Ajker Patrika

জাহাঙ্গীরনগর থেকে হার্ভার্ডে

আনিসুল ইসলাম নাঈম
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৩, ১০: ৩১
জাহাঙ্গীরনগর থেকে হার্ভার্ডে

বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসে অবস্থিত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাচীন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের তিন শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে রেজাউল করিম রিপন ৪৭তম ব্যাচের, মো. শরীফ হোসেন ৪৪তম এবং রুম্পা সরকার ৪৩তম ব্যাচের। রুম্পা ও শরীফ এপিডেমিওলজিতে এবং রিপন এনভায়রনমেন্টাল হেলথে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম

তৃতীয় বর্ষের রেজাল্ট দিয়ে আবেদন করি
রেজাউল করিম রিপন

তিনজনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ রেজাউল করিম রিপন। বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ যেকোনো ছাত্রের জন্য স্মরণীয় বিষয় বলে মনে করেন তিনি। রিপনের গবেষণাকর্মের ওপর ভিত্তি করে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভর্তির সুযোগ দেয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ জার্নাল ‘ল্যানসেটে’ রয়েছে তাঁর বেশ কিছু গবেষণাকর্ম। এগুলোই তাঁর হার্ভার্ডে ভর্তির পথ সুগম করেছে। রিপনের হার্ভার্ড যাত্রা শুরু হয় দ্বিতীয় বর্ষের শেষে। কোভিভ ও লকডাউনের সময়কে কাজে লাগিয়ে গবেষণাকর্মের সুযোগ পান তিনি। এ ছাড়া তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শিক্ষাবিষয়ক একটি সংস্থায় এডুকেটর হিসেবে কাজ করছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে তাঁর ২০টির বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ইতিমধ্যে। রিপন বলেন, ‘আমার গ্র্যাজুয়েশন এখনো শেষ হয়নি। তাই আমি তৃতীয় বর্ষের রেজাল্ট দিয়ে আবেদন করি। বন্ধুরা আমাকে সহযোগিতা করার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।’ হার্ভার্ডে আবেদন করার এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন রিপন। হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ কাকে কোন বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ভর্তির সুযোগ দেবে, কেউ সেটা বলতে পারে না। তাই যোগ্যতাসম্পন্ন হলে ভয় না পেয়ে যে কারও ভর্তির আবেদন করা উচিত বলে মনে করেন রিপন।

রুম্পা সরকারআন্ডারগ্র্যাজুয়েট থেকেই গবেষণাকর্ম শেখা চাই
রুম্পা সরকার

রুম্পা সরকারের জন্ম ও বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে। উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ও ইচ্ছা ছিল ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই। রুম্পা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির শর্ত দেখে সেগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে নিজের প্রোফাইল অ্যানালাইসিস করেন। প্রতিটি শর্ত পূরণের চেষ্টা করেন এবং তারপর আবেদন করেন। রুম্পা জানান, পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া থাকলে এবং আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকলে অল্প সময়ে কাজ শেষ করা যায়। ভর্তি হওয়ার জন্য বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যেসব শর্ত থাকে, সেগুলো স্বল্প সময়ে অর্জন করা যায় না। স্ট্যান্ডার্ড সিজিপিএ, ইংরেজিতে দক্ষতা, গুণগত গবেষণা প্রকাশনা—এগুলো বছরের পর বছর তৈরি করতে হয়।

রুম্পা হার্ভার্ডে সুযোগ পাওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস, ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনা অ্যাট চ্যাপেল হিল, ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ এবং অরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে অফার লেটার পেয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে তাঁর পাঁচটি গবেষণাপত্র প্রকাশ পেয়েছে। এ ছাড়া আইসিডিডিআরবিতে তিনি গবেষণা সহকারী হিসেবে এক বছর কাজ করেছেন।

কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম ধাপ নিজের প্রোফাইল নিজে মূল্যায়ন করা। নিজের দুর্বলতা ও শক্তির জায়গাগুলো বুঝে দুর্বল দিকটিকে একটি গড় জায়গায় এবং শক্তির দিকটিকে আরও শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই বলেও মনে করেন রুম্পা। যে বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়তে ইচ্ছুক, সে অনুযায়ী মোটিভেশনাল লেটার বা এসওপি তৈরি করতে হবে। মোটামুটি ভালো সিজিপিএ পেতে হবে। আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট থেকেই ভালো জার্নালে গুণগত মানে উন্নত গবেষণাপত্র প্রকাশের চেষ্টা করতে হবে।

মো. শরীফ হোসেন সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলো সহযোগিতা করেছে
মো. শরীফ হোসেন 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগে স্নাতকে ভর্তির পর থেকে মো. শরীফ হোসেন স্বপ্ন দেখতেন বিদেশে উচ্চশিক্ষার। স্নাতক তৃতীয় বর্ষে উঠে সে ইচ্ছাটা জেদে পরিণত হয়। তখন থেকেই আন্তর্জাতিক ও সরকারি কিছু গবেষণা প্রজেক্টে কাজ শুরু করেন তিনি। কিছু গবেষণা প্রবন্ধও প্রকাশ করেন। পাশাপাশি একাডেমিক ক্ষেত্রেও ভালো ফল করার চেষ্টা চালিয়ে যান। ক্যাম্পাস ও বাইরের নানান সংগঠনে কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। ‘ক্যাম্পাসের কনজ্যুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন শরীফ। একই সঙ্গে হেলথ অ্যাওয়ারনেস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। পত্রিকায় লেখালেখিও চালিয়ে গেছেন সমানতালে।

কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার জন্য যেসব যোগ্যতা প্রয়োজন, শরীফ হোসেন সেগুলো অর্জন করেছিলেন প্রথমে। তারপর হার্ভার্ডের ফল-২০২৩ সেশনে আবেদন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি তাঁকে এপিডেমিওলজিতে স্নাতকোত্তরে ভর্তির সুযোগ দেয়। হার্ভার্ডে বাংলাদেশিদের পড়ার সুযোগ নিয়ে মো. শরীফ হোসেন জানিয়েছেন, বাংলাদেশের কমসংখ্যক শিক্ষার্থীই সেখানে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। বিবেচনায় রাখতে হবে যে হার্ভার্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশ্বের সব দেশের শিক্ষার্থীরাই ভর্তির চেষ্টা করেন। তাই আবেদনকারীর প্রোফাইল সামগ্রিকভাবে ভারী হওয়া চাই। একাডেমিক ডিগ্রি, একাডেমিক ফলাফল, গবেষণা অভিজ্ঞতা, গবেষণার দক্ষতা, প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধ, গবেষণা সম্পৃক্ত ট্রেনিং, লিডারশিপ, সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং যে প্রোগ্রামে যেতে ইচ্ছুক, তার জন্য আপনি নিজে কতটুকু উপযুক্ত, সেটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যাচাই করবে। এ ছাড়া আবেদনের উদ্দেশ্য, সিভি, লেটার অব রিকমেন্ডেশন—এগুলো ভালো হওয়া আবশ্যক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত