Ajker Patrika

আফ্রিকার নান্দনিক স্থাপত্যের ৫ মসজিদ

ইজাজুল হক, ঢাকা
আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৩, ১৮: ৩৮
আফ্রিকার নান্দনিক স্থাপত্যের ৫ মসজিদ

মসজিদ ইসলামি সভ্যতার আঁতুড়ঘর। মদিনার মসজিদে নববি থেকেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রাষ্ট্রপরিচালনা করতেন। মুসলমানেরা যেখানেই বসতি স্থাপন করেছেন, সেখানেই গড়ে তুলেছেন মসজিদ। আফ্রিকাও এর ব্যতিক্রম নয়। ৫০ হিজরিতে সাহাবিদের যুগে প্রথম আফ্রিকায় মসজিদ নির্মিত হয়। এখানে আফ্রিকা মহাদেশের ঐতিহাসিক ও নান্দনিক স্থাপত্যের পাঁচটি মসজিদের কথা তুলে ধরা হলো—

 ১. গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স, আলজিয়ার্স, আলজেরিয়া
আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অবস্থিত বিশ্বের সর্বোচ্চ মিনারের মসজিদ গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স। আরবিতে একে বলা হয় জামেউল জাজায়ের। এর মিনারের উচ্চতা ৮৭০ ফুট। আফ্রিকার সবচেয়ে উঁচু ভবন এটি। ৪৩ তলাবিশিষ্ট মিনারটির ৩৭তম তলায় রয়েছে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে এই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। সেখান থেকে দেখা যায় আলজেরিয়া উপসাগর ও ভূমধ্যসাগরের বিশাল জলরাশির অপরূপ সৌন্দর্য। আয়তনের দিক থেকে এটি পৃথিবীর তৃতীয় এবং আফ্রিকার সর্ববৃহৎ মসজিদ। নির্মাণে খরচ হয়েছে বাংলাদেশি টাকায় ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। 

মসজিদ কমপ্লেক্সের মোট আয়তন চার লাখ বর্গমিটার। একসঙ্গে ১ লাখ ৩৭ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন এ মসজিদে। এখানে একটি মাদ্রাসা, ১০ লাখ বই ও ৬ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি লাইব্রেরি, জাদুঘর, বাণিজ্যিক ভবন, রেস্তোরাঁ, প্লাজা, পার্ক, খোলা চত্বর, সংস্কৃতি কেন্দ্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন এবং ফলের বাগান রয়েছে। 

এ মসজিদের নকশা করেছেন জার্মান প্রকৌশলীরা। নির্মাণ করেছে চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এ মসজিদের নির্মাণসামগ্রী। চীন, আলজেরিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের দুই লাখ তিন হাজার লোক এর নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত ছিল। মসজিদে বিদ্যুতের জন্য সোলার প্যানেল, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও বহুবিধ ব্যবহারের আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে।

 ২. দ্বিতীয় হাসান মসজিদ, কাসাব্লাংকা, মরক্কো
মরক্কোর বাণিজ্যিক রাজধানী কাসাব্লাংকায় অবস্থিত দ্বিতীয় হাসান মসজিদ বিশ্বের বড় মসজিদগুলোর একটি। আটলান্টিক মহাসাগরের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ মসজিদ নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী ও সুউচ্চ মিনারের কারণে বিখ্যাত। এটি প্রায় শতভাগ মুসলমানের দেশ মরক্কোর সবচেয়ে বড় মসজিদ এবং প্রধানতম পর্যটনকেন্দ্রও। স্থপতি মিশেল পিনশোর নকশায় ১৯৮৬ সালে এটির নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ১৯৯৩ সালে মহানবী (সা.)-এর জন্মদিনে উদ্বোধন করা হয়। 

ইসলামি স্থাপত্যশৈলী ও মরক্কোর ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশৈলীর মিশেলে মসজিদের নকশা করা হয়। মসজিদের একেকটি অংশ বিশ্বের একেকটি বিখ্যাত মসজিদের অনুকরণে নকশা করা হয়েছে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে ছয় হাজার শিল্পী ও কারিগর মসজিদের ভেতর ও বাইরের দৃষ্টিনন্দন নকশা, মোজাইক, দামি পাথর ইত্যাদি বসানোর কাজ করেন। কিছু গ্রানাইটের স্তম্ভ এবং ৫৬টি বিশাল ঝাড়বাতি ইতালি থেকে আনা হয়। অন্য সব উপাদান মরক্কোর বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা হয়। মসজিদের কিছু অংশ সমুদ্রের পানিতে ভাসমান, সেখানে স্বচ্ছ কাচের ওপর দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় সমুদ্রের উচ্ছলতা। 

৯ হেক্টর জায়গাজুড়ে অবস্থিত এ মসজিদে একসঙ্গে ১ লাখ ১০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটির ভেতরে ২৫ হাজার এবং বাইরের চত্বরে ৮০ হাজার মুসল্লি দাঁড়াতে পারেন। নারীদের জন্য রয়েছে আরও ৫ হাজার আসন। মসজিদের মূল হলঘরটি আয়তাকার, এর দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার, প্রস্থ ১০০ মিটার এবং উচ্চতা ৬০ মিটার। হলঘরের বিশাল ছাদ ৭৮টি বিরাট স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ৩ হাজার ৪০০ বর্গমিটারের এ ছাদের অর্ধেক অংশ যান্ত্রিকভাবে উন্মুক্ত করার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। ছাদ বন্ধ থাকলে অর্ধশতাধিক ঝাড়বাতি মসজিদে আলো ছড়িয়ে রাখে। আর উন্মুক্ত করে দিলে সূর্যের আলো ও চাঁদের জোছনা উপভোগ করতে পারেন মুসল্লিরা।   ৩. আল-আজহার মসজিদ, কায়রো, মিসর
মিসরের কায়রোতে অবস্থিত বিশ্ববিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মসজিদটিই আল-আজহার মসজিদ হিসেবে পরিচিত। ৯৭২ সালে জাওহার আল-সিকিলির নতুন প্রতিষ্ঠিত রাজধানী কায়রোর জন্য এটি নির্মাণ করা হয় এবং রমজানের ৭ তারিখ এটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। আজ-জাহরা হজরত ফাতিমা (রা.)-এর উপাধি। আজ-জাহরা থেকেই আল-আজহার শব্দের উৎপত্তি। ফাতেমি আমলে নির্মিত হওয়ায় হজরত ফাতিমার পবিত্র স্মৃতির উদ্দেশে এর নাম রাখা হয় আল-আজহার। 
 
প্রতিষ্ঠার পর ৯৮৯ সালে মসজিদ কর্তৃপক্ষ ৩৫ জন ইসলামি পণ্ডিতকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়। এরপর ধীরে ধীরে মসজিদটি বিকশিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে তা অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। পুরো বিশ্বে যা আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত। আল-আজহার দীর্ঘদিন ধরে সুন্নি ধর্মতত্ত্ব ও ইসলামি আইন অধ্যয়নের জন্য মুসলিম বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠান বিবেচিত হয়ে আসছে। 

প্রতিষ্ঠার পর আইয়ুবি শাসনামলে এই বিদ্যালয় অবহেলার শিকার হয়। কারণ, শিয়া ইসমাইলিদের হাতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় আইয়ুবি রাজবংশ আল-আজহারকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়নি। অবশ্য মামলুক শাসনামল থেকে আজ পর্যন্ত ভালোই উন্নতি করেছে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান এবং মিসরের ইসলামের প্রতীক মনে করা হয়। 

  ৪. কায়রুয়ান জামে মসজিদ, কায়রুয়ান, তিউনিশিয়া
তিউনিসিয়ার কায়রুয়ান জামে মসজিদের আফ্রিকার সবচেয়ে পুরোনো মসজিদ। ৫০ হিজরি সালে সাহাবি হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর অন্যতম সামরিক কমান্ডার উকবা বিন নাফি (রহ.) ৯ হাজার বর্গমিটার জায়গার ওপর এটি নির্মাণ করেন। তিউনিসিয়ার কায়রুয়ান শহরও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন বলে কায়রুয়ান জামে মসজিদকে উকবা জামে মসজিদও বলা হয়। 

কায়রুয়ান মসজিদ থেকেই আফ্রিকা মহাদেশের প্রথম আজান উচ্চারিত হয়েছিল বলে। শুরুতে এই মসজিদের আয়তন ছিল অনেক ছোট। অত্যন্ত সাধাসিধেভাবে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন শাসনামলে মসজিদের আয়তন ও শান-শওকত বৃদ্ধি পায়। মসজিদটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে একটি শক্তিশালী দুর্গ মসজিদটিকে বেষ্টন করে রেখেছে। 

কাইরুয়ান মসজিদে পাঁচটি গম্বুজ ও নয়টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। এই মসজিদের মেহরাবের কাছে নিচু ছাদবিশিষ্ট আরেকটি কক্ষ রয়েছে। যার নাম মাকসুরা। খলিফাদের নামাজ আদায় এবং তাদের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য এই বিশেষ কক্ষ মাকসুরা নির্মাণ করা হয়েছিল। এই কক্ষের ভেতরে দাঁড়িয়ে মসজিদে অবস্থানরত মুসল্লিদের দেখা যাওয়ার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে এক জামাতে নামাজ আদায় করা যেত। 

কায়রুয়ান জামে মসজিদের প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে ইট ও পাথর দিয়ে। এই প্রাচীরের ভেতরেই তৈরি করা হয়েছে বড় বড় স্তম্ভ। আয়তাকার এসব কারুকাজ তিন স্তরবিশিষ্ট। এর দ্বিতীয় স্তরের কারুকাজ প্রথম স্তরের চেয়ে ছোট এবং তৃতীয় স্তরেরটি দ্বিতীয় স্তরের চেয়ে ছোট। কিন্তু নিচে দাঁড়িয়ে মিনারের দিকে তাকালে তিন স্তরের কারুকাজই সমান মনে হয়। কাইরুয়ান জামে মসজিদের মিম্বর খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছে এবং এটি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম পুরোনো মিম্বর হিসেবে পরিচিত। 

  ৫. দ্য গ্রেট মস্ক অব ডিজেনি, মালি
প্রাচীন সভ্যতার দেশ মালির ডিজেনি মসজিদের নির্মাণশৈলী এখন পর্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তিমুক্ত। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাটির মসজিদ। মাটি, বালু ও পানির সাহায্যে নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদটি। অবশ্য দেয়ালের গাঁথুনি শক্ত করতে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর তালগাছের কাঠ ব্যবহার হয়েছে। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ‘টোরন’। ১২০০ থেকে ১৩০০ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে তৈরি হয় মসজিদটি। মালির সুলতান কনবরু ইসলাম গ্রহণের পর তার রাজপ্রাসাদ ভেঙে ফেলে সেখানে এ মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদের পূর্ব দিকে নিজের বসবাসের জন্য অন্য একটি প্রাসাদ তৈরি করেন। তার পরবর্তী উত্তরাধিকারীরা এ মসজিদের দুটি মিনার নির্মাণ করেন এবং পরে মসজিদটির চারপাশের দেয়াল নির্মাণ করা হয়। 

মসজিদের দেয়ালগুলো নকশা করা। শুধু নকশা নয়, তালগাছের কাঠ মসজিদের দেয়ালে এমনভাবে গেঁথে দেওয়া হয়েছে, যাতে মাটির দেয়াল সহজে ধসে না যায়। এ ছাড়া শতাধিক মিনার সদৃশ ছোট ছোট কাঠামো রয়েছে। প্রতি বছর স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্যোগে মসজিদটির সংস্কারকাজ চলে। প্রচণ্ড গরমের দিনেও মসজিদের ভেতর অত্যন্ত ঠান্ডা থাকে। মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ৩ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। ১৯৮৮ সালে ইউনেসকো এ মসজিদটি বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। 

মসজিদের দেয়াল ও ছাদের ভার বহন করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ৯০টি মজবুত কাঠের কলাম। মসজিদের অভ্যন্তরে আলো-বাতাস প্রবেশের জন্য ছাদ ও দেয়ালে রাখা হয়েছে একাধিক জানালা। তবে সমস্যা হয় বর্ষা মৌসুমে। এ সময় বৃষ্টির পানিতে মসজিদের দেয়াল ও ছাদ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মসজিদের সংস্কারকাজে অংশগ্রহণ করাকে ডিজেনির বাসিন্দার গর্বের বিষয় মনে করেন। মসজিদ সংস্কারের এমন ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার নজির সম্ভবত বর্তমান বিশ্বের আর কোথাও নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোমবার যে কারণে রোজা রাখতেন নবীজি (সা.)

ইসলাম ডেস্ক 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ইসলামের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত রোজা। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে নিজ হাতে রোজার প্রতিদান দেবেন। এ ছাড়া জান্নাতে রোজাদারদের জন্য থাকবে বিশেষ প্রবেশপথ, যা দিয়ে একমাত্র তারাই প্রবেশ করবে।

মহানবী (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন রোজাদাররা প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তাদের প্রবেশের পরই সেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে, যেন এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে না পারে।’ (সহিহ বুখারি: ১৮৯৬)। প্রিয় নবীজি (সা.) আরও বলেন, ‘যে রোজা অবস্থায় ইন্তেকাল করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। (সহিহ আল জামে: ৬২২৪)

নবী করিম (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতে বলতেন। নিজেও বছরের নানা দিনে নফল রোজা রাখতেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) যেসব দিন নফল রোজা রাখতেন, তার মধ্যে অন্যতম সোমবার। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সোম ও বৃহস্পতিবারে রোজা রাখাকে প্রাধান্য দিতেন।’ (সুনানে তিরমিজি: ১০২৭)

আবু কাতাদাহ আনসারি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে একবার সোমবারে রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছিলাম এবং এই দিনেই আমাকে নবুওয়াত দেওয়া হয়েছিল। অথবা, এই দিনে আমার ওপর (কোরআন) নাজিল করা হয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

হাফসা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখতেন। (মাসের প্রথম সপ্তাহের) সোম ও বৃহস্পতিবার এবং (দ্বিতীয় সপ্তাহের) সোমবার।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৪৫১)

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, রোজা তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম। সোমবারের রোজা আমাদের জন্য হতে পারে তাকওয়া অর্জনের অপার সুযোগ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ১০ নভেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৪: ৫১ মিনিট
ফজর০৪: ৫২ মিনিট০৬: ০৯ মিনিট
জোহর১১: ৪৩ মিনিট০৩: ৩৮ মিনিট
আসর০৩: ৩৯ মিনিট০৫: ১৪ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৬ মিনিট০৬: ৩১ মিনিট
এশা০৬: ৩২ মিনিট০৪: ৫১ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সালাম: সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনার সহজ উপায়

ইসলাম ডেস্ক 
পরস্পর সাক্ষাতের আদব। ছবি: সংগৃহীত
পরস্পর সাক্ষাতের আদব। ছবি: সংগৃহীত

আদব ও আন্তরিকতার সঙ্গে সালাম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি শান্তি, কল্যাণ ও নিরাপত্তার বার্তা বহন করে, যা আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় করে। দুঃখজনকভাবে, সমাজে এই মহান সুন্নাহর চর্চা কমে আসছে।

সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে হৃদয়ে ভালোবাসা সৃষ্টি হয় এবং পারস্পরিক বিদ্বেষ দূর হয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে সালামের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘আর যখন তোমাদেরকে সালাম জানানো হয়, তখন তার চেয়েও উত্তমভাবে জবাব দাও অথবা অন্তত সেভাবে জবাব দাও।’ (সুরা নিসা: ৮৬)

নবীজি (সা.) সালামের মাধ্যমে জান্নাতের পথ সহজ করার শিক্ষা দিয়েছেন। হাদিস অনুসারে, সালামের পূর্ণ বাক্য বিনিময়ে ৩০ নেকি লাভ হয়। (সুনানে আবু দাউদ: ৫১৯৫)

রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা ইমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালোবাসবে। আর তা হলো পরস্পরের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রচলন করা।’ (সহিহ মুসলিম: ৫৪)

সালামের এত গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও অবহেলা, মনোযোগের অভাব, সালামকে স্রেফ সৌজন্য মনে করার কারণে এর চর্চা কমছে। অপরিচিত বা কম পরিচিত ব্যক্তিকে সালাম দিতে দ্বিধা করা হয়, অথচ হাদিস অনুযায়ী এতেই বেশি সওয়াব। বিশেষ করে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সালামের চর্চা উল্লেখযোগ্য হারে কমছে।

সালাম কেবল একটি সুন্নাহ নয়, এটি সামাজিক নিরাপত্তা ও আত্মিক শান্তির প্রতীক। যিনি প্রথমে সালাম দেন, তিনি আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় এবং উত্তম। আমরা এই মহান সুন্নাহর ব্যাপক অনুশীলনের মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও ভালোবাসা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারি।

লেখক: মির্জা রিজওয়ান আলম, প্রাবন্ধিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদিয়া বিনিময়ে উৎসাহ দিয়েছেন নবী (সা.)

সাকী মাহবুব
দুজন বন্ধু। ছবি: সংগৃহীত
দুজন বন্ধু। ছবি: সংগৃহীত

মানবসমাজে পারস্পরিক ভালোবাসা, সদ্ভাব ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা ইসলামের অন্যতম প্রধান শিক্ষা। এই লক্ষ্য অর্জনে হাদিয়া বা উপহার আদান-প্রদান একটি অত্যন্ত কার্যকরী ও পরীক্ষিত পদ্ধতি।

হাদিয়া শুধু একটি বস্তুগত বিনিময় নয়, এটি হৃদয়ের অনুভূতি, ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছার এক শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ। ইসলামে এই আমলটিকে অত্যন্ত উৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ, এর মাধ্যমে পাষাণ হৃদয়ও নরম হয়ে যায় এবং তিক্ত সম্পর্কও মধুর হয়ে ওঠে। হাদিয়া আদান-প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মাঝে আন্তরিকতা সৃষ্টি করা। এটি মানুষের মন থেকে রাগ, বিদ্বেষ ও শত্রুতার ভাব দূর করে ভালোবাসার বীজ বপন করে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর উপহার আদান-প্রদান করো, তাহলে তোমাদের মাঝে ভালোবাসা বৃদ্ধি হবে।’ (জামে তিরমিজি)

অনেক সময় সম্পর্কের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি বা তিক্ততা সৃষ্টি হয়, যা থেকে শত্রুতার জন্ম নেয়। হাদিয়া এ ক্ষেত্রে জাদুকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। আন্তরিকভাবে দেওয়া একটি উপহার কঠিন হৃদয়ের দেয়াল ভেঙে দিতে সক্ষম।

হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা পরস্পর হাদিয়া আদান-প্রদান করো। কেননা, হাদিয়া অন্তর থেকে বিদ্বেষ দূর করে দেয়।’ (জামে তিরমিজি)। আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা পরস্পরের সঙ্গে হাত মেলাও, তাহলে তোমাদের বিদ্বেষ দূর হয়ে যাবে; আর তোমরা পরস্পরকে উপহার দাও, তাহলে শত্রুতা দূর হয়ে যাবে।’ (মুআত্তা ইমাম মালেক, আল-আদাবুল মুফরাদ)

বাস্তব জীবনে দেখা যায়, একজন তিক্ততা পোষণকারী আত্মীয় বা প্রতিবেশীকে আন্তরিকতার সঙ্গে একটি উপহার দিলে তার পাষাণ হৃদয়ে পরিবর্তন আসে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এটি প্রমাণ করে যে হাদিয়া মানুষের ভেতরের নেতিবাচক অনুভূতিকে ইতিবাচক রূপে রূপান্তরিত করতে পারে।

হাদিয়া গ্রহণ ও প্রদান করা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি প্রিয় অভ্যাস ছিল। তিনি উপহার গ্রহণ করতেন এবং বিনিময়ে কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা করতেন। এটি ছিল তাঁর উচ্চ নৈতিকতার প্রমাণ।

আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিয়া গ্রহণ করতেন এবং এর প্রতিদান দিতেন।’ (সহিহ্ বুখারি)

সামান্য ও নগণ্য হাদিয়াও তিনি ফিরিয়ে দিতেন না। এর মাধ্যমে তিনি উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন যে উপহারের মূল্য নয়, বরং আন্তরিকতাই আসল। হাদিয়া আদান-প্রদান শুধু একটি সামাজিক প্রথা নয়, এটি একটি ইবাদত এবং নবুওয়াতের শিক্ষা। এটি এমন এক মানবিক কৌশল, যা মানুষের হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করে বিদ্বেষ দূর করে ভালোবাসা ও সদ্ভাব প্রতিষ্ঠা করে।

আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে সম্পর্কগুলোকে সুন্দর ও মজবুত করার জন্য হাদিয়ার এই ঐশী মাধ্যমটিকে গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য। হাদিয়ার মূল্য নয়, বরং এর পেছনে থাকা আন্তরিকতাই পারে যেকোনো মানুষের অন্তর পরিবর্তন করে সম্পর্ককে স্থায়ী ও মধুর করতে।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, নাদির হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, কশবামাজাইল, পাংশা, রাজবাড়ী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত