Ajker Patrika

ভাবনার জগাখিচুড়ি

জাহীদ রেজা নূর
ভাবনার জগাখিচুড়ি

নিউইয়র্ক সেন্ট্রাল পার্ক প্রথম দেখেছিলাম ‘হোম অ্যালোন’ ছবিতে। পরিবারের সঙ্গে বের হয়েও ভুল প্লেনে চড়ে নিউইয়র্কে চলে এসেছিল কেভিন। বাবার ক্রেডিট কার্ড হাতে থাকায় বিশাল পাঁচতারা হোটেলে এসে উঠতে পেরেছিল সে। সে হোটেলের পাশেই সেন্ট্রাল পার্ক। সেখানে এক ডাইনি বুড়ির মতো নারীকে দেখেছিল কেভিন, যার কাঁধে বসে থাকে কবুতর! সিনেমার শেষে দেখা যায়, এই রহস্যময় নারীই রক্ষা করে কেভিনকে।

নিউইয়র্কে দেখার মতো যে স্থাপনা বা প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, তার একটি হলো প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘর। এই জাদুঘর ঘুরে দেখে প্রথমবারের মতো গিয়েছিলাম সেন্ট্রাল পার্কে। সেটা ২০১৮ সাল। বিশাল সে পার্কে কত ধরনের নতুন বিষয় যে ছিল! যেমন, খুবই অবাক হয়েছিলাম রিকশা দেখে। পার্কেরই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় রিকশায় করে যাওয়া যায়। তবে বিনা পয়সায় নয়। ফেলো কড়ি, মাখো তেল। নিউইয়র্ক তো পর্যটকদের তীর্থ স্থান। কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকেরা এই শহর দেখতে আসে।

গত বছর করোনা যখন সারা পৃথিবীতেই কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ, তখন কিছুদিনের জন্য এসেছিলাম নিউইয়র্কে। সে সময় রাস্তাঘাটে চলাচলকারী প্রত্যেকের মনেই ভয়। সেই ভয়ের মধ্যেই বসন্তের একটা দিন বেছে নিয়ে আমরা চলে গিয়েছিলাম সেন্ট্রাল পার্কে। ফুলে আর রঙিন পাতায় সেজেছিল পার্কটি। তার কিছু ছবি করোনাকালের স্মৃতি হয়ে থাকবে। সে সময় মেট্রোর বগিতে দূরত্ব নিয়ে বসতে হতো। সে এক সময় গেছে।

প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটক নিউইয়র্ক ঘুরতে আসেন শুধু প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘর দেখার জন্য। ছবি: সংগৃহীতএই মে মাসে নিউইয়র্কবাসীর জন্য সুখবর আছে। দুই ডোজ ভ্যাকসিন যারা নিয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশে নিউইয়র্কের গভর্নর কুমো বলেছেন, এখন থেকে ভ্যাকসিন নেওয়া নাগরিকেরা মাস্ক ছাড়াই চলাচল করতে পারবেন। তবে ১৫০ জনের বেশি মানুষ একসঙ্গে জমায়েত না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে। নিউইয়র্কে করোনায় মৃত্যুর হার কমে গেছে। কিন্তু মানুষ এখনো সতর্ক। চলতি পথে গত শুক্রবার ২০৪ নম্বর স্ট্রিট আর হিলসাইড অ্যাভিনিউয়ের মোড়টায় ডানকিন ডোনাটের কাছে এক বৃদ্ধাকে দেখলাম মাস্কবিহীন চলছেন। ওই একজনকেই দেখলাম। আর কাউকে মাস্ক ছাড়া দেখিনি এই সাত দিনে।

কুইন্স ভিলেজ এলাকায় নানা বর্ণের মানুষের বাস। মিশ্র সংস্কৃতি জায়গাটিকে বিশেষায়িত করেছে। যদিও এশিয়ান ও আফ্রিকান মানুষের সংখ্যা বেশি, তারপরও লাতিন বংশোদ্ভূত মানুষ অলক্ষ্যণীয় নয়। এ কথা সবাই জানেন, গোটা নিউইয়র্কে শ্বেতাঙ্গ মানুষের সংখ্যা ৪০ শতাংশেরও কম। তাদের একটা বড় অংশ থাকেন স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে। কোথায় লাতিন মানুষ বেশি থাকে, কোথায় আফ্রিকান, কোথায় এশিয়ান—সে কথা ধীরে ধীরে বলব। আর চীনা মানুষদের বসবাসের ইতিহাসও জানাব। নিউইয়র্ক এক বিশাল শহর। এক এক জায়গার এক এক গল্প। তারই মধ্যে ম্যানহাটন জাদু–বাস্তবতার জন্ম দেয়।

বলে রাখা ভালো, সবাই সিনেমায় চাকচিক্যময় যে শহরটি দেখে, সেটি কিন্তু নিউইয়র্কের পূর্ণ পরিচয় নয়। নিউইয়র্ক বাস করে প্রতিটি মোড়ের ভাঁজে ভাঁজে। পর্যটক থেকে যখন কেউ স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যায় এই শহরের, তখন সে ভুলে যায়, এই তো কিছুদিন আগে অকারণেই বিনয়ী কোনো নাগরিক তাকে ‘স্যরি’ বলেছিল। ‘স্যরি’ বললে যে কেউ ছোট হয় না, কিংবা শব্দটি উচ্চারণ করে যে আনন্দ পায়, সে কথা ধীরে ধীরে ভুলে যেতে থাকে মার্কিন নাগরিকত্বের ছাপ পড়ে যাওয়া মানুষ। তারা বুঝতে শেখে—এটাই নিয়ম।

বাঙালিপাড়ার মধ্যে জ্যাকসন হাইটসের কথা আলাদাভাবে বলতে হয়। সেটা নিয়ে আলাদাভাবে লিখব। এখানে শুধু বলে রাখি, জ্যাকসন হাইটসের অনেক দোকানেই ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষায় লেখা আছে দোকানের নাম। দোকানের মালিক, ম্যানেজার থেকে শুরু করে সেলসম্যানেরাও বাঙালি। এখানে ইংরেজির অনুপ্রবেশ প্রায় নিষিদ্ধ। কালেভদ্রে বাংলা না জানা কেউ যদি ঢুকে পড়ে এসব দোকানে, তখন ইংরেজি বলার দরকার পড়ে। অবশ্য সে জন্য ‘ইয়েস–নো–ভেরি গুড’ পর্যন্ত বিদ্যা থাকলেই হয়। এ কথা অনায়াসেই এখন বলতে পারি, এমন অনেক বাঙালি আছেন নিউইয়র্কে, যারা বাংলাতেই তাদের বাতচিৎ সারেন। অন্য কোনো ভাষার সাহায্য তাকে নিতে হয় না।

কী করে তা সম্ভব—এই প্রশ্ন করতেই পারেন আপনি।

উত্তর দিচ্ছি।

একজন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রাথমিকভাবে কী কী লাগে?

থাকার একটা জায়গা, রান্নাবান্না, কেনাকাটা, চিকিৎসা। বাড়ি থাকলে রান্নার জায়গাও থাকবে। তাই এ জন্য আর কারও ওপর নির্ভর করার প্রয়োজন নেই। কেনাকাটার জন্য রয়েছে বাঙালির দোকান, এক বর্ণ ইংরেজি না জেনে কেনাকাটা করা যাচ্ছে। চিকিৎসক বেছে নেওয়ার সুবিধা আছে। দেশি ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন তিনি। এর পর চলাচল। যারা এ ধরনের জীবনে অভ্যস্ত, তারা নিজ বাড়ি আর কর্মক্ষেত্র ছাড়া আর কোথাও খুব একটা যান না। গেলেও কোনো বাঙালি ভাইবোনের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন, মেট্রো বা সাবওয়ের কোন স্টপেজে নামবেন। দু–একবার যাওয়ার পর তা মুখস্থ হয়ে যায়।

বললাম এ কারণে যে, যদি কেউ নিউইয়র্কে এসে ইংরেজি না জেনেও সারা জীবন থাকতে চান, তবে তিনি অনায়াসে থাকতে পারবেন। অবশ্য এখানকার মূলধারায় ঢুকে যাওয়া বাঙালিও দুর্লক্ষ্য নয়। সে কথা আরেকদিন।

নিউইয়র্ক নগরের ব্রাইটন বিচ এলাকায় গেলে যে কেউ রুশ দেশে এসেছে বলে ধন্দে পড়ে যেতে পারে। ছবি: উইকিমিডিয়া কমনসনিউইয়র্কে এক টুকরো রাশিয়া
রাশিয়ায় ছিলাম দশ বছর। তাই যেকোনোভাবে সে দেশটির সঙ্গে যোগাযোগে এক ধরনের তৃপ্তি পাই। এখানেও কিছু কিছু জায়গা আছে রুশ অধ্যুষিত। যেমন ব্রাইটন বিচ এলাকা। কোনো পর্যটক একবার এখানে এসে পড়লে সংশয়ে পড়ে যেতে পারে—এটা সত্যিই আমেরিকা তো? নাকি রাশিয়া? এখানকার শতকরা ৯০ জন মানুষ রুশ অভিবাসী।

এখানকার ফরেস্ট হিলস এলাকায়ও রুশ দেশ থেকে আসা মানুষের বসবাস। ফরেস্ট হিলসে যারা থাকে, তারা বেশ বড়লোক। বাড়িগুলো দেখেই বোঝা যায়, চাকচিক্যের মধ্যে থাকতেই পছন্দ করে এরা। আর রুশ খাবার–দাবারের যে দোকানগুলো রয়েছে, তা দেখে মনে হয়, যারা অভিবাসী হয়েছে, তাদের অন্তত খাবার–দাবারের ব্যাপারে নস্টালজিয়ায় ভুগতে হবে না।

ফরেস্ট হিলস নিয়েই আজ থাকি। কেউ নিউইয়র্কে এলে এবং এই এলাকায় গেলে বাড়তি কিছু সব সময়ই পাবেন। ১৯৮০ সালের দিকে ফরেস্ট হিলসের জনসংখ্যায় দেখা গেল রাশানদের কর্তৃত্ব। এখানে বাড়তে থাকে রুশদের সংখ্যা। আমরা বলেছি, নিউইয়র্কের ব্রাইটন বিচে সবচেয়ে বেশি রুশ ভাষাভাষীর বসবাস। আকারের দিক থেকে ফরেস্ট হিলস রুশ ভাষাভাষীদের দ্বিতীয় আশ্রয়।

ব্রাইটন বিচে মূলত এসেছে ওদেসা ও রাশিয়া আর ইউক্রেনের ছোট শহরগুলো থেকে মানুষ। তারা এসেছে বৈচিত্র্য ও আনন্দময় জীবনের সন্ধানে। এসেছে নানা ধরনের মুখরোচক সসেজ খাওয়ার জন্য। অন্যদিকে ফরেস্ট হিলে মূলত এসে আবাস গড়েছে বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়। এর পর যারা এসেছে, তারা আত্মীয়–স্বজন যেখানে আছে, সেখানেই করেছে বসতবাড়ি।

এ রকম সময় একটা ঘটনা ঘটল। ব্রাইটন বিচ আর ফরেস্ট হিলসের রুশরা আলাদা হয়ে যেতে শুরু করল। ব্রাইটন বিচে বসবাসকারী রুশেরা সমুদ্রপাড়ের জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে লাগল, সেখানে গড়ে উঠতে লাগল রাশান দোকানপাট। রেস্তোরাঁ, মদ্যপানের আসরগুলো বসতে লাগল রাশিয়ার মতোই। অর্থাৎ, জীবনযাপনে তারা রয়ে গেল রুশ সংস্কৃতির অধীনেই। অন্যদিকে ফরেস্ট হিলসের রুশ অভিবাসীরা নিউইয়র্কের জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে লাগল। সে সময় এ এলাকার বাসিন্দাদের অর্ধেকই ছিল ইহুদি। আর অর্ধেক ছিল ইতালীয়, লাতিন আমেরিকান, এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে আসা মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বহুসংখ্যক ইহুদি জার্মানি থেকে পাড়ি জমিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। তাদের বড় একটা অংশ থিতু হয়েছিলেন নিউইয়র্কের ফরেস্ট হিলসে। এরা ইংরেজিটা বলত খুব ভালো। এর পর রুশ দেশ থেকে আসা মানুষেরা ঠাঁই করে নিলেন ১০৮ নম্বর স্ট্রিটে।

জমির দাম বাড়তে থাকায় ফরেস্ট হিলসের স্থবির জীবনে দেখা দিল চঞ্চলতা। অভিবাসীরা মওকা পেয়ে গেলেন আরও একটু ভালো থাকার। নিজেদের বাড়ি ভালো দামে বিক্রি করে এই শহরের অন্যত্র কিংবা এই স্টেটের অন্য কোনো শহরে পাড়ি জমালেন। কেউ কেউ চলে গেলেন লং আইল্যান্ডে, অনেকে বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ায় চলে গেলেন সন্তানদের কাছে। কেউ কেউ চলে গেলেন দুনিয়া ছেড়ে। চলে যাওয়া এই মানুষদের জায়গা যারা দখল করল, তাদের বলা হয় বুখারার ইহুদি। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে তাজিকিস্তান আর উজবেকিস্তানে যখন রাজনৈতিক সংকট বাড়তে শুরু করল, তখন বুখারার ইহুদি নামে খ্যাত এই মানুষেরা এলেন এখানে। ইহুদি ও মধ্য এশিয়া—উভয় সংস্কৃতির ধারক–বাহক এরা। ইসরায়েলের বাইরে এটাই ইহুদি সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় বসতি। বুখারার ইহুদিরা এই এলাকায় আসার পর থেকে ধীরে ধীরে এলাকাটি বদলে যেতে শুরু করে। এখন নিউইয়র্কের ধনী এলাকার একটি হচ্ছে ফরেস্ট হিল। এবং ফরেস্ট হিলের ১০৮ নম্বর রাস্তা কথা বলে রুশ ভাষায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা

মুজিব বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়া ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউন: জামায়াত নেতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাঁধাকপি দিয়ে গরুর মাংস

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
বাঁধাকপি দিয়ে গরুর মাংস
বাঁধাকপি দিয়ে গরুর মাংস

গরুর মাংস তো নানাভাবে খেয়েছেন। বাঁধাকপির এই মৌসুমে সেটি দিয়েই রেঁধে দেখুন। স্বাদ তো বদলাবেই, একটু অন্য রকম খাবারও খাওয়া হবে। আপনাদের জন্য বাঁধাকপি দিয়ে গরুর মাংসের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা

উপকরণ

হাড়সহ গরুর মাংস এক কেজি, বাঁধাকপি একটা, এলাচি, দারুচিনি, তেজপাতা ২ থেকে ৩ পিস করে, আদা ও রসুনবাটা এক টেবিল চামচ করে, হলুদ, মরিচ ও ধনেগুঁড়া এক টেবিল চামচ করে, জিরাগুঁড়া এক চা-চামচ, গরমমসলার গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, চিনি আধা চা-চামচ, সয়াবিন তেল আধা কাপ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ এবং ৫ থেকে ৬টা কাঁচা মরিচ ফালি।

প্রণালি

গরুর মাংস ধুয়ে রাখুন। বাঁধাকপি চিকন করে ভাজির মতো কেটে ধুয়ে নিন। কড়াইতে সয়াবিন তেল দিয়ে গরম করুন। তেল গরম হলে তাতে পেঁয়াজকুচি দিয়ে লালচে করে ভেজে তাতে এলাচি, দারুচিনি ও তেজপাতা দিন। এবার আদা ও রসুনবাটা দিয়ে সামান্য নেড়ে নিন। অল্প পানি দিয়ে হলুদ, মরিচ, ধনেগুঁড়া ও লবণ দিয়ে কষিয়ে নিন। পরে মাংস দিয়ে ঢেকে রান্না করুন কম আঁচে। সেদ্ধ হলে বাঁধাকপি দিয়ে আবারও ঢেকে রান্না করুন। এবার হয়ে এলে জিরা ও গরমমসলার গুঁড়া এবং কাঁচা মরিচের ফালি দিয়ে নেড়েচেড়ে রান্না করুন। তারপর লবণ দেখে নামিয়ে নিন। রেডি হয়ে গেল বাঁধাকপি দিয়ে গরুর মাংস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা

মুজিব বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়া ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউন: জামায়াত নেতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গৃহকর্মী নিয়োগের আগে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে পারেন

ফিচার ডেস্ক
গৃহকর্মী নিয়োগের আগে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে পারেন

সম্প্রতি একটি ঘটনা মোটামুটি সবাইকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। গত সোমবার সকালে মোহাম্মদপুরে একটি বাড়িতে মা-মেয়ে খুন হন গৃহকর্মীর হাতে। শুধু এমন ঘটনা নয়, গৃহকর্মী খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে পালানোর ঘটনাও প্রায়ই শোনা যায়।

শহরের ব্যস্ত জীবনে দৈনন্দিন কাজের সাহায্যের জন্য অনেকে গৃহকর্মীর ওপর নির্ভরশীল। ফলে পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে বাড়ির জিনিসপত্রের নিরাপত্তা অনেকটা নির্ভর করে কেমন গৃহকর্মী আপনি নিয়োগ দিয়েছেন, তার ওপর। গৃহকর্মী নিয়োগের আগে তার সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করেছেন কিনা, সেটার ওপরও আপনার নিরাপত্তা অনেকটাই নির্ভর করে। কারণ, তাদের নিয়োগে সামান্য অসতর্কতাও বড় বিপদের কারণ হতে পারে।

গৃহকর্মী নিয়োগের আগে যেমন কাজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে নেওয়া হয়, তেমনি তাদের ছোটখাটো একটা ইন্টারভিউ নেওয়া থেকে শুরু করে জরুরি কিছু কাগজপত্রও সংগ্রহ করা উচিত।

নিরাপত্তার স্বার্থে গৃহকর্মী নিয়োগের আগে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে পারেন—

জরুরি নথি সংগ্রহে রাখুন

কোনো চাকরিতে নিয়োগের আগে অফিসে যেমন সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বেশ কিছু কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তেমনি গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও এমন কিছু কাগজ তাদের কাছ থেকে চেয়ে নিন।

গৃহকর্মী নিয়োগের আগে অন্তত দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি রাখুন। অবশ্যই চেহারার সঙ্গে ছবি মিলিয়ে নেবেন। স্থায়ী গৃহকর্মী রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই সাম্প্রতিককালে তোলা ছবি চেয়ে নেবেন বা তুলে নেবেন।

জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করুন। জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে থাকলে প্রয়োজনে আইনগতভাবে ব্যক্তিকে শনাক্ত করা সহজ হয়। এটি দিতে না চাইলে সেই গৃহকর্মীকে নিয়োগ না দেওয়াই নিরাপদ।

বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা যাচাই করে নিন

গৃহকর্মীর বর্তমান ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর নিন। সঙ্গে পরিবারের আরও দু-একজনের নম্বর রাখতে পারলে ভালো হয়। স্থায়ী গৃহকর্মী রাখার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় নিজের গ্রামের বাড়ি থেকে খোঁজ করে নিয়োগ দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিজে বা পরিচিত কাউকে তার বাড়িতে পাঠিয়ে ঠিকানা যাচাই করে নিন। এ ছাড়া বর্তমানে তিনি যেখানে থাকেন, সেখানকার আশপাশ সম্পর্কেও খোঁজ নিতে পারেন।

কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সেটা বুঝে নিন

সাধারণত শহরের বাড়িগুলোয় দেখা যায়, একজন গৃহকর্মী একই ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে কাজ করে, আশপাশের বিভিন্ন ভবনেও কাজ করে এরা। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ তাদের বাসা সাধারণত পাশাপাশি এলাকাতেই হয়। অর্থাৎ নির্দিষ্ট এলাকার মধ্য়ে তারা কাজ নেয়। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি কম।

কিন্তু নির্দিষ্ট কারও মাধ্যমে এমন কোনো গৃহকর্মী যদি নিয়োগ দেন, যিনি এলাকার নন, সে ক্ষেত্রে যার মাধ্যমে নিয়োগ দিচ্ছেন তার নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বরও সংগ্রহে রাখুন। গৃহকর্মী আগে কোথায় কাজ করেছে, কত দিন করেছে, সে সম্পর্কেও তথ্য নিন।

নতুন এলাকায় বসবাসের ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা, কেয়ারটেকার বা পরিচিত প্রতিবেশীর সুপারিশে গৃহকর্মী নেওয়া যেতে পারে। তবে সেখানেও ছবি, পরিচয়পত্র ও শনাক্তকারী ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ জরুরি।

কাজের ধরন, সময় ও বেতন স্পষ্টভাবে ঠিক করুন

কী কাজ করবেন, কত সময় কাজ করবেন, এ বিষয়গুলো শুরুতেই পরিষ্কার না করলে পরে ভুল-বোঝাবুঝি তৈরি হয়। অতিরিক্ত কাজ চাপানোর প্রবণতা দ্বন্দ্ব বাড়ায়। মাসিক বেতন, বেতন দেওয়ার তারিখ ও ছুটির বিষয়টি আগেই ঠিক করে নেওয়া জরুরি। অস্পষ্টতা থাকলে কর্মী ও নিয়োগকর্তা—উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ব্যক্তিগত আলমারি নিজেই পরিষ্কার করুন

গৃহকর্মী নিয়োগের সময় স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে বলুন কোন কোন জিনিস আপনি নিজেই রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। এতে একটা স্বাস্থ্যকর সীমারেখা বজায় থাকবে। ব্যক্তিগত ও দামি জিনিসপত্র রয়েছে এমন ড্রয়ার বা আলমারি নিজ হাতে গোছান ও পরিষ্কার করুন। এতে অনেকটাই চিন্তামুক্ত থাকা যাবে।

সূত্র: বুমার্স ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা

মুজিব বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়া ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউন: জামায়াত নেতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শীতে পানিশূন্যতা দূর করবেন যেভাবে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
শীতেও সহজ কিছু অভ্যাসে শরীরে পানির ভারসাম্য রাখা সম্ভব। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
শীতেও সহজ কিছু অভ্যাসে শরীরে পানির ভারসাম্য রাখা সম্ভব। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

শীত এলে অনেকের পানি পানের পরিমাণ কমে যায়। ঠান্ডা আবহাওয়ায় তৃষ্ণা কম অনুভূত হওয়ায় আমরা বুঝতেই পারি না, শরীর ধীরে ধীরে পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। অথচ শুষ্ক শীতের বাতাস শরীর থেকে পানি আরও বেশি বের করে নেয়। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়, শক্তি কমে যায় এবং হজমেও সমস্যা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পানি পান শীতে বিপাকক্রিয়া ঠিক রাখে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীর সুস্থ রাখে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, শীতেও সহজ কিছু অভ্যাসে শরীরে পানির ভারসাম্য রাখা সম্ভব।

গরম লেবুপানি দিয়ে দিন শুরু

শীতের সকালে ঠান্ডা পানি পান অনেকের কাছে অস্বস্তিকর। এর বদলে দিন শুরু করুন এক কাপ গরম লেবুপানি দিয়ে। পুষ্টিবিদ পূজা কেডিয়ার মতে, এতে শরীর ধীরে সতেজ হয়ে ওঠে এবং দিনের শুরুতে পানি পানের অভ্যাস তৈরি হয়। লেবুপানি হজমে সহায়তা করে, শরীরে ভিটামিন সি জোগায় এবং মনও ভালো রাখে। গরম পানি গলাও আরাম দেয়।

এর সহজ রেসিপি হলো, পানি ফুটিয়ে অর্ধেক লেবুর রস মেশান, চাইলে সামান্য মধু যোগ করতে পারেন। এতে সকালেই প্রায় আধা লিটার পানি শরীরে যায়।

চায়ের কাপেও থাকুক হাইড্রেশন

প্রতি কাপ হারবাল চা থেকে শরীর পায় বাড়তি তরল, যা শীতে বিশেষভাবে উপকারী। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
প্রতি কাপ হারবাল চা থেকে শরীর পায় বাড়তি তরল, যা শীতে বিশেষভাবে উপকারী। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

শীতে চা শুধু তৃষ্ণা মেটানোর পানীয় নয়, অনেকের কাছে এটি আনন্দের সঙ্গী। তবে এই সময়ে অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত চা বারবার পান করলে শরীরে পানির ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তাই সাধারণ দুধ-চা বা মসলা চায়ের বদলে হারবাল চা বেছে নেওয়া বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। পুদিনা, ক্যামোমাইল কিংবা তুলসী অথবা আদা চা শরীরে পানির ভারসাম্য রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় উষ্ণতাও দেয়। প্রতিটি কাপ হারবাল চা থেকে শরীর পায় বাড়তি তরল, যা শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় বিশেষভাবে উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যামোমাইল চা মানসিক প্রশান্তি আনে এবং ভালো ঘুমে সহায়তা করে, যা শীতকালে অনেকের অনিদ্রা কমাতে সহায়ক। অন্যদিকে আদা ও তুলসী শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর, বিশেষ করে ঠান্ডা ও ফ্লুর মৌসুমে।

স্যুপ ও মৌসুমি ফল খান

শীতকাল স্যুপ খাওয়ার সেরা সময়। টমেটো স্যুপ, সবজি বা চিকেন স্যুপ শরীর উষ্ণ রাখার পাশাপাশি পানির ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতের খাবারের সঙ্গে হালকা স্যুপ যোগ করলে আলাদা করে বেশি পানি পান করতে হয় না। এতে হজমেও সুবিধা হয় এবং শীতের সময় ভারী খাবার খাওয়ার ফলে যে অস্বস্তি তৈরি হয়, তা কমে।

স্যুপ ও মৌসুমি ফল খান। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
স্যুপ ও মৌসুমি ফল খান। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

পানিশূন্যতা এড়াতে শীতকালে মৌসুমি ফল খাওয়ার দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। কমলা, মৌসুমি লেবু ও লাল গাজরের মতো রসাল ফল স্বাভাবিকভাবে শরীরে পানি জোগায় এবং একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ সরবরাহ করে। এসব ফল খেলে একদিকে যেমন শরীরে পানির ভারসাম্য থাকে, অন্যদিকে তেমনই অপ্রয়োজনীয় ক্ষুধা কমে এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস গড়ে ওঠে।

ইলেকট্রোলাইটের দিকেও নজর দিন

শুধু পানি পান করাই যথেষ্ট নয়, শরীরে তরলের ভারসাম্য ঠিক রাখতে দরকার সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো ইলেকট্রোলাইট। শীতে আমরা অনেক সময় বিষয়টি ভুলে যাই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রয়োজনে ইলেকট্রোলাইট পাউডার বা ট্যাবলেট পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে ক্লান্তি কমে এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে।

পানির জন্য রিমাইন্ডার সেট করুন

কাজের চাপ, ছুটির ব্যস্ততা বা সপ্তাহের অলস ছুটির দিন পানি পান ভুলে যাওয়া খুব স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনে রিমাইন্ডার বা অ্যালার্ম সেট করা বেশ কাজে দেয়। পুষ্টিবিদ পূজা কেডিয়া বলেন, মজার নাম দিয়ে অ্যালার্ম সেট করলে সেটি মনে করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মনও ভালো করে। দিনে নির্দিষ্ট সময়ে অ্যালার্ম দিলে অজান্তেই পানি পানের লক্ষ্য পূরণ হয়ে যায়।

শীতের ঠান্ডায় তৃষ্ণা কম লাগলেও শরীরের পানির প্রয়োজন কমে না। গরম পানীয়, স্যুপ, ফল আর সামান্য সচেতনতার মাধ্যমেই শীতজুড়ে সুস্থ ও সতেজ থাকা সম্ভব।

সূত্র: হেলথশট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা

মুজিব বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়া ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউন: জামায়াত নেতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিশ্ব স্বাদের মঞ্চে সেরা ১০০ রন্ধনশৈলী, বাংলাদেশের স্থান কততম

কাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা 
টেস্ট অ্যাটলাসের সেরা ১০০ রন্ধনশৈলীর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষাটতম। এই তালিকায় ‘মাস্ট ট্রাই’ খাবারের তকমা পেয়েছে চমচম। ছবি: উইকিপিডিয়া
টেস্ট অ্যাটলাসের সেরা ১০০ রন্ধনশৈলীর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষাটতম। এই তালিকায় ‘মাস্ট ট্রাই’ খাবারের তকমা পেয়েছে চমচম। ছবি: উইকিপিডিয়া

পরোটা-কিমা কিংবা সন্ধ্যাবেলার চায়ের সঙ্গী গরম-গরম বাকরখানি। কখনো ভেবে দেখেছেন, আপনার প্রতিদিন খাওয়া এই খাবারগুলো বৈশ্বিক মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে? টেস্ট অ্যাটলাসের ‘বিশ্বের সেরা ১০০ রন্ধনশৈলী ২০২৫-২০২৬’ এর র‍্যাঙ্কিং সেই প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। র‍্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বজুড়ে খাদ্যরসিকদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রন্ধনশৈলী।

টেস্ট অ্যাটলাসের সেরা ১০০ রন্ধনশৈলীর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষাটতম। এই তালিকা শুধু একটি র‍্যাঙ্কিং নয়, এটি একটি দেশের প্রাচীন, মসলাদার এবং আবেগঘন খাবারের গল্প। যে গল্পগুলো এশিয়া মহাদেশের ভারত থেকে জাপান হয়ে ভিয়েতনাম পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে এই গল্পের একটি বিশেষ অংশজুড়ে আছে আমাদের নিজস্ব খাদ্যসংস্কৃতি, যা বহুকালের ইতিহাস ও বৈচিত্র্য বহন করে। আন্তর্জাতিক সমালোচকদের চোখে কেমন ছিল আমাদের এই স্বাদের যাত্রা এবং কোন কোন খাবার পেল ‘মাস্ট ট্রাই’ তকমা? চারটি খাবারকে মাস্ট ট্রাই তকমা দেওয়া হয়েছে। তালিকার প্রথমে আছে চমচম, এরপর কিমা, তারপর টিক্কা, আরও আছে পরোটা এবং শেষে বাকরখানি।

টেস্ট অ্যাটলাসের সেরা তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ঢাকার বাকরখানি। ছবি: আজকের পত্রিকা
টেস্ট অ্যাটলাসের সেরা তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ঢাকার বাকরখানি। ছবি: আজকের পত্রিকা

তালিকায় পুরো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাবারের নাম ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ্য করা হয়েছে। সেখানে স্থান পেয়েছে এশিয়া মহাদেশের ২১টি দেশের খাবার। বাংলাদেশসহ তালিকায় স্থান পাওয়া দেশগুলো হলো জাপান, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, লেবানন, ফিলিপাইন, ইরাক, ফিলিস্তিন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, আফগানিস্তান, মালয়েশিয়া, সিরিয়া, জর্জিয়া, কাতার, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান।

পূর্ব এশীয়র জাদু

চীনের খাবার ঝেংজিয়াও। ছবি: টেস্ট অ্যাটলাস
চীনের খাবার ঝেংজিয়াও। ছবি: টেস্ট অ্যাটলাস

এই অঞ্চলে সুস্বাদু ‘উমামি’ ফ্লেভার এবং ভাত-নুডলসের ব্যবহার প্রধান। জাপান ও চীনের রন্ধনশৈলী বিশ্বজুড়ে খাদ্যপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত সমাদৃত। তালিকায় প্রথম এশীয় দেশ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে জাপানিজ রন্ধনশৈলী। তালিকায় তাদের অবস্থান ষষ্ঠ। স্বাদের সূক্ষ্মতা এবং উপকরণের বিশুদ্ধতা জাপানি খাবারের মূল আকর্ষণ। দেশটির ‘মাস্ট ট্রাই’ খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে ওয়াগিউ, আকামি টুনা, হামামাৎসু গিয়োজা, নেগিতোরোডন ও ওতোরো নিগিরি সুশি। বিস্তৃত বৈচিত্র্য এবং আঞ্চলিক বিশেষত্বের জন্য পরিচিত চীনা রন্ধনশৈলীর স্থান অষ্টম। তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো হলো ঝেংজিয়াও, লানঝো লামিয়ান, শেং চৌ, ইয়ুশিয়ং ও সিউ মেই। গাঁজানো বা ফার্মেন্টেড খাবার, মসলাদার সস এবং গ্রিলড মাংসের জন্য কোরিয়ান খাবার পরিচিত। উনিশতম অবস্থানে থাকা এই দেশের রন্ধনশৈলীতে বিখ্যাত পদগুলো হলো গেজাং, চিকেন, বানচান, গালবি ও ইয়ুকহো।

কারি, ডাল এবং রুটিনির্ভর দক্ষিণ এশীয়

এই অঞ্চলের খাবারগুলো মসলার জটিল মিশ্রণ ও গভীর স্বাদের জন্য বিখ্যাত। তালিকায় ১৩তম অবস্থানে থাকা ভারতীয় রন্ধনশৈলীর অঞ্চলভেদে বৈচিত্র্য থাকলেও তাদের মূল বৈশিষ্ট্য হলো সুগন্ধি মসলার ব্যবহার। দেশটির মাস্ট ট্রাই খাবারের তালিকায় রয়েছে বাটার গার্লিক নান, অমৃতসরি কুলচা, গরমমসলা, পরোটা ও মুথিয়া। ৬২তম স্থানে থাকা শ্রীলঙ্কার রন্ধনশৈলী নারকেল দুধ, সামুদ্রিক খাবার এবং শ্রীলঙ্কার নিজস্ব মসলার জন্য জনপ্রিয়। তাদের সেরা পদগুলোর মধ্যে রয়েছে সিলন সিনামন, বাত কুলু বাধো, কার্ড অ্যান্ড ট্রেকেল, কারি লিভস (বা কারি পাতা) ও কুকুল মাস কারি। ৭৩তম স্থানে থাকা পাকিস্তানি রন্ধনশৈলী ভারী গ্রিলড মাংস, রুটি এবং সুগন্ধি বিরিয়ানির জন্য পরিচিত। মাস্ট ট্রাই খাবার হলো কিমা, মুরগ কারাহি, বাসমতী, পরোটা ও চাপলি কাবাব।

দক্ষিণ-পূর্ব এশীয়

এই অঞ্চলের রন্ধনশৈলীতে তাজা গুল্ম, লেমন গ্রাস এবং টক-মিষ্টি-ঝাল স্বাদের একটি নিখুঁত ভারসাম্য দেখা যায়। তালিকায় দশম স্থানে আছে ইন্দোনেশিয়ান রন্ধনশৈলী। দেশটির বিভিন্ন দ্বীপের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম নাসি পাডাং, বাওয়াং গোরেং, সাতে কাম্বিং, সিওমাই ও সতো বেতাউই। এদিকে টাটকা উপকরণ এবং হালকা স্বাদের জন্য ভিয়েতনামের খাবার জনপ্রিয়। ১৬তম স্থানে থাকা এই দেশের সেরা পদগুলো হলো বো নুং জ্যাম, বান মি, চা কা লা ভং, মি কোয়াং ও থিত খো টাউ।

ভিয়েতনামের খাবার বান মি। ছবি: টেস্ট অ্যাটলাস
ভিয়েতনামের খাবার বান মি। ছবি: টেস্ট অ্যাটলাস

তালিকার ২৪তম স্থানে আছে থাই রন্ধনশৈলী। এর পরেই আছে ফিলিপাইন। এরপর ২৯তম স্থানে আছে মালয়েশিয়া, ৯০তম স্থানে সিঙ্গাপুর ও ৯৬তম স্থানে আছে লাওসের খাবার। থাই খাবারের মূল আকর্ষণ হলো এর সুষম স্বাদের মিশ্রণ। টক ও নোনতা স্বাদের প্রাধান্য দেখা যায় ফিলিপাইনের খাবারে। মালয়, চীনা ও ভারতীয় স্বাদের মিশ্রণ পাওয়া যায় মালয়েশিয়ান রন্ধনশৈলীতে। সিঙ্গাপুরের রন্ধনশৈলীতে বহুজাতিক প্রভাব স্পষ্ট। লাওসের খাবার প্রধানত স্টিকি রাইস, তাজা ভেষজ এবং লাব নামক মাংসের সালাদের জন্য পরিচিত।

মধ্যপ্রাচ্য ও লেভান্টাইন

কাবাব, রুটি, দই এবং বিশেষ মসলার মিশ্রণের জন্য এই অঞ্চলের খাবার বিখ্যাত। তালিকায় ৩৭তম স্থানে আছে ফিলিস্তিন রন্ধনশৈলী। যেখানে প্রায়শই দানাশস্য, জলপাই তেল এবং স্থানীয় মসলার ব্যবহার দেখা যায়। তালিকায় ৪২তম স্থানে থাকা ইরানি রন্ধনশৈলীর মূল বৈশিষ্ট্য ভাত—বিশেষত জাফরান দেওয়া চেলো, মাংসের স্টু এবং শুকনো ফলের ব্যবহার। লেভান্টাইন স্বাদের এক চমৎকার উদাহরণ সিরিয়ান খাবার। তালিকায় তাদের স্থান ৪৫তম। ৭১তম স্থানে থাকা ইরাকি রন্ধনশৈলী প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতার উত্তরাধিকার বহনকারী ভারী ও পুষ্টিকর খাবার। মধ্য এশীয় এবং ভারতীয় প্রভাবের মিশ্রণ আছে আফগান রন্ধনশৈলীতে। তালিকায় তাদের স্থান ৭৪তম। তালিকার ৯৯তম দেশটির নাম কাতার।

মধ্য এশিয়া ও ককেশাস

ঐতিহ্যবাহী গ্রিলড খাবার, ডাম্পলিং এবং দুধ দিয়ে তৈরি খাবারের ব্যবহার এই অঞ্চলের রন্ধনশৈলীতে গুরুত্বপূর্ণ। তালিকায় ৮৭তম স্থানে আছে আর্মেনিয়ান রন্ধনশৈলী। ককেশাস অঞ্চলের প্রাচীন এই রন্ধনশৈলীতে রুটি, কাবাব এবং ডাম্পলিং উল্লেখযোগ্য। ৯৮তম স্থানে আছে কাজাখস্তানি রন্ধনশৈলী। মধ্য এশীয় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার মাংস, দুধ দিয়ে তৈরি খাবার এবং মাংসের পদ দেশটির প্রধান আকর্ষণ। তাদের সেরা পদগুলোর মধ্যে রয়েছে সামসা, শুজিক, লাগমান, কেসপে ও বাউরসাক।

সূত্র: টেস্ট অ্যাটলাস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা

মুজিব বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়া ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউন: জামায়াত নেতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত