Ajker Patrika

খলিফা ওমরের মানবিকতা ও সহাবস্থান নীতি

মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
খলিফা ওমরের মানবিকতা ও সহাবস্থান নীতি

পৃথিবীবাসীকে দীর্ঘদিন ধরে শাসন করে যাওয়া শোষণমূলক সমাজব্যবস্থাকে পরাজিত করে আল্লাহ প্রদত্ত ইনসাফপূর্ণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার যে মিশন মহানবী (সা.) শুরু করেছিলেন, তাঁর পরবর্তী খলিফাগণ তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.) রোমানদের শাসনাধীন থাকা নবী-রাসুলদের স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র ভূমি জেরুজালেম ইসলামি সাম্রাজ্যের অধীনে নিয়ে আসেন। 
 
যেভাবে এল বিজয়
ঐতিহাসিকদের বর্ণনা অনুসারে, খলিফা ওমর (রা.) জর্ডান ও ফিলিস্তিন অঞ্চলে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য বিশিষ্ট সাহাবি আমর ইবনুল আস (রা.)কে সেনাপতি নিযুক্ত করেন। তাঁর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী জর্ডান জয় করে ফিলিস্তিনের দিকে রওনা হয়। আমর দেখলেন, রোমান সেনারা গাজা থেকে কায়সারিয়া, আজনাদাইন থেকে জেরুজালেম—সবখানে ছড়িয়ে আছে। তাই পরামর্শ চেয়ে খলিফাকে চিঠি লেখেন। চিঠি পেয়ে ওমর (রা.) মুআবিয়া (রা.)কে কায়সারিয়া অবরোধের নির্দেশ দেন এবং আলকামা ইবনে মাজ্জারকে গাজা ঘেরাও করে রাখতে বলেন। এই সুযোগে আমর আজনাদাইন জয় করে নেন। রোমান সেনাপতি আরতাবুন আজনাদাইন জেরুজালেমে প্রতিরোধ গড়ে তুললে আমর (রা.) একে একে লড, নাবলুস, জাফা, আমওয়াস, বায়তজিবরিন, গাজা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেন। তবু জেরুজালেম বিজয় করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই সহযোগিতা চেয়ে খলিফার কাছে আবার চিঠি লেখেন। চিঠি পেয়ে খলিফা ওমর (রা.) মদিনার শীর্ষ সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে জেরুজালেম বিজয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। খলিফার আগমনের খবর পেয়ে জেরুজালেমবাসী যুদ্ধের চিন্তা বাদ দিয়ে সন্ধির জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। আরতাবুন জেরুজালেমবাসীর মনোভাব বুঝতে পেরে সেখান থেকে পালিয়ে গেলেন। ওমর (রা.) জেরুজালেম পৌঁছানোর আগেই সেখানকার প্রতিনিধিদল সন্ধির আবেদন নিয়ে চলে আসে। ওমর প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং একটি ঐতিহাসিক চুক্তিনামা লিপিবদ্ধ করেন। 
 
চুক্তিনামায় যা লেখা ছিল
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। এই মর্মে ঘোষণা করা হচ্ছে যে, আল্লাহর বান্দা, ইমানদারদের সেনাপতি ওমর ইবনুল খাত্তাব জেরুজালেমের জনগণের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করছেন। নিরাপত্তা দিচ্ছেন তাদের জান, মাল, গির্জা ও আচার-অনুষ্ঠানাদির। মুসলিমরা তাদের গির্জা দখল বা ধ্বংস করবে না। তাদের জীবন, সম্পদ, আবাসভূমি, ক্রুশ—সবকিছুই নিরাপদ থাকবে। জোর করে কাউকে ধর্মান্তর করা হবে না। জেরুজালেমের অধিবাসীদের অন্যান্য শহরের লোকজনের মতো কর প্রদান করতে হবে এবং অবশ্যই রোমান ও লুটেরাদের বিতাড়িত করতে হবে। জেরুজালেমের যেসব অধিবাসী গির্জা ও ক্রুশ ছেড়ে রোমানদের সঙ্গে নিজেদের সম্পদ নিয়ে চলে যেতে ইচ্ছুক, আশ্রয়স্থলে পৌঁছানো পর্যন্ত তারা নিরাপদ থাকবে। গ্রামের লোকজন চাইলে শহরে বসবাস করতে পারে, তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই শহরের বাকি নাগরিকদের মতো তাদেরও কর প্রদান করতে হবে। সুতরাং কেউ চাইলে রোমানদের কাছে যেতে পারে, চাইলে পরিবার-পরিজনের কাছে থাকতে পারে। ফসল কাটার সময় না আসা পর্যন্ত কারও থেকে কিছুই নেওয়া হবে না। যদি তারা চুক্তি অনুযায়ী কর প্রদান করে, তাহলে এই চুক্তির অধীন শর্তাবলি আল্লাহর কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই চুক্তিনামার পক্ষে সাক্ষী হিসেবে আছেন খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ, আমর ইবনুল আস, আবদুর রাহমান ইবনে আওফ ও মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান (রা.)।
 
যদিও তাবারির বর্ণনামতে, ওমর (রা.) ইহুদিদের জেরুজালেমে থাকতে নিষেধ করেছিলেন, তবে সেই বর্ণনার কোনো সূত্র উল্লেখ না করায় ইতিহাস গবেষকেরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তদুপরি মুসলিম শাসনাধীন জেরুজালেমে ইহুদিদের স্বাধীন জীবনযাপনও সেই বর্ণনাকে ভুল হিসেবে চিহ্নিত করে। 
 
সহাবস্থান ও মানবিকতার নীতি
জেরুজালেমের ইহুদি-খ্রিষ্টানদের প্রতি বিজয়ী মুসলিম বাহিনী যে মানবিক আচরণ করেছিল, ইতিহাসে তার উদাহরণ বিরল। এর আগে যারাই কুদস বিজয় করেছিল, সবাই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের গণহারে হত্যা করেছিল অথবা জোরপূর্বক তাদের ধর্ম মেনে নিতে বাধ্য করেছিল। ইহুদিদের কর্তৃত্বে যখন ছিল, তখন তারা খ্রিষ্টানদের পবিত্র স্থাপনাসমূহের প্রতি চরম অসম্মান প্রদর্শন করেছিল। ইসা (আ.)-এর সমাধির পাশে নির্মিত গির্জাটি আবর্জনার স্তূপে পরিণত করে তার নাম দিয়েছিল কুমামা বা আবর্জনার গির্জা। পরে খ্রিষ্টানরা যখন তার দখল পায়, তখন ইহুদিদের কেবলা সাখরার এমন নিকৃষ্ট পরিণতি করে যে দূর-দূরান্ত থেকে নারীরা তাদের ঋতুস্রাবের ন্যাকড়া এখানে ফেলতে পাঠিয়ে দিত। 
 
ওমর (রা.) বায়তুল মাকদিসে যখন প্রবেশ করেন, তখন ময়লার স্তূপ মিহরাবে দাউদ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। তিনি নিজ হাতে তা পরিষ্কার করতে শুরু করেন। তাঁর দেখাদেখি উপস্থিত মুসলমানরা সেই কাজে অংশ নেন। ওমর (রা.)-এর এই কাজ গভীরভাবে প্রমাণ করে যে, ইসলাম অন্য সব ধর্মের প্রতি সতত শ্রদ্ধাশীল। 
 
খ্রিষ্টানদের সঙ্গে আরও বিস্ময় ও বিমুগ্ধ আচরণ করেন তিনি। তাদের বিশ্বাসের স্বাধীনতা দিয়েছেন। ক্রুশ ও গির্জায় তাদের বাধাহীন করেছেন। এরপর তিনি কিয়ামা গির্জায় যান। নামাজের সময় হলে যাজক গির্জার ভেতরে তাঁকে নামাজ আদায় করতে বলেন। কিন্তু তিনি এই বলে সেখানে নামাজ আদায় থেকে বিরত থাকলেন যে, পরবর্তী সময়ে মুসলমানরা একে দলিল হিসেবে নিয়ে তা মসজিদে রূপান্তর করতে চাইবে। অবশ্য বেথেলহামের একটি গির্জার ভেতরে তিনি নামাজ আদায় করেছিলেন। তখন ওই শঙ্কার কারণে তিনি সেই গির্জার জন্য আলাদা অঙ্গীকারপত্র লেখান এবং দল বেঁধে মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। 
 
পরবর্তী সময়ে যত দিন জেরুজালেম মুসলমানদের অধিকারে ছিল, তত দিন খলিফা ওমরের চুক্তিনামা অনুসারে মুসলিম, ইহুদি, খ্রিষ্টান—সবার স্বাধীনভাবে বসবাস এবং নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল। 
 
সূত্র: ১. তারিখুত তাবারি। 
২. ফুতুহুল বুলদান। 
৩. চার খলিফা: জীবন, শাসন, যুদ্ধ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ১০ নভেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৪: ৫১ মিনিট
ফজর০৪: ৫২ মিনিট০৬: ০৯ মিনিট
জোহর১১: ৪৩ মিনিট০৩: ৩৮ মিনিট
আসর০৩: ৩৯ মিনিট০৫: ১৪ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৬ মিনিট০৬: ৩১ মিনিট
এশা০৬: ৩২ মিনিট০৪: ৫১ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সালাম: সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনার সহজ উপায়

ইসলাম ডেস্ক 
পরস্পর সাক্ষাতের আদব। ছবি: সংগৃহীত
পরস্পর সাক্ষাতের আদব। ছবি: সংগৃহীত

আদব ও আন্তরিকতার সঙ্গে সালাম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি শান্তি, কল্যাণ ও নিরাপত্তার বার্তা বহন করে, যা আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় করে। দুঃখজনকভাবে, সমাজে এই মহান সুন্নাহর চর্চা কমে আসছে।

সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে হৃদয়ে ভালোবাসা সৃষ্টি হয় এবং পারস্পরিক বিদ্বেষ দূর হয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে সালামের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘আর যখন তোমাদেরকে সালাম জানানো হয়, তখন তার চেয়েও উত্তমভাবে জবাব দাও অথবা অন্তত সেভাবে জবাব দাও।’ (সুরা নিসা: ৮৬)

নবীজি (সা.) সালামের মাধ্যমে জান্নাতের পথ সহজ করার শিক্ষা দিয়েছেন। হাদিস অনুসারে, সালামের পূর্ণ বাক্য বিনিময়ে ৩০ নেকি লাভ হয়। (সুনানে আবু দাউদ: ৫১৯৫)

রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা ইমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালোবাসবে। আর তা হলো পরস্পরের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রচলন করা।’ (সহিহ মুসলিম: ৫৪)

সালামের এত গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও অবহেলা, মনোযোগের অভাব, সালামকে স্রেফ সৌজন্য মনে করার কারণে এর চর্চা কমছে। অপরিচিত বা কম পরিচিত ব্যক্তিকে সালাম দিতে দ্বিধা করা হয়, অথচ হাদিস অনুযায়ী এতেই বেশি সওয়াব। বিশেষ করে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সালামের চর্চা উল্লেখযোগ্য হারে কমছে।

সালাম কেবল একটি সুন্নাহ নয়, এটি সামাজিক নিরাপত্তা ও আত্মিক শান্তির প্রতীক। যিনি প্রথমে সালাম দেন, তিনি আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় এবং উত্তম। আমরা এই মহান সুন্নাহর ব্যাপক অনুশীলনের মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও ভালোবাসা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারি।

লেখক: মির্জা রিজওয়ান আলম, প্রাবন্ধিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদিয়া বিনিময়ে উৎসাহ দিয়েছেন নবী (সা.)

সাকী মাহবুব
দুজন বন্ধু। ছবি: সংগৃহীত
দুজন বন্ধু। ছবি: সংগৃহীত

মানবসমাজে পারস্পরিক ভালোবাসা, সদ্ভাব ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা ইসলামের অন্যতম প্রধান শিক্ষা। এই লক্ষ্য অর্জনে হাদিয়া বা উপহার আদান-প্রদান একটি অত্যন্ত কার্যকরী ও পরীক্ষিত পদ্ধতি।

হাদিয়া শুধু একটি বস্তুগত বিনিময় নয়, এটি হৃদয়ের অনুভূতি, ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছার এক শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ। ইসলামে এই আমলটিকে অত্যন্ত উৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ, এর মাধ্যমে পাষাণ হৃদয়ও নরম হয়ে যায় এবং তিক্ত সম্পর্কও মধুর হয়ে ওঠে। হাদিয়া আদান-প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মাঝে আন্তরিকতা সৃষ্টি করা। এটি মানুষের মন থেকে রাগ, বিদ্বেষ ও শত্রুতার ভাব দূর করে ভালোবাসার বীজ বপন করে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর উপহার আদান-প্রদান করো, তাহলে তোমাদের মাঝে ভালোবাসা বৃদ্ধি হবে।’ (জামে তিরমিজি)

অনেক সময় সম্পর্কের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি বা তিক্ততা সৃষ্টি হয়, যা থেকে শত্রুতার জন্ম নেয়। হাদিয়া এ ক্ষেত্রে জাদুকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। আন্তরিকভাবে দেওয়া একটি উপহার কঠিন হৃদয়ের দেয়াল ভেঙে দিতে সক্ষম।

হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা পরস্পর হাদিয়া আদান-প্রদান করো। কেননা, হাদিয়া অন্তর থেকে বিদ্বেষ দূর করে দেয়।’ (জামে তিরমিজি)। আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা পরস্পরের সঙ্গে হাত মেলাও, তাহলে তোমাদের বিদ্বেষ দূর হয়ে যাবে; আর তোমরা পরস্পরকে উপহার দাও, তাহলে শত্রুতা দূর হয়ে যাবে।’ (মুআত্তা ইমাম মালেক, আল-আদাবুল মুফরাদ)

বাস্তব জীবনে দেখা যায়, একজন তিক্ততা পোষণকারী আত্মীয় বা প্রতিবেশীকে আন্তরিকতার সঙ্গে একটি উপহার দিলে তার পাষাণ হৃদয়ে পরিবর্তন আসে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এটি প্রমাণ করে যে হাদিয়া মানুষের ভেতরের নেতিবাচক অনুভূতিকে ইতিবাচক রূপে রূপান্তরিত করতে পারে।

হাদিয়া গ্রহণ ও প্রদান করা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি প্রিয় অভ্যাস ছিল। তিনি উপহার গ্রহণ করতেন এবং বিনিময়ে কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা করতেন। এটি ছিল তাঁর উচ্চ নৈতিকতার প্রমাণ।

আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিয়া গ্রহণ করতেন এবং এর প্রতিদান দিতেন।’ (সহিহ্ বুখারি)

সামান্য ও নগণ্য হাদিয়াও তিনি ফিরিয়ে দিতেন না। এর মাধ্যমে তিনি উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন যে উপহারের মূল্য নয়, বরং আন্তরিকতাই আসল। হাদিয়া আদান-প্রদান শুধু একটি সামাজিক প্রথা নয়, এটি একটি ইবাদত এবং নবুওয়াতের শিক্ষা। এটি এমন এক মানবিক কৌশল, যা মানুষের হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করে বিদ্বেষ দূর করে ভালোবাসা ও সদ্ভাব প্রতিষ্ঠা করে।

আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে সম্পর্কগুলোকে সুন্দর ও মজবুত করার জন্য হাদিয়ার এই ঐশী মাধ্যমটিকে গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য। হাদিয়ার মূল্য নয়, বরং এর পেছনে থাকা আন্তরিকতাই পারে যেকোনো মানুষের অন্তর পরিবর্তন করে সম্পর্ককে স্থায়ী ও মধুর করতে।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, নাদির হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, কশবামাজাইল, পাংশা, রাজবাড়ী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যে ইবাদতে অনন্য মর্যাদা লাভ করেন বেলাল (রা.)

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৭: ২১
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

অজুকে স্বাগত জানিয়ে আদায় করা দুই রাকাত নফল নামাজকে বলে তাহিয়্যাতুল অজু। অজু করার পরপরই এ নামাজ আদায় করতে হয়। এ নামাজের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। তাহিয়্যাতুল অজুর মাধ্যমে বান্দার পাপ মুছে যায়, আল্লাহর দরবারে মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

এ নামাজ আদায়ের নিয়ম অন্যান্য নফল নামাজের মতোই। নিয়ত করে তাকবির বেঁধে নামাজ শুরু করবে। দুই রাকাতেই ফাতেহার পর অন্য সুরা মেলাবে। বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ শরিফ ও দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে সালাম ফেরাবে। তবে নামাজের নিষিদ্ধ সময়ে অজু করলে তখন এ নামাজ আদায় করা যাবে না।

উকবা ইবনে আমির (রা.) থেকে বর্ণিত, একটি হাদিস থেকে তাহিয়্যাতুল অজুর ফজিলত সম্পর্কে জানা যায়। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলমান ভালোভাবে অজু করে শরীর ও মনকে পুরোপুরি নিবদ্ধ রেখে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।’ (সহিহ্ মুসলিম: ২৩৪)

একবার উসমান (রা.) ভালোভাবে অজু করে বললেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে এভাবে অজু করে একাগ্রতার সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে, তার পেছনের সব (ছগিরা) গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ্ বুখারি: ১৫৯)

একদিন ফজরের নামাজের পর বেলাল (রা.)-কে নবী করিম (সা.) বললেন, ‘বেলাল, আমাকে বলো দেখি, ইসলাম গ্রহণের পর থেকে নিজের কোন আমল তোমার কাছে (সওয়াবের আশার দিক থেকে) সবচেয়ে উত্তম বলে মনে হয়? কারণ, আমি জান্নাতে আমার সামনে সামনে তোমার হাঁটার আওয়াজ শুনেছি।’ বেলাল (রা.) বললেন, ‘তেমন কোনো আমল আমার নেই; যার ফলে আমি (বিপুল সওয়াবের) আশা করতে পারি। তবে দিনরাতে যখনই অজু করি; সেই অজুর মাধ্যমে যে কয় রাকাত সম্ভব হয়, (নফল) নামাজ আদায় করি।’ (সহিহ্ বুখারি: ১১৪৯)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত