Ajker Patrika

অনলাইন গালির সংস্কৃতি: ইংরেজিতে কীভাবে গালি দেন আপনি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
ইন্টারনেটে শতবর্ষ পুরোনো গালিগালাজও নতুন অর্থ ও তাৎপর্য পেয়েছে। ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
ইন্টারনেটে শতবর্ষ পুরোনো গালিগালাজও নতুন অর্থ ও তাৎপর্য পেয়েছে। ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

কোনো কিছুর ওপর মন খারাপ, গালি দিন। মন ভালো হয়ে যাবে। বিরক্তিকর মানুষকে গালি দিন, মন শান্ত হবে। নিজের ওপর বিরক্ত, নিজেকেই দিয়ে বসুন একটা গালি। মন ভালো না হলেও হালকা লাগবে। তাই বিজ্ঞানীরা বলেন, গালির আছে বিশাল শক্তি।

ভাষা যেহেতু এক জীবন্ত সত্তা, তাই এর রূঢ় অংশ হিসেবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিকশিত হয়েছে গালি। ইন্টারনেটের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা বা চলতি ভাষা মূলত ইংরেজি। বেশির ভাগ মানুষ সেখানে ইংরেজিতে লেখেন। ফলে বইয়ের ইংরেজি আর ইন্টারনেট জগতের ইংরেজির মধ্যেও পার্থক্য আছে। একসময় কেবল বিজনেস ইংলিশ বা মুভি ইংলিশের চল থাকলেও এখন সোশ্যাল মিডিয়ার ইংরেজিই মুখ্য। ভালো হোক বা খারাপ, এর মানে হলো যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি নয়, তাদের জন্যও এখন গালি বা শপথ বা ‘স্কয়ার’ নেওয়াটা বেশ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। ফলে ইন্টারনেটে শতবর্ষ পুরোনো গালিগালাজও নতুন অর্থ ও তাৎপর্য পেয়েছে।

গবেষকেরা বলছেন, গালি দেওয়া এখন আরও মজাদার হয়ে উঠেছে। ঠিক ক্রসওয়ার্ড বা নিউইয়র্ক টাইমস স্ট্র্যান্ডস খেলার মতো এটি এখন মানসিক অনুশীলন।

গবেষণার ফলাফল।
গবেষণার ফলাফল।

বেঞ্জামিন বার্গেনের একটি বই আছে, ‘হোয়াট দ্য এফ: হোয়াট স্যয়ারিং রিভিলস অ্যাবাউট আওয়ার ল্যাংগুয়েজ, আওয়ার ব্রেইন অ্যান্ড আওয়ারসেলভস’। সে বইয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আগে আপনি যে মিডিয়া দেখতেন, তা ছিল অত্যন্ত সম্পাদিত। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে হঠাৎ আমরা মানুষের ঘরোয়া ভাষা সরাসরি দেখতে পাচ্ছি। যখন আমরা মানুষের অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ দেখি এবং তাতে গালিগালাজ বেশি থাকে। এর মানে হলো, আমরা সেগুলোর সঙ্গে আরও বেশি পরিচিত হচ্ছি, যা এটিকে স্বাভাবিক করে তুলেছে। ফলে মানুষজন এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।’

কিন্তু বিশ্বজুড়ে কোন দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি গালির বাহার দেখাচ্ছে, জানেন? ধাঁধা সমাধান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ড টিপস ও মেন্টাল ফ্লসের এক নতুন গবেষণা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করেছে। ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড ও মোনাশ ইউনিভার্সিটির ডেটা বিশ্লেষণ করে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। গবেষকেরা ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন ইংরেজি ভাষার এক্স পোস্ট বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন দেশের ব্যবহারকারীদের গালি ব্যবহারের হার খুঁজে বের করেছেন।

কে কত বেশি গালি দেয়

গবেষণায় দেখা গেছে, অনলাইনে ইংরেজি ভাষায় বেশি গালি দেওয়া দেশের তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন ব্যবহারকারীরা যুক্তরাজ্যের ব্যবহারকারীদের চেয়ে ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি গালি ব্যবহার করে। কম গালি দেওয়া চারটি দেশ মধ্যপ্রাচ্যের। আর সবচেয়ে কম গালি দেওয়া ১২টি দেশ এশিয়া বা আফ্রিকার। কুয়েতের ব্যবহারকারীরা সবচেয়ে কম গালি দেয়। প্রতি ১ হাজার পোস্টে মাত্র ৩ দশমিক ৬টি পোস্টে গালি থাকে!

এই গবেষণায় কেবল ইংরেজি ভাষার টুইটগুলো গণনা করা হয়েছে। গবেষকদের মতে, ইংরেজি যাদের দ্বিতীয় ভাষা, তারা গালি কম ব্যবহার করতে পারে। এর কারণ হলো, গালি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে ধরনের সাংস্কৃতিক জ্ঞান প্রয়োজন এবং কখন তা ব্যবহার করা উচিত, সেই সূক্ষ্ম বোধগুলো তাদের থাকে না। কারণ, সেগুলো তাদের পক্ষে শেখা কঠিন।

শহর ও মহাদেশের চ্যাম্পিয়নরা

শুধু দেশ নয়, গবেষকেরা শহর ও মহাদেশভিত্তিক গালি ব্যবহারের প্রবণতাও তুলে ধরেছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গালি দেওয়া শহর হলো বাল্টিমোর ও মেরিল্যান্ড। সেখানে প্রতি ১ হাজার টুইটে ৭৮ দশমিক ২টি গালিযুক্ত পোস্ট দেওয়া হয়। আমেরিকার মেরিল্যান্ড রাজ্যটিতে বেশি গালি ব্যবহার করা হয়। সেখানে প্রতি ১ হাজার টুইটে ৬৬ দশমিক ৩টি গালিমূলক কথা থাকে। অন্যদিকে লেক্সিংটন, কেন্টাকি এবং সাউথ ডাকোটা রাজ্যের মানুষ সবচেয়ে কম গালি দেয়।

ইউরোপে সবচেয়ে বেশি গালি দেওয়া শহর হলো নিউক্যাসল। সেখানে প্রতি ১ হাজার টুইটে ৩৪ দশমিক ৫টি গালিযুক্ত পোস্ট থাকে। এরপরই আছে লিডস; যেখানে প্রতি ১ হাজার পোস্টের ৩৩ দশমিক ১টিতে গালি থাকে।

উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বেশি গালি দেওয়া শীর্ষ পাঁচটি শহরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। উত্তর আমেরিকার বাইরে কলম্বিয়ার কালি নামের শহরটিতে বেশি গালি দেওয়া হয়। তবে কালি শহরটি কিন্তু গালি দেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রথম হলো চিলির সান্তিয়াগো। তারা কালির চেয়ে ২ দশমিক ৩ গুণ বেশি গালি দেয়।

অন্যান্য দেশের বিশেষ প্রবণতা

গবেষণায় আরও কিছু দেশের গালি ব্যবহারের অনন্য দিক উঠে এসেছে।

অস্ট্রেলিয়া: অনলাইনে গালি ব্যবহারে তৃতীয় স্থানে থাকলেও অস্ট্রেলিয়ানরা তাদের খ্যাতি অনুযায়ী শীর্ষে নেই। তাই গবেষকেরা সন্দেহ করছেন, তারা হয়তো মুখোমুখি কথোপকথনের জন্য গালিগুলো জমিয়ে রাখে! তবে অস্ট্রেলিয়ান ও ব্রিটিশদের গালি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমেরিকানদের চেয়ে বেশি সৃজনশীল মনে করা হয়।

সিঙ্গাপুর: পাসপোর্টের শক্তিতে নম্বর ওয়ান হলেও গালি ব্যবহারে নবম স্থানে আছে সিঙ্গাপুর।

আয়ারল্যান্ড: ষষ্ঠ স্থানে থাকা আইরিশরা তাদের গালিকে সৃজনশীলতার চূড়ান্তে নিয়ে গেছে। গবেষকেরা তাকে ‘উষ্ণ ব্যঞ্জনাময়’ বলে উল্লেখ করেছেন। আইরিশদের রসিকতা, আবেগ ও গল্প বলার ঢঙে গালি ব্যবহার একধরনের আকর্ষণ যোগ করে।

নিউজিল্যান্ড: পঞ্চম স্থানে থাকা নিউজিল্যান্ডের লোকেরা হালকা মেজাজে হালকা গালি ব্যবহার করে। ফলে তা খুব কম আক্রমণাত্মক।

কানাডা: চতুর্থ স্থানে থাকা কানাডীয়রা ভদ্রতার সঙ্গে গালিগালাজকে মিশিয়ে দেয়। তারা রসিকতা বা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে গালি ব্যবহার করে।

স্পেন, ইতালি, গ্রিস, সার্বিয়া, তুরস্ক, রাশিয়া ও চিলি: এই দেশগুলো আবেগপ্রবণ ভাষা, তীব্র বিতর্ক ও হাস্যরসের সঙ্গে গালি মিশিয়ে অনলাইনে তাদের মতামত আরও জোরালো করে তোলে।

নাইজেরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা: এই দেশগুলোর ব্যবহারকারীরা ইংরেজি, স্থানীয় ভাষা ও ক্রিয়োল (যেমন পিডগিন) মিশিয়ে গালি ব্যবহার করে। এ বৈশিষ্ট্য তাদের অনলাইন কথোপকথনে একটি অনন্য বহুভাষিক চরিত্র তৈরি করেছে বলে গবেষকদের মত।

সব মিলিয়ে, গালি বা ভালগার ল্যাঙ্গুয়েজের ধারণা প্রসঙ্গে গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এর মধ্যে শপথ, অশ্লীলতা, অপমান ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। একটি শব্দের আপত্তিকর অর্থ পুরোপুরি নির্ভর করে সেটি ব্যবহারের প্রেক্ষাপটের ওপর। যেমন ‘শিট’ শব্দটি কর্মক্ষেত্রে অশালীন হলেও নৈমিত্তিক অনলাইন আড্ডায় স্বাভাবিক হতে পারে।

সূত্র: স্টার্স ইনসাইডার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবশালী ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ গ্রেপ্তার

জুলাই সনদে স্বাক্ষর নিয়ে শেষ মুহূর্তে এসে অনিশ্চয়তা, সন্ধ্যায় ‘অতি জরুরি’ বৈঠক

ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ক্রিপ্টো কেলেঙ্কারি, ১৪ বিলিয়ন ডলারের কয়েন জব্দ

বিহার নির্বাচন: লড়বেন না প্রশান্ত কিশোর, ‘নিশ্চিত পরাজয়’ দেখছেন বিজেপি জোটের

প্রাপ্তবয়স্কদের কনটেন্ট চালু করছে চ্যাটজিপিটি, শিশুদের নিরাপত্তা কোথায়

এলাকার খবর
Loading...