মিয়ানমারের সংকটকবলিত রাখাইনে খাদ্যসহ জরুরি রসদ সরবরাহে মানবিক করিডর দিতে নীতিগত সম্মতির কথা বলছে সরকার। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসবিষয়ক গবেষক আলতাফ পারভেজ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিভুরঞ্জন সরকার ও মাসুদ রানা।
বিভুরঞ্জন সরকার ও মাসুদ রানা
প্রশ্ন: রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়ার বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আপনি কীভাবে দেখেন?
উত্তর: যতদূর জানি, এটা মূলত জাতিসংঘ চায়। হয়তো জাতিসংঘের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোও চায়। না হলে জাতিসংঘ চাইবে কেন? অন্তর্বর্তী সরকার কিন্তু মানবিক করিডর দিয়ে দেয়নি। বলেছে, শর্ত সাপেক্ষে দিতে রাজি তারা। আসলে গত কয়েক মাস জাতিসংঘ এটার জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছে। বাংলাদেশ শেষমেশ রাজি আছে বলে জানিয়েছে। তবে রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া বিদ্রোহী আরাকান আর্মিকেও এতে রাজি হতে হবে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সমাজ রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এখন আরাকানে মানবিক সাহায্য পাঠিয়ে তারা হয়তো কিছুটা মুখরক্ষা করতে চায়। কিন্তু এ রকম করিডর অবশ্যই একটা স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ। ফলে আন্তর্জাতিক সমাজ বা জাতিসংঘ কী চায়, বাংলাদেশের জন্য তার চেয়েও জরুরি হলো, এখানকার মানুষ এবং রোহিঙ্গারা কী চায়।
প্রশ্ন: বিএনপি বলছে, এই করিডরের সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব জড়িত। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
উত্তর: যুদ্ধ চলছে, এমন জনপদে মানবিক করিডরও শুধু মানবিক বিষয় নয়, এর একটা সামরিক দিকও আছে। নিরাপত্তাগত তাৎপর্য আছে। ফলে বিএনপি বা অন্য কোনো দল বা ব্যক্তি যদি এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকে, তবে তা বাতিল করে দেওয়া যায় না। আরাকান করিডরের সঙ্গে অবশ্যই নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। সে কারণে জাতীয় প্রতিরক্ষার আলোকে একে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা জরুরি।
প্রশ্ন: এই করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত জাতিসংঘ তথা আন্তর্জাতিক সংস্থার আবেদনে নেওয়া হচ্ছে, এই যুক্তি কি যথেষ্ট নয়?
উত্তর: করিডর দিতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘ অনুরোধ করেছে, কথাটা সত্য। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে কেউ কিছু চাইলেই তো কোনো দেশ দিয়ে দেয় না। প্রত্যেক দেশকে নিজের জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করতে হয়। আরাকান প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রধান বিবেচনা তো এই যে সেখানে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর উপায় কী। তাই এখন প্রশ্ন হলো, আরাকানে করিডর দিলে বাংলাদেশ কোনোভাবে লাভবান হবে কি না, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যাবে কি না। আমরা কিন্তু জানি না, সরকার এসব প্রসঙ্গ জাতিসংঘের কাছে তুলে ধরেছে কি না। সরকার বলছে, তারা করিডর দেওয়ার আগে কিছু শর্ত পূরণ চেয়েছে। অনুমান করা যায়, সেখানে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও ফেরতের প্রসঙ্গ আছে। কিন্তু আরাকান আর্মি সেসব মানবে কি? এখনো স্রোতের মতো রোহিঙ্গারা আসছে। খাদ্যাভাবে নয়, তারা আসছে নিরাপত্তা সংকটের কারণে। তার মানে রোহিঙ্গারা নিশ্চয়ই সেখানে আরাকান আর্মি দ্বারা পীড়িত। তাই আমরা প্রকৃতই কী শর্তে করিডর দেব, তা সরকারকে বিস্তারিত জানাতে হবে। অন্তত দেশের রাজনীতিকদের ডেকে তা জানানো উচিত। রোহিঙ্গাদের ফেরতের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক অগ্রগতি হলেই শুধু এটি নিয়ে ইতিবাচকভাবে ভাবা যেতে পারে।
প্রশ্ন: এই করিডর কীভাবে গঠন করা হতে পারে? এর কাঠামো কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: এটাই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। প্রথম প্রশ্ন, এই করিডরের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব কার হাতে থাকবে? জাতিসংঘ, বাংলাদেশ নাকি আরাকান আর্মি? নাকি তিন পক্ষ মিলেই কোনো কাঠামো হবে? দ্বিতীয় বিষয় হলো, এই পথে যেসব পণ্য যাবে তার বিলিবণ্টন কে করবে? রোহিঙ্গারা কি সেসব পণ্য পাবে? তৃতীয় জরুরি বিষয় হলো, এই করিডরের নিরাপত্তা কে দেবে? আপনি ত্রাণ নিয়ে যাবেন, কেউ যদি বোমা মেরে দেয়? নিরাপত্তার প্রয়োজনে সেখানে ‘নো ফ্লাইজোন’ বা ‘সেফ জোন’ করা হবে কি না? চতুর্থ বিষয় হলো, কেউ যদি ‘সেফ জোন’ বা ‘নো ফ্লাই জোনের’ নিরাপত্তা ভাঙে তাদের থামাবে কে? সেই তৃতীয় পক্ষ কে হবে? এখানে কি কোন শান্তিরক্ষী থাকবে? তারা কারা? পঞ্চম বিষয় হলো, বঙ্গোপসাগরে আমরা যদি এ রকম একটা করিডর করি, তাহলে ভারত ও চীন সম্মত হবে কি না? কেউ যদি তখন বলে আরাকানে করিডর হলে মণিপুরে নয় কেন; তখন সেই যুক্তি আমরা কীভাবে অগ্রাহ্য করব?
প্রশ্ন: এই করিডরের সম্ভাব্য ঝুঁকি কী কী হতে পারে?
উত্তর: এর ঝুঁকির দিকগুলো আমি ইতিমধ্যে বলেছি। বিশ্বের সর্বত্র এ রকম মানবিক করিডরগুলোর সামরিক তাৎপর্য থাকে। কারণ করিডরটি যাবে একটা যুদ্ধক্ষেত্রে। যুদ্ধক্ষেত্রের এদিকে আছে ১৩ লাখ শরণার্থী। ফলে পরিস্থিতি জটিল। আরাকানে মিয়ানমার সরকার প্রায় নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের সেনাও আছে সামান্যসংখ্যক। অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রক আরাকান আর্মি একটি ‘নন স্টেট অ্যাক্টর’ (অরাষ্ট্রীয় পক্ষ)। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করতে পারবে না। অথচ সরকার তাদের কাছে সাহায্য পাঠাতে চাইছে। এ পরিস্থিতির মধ্যে অনেক জটিলতা আছে। বাংলাদেশের মানুষ নিশ্চয়ই কক্সবাজার অঞ্চলের সামরিকায়ন চায় না। কিন্তু এই করিডরের পার্শ্বফল হিসেবে অনেক সামরিক ব্যাপার আমরা দেখতে পাচ্ছি। করিডরকেন্দ্রিক এ সমঝোতায় রোহিঙ্গা প্রশ্নের কোনো সুরাহা হচ্ছে বলেও অন্তত এ মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে না। তাহলে বাংলাদেশের লাভ কী? আমার বক্তব্য হলো, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো না গেলে আরাকান আর্মিকে একতরফা সাহায্যে কোনো ফায়দা নেই।
প্রশ্ন: তাহলে এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কী করতে পারে?
উত্তর: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কাজ হলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসা। আবার রাজনৈতিক দলগুলোরও সরকারকে সহযোগিতা করার মনোভাব দেখাতে হবে। এ রকম একটা গুরুতর বিষয় আলোচনার সঠিক ফোরাম হলো পার্লামেন্ট। দেশে এখন সংসদ নেই। চলছে তুমুল রাজনৈতিক টানাপোড়েন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যদি একা এ সিদ্ধান্ত নেয়, তা সরকারের জন্য তো বটেই; বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্যও বড় ঝুঁকির ব্যাপার হতে পারে। ইতিমধ্যে অনেক রাজনীতিক এই করিডর নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সরকারের তাদের দুর্ভাবনাকে অগ্রাহ্য করা উচিত হবে না। কারণ এই সরকার গণ-অভ্যুত্থানের সরকার হলেও অনির্বাচিত। দেশের জন্য বড় নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসেই নেওয়া উচিত। সেটা না পারলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়াই উচিত না।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন করিডর দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে, তা কোনোভাবে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হতে পারে?
উত্তর: ইতিবাচক হতে পারে, যদি বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে একটা বোঝাপড়ায় আসতে পারে। তবে আরাকান আর্মি এমন কোনো চাপে নেই যে তারা রোহিঙ্গাদের নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের আহ্বানে মনখুলে সাড়া দেবে। তারা একাই আরাকানের ৮০-৯০ ভাগ এলাকা দখল করতে পেরেছে। তবে কূটনৈতিকভাবে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার বিকল্প নেই। কৌশলী দর-কষাকষির মাধ্যমে তাদের রাজি করাতে হবে বাংলাদেশকে। এটাই একমাত্র পথ। আবার তা করতে গিয়ে সরকার একা একাই সামরিক দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো উদ্যোগে শামিল হলে, তা বিতর্ক ও বিপদ তৈরি করবে।
প্রশ্ন: রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়ার বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আপনি কীভাবে দেখেন?
উত্তর: যতদূর জানি, এটা মূলত জাতিসংঘ চায়। হয়তো জাতিসংঘের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোও চায়। না হলে জাতিসংঘ চাইবে কেন? অন্তর্বর্তী সরকার কিন্তু মানবিক করিডর দিয়ে দেয়নি। বলেছে, শর্ত সাপেক্ষে দিতে রাজি তারা। আসলে গত কয়েক মাস জাতিসংঘ এটার জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছে। বাংলাদেশ শেষমেশ রাজি আছে বলে জানিয়েছে। তবে রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া বিদ্রোহী আরাকান আর্মিকেও এতে রাজি হতে হবে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সমাজ রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এখন আরাকানে মানবিক সাহায্য পাঠিয়ে তারা হয়তো কিছুটা মুখরক্ষা করতে চায়। কিন্তু এ রকম করিডর অবশ্যই একটা স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ। ফলে আন্তর্জাতিক সমাজ বা জাতিসংঘ কী চায়, বাংলাদেশের জন্য তার চেয়েও জরুরি হলো, এখানকার মানুষ এবং রোহিঙ্গারা কী চায়।
প্রশ্ন: বিএনপি বলছে, এই করিডরের সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব জড়িত। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
উত্তর: যুদ্ধ চলছে, এমন জনপদে মানবিক করিডরও শুধু মানবিক বিষয় নয়, এর একটা সামরিক দিকও আছে। নিরাপত্তাগত তাৎপর্য আছে। ফলে বিএনপি বা অন্য কোনো দল বা ব্যক্তি যদি এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকে, তবে তা বাতিল করে দেওয়া যায় না। আরাকান করিডরের সঙ্গে অবশ্যই নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। সে কারণে জাতীয় প্রতিরক্ষার আলোকে একে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা জরুরি।
প্রশ্ন: এই করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত জাতিসংঘ তথা আন্তর্জাতিক সংস্থার আবেদনে নেওয়া হচ্ছে, এই যুক্তি কি যথেষ্ট নয়?
উত্তর: করিডর দিতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘ অনুরোধ করেছে, কথাটা সত্য। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে কেউ কিছু চাইলেই তো কোনো দেশ দিয়ে দেয় না। প্রত্যেক দেশকে নিজের জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করতে হয়। আরাকান প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রধান বিবেচনা তো এই যে সেখানে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর উপায় কী। তাই এখন প্রশ্ন হলো, আরাকানে করিডর দিলে বাংলাদেশ কোনোভাবে লাভবান হবে কি না, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যাবে কি না। আমরা কিন্তু জানি না, সরকার এসব প্রসঙ্গ জাতিসংঘের কাছে তুলে ধরেছে কি না। সরকার বলছে, তারা করিডর দেওয়ার আগে কিছু শর্ত পূরণ চেয়েছে। অনুমান করা যায়, সেখানে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও ফেরতের প্রসঙ্গ আছে। কিন্তু আরাকান আর্মি সেসব মানবে কি? এখনো স্রোতের মতো রোহিঙ্গারা আসছে। খাদ্যাভাবে নয়, তারা আসছে নিরাপত্তা সংকটের কারণে। তার মানে রোহিঙ্গারা নিশ্চয়ই সেখানে আরাকান আর্মি দ্বারা পীড়িত। তাই আমরা প্রকৃতই কী শর্তে করিডর দেব, তা সরকারকে বিস্তারিত জানাতে হবে। অন্তত দেশের রাজনীতিকদের ডেকে তা জানানো উচিত। রোহিঙ্গাদের ফেরতের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক অগ্রগতি হলেই শুধু এটি নিয়ে ইতিবাচকভাবে ভাবা যেতে পারে।
প্রশ্ন: এই করিডর কীভাবে গঠন করা হতে পারে? এর কাঠামো কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: এটাই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। প্রথম প্রশ্ন, এই করিডরের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব কার হাতে থাকবে? জাতিসংঘ, বাংলাদেশ নাকি আরাকান আর্মি? নাকি তিন পক্ষ মিলেই কোনো কাঠামো হবে? দ্বিতীয় বিষয় হলো, এই পথে যেসব পণ্য যাবে তার বিলিবণ্টন কে করবে? রোহিঙ্গারা কি সেসব পণ্য পাবে? তৃতীয় জরুরি বিষয় হলো, এই করিডরের নিরাপত্তা কে দেবে? আপনি ত্রাণ নিয়ে যাবেন, কেউ যদি বোমা মেরে দেয়? নিরাপত্তার প্রয়োজনে সেখানে ‘নো ফ্লাইজোন’ বা ‘সেফ জোন’ করা হবে কি না? চতুর্থ বিষয় হলো, কেউ যদি ‘সেফ জোন’ বা ‘নো ফ্লাই জোনের’ নিরাপত্তা ভাঙে তাদের থামাবে কে? সেই তৃতীয় পক্ষ কে হবে? এখানে কি কোন শান্তিরক্ষী থাকবে? তারা কারা? পঞ্চম বিষয় হলো, বঙ্গোপসাগরে আমরা যদি এ রকম একটা করিডর করি, তাহলে ভারত ও চীন সম্মত হবে কি না? কেউ যদি তখন বলে আরাকানে করিডর হলে মণিপুরে নয় কেন; তখন সেই যুক্তি আমরা কীভাবে অগ্রাহ্য করব?
প্রশ্ন: এই করিডরের সম্ভাব্য ঝুঁকি কী কী হতে পারে?
উত্তর: এর ঝুঁকির দিকগুলো আমি ইতিমধ্যে বলেছি। বিশ্বের সর্বত্র এ রকম মানবিক করিডরগুলোর সামরিক তাৎপর্য থাকে। কারণ করিডরটি যাবে একটা যুদ্ধক্ষেত্রে। যুদ্ধক্ষেত্রের এদিকে আছে ১৩ লাখ শরণার্থী। ফলে পরিস্থিতি জটিল। আরাকানে মিয়ানমার সরকার প্রায় নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের সেনাও আছে সামান্যসংখ্যক। অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রক আরাকান আর্মি একটি ‘নন স্টেট অ্যাক্টর’ (অরাষ্ট্রীয় পক্ষ)। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করতে পারবে না। অথচ সরকার তাদের কাছে সাহায্য পাঠাতে চাইছে। এ পরিস্থিতির মধ্যে অনেক জটিলতা আছে। বাংলাদেশের মানুষ নিশ্চয়ই কক্সবাজার অঞ্চলের সামরিকায়ন চায় না। কিন্তু এই করিডরের পার্শ্বফল হিসেবে অনেক সামরিক ব্যাপার আমরা দেখতে পাচ্ছি। করিডরকেন্দ্রিক এ সমঝোতায় রোহিঙ্গা প্রশ্নের কোনো সুরাহা হচ্ছে বলেও অন্তত এ মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে না। তাহলে বাংলাদেশের লাভ কী? আমার বক্তব্য হলো, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো না গেলে আরাকান আর্মিকে একতরফা সাহায্যে কোনো ফায়দা নেই।
প্রশ্ন: তাহলে এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কী করতে পারে?
উত্তর: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কাজ হলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসা। আবার রাজনৈতিক দলগুলোরও সরকারকে সহযোগিতা করার মনোভাব দেখাতে হবে। এ রকম একটা গুরুতর বিষয় আলোচনার সঠিক ফোরাম হলো পার্লামেন্ট। দেশে এখন সংসদ নেই। চলছে তুমুল রাজনৈতিক টানাপোড়েন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যদি একা এ সিদ্ধান্ত নেয়, তা সরকারের জন্য তো বটেই; বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্যও বড় ঝুঁকির ব্যাপার হতে পারে। ইতিমধ্যে অনেক রাজনীতিক এই করিডর নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সরকারের তাদের দুর্ভাবনাকে অগ্রাহ্য করা উচিত হবে না। কারণ এই সরকার গণ-অভ্যুত্থানের সরকার হলেও অনির্বাচিত। দেশের জন্য বড় নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসেই নেওয়া উচিত। সেটা না পারলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়াই উচিত না।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন করিডর দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে, তা কোনোভাবে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হতে পারে?
উত্তর: ইতিবাচক হতে পারে, যদি বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে একটা বোঝাপড়ায় আসতে পারে। তবে আরাকান আর্মি এমন কোনো চাপে নেই যে তারা রোহিঙ্গাদের নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের আহ্বানে মনখুলে সাড়া দেবে। তারা একাই আরাকানের ৮০-৯০ ভাগ এলাকা দখল করতে পেরেছে। তবে কূটনৈতিকভাবে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার বিকল্প নেই। কৌশলী দর-কষাকষির মাধ্যমে তাদের রাজি করাতে হবে বাংলাদেশকে। এটাই একমাত্র পথ। আবার তা করতে গিয়ে সরকার একা একাই সামরিক দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো উদ্যোগে শামিল হলে, তা বিতর্ক ও বিপদ তৈরি করবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের অন্যতম আলোচিত রাজনৈতিক পক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির নীতি নির্ধারণে অন্যতম ভূমিকা পালন করছেন যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার। দলের গঠনতন্ত্র প্রণয়নে গঠিত কমিটিতেও রয়েছেন তিনি।
৮ দিন আগেবাংলাদেশি তরুণ ওমর আহমেদ বর্তমানে বেলজিয়ামের ইএএসপিডি ব্রাসেলসের ইইউ প্রজেক্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত। বেলজিয়ামে উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কাজ, বাংলাদেশিদের সুযোগ ও প্রস্তুতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন নাদিম মজিদ।
২২ মার্চ ২০২৫ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব একজন প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ এবং জননীতি বিশ্লেষক। তিনি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। সম্প্রতি তথ্য খাতসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অর্চি হক।
১৭ মার্চ ২০২৫অন্তর্বর্তী সরকারের ৬ মাস পূর্ণ হচ্ছে ৮ ফেব্রুয়ারি। এ সময়ে দেশের অর্থনীতির অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেছেন পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আজকের পত্রিকার বাণিজ্য সম্পাদক শাহ আলম খান।
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫