Ajker Patrika

মুজতবা আলী এখানে মিষ্টি খেতে আসতেন

আব্দুর রব, মৌলভীবাজার
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২২, ১৭: ০২
মুজতবা আলী এখানে মিষ্টি খেতে আসতেন

রবীন্দ্রনাথ না এলেও মৌলভীবাজারে পৈতৃক বাড়ি হওয়ার সুবাদে সেখানে মিষ্টি খেতে যেতেন সৈয়দ মুজতবা আলী। তেমনটাই জানা গেল মৌলভীবাজারের অতিপরিচিত ও জনপ্রিয় মিষ্টির দোকান ‘ম্যানেজার স্টলে’ গিয়ে। প্রায় পঁচাত্তর বছর আগে শহরের চৌমুহনী এলাকায় যাত্রা শুরু হয় এ মিষ্টির দোকানটির। তখন এর নাম ছিল ‘মদন মোহন মিষ্টান্ন ভান্ডার’। কিন্তু কোনো এক অদ্ভুত কারণে সুশীল চন্দ্র এলাকার মানুষের কাছে পরিচিত ছিলেন ম্যানেজার নামে। ফলে ধীরে ধীরে মদন মোহন মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে ম্যানেজার স্টল নামে বদলে যায় দোকানটির নাম।

ম্যানেজার স্টলের বর্তমান স্বত্বাধিকারী সুমেশ দাশ যিশু। তিনি জানান, তাঁর বাবা সুশীল চন্দ্র দাশের হাতে উনিশ শ সাতচল্লিশ সালের দেশভাগের পর ম্যানেজার স্টলের যাত্রা শুরু হয়। প্রায় পঁচাত্তর বছরের পুরোনো এ মিষ্টান্ন ভান্ডারটি এখন মৌলভীবাজারের ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত একটি নাম। এই জনপদে একনামে পরিচিত ম্যানেজার স্টলের স্পঞ্জ রসগোল্লা। যেমন তার নাম, তেমনি অপূর্ব স্বাদ। গরুর দুধের ছানা থেকে তৈরি এই রসগোল্লার খ্যাতি জেলা ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়েছে ইতিমধ্যে।

সুমেশ দাশ যিশু আরও জানান, তাঁদের স্পঞ্জ রসগোল্লা গণভবন, বঙ্গভবন ও সচিবালয়ে পাঠানো হয়েছে একাধিকবার। এলাকার প্রবাসীরা দেশে এলে কিংবা প্রবাসীদের আবদার রক্ষায় আত্মীয়স্বজনেরা বিশেষ ব্যবস্থায় বিদেশেও এ রসগোল্লা পাঠিয়ে থাকেন।

ম্যানেজার স্টলের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা জানান, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি বানাতে এখানে প্রতিদিন ৬০-৭০ কেজি ছানার প্রয়োজন হয়। জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে দুধ সংগ্রহ করে ছানা তৈরি করা হয়। ম্যানেজার স্টলের মূল আকর্ষণ স্পঞ্জ মিষ্টি বা স্পঞ্জ রসগোল্লা। সঙ্গে রয়েছে প্যারা সন্দেশ, বুন্দিয়া, রসমালাই, দই, নিমকি, কালোজাম, জালমোহন মিষ্টি। প্রতিদিন এখানে বিক্রি হয় এক থেকে দেড় হাজার বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি। তবে এর বেশির ভাগই স্পঞ্জ রসগোল্লা। ম্যানেজার স্টলের প্রধান কারিগর সুজিত জানান, প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ১০-১২ জন কারিগর এখানে মিষ্টি তৈরি করেন। সব মিলিয়ে ৩০ জন মানুষ বিভিন্নভাবে যুক্ত রয়েছেন এই দোকানের মিষ্টি তৈরির সঙ্গে।

এ অঞ্চলের অনেকেই ৩০-৪০ বছর ধরে ম্যানেজার স্টলের মিষ্টির ক্রেতা। এসব পুরোনো ক্রেতার অনেকেই রাতে গরম-গরম রসগোল্লা খেতে স্টলে ভিড় করেন। আবার অনেকে ভোরবেলা প্রাতর্ভ্রমণ শেষে মিষ্টি ও নিমকি কিংবা লুচি দিয়ে নাশতা সারেন। স্টলটিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্রেতার ভিড় লেগেই থাকে।

কয়েক বছর আগে ম্যানেজার স্টলের ডেকোরেশনে আনা হয় পরিবর্তন। নতুন আসবাবের সঙ্গে দেয়ালে লাগানো হয় পোড়ামাটির টেরাকোটা। সেসব টেরাকোটায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গাভি লালন-পালন, দুধ সংগ্রহ, দুধ নিয়ে আসা, মিষ্টি তৈরি, আপ্যায়ন ও অনুষ্ঠানাদির চিত্র। টেরাকোটার এ ফলক দেখলে মনে হবে, এটি মিষ্টি তৈরির ধারাবাহিক ইতিহাস।

ঐতিহ্যবাহী এই মিষ্টান্ন ভান্ডারে এ জেলার খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের আড্ডা ছিল একসময়। শোনা যায়, ম্যানেজার স্টলের সে আড্ডাতেই কোনো একসময় মিষ্টি খেতে আসতেন বাংলা সাহিত্যের রম্য গুরু সৈয়দ মুজতবা আলী।

পর্যটনের শহর মৌলভীবাজারে ভ্রমণপিপাসু ভোজনপ্রিয় পর্যটকেরা রসগোল্লার স্বাদ নিতে আসেন এ স্টলে। ফিরে যাওয়ার পথে সঙ্গে নিয়ে যান স্পঞ্জ রসগোল্লা। পরিবার নিয়ে বড়লেখার মাধবকুণ্ডে বেড়াতে আসা কিশোরগঞ্জের পর্যটক আলী হোসেন জানান, নামডাক শুনে তিনি ম্যানেজার স্টলে এসেছেন মিষ্টি খেতে। তিনি বলেন, ‘খেয়ে দেখলাম স্বাদ ভালো, এখন বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।’ 

দরদাম
প্রতি পিস স্পঞ্জ রসগোল্লা বিক্রি হয় ১২ টাকা করে। আর সাধারণ রসগোল্লা ও কালোজাম বিক্রি হয় প্রতি কেজি ২২০ টাকায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ: এক্সিম ব্যাংকের নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ ৩০ জনের নামে মামলা

‘কথিত আওয়ামী লীগ সদস্যদের’ বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতার বিষয়ে ভারত অবহিত নয়: মুখপাত্র

কলকাতার নিউটাউনে বসে আয়েশ করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা

চাকরি না ছেড়েই বিদেশে পাড়ি, ৪৮ শিক্ষক বরখাস্ত

ভিসা ছাড়া পাকিস্তান সফরের চুক্তি হতে পারে শিগগির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত