Ajker Patrika

কেন আপনি পুলিশ হতে চাইলেন

জেলী খাতুন
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৫, ১৬: ১৩
সালাহ্উদ্দিন কাদের
সালাহ্উদ্দিন কাদের

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন সালাহ্উদ্দিন কাদের। ৪৩তম বিসিএসে অংশ নিয়ে তিনি পুলিশ ক্যাডারে (সহকারী পুলিশ সুপার) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাঁর ভাইভার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন জেলী খাতুন

সালাহ্উদ্দিন: কলবেল বাজার পর ‘স্যার, আমি কি আসতে পারি?’ বলে অনুমতি চাইলাম।

চেয়ারম্যান: আসুন, বসুন।

সালাহ্উদ্দিন: আসসালামু

আলাইকুম, স্যার।

প্রথম এক্সটার্নাল: Mr. SalaUddin Kader, Are you proud of your name?

সালাহ্উদ্দিন: Definitely, sir.

চেয়ারম্যান: (মৃদু হাসলেন) ওকে। আপনি পছন্দ তালিকায় পুলিশ ক্যাডার প্রথমে দিয়েছেন, শিক্ষা ক্যাডার শেষে দিয়েছেন। কারণটি ব্যাখ্যা করুন।

সালাহ্উদ্দিন: স্যার, পুলিশ ক্যাডার প্রথমে দেওয়ার কারণ হলো পুলিশ অফিসার হওয়া আমার চাইল্ডহুড ড্রিম।

চেয়ারম্যান: চাইল্ডহুড ড্রিম? আচ্ছা, কেন আপনি পুলিশ হতে চাচ্ছিলেন? প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই প্রথম এক্সটার্নাল জানতে চাইলেন, আপনি তখন কোন ক্লাসে পড়তেন?

সালাহ্উদ্দিন: স্যার, আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়তাম।

চেয়ারম্যান: ও আচ্ছা। তাহলে বলুন, কী দেখে আপনি পুলিশ হতে চাইলেন?

সালাহ্উদ্দিন: স্যার, আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা মহেশখালীতে। এটি একসময় বাংলাদেশের অন্যতম অপরাধপ্রবণ অঞ্চল ছিল। তখন প্রায়ই দেখতাম, অপরাধ দমন ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ সদস্যরা ঝুঁকি সত্ত্বেও অনেক আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতেন। মামলা তদন্তের কাজে পুলিশ অফিসাররা আমাদের গ্রামে এলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তাঁরা যে সম্মানটা পেতেন, তা আমাকে অনেক আকৃষ্ট করত। পাশাপাশি, পুলিশের ইউনিফর্মের প্রতিও আমার তীব্র আকর্ষণ কাজ করে।

চেয়ারম্যান: খুব ভালো। তাহলে কি আমরা ধরে নেব, শিক্ষকেরা সম্মান পায় না! তাই আপনি শিক্ষকতাকে সবার শেষে রেখেছেন?

সালাহ্উদ্দিন: মোটেও সে রকম নয়, স্যার। শিক্ষকেরা সমাজের আদর্শ। তাঁরা সবার কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারে ধীরগতির পদোন্নতি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সহজে পদায়ন না পাওয়া, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে না পারা—ইত্যাদি কারণে আমি এই ক্যাডারকে শেষে রেখেছি।

চেয়ারম্যান: তা ঠিক, বাস্তবতা এমনই। আচ্ছা ধরুন, আপনি ৪৩তম বিসিএসে অ্যাডমিন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেন। ৫৩তম বিসিএসেও কি শিক্ষা ক্যাডারের একই পরিস্থিতি দেখতে চান?

সালাহ্উদ্দিন: (প্রশ্নটা আমি প্রথমে ভালো করে শুনতে পাইনি। বিনয়ের সঙ্গে বললাম, দুঃখিত স্যার, প্রশ্নটা আমি বুঝতে পারিনি। তখন তিনি প্রশ্নটা রিপিট করলেন। এবার আমি উত্তর দিলাম।) স্যার, আমি প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার পর কখনো নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ পেলে শিক্ষা ক্যাডারের পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অবস্থার উন্নতিতে চেষ্টা করব। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে প্রশাসনিক পদগুলোতে যাতে শিক্ষকেরাই পদায়িত হন, সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

(এই উত্তরে বোর্ডকে সন্তুষ্ট মনে হলো। একে অপরের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লেন।) এরপর চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা দ্বিতীয় এক্সটার্নালকে প্রশ্ন করতে বললেন।

দ্বিতীয় এক্সটার্নাল: আমাদের Atmosphere-এর স্তরগুলোর সিরিয়ালি নাম বলুন।

সালাহ্উদ্দিন: স্যার, আমাদের বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর ট্রপোস্ফিয়ার, এরপর পর্যায়ক্রমে স্ট্রাটোস্ফিয়ার, মেসোস্ফিয়ার, আয়নোস্ফিয়ার ও এক্সোস্ফিয়ার।

দ্বিতীয় এক্সটার্নাল: ওজোন মণ্ডল কোন স্তরে থাকে?

সালাহ্উদ্দিন: স্ট্রাটোস্ফিয়ারে, স্যার।

দ্বিতীয় এক্সটার্নাল: ওজোন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

সালাহ্উদ্দিন: স্যার, সূর্য থেকে যে অতি বেগুনি রশ্মি নির্গত হয়, সেগুলো ওজোনস্তরে এসে বাধা পায়। ওজোনস্তর না থাকলে অতি বেগুনি রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে চলে আসবে। ফলে গ্রিনহাউস ইফেক্টের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঘটবে এবং ক্যানসারসহ বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

দ্বিতীয় এক্সটার্নাল: গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর নাম বলুন।

সালাহ্উদ্দিন: গ্রিনহাউস গ্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মিথেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, জলীয়বাষ্প ইত্যাদি।

দ্বিতীয় এক্সটার্নাল: আকাশ থেকে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো ওপরে না গিয়ে নিচে কেন নেমে আসে?

সালাহ্উদ্দিন: স্যার, গ্র‍্যাভিটেশনাল ফোর্স বা মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে বৃষ্টির পানি নিচে নেমে আসে।

দ্বিতীয় এক্সটার্নাল: এরপর বৃষ্টির পানি যে মাটিতে ঢুকে যায়, তাকে কী বলে?

‎(ইংরেজি টার্মটা ঠিক মনে করতে পারছিলাম না। স্যার আবার বললেন, আমরা তো বৃষ্টির পানি সরাসরি খাই না, প্রথমে মাটিতে ঢুকে যায়, এরপর আমরা উত্তোলন করি। এই যে মাটির ভেতরে ঢুকে যাওয়া এটাকে কী বলে?)

‎সালাহ্উদ্দিন: স্যার, টার্মটা মনে পড়ছে না। সম্ভবত সেডিমেন্টেশন।

‎‎দ্বিতীয় এক্সটার্নাল: সেডিমেন্টেশন?

‎সালাহ্উদ্দিন: সরি স্যার, নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।

‎‎দ্বিতীয় এক্সটার্নাল: মাটি থেকে আমরা পানি উত্তোলন করি, এই পানিগুলো কোন স্তরে থাকে?

‎সালাহ্উদ্দিন: লিথোস্ফিয়ারে, স্যার।

‎‎দ্বিতীয় এক্সটার্নাল: লিথোস (Lithos) মানে কী?

‎সালাহ্উদ্দিন: প্রথমে ভুলে Soil বলার পর সঙ্গে সঙ্গে আবার রক (Rock) বলেছি।

‎‎দ্বিতীয় এক্সটার্নাল: গুড। একুইফার কী?

‎সালাহ্উদ্দিন: স্যার, একুইফার হলো জলাধার। ভূপৃষ্ঠে কিংবা ভূগর্ভে অসংখ্য aquifer আছে।

‎‎দ্বিতীয় এক্সটার্নাল: Aqueduct, Aquitard এই টার্মগুলোর অর্থ কী?

‎সালাহ্‌উদ্দিন কাদের: সরি, স্যার।

‎‎এবার স্যার আমাকে প্রথম এক্সটার্নালের কাছে ছেড়ে দিলেন।

‎প্রথম এক্সটার্নাল: ধরুন, আপনাকে পুলিশ হিসেবে যেখানে পদায়ন করা হলো, সেখানে আপনি একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করলেন। কিন্তু এলাকার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এসে আপনাকে জোর করছেন আসামিকে ছেড়ে দিতে। তখন আপনি কী করবেন?

‎সালাহ্উদ্দিন: স্যার, ব্যাপারটা যে সম্পূর্ণ বেআইনি এবং একজন অপরাধীকে এভাবে ছেড়ে দিতে আমি যে অপারগ, সেটা তাঁকে বুঝিয়ে বলব। তবুও তিনি জোর করলে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দ্রুত বিষয়টি অবহিত করব।

‎প্রথম এক্সটার্নাল: গুড। এবার আপনাকে একটু ভিন্ন কিছু জিজ্ঞেস করি। পার্থিব, মানবজমিন, দূরবীন এসব কী? কার লেখা?

‎সালাহ্‌উদ্দিন কাদের: সরি, স্যার। বলতে পারছি না।

‎প্রথম এক্সটার্নাল: (একটু অবাক হয়ে) আপনি এগুলোর একটার নামও কখনো শোনেননি? আচ্ছা, আপনি পাঠ্যবইয়ের বাইরে কার কার বই পড়েছেন?

‎সালাহ্‌উদ্দিন কাদের: স্যার, আমি কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বই পড়েছি। সম্প্রতি কাজী নজরুলের ‘মৃত্যুক্ষুধা’ উপন্যাসটা পড়েছি। তাঁর কবিতাও ভালো লাগে।

‎প্রথম এক্সটার্নাল: আর?

‎সালাহ্উদ্দিন: হুমায়ূন আহমেদ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প ও উপন্যাসগুলো পড়তে ভালো লাগে।

‎প্রথম এক্সটার্নাল: মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কয়েকটি চলচ্চিত্রের নাম বলুন।

‎সালাহ্‌উদ্দিন কাদের: ওরা ১১ জন, গেরিলা। আর মনে পড়ছিল না, তাই বেশি বলতে পারলাম না।

‎প্রথম এক্সটার্নাল: হুমায়ূন আহমেদের বেশ কিছু মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ও চলচ্চিত্র আছে। সেগুলোর নাম বলুন।

‎সালাহ্উদ্দিন: আগুনের পরশমণি, জোছনা ও জননীর গল্প। বাকি বইগুলোর নাম মনে করতে পারছিলাম না। তাই সরি বললাম।

এক্সটার্নাল আমার হতাশ ভঙ্গি দেখে বললেন, ইটস্ ওকে। ভাইভায় সব প্রশ্নের উত্তর কে পারে? (হাসলেন) আমিও মুচকি হেসে স্যারকে ধন্যবাদ দিলাম। এরপর চেয়ারম্যান স্যার বললেন, ঠিক আছে, তোমার কাগজপত্র নিয়ে যাও। আমি স্যারকে ধন্যবাদ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কাগজগুলো নিলাম। ‎

‎দিকনির্দেশনা: ভাইভা হলো একটা মনস্তাত্ত্বিক খেলা। আপনি অনেক কিছুই জানেন, আবার যেন কিছুই জানেন না। তাই উত্তর দিতে না পারলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। শেষ পর্যন্ত কনফিডেন্স ও মুখে হাসি ধরে রাখতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আপনি পরিশ্রমী ও মেধাবী হলে সৃষ্টিকর্তা আপনাকে বিনা পারিশ্রমিকে কখনোই বিদায় করবেন না। সবার জন্য অজস্র শুভকামনা রইল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আ.লীগের এমপি শাম্মীর বাসায় ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি ও ভাগ-বাঁটোয়ারার বিবরণ দিলেন রিয়াদ

কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা: কে এই ফ্লাইট এক্সপার্ট এমডি সালমান, বাবার হাত ধরে যাঁর উত্থান

গঙ্গাচড়ায় হিন্দুপল্লিতে হামলাকারীদের উসকানি, স্থানীয় সাংবাদিক গ্রেপ্তার

কিশোরগঞ্জে হর্টিকালচারের উপপরিচালকের বিরুদ্ধে ‘সমকামিতার’ অভিযোগ, মামলা বাবুর্চির

অতিরিক্ত ফি দাবি করায় বিমানবন্দর স্টাফের চোয়াল ভেঙে দিলেন যাত্রী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত