Ajker Patrika

হলুদ কি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
হলুদ ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি
হলুদ ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

ডায়াবেটিস আজকের দিনে সবচেয়ে সাধারণ ও দীর্ঘমেয়াদি রোগগুলোর একটি। এই রোগে আক্রান্ত হলে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না বা সঠিকভাবে ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না। ইনসুলিন হলো একটি হরমোন, যা খাবার থেকে পাওয়া গ্লুকোজকে (শর্করা) শক্তিতে রূপান্তর করে। ইনসুলিনের ঘাটতি বা সেটি কাজ করতে না পারলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে ডায়াবেটিস দেখা দেয়। দীর্ঘদিন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কিডনি, চোখ, স্নায়ু ও হৃদ্‌যন্ত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও ওষুধের পাশাপাশি কিছু ভেষজ উপাদানও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এর মধ্যে হলুদ অন্যতম।

হলুদ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে প্রধানত এর সক্রিয় উপাদান কারকিউমিনের কারণে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, কারকিউমিনের কিছু বৈশিষ্ট্য রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে এবং ডায়াবেটিস-সম্পর্কিত জটিলতা কমাতে সহায়ক হতে পারে। ২০১৩ সালে ‘ডায়াবেটিস কেয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, কারকিউমিন সাপ্লিমেন্ট প্রি-ডায়াবেটিক ব্যক্তিদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে। আলমগীর আলম, খাদ্য-পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

প্রাচীন চিকিৎসায় হলুদের ব্যবহার

হলুদ শুধু রান্নার স্বাদ ও রং বাড়ায় না। বরং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আয়ুর্বেদ ও ইউনানি চিকিৎসায় ওষুধ হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

প্রাচীনকাল থেকেই হলুদ ব্যবহার করা হয়—

  • হজমের সমস্যা দূর করতে
  • যকৃতের কার্যকারিতা উন্নত করতে
  • বাত ও আর্থ্রাইটিস ব্যথা কমাতে
  • ক্ষত বা প্রদাহ সারাতে

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানও হলুদের সম্ভাব্য গুণাগুণ নিয়ে গবেষণা করছে।

হলুদের সক্রিয় উপাদান কারকিউমিন

হলুদের মূল উপাদান কারকিউমিন। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে—

  • কারকিউমিন রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে।
  • এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
  • ডায়াবেটিসের কারণে শরীরে যে প্রদাহ ও কোষের ক্ষতি হয়, কারকিউমিন তা হ্রাস করতে সহায়ক।
  • দীর্ঘ মেয়াদে কারকিউমিন ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা, যেমন স্নায়ুর ক্ষতি, হৃদ্‌রোগ, কিডনির ক্ষতি ইত্যাদি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।

গবেষণায় যা পাওয়া গেছে

২০২১ সালে প্রকাশিত একাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণার পর্যালোচনায় বলা হয়—

  • কারকিউমিন ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
  • এটি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমায়। ফলে শরীর ইনসুলিনকে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে।
  • কারকিউমিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ফলে ডায়াবেটিস-সম্পর্কিত জটিলতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • এমনকি সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রেও নিয়মিত হলুদ খাওয়ার অভ্যাস ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।

গবেষকেরা এ বিষয়ে একমত, হলুদের গুণাগুণ নিশ্চিত হতে মানুষের ওপর আরও বিস্তৃত ও দীর্ঘমেয়াদি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল প্রয়োজন।

হলুদ খাওয়ার উপায়

  • নিয়মিত রান্নায় হলুদ ব্যবহার করা সহজ ও নিরাপদ পদ্ধতি।
  • হলুদের দুধ বা গোল্ডেন মিল্ক প্রদাহ কমাতে ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
  • বাজারে হলুদের নির্যাসযুক্ত ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট পাওয়া যায়। তবে এগুলো খাওয়া শুরুর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সম্ভাব্য ঝুঁকি ও সতর্কতা

যদিও খাবারে ব্যবহৃত পরিমাণ হলুদ সাধারণত নিরাপদ, তবে সাপ্লিমেন্ট আকারে বেশি মাত্রায় কারকিউমিন খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন—

  • বমি বমি ভাব ও অম্বল
  • ডায়রিয়া
  • হজমের সমস্যা
  • দীর্ঘদিন বেশি খেলে লিভারের ক্ষতি

এ ছাড়া যাদের পিত্তথলির সমস্যা আছে, তাদের হলুদ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। তাই সাপ্লিমেন্ট শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য কার্যকর উপায়

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শুধু হলুদের ওপর ভরসা করলে চলবে না। এ রোগ নিয়ন্ত্রণের মূলভিত্তি হলো—

  • সুষম খাদ্যাভ্যাস। শাকসবজি, ফলমূল, আঁশযুক্ত খাবার, ডাল ও পূর্ণ শস্য বেশি খাওয়া। চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কমানো।
  • নিয়মিত ব্যায়াম। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ। অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ বা ইনসুলিন গ্রহণ।

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল রোগ, যা সঠিক যত্ন ও সুস্থ জীবনযাপনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, হলুদে থাকা কারকিউমিন রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে, ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এটি কোনো ওষুধের বিকল্প নয়। এটি চিকিৎসকের পরামর্শ, সুষম খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের পাশাপাশি একটি বিকল্পমাত্র। তাই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে হলুদকে জীবনের অংশ করা যেতে পারে, তবে অবশ্যই সচেতনতা ও সঠিক নির্দেশনা মেনে।

সূত্র: হেলথলাইন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত