কাউসার লাবীব
চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা একটি শিল্প। এই শিল্পের ইতিহাস বেশ প্রাচীন, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অংশ ছিল। বলা যায়, ৭ হাজার বছরের বেশি সময় ধরে প্রচলিত এই শিল্প। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ চামড়া ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করত। প্রাচীন মিসরীয়রা জুতা, বেল্ট, বালিশ, আসন, কুরসি, বিছানা, ঢাল ইত্যাদি তৈরি করত। গ্রিক ও রোমানরা পশুর চামড়া সেদ্ধ করে শক্ত করত, তারপর বিশেষ বর্ম তৈরি করত। এ ছাড়া পৃথিবীজুড়েই তখন চামড়ার পোশাক, পাদুকা, থলে, গয়না, অস্ত্র, সরঞ্জাম বানানোর রীতি ছিল। শৈল্পিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছিল চামড়ার আসবাব।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে চামড়াশিল্পে যোগ হয় বিদ্যুৎ-চালিত মেশিন, যা চামড়া কাটা ও পশম ছাড়ানোর কাজ সহজ করে। পরে উনিশ শতকের শেষ দিকে এই শিল্পে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে। আধুনিক প্রযুক্তি আসার আগে তাজা চামড়া রোদে শুকিয়েই কাজে লাগানো হতো। প্রাচীনকালে ভারত, মিসর, গ্রিস ও রোমান সাম্রাজ্যে এই শিল্পটি খুবই জনপ্রিয় ছিল। মধ্য যুগে, বিশেষত ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে চামড়াশিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে। তবে মোগল আমলে এই শিল্প ভারতে বেশ লাভজনক পর্যায়ে পৌঁছায়।
ভূস্বর্গ কাশ্মীরে চামড়ার কারুশিল্পের উৎপত্তিও সেই সময়ে। অর্থাৎ মোগল যুগে। সময়ের ব্যবধানে এই অঞ্চলের চামড়াজাত পণ্যের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিক। কাশ্মীরের দক্ষ মুসলমান কারিগরদের হাতে যেন জাদু! হস্ত ও কারুশিল্পে তাদের মুনশিয়ানা যুগ যুগ ধরেই। তারা ঐতিহ্যগতভাবে সহজ জিনিসপত্র এবং উপকরণ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প পণ্য তৈরি করে। কাশ্মীরি শাল তাদের তৈরি ব্যতিক্রমী এক পণ্য। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিকে তুর্কিস্তান থেকে মুসলিম কারিগরেরা কাশ্মীরে শাল আমদানি করতেন। তৃতীয় মোগল সম্রাট আকবর পারস্যের কারিগরদের কাশ্মীরে নিয়ে আসেন। তাদের কাছ থেকে হস্তশিল্পে পটু কাশ্মীরিরা দ্রুতই তা রপ্ত করে। পরে এতে তারা নিজস্ব মেধা ব্যয় করে শালের বুনন কৌশল আরও উন্নত করে।
হস্তশিল্পে দক্ষ কাশ্মীরের মুসলমানদের যখন চামড়ার কারুশিল্পে অবদান রাখার সুযোগ আসে, তখন তা আর তারা হাতছাড়া করেনি। তাদের তৈরি চামড়ার পোশাক, জুতা, থলে, বেল্ট থেকে শুরু করে গার্গবি (কাশ্মীরি চামড়ার জুতা)-এর মতো ঐতিহ্যবাহী জিনিসগুলো সুনিপুণ কারুশিল্পের পরিচয় দিতে থাকে। বিশ্বের নানা প্রান্তে রপ্তানি হতে থাকে এগুলো। মানুষের মাঝে জনপ্রিয়তা পায় ব্যাপকভাবে।
কাঁচা চামড়া প্রস্তুত করে, প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করে এবং চামড়াকে বিভিন্ন আকারে তৈরি করে বিভিন্ন জিনিসপত্র বানানো মোটেও সহজ কাজ নয়। শখের বসে কিংবা জীবিকার তাগিদে সেই মোগল আমল থেকে যুগ যুগ ধরে চামড়ার কারুশিল্প কাশ্মীরের মুসলমানরা অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এই শিল্প পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া মানুষগুলো আর ভালো নেই। চামড়ার কারুশিল্পের বাজার ছোট হচ্ছে। সেই সঙ্গে কমে যাচ্ছে তাদের আয়-রোজগার। তাদের জীবিকা নির্বাহ এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। তবু তারা চায়, এই শিল্প বেঁচে থাকুক। ঐতিহ্য আলো ছড়াক।
কাশ্মীরের বহু মানুষের জীবিকা নির্বাহের উৎস এই শিল্প। পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া শৈল্পিক এ পেশা বাঁচিয়ে রাখতে তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছে। একসময় হয়তো জীবনের বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে তাদের এই শিল্পকে বিদায় জানাতে হবে। কাশ্মীরি কারিগরদের সৃজনশীলতা হয়তো শুধু ইতিহাসের পাতায়ই পাওয়া যাবে। এই ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে কাশ্মীরের লোকালয় থেকে।
সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট উর্দু
চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা একটি শিল্প। এই শিল্পের ইতিহাস বেশ প্রাচীন, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অংশ ছিল। বলা যায়, ৭ হাজার বছরের বেশি সময় ধরে প্রচলিত এই শিল্প। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ চামড়া ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করত। প্রাচীন মিসরীয়রা জুতা, বেল্ট, বালিশ, আসন, কুরসি, বিছানা, ঢাল ইত্যাদি তৈরি করত। গ্রিক ও রোমানরা পশুর চামড়া সেদ্ধ করে শক্ত করত, তারপর বিশেষ বর্ম তৈরি করত। এ ছাড়া পৃথিবীজুড়েই তখন চামড়ার পোশাক, পাদুকা, থলে, গয়না, অস্ত্র, সরঞ্জাম বানানোর রীতি ছিল। শৈল্পিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছিল চামড়ার আসবাব।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে চামড়াশিল্পে যোগ হয় বিদ্যুৎ-চালিত মেশিন, যা চামড়া কাটা ও পশম ছাড়ানোর কাজ সহজ করে। পরে উনিশ শতকের শেষ দিকে এই শিল্পে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে। আধুনিক প্রযুক্তি আসার আগে তাজা চামড়া রোদে শুকিয়েই কাজে লাগানো হতো। প্রাচীনকালে ভারত, মিসর, গ্রিস ও রোমান সাম্রাজ্যে এই শিল্পটি খুবই জনপ্রিয় ছিল। মধ্য যুগে, বিশেষত ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে চামড়াশিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে। তবে মোগল আমলে এই শিল্প ভারতে বেশ লাভজনক পর্যায়ে পৌঁছায়।
ভূস্বর্গ কাশ্মীরে চামড়ার কারুশিল্পের উৎপত্তিও সেই সময়ে। অর্থাৎ মোগল যুগে। সময়ের ব্যবধানে এই অঞ্চলের চামড়াজাত পণ্যের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিক। কাশ্মীরের দক্ষ মুসলমান কারিগরদের হাতে যেন জাদু! হস্ত ও কারুশিল্পে তাদের মুনশিয়ানা যুগ যুগ ধরেই। তারা ঐতিহ্যগতভাবে সহজ জিনিসপত্র এবং উপকরণ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প পণ্য তৈরি করে। কাশ্মীরি শাল তাদের তৈরি ব্যতিক্রমী এক পণ্য। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিকে তুর্কিস্তান থেকে মুসলিম কারিগরেরা কাশ্মীরে শাল আমদানি করতেন। তৃতীয় মোগল সম্রাট আকবর পারস্যের কারিগরদের কাশ্মীরে নিয়ে আসেন। তাদের কাছ থেকে হস্তশিল্পে পটু কাশ্মীরিরা দ্রুতই তা রপ্ত করে। পরে এতে তারা নিজস্ব মেধা ব্যয় করে শালের বুনন কৌশল আরও উন্নত করে।
হস্তশিল্পে দক্ষ কাশ্মীরের মুসলমানদের যখন চামড়ার কারুশিল্পে অবদান রাখার সুযোগ আসে, তখন তা আর তারা হাতছাড়া করেনি। তাদের তৈরি চামড়ার পোশাক, জুতা, থলে, বেল্ট থেকে শুরু করে গার্গবি (কাশ্মীরি চামড়ার জুতা)-এর মতো ঐতিহ্যবাহী জিনিসগুলো সুনিপুণ কারুশিল্পের পরিচয় দিতে থাকে। বিশ্বের নানা প্রান্তে রপ্তানি হতে থাকে এগুলো। মানুষের মাঝে জনপ্রিয়তা পায় ব্যাপকভাবে।
কাঁচা চামড়া প্রস্তুত করে, প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করে এবং চামড়াকে বিভিন্ন আকারে তৈরি করে বিভিন্ন জিনিসপত্র বানানো মোটেও সহজ কাজ নয়। শখের বসে কিংবা জীবিকার তাগিদে সেই মোগল আমল থেকে যুগ যুগ ধরে চামড়ার কারুশিল্প কাশ্মীরের মুসলমানরা অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এই শিল্প পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া মানুষগুলো আর ভালো নেই। চামড়ার কারুশিল্পের বাজার ছোট হচ্ছে। সেই সঙ্গে কমে যাচ্ছে তাদের আয়-রোজগার। তাদের জীবিকা নির্বাহ এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। তবু তারা চায়, এই শিল্প বেঁচে থাকুক। ঐতিহ্য আলো ছড়াক।
কাশ্মীরের বহু মানুষের জীবিকা নির্বাহের উৎস এই শিল্প। পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া শৈল্পিক এ পেশা বাঁচিয়ে রাখতে তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছে। একসময় হয়তো জীবনের বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে তাদের এই শিল্পকে বিদায় জানাতে হবে। কাশ্মীরি কারিগরদের সৃজনশীলতা হয়তো শুধু ইতিহাসের পাতায়ই পাওয়া যাবে। এই ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে কাশ্মীরের লোকালয় থেকে।
সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট উর্দু
মানুষের জীবনের প্রতিটি কাজের মধ্যে মহানবী (সা.)-এর উত্তম আদর্শ বিদ্যমান। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি অধ্যায় তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করে সাজানো উচিত। খাবার গ্রহণ জীবনের একটি অপরিহার্য কাজ। যদি এ খাবার গ্রহণও মহানবী (সা.)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী করা হয়, তাহলে ক্ষুধার নিবারণ হওয়ার পাশাপাশি এর মাধ্যমে...
১ দিন আগেজুমার খুতবা চলাকালে মোবাইল ব্যবহার করা যাবে? যেমন ফেসবুক স্ক্রল করা, মেসেঞ্জার চেক করা ইত্যাদি। এ বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা জানতে চাই।
২ দিন আগেজুমার নামাজ সপ্তাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হয়। এটি মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। প্রাপ্তবয়স্ক ও মানসিকভাবে সুস্থ সব পুরুষের জন্য জুমার নামাজ আদায় করা ফরজ। জুমার খুতবা শোনাও ওয়াজিব। তাই জুমার জন্য আগেভাগে প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে উপস্থিত হওয়া মুমিনের...
২ দিন আগেজুলুম এক অন্ধকার, যা মানবতাকে গ্রাস করার চেষ্টা করেছে প্রতিটি যুগে। কিন্তু চিরন্তন সত্য হলো, জুলুম ক্ষণস্থায়ী, আর মজলুমের বিজয় সুনিশ্চিত। মজলুমের কান্না আল্লাহর আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তার দোয়ার মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না। নবীজি (সা.) সতর্ক করে বলেছেন, ‘মজলুমের দোয়াকে ভয় করো। কারণ, তার (দোয়া) এবং আল্লা
২ দিন আগে