আনওয়ার হুসাইন
মরুভূমির তপ্ত বুকে হঠাৎ যেমন ঝরে যায় নির্মল বৃষ্টি, যেমন ঘন অন্ধকারের বুক চিরে উদিত হয় প্রথম প্রভাত; তেমনি মানবসভ্যতার অন্তহীন অবক্ষয়ের যুগে তিনি এসেছিলেন আলোর দূত হয়ে। তিনি আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। যিনি পৃথিবীকে দিয়েছেন মুক্তির আলো, মানুষকে দিয়েছেন শান্তির দিশা, আর মানবতাকে দিয়েছেন সত্যিকারের মর্যাদা।
অমানিশা ভেঙে ভোরের সূচনা
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের আগে পৃথিবী ছিল এক ভয়াল অন্ধকারে ঢাকা। কন্যাশিশুকে জীবিত কবর দেওয়া হতো, দাস-দাসীর কোনো অধিকার ছিল না। হারিয়ে গিয়েছিল মানুষের বিবেক। তখন আল্লাহর বাণী পৃথিবীতে আলো হয়ে নেমে এল, ‘বলুন, হে মানুষ! আমি তোমাদের সবার প্রতি প্রেরিত রাসুল।’ (সুরা আরাফ: ১৫৮)। এ যেন আকাশে প্রথম সূর্যোদয়ের মতো; বিভ্রান্ত পৃথিবী পেল নতুন জীবন।
সমতার মহাগান
আরাফাতের ময়দানে তিনি উচ্চারণ করলেন মানবতার শ্রেষ্ঠ জয়গান, ‘তোমাদের সবার পিতা একজন, মা একজন। তোমরা সবাই সমান। কোনো আরবের ওপর অনারবের, শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্রেষ্ঠ সে, যে আল্লাহভীরু।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩৪৮৯, জামে তিরমিজি: ৩২৭০)
এই ঘোষণা ইতিহাসের পাতায় খোদাই করে দিল—মানুষ মানুষকেই ভালোবাসবে। বিভাজন নয়, ঐক্যই হবে সভ্যতার ভিত্তি।
নারীর চোখে মুক্তির আলো
যে সমাজে কন্যা ছিল লজ্জার বোঝা, সেখানে তিনি কন্যাকে জান্নাতের সুখবর দিলেন। ‘যার কন্যাসন্তান আছে এবং সে তাকে জীবিত কবর দেয়নি, তাকে অপমান করেনি, পুত্রকে প্রাধান্য দিয়ে বঞ্চিত করেনি, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৫১৪৬)
নারী পেল সম্মান, পেল উত্তরাধিকার, পেল মর্যাদা। আজও পৃথিবীর নারীর মুক্তির ইতিহাস শুরু হয় নবীজি (সা.)-এর হাত ধরেই।
আখলাকের আলোকবর্তিকা
নবীজি (সা.) শুধু বাণী দেননি; তাঁর জীবনই ছিল বাণীর প্রতিচ্ছবি। তিনি ঘোষণা করলেন, ‘আমি তো উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা সাধনের জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’ (মুয়াত্তা মালেক: ১৬১৪)
শত্রুকে ক্ষমা করা, দুর্বলকে রক্ষা করা, দুঃখীকে ভালোবাসা, সত্যকে আঁকড়ে ধরা—এসব ছিল তাঁর দৈনন্দিন জীবন। এক ব্যবসায়ী হিসেবে তাঁর সততা, এক নেতা হিসেবে তাঁর ন্যায়পরায়ণতা, এক স্বামী ও পিতা হিসেবে তাঁর ভালোবাসা—সব মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন মানবতার সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রতিমূর্তি।
পূর্ণাঙ্গ সভ্যতার দিশারি
মহানবী (সা.) শুধু নামাজের ইমাম নন, তিনি এক পূর্ণাঙ্গ সভ্যতার স্থপতি। রাজনীতি থেকে পরিবার, অর্থনীতি থেকে আইন—সব ক্ষেত্রেই তিনি দিলেন সাম্য ও ন্যায়ের শিক্ষা। তিনি দেখালেন কীভাবে দুনিয়া ও আখিরাতের ভারসাম্য বজায় রেখে জীবনকে সুন্দর করা যায়।
আজকের পৃথিবীর প্রয়োজন
আজ যখন পৃথিবী জ্বলছে বৈষম্য, যুদ্ধ আর ঘৃণার আগুনে, তখন নবীজি (সা.)-এর শিক্ষা আরও জরুরি। তাঁর কণ্ঠ আজও যেন বাতাসে ভেসে আসে, ‘মানুষ মানুষের ভাই।’ এ এক বাণী, যা পারে বিভক্ত দুনিয়াকে জুড়ে দিতে, আহত পৃথিবীকে সান্ত্বনা দিতে।
মহানবী (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, আল্লাহ ছাড়া কারও সামনে মাথা নত কোরো না। দুর্বলকে পদদলিত নয়, বরং রক্ষা করো। নারীর সম্মান রক্ষা করো, শিশুকে ভালোবাসো। সত্যকে আঁকড়ে ধরো, মিথ্যার সঙ্গে আপস কোরো না।
নবীজি (সা.) এসেছিলেন একাকী, হাতে ছিল না সেনাবাহিনী, কোষাগারে ছিল না সোনা-রুপা। কিন্তু তিনি জয় করেছিলেন হৃদয়, ভেঙেছিলেন অন্যায়ের শিকল, জ্বালিয়েছিলেন দয়ার প্রদীপ। পৃথিবীর বুকে যত মানবতা, যত ন্যায়, যত সত্যের দীপ্তি—সবকিছুর কেন্দ্রে আছেন তিনি।
আল্লাহর বাণীই তাঁর শ্রেষ্ঠ পরিচয়, ‘আমি তো তোমাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া: ১০৭)।
হ্যাঁ, মানবজাতির ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ উপহারই হলেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
লেখক: শিক্ষক, মা’হাদুল মাদীনাহ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।
মরুভূমির তপ্ত বুকে হঠাৎ যেমন ঝরে যায় নির্মল বৃষ্টি, যেমন ঘন অন্ধকারের বুক চিরে উদিত হয় প্রথম প্রভাত; তেমনি মানবসভ্যতার অন্তহীন অবক্ষয়ের যুগে তিনি এসেছিলেন আলোর দূত হয়ে। তিনি আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। যিনি পৃথিবীকে দিয়েছেন মুক্তির আলো, মানুষকে দিয়েছেন শান্তির দিশা, আর মানবতাকে দিয়েছেন সত্যিকারের মর্যাদা।
অমানিশা ভেঙে ভোরের সূচনা
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের আগে পৃথিবী ছিল এক ভয়াল অন্ধকারে ঢাকা। কন্যাশিশুকে জীবিত কবর দেওয়া হতো, দাস-দাসীর কোনো অধিকার ছিল না। হারিয়ে গিয়েছিল মানুষের বিবেক। তখন আল্লাহর বাণী পৃথিবীতে আলো হয়ে নেমে এল, ‘বলুন, হে মানুষ! আমি তোমাদের সবার প্রতি প্রেরিত রাসুল।’ (সুরা আরাফ: ১৫৮)। এ যেন আকাশে প্রথম সূর্যোদয়ের মতো; বিভ্রান্ত পৃথিবী পেল নতুন জীবন।
সমতার মহাগান
আরাফাতের ময়দানে তিনি উচ্চারণ করলেন মানবতার শ্রেষ্ঠ জয়গান, ‘তোমাদের সবার পিতা একজন, মা একজন। তোমরা সবাই সমান। কোনো আরবের ওপর অনারবের, শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্রেষ্ঠ সে, যে আল্লাহভীরু।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩৪৮৯, জামে তিরমিজি: ৩২৭০)
এই ঘোষণা ইতিহাসের পাতায় খোদাই করে দিল—মানুষ মানুষকেই ভালোবাসবে। বিভাজন নয়, ঐক্যই হবে সভ্যতার ভিত্তি।
নারীর চোখে মুক্তির আলো
যে সমাজে কন্যা ছিল লজ্জার বোঝা, সেখানে তিনি কন্যাকে জান্নাতের সুখবর দিলেন। ‘যার কন্যাসন্তান আছে এবং সে তাকে জীবিত কবর দেয়নি, তাকে অপমান করেনি, পুত্রকে প্রাধান্য দিয়ে বঞ্চিত করেনি, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৫১৪৬)
নারী পেল সম্মান, পেল উত্তরাধিকার, পেল মর্যাদা। আজও পৃথিবীর নারীর মুক্তির ইতিহাস শুরু হয় নবীজি (সা.)-এর হাত ধরেই।
আখলাকের আলোকবর্তিকা
নবীজি (সা.) শুধু বাণী দেননি; তাঁর জীবনই ছিল বাণীর প্রতিচ্ছবি। তিনি ঘোষণা করলেন, ‘আমি তো উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা সাধনের জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’ (মুয়াত্তা মালেক: ১৬১৪)
শত্রুকে ক্ষমা করা, দুর্বলকে রক্ষা করা, দুঃখীকে ভালোবাসা, সত্যকে আঁকড়ে ধরা—এসব ছিল তাঁর দৈনন্দিন জীবন। এক ব্যবসায়ী হিসেবে তাঁর সততা, এক নেতা হিসেবে তাঁর ন্যায়পরায়ণতা, এক স্বামী ও পিতা হিসেবে তাঁর ভালোবাসা—সব মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন মানবতার সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রতিমূর্তি।
পূর্ণাঙ্গ সভ্যতার দিশারি
মহানবী (সা.) শুধু নামাজের ইমাম নন, তিনি এক পূর্ণাঙ্গ সভ্যতার স্থপতি। রাজনীতি থেকে পরিবার, অর্থনীতি থেকে আইন—সব ক্ষেত্রেই তিনি দিলেন সাম্য ও ন্যায়ের শিক্ষা। তিনি দেখালেন কীভাবে দুনিয়া ও আখিরাতের ভারসাম্য বজায় রেখে জীবনকে সুন্দর করা যায়।
আজকের পৃথিবীর প্রয়োজন
আজ যখন পৃথিবী জ্বলছে বৈষম্য, যুদ্ধ আর ঘৃণার আগুনে, তখন নবীজি (সা.)-এর শিক্ষা আরও জরুরি। তাঁর কণ্ঠ আজও যেন বাতাসে ভেসে আসে, ‘মানুষ মানুষের ভাই।’ এ এক বাণী, যা পারে বিভক্ত দুনিয়াকে জুড়ে দিতে, আহত পৃথিবীকে সান্ত্বনা দিতে।
মহানবী (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, আল্লাহ ছাড়া কারও সামনে মাথা নত কোরো না। দুর্বলকে পদদলিত নয়, বরং রক্ষা করো। নারীর সম্মান রক্ষা করো, শিশুকে ভালোবাসো। সত্যকে আঁকড়ে ধরো, মিথ্যার সঙ্গে আপস কোরো না।
নবীজি (সা.) এসেছিলেন একাকী, হাতে ছিল না সেনাবাহিনী, কোষাগারে ছিল না সোনা-রুপা। কিন্তু তিনি জয় করেছিলেন হৃদয়, ভেঙেছিলেন অন্যায়ের শিকল, জ্বালিয়েছিলেন দয়ার প্রদীপ। পৃথিবীর বুকে যত মানবতা, যত ন্যায়, যত সত্যের দীপ্তি—সবকিছুর কেন্দ্রে আছেন তিনি।
আল্লাহর বাণীই তাঁর শ্রেষ্ঠ পরিচয়, ‘আমি তো তোমাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া: ১০৭)।
হ্যাঁ, মানবজাতির ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ উপহারই হলেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
লেখক: শিক্ষক, মা’হাদুল মাদীনাহ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।
মানুষের মুখের ভাষা তার অন্তরের প্রতিচ্ছবি। একজন মুমিনের মুখের ভাষা শুধু তার ব্যক্তিগত আচরণ নয়; বরং তার ইমান, চরিত্র এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের পরিচায়ক। ইসলাম এমন একটি জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের প্রতিটি দিককে শুদ্ধ ও সুন্দর করার শিক্ষা দেয়। মুখের ভাষা তার অন্যতম।
৫ ঘণ্টা আগেসৌদি আরবের শহরগুলোর নামকরণের পেছনে রয়েছে ইতিহাস, ভূগোল, এবং আধ্যাত্মিকতার গভীর সম্পর্ক। মক্কা ও মদিনা থেকে শুরু করে জেদ্দা এবং নিওম পর্যন্ত, এই শহরগুলোর নাম তাদের উৎপত্তি ও তাৎপর্যকে নির্দেশ করে।
১১ ঘণ্টা আগেনামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১২ ঘণ্টা আগেইসলামের দৃষ্টিতে পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ইসলাম শুধু ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দেয় না, বরং সামাজিক, পরিবেশগত ও আধ্যাত্মিক পরিচ্ছন্নতাকেও সমান গুরুত্ব দেয়।
১৭ ঘণ্টা আগে