Ajker Patrika

উত্তর আফ্রিকার রমজান ঐতিহ্য

ইজাজুল হক
উত্তর আফ্রিকার রমজান ঐতিহ্য

পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিভিন্ন ধরনের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এসব সংস্কৃতি সেখানকার মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। তাদের জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস, ধর্মচর্চা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই জানা যায় এসব আচার-অনুষ্ঠান থেকে। উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো এ ক্ষেত্রে বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তাদের কথা লিখেছেন ইজাজুল হক

মরক্কো
মরক্কোর অন্যতম রমজান ঐতিহ্য হলো—বিগহাউস। বিগহাউস সংস্কৃতি হলো, পরিবারের বিবাহিত সদস্যরা রমজানের শুক্রবারে একটি মিলনমেলার আয়োজন করেন, যা পারস্পরিক হৃদ্যতা বাড়াতে সহযোগিতা করে। তাঁদের আরেকটি সুন্দর ঐতিহ্য হলো, যখন পরিবারে শিশুরা প্রথম রোজা রাখতে শুরু করে, তখন মা-বাবা তাদের জন্য দুধ, খেজুর, শুকনো ফল ও অন্যান্য সুস্বাদু উপাদানের সমন্বয়ে একটি বিশেষ ইফতার পার্টির আয়োজন করেন।

মরক্কোয় ১৫ রমজান বিশেষভাবে পালিত হয়। এ দিনে মসজিদে মুসল্লিরা ভিড় করেন এবং কোরআন তিলাওয়াত করেন। নারীরা মিষ্টান্ন তৈরি করে রোজাদার ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করেন।

শবে কদরও সাড়ম্বরে উদ্‌যাপন করেন তাঁরা। এ উপলক্ষে তারা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করেন এবং ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। 
খেজুর ও দুধ দিয়ে ইফতার শুরু করেন মরক্কানরা। মাগরিবের পর তাঁরা ঐতিহ্যবাহী স্যুপ হারিরা পরিবেশন করেন। তারাবির নামাজের পর পরিবেশন করা হয় তাজিন ও কুসকুস ইত্যাদি ভারী খাবার। 

তিউনিসিয়া
মরক্কানদের মতো তিউনিসিয়ানরাও খেজুর ও দুধ দিয়ে ইফতারের ভোজন শুরু করেন। ইফতারের সময় তাঁরা বলেন, ‘সেহাত শরবেতকম’, যার অর্থ ‘স্বাস্থ্য ও সুস্থতা’। তিউনিসিয়ার প্রধানতম ভারী খাবার ‘তাজিন’, যা মরক্কোর তাজিন থেকে কিছুটা আলাদা। ‘রাফিস’ এখানকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিষ্টান্ন, যা খেজুর, কিশমিশ ও চিনির সঙ্গে চাল বা ময়দা মিশিয়ে তৈরি করা হয়। দেশটির উত্তর-পশ্চিমে ময়দা, ঘি ও মধু দিয়ে ‘পোরিজ’ নামের বিশেষ এক রেসিপি তৈরি করা হয়। উপকূল এলাকায় কিশমিশ দিয়ে পায়েস তৈরি হয়। সবজি দিয়ে তৈরি ‘ব্যারাকুচে’ নামের একটি মিষ্টান্নও সেখানে পাওয়া যায়। 

আলজেরিয়া
পরিবারের শিশুরা প্রথম রোজা রাখতে শুরু করলে আলজেরিয়ানরা তা বিশেষভাবে উদ্‌যাপন করে। নারীরা নতুন পোশাক পরে রানি সাজেন। ইফতারের সময় শিশুদের উঁচু স্থানে বসানো হয় এবং প্রশংসা করে তাদের উৎসাহ দেওয়া হয়। ২৭ রমজান রাতে অনেক আলজেরিয়ান পরিবার ছেলেদের খতনা করাতে পছন্দ করে।

হারিরা নামের স্যুপটি মরক্কানদের মতো আলজেরিয়ানদেরও অন্যতম মৌলিক খাদ্য। শুকনো বরই, কিশমিশ, গোলাপজল ও মাংস দিয়ে তৈরি করা হয় বিশেষ ‘সুইট মিট’। ‘বারবোচে’ নামের একটি কুসকুস-জাতীয় খাবারও তাঁরা পরিবেশন করেন। এ ছাড়া রয়েছে বোরাক ও তাজিনের মতো মিষ্টান্নও। সাহরিতে তাঁরা সাধারণত কুসকুস পরিবেশন করেন।  মিসর
মিসরের বাসিন্দারা পবিত্র রমজান সর্বাত্মকভাবে উদযাপন করেন। রোজা, ইবাদত ও দাতব্যকাজে নিজেদের উজাড় করে দেন; বিশেষ করে সাহরি ও ইফতারের ঐতিহ্যবাহী ভোজন, রমজান উপলক্ষে টেলিভিশনগুলোর বিশেষ আয়োজন, ফুটবল টুর্নামেন্টসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে কাটে তাঁদের রমজান। পুরোনো দিনের ঐতিহ্যবাহী সংগীত, বিশেষ লন্ঠনের বর্ণিল আলোকসজ্জা এবং ইফতারের সময় কামান দাগানোর সংস্কৃতি—এলমাদফা মুগ্ধ করার মতো সংস্কৃতি। এ ছাড়া সাহরির সময় দফ বাজিয়ে রোজাদারদের জাগিয়ে দেওয়া হয়; যাকে মেসাহারাতি বলা হয়।

সূত্র: ডেইলি নিউজ ইজিপ্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যেসব রোগ থাকলে হজের অনুমতি দেবে না সৌদি সরকার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রত্যেক হজযাত্রীর সার্বিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হজযাত্রী প্রেরণকারী কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। সংক্রামক রোগসহ সুর্নিদিষ্ট কিছু রোগ থেকে মুক্ত বলে প্রত্যয়নপত্র ছাড়া হজের অনুমতি দেওয়া হবে না। এবিষয়ে সম্প্রতি হজযাত্রী প্রেরণকারী দেশগুলোকে চিঠি পাঠিয়েছে সৌদি সরকার।

ওই চিঠিতে একজন হজযাত্রী যেসব শারীরিক পরিস্থিতিতে হজের অনুমতি পাবেন না তার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে—

* কোনো হজযাত্রীর শরীরের প্রধান অঙ্গগুলো অকার্যকর হলে তিনি হজের অনুমতি পাবেন না। এর মধ্যে রয়েছে ডায়ালাইসিস চলছে এমন কিডনি রোগ, গুরুতর হৃদরোগ, সব সময় অক্সিজেন প্রয়োজন হয়, এ ধরনের ফুসফুসের রোগ ও ভয়াবহ লিভার সিরোসিস।

* গুরুতর স্নায়বিক কিংবা মানসিক রোগ, স্মৃতিভ্রষ্টতাসহ অতি বয়স্ক ব্যক্তি, শেষ প্রান্তিকের গর্ভাবস্থা ও যেকোনো স্তরে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থায়ও হজের অনুমতি মিলবে না।

* সংক্রামক রোগ যেমন—যক্ষ্মা, ভাইরাল হেমোরেজিক জ্বর এবং কেমোথেরাপি কিংবা অন্য কোনো নিবিড় ইমিউনোথেরাপি চিকিৎসা গ্রহণ করছেন এমন ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তিকেও হজের অনুমতি দেবে না সৌদি সরকার।

হজযাত্রী প্রেরণের ক্ষেত্রে হজযাত্রী প্রেরণকারী কর্তৃপক্ষকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত প্রত্যয়ন করে নুসুক মাসার প্লাটফর্মে প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য আবশ্যিকভাবে বৈধ স্বাস্থ্য সনদ ইস্যু করতে অনুরোধ করেছে সৌদি আরব।

আগমন ও বহির্গমন প্রান্তে মনিটরিংয়ে পরিপূর্ণ সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, নুসুক মাসার প্লাটফর্মের মাধ্যমে ইস্যু করা স্বাস্থ্য সনদের সত্যতা ও যথার্থতা যাচাই করবে মনিটরিং দল। কোনো দেশের একজন হজযাত্রীকে তালিকাভুক্ত স্বাস্থ্য পাওয়া যায় তাহলে সেদেশের বিরুদ্ধে সংশোধনমূলক ও নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, মসৃণ ও নিরাপদ হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে শারীরিক সক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদেশ থেকে হজযাত্রী প্রেরণের ক্ষেত্রে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিধিনিষেধগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে।

উল্লেখ্য, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হজের নিবন্ধন না করার জন্য নিবন্ধন শুরু আগেই ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে অনুরোধ হয়েছে। হজ এজেন্সিগুলোকেও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা নিতে সৌদি সরকারের অনুরোধে সেদেশে অনুষ্ঠিত একটি ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করছেন বাংলাদেশি দুজন চিকিৎসক।

-------------------------------------------------------------

নির্দেশনা

সেই অনুযায়ী, সব হজযাত্রী বিষয়ক অফিসকে (Pilgrims’ Affairs Offices) নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিতে হবে:

নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রতিটি হজযাত্রীর জন্য বৈধ স্বাস্থ্য অনুমোদন সনদ (Health Clearance Certificate) ইস্যু করতে হবে, যেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে যে তিনি উপরোক্ত কোনো চিকিৎসাগত অবস্থায় ভুগছেন না। এই সনদ ভিসা ইস্যুর পূর্বশর্ত হিসেবে গণ্য হবে।

প্রবেশ ও প্রস্থান পয়েন্টসহ হজ মৌসুমে হজযাত্রীদের সঙ্গে সম্পর্কিত সব স্থানে কার্যরত তদারকি দলগুলোর সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে।

এসব দল নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ইস্যুকৃত স্বাস্থ্য সনদের সত্যতা ও যথার্থতা যাচাই করবে।

যদি কোনো দেশ থেকে আগত কোনো হজযাত্রীর মধ্যে উল্লেখিত রোগাবস্থা বা নিষিদ্ধ স্বাস্থ্যঝুঁকি পাওয়া যায়, তবে হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট হজযাত্রী বিষয়ক অফিসের বিরুদ্ধে সংশোধনমূলক ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।

অনুরোধ

আপনার মহামান্য দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিনীতভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে যে—

আপনার কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যথাযথ নির্দেশনা প্রদান করুন যেন তাঁরা হজযাত্রীদের আগমনের পূর্বে সঠিক চিকিৎসা পরীক্ষা সম্পন্ন করেন এবং তাদের জন্য বৈধ স্বাস্থ্য অনুমোদন সনদ ইস্যু নিশ্চিত করেন।

এটি আপনার তত্ত্বাবধানে থাকা সব হজযাত্রীদের নিরাপদ, সুস্থ ও নিয়ম-সম্মতভাবে হজ পালনের জন্য অপরিহার্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাহাবিদের মর্যাদা ও আমাদের জীবনচর্চা

মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
মসজিদে নববী, মদিনা। ছবি: সংগৃহীত
মসজিদে নববী, মদিনা। ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের ইতিহাসে সাহাবিদের স্থান অতুলনীয়। নবী করিম (সা.)-এর সরাসরি সঙ্গী এবং তাঁর শিক্ষার অনন্য প্রয়োগকারী হিসেবে তাঁরা মানবতার জন্য এক জীবন্ত উদাহরণ। সাহাবিরা শুধু আল্লাহর পথের পথিকই ছিলেন না; বরং ন্যায়, ধৈর্য, সাহস এবং আত্মত্যাগের সর্বোত্তম পরিচয় স্থাপন করেছিলেন। তাঁদের জীবন ও চরিত্রের মর্যাদা আমাদের জন্য কেবল ইতিহাস নয়; বরং বর্তমান জীবনে নৈতিক ও আত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যবান শিক্ষা।

আজকের এ সমাজে সাহাবিদের আদর্শ ও মূল্যবোধ আমাদের জীবনচর্চার পথপ্রদর্শক হতে পারে। তাঁদের শিক্ষা আমাদেরকে ধৈর্য ধরে লক্ষ্য অর্জন, ন্যায় ও সততার প্রতি অটল থাকা এবং সমাজে সঠিক ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে উদ্বুদ্ধ করে।

সাহাবিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য

ইমান ও নিষ্ঠা: সাহাবিরা নবী করিম (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণে ছিলেন অবিচল। ইসলামের প্রাথমিক যুগে সামাজিক বৈরিতা, পরিবার ও সম্পদের ক্ষতি এবং নানাবিধ বিপর্যয় সত্ত্বেও তাঁরা দৃঢ় ছিলেন।

আত্মত্যাগ ও পরিশ্রম: সাহাবিরা ইসলামের জন্য নিজের সব জীবন উৎসর্গ করেছেন। হিজরতের সময় পরিবার, সম্পদ এবং মাতৃভূমি ত্যাগ, বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ, দান ও খয়রাত বিতরণ এবং শিক্ষার প্রচার—সবই ছিল তাঁদের জীবনের অংশ। এই ত্যাগ ও পরিশ্রম তাঁদের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করেছে এবং আমাদের শেখায় যে, ধর্মের জন্য আত্মত্যাগ সর্বদা সম্মানজনক।

সাহাবিদের শিক্ষণীয় দিক

নৈতিক ও সামাজিক আদর্শ: সাহাবিরা শুধু যুদ্ধে বা ধর্ম প্রচারে নয়, সামাজিক আচরণ ও নৈতিকতার ক্ষেত্রেও আদর্শ ছিলেন। তাঁরা সততা, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও ন্যায়পরায়ণতার সর্বোচ্চ উদাহরণ স্থাপন করেছেন। প্রতিটি মুসলিমের উচিত তাঁদের নৈতিকতা অনুকরণ করা এবং সমাজে একটি সুসংগঠিত ও ন্যায়পরায়ণ পরিবেশ গঠন করা।

নেতৃত্ব ও পরিকল্পনা: সাহাবিরা নবী করিম (সা.)-এর নির্দেশনায় নেতৃত্বদান ও সমন্বয়পূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনায় পারদর্শী ছিলেন। তাঁরা অসংখ্য মুসলিম সম্প্রদায়কে যুগোপযোগী নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালনা করেছেন। বিশেষ করে হিজরতের সময় মক্কা থেকে মদিনায় স্থানান্তর এবং সেখানে একটি সুশৃঙ্খল মুসলিম সমাজ গঠনের নেতৃত্ব ছিল তাঁদের।

শিক্ষা ও প্রচারের গুরুত্ব: সাহাবিরা ইসলামের শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁরা কেবল জ্ঞান অর্জন করতেন না; বরং তা জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতেন। সাহাবিদের জীবন ছিল ধৈর্য, অধ্যবসায় ও জ্ঞানচর্চার অনন্য সংমিশ্রণ। তাঁদের শিক্ষা আমাদের শেখায় যে, জ্ঞান অর্জন ও সম্প্রসারণই সমাজের প্রকৃত উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।

আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য

সাহাবিদের জীবন আমাদের জন্য চিরন্তন দৃষ্টান্ত। আমাদের উচিত—

  • ১. সাহাবিদের ত্যাগ ও গুণাবলি স্মরণ করা।
  • ২. তাঁদের জীবন ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা।
  • ৩. ইতিহাসের ভুল ব্যাখ্যা থেকে তাঁদের মর্যাদা রক্ষা করা।
  • ৪. নিজেদের জীবনে সাহাবিদের গুণাবলি—ইমান, ধৈর্য, আত্মত্যাগ, সহিষ্ণুতা ও ন্যায়বোধ গড়ে তোলা। সাহাবিদের জীবন আমাদের শেখায় যে, ইমান ও নৈতিকতা কখনো অবহেলা করা উচিত নয়। তাঁরা দেখিয়েছেন কীভাবে কঠিন পরিস্থিতিতেও সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকা যায়।

সাহাবিরা ইসলামের প্রাথমিক যুগে আল্লাহ ও নবীর পথে সর্বস্ব উৎসর্গ করেছেন। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সাহাবিদের মতো আদর্শ অনুসরণে সক্ষম করুন।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগীকল্যাণ সোসাইটি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কোরআনের আলোকে মুমিনের ১০ গুণাবলি

মুহাম্মদ হেদায়ত উল্লাহ
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত

ইসলাম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা মানুষকে ন্যায়, সত্য, শান্তি ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করে। এই ব্যবস্থার কেন্দ্রে রয়েছে ইমান—আল্লাহ, তাঁর রাসুল (সা.), কোরআন ও পরকাল সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস। যে ব্যক্তি ইমানকে অন্তরে ধারণ করে, মুখে প্রকাশ করে এবং কর্মে প্রতিফলিত করে, তিনিই প্রকৃত মুমিন।

কোরআনুল কারিমে মুমিনদের গুণাবলি এমনভাবে বর্ণিত হয়েছে, যা মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নৈতিকতা, শৃঙ্খলা ও আত্মশুদ্ধির দিশা দেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে সুরা মুমিনুনে, যেখানে সফল মুমিনদের সাতটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে।

সুরা মুমিনুনে সফল মুমিনের ছয়টি বৈশিষ্ট্য

আল্লাহ তাআলা সুরা মুমিনুনে বলেন‚ ‘নিশ্চয়ই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ...’ (সুরা মুমিনুন: ১)। এরপর তিনি তাদের ছয়টি বিশেষ গুণের কথা উল্লেখ করেছেন—

  • ১. নামাজে বিনয়ী হওয়া: ‘যারা বিনয়-নম্র নিজেদের নামাজে।’ (আয়াত: ২)
  • ২. অনর্থক কাজ থেকে দূরে থাকা: ‘যারা অসার ক্রিয়াকলাপ হতে বিরত থাকে।’ (আয়াত: ৩)
  • ৩. জাকাত আদায় করা: ‘যারা জাকাতদানে সক্রিয়।’ (আয়াত: ৪)
  • ৪. লজ্জাস্থানের হেফাজত করা: ‘যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে।’ (আয়াত: ৫)
  • ৫. আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা: ‘এবং যারা নিজেদের আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করে।’ (আয়াত: ৮)
  • ৬. নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া: ‘যারা নিজেদের নামাজের প্রতি যত্নবান।’ (আয়াত: ৯)

এই ছয়টি বৈশিষ্ট্য অর্জনকারী মুমিনদের সম্পর্কে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘তারাই উত্তরাধিকারী, যারা উত্তরাধিকারী হবে জান্নাতুল ফিরদাউসের; তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।’ (সুরা মুমিনুন: ১০ ও ১১)

এগুলোই হলো সেই পথ, যা মুমিনকে আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান করে এবং জান্নাতের উত্তরাধিকারী বানায়।

মুমিনের আরও কিছু মৌলিক গুণাবলি কোরআনের আলোকে

কোরআনে আরও বহু স্থানে মুমিনদের গুণাবলি বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে, যেমন—

  • ১. আল্লাহর প্রতি নির্ভেজাল বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুল: ‘মুমিন তো তারাই, যাদের হৃদয় কম্পিত হয় যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় এবং যখন তাঁর আয়াত তাদের নিকট পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের ইমান বৃদ্ধি করে আর তারা তাদের প্রতিপালকের ওপরই নির্ভর করে।’ (আল আনফাল: ২)
  • ২. দানশীলতা: ‘তারা আল্লাহর ভালোবাসায় অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দীদের খাদ্য দান করে।’ (সুরা দাহর: ৮)। মুমিন সমাজে দয়া, সহমর্মিতা ও ন্যায়ের আলোক ছড়িয়ে দেয়।
  • ৩. ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা: ‘ধৈর্যশীলদের প্রতিদান সীমাহীনভাবে প্রদান করা হবে।’ (সুরা জুমার: ১০)। বিপদে ধৈর্য, প্রাপ্তিতে কৃতজ্ঞতা—এটাই মুমিনের চরিত্রের সৌন্দর্য।
  • ৪. নম্রতা ও নৈতিকতা: ‘রহমানের বান্দা তারা, যারা ভূমিতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোক যখন তাদের লক্ষ্য করে (অজ্ঞতাসুলভ) কথা বলে, তখন তারা শান্তিপূর্ণ কথা বলে।’ (সুরা ফুরকান: ৬৩)। অহংকার, গর্ব ও উদ্ধততা মুমিনের চরিত্রে নেই; বরং তার আচরণে প্রকাশ পায় বিনয় ও মমতা।

কোরআনের আলোকে মুমিনের গুণাবলি কেবল আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনা নয়; এটি এক সম্পূর্ণ জীবনপথের নির্দেশিকা। মুমিনের ইমান, নামাজ, তাকওয়া, দানশীলতা ও নৈতিকতা একত্রে গড়ে তোলে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ।

যারা কোরআনের বর্ণিত এই গুণাবলি অর্জনে সচেষ্ট হয়, তারাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা, সমাজের শান্তির দূত এবং আখিরাতে জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী।

‘নিশ্চয়ই সফল হয়েছে সেই মুমিনরা...।’ এই আয়াত শুধু ঘোষণা নয়—এটি প্রতিটি বিশ্বাসীর জন্য প্রেরণার উৎস, যা আমাদের আহ্বান জানায় এক উত্তম, ন্যায়নিষ্ঠ ও আলোকিত জীবনের পথে।

লেখক: প্রভাষক, ইসলামিক স্টাডিজ, দশমিনা ইসলামিয়া কামিল এম এ মাদ্রাসা, পটুয়াখালী

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোমবার যে কারণে রোজা রাখতেন নবীজি (সা.)

ইসলাম ডেস্ক 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ইসলামের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত রোজা। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে নিজ হাতে রোজার প্রতিদান দেবেন। এ ছাড়া জান্নাতে রোজাদারদের জন্য থাকবে বিশেষ প্রবেশপথ, যা দিয়ে একমাত্র তারাই প্রবেশ করবে।

মহানবী (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন রোজাদাররা প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তাদের প্রবেশের পরই সেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে, যেন এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে না পারে।’ (সহিহ বুখারি: ১৮৯৬)। প্রিয় নবীজি (সা.) আরও বলেন, ‘যে রোজা অবস্থায় ইন্তেকাল করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। (সহিহ আল জামে: ৬২২৪)

নবী করিম (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতে বলতেন। নিজেও বছরের নানা দিনে নফল রোজা রাখতেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) যেসব দিন নফল রোজা রাখতেন, তার মধ্যে অন্যতম সোমবার। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সোম ও বৃহস্পতিবারে রোজা রাখাকে প্রাধান্য দিতেন।’ (সুনানে তিরমিজি: ১০২৭)

আবু কাতাদাহ আনসারি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে একবার সোমবারে রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছিলাম এবং এই দিনেই আমাকে নবুওয়াত দেওয়া হয়েছিল। অথবা, এই দিনে আমার ওপর (কোরআন) নাজিল করা হয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

হাফসা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখতেন। (মাসের প্রথম সপ্তাহের) সোম ও বৃহস্পতিবার এবং (দ্বিতীয় সপ্তাহের) সোমবার।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৪৫১)

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, রোজা তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম। সোমবারের রোজা আমাদের জন্য হতে পারে তাকওয়া অর্জনের অপার সুযোগ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত