Ajker Patrika

জেনারেশন জেড কর্মীরা কেন বাড়ি ছেড়ে অফিসে ফিরতে চাইছেন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
ছবি: ফ্রিপিক
ছবি: ফ্রিপিক

একটা সময় মনে হয়েছিল, ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ মানেই স্বপ্নপূরণ। যাতায়াতের ঝামেলা নেই, সময় বাঁচছে, আবার নিজের মতো করে কাজের স্বাধীনতাও আছে। কিন্তু এখন সেই চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। অবাক করা ব্যাপার হলেও জেনারেশন জেড (যারা আমাদের দেশে জেন-জি নামে বেশি পরিচিত) গ্রুপের কর্মীরা এখন স্বেচ্ছায় অফিসের চার দেয়ালে ফিরতে চাইছেন। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, তাঁরা আর একা একা কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না। এর পেছনে রয়েছে একাকিত্ব, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও পেশাগত উন্নতির অভাবের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

কী সেই কারণগুলো, চলুন দেখে নেওয়া যাক।

নিঃসঙ্গতা ও মানসিক চাপ

দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি থেকে কাজ করার কারণে জেন-জি কর্মীরা মারাত্মকভাবে নিঃসঙ্গতায় ভুগছেন। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় জানা গেছে, এই প্রজন্মের প্রায় ৩৮ শতাংশ কর্মী তাঁদের কাজের পরিবেশের কারণে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন বোধ করছেন। তাঁরা সহকর্মী, সিনিয়র বা ম্যানেজারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ভিডিও কলের মাধ্যমে মিটিং করা হলেও তাতে ব্যক্তিগত আলাপচারিতার উষ্ণতা থাকে না।

জেন-জি কর্মীদের যাঁরা অফিসে ফিরছেন, তাঁরা তাঁদের সৃজনশীল কাজ দিয়ে পুরো কর্মক্ষেত্রের জন্যই নতুন প্রাণশক্তি বয়ে আনছেন। ছবি: সংগৃহীত
জেন-জি কর্মীদের যাঁরা অফিসে ফিরছেন, তাঁরা তাঁদের সৃজনশীল কাজ দিয়ে পুরো কর্মক্ষেত্রের জন্যই নতুন প্রাণশক্তি বয়ে আনছেন। ছবি: সংগৃহীত

অফিসের ক্যানটিনে বসে সহকর্মীদের সঙ্গে গল্প করা, দুপুরের খাবার ভাগ করে নেওয়া অথবা কাজের ফাঁকে একটু হাসি-ঠাট্টা করা, এই ধরনের সামাজিক মেলামেশা তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। একজন জেন-জি কর্মী বলেন, ‘আমি ইচ্ছা করেই এমন চাকরি খুঁজেছি, যেখানে একটি নির্দিষ্ট অফিস আছে, যাতে আমি সহকর্মী ও বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতে পারি।’

পেশাগত উন্নতি ও দিকনির্দেশনার অভাব

নতুন কর্মীদের জন্য সরাসরি তত্ত্বাবধান ও দিকনির্দেশনা অপরিহার্য। বাড়ি থেকে কাজ করার সময় জেন-জি কর্মীরা সিনিয়রদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাচ্ছেন না। একজন নতুন কর্মী যখন কোনো সমস্যায় পড়েন, তখন অনলাইনে সেটি সমাধানের চেষ্টা করা আর সরাসরি সিনিয়রের কাছে গিয়ে শেখার মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে। অফিসে থাকলে একজন কর্মী তাঁর সিনিয়রের কাজ দেখে অনেক কিছু শিখতে পারেন, তাঁকে সরাসরি প্রশ্ন করে তাৎক্ষণিক সমাধান পেতে পারেন। কর্মজীবনের শুরুতে এই ধরনের হাতে-কলমে শেখার গুরুত্ব অনেক। কিন্তু রিমোট কাজের কারণে এই সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে তাঁদের পেশাগত উন্নতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, অফিসের বাইরে থাকলে তাঁরা ক্যারিয়ারে পিছিয়ে পড়ছেন।

ইনফ্লুয়েন্সারদের হতাশা

আশ্চর্যজনকভাবে যাঁরা তথাকথিত স্বাধীন পেশায় আছেন, যেমন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার বা ফ্রিল্যান্সার, তাঁরাও প্রচণ্ড একাকিত্বে ভুগছেন। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইনফ্লুয়েন্সারদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ তাঁদের কাজের কারণে নিঃসঙ্গতা অনুভব করেন। কারণ, তাঁদের কাজের প্রকৃতির কারণে বেশির ভাগ সময় একা একা কাটাতে হয়। কনটেন্ট তৈরি করা, এডিট করা, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা—এই পুরো প্রক্রিয়াটিই বেশ বিচ্ছিন্ন। বাইরে থেকে চাকচিক্য মনে হলেও এই পেশাটি তাঁদের সামাজিক জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই জেন-জির এক-তৃতীয়াংশ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো অফিসে কাজ করার কথা ভাবছেন। এটি প্রমাণ করে, মানুষের সামাজিক জীবনের গুরুত্ব পেশা বা কাজের স্বাধীনতার চেয়েও অনেক বেশি।

কর্মক্ষেত্রে নতুন প্রাণশক্তি

জেন-জি কর্মীদের যাঁরা অফিসে ফিরছেন, তাঁরা পুরো কর্মক্ষেত্রের জন্যই নতুন প্রাণশক্তি বয়ে আনছেন। এই কর্মীরা অফিসের গতানুগতিক পরিবেশে নতুন মাত্রা যোগ করবেন তাঁদের নিজস্ব সংস্কৃতি, আধুনিক চিন্তাভাবনা ও সৃজনশীলতা দিয়ে। তাঁদের প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে অফিসের কাজ আরও গতিশীল ও আধুনিক করে তুলবেন। এভাবেই জেন-জির ফিরে আসা অফিসের সংস্কৃতিতে ইতিবাচক ও সতেজ পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

জেন-জি কর্মীদের অফিসে ফিরে আসার এই প্রবণতা শুধু কর্মক্ষেত্রের জন্য নয়। বরং সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি প্রমাণ করে, প্রযুক্তি যত উন্নতই হোক না কেন, মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগ ও সরাসরি সামাজিক মেলামেশার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। অফিস শুধু কাজ করার জায়গা নয়, এটি একটি সামাজিক কেন্দ্র। এখানে মানুষ বন্ধুত্ব গড়ে তোলে, একে অপরের কাছ থেকে শেখে ও নিজেদের একাকিত্ব দূর করে। তাই কর্মীদের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ কর্মপরিবেশ তৈরি করা এখন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য জরুরি; যেখানে রিমোট কাজের সুবিধা থাকলেও অফিসের সামাজিক ও পেশাগত দিকগুলো বজায় থাকে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেটের ক্ষুধায় খেয়েছেন ২৯ চামচ, ১৯ টুথব্রাশ

জাতিসংঘে বিশাল বহর নিয়ে গিয়ে পতিত সরকারের চর্চা করল অন্তর্বর্তী সরকার: টিআইবি

পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

স্ত্রীকে নিয়ে টানাটানি করা সেই দুই পুরুষের জামিন, কারাফটকে উত্তেজনা

উত্তর দিক থেকে সিগন্যাল নেই—শাপলা প্রতীক না পাওয়ার কারণ জানালেন হাসনাত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত