মন্টি বৈষ্ণব
সকাল থেকে পরমার মন খুব খারাপ। রবি ঠাকুরকে আজ খুব বেশি মনে পড়ছে। বহু বছর আগে ২২শে শ্রাবণ মেঘমল্লারে বৃষ্টিস্নাত সুরে কবি বিদায় নিয়েছিলেন। কবির সঙ্গে বর্ষার ছিল অদ্ভুত এক হৃদ্যতা।
পরমার আজ ছুটির দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে যে মুহূর্তে রান্না ঘরে যাবে, ঠিক তখনই দেখল আকাশে ঘন কালো মেঘের ছায়া। অন্ধকার হয়ে এল চারদিক। সঙ্গে সঙ্গেই নামল ঝুম বৃষ্টি। কী আর করা, চুলার আঁচ কমিয়ে পরমা দাঁড়াল বারান্দার গ্রিল ঘেঁষে। বারান্দার গাছেরা তখন বৃষ্টির পানির ছিঁটেফোঁটা পেয়ে উচ্ছ্বসিত।
আকাশে কালো মেঘ মানে, মন খারাপের দিন। আজ সারা দিন পরমার মাথায় ঘুরবে রবি ঠাকুরের গান। বারান্দায় গ্রিল ঘেঁষে দাঁড়াতে গিয়ে বৃষ্টি ফোঁটা যখন পরমার মনকে ভিজিয়ে দিল, তখন আনমনে পরমার গুন গুন করে গাইল—‘এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি/ পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি, নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে।/ রহিয়া রহিয়া বিপুল মাঠের 'পরে/ নব তৃণ-দলে বাদলের ছায়া পড়ে।’
গানের এই লাইনগুলো অনেক বেদনাদায়ক। শুনলে মনের বিষণ্নতা হুট করে জেগে ওঠে। ‘আবার এসেছে আষাঢ়’ গানটি পরমা অনেক বেশি শুনেছে সাগর সেনের কণ্ঠে। অন্যদিকে দেবপ্রিয় বিশ্বাসের গায়কিতে ‘আষাঢ়’ শব্দটি বেশ স্পষ্টভাবে উচ্চারিত হয়েছে। যেটা অন্য কারও গায়কিতে পরমা অনুভব করেনি। তবে, এই গানে সাগর সেন আর দেবপ্রিয় বিশ্বাস—দুজনের কণ্ঠে দুই রকমের ভালো লাগা খুঁজে পায় পরমা। এই গান গুন গুন করে গাইতে গিয়ে পরমা ভেবে দেখল—এই গানের প্রতিটি লাইনের সঙ্গে বর্ষার রূপ-রস যেন একাকার হয়ে গেছে।
রবীন্দ্রনাথ এই গান সুর করেছেন মল্লার রাগে। মল্লার রাগ হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের একটি রাগ। এই রাগ বর্ষা ঋতুর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই রাগকে অনেকে আবার মিঞা মল্লারও বলেন। এই রাগের চলনে ব্যবহৃত স্বরগুলোর মূল কাঠামোকে কিছুটা পরিবর্তন করে যে রাগগুলোর নামকরণ করা হয়েছে, মেঘমল্লার হলো তেমনি একটি রাগ। রাগ মল্লারের সঙ্গে বর্ষা ঋতুর সম্পর্ক অনেক গভীর। তাই এই রাগের চলনে বর্ষার বর্ণনা অনেক বেশি প্রাধান্য পায়। এই কারণে হয়তো মল্লার বা মেঘমল্লার রাগের চলনে বর্ষার রূপকে উপলব্ধি করা যায় ঠিক অন্য রকমভাবে।
ঠিক ভর দুপুরে পরমা যখন সংসারের যাবতীয় কাজ শেষে ঘুমাতে গেল, অনেক দূর থেকে শুনতে পেল আশপাশের কোনো ভবনের ছাদ থেকে জমে থাকা বৃষ্টি পড়ার শব্দ। এই শব্দের সঙ্গে পরমা ছোটবেলা থেকেই পরিচিত। যখনই বাড়িতে বৃষ্টি শুরু হতো, বৃষ্টির পরপরই শুনতে পেত এই শব্দ। আজ সেই শব্দের মোহে পরমা নিজের অজান্তে গুণগুণ করে গাইল—
‘মেঘমল্লারে সারা দিনময়,/ বাজে ঝরনার গান...’
দুপুরের পর বিকেল ঘনিয়ে এল। এখনো বৃষ্টির আভাস আছে চারদিকে। পরমা ছুটে গেল ছাদে। বৃষ্টির ফোঁটা ঝরতেই মেঘমল্লারের সুরে গাইতে থাকল—‘নীল অঞ্জন-ঘন পুঞ্জছায়ায় সম্বৃত অম্বর হে গম্ভীর,/ বন-লক্ষ্মীর কম্পিত কায়, চঞ্চল অন্তর, /ঝংকৃত তার ঝিল্লির মঞ্জীর হে গম্ভীর।’
কিন্তু ছাদে পরমার মন খুব বেশিক্ষণ রইল না। ফিরে এল নিজের ঘরের তানপুরা কাছে। তানপুরার সুরে মল্লার রাগে গাইল—
‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান
আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।’
ষড়ঋতুর এ দেশে ঘুরে ফিরে বর্ষা আসে এক বছর পর। আর প্রতি বছর বর্ষণ মুখরিত দিনে সবুজের ছোঁয়াতে প্রাণ ফিরে পায় রবি ঠাকুরের গান। কবিগুরুর সুরের খেলায় ফুটে ওঠে বর্ষার অন্য এক রূপ। তিনি প্রকৃতিকে দেখেছেন অন্তরের গভীর থেকে। এককথায় রবীন্দ্রনাথ আর বর্ষা যেন একই সুতোয় গাঁথা মালা। বর্ষা ছাড়া যেমন প্রকৃতি পূর্ণতা পায় না, তেমনি রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বর্ষা ঋতুও পূর্ণতা পায় না। তাই মেঘ থেকে ঝরে পড়া বৃষ্টি, রবি ঠাকুরের লেখায়, সুরে ও বাণীতে হয়ে ওঠে অনবদ্য।
সকাল থেকে পরমার মন খুব খারাপ। রবি ঠাকুরকে আজ খুব বেশি মনে পড়ছে। বহু বছর আগে ২২শে শ্রাবণ মেঘমল্লারে বৃষ্টিস্নাত সুরে কবি বিদায় নিয়েছিলেন। কবির সঙ্গে বর্ষার ছিল অদ্ভুত এক হৃদ্যতা।
পরমার আজ ছুটির দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে যে মুহূর্তে রান্না ঘরে যাবে, ঠিক তখনই দেখল আকাশে ঘন কালো মেঘের ছায়া। অন্ধকার হয়ে এল চারদিক। সঙ্গে সঙ্গেই নামল ঝুম বৃষ্টি। কী আর করা, চুলার আঁচ কমিয়ে পরমা দাঁড়াল বারান্দার গ্রিল ঘেঁষে। বারান্দার গাছেরা তখন বৃষ্টির পানির ছিঁটেফোঁটা পেয়ে উচ্ছ্বসিত।
আকাশে কালো মেঘ মানে, মন খারাপের দিন। আজ সারা দিন পরমার মাথায় ঘুরবে রবি ঠাকুরের গান। বারান্দায় গ্রিল ঘেঁষে দাঁড়াতে গিয়ে বৃষ্টি ফোঁটা যখন পরমার মনকে ভিজিয়ে দিল, তখন আনমনে পরমার গুন গুন করে গাইল—‘এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি/ পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি, নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে।/ রহিয়া রহিয়া বিপুল মাঠের 'পরে/ নব তৃণ-দলে বাদলের ছায়া পড়ে।’
গানের এই লাইনগুলো অনেক বেদনাদায়ক। শুনলে মনের বিষণ্নতা হুট করে জেগে ওঠে। ‘আবার এসেছে আষাঢ়’ গানটি পরমা অনেক বেশি শুনেছে সাগর সেনের কণ্ঠে। অন্যদিকে দেবপ্রিয় বিশ্বাসের গায়কিতে ‘আষাঢ়’ শব্দটি বেশ স্পষ্টভাবে উচ্চারিত হয়েছে। যেটা অন্য কারও গায়কিতে পরমা অনুভব করেনি। তবে, এই গানে সাগর সেন আর দেবপ্রিয় বিশ্বাস—দুজনের কণ্ঠে দুই রকমের ভালো লাগা খুঁজে পায় পরমা। এই গান গুন গুন করে গাইতে গিয়ে পরমা ভেবে দেখল—এই গানের প্রতিটি লাইনের সঙ্গে বর্ষার রূপ-রস যেন একাকার হয়ে গেছে।
রবীন্দ্রনাথ এই গান সুর করেছেন মল্লার রাগে। মল্লার রাগ হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের একটি রাগ। এই রাগ বর্ষা ঋতুর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই রাগকে অনেকে আবার মিঞা মল্লারও বলেন। এই রাগের চলনে ব্যবহৃত স্বরগুলোর মূল কাঠামোকে কিছুটা পরিবর্তন করে যে রাগগুলোর নামকরণ করা হয়েছে, মেঘমল্লার হলো তেমনি একটি রাগ। রাগ মল্লারের সঙ্গে বর্ষা ঋতুর সম্পর্ক অনেক গভীর। তাই এই রাগের চলনে বর্ষার বর্ণনা অনেক বেশি প্রাধান্য পায়। এই কারণে হয়তো মল্লার বা মেঘমল্লার রাগের চলনে বর্ষার রূপকে উপলব্ধি করা যায় ঠিক অন্য রকমভাবে।
ঠিক ভর দুপুরে পরমা যখন সংসারের যাবতীয় কাজ শেষে ঘুমাতে গেল, অনেক দূর থেকে শুনতে পেল আশপাশের কোনো ভবনের ছাদ থেকে জমে থাকা বৃষ্টি পড়ার শব্দ। এই শব্দের সঙ্গে পরমা ছোটবেলা থেকেই পরিচিত। যখনই বাড়িতে বৃষ্টি শুরু হতো, বৃষ্টির পরপরই শুনতে পেত এই শব্দ। আজ সেই শব্দের মোহে পরমা নিজের অজান্তে গুণগুণ করে গাইল—
‘মেঘমল্লারে সারা দিনময়,/ বাজে ঝরনার গান...’
দুপুরের পর বিকেল ঘনিয়ে এল। এখনো বৃষ্টির আভাস আছে চারদিকে। পরমা ছুটে গেল ছাদে। বৃষ্টির ফোঁটা ঝরতেই মেঘমল্লারের সুরে গাইতে থাকল—‘নীল অঞ্জন-ঘন পুঞ্জছায়ায় সম্বৃত অম্বর হে গম্ভীর,/ বন-লক্ষ্মীর কম্পিত কায়, চঞ্চল অন্তর, /ঝংকৃত তার ঝিল্লির মঞ্জীর হে গম্ভীর।’
কিন্তু ছাদে পরমার মন খুব বেশিক্ষণ রইল না। ফিরে এল নিজের ঘরের তানপুরা কাছে। তানপুরার সুরে মল্লার রাগে গাইল—
‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান
আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।’
ষড়ঋতুর এ দেশে ঘুরে ফিরে বর্ষা আসে এক বছর পর। আর প্রতি বছর বর্ষণ মুখরিত দিনে সবুজের ছোঁয়াতে প্রাণ ফিরে পায় রবি ঠাকুরের গান। কবিগুরুর সুরের খেলায় ফুটে ওঠে বর্ষার অন্য এক রূপ। তিনি প্রকৃতিকে দেখেছেন অন্তরের গভীর থেকে। এককথায় রবীন্দ্রনাথ আর বর্ষা যেন একই সুতোয় গাঁথা মালা। বর্ষা ছাড়া যেমন প্রকৃতি পূর্ণতা পায় না, তেমনি রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বর্ষা ঋতুও পূর্ণতা পায় না। তাই মেঘ থেকে ঝরে পড়া বৃষ্টি, রবি ঠাকুরের লেখায়, সুরে ও বাণীতে হয়ে ওঠে অনবদ্য।
ইতস্তত করে হলেও স্বীকার করতেই হয়, এখনো অনেকের কাছে সৌন্দর্য মানে হলো ফরসা আর নিখুঁত ত্বক। প্রযুক্তির ঘনঘটা আর নারী স্বাধীনতার এ সময়ে এসেও পাত্রপক্ষ কনের ফরসা রঙেই বেশি মজে। ফলে নারীদের মধ্য়েও ছোটবেলা থেকে গায়ের রং উজ্জ্বল করে তোলার কসরত চলতে থাকে।
৪ ঘণ্টা আগেবিটরুটের সালাদ আর ভাজি তো সব সময় খাওয়া হয়। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ ইদানীং বিটরুটের জুসও পান করছেন। বেশ ট্রেন্ডে রয়েছে এই জুস। তবে চাইলে বিটরুট দিয়ে ভিন্ন স্বাদের স্ন্যাকস ও ডেজার্ট তৈরি করা যায়।
৪ ঘণ্টা আগেএকজন স্বাস্থ্যবতী নারী যদি বলেন, ‘আমার যা পরতে ভালো লাগে, তা-ই পরব।’ তাহলে আশপাশে মুখ টিপে হাসার মতো মানুষের অভাব হয় না। এখন কথা হচ্ছে, প্লাস সাইজের কোনো মানুষ কি ফ্যাশন নিয়ে ভাববেন না?
৪ ঘণ্টা আগেকারও পছন্দ হাতলওয়ালা চিরুনি আবার কারও পছন্দ চিকন দাঁতের। একসময় হাতির দাঁতের চিরুনি তৈরি হতো। শঙ্খ দিয়ে তৈরি চিরুনির কথাও শোনা যায়। তবে সেসব দিন গত হয়েছে। এখন বেশির ভাগ চিরুনি তৈরি হয় প্লাস্টিক থেকে। কখনো দেখা যায় কাঠের চিরুনিও।
৪ ঘণ্টা আগে