বদলে যায়। যে বছর যেসব জাতের চাল সবচেয়ে মানসম্পন্ন হয়, সেগুলো বেছে নতুন বার্ষিক ব্লেন্ড তৈরি করা হয়। এই চাল সাধারণত দামি উপহার বা বিশেষ উৎসবে দেওয়া হয়। নির্বাচিত কৃষকদের টোকিওতে ডেকে সম্মান জানানো হয়।

যুদ্ধোত্তর দুর্ভিক্ষ থেকে চালের প্রতি প্রেম

সাইকাকে চালের প্রতি গভীর আগ্রহী করে তুলেছিল শৈশবের এক ঘটনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সেই সময় ঘূর্ণিঝড় টাইফুন মাকুরাজাকির কারণে চারদিকের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বীজ, মাছ, পাখি ইত্যাদি যে যা সংগ্রহ করতে পারতেন, সেগুলো দিয়ে কোনোভাবে দিন পার করতেন। সেই দুর্ভিক্ষের অভিজ্ঞতা চালের প্রতি তাঁর আবেগ তৈরি করে দেয়। খাবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং বাঁচার তাগিদ থেকে জন্ম নেয় তাঁর আজীবনের লক্ষ্য—জাপানি চালকে আরও উন্নত করা।

৯১ বছর বয়সেও প্রতিদিন কারখানায়

৯১ বছর বয়সেও সাইকা আজও প্রতিদিন কাজ করেন। বয়স বাড়লেও তাঁর গতি কমেনি। জীবনের অভিজ্ঞতা তাঁকে আরও দৃঢ় করেছে। তাই এখনো একই উদ্যমে তিনি কর্মক্ষেত্রে হাজির হন, নিজের কাজ শেষ করেন এবং আশপাশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে যান।

কিনমেমাই প্রিমিয়াম শুধু দামি চাল নয়, এটি একজন মানুষের জীবনের গল্প, বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন, কৃষকের পরিশ্রম এবং জাপানের চাল-সংস্কৃতির ঐতিহ্যের প্রতীক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চার জেলায় কর্মী নেবে সিটি ব্যাংক, আবেদন শেষ ১৬ নভেম্বর

বিএনপির ফাঁকা রাখা ঢাকার আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন তাসনিম জারা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসা থেকে ছাত্রদল নেতার লাশ উদ্ধার

কর্মী নিয়োগ দেবে কেয়ার বাংলাদেশ, বেতন ৪৫ হাজার টাকা

রাস্তার পাশে জ্বালানি তেল বিক্রি সাময়িক বন্ধ থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত