Ajker Patrika

মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধনের সীমারেখা

মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধনের সীমারেখা

প্রশ্ন: মসজিদের নকশা ও অলংকরণের ক্ষেত্রে ইসলামের কোনো নীতি আছে কি? ইসলামি শরিয়তের আলোকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাই।

হামিম শাহেদ, চট্টগ্রাম

প্রশ্ন: মসজিদ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। মসজিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন মুমিনের আবশ্যকীয় কর্তব্য। মুসলিম সমাজে মসজিদকে অত্যন্ত পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশায় প্রাথমিকভাবে খেজুরপাতার ছাউনি ও কাঁচা ইট দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। খোলাফায়ে রাশেদিনের আমলে যদিও মসজিদে নববির পরিধি বাড়ানো হয়েছে এবং মসজিদ পাকাও করা হয়েছে; তবে তাতে কোনো ধরনের কারুকার্য করা হয়নি।

ইসলামের ইতিহাসে প্রথম যিনি মসজিদ অলংকরণের সূচনা করেছেন, তিনি হলেন উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিক।সেকালের ইসলামি পণ্ডিতগণ বিষয়টিকে অপছন্দ করলেও বিশৃঙ্খলার ভয়ে কিছু বলেননি। মূলত মসজিদ অলংকরণ বিষয়ে নিরুৎসাহমূলক কিছু হাদিস এসেছে। তাই তাঁরা বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখেননি। এক হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘আমাকে মসজিদ অলংকরণের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। কিন্তু একটা সময় আসবে, যখন তোমরা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের মতো মসজিদকে অনেক বেশি কারুকার্যখচিত করবে।’ (ইবনে হিব্বান: ৪/ ৭০)

মসজিদ অলংকরণে অতিরঞ্জনকে কিয়ামতের আলামত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘একটা সময় আসবে, যখন মানুষ নিজেদের মসজিদের সৌন্দর্য নিয়ে গর্ব করবে; কিন্তু মসজিদকে তারা নিজেদের ভালো কাজের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করবে না।’ (বুখারি) আরেক হাদিসে নবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘তত দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যত দিন না এমন একটা সময় আসবে, যখন মানুষ মসজিদ নিয়ে একে অন্যের ওপর গর্ববোধ করবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

ঐতিহাসিকগণ বলেন, বিখ্যাত উমাইয়া খলিফা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) চেয়েছিলেন, উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদ কর্তৃক নির্মিত দামেস্কের সুদৃশ্য জামে মসজিদটি ভেঙে নতুন করে স্বাভাবিকভাবে তা নির্মাণ করবেন। কিন্তু একদিন লক্ষ করলেন, এক খ্রিষ্টান আগন্তুক মসজিদের সৌন্দর্য দেখে হিংসায় জ্বলছে। তখন তিনি নিজের ইচ্ছা পরিত্যাগ করেন।

এসব হাদিস ও কর্মপন্থা সামনে রেখে ইসলামি আইনবিদ ও পণ্ডিতগণ বলেন, মসজিদ নির্মাণ ও অলংকরণের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় লক্ষ রাখতে হবে। যথা—

  • মসজিদে যেন বেশি নকশা আঁকা না হয়। বিশেষ করে মসজিদের ভেতরের সামনের দেয়ালে। কেননা, সেখানকার কারুকার্য মানুষকে নামাজে উদাসীন ও অমনোযোগী করে তুলবে।
  • মসজিদের শোভাবর্ধনে ধনী ব্যক্তিবর্গ নিজেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবেন। এ কাজের জন্য দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে চাঁদা উত্তোলন করা অনুচিত।
  • মসজিদ নির্মাণের সময় অহংকার, লৌকিকতা ও অসুস্থ প্রতিযোগিতার মানসিকতা চূড়ান্তভাবে পরিহার করতে হবে।
  • যে এলাকায় মসজিদ নির্মাণ করা হবে, সেখানকার মানুষের ঘরবাড়ির অবস্থা বিবেচনা করতে হবে। সেখানকার মানুষের ঘরবাড়ি যদি মসজিদ থেকে বেশি উন্নত ও কারুকার্যখচিত হয়, তবে মসজিদের শোভাবর্ধনের কাজ করা যেতে পারে। যদি কোনো এলাকার লোকজন খুবই সাধারণভাবে জীবনযাপন করে, তবে সেখানে স্বাভাবিক মসজিদ নির্মাণ করাই কাম্য।
  • সাধারণ ঘরবাড়ি থেকে মসজিদের আলাদা স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করা উচিত। এটা হতে পারে নির্মাণকাঠামোর স্বাতন্ত্র্যে। হতে পারে মিনার ইত্যাদি নির্মাণ করার মাধ্যমে।
  • মসজিদের স্থান নির্বাচনেও রুচিবোধের পরিচয় দেওয়া উচিত। মসজিদ নির্মাণের জন্য উঁচু ও মধ্যভাগের জায়গা নির্বাচন করাই অধিক সংগত। যেন মসজিদ আলাদা করে চোখে পড়ে। সবার জন্য মসজিদে আসাও যেন সহজ হয়।
  • সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কেবল মসজিদের বাহ্যিক শোভাবর্ধনের প্রতি মনোযোগী না হয়ে সেটার আত্মিক শ্রীবৃদ্ধির প্রতি মনোযোগী হতে হবে। মসজিদকে বিভিন্ন আমলের মাধ্যমে প্রাণবন্ত রাখতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মসজিদকেন্দ্রিক সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনায়ও উৎসাহিত করে ইসলাম। 

উত্তর দিয়েছেন, আবদুল আযীয কাসেমি, শিক্ষক ও হাদিস গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখামাত্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আহ্বান

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে এএসআই উধাও, থানায় শ্বশুরের জিডি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত