Ajker Patrika

ত্বক ও চুলের যত্নে কার্যকরী তিন পাতা

ফিচার ডেস্ক
মডেল: নিকিতা। ছবি: মঞ্জু আলম
মডেল: নিকিতা। ছবি: মঞ্জু আলম

ঋতুর হিসাবে এটি মূলত শরৎকাল। এ সময়ের বৃষ্টির চরিত্র খানিক তরল। অর্থাৎ হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি তো আবার খাঁ খাঁ রোদ। এই যেমন কয়েক দিন ধরে প্রায় সারা দেশে চলছে গুঁড়ি গুঁড়ি কিংবা মুষলধারে বৃষ্টি। খুব সহজে আবহাওয়ার এই খেয়ালি আচরণের ছাপ পড়ে মানুষের শরীরে, বিশেষ করে ত্বক ও চুলে। এ সময়ে তাই ত্বক ও চুলের যত্নে দরকার বাড়তি সতর্কতা। তবে একটি বিষয় মনে রাখা যেতে পারে, প্রকৃতিতে রয়েছে এর সমাধান।

ত্বকের যত্নে নিম আর তুলসীর জাদু

এমন আবহাওয়ায় ঘাম শুকাতে চায় না; বরং ত্বকে জমে থাকে। তাই এ সময়টায় ত্বকে দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত তৈলাক্ততার সমস্যা, র‍্যাশ, ঘামের গন্ধ, চুলকানি, খোসপাঁচড়া ইত্যাদি। উচ্চ আর্দ্রতার কারণে ঘামে কিংবা বৃষ্টিতে ভেজা কাপড় কিংবা অস্বস্তিকর আবহাওয়া ত্বকের জন্য অনুকূল নয়। একটু আঁটসাঁট কাপড় পরলে এ সমস্যা আরও বাড়ে। তখন ত্বক হয়ে ওঠে জীবাণু ও ছত্রাকের আবাসস্থল। একে অবহেলা করলে আন্ডার আর্ম, পায়ের আঙুল এবং ঊরুর ভেতরের দিকের ত্বকে র‍্যাশ, চুলকানি অথবা সংক্রমণ হতে পারে। এসব সমস্যার সমাধানে বহুদিন ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে নিম বা তুলসী মেশানো পানি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তুলসী কিংবা নিম মেশানো পানিতে গোসল ক্ষতিকর ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমায়। এগুলো কম থাকলে শরীর থাকে সতেজ। রাসায়নিকযুক্ত অ্যান্টিসেপটিকের চেয়ে নিম কিংবা তুলসী বেশি নিরাপদ এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের উপযোগী।

চুলের যত্নে মেহেদিপাতা

  • চুলের যত্নে মেহেদিপাতা ব্যবহারের চল আমাদের অঞ্চলে বহু প্রাচীন। ফলে সন্দেহ ছাড়াই এটি ব্যবহার করতে পারেন।
  • স্যাঁতসেঁতে ও আর্দ্র পরিবেশ চুলের ওপর এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত আর্দ্রতা চুলে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে।

মেহেদী-পাতা

মেহেদিপাতার উপকারিতা

  • কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক ছাড়াই চুলে প্রাকৃতিক রং দেয়।
  • এটি চুলে পুষ্টি জোগায়, শক্তিশালী করে এবং প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনে।
  • সোজা, প্যাঁচানো, ঢেউখেলানো কিংবা কোঁকড়া—সব ধরনের চুলে উপযোগী মেহেদিপাতা।
  • এটি চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য বজায় রেখে আরও স্বাস্থ্যবান করে তোলে।
  • যাদের চুল পাতলা বা নিস্তেজ, এটি তাদের জন্য চুলে কাঙ্ক্ষিত ঘনত্ব আনতে সহায়ক।
  • এটি প্রতিটি চুলের গায়ে প্রাকৃতিক কোটিং তৈরি করে। এতে চুল হয় দৃঢ়, উজ্জ্বল এবং আরও ঘন।
  • এ সময়ে খুশকি একটি সাধারণ কিন্তু বিব্রতকর সমস্যা হয়ে ওঠে। মেহেদিপাতার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য খুশকি এবং মাথার ত্বকের চুলকানি ছাড়াও লাল ভাব কমাতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
  • নিয়মিত ব্যবহারে মাথার ত্বক স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে।
  • মেহেদিপাতা চুলের প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে কাজ করে, যা বাইরের বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব থেকে চুলকে রক্ষা করে।

নিম-পাতা

নিমের উপকারিতা

  • নিম ত্বক ঠান্ডা করে র‍্যাশ ও জ্বালাভাব কমাতে কার্যকরী।
  • ত্বকের সংক্রমণ রোধে সহায়ক।
  • এটি র‍্যাশ বা লালচে ত্বকে আরাম দেয়।
  • ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল রাখে।

তুলশী-পাতা

তুলসীর উপকারিতা

  • ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস প্রতিরোধে সহায়ক।
  • ত্বক সতেজ করে এবং লালচে ভাব কমায়।
  • তৈলাক্ত ত্বকে ভারসাম্য আনে।

কীভাবে ব্যবহার করবেন

  • নিমপাতা পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি কুসুম গরম থাকা অবস্থায় গোসল করুন।
  • নিমপাতা বেঁটে শরীরে লাগিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ রেখে গোসল করুন।
  • তুলসীপাতা দিয়ে তৈরি চা-পান করতে পারেন নিয়মিত।
  • পানিতে তুলসীপাতা ভিজিয়ে সেই পানি দিয়ে মুখ ধুতে পারেন নিয়মিত।

কোন পাতা কিসের জন্য বেশি উপকারী

  • ত্বকে সংক্রমণ বা র‍্যাশ বেশি হলে নিমপাতা ব্যবহার করুন।
  • ত্বক তৈলাক্ত ও ক্লান্ত দেখালে তুলসী উপযুক্ত।

সতর্কতা

নিম কিংবা তুলসীপাতা ব্যবহারের আগে অবশ্যই জানতে হবে, এসব পাতা ব্যবহারে অ্যালার্জি হয় কি না। অ্যালার্জি পরীক্ষার জন্য প্রথমে হাতের ত্বকের অল্প জায়গায় এটি ব্যবহার করে দেখুন। কোনো ধরনের সমস্যা না হলে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত