মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
ঝেং হি চীনের মিং রাজবংশের শাসনামলে ১৩৭১ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণ চীনের ইউনান রাজ্যের একটি হুই পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হয় ‘মা হি’। চীনা ভাষায় ‘মা’ হচ্ছে ‘মুহাম্মদ’ শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ, যা তাঁর পরিবারের মুসলিম পরিচয় ও ঐতিহ্যের নির্দেশক। ঝেং হির পরিবার শিক্ষিত ও ধর্মপরায়ণ ছিল। বাল্যকালেই তিনি দাদা ও বাবার কাছ থেকে ইসলামের মৌলিক জ্ঞান ও আরবি ভাষা রপ্ত করেন। শৈশবেই চীনের পশ্চিম দিকের দেশগুলোর প্রতি তাঁর আগ্রহ জাগে। তাই তাদের ভাষা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং ভূগোল নিয়ে পড়তে শুরু করেন।
মা হি যখন কৈশোরে পদার্পণ করেন, তখন মিং সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনী ইউনানে আগ্রাসন চালায়। সেই আগ্রাসনে তাঁকে বন্দী করে রাজধানী নানজিংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বন্দিত্বের শুরুর দিকে খুব খারাপ সময় কাটলেও একসময় যুবরাজ ঝু ডির সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তাঁর বহুমুখী জ্ঞান, দক্ষতা ও উন্নত চরিত্রে মুগ্ধ হয়ে যুবরাজ তাঁকে নিজের একান্ত দেহরক্ষী নিয়োগ দেন। এরপর চার বছর ঝেং হি যুবরাজ ঝু ডির বাহিনীর অংশ হয়ে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন, যার ফলে তিনি চীনের অন্যতম সাহসী সেনা কমান্ডার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
যুবরাজ ঝু ডি মিং সাম্রাজ্যের সম্রাট হওয়ার পর ১৪০৪ সালে মা হিকে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ এবং সম্মানসূচক ‘ঝেং’ পদবি দেওয়া হয়। তখন থেকে তিনি ঝেং হি নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
১৪০৫ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট ঝু ডি বাকি দুনিয়া আবিষ্কার এবং বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনের জন্য জাহাজের বহর পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। তখন ঝেং হিকেই এই অভিযানের সর্বাধিনায়ক মনোনীত করেন। ১৪০৫ থেকে ১৪৩৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মোট ৭টি অভিযান পরিচালনা করেন ঝেং হি। এতে তিনি ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ইরান, ওমান, ইয়েমেন, সৌদি আরব, সোমালিয়া, কেনিয়াসহ আরও অনেক দেশ ভ্রমণ করেন, যা ইতিহাসে ‘ঝেং হির ভ্রমণ’ নামে পরিচিত।
চায়নিজ কয়েকজন গবেষক দাবি করেন, ঝেং হির জাহাজটি ছিল ৪০০ ফুট লম্বা, যা কলম্বাসের আটলান্টিক পাড়ি দেওয়া জাহাজের চেয়েও অনেক গুণ বড়। কয়েক শ বছর ধরে মানুষ ভেবে এসেছিল এত বড় জাহাজের কথাটি অতিরঞ্জিত। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিকগণ ইয়াংযে নদীর তীরে জাহাজ নির্মাণকেন্দ্র থেকে যে প্রমাণাদি সংগ্রহ করেছেন, সেগুলো নিশ্চিত করে যে সেই জাহাজটি আধুনিক ফুটবল মাঠের চেয়েও বড় ছিল।
ঝেং হির ভ্রমণকাহিনিগুলো বহুদিন আনুষ্ঠানিক চৈনিক ইতিহাসে অবহেলিত ছিল। ১৯০৪ সালে লিয়াং ছিহাও-এর ‘আমাদের দেশের মহান নাবিক ঝেং হির জীবনী’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পর চীন ও বহির্বিশ্বে তিনি পরিচিতি পান। এর কিছুদিন পরই শ্রীলঙ্কায় তাঁর রেখে যাওয়া একটি ত্রিভাষিক স্তম্ভ পাওয়া যায়।
ঝেং হির নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে তিনি ছাড়া আরও অসংখ্য চীনা মুসলিম ছিলেন। এদের মধ্যে মা হুয়ান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি একটি ভ্রমণকাহিনি লিখেছেন, যা পঞ্চদশ শতকে ভারত মহাসাগর এলাকার বিভিন্ন সমাজ সম্পর্কে ধারণা দেয়।
নৌবহরে মুসলমান থাকার কারণে যেখানেই তাঁরা নোঙর করতেন, সেখানকার মুসলমানদের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক তৈরি হতো। নৌবহরের পক্ষ থেকে স্থানীয় মুসলিমদের জন্য মসজিদ নির্মাণসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামাজিক সেবার ব্যবস্থা করা হতো। এ ছাড়া তিনি ও তাঁর মুসলিম উপদেষ্টারা যেখানেই গিয়েছেন, সেখানেই ইসলাম প্রচার করেছেন। ইন্দোনেশিয়ার জাভা, সুমাত্রা, বোর্নিও ও অন্যান্য দ্বীপে ঝেং হি ছোট ছোট মুসলিম সম্প্রদায়ের দেখা পান। পালেমবাং, জাভার উপকূল ঘেঁষে মালয় উপদ্বীপে এবং ফিলিপাইনে চীনা মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। ১৪৩৩ বা ১৪৩৫ খ্রিষ্টাব্দে সমুদ্রের মাঝে এই মহান নাবিক মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: অ্যাবাউট ইসলাম ও উইকিপিডিয়া
ঝেং হি চীনের মিং রাজবংশের শাসনামলে ১৩৭১ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণ চীনের ইউনান রাজ্যের একটি হুই পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হয় ‘মা হি’। চীনা ভাষায় ‘মা’ হচ্ছে ‘মুহাম্মদ’ শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ, যা তাঁর পরিবারের মুসলিম পরিচয় ও ঐতিহ্যের নির্দেশক। ঝেং হির পরিবার শিক্ষিত ও ধর্মপরায়ণ ছিল। বাল্যকালেই তিনি দাদা ও বাবার কাছ থেকে ইসলামের মৌলিক জ্ঞান ও আরবি ভাষা রপ্ত করেন। শৈশবেই চীনের পশ্চিম দিকের দেশগুলোর প্রতি তাঁর আগ্রহ জাগে। তাই তাদের ভাষা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং ভূগোল নিয়ে পড়তে শুরু করেন।
মা হি যখন কৈশোরে পদার্পণ করেন, তখন মিং সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনী ইউনানে আগ্রাসন চালায়। সেই আগ্রাসনে তাঁকে বন্দী করে রাজধানী নানজিংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বন্দিত্বের শুরুর দিকে খুব খারাপ সময় কাটলেও একসময় যুবরাজ ঝু ডির সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তাঁর বহুমুখী জ্ঞান, দক্ষতা ও উন্নত চরিত্রে মুগ্ধ হয়ে যুবরাজ তাঁকে নিজের একান্ত দেহরক্ষী নিয়োগ দেন। এরপর চার বছর ঝেং হি যুবরাজ ঝু ডির বাহিনীর অংশ হয়ে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন, যার ফলে তিনি চীনের অন্যতম সাহসী সেনা কমান্ডার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
যুবরাজ ঝু ডি মিং সাম্রাজ্যের সম্রাট হওয়ার পর ১৪০৪ সালে মা হিকে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ এবং সম্মানসূচক ‘ঝেং’ পদবি দেওয়া হয়। তখন থেকে তিনি ঝেং হি নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
১৪০৫ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট ঝু ডি বাকি দুনিয়া আবিষ্কার এবং বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনের জন্য জাহাজের বহর পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। তখন ঝেং হিকেই এই অভিযানের সর্বাধিনায়ক মনোনীত করেন। ১৪০৫ থেকে ১৪৩৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মোট ৭টি অভিযান পরিচালনা করেন ঝেং হি। এতে তিনি ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ইরান, ওমান, ইয়েমেন, সৌদি আরব, সোমালিয়া, কেনিয়াসহ আরও অনেক দেশ ভ্রমণ করেন, যা ইতিহাসে ‘ঝেং হির ভ্রমণ’ নামে পরিচিত।
চায়নিজ কয়েকজন গবেষক দাবি করেন, ঝেং হির জাহাজটি ছিল ৪০০ ফুট লম্বা, যা কলম্বাসের আটলান্টিক পাড়ি দেওয়া জাহাজের চেয়েও অনেক গুণ বড়। কয়েক শ বছর ধরে মানুষ ভেবে এসেছিল এত বড় জাহাজের কথাটি অতিরঞ্জিত। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিকগণ ইয়াংযে নদীর তীরে জাহাজ নির্মাণকেন্দ্র থেকে যে প্রমাণাদি সংগ্রহ করেছেন, সেগুলো নিশ্চিত করে যে সেই জাহাজটি আধুনিক ফুটবল মাঠের চেয়েও বড় ছিল।
ঝেং হির ভ্রমণকাহিনিগুলো বহুদিন আনুষ্ঠানিক চৈনিক ইতিহাসে অবহেলিত ছিল। ১৯০৪ সালে লিয়াং ছিহাও-এর ‘আমাদের দেশের মহান নাবিক ঝেং হির জীবনী’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পর চীন ও বহির্বিশ্বে তিনি পরিচিতি পান। এর কিছুদিন পরই শ্রীলঙ্কায় তাঁর রেখে যাওয়া একটি ত্রিভাষিক স্তম্ভ পাওয়া যায়।
ঝেং হির নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে তিনি ছাড়া আরও অসংখ্য চীনা মুসলিম ছিলেন। এদের মধ্যে মা হুয়ান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি একটি ভ্রমণকাহিনি লিখেছেন, যা পঞ্চদশ শতকে ভারত মহাসাগর এলাকার বিভিন্ন সমাজ সম্পর্কে ধারণা দেয়।
নৌবহরে মুসলমান থাকার কারণে যেখানেই তাঁরা নোঙর করতেন, সেখানকার মুসলমানদের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক তৈরি হতো। নৌবহরের পক্ষ থেকে স্থানীয় মুসলিমদের জন্য মসজিদ নির্মাণসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামাজিক সেবার ব্যবস্থা করা হতো। এ ছাড়া তিনি ও তাঁর মুসলিম উপদেষ্টারা যেখানেই গিয়েছেন, সেখানেই ইসলাম প্রচার করেছেন। ইন্দোনেশিয়ার জাভা, সুমাত্রা, বোর্নিও ও অন্যান্য দ্বীপে ঝেং হি ছোট ছোট মুসলিম সম্প্রদায়ের দেখা পান। পালেমবাং, জাভার উপকূল ঘেঁষে মালয় উপদ্বীপে এবং ফিলিপাইনে চীনা মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। ১৪৩৩ বা ১৪৩৫ খ্রিষ্টাব্দে সমুদ্রের মাঝে এই মহান নাবিক মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: অ্যাবাউট ইসলাম ও উইকিপিডিয়া
মানুষের প্রকৃত সৌন্দর্য তার মন-মানসিকতা ও চরিত্রে নিহিত। বাহ্যিক চাকচিক্যের চাইতে সুস্থ চিন্তা, সদাচরণ, মানবিক গুণাবলিই মানুষের সত্যিকারের পরিচয়। ইসলাম কেবল ইবাদত নির্ভর ধর্ম নয়, বরং এটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। আত্মশুদ্ধি, নৈতিক উন্নয়ন এবং মানবিক কল্যাণে ইসলাম অনন্য ভূমিকা পালন করে।
১০ ঘণ্টা আগেনামাজ মহান আল্লাহ তাআলার সঙ্গে বান্দার এক গভীর সংযোগের মাধ্যম। এই ইবাদত আদায়ের সময় আমাদের উচিত সর্বোচ্চ মনোযোগ ও বিনয় বজায় রাখা। তাই নামাজের মধ্যে কোনো কিছু বিঘ্ন ঘটলে তা থেকে সতর্ক থাকা অপরিহার্য।
২১ ঘণ্টা আগেরাজধানী বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী হজ ও ওমরাহ মেলা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে এই মেলার উদ্বোধন করবেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
১ দিন আগেমানুষ সমাজবদ্ধ জীব। তার জীবন কেবল নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক ও সুশৃঙ্খল বন্ধনের মাধ্যমে জীবনের পরিপূর্ণতা আসে। ইসলামে এই আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কোরআনের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘সিলায়ে রেহমি’ এবং এটি রক্ষা করাকে ওয়াজিব...
১ দিন আগে