Ajker Patrika

কাজের চাপ দূরে রাখার দাওয়াই

আরাফাত শাহরিয়ার
আপডেট : ২৩ মে ২০২২, ১২: ৪৪
কাজের চাপ দূরে রাখার দাওয়াই

রাস্তায় ভয়ানক জ্যাম, হররোজ অফিসে লেট! বসের বকাঝকা। একগাদা কাজ কীভাবে করবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না। এরই মধ্যে যোগ হলো বাইরের উটকো ঝুট-ঝামেলা! এত্তসব যন্ত্রণা কাঁহাতক সহ্য করা যায়? ভাবছেন, চাপকেই যদি চাপে রাখা যায়!

ঘুম যখন ভাঙল, ততক্ষণে অনেক বেলা হয়ে গেছে। গোসল সারতে বাথরুমে ঢুকেছেন, দেখলেন কলে পানি নেই। কোনোক্রমে গোসল সেরে যেই-না অফিসের উদ্দেশে বাইরে বের হলেন, দেখলেন বাসের জন্য দীর্ঘ লাইন। ঠেলেঠুলে গাড়িতে উঠে বাদুড়ঝোলা হয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য মনস্থির করলেন। দীর্ঘ জ্যামের কারণে অফিসে পৌঁছাতে আজও লেট! অফিসে এসেই শুনলেন বড় সাহেব আপনার খোঁজ করেছেন। এত্তসব বিড়ম্বনা ইতিমধ্যে তৈরি করেছে বাড়তি চাপ। দিনের শুরুটাই যদি হয় স্ট্রেস বা মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে, এর চেয়ে যন্ত্রণা আর কী হতে পারে। তবে চাপ সামলে নেওয়াটাও কম কথা নয়!

বেলা যে যায়

অফিসের কাজকর্ম ঘিরে মানসিক চাপের একটা বড় অংশ তৈরি হয়। এসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই বেলা গড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে কাজের চাপ। এই ধাক্কা সামলে নেওয়া যায় খুব সহজেই। কাজের শুরুতেই যেসব কাজ করতে হবে, তার তালিকা করে নিন। কোনো কাজে অন্যের সহযোগিতারও দরকার পড়তে পারে। দিনের শুরুতেই তা জানিয়ে দিন। অনেকে কাজ পরে করবেন বলে জমিয়ে রাখেন, তা করবেন না। আবার কাজের পরিমাণ যতই হোক, একসঙ্গে অনেক কাজ করার মতো ভুল করবেন না। প্রতিটি কাজ শেষ হলে কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে পরের কাজ শুরু করুন। এতে মানসিক চাপ কমে যায়। আর একসঙ্গে অনেক কাজ হাতে নিলে মনের ওপর যে চাপ পড়ে, তা বরং কাজের গতিকেই মন্থর করে দেয়।

একটুখানি বিনোদন

একনাগাড়ে, বিশ্রামহীন কাজ করলেই ভালো আউটপুট আসবে, এমন আশা করা বোকামি। কাজের ফাঁকে খানিকক্ষণ খোশগল্প করতে পারেন পাশের সহকর্মীর সঙ্গে। প্রিয়জনদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারেন। খানিকটা সময় প্রিয় কোনো কবির কবিতা, কোনো গল্পের বই বা পত্রিকা পড়তে পারেন। কিংবা চা-শিঙাড়া খেতে ঢুঁ মারতে পারেন ক্যানটিনেও। এ ধরনের একটুখানি মনের খোরাক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। দুপুরের পর সাধারণত ক্লান্তি বাড়তে থাকে। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে স্ট্রেসও। চাপ সামলাতে চাইলে কিছু যোগব্যায়ামও করে দেখতে পারেন। দুপুরের লাঞ্চের পর যে সময়টাতে একটা ঘুম ঘুম ভাব চলে আসে, সেই সময়টাতে গভীর একটা শ্বাস নিয়ে তিন সেকেন্ড ধরে রাখুন। এভাবে পর পর পাঁচবার শ্বাস নেওয়া আর ছেড়ে দেওয়ার ব্যায়াম করলে শরীর কিছুটা চাঙা হতে পারে। মোদ্দাকথা, কাজের ফাঁকে খানিকটা সময় বের করুন নিজের বিনোদনের জন্য। একটানা কাজে হাঁপিয়ে উঠলে এই বিনোদনগুলোই আপনাকে মানসিক চাপ সামলানোর দাওয়াই জোগাবে।

দূরে থাক উটকো ঝুট-ঝামেলা

কাজের চাপের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে আরও অনেক চাপ। আমরা কেউ তো আর জগৎ-সংসারের বাইরে নই। পারিবারিক কিংবা সামাজিক কত্ত ঝুট-ঝামেলাই তো তৈরি করতে পারে বাড়তি চাপ। দেখা গেল পারিবারিক কোনো সমস্যার জের টানতে হচ্ছে অফিসে বসেই। কোনো দুঃসংবাদও তৈরি করতে পারে স্ট্রেস। চাপ এড়াতে সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার চেষ্টা করুন। অফিসে বসে তো আর বাইরের সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়! তাই বিষয়টি আপাতত ভুলে গিয়ে কাজে মন দিন। সমস্যা যদি হয় গুরুতর, আর একান্তই যদি কাজে মন না বসে, ছুটি নিয়ে বাসায় চলে যান। তবে বাইরের টেনশনকে অফিস সময়ে দূরে ঠেলাই ভালো। আর যাঁরা সারা দিন বাড়ির কাজের এক শ একটা ঝামেলা পোহান, তাঁরা বাড়ির দৈনন্দিন কাজগুলোকে একটা রুটিনের আওতায় আনার চেষ্টা করুন।

চাপ দূরে রাখার দাওয়াই

কোনো বিষয় নিয়ে যে যত বাড়তি চিন্তা করে, স্ট্রেস তত বাড়ে। এই স্ট্রেসের কারণ হতে পারে ঘড়ির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার তাড়া, অফিসে কাজের চাপ, সংসারজীবনে ক্রমাগত কাজের ভারে হাঁপিয়ে ওঠা কিংবা সামাজিক দায়বদ্ধতার মতো যেকোনো কিছু। কারণ যা-ই হোক না কেন, অধিকাংশ স্ট্রেস থেকে বেঁচে চলার মূলমন্ত্র কিন্তু ‘আটকে থাকে দুটি বিষয়ের ওপরই। এর একটি হলো প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা এবং অন্যটি সময় ব্যবস্থাপনা।

মানসিক চাপ তৈরি হওয়ারও কিন্তু আলাদা আলাদা পটভূমি থাকে। তবে ‘স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট’-এর যে দাওয়াই, সেটা কিন্তু গড়পড়তা কাছাকাছি কিছু বিষয়ের ওপরই নির্ভর করে। সারা দিনের কর্মব্যস্ততার যে চাপ তার শুরুটা হয় একেবারে সকাল থেকেই। একটু সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করলে ক্ষতি কী! একটুখানি ব্যায়াম, গোসল আর সময়মতো নাশতা করে একটু আগেভাগেই বেরিয়ে পড়ুন অফিসের উদ্দেশে। সময়মতো বা অফিস শুরুর খানিক আগে অফিসে ঢুকলে চিন্তা করে নেওয়া যায়—কী কী কাজ করতে হবে, কীভাবে এগোবেন। এতে যত কাজই থাক, স্ট্রেস বা চাপ খুব বেশি টলাতে পারবে না আপনাকে।

আরাফাত শাহরিয়ার, শিক্ষা ও ক্যারিয়ারবিষয়ক গ্রন্থপ্রণেতা ও লেখক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত