ড. আজহারুল ইসলাম
জামিল পড়েছেন কঠিন বিপদে। কারও সামনে যেতে পারছেন না, ঘরবন্দীই থাকছেন অধিকাংশ সময়। তিনি সাংঘাতিক বিরক্ত, বিব্রত ও হতাশ। কিন্তু কেন? আলাপে জানালেন বিস্তারিত। মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে গেলে কেমন যেন হয়ে যান তিনি, বিশেষ করে কোনো নারীর সামনে গেলে। জামিলের কল্পনায় ভেসে আসে সামনের মানুষটির নগ্নচিত্র। শুরুতে মাঝে মাঝে এবং কিছুসংখ্যক মানুষের বেলায় এ রকম ঘটত। এখন সবার ক্ষেত্রেই তা ঘটছে। এমনকি পরিবারের লোকজন সামনে এলেও একই অবস্থা। এটাই তাঁকে ফেলছে মহাবিপদে। লজ্জা আর অনুতাপে পোড়ার ভয়ে তিনি কারও সামনেই যেতে চাচ্ছেন না। ধীরে ধীরে তাঁর জগৎ যেন ছোট হয়ে আসছে।
জামিলের এই অবস্থা আসলে একটি মানসিক রোগ। নাম অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি)। বাংলায় অনেকে একে শুচিবাইগ্রস্ত বলে থাকেন।
ওসিডির ধরন
এই রোগের দুটি দিক আছে। প্রথমটি হলো, একটি চিন্তা যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে, জোর করে এবং বারবার মনে চলে আসে। একে বলে অবসেশন। এই চিন্তা মানসিক পীড়া তৈরি করে। শুধু নগ্ন ছবিই নয়, মানুষের অবসেশন হতে পারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, জীবাণু সংক্রমণ, ধর্মীয় অনুশাসন, শৃঙ্খলা, কোনো কিছু হারিয়ে যাওয়ার ভয় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে।
দ্বিতীয়টি হলো, সেই অনিয়ন্ত্রিত চিন্তার প্রত্যুত্তরে মানুষ যা করে থাকে। মূলত অযাচিত চিন্তা থেকে যে মানসিক যন্ত্রণা তৈরি হয়, তা দূর করার জন্য ব্যক্তি সেই কাজ করে থাকেন। যেমন, বারবার হাত ধোয়া/গোসল করা/কাপড় ধোয়া, অন্যকে এড়িয়ে চলা, জিনিসপত্র বারবার গোছানো, তালা লেগেছে কি না, লাইট-ফ্যানের সুইচ বন্ধ করা হয়েছে কি না, তা বারবার দেখা ইত্যাদি। একে বলে কমপালশন। এই কাজটি করলে সাময়িকভাবে মানসিক পীড়া লাঘব হয়; কিন্তু যেহেতু চিন্তাটি বারবার আসে, কাজটিও বারবার করতে হয়। এভাবে চিন্তা আর তার প্রতিক্রিয়ায় আচরণ করার একটি দুষ্টচক্র তৈরি হয়। জামিল সেই দুষ্টচক্রে পড়ে গেছেন।
ওসিডির ইতিবাচক দিক
সব বিষয়েরই ইতিবাচক দিক আছে। ওসিডিরও আছে। একে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে পারলে ভালো কিছু করা সম্ভব। যেকোনো মানুষের মধ্যে কোনো না কোনো বিষয়ে অবসেশন থাকতে পারে। সে অবসেশন থেকে চমৎকার কিছু সৃষ্টিও হতে পারে। যেমন, একজন ক্রিকেটার ভালো খেলার চিন্তায় মগ্ন থাকতে পারেন। একজন লেখক তাঁর গল্পের চরিত্রগুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতে নির্ঘুম রাত কাটাতে পারেন। একজন অভিনেতা কিংবা একজন কণ্ঠশিল্পী নিজ নিজ কাজ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তাঁরা জেনেবুঝেই চিন্তায় মগ্ন থাকেন। এ ধরনের স্বাস্থ্যকর অবসেশন থেকে সুন্দর কিছু সৃষ্টি হতে পারে।
এখানেও কথা আছে। সেসব চিন্তা যদি দিনের পর দিন চলে, জোর করে চলে আসে ও মানসিক যন্ত্রণা তৈরি করে, তার ফলে স্বাভাবিক জীবনযাপন, কাজ ও ঘুম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেটাকেও ওসিডি বলে ধরা হয়।
ওসিডির চিকিৎসা
ওসিডির চিকিৎসায় সাইকোথেরাপি এবং ওষুধের যুগপৎ প্রয়োগ কার্যকরী। সাইকোথেরাপির মাধ্যমে অবসেশনকে বোঝা এবং এর ফলে যে মানসিক পীড়া তৈরি হয়, তা নিরসনে ব্যক্তির সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহযোগিতা করা হয়। ফলে চিন্তাটি দূর না হলেও সেই চিন্তার নেতিবাচক রেশটা কমে আসে। এর জন্য সময় লাগে, যা নির্ভর করে উপসর্গের মাত্রা কতটা তীব্র তার ওপর।
সঠিক মূল্যায়নের জন্য যথাযথ বিশেষজ্ঞের; যেমন: মনোচিকিৎসক, ক্লিনিক্যাল বা কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। একজন ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তি পরিবারে বা কর্মক্ষেত্রে অন্যের জন্য কিছুটা বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারেন। তবে সহমর্মী পরিবারের সদস্য বা অফিসের কলিগ সেই ব্যক্তির ওসিডি চিকিৎসায় সহায়কের ভূমিকা রাখতে পারেন। তা ছাড়া, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, মন ও শরীরের যত্নের জন্য কায়িক পরিশ্রম/ব্যায়াম, ধ্যান, ম্যাসাজ প্রভৃতি করার মাধ্যমে ওসিডির মানসিক পীড়া কমিয়ে আনা যায়।
লেখক: কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট, সহকারী অধ্যাপক, এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জামিল পড়েছেন কঠিন বিপদে। কারও সামনে যেতে পারছেন না, ঘরবন্দীই থাকছেন অধিকাংশ সময়। তিনি সাংঘাতিক বিরক্ত, বিব্রত ও হতাশ। কিন্তু কেন? আলাপে জানালেন বিস্তারিত। মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে গেলে কেমন যেন হয়ে যান তিনি, বিশেষ করে কোনো নারীর সামনে গেলে। জামিলের কল্পনায় ভেসে আসে সামনের মানুষটির নগ্নচিত্র। শুরুতে মাঝে মাঝে এবং কিছুসংখ্যক মানুষের বেলায় এ রকম ঘটত। এখন সবার ক্ষেত্রেই তা ঘটছে। এমনকি পরিবারের লোকজন সামনে এলেও একই অবস্থা। এটাই তাঁকে ফেলছে মহাবিপদে। লজ্জা আর অনুতাপে পোড়ার ভয়ে তিনি কারও সামনেই যেতে চাচ্ছেন না। ধীরে ধীরে তাঁর জগৎ যেন ছোট হয়ে আসছে।
জামিলের এই অবস্থা আসলে একটি মানসিক রোগ। নাম অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি)। বাংলায় অনেকে একে শুচিবাইগ্রস্ত বলে থাকেন।
ওসিডির ধরন
এই রোগের দুটি দিক আছে। প্রথমটি হলো, একটি চিন্তা যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে, জোর করে এবং বারবার মনে চলে আসে। একে বলে অবসেশন। এই চিন্তা মানসিক পীড়া তৈরি করে। শুধু নগ্ন ছবিই নয়, মানুষের অবসেশন হতে পারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, জীবাণু সংক্রমণ, ধর্মীয় অনুশাসন, শৃঙ্খলা, কোনো কিছু হারিয়ে যাওয়ার ভয় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে।
দ্বিতীয়টি হলো, সেই অনিয়ন্ত্রিত চিন্তার প্রত্যুত্তরে মানুষ যা করে থাকে। মূলত অযাচিত চিন্তা থেকে যে মানসিক যন্ত্রণা তৈরি হয়, তা দূর করার জন্য ব্যক্তি সেই কাজ করে থাকেন। যেমন, বারবার হাত ধোয়া/গোসল করা/কাপড় ধোয়া, অন্যকে এড়িয়ে চলা, জিনিসপত্র বারবার গোছানো, তালা লেগেছে কি না, লাইট-ফ্যানের সুইচ বন্ধ করা হয়েছে কি না, তা বারবার দেখা ইত্যাদি। একে বলে কমপালশন। এই কাজটি করলে সাময়িকভাবে মানসিক পীড়া লাঘব হয়; কিন্তু যেহেতু চিন্তাটি বারবার আসে, কাজটিও বারবার করতে হয়। এভাবে চিন্তা আর তার প্রতিক্রিয়ায় আচরণ করার একটি দুষ্টচক্র তৈরি হয়। জামিল সেই দুষ্টচক্রে পড়ে গেছেন।
ওসিডির ইতিবাচক দিক
সব বিষয়েরই ইতিবাচক দিক আছে। ওসিডিরও আছে। একে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে পারলে ভালো কিছু করা সম্ভব। যেকোনো মানুষের মধ্যে কোনো না কোনো বিষয়ে অবসেশন থাকতে পারে। সে অবসেশন থেকে চমৎকার কিছু সৃষ্টিও হতে পারে। যেমন, একজন ক্রিকেটার ভালো খেলার চিন্তায় মগ্ন থাকতে পারেন। একজন লেখক তাঁর গল্পের চরিত্রগুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতে নির্ঘুম রাত কাটাতে পারেন। একজন অভিনেতা কিংবা একজন কণ্ঠশিল্পী নিজ নিজ কাজ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তাঁরা জেনেবুঝেই চিন্তায় মগ্ন থাকেন। এ ধরনের স্বাস্থ্যকর অবসেশন থেকে সুন্দর কিছু সৃষ্টি হতে পারে।
এখানেও কথা আছে। সেসব চিন্তা যদি দিনের পর দিন চলে, জোর করে চলে আসে ও মানসিক যন্ত্রণা তৈরি করে, তার ফলে স্বাভাবিক জীবনযাপন, কাজ ও ঘুম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেটাকেও ওসিডি বলে ধরা হয়।
ওসিডির চিকিৎসা
ওসিডির চিকিৎসায় সাইকোথেরাপি এবং ওষুধের যুগপৎ প্রয়োগ কার্যকরী। সাইকোথেরাপির মাধ্যমে অবসেশনকে বোঝা এবং এর ফলে যে মানসিক পীড়া তৈরি হয়, তা নিরসনে ব্যক্তির সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহযোগিতা করা হয়। ফলে চিন্তাটি দূর না হলেও সেই চিন্তার নেতিবাচক রেশটা কমে আসে। এর জন্য সময় লাগে, যা নির্ভর করে উপসর্গের মাত্রা কতটা তীব্র তার ওপর।
সঠিক মূল্যায়নের জন্য যথাযথ বিশেষজ্ঞের; যেমন: মনোচিকিৎসক, ক্লিনিক্যাল বা কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। একজন ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তি পরিবারে বা কর্মক্ষেত্রে অন্যের জন্য কিছুটা বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারেন। তবে সহমর্মী পরিবারের সদস্য বা অফিসের কলিগ সেই ব্যক্তির ওসিডি চিকিৎসায় সহায়কের ভূমিকা রাখতে পারেন। তা ছাড়া, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, মন ও শরীরের যত্নের জন্য কায়িক পরিশ্রম/ব্যায়াম, ধ্যান, ম্যাসাজ প্রভৃতি করার মাধ্যমে ওসিডির মানসিক পীড়া কমিয়ে আনা যায়।
লেখক: কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট, সহকারী অধ্যাপক, এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
‘সফট স্কিল’ শব্দটি এখন মানুষের মুখে মুখে ফেরে। কিন্তু এর প্রকৃত অর্থ ও গুরুত্ব অনেক সময় ধোঁয়াশার মধ্যে থেকে যায়। সফট স্কিল বলতে বোঝানো হয়, ব্যক্তিগত চরিত্র, সম্পর্ক ও মনোভাবের দক্ষতা, যা আমাদের কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনে সমানভাবে প্রয়োজনীয়।
১ ঘণ্টা আগেদীর্ঘ জীবনের কথা উঠলে সাধারণত গ্রিসের ইকারিয়া, জাপানের ওকিনাওয়া, কোস্টারিকার নিকোয়া কিংবা ইতালির সার্দিনিয়ার নাম শোনা যায়। এই জায়গাগুলোকে বলা হয় বিশ্বের ‘ব্লু জোন’। এসব জায়গার মানুষ অন্য যেকোনো জায়গার তুলনায় বেশি দিন বাঁচে।
৩ ঘণ্টা আগেবিটরুট জুস আজকাল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কেউ ব্যায়ামের আগে পান করেন শক্তি বাড়ানোর জন্য, তো কেউ সকালের নাশতার সঙ্গে। লাল রঙের এই জুস শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, এটি শরীরের জন্যও উপকারী।
৫ ঘণ্টা আগেরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গিয়ে বুক ধড়ফড় করা কিংবা অদ্ভুত ভয়ের ঘোরে ডুবে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অনেকের রয়েছে। স্বপ্নের জগৎ রহস্যে ভরা হলেও দুঃস্বপ্ন বা নাইটমেয়ার যেন তারই এক ভীতিকর দিক। অনেকে মনে করেন, দুঃস্বপ্ন ভবিষ্যৎ বিপদের আগাম সংকেত দেয়। কিন্তু বিজ্ঞান কী বলছে?
১৯ ঘণ্টা আগে