Ajker Patrika

পৃথিবীর যে ১০ স্থানে মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
সাধারণ মানুষের প্রবেশ সম্পর্ণ নিষেধ এমন ১০টি জায়গা আছে পৃথিবীতে। ছবি: কোলাজ
সাধারণ মানুষের প্রবেশ সম্পর্ণ নিষেধ এমন ১০টি জায়গা আছে পৃথিবীতে। ছবি: কোলাজ

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা অনেক জায়গা মানুষের কৌতূহল বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু সব কৌতূহলের শেষ হয় না। কারণ, কিছু কিছু জায়গা রহস্যে ঘেরা, আবার কিছু স্থান এতটাই বিপজ্জনক যে সেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

মানুষ স্বভাবতই নতুন কিছু জানতে ও দেখতে ভালোবাসে। সেই ভালোবাসার টানে আমরা প্রতিনিয়ত ছুটে চলি পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেখানে আগ্রহের কমতি না থাকলেও আমাদের প্রবেশাধিকার নেই। নিরাপত্তা, পরিবেশ সুরক্ষা বা ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে এসব জায়গা মানুষের নাগালের বাইরে রাখা হয়েছে।

এরিয়া ৫১, যুক্তরাষ্ট্র

একটি গোপন সামরিক ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের এরিয়া ৫১। ছবি: উইকিপিডিয়া
একটি গোপন সামরিক ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের এরিয়া ৫১। ছবি: উইকিপিডিয়া

দেশটির দক্ষিণ নেভাডায় অবস্থিত একটি গোপন সামরিক ঘাঁটি এরিয়া ৫১। এটি মূলত অস্ত্র ও বিমান পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে একে ঘিরে আছে অনেক ষড়যন্ত্রতত্ত্ব। অনেক মানুষ বিশ্বাস করে, এখানে ভিনগ্রহের প্রাণী বা এ-সম্পর্কিত তথ্য লুকানো হয়। সাধারণ মানুষের জন্য এটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং মার্কিন সরকারও এরিয়া ৫১-এর অস্তিত্ব সম্পর্কে খুব বেশি প্রকাশ করে না।

লাসকাক্স গুহা, ফ্রান্স

মানুষের নিশ্বাস ও স্পর্শে এ গুহার ঐতিহাসিক শিল্পকর্মগুলোর ক্ষতি হতে পারে, এই আশঙ্কায় গুহাটিতে জনসাধারণের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ছবি: ইউকিপিডিয়া
মানুষের নিশ্বাস ও স্পর্শে এ গুহার ঐতিহাসিক শিল্পকর্মগুলোর ক্ষতি হতে পারে, এই আশঙ্কায় গুহাটিতে জনসাধারণের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ছবি: ইউকিপিডিয়া

প্রত্নতত্ত্বের এক অমূল্য ভান্ডার এটি। ফ্রান্সের এই গুহায় প্রায় ১৭ হাজার ৩০০ বছর আগের প্যালিওলিথিক যুগের চিত্রকর্ম দেখতে পাওয়া যায়। গুহার দেয়ালে আঁকা সেই পুরোনো ছবিগুলোতে দেখা যায় বিভিন্ন গবাদিপশু, হরিণ ও বাইসনের মতো প্রাণীর জীবন্ত চিত্র। তবে মানুষের নিশ্বাস ও স্পর্শে এই ঐতিহাসিক শিল্পকর্মগুলোর ক্ষতি হতে পারে, এমন আশঙ্কায় ১৯৬৩ সাল থেকে এই গুহা জনসাধারণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।

প্রাভচিকা ব্রানা, চেক প্রজাতন্ত্র

চেক প্রজাতন্ত্রের অন্যতম স্থাপত্য হলো প্রাভচিকা ব্রানা। এটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় বেলেপাথরের ধনুক। ১৯৮২ সালের আগপর্যন্ত এটি দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকদের আকর্ষণ করত। কিন্তু ক্ষয় রোধ করার জন্য এখন সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই প্রাকৃতিক বেলেপাথরের ধনুকটি খুব শিগগির ভেঙে যেতে পারে, তাই এটি নিষিদ্ধ স্থান করা হয়।

সার্টসে দ্বীপ, আইসল্যান্ড

আইসল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলের কাছে অবস্থিত একটি ছোট দ্বীপ। ১৯৬৩ সালে একটি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে এই দ্বীপের সৃষ্টি হয়েছিল। তাই এটি পৃথিবীর নতুন দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। দ্বীপটি এখন বিজ্ঞানীদের গবেষণার জন্য একটি খোলা ল্যাবরেটরি। এখানে কীভাবে প্রকৃতি নিজে থেকেই নতুন বাস্তুতন্ত্র তৈরি করে, তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য শুধু কয়েকজন বিজ্ঞানী ও ভূতাত্ত্বিকের প্রবেশাধিকার আছে।

উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপ, ভারত

এখানে বাস করে সেন্টিনেলিজ জাতির মানুষেরা। এরা বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ রক্ষা করতে আগ্রহী নয়। ছবি: উইকিপিডিয়া
এখানে বাস করে সেন্টিনেলিজ জাতির মানুষেরা। এরা বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ রক্ষা করতে আগ্রহী নয়। ছবি: উইকিপিডিয়া

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের এই দ্বীপ পৃথিবীর বিচ্ছিন্ন জায়গাগুলোর অন্যতম। এখানে বাস করে সেন্টিনেলিজ উপজাতি, যারা বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ রক্ষা করতে আগ্রহী নয়। তাদের নিজেদের সংস্কৃতি ও স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার জন্য তারা যেকোনো বহিরাগতকে আক্রমণ করে বসে। ভারত সরকার এই উপজাতিকে সুরক্ষা দিয়েছে এবং যেকোনো দর্শনার্থীর জন্য এই দ্বীপে প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

হার্ড আইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া

অ্যান্টার্কটিকা ও মাদাগাস্কারের মাঝখানে অবস্থিত এই দ্বীপ রাজনৈতিকভাবে অস্ট্রেলিয়ার অংশ। দ্বীপটি আসলে দুটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি নিয়ে গঠিত এবং এর সম্পূর্ণ ভূমি অনুর্বর। প্রকৃতির এই ভঙ্গুর পরিবেশকে রক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকার এই দ্বীপে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।

স্নেক আইল্যান্ড, ব্রাজিল

ব্রাজিলের এই দ্বীপ হাজার হাজার বিষধর সাপের বাস। অতিরিক্ত বিপজ্জনক হওয়ায় দ্বীপটিতে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ। ছবি: উইকিপিডিয়া
ব্রাজিলের এই দ্বীপ হাজার হাজার বিষধর সাপের বাস। অতিরিক্ত বিপজ্জনক হওয়ায় দ্বীপটিতে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ। ছবি: উইকিপিডিয়া

নাম শুনেই বোঝা যায়, এটি সাপের বাসস্থান। ব্রাজিলের এই দ্বীপ হাজার হাজার বিষধর সাপের জন্য পরিচিত; বিশেষ করে এখানে আছে ব্যাপকসংখ্যক মারাত্মক গোল্ডেন ল্যান্সহেড সাপ। ধারণা করা হয়, এই ছোট্ট দ্বীপে প্রায় ৪ হাজার সাপ রয়েছে। অতিরিক্ত বিপজ্জনক হওয়ার কারণে ব্রাজিল সরকার এখানে মানুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

কিন শি হুয়াংয়ের সমাধি, চীন

চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াংয়ের সমাধি ২ হাজার বছরের বেশি সময় ধরে একটি পিরামিডের নিচে সমাহিত রয়েছে। এটি ইতিহাসের অন্যতম এক আবিষ্কার, যেখানে বিখ্যাত টেরাকোটা সেনাবাহিনী পাওয়া গিয়েছিল। যদিও সমাধির একটি অংশ উন্মুক্ত করা হয়েছে। তবে এর প্রধান অংশ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। চীন সরকার সম্রাটের প্রতি শ্রদ্ধা ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বজায় রাখার জন্য এই সমাধি খনন নিষিদ্ধ করেছে।

ডুমসডে ভল্ট, নরওয়ে

এটি পৃথিবীর আপৎকালীন বীজভান্ডার। বীজ সংরক্ষণের নিরাপত্তার জন্য এখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। ছবি: উইকিপিডিয়া
এটি পৃথিবীর আপৎকালীন বীজভান্ডার। বীজ সংরক্ষণের নিরাপত্তার জন্য এখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। ছবি: উইকিপিডিয়া

নরওয়ের আর্টিক অঞ্চলের সালবার্ড দ্বীপে অবস্থিত এই ভল্ট একটি বৈশ্বিক বীজব্যাংক। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করা লক্ষাধিক বীজ এখানে নিরাপদে সংরক্ষণ করা হয়, যাতে কোনো বৈশ্বিক দুর্যোগ বা সংকটের সময় খাদ্যশস্যের অভাব না হয়। এই জায়গায় জনসাধারণের প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। শুধু বিশেষ প্রয়োজনে এই ব্যাংক খোলা হয়।

ডুলস বেস, যুক্তরাষ্ট্র

নিউ মেক্সিকোর কলোরাডো সীমান্তের কাছে অবস্থিত ডুলস শহরটি নানা রহস্যে ঘেরা। সেখানে একটি বিশাল ভূগর্ভস্থ পরীক্ষাগার রয়েছে বলে শোনা যায়। অনেকে বিশ্বাস করে, সেখানে উন্নত প্রযুক্তি এবং মানুষ ও অন্য প্রাণীর হাইব্রিড নিয়ে গোপন গবেষণা করা হয়। জায়গাটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে সুরক্ষিত ও নিষিদ্ধ স্থানগুলোর অন্যতম।

সূত্র: হলিডেফি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত