
বদরুদ্দীন উমর লেখক, গবেষক ও বামপন্থী রাজনীতিক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিপিই ডিগ্রি পান। দেশে ফিরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। গভর্নর মোনায়েম খানের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে ১৯৬৮ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন। পরবর্তীকালে সার্বক্ষণিক লেখালেখিতে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি ও সংস্কৃতি পত্রিকার সম্পাদক। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাস পেরিয়ে যাচ্ছে। এ সরকার কি আদৌ সংস্কার কার্যক্রমে সফল হতে পারবে?
বদরুদ্দীন উমর: সংস্কারের কথা অনেক বলা হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। তারা কী সংস্কার করতে চায়—এ বিষয়ে তো পরিষ্কার কিছু বোঝা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রশাসন, অর্থনীতি, শিক্ষাসহ হাজারো রকম সংস্কারের দরকার আছে। এখন হাজার রকম সংস্কারের সাগরের মধ্যে পড়ে সরকার হাবুডুবু খাচ্ছে। নির্দিষ্টভাবে সরকার বলেছে না যে তারা কোথায় কোথায় সংস্কার চায়। এর মধ্যে তারা অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করেছে। তারা তাদের রিপোর্টও জমা দিয়েছে। কিন্তু এগুলো থেকে তারা কয়টির সংস্কার করতে পারবে, সেটা বোঝার কোনো উপায় নেই।
তারা যেসব সংস্কার কমিশন করেছে, তার কিছু ভালো দিক থাকতে পারে। এ দেশের জন্য এখন কী কী করণীয়? সেটা এসব কমিশন থেকে বোঝার কথা। এখন করণীয় দুভাবে—তাৎক্ষণিকভাবে এবং দূরবর্তী করণীয় হতে পারে। দূরবর্তী করণীয় নিয়ে এ সরকারের কিছু করার নেই। এ সরকার অনির্বাচিত এবং অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এ জন্য তাদের সংস্কার নিয়ে দূরবর্তী করণীয় থাকতে পারে না। তাই হাতের কাছে যেসব করণীয়, সেগুলোই তারা করতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হলো নির্বাচন করা। তার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় সংস্কার তারা করতে পারে। আমার কাছে মনে হয়, নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার ছাড়া অন্য কোনো সংস্কার তাদের দ্বারা সম্ভব না। আর সেই সংস্কার করলেও সেটা টেকসই কিছু হবে না। কারণ, এ সরকার যেটা করবে, পরবর্তী সরকার সেটা পাল্টে দিতে পারে।
আজকের পত্রিকা: এখন তাহলে করণীয় কী?
বদরুদ্দীন উমর: এখন উপদেষ্টারা নানা ধরনের কথা বলছেন। এটা করব, সেটা করব, ওমুক করব, তমুক করব। কিন্তু এখন পর্যন্ত কী করতে পেরেছে? সেদিকে তাকালে দেখা যাবে, খুব সামান্য কিছু কাজ হয়েছে। তবে তারা ব্যাংকিং সেক্টরে ভালো নিয়ন্ত্রণ আনতে পেরেছে। কিন্তু অন্য সব সংস্কারের ক্ষেত্রে কিছু পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
প্রশাসনে অনেক কিছু ঘটছে, তাতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না। যেমন—এখানে আওয়ামী লীগের লোকেরা বিদেশে চলে যাচ্ছে নাকের ডগায়। চলে যাওয়ার পর হইচই করা হচ্ছে, কীভাবে চলে যাচ্ছে? চলে যাওয়ার পর তদন্ত করা হচ্ছে। চলে যাওয়ার পর তো তদন্ত করে কী লাভ হয়?
এরপর শিক্ষাব্যবস্থা একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। কিন্তু এটা নিয়ে কোনো কমিশনই তারা করেনি। আশ্চর্য ব্যাপার হলো, ছাত্ররা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিল, কিন্তু তারাও বলল না, কেন শিক্ষা কমিশন করা হলো না।
তবে এ সরকারের ভালো ইচ্ছা আছে সংস্কার নিয়ে। কিন্তু তার জন্য প্রশাসনে শক্ত অবস্থান থাকা দরকার। তারা সব সংস্কারের রিপোর্টের ভিত্তিতে যে কাজ করতে পারবে, তার কোনো কারণ নেই। আর সব সংস্কার বাস্তবায়ন করার দায়িত্বও তো তাদের না। তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, দেশে যাতে নৈরাজ্য সৃষ্টি না হয়। তারা সে কাজটি প্রথম দিকে ভালোভাবে করেছে। তারপর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করা তো তাদের কাজ নয়।
আজকের পত্রিকা: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো নিয়ে বিএনপি, বাম, জামায়াত ও নবগঠিত এনসিপির মধ্যে মতভিন্নতা লক্ষ করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে আদৌ কোনো সংস্কার কি হবে?
বদরুদ্দীন উমর: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিভিন্ন পার্টি যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে কিছু ভালো প্রস্তাবও আছে। কিন্তু এসব নিয়ে যে দলগুলোর মধ্যে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে, সেটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। একেকটা দলের দৃষ্টিভঙ্গি একেক রকম। আর সেটা হয়েছে শ্রেণির রাজনীতির ভিত্তিতে। দলগুলো তাদের ভিন্নতা নিয়ে যে ঐকমত্যে পৌঁছাবে, সেটার তো কারণ নেই। যেভাবে এখন আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পার্থক্য নিয়ে—এই পার্থক্যগুলোর নিরসনের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। একটি অনির্বাচিত সরকারের পক্ষেও দেশের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধ নিরসন করা সম্ভব না। কাজেই এটা একটা অচল অবস্থা তৈরি করেছে। এই অচলাবস্থা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য তাদের উচিত হবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
আজকের পত্রিকা: বিএনপির একমাত্র দাবি হচ্ছে তাড়াতাড়ি নির্বাচন অনুষ্ঠানের। তারা কোনো ষড়যন্ত্রের আভাস দেখছে কি?
বদরুদ্দীন উমর: এখানে দেখা যাবে জামায়াতে ইসলামী, অন্যান্য ইসলামি দল ও এনসিপি আরও অনেক পরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষপাতী। তারা বলছে আগে সংস্কার, তারপরে নির্বাচন। এটা একটা স্টুপিড কথা। দেশে হাজার রকম সংস্কারের প্রয়োজন আছে। কোন সংস্কার করার পর নির্বাচন হওয়া দরকার, সেটা তো তারা বলছে না। আর নির্বাচনের সঙ্গে সংস্কারের কিসের সম্পর্ক? সংস্কার একটা ধারাবাহিক ব্যাপার। সংস্কার চলতেই থাকবে।
যারা সংস্কারে বেশি জোর দিচ্ছে, তাদের অবস্থা হচ্ছে, জামায়াত নিজেদের আরও গুছিয়ে নিতে চাচ্ছে নির্বাচনের জন্য। ছাত্রদের দলও নতুন। নির্বাচন করার জন্য দেশের মধ্যে যে একটা অবস্থান তৈরি করতে হয়, সেটা তাদের নেই। তারা নির্বাচনমুখী দেশের অন্য বিষয়ে কথা না বলে তারা নির্বাচনের কথাই বলছে। কিন্তু নির্বাচন করার মতো তাদের কোনো সাংগঠনিক অবস্থান নেই। তাই সাংগঠনিক অবস্থা তৈরি করার জন্য তাদের সময় দরকার। সে জন্য তারা নির্বাচন পেছানোর কথা বলছে।
অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচন করার জন্য তৈরি হয়ে আছে। দেশের এখন সবচেয়ে সংগঠিত ও জনপ্রিয় সংগঠন বলা যেতে পারে বিএনপিকে। নির্বাচন হলে তারাই যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাই তারা তাড়াতাড়ি নির্বাচন দেওয়ার কথা বলছে।
আজকের পত্রিকা: শিক্ষার্থীদের নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি জনগণের চাওয়া-পাওয়া কতটুকু পূরণ করতে পারবে বলে মনে করেন?
বদরুদ্দীন উমর: জনগণের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে তো এদের কোনো সম্পর্ক দেখছি না। এখন পর্যন্ত তারা যে কর্মসূচি দিয়েছে বা যেসব কাজকর্ম করছে, তার সঙ্গে জনগণ বা কোনো শ্রমজীবী মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। এখন পর্যন্ত তো তারা তাদের কর্মসূচিতে শ্রমিক, কৃষকের দাবিদাওয়ার কথাই বলছে না। কিছুই নেই।
তারা গঠিত হওয়ার পর কোনো জনসভা করেনি ঢাকায়। একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা ইফতার পার্টি করেছে। তারা এমনভাবে কাজ করছে, তাতে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা সাংগঠনিক কিছু ছোটখাটো জমায়েত করছে। কিন্তু তারা আজ পর্যন্ত একটাও জনসভা করেনি। তারা ছাত্র। তারা পার্টি গঠন করেই ক্ষমতায় যেতে চায়। এ-ও তো আশ্চর্য ব্যাপার। তারা অভ্যুত্থানের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে তাদের চরিত্রের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। অভ্যুত্থানের সময় তো তাদের কিছুই ছিল না। এখন তো দেখা যাচ্ছে, তাদের রমরমা অবস্থা।
অভ্যুত্থানের সময় তাদের কাছে কোনো টাকাপয়সা ছিল না। এখন তাদের মধ্যে কোটি কোটি টাকার খেলা চলছে। এত টাকা তারা কীভাবে খরচ করছে এবং এই টাকা কোথা থেকে আসছে এবং কে দিচ্ছে? এর হিসাব তো তারা দিচ্ছে না। এখানে তো কোনো স্বচ্ছতা দেখা যাচ্ছে না। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, এখানকার সব শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীরা তাদের টাকা দিচ্ছে। কাদের টাকায় একটা সংগঠন চলছে, যাকে বলে মস্ত বড় একটা নিশানা তাদের চরিত্রের। যারা সংগঠিত হয়ে এ রকম শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। শুধু যে সাংগঠনিক কাজে খরচ করছে, তা-ই নয়। দেখা গেল এদের এক নেতা শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে তার এলাকায় গেছে। সে নাকি প্রায় ছয় লাখ টাকা খরচ করেছে এ রকম শোডাউন দেওয়ার জন্য। এটা কি তামাশা নয় কি? সে আবার বলেছে, তার পরিবারের লোক এ টাকা দিয়েছে। এটা কি অ্যাবসার্ড কথাবার্তা নয় কি? এসব তো ভয়াবহ দুর্নীতির লক্ষণ। টাকা এভাবে এনে তারা শুধু সাংগঠনিক কাজে ব্যয় করছে না, ব্যক্তিগতভাবে অর্থে হাত লাগাচ্ছে।
তাহলে জনগণের চাওয়া-পাওয়া বলতে যা বোঝায়, তা নিয়ে তারা তো কোনো ম্যানিফেস্টো বা কর্মসূচি দেয়নি। তাদের যে নীতিগত অবস্থান কী, সেটাও তারা সেভাবে ব্যাখ্যা করেনি। যারা জনগণের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে পারবে, যারা জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধি। কিন্তু এরা তো জনগণের পক্ষে কোনো কথাই বলছে না। এরা শুধু সংস্কারের কথা বলছে।
আজকের পত্রিকা: তাদের ভবিষ্যৎ কী?
বদরুদ্দীন উমর: তারা হয়তো মনে করছে, নির্বাচনে বড় ধরনের সাফল্য পাবে। কিন্তু এভাবে তাদের ভাবা একটা অজ্ঞতার মতো ভাবনা এবং মূর্খতার একটা দিক। তারা একটা ছাত্রসংগঠন হিসেবে জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু নির্বাচন হলো অন্য ব্যাপার। নির্বাচন করতে গেলে এলাকায় যে ধরনের অবস্থান থাকা দরকার, নানা রকম সম্পর্ক থাকা দরকার—এগুলো ছাড়া যে কোনো নির্বাচনে জেতা সম্ভব নয়। এদের এসবের কিছুই নেই। আমার মনে হয়, এরা নির্বাচনে দাঁড়ালে অন্য কোনো পার্টির সঙ্গে জোট করে নির্বাচন না করে এককভাবে নির্বাচন করে সারা দেশে একটা আসনও পাবে না। একটা আসন পাওয়ার কোনো কারণ দেখি না। কিন্তু তারা নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে।
এর থেকে বোঝা যায়, এদের যে রাজনীতি বোঝার প্রজ্ঞা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং রাজনীতি বোঝার যে সামান্য দৃষ্টিভঙ্গি—সেসবও তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। মানে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য তারা উন্মাদ হয়ে গেছে। হাতে কোটি কোটি টাকা আসায় তাদের যে চরিত্র অভ্যুত্থানের সময় ছিল, সেটার আমূল পরিবর্তন হওয়ার কারণে তাদের এই অবস্থা হয়েছে। এদিক দিয়ে দেখলে জনগণের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। জনগণকে তারা কিছু দিতে চায় না।
আজকের পত্রিকা: টিএনজেড গ্রুপের গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার কথা থাকলেও তা এখনো করা হয়নি। বরং প্রতিশ্রুতি ভাঙার প্রতিবাদে আন্দোলন করার কারণে সম্প্রতি শ্রমিক নেতৃবৃন্দের ওপর পুলিশ হামলা করেছে। তাহলে এ সরকারকে কি শ্রমিকবান্ধব বলা যাবে?
বদরুদ্দীন উমর: আমি বিভিন্ন সময় বলেছি, এ সরকার তো আকাশ থেকে পড়েনি। এ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে আগস্ট মাসের আন্দোলনের পরে শূন্যতা পূরণ করার জন্য। কিন্তু এ সরকারকেও কাজ করতে হচ্ছে একটা কাঠামোর মধ্যে। এখানকার প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতির মধ্য থেকে কাজ করতে হচ্ছে। এই দেশে একটা শাসকশ্রেণি আছে। কারা এই শাসকশ্রেণি? ১৯৭২ সাল থেকে এখানে একটা ব্যবসায়ী শ্রেণি শাসকশ্রেণিতে পরিণত হয়েছে। সেই শ্রেণিই গত ৫৫ বছরে ফুলে-ফেঁপে ফুঁসে ওঠে শেখ হাসিনার শাসনামলে অক্টোপাসের মতো সমাজের সবকিছুতে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। শেখ হাসিনা চলে গেছে কিন্তু এই শাসক ও ব্যবসায়ী শ্রেণি তো দেশে রয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়, এ দেশের যে প্রশাসন ব্যবস্থা, তাতেও তাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। যেমন দেখা যাবে, আওয়ামী লীগ চলে গেলেও তাদের লোক এখানে ব্যাপক মাত্রায় রয়ে গেছে। পুলিশ, সামরিক বাহিনীসহ সর্বত্র রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ এই গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করত। তেমনি ইউনূসের সরকারও শ্রমিকদের কোনো দাবিদাওয়া মানছে না। আগেও যেমন চা-শ্রমিকসহ গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপর হামলা করা হতো। সে কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে এ সরকারের শ্রেণিগত তেমন পার্থক্য নেই। এ কারণে এ সরকারকে শিল্পমালিক, ব্যবসায়িক শ্রেণির স্বার্থের কাঠামোর মধ্য থেকে কাজ করতে হচ্ছে। এই সরকারও মালিকদের সরকার। কাজেই মালিকদের সরকার হিসেবে মালিকদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে শ্রমিকেরা দাবিদাওয়া পেশ করছে, তাতে তাদের প্রতি দরদ থাকার কোনো প্রশ্ন থাকার কথা না; বরং মালিকদের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের দমন করাই তাদের কাজ। সেই দমন করার কাজটাই এরা করছে। কেউ যদি মনে করে, বর্তমান সরকার জনগণের সরকার এবং সর্বস্তরের জনগণের জন্য কাজ করবে—সেটা হবে মূর্খতার শামিল। দেশের পরিস্থিতি বুঝতে হবে, দেশের শাসনব্যবস্থা বুঝতে হবে, দেশের শাসকশ্রেণির চরিত্র বুঝতে হবে এবং এদের সমর্থন ছাড়া যে ক্ষমতায় থাকা সম্ভব নয়, সেটাও বুঝতে হবে। আর দেশের ব্যবসায়ী ও শাসকশ্রেণি যদি মনে করে, এ সরকারকে ফেলে দিতে হবে অন্য যত ধরনের সাপোর্ট থাকুক না কেন, তারা ফেলে দেবেই। কাজেই এদের অনেক ধরনের লম্বা-চওড়া কথা বলার পরেও এই শাসকশ্রেণির পক্ষে কাজ করতে হচ্ছে। এবং এই কাজ করতে গিয়েই তারা শ্রমিকদের সব ধরনের দাবিদাওয়া উপেক্ষা করছে। আন্দোলন করলে শ্রমিকদের মারপিট করছে। এটাই তো স্বাভাবিক ব্যাপার, এটাই বাস্তব। এই বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে কোনো ধরনের চিন্তাভাবনা করা ঠিক নয়।
আজকের পত্রিকা: সরকার আইন না করে চাপে পড়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। চাপের মুখে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ভালো ফল বয়ে আনে না। কারও চাপে নয়, বরং সিদ্ধান্তগুলো হওয়া উচিত জনগণের প্রত্যাশা ও আইন বুঝে। আপনার মতামত কী?
বদরুদ্দীন উমর: আওয়ামী লীগ দল ও সরকার ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেছিল। ক্ষমতা থেকে উৎখাত হয়ে যাওয়ার পরেও তাদের সক্রিয়তা তো চলছে। এটার একটা বড় কারণ হচ্ছে, ভারত সরকার আওয়ামী লীগকে এখনো সাহায্য করছে। মুসলিম লীগ ১৯৫৪ সালে উৎখাত হওয়ার পর তাদের ভারতের মতো দেশ ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগ উৎখাত হওয়ার পরে ভারত সরকার এখনো তাদের প্রতি সাহায্যকারী হয়ে রয়েছে। তারা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। শেখ হাসিনা সেখান থেকে যে নানা রকম উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে এবং টেলিফোনের মাধ্যমে তার নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিচ্ছে। এভাবে তারা শেখ হাসিনাকে শুধু আশ্রয় নয়, প্রশ্রয়ও দিচ্ছে।
দেশে আওয়ামী লীগের সে রকম প্রকাশ্য সক্রিয়তা না থাকলেও তারা তো কোনোভাবেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়নি। আওয়ামী লীগের লোকজন সুযোগ বুঝে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করার সুযোগের অপেক্ষায় আছে।
কিন্তু তারা এসব কাজ করার সুযোগ খুঁজলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা ঠিক হয়নি। দলটি ভারত সরকারের সহযোগিতায় যতই ফিরে আসার সুযোগ বা অন্তর্ঘাতমূলক অপতৎপরতা খুঁজুক, তাদের কিন্তু শিগগির জনগণের মধ্যে আবার কাজ করার বিশেষ ক্ষমতা নেই। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগকে ছেড়ে দেওয়াই ভালো ছিল। তারা তাদের কাজ করে যেতে পারে, যতটা পারে। এই অবস্থায় তারা বেশি দূর অগ্রসর হওয়ার মতো অবস্থায় নেই। কিন্তু তাদেরকে নিষিদ্ধ করার কারণে জনগণ তাদের প্রতি সমবেদনা দেখানোর সুযোগ পাবে। তারা এই সুযোগে কাজ করারও সুযোগ পাবে। একটা পার্টিকে নিষিদ্ধ করলেই দুর্বল হয়ে যায় না। আওয়ামী লীগ জামায়াতকে তো নিষিদ্ধ করেছিল এবং বিভিন্ন সময় অন্য অনেক দলকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, কিন্তু জামায়াত ভেতরে ভেতরে অনেক কাজ করেছে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করলেও তাদের লোক তো সর্বত্র রয়েছে। এ কারণে তাদের সক্রিয়তা কোনোভাবেই কমবে না; বরং নিষিদ্ধের কারণে তাদের কাজ করার আরও সুবিধা হবে। জনগণের সমর্থনও তারা পাবে হয়তো, যেটা নিষিদ্ধ না হলে পেত না। তাই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা কোনোভাবেই রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেওয়া হয়নি। এটার মধ্য দিয়ে বরঞ্চ আওয়ামী লীগকে সাহায্য করাই হয়েছে।
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলে জামায়াত নিষিদ্ধ হবে না কেন?
বদরুদ্দীন উমর: এখানে বলা যেতে পারে, অভ্যুত্থানের পরে অনেকে মনে করেছিল, সারা দেশে বামপন্থী শক্তির উত্থান ঘটবে। তাদের কার্যক্রম আরও বাড়বে। সে রকম কিছুই হয়নি। এখানে অভ্যুত্থান-পরবর্তী পর্যায়ে বামপন্থী দলগুলোর বিশেষভাবে কাজ নেই। কিন্তু বিশেষ করে দক্ষিণপন্থীরা এখানে সামনে এসেছে। দক্ষিণপন্থী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে অগ্রসর এবং সবচেয়ে দুষ্ট প্রকৃতির দল। এরাই বেশি এখন তৎপর। সে কারণে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে কোনো লাভ হবে না। এই পার্টি শক্তিশালী হওয়ার কারণে তাকে নিষিদ্ধ করলে দেশে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
আজকের পত্রিকা: কিছুদিন আগে হেফাজতে ইসলাম নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সম্পূর্ণভাবে বিরোধিতা করেছে এবং এ কমিটির নারী সদস্যদের ‘বেশ্যা’ বলে গালিগালাজ করেছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
বদরুদ্দীন উমর: পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা অল্পবিস্তর আছে। আমাদের দেশে নারীবিদ্বেষ বিশেষভাবে আছে। এটা হিন্দুধর্মের মধ্যে প্রাচীনকাল থেকে আছে। মনুসংহিতায় নানা বিষোদ্গার করে নারীদের শত্রু ভাবা হয়েছে। হিন্দুশাস্ত্রে একজন পুরুষ অসংখ্য বিয়ে করতে পারে। কিন্তু একজন নারী একটার বেশি বিয়ে তো করতেই পারে না। বিধবা হয়ে গেলে আর বিয়ে করা সম্ভব হয় না। বিধবা হওয়ার পর নানা ধরনের অত্যাচার চলে। যেমন—এটা যাওয়া যাবে না, এটা-ওটা করা যাবে না। পঞ্চাশ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। আবার পৈতৃক কোনো সম্পত্তি পাওয়ার অধিকার নেই নারীদের।
ইসলামের মধ্যেও তা-ই। তুলনামূলকভাবে কিছু অধিকার দেওয়া থাকলেও নানা ধরনের বিধিনিষেধ আছে। ইসলামে ছেলে-মেয়ে সম্পত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে দুই নিয়ম। মেয়েরা ছেলেদের থেকে অর্ধেক সম্পত্তি পায়। এই ধরনের যে পার্থক্য যেসব দেশে থাকে, সেটা তো অবশ্যই পশ্চাৎপদ দেশ। আর যারা এ ধরনের বিষয় নিয়ে দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে, তাদের তো আধুনিক ভাষায় বর্বর ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। এই যে হেফাজতে ইসলাম এবং জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে যারা কট্টরপন্থী আছে, তারা তো বর্বর ছাড়া কিছুই নয়। এ রকম বর্বরতা বিভিন্ন দেশে এখনো আছে। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্বরতা আছে। এ রকম বর্বরতার ধরন একেক দেশে একেক রকম। আমাদের দেশে বর্বরতার যেসব অপকর্ম হয়, তার শিক্ষা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকেই আসে। ইসলামের স্বার্থরক্ষাকারী বা ইসলামি পণ্ডিত দাবিদার যেসব লোক আছে, তারা ইসলামের নামে নারীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায়। তারা তো ইসলামকে একটা পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম হিসেবে রক্ষা করে চলছে। তাই হেফাজতে ইসলাম হলো জামায়াতে ইসলামীর চেয়েও খারাপ। জামায়াতে ইসলামীর চেয়েও এরা একটা বর্বর সংগঠন।
নারী সংস্কার কমিশন যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, নারী-পুরুষের সম্পত্তিতে যে সমান অধিকারের কথা বলেছে, তার বিরুদ্ধে তারা দাঁড়িয়েছে। তাই এখানে ইসলাম নয়, সম্পত্তির স্বার্থের বিষয়টা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারা এত বর্বর এবং নোংরা মানসিকতার যে নারী সংস্কার কমিশনের সদস্যদের তারা বেশ্যা বলেছে। এটা তো কুৎসিত সংস্কৃতির ধারক-বাহক ছাড়া কেউ এভাবে নারীদের নিয়ে এ ধরনের কথা উচ্চারণ করতে পারে না। তাই এরা সংস্কৃতির মাপকাঠিতেও নীচু মনের মানুষ। আসলে এদের মধ্যে প্রকৃত শিক্ষার কোনো ব্যাপার নেই। এরা আবার এ দেশের সম্পদশালী গোষ্ঠীরই প্রতিনিধি। এ জন্যই তারা নারীদের অধিকারের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। এসব ঘটনা শুধু আজকে হচ্ছে না। যখন থেকে নারীরা তাদের দাবি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে, তখন থেকেই কিন্তু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করে আসছে।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ জটিলতার দিকে যাচ্ছে বলে কেউ কেউ বলছেন। আপনার কাছে কী মনে হচ্ছে?
বদরুদ্দীন উমর: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিলতার চেয়ে ঘোলাটে হয়ে গেছে। নানা ধরনের স্বার্থ এখানে মাথাচাড়া দিচ্ছে। এখানে যেহেতু একটা অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, তারা একটা নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকার কারণে সব সংগঠনের সঙ্গে ডিল করতে পারছে না। শুধু বামপন্থী দলগুলোর তেমন কোনো সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না চোখে পড়ার মতো। এই অবস্থায় দেশে দক্ষিণপন্থীদেরই রাজত্ব চলছে। দক্ষিণপন্থীরাই বাংলাদেশের রাজনীতিকে কবজা করে রেখেছে। এটা একটা বড় বিস্ময়কর ব্যাপার। আগস্টের অভ্যুত্থানের পরে এখানে জনগণের প্রকৃত শক্তির আবির্ভাব ঘটেনি। সে জন্য শিক্ষার্থীদের দলটি গঠিত হওয়ার পরেও দলটির বামপন্থী কোনো পরিচয় নেই। তারা বলেছে, আমরা বামপন্থীও না, দক্ষিণপন্থীও না—আমরা মধ্যপন্থী। আসলে মধ্যপন্থী বলে কিছু নেই। আসলে তাদের যে কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে, তাতে এদেরকে দক্ষিণপন্থী ও প্রতিক্রিয়াশীল বলে আখ্যায়িত করতে হবে।
এই অবস্থায় ঘোলাটে পরিস্থিতি থেকে কীভাবে বের হওয়া যাবে, সে রকম কোনো পথনির্দেশও এ সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়। কাজেই এ সরকারের পক্ষে এখন যেটা দরকার, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। তাহলে কিন্তু ঘোলাটে পরিস্থিতি থাকবে না।
(মতামত সাক্ষাৎকারদাতার নিজস্ব)
আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাস পেরিয়ে যাচ্ছে। এ সরকার কি আদৌ সংস্কার কার্যক্রমে সফল হতে পারবে?
বদরুদ্দীন উমর: সংস্কারের কথা অনেক বলা হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। তারা কী সংস্কার করতে চায়—এ বিষয়ে তো পরিষ্কার কিছু বোঝা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রশাসন, অর্থনীতি, শিক্ষাসহ হাজারো রকম সংস্কারের দরকার আছে। এখন হাজার রকম সংস্কারের সাগরের মধ্যে পড়ে সরকার হাবুডুবু খাচ্ছে। নির্দিষ্টভাবে সরকার বলেছে না যে তারা কোথায় কোথায় সংস্কার চায়। এর মধ্যে তারা অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করেছে। তারা তাদের রিপোর্টও জমা দিয়েছে। কিন্তু এগুলো থেকে তারা কয়টির সংস্কার করতে পারবে, সেটা বোঝার কোনো উপায় নেই।
তারা যেসব সংস্কার কমিশন করেছে, তার কিছু ভালো দিক থাকতে পারে। এ দেশের জন্য এখন কী কী করণীয়? সেটা এসব কমিশন থেকে বোঝার কথা। এখন করণীয় দুভাবে—তাৎক্ষণিকভাবে এবং দূরবর্তী করণীয় হতে পারে। দূরবর্তী করণীয় নিয়ে এ সরকারের কিছু করার নেই। এ সরকার অনির্বাচিত এবং অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এ জন্য তাদের সংস্কার নিয়ে দূরবর্তী করণীয় থাকতে পারে না। তাই হাতের কাছে যেসব করণীয়, সেগুলোই তারা করতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হলো নির্বাচন করা। তার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় সংস্কার তারা করতে পারে। আমার কাছে মনে হয়, নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার ছাড়া অন্য কোনো সংস্কার তাদের দ্বারা সম্ভব না। আর সেই সংস্কার করলেও সেটা টেকসই কিছু হবে না। কারণ, এ সরকার যেটা করবে, পরবর্তী সরকার সেটা পাল্টে দিতে পারে।
আজকের পত্রিকা: এখন তাহলে করণীয় কী?
বদরুদ্দীন উমর: এখন উপদেষ্টারা নানা ধরনের কথা বলছেন। এটা করব, সেটা করব, ওমুক করব, তমুক করব। কিন্তু এখন পর্যন্ত কী করতে পেরেছে? সেদিকে তাকালে দেখা যাবে, খুব সামান্য কিছু কাজ হয়েছে। তবে তারা ব্যাংকিং সেক্টরে ভালো নিয়ন্ত্রণ আনতে পেরেছে। কিন্তু অন্য সব সংস্কারের ক্ষেত্রে কিছু পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
প্রশাসনে অনেক কিছু ঘটছে, তাতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না। যেমন—এখানে আওয়ামী লীগের লোকেরা বিদেশে চলে যাচ্ছে নাকের ডগায়। চলে যাওয়ার পর হইচই করা হচ্ছে, কীভাবে চলে যাচ্ছে? চলে যাওয়ার পর তদন্ত করা হচ্ছে। চলে যাওয়ার পর তো তদন্ত করে কী লাভ হয়?
এরপর শিক্ষাব্যবস্থা একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। কিন্তু এটা নিয়ে কোনো কমিশনই তারা করেনি। আশ্চর্য ব্যাপার হলো, ছাত্ররা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিল, কিন্তু তারাও বলল না, কেন শিক্ষা কমিশন করা হলো না।
তবে এ সরকারের ভালো ইচ্ছা আছে সংস্কার নিয়ে। কিন্তু তার জন্য প্রশাসনে শক্ত অবস্থান থাকা দরকার। তারা সব সংস্কারের রিপোর্টের ভিত্তিতে যে কাজ করতে পারবে, তার কোনো কারণ নেই। আর সব সংস্কার বাস্তবায়ন করার দায়িত্বও তো তাদের না। তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, দেশে যাতে নৈরাজ্য সৃষ্টি না হয়। তারা সে কাজটি প্রথম দিকে ভালোভাবে করেছে। তারপর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করা তো তাদের কাজ নয়।
আজকের পত্রিকা: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো নিয়ে বিএনপি, বাম, জামায়াত ও নবগঠিত এনসিপির মধ্যে মতভিন্নতা লক্ষ করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে আদৌ কোনো সংস্কার কি হবে?
বদরুদ্দীন উমর: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিভিন্ন পার্টি যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে কিছু ভালো প্রস্তাবও আছে। কিন্তু এসব নিয়ে যে দলগুলোর মধ্যে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে, সেটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। একেকটা দলের দৃষ্টিভঙ্গি একেক রকম। আর সেটা হয়েছে শ্রেণির রাজনীতির ভিত্তিতে। দলগুলো তাদের ভিন্নতা নিয়ে যে ঐকমত্যে পৌঁছাবে, সেটার তো কারণ নেই। যেভাবে এখন আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পার্থক্য নিয়ে—এই পার্থক্যগুলোর নিরসনের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। একটি অনির্বাচিত সরকারের পক্ষেও দেশের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধ নিরসন করা সম্ভব না। কাজেই এটা একটা অচল অবস্থা তৈরি করেছে। এই অচলাবস্থা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য তাদের উচিত হবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
আজকের পত্রিকা: বিএনপির একমাত্র দাবি হচ্ছে তাড়াতাড়ি নির্বাচন অনুষ্ঠানের। তারা কোনো ষড়যন্ত্রের আভাস দেখছে কি?
বদরুদ্দীন উমর: এখানে দেখা যাবে জামায়াতে ইসলামী, অন্যান্য ইসলামি দল ও এনসিপি আরও অনেক পরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষপাতী। তারা বলছে আগে সংস্কার, তারপরে নির্বাচন। এটা একটা স্টুপিড কথা। দেশে হাজার রকম সংস্কারের প্রয়োজন আছে। কোন সংস্কার করার পর নির্বাচন হওয়া দরকার, সেটা তো তারা বলছে না। আর নির্বাচনের সঙ্গে সংস্কারের কিসের সম্পর্ক? সংস্কার একটা ধারাবাহিক ব্যাপার। সংস্কার চলতেই থাকবে।
যারা সংস্কারে বেশি জোর দিচ্ছে, তাদের অবস্থা হচ্ছে, জামায়াত নিজেদের আরও গুছিয়ে নিতে চাচ্ছে নির্বাচনের জন্য। ছাত্রদের দলও নতুন। নির্বাচন করার জন্য দেশের মধ্যে যে একটা অবস্থান তৈরি করতে হয়, সেটা তাদের নেই। তারা নির্বাচনমুখী দেশের অন্য বিষয়ে কথা না বলে তারা নির্বাচনের কথাই বলছে। কিন্তু নির্বাচন করার মতো তাদের কোনো সাংগঠনিক অবস্থান নেই। তাই সাংগঠনিক অবস্থা তৈরি করার জন্য তাদের সময় দরকার। সে জন্য তারা নির্বাচন পেছানোর কথা বলছে।
অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচন করার জন্য তৈরি হয়ে আছে। দেশের এখন সবচেয়ে সংগঠিত ও জনপ্রিয় সংগঠন বলা যেতে পারে বিএনপিকে। নির্বাচন হলে তারাই যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাই তারা তাড়াতাড়ি নির্বাচন দেওয়ার কথা বলছে।
আজকের পত্রিকা: শিক্ষার্থীদের নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি জনগণের চাওয়া-পাওয়া কতটুকু পূরণ করতে পারবে বলে মনে করেন?
বদরুদ্দীন উমর: জনগণের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে তো এদের কোনো সম্পর্ক দেখছি না। এখন পর্যন্ত তারা যে কর্মসূচি দিয়েছে বা যেসব কাজকর্ম করছে, তার সঙ্গে জনগণ বা কোনো শ্রমজীবী মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। এখন পর্যন্ত তো তারা তাদের কর্মসূচিতে শ্রমিক, কৃষকের দাবিদাওয়ার কথাই বলছে না। কিছুই নেই।
তারা গঠিত হওয়ার পর কোনো জনসভা করেনি ঢাকায়। একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা ইফতার পার্টি করেছে। তারা এমনভাবে কাজ করছে, তাতে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা সাংগঠনিক কিছু ছোটখাটো জমায়েত করছে। কিন্তু তারা আজ পর্যন্ত একটাও জনসভা করেনি। তারা ছাত্র। তারা পার্টি গঠন করেই ক্ষমতায় যেতে চায়। এ-ও তো আশ্চর্য ব্যাপার। তারা অভ্যুত্থানের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে তাদের চরিত্রের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। অভ্যুত্থানের সময় তো তাদের কিছুই ছিল না। এখন তো দেখা যাচ্ছে, তাদের রমরমা অবস্থা।
অভ্যুত্থানের সময় তাদের কাছে কোনো টাকাপয়সা ছিল না। এখন তাদের মধ্যে কোটি কোটি টাকার খেলা চলছে। এত টাকা তারা কীভাবে খরচ করছে এবং এই টাকা কোথা থেকে আসছে এবং কে দিচ্ছে? এর হিসাব তো তারা দিচ্ছে না। এখানে তো কোনো স্বচ্ছতা দেখা যাচ্ছে না। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, এখানকার সব শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীরা তাদের টাকা দিচ্ছে। কাদের টাকায় একটা সংগঠন চলছে, যাকে বলে মস্ত বড় একটা নিশানা তাদের চরিত্রের। যারা সংগঠিত হয়ে এ রকম শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। শুধু যে সাংগঠনিক কাজে খরচ করছে, তা-ই নয়। দেখা গেল এদের এক নেতা শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে তার এলাকায় গেছে। সে নাকি প্রায় ছয় লাখ টাকা খরচ করেছে এ রকম শোডাউন দেওয়ার জন্য। এটা কি তামাশা নয় কি? সে আবার বলেছে, তার পরিবারের লোক এ টাকা দিয়েছে। এটা কি অ্যাবসার্ড কথাবার্তা নয় কি? এসব তো ভয়াবহ দুর্নীতির লক্ষণ। টাকা এভাবে এনে তারা শুধু সাংগঠনিক কাজে ব্যয় করছে না, ব্যক্তিগতভাবে অর্থে হাত লাগাচ্ছে।
তাহলে জনগণের চাওয়া-পাওয়া বলতে যা বোঝায়, তা নিয়ে তারা তো কোনো ম্যানিফেস্টো বা কর্মসূচি দেয়নি। তাদের যে নীতিগত অবস্থান কী, সেটাও তারা সেভাবে ব্যাখ্যা করেনি। যারা জনগণের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে পারবে, যারা জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধি। কিন্তু এরা তো জনগণের পক্ষে কোনো কথাই বলছে না। এরা শুধু সংস্কারের কথা বলছে।
আজকের পত্রিকা: তাদের ভবিষ্যৎ কী?
বদরুদ্দীন উমর: তারা হয়তো মনে করছে, নির্বাচনে বড় ধরনের সাফল্য পাবে। কিন্তু এভাবে তাদের ভাবা একটা অজ্ঞতার মতো ভাবনা এবং মূর্খতার একটা দিক। তারা একটা ছাত্রসংগঠন হিসেবে জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু নির্বাচন হলো অন্য ব্যাপার। নির্বাচন করতে গেলে এলাকায় যে ধরনের অবস্থান থাকা দরকার, নানা রকম সম্পর্ক থাকা দরকার—এগুলো ছাড়া যে কোনো নির্বাচনে জেতা সম্ভব নয়। এদের এসবের কিছুই নেই। আমার মনে হয়, এরা নির্বাচনে দাঁড়ালে অন্য কোনো পার্টির সঙ্গে জোট করে নির্বাচন না করে এককভাবে নির্বাচন করে সারা দেশে একটা আসনও পাবে না। একটা আসন পাওয়ার কোনো কারণ দেখি না। কিন্তু তারা নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে।
এর থেকে বোঝা যায়, এদের যে রাজনীতি বোঝার প্রজ্ঞা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং রাজনীতি বোঝার যে সামান্য দৃষ্টিভঙ্গি—সেসবও তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। মানে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য তারা উন্মাদ হয়ে গেছে। হাতে কোটি কোটি টাকা আসায় তাদের যে চরিত্র অভ্যুত্থানের সময় ছিল, সেটার আমূল পরিবর্তন হওয়ার কারণে তাদের এই অবস্থা হয়েছে। এদিক দিয়ে দেখলে জনগণের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। জনগণকে তারা কিছু দিতে চায় না।
আজকের পত্রিকা: টিএনজেড গ্রুপের গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার কথা থাকলেও তা এখনো করা হয়নি। বরং প্রতিশ্রুতি ভাঙার প্রতিবাদে আন্দোলন করার কারণে সম্প্রতি শ্রমিক নেতৃবৃন্দের ওপর পুলিশ হামলা করেছে। তাহলে এ সরকারকে কি শ্রমিকবান্ধব বলা যাবে?
বদরুদ্দীন উমর: আমি বিভিন্ন সময় বলেছি, এ সরকার তো আকাশ থেকে পড়েনি। এ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে আগস্ট মাসের আন্দোলনের পরে শূন্যতা পূরণ করার জন্য। কিন্তু এ সরকারকেও কাজ করতে হচ্ছে একটা কাঠামোর মধ্যে। এখানকার প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতির মধ্য থেকে কাজ করতে হচ্ছে। এই দেশে একটা শাসকশ্রেণি আছে। কারা এই শাসকশ্রেণি? ১৯৭২ সাল থেকে এখানে একটা ব্যবসায়ী শ্রেণি শাসকশ্রেণিতে পরিণত হয়েছে। সেই শ্রেণিই গত ৫৫ বছরে ফুলে-ফেঁপে ফুঁসে ওঠে শেখ হাসিনার শাসনামলে অক্টোপাসের মতো সমাজের সবকিছুতে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। শেখ হাসিনা চলে গেছে কিন্তু এই শাসক ও ব্যবসায়ী শ্রেণি তো দেশে রয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়, এ দেশের যে প্রশাসন ব্যবস্থা, তাতেও তাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। যেমন দেখা যাবে, আওয়ামী লীগ চলে গেলেও তাদের লোক এখানে ব্যাপক মাত্রায় রয়ে গেছে। পুলিশ, সামরিক বাহিনীসহ সর্বত্র রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ এই গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করত। তেমনি ইউনূসের সরকারও শ্রমিকদের কোনো দাবিদাওয়া মানছে না। আগেও যেমন চা-শ্রমিকসহ গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপর হামলা করা হতো। সে কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে এ সরকারের শ্রেণিগত তেমন পার্থক্য নেই। এ কারণে এ সরকারকে শিল্পমালিক, ব্যবসায়িক শ্রেণির স্বার্থের কাঠামোর মধ্য থেকে কাজ করতে হচ্ছে। এই সরকারও মালিকদের সরকার। কাজেই মালিকদের সরকার হিসেবে মালিকদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে শ্রমিকেরা দাবিদাওয়া পেশ করছে, তাতে তাদের প্রতি দরদ থাকার কোনো প্রশ্ন থাকার কথা না; বরং মালিকদের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের দমন করাই তাদের কাজ। সেই দমন করার কাজটাই এরা করছে। কেউ যদি মনে করে, বর্তমান সরকার জনগণের সরকার এবং সর্বস্তরের জনগণের জন্য কাজ করবে—সেটা হবে মূর্খতার শামিল। দেশের পরিস্থিতি বুঝতে হবে, দেশের শাসনব্যবস্থা বুঝতে হবে, দেশের শাসকশ্রেণির চরিত্র বুঝতে হবে এবং এদের সমর্থন ছাড়া যে ক্ষমতায় থাকা সম্ভব নয়, সেটাও বুঝতে হবে। আর দেশের ব্যবসায়ী ও শাসকশ্রেণি যদি মনে করে, এ সরকারকে ফেলে দিতে হবে অন্য যত ধরনের সাপোর্ট থাকুক না কেন, তারা ফেলে দেবেই। কাজেই এদের অনেক ধরনের লম্বা-চওড়া কথা বলার পরেও এই শাসকশ্রেণির পক্ষে কাজ করতে হচ্ছে। এবং এই কাজ করতে গিয়েই তারা শ্রমিকদের সব ধরনের দাবিদাওয়া উপেক্ষা করছে। আন্দোলন করলে শ্রমিকদের মারপিট করছে। এটাই তো স্বাভাবিক ব্যাপার, এটাই বাস্তব। এই বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে কোনো ধরনের চিন্তাভাবনা করা ঠিক নয়।
আজকের পত্রিকা: সরকার আইন না করে চাপে পড়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। চাপের মুখে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ভালো ফল বয়ে আনে না। কারও চাপে নয়, বরং সিদ্ধান্তগুলো হওয়া উচিত জনগণের প্রত্যাশা ও আইন বুঝে। আপনার মতামত কী?
বদরুদ্দীন উমর: আওয়ামী লীগ দল ও সরকার ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেছিল। ক্ষমতা থেকে উৎখাত হয়ে যাওয়ার পরেও তাদের সক্রিয়তা তো চলছে। এটার একটা বড় কারণ হচ্ছে, ভারত সরকার আওয়ামী লীগকে এখনো সাহায্য করছে। মুসলিম লীগ ১৯৫৪ সালে উৎখাত হওয়ার পর তাদের ভারতের মতো দেশ ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগ উৎখাত হওয়ার পরে ভারত সরকার এখনো তাদের প্রতি সাহায্যকারী হয়ে রয়েছে। তারা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। শেখ হাসিনা সেখান থেকে যে নানা রকম উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে এবং টেলিফোনের মাধ্যমে তার নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিচ্ছে। এভাবে তারা শেখ হাসিনাকে শুধু আশ্রয় নয়, প্রশ্রয়ও দিচ্ছে।
দেশে আওয়ামী লীগের সে রকম প্রকাশ্য সক্রিয়তা না থাকলেও তারা তো কোনোভাবেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়নি। আওয়ামী লীগের লোকজন সুযোগ বুঝে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করার সুযোগের অপেক্ষায় আছে।
কিন্তু তারা এসব কাজ করার সুযোগ খুঁজলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা ঠিক হয়নি। দলটি ভারত সরকারের সহযোগিতায় যতই ফিরে আসার সুযোগ বা অন্তর্ঘাতমূলক অপতৎপরতা খুঁজুক, তাদের কিন্তু শিগগির জনগণের মধ্যে আবার কাজ করার বিশেষ ক্ষমতা নেই। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগকে ছেড়ে দেওয়াই ভালো ছিল। তারা তাদের কাজ করে যেতে পারে, যতটা পারে। এই অবস্থায় তারা বেশি দূর অগ্রসর হওয়ার মতো অবস্থায় নেই। কিন্তু তাদেরকে নিষিদ্ধ করার কারণে জনগণ তাদের প্রতি সমবেদনা দেখানোর সুযোগ পাবে। তারা এই সুযোগে কাজ করারও সুযোগ পাবে। একটা পার্টিকে নিষিদ্ধ করলেই দুর্বল হয়ে যায় না। আওয়ামী লীগ জামায়াতকে তো নিষিদ্ধ করেছিল এবং বিভিন্ন সময় অন্য অনেক দলকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, কিন্তু জামায়াত ভেতরে ভেতরে অনেক কাজ করেছে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করলেও তাদের লোক তো সর্বত্র রয়েছে। এ কারণে তাদের সক্রিয়তা কোনোভাবেই কমবে না; বরং নিষিদ্ধের কারণে তাদের কাজ করার আরও সুবিধা হবে। জনগণের সমর্থনও তারা পাবে হয়তো, যেটা নিষিদ্ধ না হলে পেত না। তাই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা কোনোভাবেই রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেওয়া হয়নি। এটার মধ্য দিয়ে বরঞ্চ আওয়ামী লীগকে সাহায্য করাই হয়েছে।
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলে জামায়াত নিষিদ্ধ হবে না কেন?
বদরুদ্দীন উমর: এখানে বলা যেতে পারে, অভ্যুত্থানের পরে অনেকে মনে করেছিল, সারা দেশে বামপন্থী শক্তির উত্থান ঘটবে। তাদের কার্যক্রম আরও বাড়বে। সে রকম কিছুই হয়নি। এখানে অভ্যুত্থান-পরবর্তী পর্যায়ে বামপন্থী দলগুলোর বিশেষভাবে কাজ নেই। কিন্তু বিশেষ করে দক্ষিণপন্থীরা এখানে সামনে এসেছে। দক্ষিণপন্থী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে অগ্রসর এবং সবচেয়ে দুষ্ট প্রকৃতির দল। এরাই বেশি এখন তৎপর। সে কারণে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে কোনো লাভ হবে না। এই পার্টি শক্তিশালী হওয়ার কারণে তাকে নিষিদ্ধ করলে দেশে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
আজকের পত্রিকা: কিছুদিন আগে হেফাজতে ইসলাম নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সম্পূর্ণভাবে বিরোধিতা করেছে এবং এ কমিটির নারী সদস্যদের ‘বেশ্যা’ বলে গালিগালাজ করেছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
বদরুদ্দীন উমর: পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা অল্পবিস্তর আছে। আমাদের দেশে নারীবিদ্বেষ বিশেষভাবে আছে। এটা হিন্দুধর্মের মধ্যে প্রাচীনকাল থেকে আছে। মনুসংহিতায় নানা বিষোদ্গার করে নারীদের শত্রু ভাবা হয়েছে। হিন্দুশাস্ত্রে একজন পুরুষ অসংখ্য বিয়ে করতে পারে। কিন্তু একজন নারী একটার বেশি বিয়ে তো করতেই পারে না। বিধবা হয়ে গেলে আর বিয়ে করা সম্ভব হয় না। বিধবা হওয়ার পর নানা ধরনের অত্যাচার চলে। যেমন—এটা যাওয়া যাবে না, এটা-ওটা করা যাবে না। পঞ্চাশ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। আবার পৈতৃক কোনো সম্পত্তি পাওয়ার অধিকার নেই নারীদের।
ইসলামের মধ্যেও তা-ই। তুলনামূলকভাবে কিছু অধিকার দেওয়া থাকলেও নানা ধরনের বিধিনিষেধ আছে। ইসলামে ছেলে-মেয়ে সম্পত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে দুই নিয়ম। মেয়েরা ছেলেদের থেকে অর্ধেক সম্পত্তি পায়। এই ধরনের যে পার্থক্য যেসব দেশে থাকে, সেটা তো অবশ্যই পশ্চাৎপদ দেশ। আর যারা এ ধরনের বিষয় নিয়ে দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে, তাদের তো আধুনিক ভাষায় বর্বর ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। এই যে হেফাজতে ইসলাম এবং জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে যারা কট্টরপন্থী আছে, তারা তো বর্বর ছাড়া কিছুই নয়। এ রকম বর্বরতা বিভিন্ন দেশে এখনো আছে। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্বরতা আছে। এ রকম বর্বরতার ধরন একেক দেশে একেক রকম। আমাদের দেশে বর্বরতার যেসব অপকর্ম হয়, তার শিক্ষা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকেই আসে। ইসলামের স্বার্থরক্ষাকারী বা ইসলামি পণ্ডিত দাবিদার যেসব লোক আছে, তারা ইসলামের নামে নারীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায়। তারা তো ইসলামকে একটা পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম হিসেবে রক্ষা করে চলছে। তাই হেফাজতে ইসলাম হলো জামায়াতে ইসলামীর চেয়েও খারাপ। জামায়াতে ইসলামীর চেয়েও এরা একটা বর্বর সংগঠন।
নারী সংস্কার কমিশন যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, নারী-পুরুষের সম্পত্তিতে যে সমান অধিকারের কথা বলেছে, তার বিরুদ্ধে তারা দাঁড়িয়েছে। তাই এখানে ইসলাম নয়, সম্পত্তির স্বার্থের বিষয়টা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারা এত বর্বর এবং নোংরা মানসিকতার যে নারী সংস্কার কমিশনের সদস্যদের তারা বেশ্যা বলেছে। এটা তো কুৎসিত সংস্কৃতির ধারক-বাহক ছাড়া কেউ এভাবে নারীদের নিয়ে এ ধরনের কথা উচ্চারণ করতে পারে না। তাই এরা সংস্কৃতির মাপকাঠিতেও নীচু মনের মানুষ। আসলে এদের মধ্যে প্রকৃত শিক্ষার কোনো ব্যাপার নেই। এরা আবার এ দেশের সম্পদশালী গোষ্ঠীরই প্রতিনিধি। এ জন্যই তারা নারীদের অধিকারের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। এসব ঘটনা শুধু আজকে হচ্ছে না। যখন থেকে নারীরা তাদের দাবি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে, তখন থেকেই কিন্তু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করে আসছে।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ জটিলতার দিকে যাচ্ছে বলে কেউ কেউ বলছেন। আপনার কাছে কী মনে হচ্ছে?
বদরুদ্দীন উমর: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিলতার চেয়ে ঘোলাটে হয়ে গেছে। নানা ধরনের স্বার্থ এখানে মাথাচাড়া দিচ্ছে। এখানে যেহেতু একটা অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, তারা একটা নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকার কারণে সব সংগঠনের সঙ্গে ডিল করতে পারছে না। শুধু বামপন্থী দলগুলোর তেমন কোনো সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না চোখে পড়ার মতো। এই অবস্থায় দেশে দক্ষিণপন্থীদেরই রাজত্ব চলছে। দক্ষিণপন্থীরাই বাংলাদেশের রাজনীতিকে কবজা করে রেখেছে। এটা একটা বড় বিস্ময়কর ব্যাপার। আগস্টের অভ্যুত্থানের পরে এখানে জনগণের প্রকৃত শক্তির আবির্ভাব ঘটেনি। সে জন্য শিক্ষার্থীদের দলটি গঠিত হওয়ার পরেও দলটির বামপন্থী কোনো পরিচয় নেই। তারা বলেছে, আমরা বামপন্থীও না, দক্ষিণপন্থীও না—আমরা মধ্যপন্থী। আসলে মধ্যপন্থী বলে কিছু নেই। আসলে তাদের যে কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে, তাতে এদেরকে দক্ষিণপন্থী ও প্রতিক্রিয়াশীল বলে আখ্যায়িত করতে হবে।
এই অবস্থায় ঘোলাটে পরিস্থিতি থেকে কীভাবে বের হওয়া যাবে, সে রকম কোনো পথনির্দেশও এ সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়। কাজেই এ সরকারের পক্ষে এখন যেটা দরকার, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। তাহলে কিন্তু ঘোলাটে পরিস্থিতি থাকবে না।
(মতামত সাক্ষাৎকারদাতার নিজস্ব)

বদরুদ্দীন উমর লেখক, গবেষক ও বামপন্থী রাজনীতিক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিপিই ডিগ্রি পান। দেশে ফিরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। গভর্নর মোনায়েম খানের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে ১৯৬৮ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন। পরবর্তীকালে সার্বক্ষণিক লেখালেখিতে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি ও সংস্কৃতি পত্রিকার সম্পাদক। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাস পেরিয়ে যাচ্ছে। এ সরকার কি আদৌ সংস্কার কার্যক্রমে সফল হতে পারবে?
বদরুদ্দীন উমর: সংস্কারের কথা অনেক বলা হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। তারা কী সংস্কার করতে চায়—এ বিষয়ে তো পরিষ্কার কিছু বোঝা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রশাসন, অর্থনীতি, শিক্ষাসহ হাজারো রকম সংস্কারের দরকার আছে। এখন হাজার রকম সংস্কারের সাগরের মধ্যে পড়ে সরকার হাবুডুবু খাচ্ছে। নির্দিষ্টভাবে সরকার বলেছে না যে তারা কোথায় কোথায় সংস্কার চায়। এর মধ্যে তারা অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করেছে। তারা তাদের রিপোর্টও জমা দিয়েছে। কিন্তু এগুলো থেকে তারা কয়টির সংস্কার করতে পারবে, সেটা বোঝার কোনো উপায় নেই।
তারা যেসব সংস্কার কমিশন করেছে, তার কিছু ভালো দিক থাকতে পারে। এ দেশের জন্য এখন কী কী করণীয়? সেটা এসব কমিশন থেকে বোঝার কথা। এখন করণীয় দুভাবে—তাৎক্ষণিকভাবে এবং দূরবর্তী করণীয় হতে পারে। দূরবর্তী করণীয় নিয়ে এ সরকারের কিছু করার নেই। এ সরকার অনির্বাচিত এবং অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এ জন্য তাদের সংস্কার নিয়ে দূরবর্তী করণীয় থাকতে পারে না। তাই হাতের কাছে যেসব করণীয়, সেগুলোই তারা করতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হলো নির্বাচন করা। তার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় সংস্কার তারা করতে পারে। আমার কাছে মনে হয়, নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার ছাড়া অন্য কোনো সংস্কার তাদের দ্বারা সম্ভব না। আর সেই সংস্কার করলেও সেটা টেকসই কিছু হবে না। কারণ, এ সরকার যেটা করবে, পরবর্তী সরকার সেটা পাল্টে দিতে পারে।
আজকের পত্রিকা: এখন তাহলে করণীয় কী?
বদরুদ্দীন উমর: এখন উপদেষ্টারা নানা ধরনের কথা বলছেন। এটা করব, সেটা করব, ওমুক করব, তমুক করব। কিন্তু এখন পর্যন্ত কী করতে পেরেছে? সেদিকে তাকালে দেখা যাবে, খুব সামান্য কিছু কাজ হয়েছে। তবে তারা ব্যাংকিং সেক্টরে ভালো নিয়ন্ত্রণ আনতে পেরেছে। কিন্তু অন্য সব সংস্কারের ক্ষেত্রে কিছু পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
প্রশাসনে অনেক কিছু ঘটছে, তাতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না। যেমন—এখানে আওয়ামী লীগের লোকেরা বিদেশে চলে যাচ্ছে নাকের ডগায়। চলে যাওয়ার পর হইচই করা হচ্ছে, কীভাবে চলে যাচ্ছে? চলে যাওয়ার পর তদন্ত করা হচ্ছে। চলে যাওয়ার পর তো তদন্ত করে কী লাভ হয়?
এরপর শিক্ষাব্যবস্থা একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। কিন্তু এটা নিয়ে কোনো কমিশনই তারা করেনি। আশ্চর্য ব্যাপার হলো, ছাত্ররা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিল, কিন্তু তারাও বলল না, কেন শিক্ষা কমিশন করা হলো না।
তবে এ সরকারের ভালো ইচ্ছা আছে সংস্কার নিয়ে। কিন্তু তার জন্য প্রশাসনে শক্ত অবস্থান থাকা দরকার। তারা সব সংস্কারের রিপোর্টের ভিত্তিতে যে কাজ করতে পারবে, তার কোনো কারণ নেই। আর সব সংস্কার বাস্তবায়ন করার দায়িত্বও তো তাদের না। তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, দেশে যাতে নৈরাজ্য সৃষ্টি না হয়। তারা সে কাজটি প্রথম দিকে ভালোভাবে করেছে। তারপর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করা তো তাদের কাজ নয়।
আজকের পত্রিকা: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো নিয়ে বিএনপি, বাম, জামায়াত ও নবগঠিত এনসিপির মধ্যে মতভিন্নতা লক্ষ করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে আদৌ কোনো সংস্কার কি হবে?
বদরুদ্দীন উমর: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিভিন্ন পার্টি যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে কিছু ভালো প্রস্তাবও আছে। কিন্তু এসব নিয়ে যে দলগুলোর মধ্যে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে, সেটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। একেকটা দলের দৃষ্টিভঙ্গি একেক রকম। আর সেটা হয়েছে শ্রেণির রাজনীতির ভিত্তিতে। দলগুলো তাদের ভিন্নতা নিয়ে যে ঐকমত্যে পৌঁছাবে, সেটার তো কারণ নেই। যেভাবে এখন আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পার্থক্য নিয়ে—এই পার্থক্যগুলোর নিরসনের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। একটি অনির্বাচিত সরকারের পক্ষেও দেশের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধ নিরসন করা সম্ভব না। কাজেই এটা একটা অচল অবস্থা তৈরি করেছে। এই অচলাবস্থা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য তাদের উচিত হবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
আজকের পত্রিকা: বিএনপির একমাত্র দাবি হচ্ছে তাড়াতাড়ি নির্বাচন অনুষ্ঠানের। তারা কোনো ষড়যন্ত্রের আভাস দেখছে কি?
বদরুদ্দীন উমর: এখানে দেখা যাবে জামায়াতে ইসলামী, অন্যান্য ইসলামি দল ও এনসিপি আরও অনেক পরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষপাতী। তারা বলছে আগে সংস্কার, তারপরে নির্বাচন। এটা একটা স্টুপিড কথা। দেশে হাজার রকম সংস্কারের প্রয়োজন আছে। কোন সংস্কার করার পর নির্বাচন হওয়া দরকার, সেটা তো তারা বলছে না। আর নির্বাচনের সঙ্গে সংস্কারের কিসের সম্পর্ক? সংস্কার একটা ধারাবাহিক ব্যাপার। সংস্কার চলতেই থাকবে।
যারা সংস্কারে বেশি জোর দিচ্ছে, তাদের অবস্থা হচ্ছে, জামায়াত নিজেদের আরও গুছিয়ে নিতে চাচ্ছে নির্বাচনের জন্য। ছাত্রদের দলও নতুন। নির্বাচন করার জন্য দেশের মধ্যে যে একটা অবস্থান তৈরি করতে হয়, সেটা তাদের নেই। তারা নির্বাচনমুখী দেশের অন্য বিষয়ে কথা না বলে তারা নির্বাচনের কথাই বলছে। কিন্তু নির্বাচন করার মতো তাদের কোনো সাংগঠনিক অবস্থান নেই। তাই সাংগঠনিক অবস্থা তৈরি করার জন্য তাদের সময় দরকার। সে জন্য তারা নির্বাচন পেছানোর কথা বলছে।
অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচন করার জন্য তৈরি হয়ে আছে। দেশের এখন সবচেয়ে সংগঠিত ও জনপ্রিয় সংগঠন বলা যেতে পারে বিএনপিকে। নির্বাচন হলে তারাই যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাই তারা তাড়াতাড়ি নির্বাচন দেওয়ার কথা বলছে।
আজকের পত্রিকা: শিক্ষার্থীদের নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি জনগণের চাওয়া-পাওয়া কতটুকু পূরণ করতে পারবে বলে মনে করেন?
বদরুদ্দীন উমর: জনগণের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে তো এদের কোনো সম্পর্ক দেখছি না। এখন পর্যন্ত তারা যে কর্মসূচি দিয়েছে বা যেসব কাজকর্ম করছে, তার সঙ্গে জনগণ বা কোনো শ্রমজীবী মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। এখন পর্যন্ত তো তারা তাদের কর্মসূচিতে শ্রমিক, কৃষকের দাবিদাওয়ার কথাই বলছে না। কিছুই নেই।
তারা গঠিত হওয়ার পর কোনো জনসভা করেনি ঢাকায়। একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা ইফতার পার্টি করেছে। তারা এমনভাবে কাজ করছে, তাতে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা সাংগঠনিক কিছু ছোটখাটো জমায়েত করছে। কিন্তু তারা আজ পর্যন্ত একটাও জনসভা করেনি। তারা ছাত্র। তারা পার্টি গঠন করেই ক্ষমতায় যেতে চায়। এ-ও তো আশ্চর্য ব্যাপার। তারা অভ্যুত্থানের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে তাদের চরিত্রের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। অভ্যুত্থানের সময় তো তাদের কিছুই ছিল না। এখন তো দেখা যাচ্ছে, তাদের রমরমা অবস্থা।
অভ্যুত্থানের সময় তাদের কাছে কোনো টাকাপয়সা ছিল না। এখন তাদের মধ্যে কোটি কোটি টাকার খেলা চলছে। এত টাকা তারা কীভাবে খরচ করছে এবং এই টাকা কোথা থেকে আসছে এবং কে দিচ্ছে? এর হিসাব তো তারা দিচ্ছে না। এখানে তো কোনো স্বচ্ছতা দেখা যাচ্ছে না। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, এখানকার সব শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীরা তাদের টাকা দিচ্ছে। কাদের টাকায় একটা সংগঠন চলছে, যাকে বলে মস্ত বড় একটা নিশানা তাদের চরিত্রের। যারা সংগঠিত হয়ে এ রকম শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। শুধু যে সাংগঠনিক কাজে খরচ করছে, তা-ই নয়। দেখা গেল এদের এক নেতা শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে তার এলাকায় গেছে। সে নাকি প্রায় ছয় লাখ টাকা খরচ করেছে এ রকম শোডাউন দেওয়ার জন্য। এটা কি তামাশা নয় কি? সে আবার বলেছে, তার পরিবারের লোক এ টাকা দিয়েছে। এটা কি অ্যাবসার্ড কথাবার্তা নয় কি? এসব তো ভয়াবহ দুর্নীতির লক্ষণ। টাকা এভাবে এনে তারা শুধু সাংগঠনিক কাজে ব্যয় করছে না, ব্যক্তিগতভাবে অর্থে হাত লাগাচ্ছে।
তাহলে জনগণের চাওয়া-পাওয়া বলতে যা বোঝায়, তা নিয়ে তারা তো কোনো ম্যানিফেস্টো বা কর্মসূচি দেয়নি। তাদের যে নীতিগত অবস্থান কী, সেটাও তারা সেভাবে ব্যাখ্যা করেনি। যারা জনগণের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে পারবে, যারা জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধি। কিন্তু এরা তো জনগণের পক্ষে কোনো কথাই বলছে না। এরা শুধু সংস্কারের কথা বলছে।
আজকের পত্রিকা: তাদের ভবিষ্যৎ কী?
বদরুদ্দীন উমর: তারা হয়তো মনে করছে, নির্বাচনে বড় ধরনের সাফল্য পাবে। কিন্তু এভাবে তাদের ভাবা একটা অজ্ঞতার মতো ভাবনা এবং মূর্খতার একটা দিক। তারা একটা ছাত্রসংগঠন হিসেবে জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু নির্বাচন হলো অন্য ব্যাপার। নির্বাচন করতে গেলে এলাকায় যে ধরনের অবস্থান থাকা দরকার, নানা রকম সম্পর্ক থাকা দরকার—এগুলো ছাড়া যে কোনো নির্বাচনে জেতা সম্ভব নয়। এদের এসবের কিছুই নেই। আমার মনে হয়, এরা নির্বাচনে দাঁড়ালে অন্য কোনো পার্টির সঙ্গে জোট করে নির্বাচন না করে এককভাবে নির্বাচন করে সারা দেশে একটা আসনও পাবে না। একটা আসন পাওয়ার কোনো কারণ দেখি না। কিন্তু তারা নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে।
এর থেকে বোঝা যায়, এদের যে রাজনীতি বোঝার প্রজ্ঞা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং রাজনীতি বোঝার যে সামান্য দৃষ্টিভঙ্গি—সেসবও তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। মানে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য তারা উন্মাদ হয়ে গেছে। হাতে কোটি কোটি টাকা আসায় তাদের যে চরিত্র অভ্যুত্থানের সময় ছিল, সেটার আমূল পরিবর্তন হওয়ার কারণে তাদের এই অবস্থা হয়েছে। এদিক দিয়ে দেখলে জনগণের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। জনগণকে তারা কিছু দিতে চায় না।
আজকের পত্রিকা: টিএনজেড গ্রুপের গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার কথা থাকলেও তা এখনো করা হয়নি। বরং প্রতিশ্রুতি ভাঙার প্রতিবাদে আন্দোলন করার কারণে সম্প্রতি শ্রমিক নেতৃবৃন্দের ওপর পুলিশ হামলা করেছে। তাহলে এ সরকারকে কি শ্রমিকবান্ধব বলা যাবে?
বদরুদ্দীন উমর: আমি বিভিন্ন সময় বলেছি, এ সরকার তো আকাশ থেকে পড়েনি। এ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে আগস্ট মাসের আন্দোলনের পরে শূন্যতা পূরণ করার জন্য। কিন্তু এ সরকারকেও কাজ করতে হচ্ছে একটা কাঠামোর মধ্যে। এখানকার প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতির মধ্য থেকে কাজ করতে হচ্ছে। এই দেশে একটা শাসকশ্রেণি আছে। কারা এই শাসকশ্রেণি? ১৯৭২ সাল থেকে এখানে একটা ব্যবসায়ী শ্রেণি শাসকশ্রেণিতে পরিণত হয়েছে। সেই শ্রেণিই গত ৫৫ বছরে ফুলে-ফেঁপে ফুঁসে ওঠে শেখ হাসিনার শাসনামলে অক্টোপাসের মতো সমাজের সবকিছুতে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। শেখ হাসিনা চলে গেছে কিন্তু এই শাসক ও ব্যবসায়ী শ্রেণি তো দেশে রয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়, এ দেশের যে প্রশাসন ব্যবস্থা, তাতেও তাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। যেমন দেখা যাবে, আওয়ামী লীগ চলে গেলেও তাদের লোক এখানে ব্যাপক মাত্রায় রয়ে গেছে। পুলিশ, সামরিক বাহিনীসহ সর্বত্র রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ এই গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করত। তেমনি ইউনূসের সরকারও শ্রমিকদের কোনো দাবিদাওয়া মানছে না। আগেও যেমন চা-শ্রমিকসহ গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপর হামলা করা হতো। সে কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে এ সরকারের শ্রেণিগত তেমন পার্থক্য নেই। এ কারণে এ সরকারকে শিল্পমালিক, ব্যবসায়িক শ্রেণির স্বার্থের কাঠামোর মধ্য থেকে কাজ করতে হচ্ছে। এই সরকারও মালিকদের সরকার। কাজেই মালিকদের সরকার হিসেবে মালিকদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে শ্রমিকেরা দাবিদাওয়া পেশ করছে, তাতে তাদের প্রতি দরদ থাকার কোনো প্রশ্ন থাকার কথা না; বরং মালিকদের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের দমন করাই তাদের কাজ। সেই দমন করার কাজটাই এরা করছে। কেউ যদি মনে করে, বর্তমান সরকার জনগণের সরকার এবং সর্বস্তরের জনগণের জন্য কাজ করবে—সেটা হবে মূর্খতার শামিল। দেশের পরিস্থিতি বুঝতে হবে, দেশের শাসনব্যবস্থা বুঝতে হবে, দেশের শাসকশ্রেণির চরিত্র বুঝতে হবে এবং এদের সমর্থন ছাড়া যে ক্ষমতায় থাকা সম্ভব নয়, সেটাও বুঝতে হবে। আর দেশের ব্যবসায়ী ও শাসকশ্রেণি যদি মনে করে, এ সরকারকে ফেলে দিতে হবে অন্য যত ধরনের সাপোর্ট থাকুক না কেন, তারা ফেলে দেবেই। কাজেই এদের অনেক ধরনের লম্বা-চওড়া কথা বলার পরেও এই শাসকশ্রেণির পক্ষে কাজ করতে হচ্ছে। এবং এই কাজ করতে গিয়েই তারা শ্রমিকদের সব ধরনের দাবিদাওয়া উপেক্ষা করছে। আন্দোলন করলে শ্রমিকদের মারপিট করছে। এটাই তো স্বাভাবিক ব্যাপার, এটাই বাস্তব। এই বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে কোনো ধরনের চিন্তাভাবনা করা ঠিক নয়।
আজকের পত্রিকা: সরকার আইন না করে চাপে পড়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। চাপের মুখে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ভালো ফল বয়ে আনে না। কারও চাপে নয়, বরং সিদ্ধান্তগুলো হওয়া উচিত জনগণের প্রত্যাশা ও আইন বুঝে। আপনার মতামত কী?
বদরুদ্দীন উমর: আওয়ামী লীগ দল ও সরকার ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেছিল। ক্ষমতা থেকে উৎখাত হয়ে যাওয়ার পরেও তাদের সক্রিয়তা তো চলছে। এটার একটা বড় কারণ হচ্ছে, ভারত সরকার আওয়ামী লীগকে এখনো সাহায্য করছে। মুসলিম লীগ ১৯৫৪ সালে উৎখাত হওয়ার পর তাদের ভারতের মতো দেশ ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগ উৎখাত হওয়ার পরে ভারত সরকার এখনো তাদের প্রতি সাহায্যকারী হয়ে রয়েছে। তারা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। শেখ হাসিনা সেখান থেকে যে নানা রকম উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে এবং টেলিফোনের মাধ্যমে তার নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিচ্ছে। এভাবে তারা শেখ হাসিনাকে শুধু আশ্রয় নয়, প্রশ্রয়ও দিচ্ছে।
দেশে আওয়ামী লীগের সে রকম প্রকাশ্য সক্রিয়তা না থাকলেও তারা তো কোনোভাবেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়নি। আওয়ামী লীগের লোকজন সুযোগ বুঝে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করার সুযোগের অপেক্ষায় আছে।
কিন্তু তারা এসব কাজ করার সুযোগ খুঁজলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা ঠিক হয়নি। দলটি ভারত সরকারের সহযোগিতায় যতই ফিরে আসার সুযোগ বা অন্তর্ঘাতমূলক অপতৎপরতা খুঁজুক, তাদের কিন্তু শিগগির জনগণের মধ্যে আবার কাজ করার বিশেষ ক্ষমতা নেই। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগকে ছেড়ে দেওয়াই ভালো ছিল। তারা তাদের কাজ করে যেতে পারে, যতটা পারে। এই অবস্থায় তারা বেশি দূর অগ্রসর হওয়ার মতো অবস্থায় নেই। কিন্তু তাদেরকে নিষিদ্ধ করার কারণে জনগণ তাদের প্রতি সমবেদনা দেখানোর সুযোগ পাবে। তারা এই সুযোগে কাজ করারও সুযোগ পাবে। একটা পার্টিকে নিষিদ্ধ করলেই দুর্বল হয়ে যায় না। আওয়ামী লীগ জামায়াতকে তো নিষিদ্ধ করেছিল এবং বিভিন্ন সময় অন্য অনেক দলকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, কিন্তু জামায়াত ভেতরে ভেতরে অনেক কাজ করেছে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করলেও তাদের লোক তো সর্বত্র রয়েছে। এ কারণে তাদের সক্রিয়তা কোনোভাবেই কমবে না; বরং নিষিদ্ধের কারণে তাদের কাজ করার আরও সুবিধা হবে। জনগণের সমর্থনও তারা পাবে হয়তো, যেটা নিষিদ্ধ না হলে পেত না। তাই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা কোনোভাবেই রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেওয়া হয়নি। এটার মধ্য দিয়ে বরঞ্চ আওয়ামী লীগকে সাহায্য করাই হয়েছে।
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলে জামায়াত নিষিদ্ধ হবে না কেন?
বদরুদ্দীন উমর: এখানে বলা যেতে পারে, অভ্যুত্থানের পরে অনেকে মনে করেছিল, সারা দেশে বামপন্থী শক্তির উত্থান ঘটবে। তাদের কার্যক্রম আরও বাড়বে। সে রকম কিছুই হয়নি। এখানে অভ্যুত্থান-পরবর্তী পর্যায়ে বামপন্থী দলগুলোর বিশেষভাবে কাজ নেই। কিন্তু বিশেষ করে দক্ষিণপন্থীরা এখানে সামনে এসেছে। দক্ষিণপন্থী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে অগ্রসর এবং সবচেয়ে দুষ্ট প্রকৃতির দল। এরাই বেশি এখন তৎপর। সে কারণে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে কোনো লাভ হবে না। এই পার্টি শক্তিশালী হওয়ার কারণে তাকে নিষিদ্ধ করলে দেশে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
আজকের পত্রিকা: কিছুদিন আগে হেফাজতে ইসলাম নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সম্পূর্ণভাবে বিরোধিতা করেছে এবং এ কমিটির নারী সদস্যদের ‘বেশ্যা’ বলে গালিগালাজ করেছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
বদরুদ্দীন উমর: পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা অল্পবিস্তর আছে। আমাদের দেশে নারীবিদ্বেষ বিশেষভাবে আছে। এটা হিন্দুধর্মের মধ্যে প্রাচীনকাল থেকে আছে। মনুসংহিতায় নানা বিষোদ্গার করে নারীদের শত্রু ভাবা হয়েছে। হিন্দুশাস্ত্রে একজন পুরুষ অসংখ্য বিয়ে করতে পারে। কিন্তু একজন নারী একটার বেশি বিয়ে তো করতেই পারে না। বিধবা হয়ে গেলে আর বিয়ে করা সম্ভব হয় না। বিধবা হওয়ার পর নানা ধরনের অত্যাচার চলে। যেমন—এটা যাওয়া যাবে না, এটা-ওটা করা যাবে না। পঞ্চাশ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। আবার পৈতৃক কোনো সম্পত্তি পাওয়ার অধিকার নেই নারীদের।
ইসলামের মধ্যেও তা-ই। তুলনামূলকভাবে কিছু অধিকার দেওয়া থাকলেও নানা ধরনের বিধিনিষেধ আছে। ইসলামে ছেলে-মেয়ে সম্পত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে দুই নিয়ম। মেয়েরা ছেলেদের থেকে অর্ধেক সম্পত্তি পায়। এই ধরনের যে পার্থক্য যেসব দেশে থাকে, সেটা তো অবশ্যই পশ্চাৎপদ দেশ। আর যারা এ ধরনের বিষয় নিয়ে দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে, তাদের তো আধুনিক ভাষায় বর্বর ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। এই যে হেফাজতে ইসলাম এবং জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে যারা কট্টরপন্থী আছে, তারা তো বর্বর ছাড়া কিছুই নয়। এ রকম বর্বরতা বিভিন্ন দেশে এখনো আছে। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্বরতা আছে। এ রকম বর্বরতার ধরন একেক দেশে একেক রকম। আমাদের দেশে বর্বরতার যেসব অপকর্ম হয়, তার শিক্ষা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকেই আসে। ইসলামের স্বার্থরক্ষাকারী বা ইসলামি পণ্ডিত দাবিদার যেসব লোক আছে, তারা ইসলামের নামে নারীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায়। তারা তো ইসলামকে একটা পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম হিসেবে রক্ষা করে চলছে। তাই হেফাজতে ইসলাম হলো জামায়াতে ইসলামীর চেয়েও খারাপ। জামায়াতে ইসলামীর চেয়েও এরা একটা বর্বর সংগঠন।
নারী সংস্কার কমিশন যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, নারী-পুরুষের সম্পত্তিতে যে সমান অধিকারের কথা বলেছে, তার বিরুদ্ধে তারা দাঁড়িয়েছে। তাই এখানে ইসলাম নয়, সম্পত্তির স্বার্থের বিষয়টা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারা এত বর্বর এবং নোংরা মানসিকতার যে নারী সংস্কার কমিশনের সদস্যদের তারা বেশ্যা বলেছে। এটা তো কুৎসিত সংস্কৃতির ধারক-বাহক ছাড়া কেউ এভাবে নারীদের নিয়ে এ ধরনের কথা উচ্চারণ করতে পারে না। তাই এরা সংস্কৃতির মাপকাঠিতেও নীচু মনের মানুষ। আসলে এদের মধ্যে প্রকৃত শিক্ষার কোনো ব্যাপার নেই। এরা আবার এ দেশের সম্পদশালী গোষ্ঠীরই প্রতিনিধি। এ জন্যই তারা নারীদের অধিকারের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। এসব ঘটনা শুধু আজকে হচ্ছে না। যখন থেকে নারীরা তাদের দাবি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে, তখন থেকেই কিন্তু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করে আসছে।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ জটিলতার দিকে যাচ্ছে বলে কেউ কেউ বলছেন। আপনার কাছে কী মনে হচ্ছে?
বদরুদ্দীন উমর: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিলতার চেয়ে ঘোলাটে হয়ে গেছে। নানা ধরনের স্বার্থ এখানে মাথাচাড়া দিচ্ছে। এখানে যেহেতু একটা অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, তারা একটা নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকার কারণে সব সংগঠনের সঙ্গে ডিল করতে পারছে না। শুধু বামপন্থী দলগুলোর তেমন কোনো সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না চোখে পড়ার মতো। এই অবস্থায় দেশে দক্ষিণপন্থীদেরই রাজত্ব চলছে। দক্ষিণপন্থীরাই বাংলাদেশের রাজনীতিকে কবজা করে রেখেছে। এটা একটা বড় বিস্ময়কর ব্যাপার। আগস্টের অভ্যুত্থানের পরে এখানে জনগণের প্রকৃত শক্তির আবির্ভাব ঘটেনি। সে জন্য শিক্ষার্থীদের দলটি গঠিত হওয়ার পরেও দলটির বামপন্থী কোনো পরিচয় নেই। তারা বলেছে, আমরা বামপন্থীও না, দক্ষিণপন্থীও না—আমরা মধ্যপন্থী। আসলে মধ্যপন্থী বলে কিছু নেই। আসলে তাদের যে কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে, তাতে এদেরকে দক্ষিণপন্থী ও প্রতিক্রিয়াশীল বলে আখ্যায়িত করতে হবে।
এই অবস্থায় ঘোলাটে পরিস্থিতি থেকে কীভাবে বের হওয়া যাবে, সে রকম কোনো পথনির্দেশও এ সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়। কাজেই এ সরকারের পক্ষে এখন যেটা দরকার, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। তাহলে কিন্তু ঘোলাটে পরিস্থিতি থাকবে না।
(মতামত সাক্ষাৎকারদাতার নিজস্ব)
আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাস পেরিয়ে যাচ্ছে। এ সরকার কি আদৌ সংস্কার কার্যক্রমে সফল হতে পারবে?
বদরুদ্দীন উমর: সংস্কারের কথা অনেক বলা হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। তারা কী সংস্কার করতে চায়—এ বিষয়ে তো পরিষ্কার কিছু বোঝা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রশাসন, অর্থনীতি, শিক্ষাসহ হাজারো রকম সংস্কারের দরকার আছে। এখন হাজার রকম সংস্কারের সাগরের মধ্যে পড়ে সরকার হাবুডুবু খাচ্ছে। নির্দিষ্টভাবে সরকার বলেছে না যে তারা কোথায় কোথায় সংস্কার চায়। এর মধ্যে তারা অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করেছে। তারা তাদের রিপোর্টও জমা দিয়েছে। কিন্তু এগুলো থেকে তারা কয়টির সংস্কার করতে পারবে, সেটা বোঝার কোনো উপায় নেই।
তারা যেসব সংস্কার কমিশন করেছে, তার কিছু ভালো দিক থাকতে পারে। এ দেশের জন্য এখন কী কী করণীয়? সেটা এসব কমিশন থেকে বোঝার কথা। এখন করণীয় দুভাবে—তাৎক্ষণিকভাবে এবং দূরবর্তী করণীয় হতে পারে। দূরবর্তী করণীয় নিয়ে এ সরকারের কিছু করার নেই। এ সরকার অনির্বাচিত এবং অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এ জন্য তাদের সংস্কার নিয়ে দূরবর্তী করণীয় থাকতে পারে না। তাই হাতের কাছে যেসব করণীয়, সেগুলোই তারা করতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হলো নির্বাচন করা। তার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় সংস্কার তারা করতে পারে। আমার কাছে মনে হয়, নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার ছাড়া অন্য কোনো সংস্কার তাদের দ্বারা সম্ভব না। আর সেই সংস্কার করলেও সেটা টেকসই কিছু হবে না। কারণ, এ সরকার যেটা করবে, পরবর্তী সরকার সেটা পাল্টে দিতে পারে।
আজকের পত্রিকা: এখন তাহলে করণীয় কী?
বদরুদ্দীন উমর: এখন উপদেষ্টারা নানা ধরনের কথা বলছেন। এটা করব, সেটা করব, ওমুক করব, তমুক করব। কিন্তু এখন পর্যন্ত কী করতে পেরেছে? সেদিকে তাকালে দেখা যাবে, খুব সামান্য কিছু কাজ হয়েছে। তবে তারা ব্যাংকিং সেক্টরে ভালো নিয়ন্ত্রণ আনতে পেরেছে। কিন্তু অন্য সব সংস্কারের ক্ষেত্রে কিছু পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
প্রশাসনে অনেক কিছু ঘটছে, তাতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না। যেমন—এখানে আওয়ামী লীগের লোকেরা বিদেশে চলে যাচ্ছে নাকের ডগায়। চলে যাওয়ার পর হইচই করা হচ্ছে, কীভাবে চলে যাচ্ছে? চলে যাওয়ার পর তদন্ত করা হচ্ছে। চলে যাওয়ার পর তো তদন্ত করে কী লাভ হয়?
এরপর শিক্ষাব্যবস্থা একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। কিন্তু এটা নিয়ে কোনো কমিশনই তারা করেনি। আশ্চর্য ব্যাপার হলো, ছাত্ররা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিল, কিন্তু তারাও বলল না, কেন শিক্ষা কমিশন করা হলো না।
তবে এ সরকারের ভালো ইচ্ছা আছে সংস্কার নিয়ে। কিন্তু তার জন্য প্রশাসনে শক্ত অবস্থান থাকা দরকার। তারা সব সংস্কারের রিপোর্টের ভিত্তিতে যে কাজ করতে পারবে, তার কোনো কারণ নেই। আর সব সংস্কার বাস্তবায়ন করার দায়িত্বও তো তাদের না। তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, দেশে যাতে নৈরাজ্য সৃষ্টি না হয়। তারা সে কাজটি প্রথম দিকে ভালোভাবে করেছে। তারপর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করা তো তাদের কাজ নয়।
আজকের পত্রিকা: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো নিয়ে বিএনপি, বাম, জামায়াত ও নবগঠিত এনসিপির মধ্যে মতভিন্নতা লক্ষ করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে আদৌ কোনো সংস্কার কি হবে?
বদরুদ্দীন উমর: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিভিন্ন পার্টি যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে কিছু ভালো প্রস্তাবও আছে। কিন্তু এসব নিয়ে যে দলগুলোর মধ্যে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে, সেটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। একেকটা দলের দৃষ্টিভঙ্গি একেক রকম। আর সেটা হয়েছে শ্রেণির রাজনীতির ভিত্তিতে। দলগুলো তাদের ভিন্নতা নিয়ে যে ঐকমত্যে পৌঁছাবে, সেটার তো কারণ নেই। যেভাবে এখন আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পার্থক্য নিয়ে—এই পার্থক্যগুলোর নিরসনের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। একটি অনির্বাচিত সরকারের পক্ষেও দেশের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধ নিরসন করা সম্ভব না। কাজেই এটা একটা অচল অবস্থা তৈরি করেছে। এই অচলাবস্থা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য তাদের উচিত হবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
আজকের পত্রিকা: বিএনপির একমাত্র দাবি হচ্ছে তাড়াতাড়ি নির্বাচন অনুষ্ঠানের। তারা কোনো ষড়যন্ত্রের আভাস দেখছে কি?
বদরুদ্দীন উমর: এখানে দেখা যাবে জামায়াতে ইসলামী, অন্যান্য ইসলামি দল ও এনসিপি আরও অনেক পরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষপাতী। তারা বলছে আগে সংস্কার, তারপরে নির্বাচন। এটা একটা স্টুপিড কথা। দেশে হাজার রকম সংস্কারের প্রয়োজন আছে। কোন সংস্কার করার পর নির্বাচন হওয়া দরকার, সেটা তো তারা বলছে না। আর নির্বাচনের সঙ্গে সংস্কারের কিসের সম্পর্ক? সংস্কার একটা ধারাবাহিক ব্যাপার। সংস্কার চলতেই থাকবে।
যারা সংস্কারে বেশি জোর দিচ্ছে, তাদের অবস্থা হচ্ছে, জামায়াত নিজেদের আরও গুছিয়ে নিতে চাচ্ছে নির্বাচনের জন্য। ছাত্রদের দলও নতুন। নির্বাচন করার জন্য দেশের মধ্যে যে একটা অবস্থান তৈরি করতে হয়, সেটা তাদের নেই। তারা নির্বাচনমুখী দেশের অন্য বিষয়ে কথা না বলে তারা নির্বাচনের কথাই বলছে। কিন্তু নির্বাচন করার মতো তাদের কোনো সাংগঠনিক অবস্থান নেই। তাই সাংগঠনিক অবস্থা তৈরি করার জন্য তাদের সময় দরকার। সে জন্য তারা নির্বাচন পেছানোর কথা বলছে।
অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচন করার জন্য তৈরি হয়ে আছে। দেশের এখন সবচেয়ে সংগঠিত ও জনপ্রিয় সংগঠন বলা যেতে পারে বিএনপিকে। নির্বাচন হলে তারাই যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাই তারা তাড়াতাড়ি নির্বাচন দেওয়ার কথা বলছে।
আজকের পত্রিকা: শিক্ষার্থীদের নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি জনগণের চাওয়া-পাওয়া কতটুকু পূরণ করতে পারবে বলে মনে করেন?
বদরুদ্দীন উমর: জনগণের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে তো এদের কোনো সম্পর্ক দেখছি না। এখন পর্যন্ত তারা যে কর্মসূচি দিয়েছে বা যেসব কাজকর্ম করছে, তার সঙ্গে জনগণ বা কোনো শ্রমজীবী মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। এখন পর্যন্ত তো তারা তাদের কর্মসূচিতে শ্রমিক, কৃষকের দাবিদাওয়ার কথাই বলছে না। কিছুই নেই।
তারা গঠিত হওয়ার পর কোনো জনসভা করেনি ঢাকায়। একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা ইফতার পার্টি করেছে। তারা এমনভাবে কাজ করছে, তাতে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা সাংগঠনিক কিছু ছোটখাটো জমায়েত করছে। কিন্তু তারা আজ পর্যন্ত একটাও জনসভা করেনি। তারা ছাত্র। তারা পার্টি গঠন করেই ক্ষমতায় যেতে চায়। এ-ও তো আশ্চর্য ব্যাপার। তারা অভ্যুত্থানের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে তাদের চরিত্রের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। অভ্যুত্থানের সময় তো তাদের কিছুই ছিল না। এখন তো দেখা যাচ্ছে, তাদের রমরমা অবস্থা।
অভ্যুত্থানের সময় তাদের কাছে কোনো টাকাপয়সা ছিল না। এখন তাদের মধ্যে কোটি কোটি টাকার খেলা চলছে। এত টাকা তারা কীভাবে খরচ করছে এবং এই টাকা কোথা থেকে আসছে এবং কে দিচ্ছে? এর হিসাব তো তারা দিচ্ছে না। এখানে তো কোনো স্বচ্ছতা দেখা যাচ্ছে না। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, এখানকার সব শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীরা তাদের টাকা দিচ্ছে। কাদের টাকায় একটা সংগঠন চলছে, যাকে বলে মস্ত বড় একটা নিশানা তাদের চরিত্রের। যারা সংগঠিত হয়ে এ রকম শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। শুধু যে সাংগঠনিক কাজে খরচ করছে, তা-ই নয়। দেখা গেল এদের এক নেতা শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে তার এলাকায় গেছে। সে নাকি প্রায় ছয় লাখ টাকা খরচ করেছে এ রকম শোডাউন দেওয়ার জন্য। এটা কি তামাশা নয় কি? সে আবার বলেছে, তার পরিবারের লোক এ টাকা দিয়েছে। এটা কি অ্যাবসার্ড কথাবার্তা নয় কি? এসব তো ভয়াবহ দুর্নীতির লক্ষণ। টাকা এভাবে এনে তারা শুধু সাংগঠনিক কাজে ব্যয় করছে না, ব্যক্তিগতভাবে অর্থে হাত লাগাচ্ছে।
তাহলে জনগণের চাওয়া-পাওয়া বলতে যা বোঝায়, তা নিয়ে তারা তো কোনো ম্যানিফেস্টো বা কর্মসূচি দেয়নি। তাদের যে নীতিগত অবস্থান কী, সেটাও তারা সেভাবে ব্যাখ্যা করেনি। যারা জনগণের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে পারবে, যারা জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধি। কিন্তু এরা তো জনগণের পক্ষে কোনো কথাই বলছে না। এরা শুধু সংস্কারের কথা বলছে।
আজকের পত্রিকা: তাদের ভবিষ্যৎ কী?
বদরুদ্দীন উমর: তারা হয়তো মনে করছে, নির্বাচনে বড় ধরনের সাফল্য পাবে। কিন্তু এভাবে তাদের ভাবা একটা অজ্ঞতার মতো ভাবনা এবং মূর্খতার একটা দিক। তারা একটা ছাত্রসংগঠন হিসেবে জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু নির্বাচন হলো অন্য ব্যাপার। নির্বাচন করতে গেলে এলাকায় যে ধরনের অবস্থান থাকা দরকার, নানা রকম সম্পর্ক থাকা দরকার—এগুলো ছাড়া যে কোনো নির্বাচনে জেতা সম্ভব নয়। এদের এসবের কিছুই নেই। আমার মনে হয়, এরা নির্বাচনে দাঁড়ালে অন্য কোনো পার্টির সঙ্গে জোট করে নির্বাচন না করে এককভাবে নির্বাচন করে সারা দেশে একটা আসনও পাবে না। একটা আসন পাওয়ার কোনো কারণ দেখি না। কিন্তু তারা নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে।
এর থেকে বোঝা যায়, এদের যে রাজনীতি বোঝার প্রজ্ঞা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং রাজনীতি বোঝার যে সামান্য দৃষ্টিভঙ্গি—সেসবও তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। মানে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য তারা উন্মাদ হয়ে গেছে। হাতে কোটি কোটি টাকা আসায় তাদের যে চরিত্র অভ্যুত্থানের সময় ছিল, সেটার আমূল পরিবর্তন হওয়ার কারণে তাদের এই অবস্থা হয়েছে। এদিক দিয়ে দেখলে জনগণের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। জনগণকে তারা কিছু দিতে চায় না।
আজকের পত্রিকা: টিএনজেড গ্রুপের গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার কথা থাকলেও তা এখনো করা হয়নি। বরং প্রতিশ্রুতি ভাঙার প্রতিবাদে আন্দোলন করার কারণে সম্প্রতি শ্রমিক নেতৃবৃন্দের ওপর পুলিশ হামলা করেছে। তাহলে এ সরকারকে কি শ্রমিকবান্ধব বলা যাবে?
বদরুদ্দীন উমর: আমি বিভিন্ন সময় বলেছি, এ সরকার তো আকাশ থেকে পড়েনি। এ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে আগস্ট মাসের আন্দোলনের পরে শূন্যতা পূরণ করার জন্য। কিন্তু এ সরকারকেও কাজ করতে হচ্ছে একটা কাঠামোর মধ্যে। এখানকার প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতির মধ্য থেকে কাজ করতে হচ্ছে। এই দেশে একটা শাসকশ্রেণি আছে। কারা এই শাসকশ্রেণি? ১৯৭২ সাল থেকে এখানে একটা ব্যবসায়ী শ্রেণি শাসকশ্রেণিতে পরিণত হয়েছে। সেই শ্রেণিই গত ৫৫ বছরে ফুলে-ফেঁপে ফুঁসে ওঠে শেখ হাসিনার শাসনামলে অক্টোপাসের মতো সমাজের সবকিছুতে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। শেখ হাসিনা চলে গেছে কিন্তু এই শাসক ও ব্যবসায়ী শ্রেণি তো দেশে রয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়, এ দেশের যে প্রশাসন ব্যবস্থা, তাতেও তাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। যেমন দেখা যাবে, আওয়ামী লীগ চলে গেলেও তাদের লোক এখানে ব্যাপক মাত্রায় রয়ে গেছে। পুলিশ, সামরিক বাহিনীসহ সর্বত্র রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ এই গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করত। তেমনি ইউনূসের সরকারও শ্রমিকদের কোনো দাবিদাওয়া মানছে না। আগেও যেমন চা-শ্রমিকসহ গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপর হামলা করা হতো। সে কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে এ সরকারের শ্রেণিগত তেমন পার্থক্য নেই। এ কারণে এ সরকারকে শিল্পমালিক, ব্যবসায়িক শ্রেণির স্বার্থের কাঠামোর মধ্য থেকে কাজ করতে হচ্ছে। এই সরকারও মালিকদের সরকার। কাজেই মালিকদের সরকার হিসেবে মালিকদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে শ্রমিকেরা দাবিদাওয়া পেশ করছে, তাতে তাদের প্রতি দরদ থাকার কোনো প্রশ্ন থাকার কথা না; বরং মালিকদের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের দমন করাই তাদের কাজ। সেই দমন করার কাজটাই এরা করছে। কেউ যদি মনে করে, বর্তমান সরকার জনগণের সরকার এবং সর্বস্তরের জনগণের জন্য কাজ করবে—সেটা হবে মূর্খতার শামিল। দেশের পরিস্থিতি বুঝতে হবে, দেশের শাসনব্যবস্থা বুঝতে হবে, দেশের শাসকশ্রেণির চরিত্র বুঝতে হবে এবং এদের সমর্থন ছাড়া যে ক্ষমতায় থাকা সম্ভব নয়, সেটাও বুঝতে হবে। আর দেশের ব্যবসায়ী ও শাসকশ্রেণি যদি মনে করে, এ সরকারকে ফেলে দিতে হবে অন্য যত ধরনের সাপোর্ট থাকুক না কেন, তারা ফেলে দেবেই। কাজেই এদের অনেক ধরনের লম্বা-চওড়া কথা বলার পরেও এই শাসকশ্রেণির পক্ষে কাজ করতে হচ্ছে। এবং এই কাজ করতে গিয়েই তারা শ্রমিকদের সব ধরনের দাবিদাওয়া উপেক্ষা করছে। আন্দোলন করলে শ্রমিকদের মারপিট করছে। এটাই তো স্বাভাবিক ব্যাপার, এটাই বাস্তব। এই বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে কোনো ধরনের চিন্তাভাবনা করা ঠিক নয়।
আজকের পত্রিকা: সরকার আইন না করে চাপে পড়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। চাপের মুখে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ভালো ফল বয়ে আনে না। কারও চাপে নয়, বরং সিদ্ধান্তগুলো হওয়া উচিত জনগণের প্রত্যাশা ও আইন বুঝে। আপনার মতামত কী?
বদরুদ্দীন উমর: আওয়ামী লীগ দল ও সরকার ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেছিল। ক্ষমতা থেকে উৎখাত হয়ে যাওয়ার পরেও তাদের সক্রিয়তা তো চলছে। এটার একটা বড় কারণ হচ্ছে, ভারত সরকার আওয়ামী লীগকে এখনো সাহায্য করছে। মুসলিম লীগ ১৯৫৪ সালে উৎখাত হওয়ার পর তাদের ভারতের মতো দেশ ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগ উৎখাত হওয়ার পরে ভারত সরকার এখনো তাদের প্রতি সাহায্যকারী হয়ে রয়েছে। তারা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। শেখ হাসিনা সেখান থেকে যে নানা রকম উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে এবং টেলিফোনের মাধ্যমে তার নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিচ্ছে। এভাবে তারা শেখ হাসিনাকে শুধু আশ্রয় নয়, প্রশ্রয়ও দিচ্ছে।
দেশে আওয়ামী লীগের সে রকম প্রকাশ্য সক্রিয়তা না থাকলেও তারা তো কোনোভাবেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়নি। আওয়ামী লীগের লোকজন সুযোগ বুঝে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করার সুযোগের অপেক্ষায় আছে।
কিন্তু তারা এসব কাজ করার সুযোগ খুঁজলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা ঠিক হয়নি। দলটি ভারত সরকারের সহযোগিতায় যতই ফিরে আসার সুযোগ বা অন্তর্ঘাতমূলক অপতৎপরতা খুঁজুক, তাদের কিন্তু শিগগির জনগণের মধ্যে আবার কাজ করার বিশেষ ক্ষমতা নেই। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগকে ছেড়ে দেওয়াই ভালো ছিল। তারা তাদের কাজ করে যেতে পারে, যতটা পারে। এই অবস্থায় তারা বেশি দূর অগ্রসর হওয়ার মতো অবস্থায় নেই। কিন্তু তাদেরকে নিষিদ্ধ করার কারণে জনগণ তাদের প্রতি সমবেদনা দেখানোর সুযোগ পাবে। তারা এই সুযোগে কাজ করারও সুযোগ পাবে। একটা পার্টিকে নিষিদ্ধ করলেই দুর্বল হয়ে যায় না। আওয়ামী লীগ জামায়াতকে তো নিষিদ্ধ করেছিল এবং বিভিন্ন সময় অন্য অনেক দলকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, কিন্তু জামায়াত ভেতরে ভেতরে অনেক কাজ করেছে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করলেও তাদের লোক তো সর্বত্র রয়েছে। এ কারণে তাদের সক্রিয়তা কোনোভাবেই কমবে না; বরং নিষিদ্ধের কারণে তাদের কাজ করার আরও সুবিধা হবে। জনগণের সমর্থনও তারা পাবে হয়তো, যেটা নিষিদ্ধ না হলে পেত না। তাই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা কোনোভাবেই রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেওয়া হয়নি। এটার মধ্য দিয়ে বরঞ্চ আওয়ামী লীগকে সাহায্য করাই হয়েছে।
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলে জামায়াত নিষিদ্ধ হবে না কেন?
বদরুদ্দীন উমর: এখানে বলা যেতে পারে, অভ্যুত্থানের পরে অনেকে মনে করেছিল, সারা দেশে বামপন্থী শক্তির উত্থান ঘটবে। তাদের কার্যক্রম আরও বাড়বে। সে রকম কিছুই হয়নি। এখানে অভ্যুত্থান-পরবর্তী পর্যায়ে বামপন্থী দলগুলোর বিশেষভাবে কাজ নেই। কিন্তু বিশেষ করে দক্ষিণপন্থীরা এখানে সামনে এসেছে। দক্ষিণপন্থী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে অগ্রসর এবং সবচেয়ে দুষ্ট প্রকৃতির দল। এরাই বেশি এখন তৎপর। সে কারণে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে কোনো লাভ হবে না। এই পার্টি শক্তিশালী হওয়ার কারণে তাকে নিষিদ্ধ করলে দেশে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
আজকের পত্রিকা: কিছুদিন আগে হেফাজতে ইসলাম নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সম্পূর্ণভাবে বিরোধিতা করেছে এবং এ কমিটির নারী সদস্যদের ‘বেশ্যা’ বলে গালিগালাজ করেছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
বদরুদ্দীন উমর: পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা অল্পবিস্তর আছে। আমাদের দেশে নারীবিদ্বেষ বিশেষভাবে আছে। এটা হিন্দুধর্মের মধ্যে প্রাচীনকাল থেকে আছে। মনুসংহিতায় নানা বিষোদ্গার করে নারীদের শত্রু ভাবা হয়েছে। হিন্দুশাস্ত্রে একজন পুরুষ অসংখ্য বিয়ে করতে পারে। কিন্তু একজন নারী একটার বেশি বিয়ে তো করতেই পারে না। বিধবা হয়ে গেলে আর বিয়ে করা সম্ভব হয় না। বিধবা হওয়ার পর নানা ধরনের অত্যাচার চলে। যেমন—এটা যাওয়া যাবে না, এটা-ওটা করা যাবে না। পঞ্চাশ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। আবার পৈতৃক কোনো সম্পত্তি পাওয়ার অধিকার নেই নারীদের।
ইসলামের মধ্যেও তা-ই। তুলনামূলকভাবে কিছু অধিকার দেওয়া থাকলেও নানা ধরনের বিধিনিষেধ আছে। ইসলামে ছেলে-মেয়ে সম্পত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে দুই নিয়ম। মেয়েরা ছেলেদের থেকে অর্ধেক সম্পত্তি পায়। এই ধরনের যে পার্থক্য যেসব দেশে থাকে, সেটা তো অবশ্যই পশ্চাৎপদ দেশ। আর যারা এ ধরনের বিষয় নিয়ে দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে, তাদের তো আধুনিক ভাষায় বর্বর ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। এই যে হেফাজতে ইসলাম এবং জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে যারা কট্টরপন্থী আছে, তারা তো বর্বর ছাড়া কিছুই নয়। এ রকম বর্বরতা বিভিন্ন দেশে এখনো আছে। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্বরতা আছে। এ রকম বর্বরতার ধরন একেক দেশে একেক রকম। আমাদের দেশে বর্বরতার যেসব অপকর্ম হয়, তার শিক্ষা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকেই আসে। ইসলামের স্বার্থরক্ষাকারী বা ইসলামি পণ্ডিত দাবিদার যেসব লোক আছে, তারা ইসলামের নামে নারীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায়। তারা তো ইসলামকে একটা পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম হিসেবে রক্ষা করে চলছে। তাই হেফাজতে ইসলাম হলো জামায়াতে ইসলামীর চেয়েও খারাপ। জামায়াতে ইসলামীর চেয়েও এরা একটা বর্বর সংগঠন।
নারী সংস্কার কমিশন যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, নারী-পুরুষের সম্পত্তিতে যে সমান অধিকারের কথা বলেছে, তার বিরুদ্ধে তারা দাঁড়িয়েছে। তাই এখানে ইসলাম নয়, সম্পত্তির স্বার্থের বিষয়টা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারা এত বর্বর এবং নোংরা মানসিকতার যে নারী সংস্কার কমিশনের সদস্যদের তারা বেশ্যা বলেছে। এটা তো কুৎসিত সংস্কৃতির ধারক-বাহক ছাড়া কেউ এভাবে নারীদের নিয়ে এ ধরনের কথা উচ্চারণ করতে পারে না। তাই এরা সংস্কৃতির মাপকাঠিতেও নীচু মনের মানুষ। আসলে এদের মধ্যে প্রকৃত শিক্ষার কোনো ব্যাপার নেই। এরা আবার এ দেশের সম্পদশালী গোষ্ঠীরই প্রতিনিধি। এ জন্যই তারা নারীদের অধিকারের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। এসব ঘটনা শুধু আজকে হচ্ছে না। যখন থেকে নারীরা তাদের দাবি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে, তখন থেকেই কিন্তু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করে আসছে।
আজকের পত্রিকা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ জটিলতার দিকে যাচ্ছে বলে কেউ কেউ বলছেন। আপনার কাছে কী মনে হচ্ছে?
বদরুদ্দীন উমর: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিলতার চেয়ে ঘোলাটে হয়ে গেছে। নানা ধরনের স্বার্থ এখানে মাথাচাড়া দিচ্ছে। এখানে যেহেতু একটা অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, তারা একটা নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকার কারণে সব সংগঠনের সঙ্গে ডিল করতে পারছে না। শুধু বামপন্থী দলগুলোর তেমন কোনো সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না চোখে পড়ার মতো। এই অবস্থায় দেশে দক্ষিণপন্থীদেরই রাজত্ব চলছে। দক্ষিণপন্থীরাই বাংলাদেশের রাজনীতিকে কবজা করে রেখেছে। এটা একটা বড় বিস্ময়কর ব্যাপার। আগস্টের অভ্যুত্থানের পরে এখানে জনগণের প্রকৃত শক্তির আবির্ভাব ঘটেনি। সে জন্য শিক্ষার্থীদের দলটি গঠিত হওয়ার পরেও দলটির বামপন্থী কোনো পরিচয় নেই। তারা বলেছে, আমরা বামপন্থীও না, দক্ষিণপন্থীও না—আমরা মধ্যপন্থী। আসলে মধ্যপন্থী বলে কিছু নেই। আসলে তাদের যে কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে, তাতে এদেরকে দক্ষিণপন্থী ও প্রতিক্রিয়াশীল বলে আখ্যায়িত করতে হবে।
এই অবস্থায় ঘোলাটে পরিস্থিতি থেকে কীভাবে বের হওয়া যাবে, সে রকম কোনো পথনির্দেশও এ সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়। কাজেই এ সরকারের পক্ষে এখন যেটা দরকার, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। তাহলে কিন্তু ঘোলাটে পরিস্থিতি থাকবে না।
(মতামত সাক্ষাৎকারদাতার নিজস্ব)

নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান।
৬ ঘণ্টা আগে
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ।
১৩ দিন আগে
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’।
০১ ডিসেম্বর ২০২৫
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
১৫ নভেম্বর ২০২৫
নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান। নাটকটি নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন এই অভিনেতা।
বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

‘ভাসানে উজান’ নাটকের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতাটা কেমন?
দস্তয়ভস্কির বিখ্যাত ছোটগল্প দ্য জেন্টেল স্পিরিট অবলম্বনে এই নাটক। দস্তয়ভস্কি মানেই মানুষের অন্তর্লোকের গভীরতম স্তরে প্রবেশ। ভাসানে উজান আমার জন্য শুধুই একটি নাটক নয়, এটি একধরনের আত্মসংলাপ। এই গল্পে ঢুকতে গিয়ে আমাকে বারবার নিজের ভেতরের অচেনা কোণগুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ ছাড়া অপূর্বদার নাট্যরূপে সাহিত্যের সৌন্দর্য যেমন অটুট আছে, তেমনি আছে মঞ্চের ভাষা। আর শুভাশীষদার নির্দেশনা ছিল ধ্যানের মতো—নীরব, গভীর এবং সংযত। এই দুজনের সমন্বয় আমাকে অভিনয়ে আরও সংযমী করেছে।
ভাসানে উজানের চরিত্রটি উপস্থাপনে মানসিকভাবে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন?
এই চরিত্রটি বাহিরের নয়, ভেতরের অভিনয় দাবি করে। এখানে কান্না নেই, চিৎকার নেই—আছে চাপা অপরাধবোধ আর নীরব অনুশোচনা। এই নীরবতাই ছিল সবচেয়ে কঠিন। আমি মনে করি, আজকের মানুষ ভেতরে ভেতরে খুব একা। ভাসানে উজান সেই একাকিত্বের আয়না। দর্শক যদি নিজের ছায়াটা একটু দেখতে পান, সেটাই আমাদের সাফল্য।
চতুর্থ প্রদর্শনীতে এসে ভাসানে উজান নাটকে কি কোনো পরিবর্তন বা পরিণতি এসেছে?
প্রতিটি প্রদর্শনীতেই নাটকটা একটু একটু করে বদলায়। আমি নিজেও বদলাই। দর্শকের নিশ্বাস, নীরবতা—সবকিছু মিলিয়ে নাটকটি আরও পরিণত হয়ে ওঠে।
একক অভিনয়ে দীর্ঘ সময় মঞ্চে থাকতে হয়, সঙ্গ দেওয়ার কেউ থাকে না। এই একাকিত্বকে কীভাবে অনুভব করেন?
একাকিত্ব এখানে শূন্যতা নয়, বরং একধরনের গভীর উপস্থিতি। দর্শক, আলো, নীরবতা—সবকিছু মিলিয়ে এক অদৃশ্য সংলাপ তৈরি হয়। সেই সংলাপই আমাকে টেনে নেয় পুরো সময়জুড়ে।
দীর্ঘ দুই দশকের নাট্যচর্চার পরেও কি নাট্যমঞ্চে অভিনয়ের ক্ষেত্রে নতুন করে ভয় বা উত্তেজনা কাজ করে?
ভয় না থাকলে অভিনয় মৃত হয়ে যায়। প্রতিটি প্রদর্শনীর আগে আমি নতুন করে ভয় পাই, এই ভয় আমাকে সৎ রাখে, জীবিত রাখে একজন অভিনেতা হিসেবে।
ভবিষ্যতে একক নাটক ও থিয়েটার নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
আমি চাই, থিয়েটার আরও স্থির হোক, আরও গভীর হোক। একক নাটক নিয়ে আরও গবেষণাধর্মী কাজ করতে চাই, যেখানে অভিনয় হবে আত্মানুসন্ধানের একটি মাধ্যম।
মঞ্চ ও টেলিভিশনের আসন্ন কাজ নিয়ে দর্শকদের জন্য কী বলতে চান?
আমার অভিনীত নাটকগুলোর নিয়মিত প্রদর্শনী চলছে। পাশাপাশি নতুন একটি রেপার্টরি নাটকে যুক্ত হচ্ছি। এ ছাড়া কয়েকটি টেলিভিশন নাটকের কাজও শেষের পথে। নাটকগুলো শিগগির দর্শকদের সামনে আসবে।
‘ভাসানে উজান’ নাটকের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতাটা কেমন?
দস্তয়ভস্কির বিখ্যাত ছোটগল্প দ্য জেন্টেল স্পিরিট অবলম্বনে এই নাটক। দস্তয়ভস্কি মানেই মানুষের অন্তর্লোকের গভীরতম স্তরে প্রবেশ। ভাসানে উজান আমার জন্য শুধুই একটি নাটক নয়, এটি একধরনের আত্মসংলাপ। এই গল্পে ঢুকতে গিয়ে আমাকে বারবার নিজের ভেতরের অচেনা কোণগুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ ছাড়া অপূর্বদার নাট্যরূপে সাহিত্যের সৌন্দর্য যেমন অটুট আছে, তেমনি আছে মঞ্চের ভাষা। আর শুভাশীষদার নির্দেশনা ছিল ধ্যানের মতো—নীরব, গভীর এবং সংযত। এই দুজনের সমন্বয় আমাকে অভিনয়ে আরও সংযমী করেছে।
ভাসানে উজানের চরিত্রটি উপস্থাপনে মানসিকভাবে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন?
এই চরিত্রটি বাহিরের নয়, ভেতরের অভিনয় দাবি করে। এখানে কান্না নেই, চিৎকার নেই—আছে চাপা অপরাধবোধ আর নীরব অনুশোচনা। এই নীরবতাই ছিল সবচেয়ে কঠিন। আমি মনে করি, আজকের মানুষ ভেতরে ভেতরে খুব একা। ভাসানে উজান সেই একাকিত্বের আয়না। দর্শক যদি নিজের ছায়াটা একটু দেখতে পান, সেটাই আমাদের সাফল্য।
চতুর্থ প্রদর্শনীতে এসে ভাসানে উজান নাটকে কি কোনো পরিবর্তন বা পরিণতি এসেছে?
প্রতিটি প্রদর্শনীতেই নাটকটা একটু একটু করে বদলায়। আমি নিজেও বদলাই। দর্শকের নিশ্বাস, নীরবতা—সবকিছু মিলিয়ে নাটকটি আরও পরিণত হয়ে ওঠে।
একক অভিনয়ে দীর্ঘ সময় মঞ্চে থাকতে হয়, সঙ্গ দেওয়ার কেউ থাকে না। এই একাকিত্বকে কীভাবে অনুভব করেন?
একাকিত্ব এখানে শূন্যতা নয়, বরং একধরনের গভীর উপস্থিতি। দর্শক, আলো, নীরবতা—সবকিছু মিলিয়ে এক অদৃশ্য সংলাপ তৈরি হয়। সেই সংলাপই আমাকে টেনে নেয় পুরো সময়জুড়ে।
দীর্ঘ দুই দশকের নাট্যচর্চার পরেও কি নাট্যমঞ্চে অভিনয়ের ক্ষেত্রে নতুন করে ভয় বা উত্তেজনা কাজ করে?
ভয় না থাকলে অভিনয় মৃত হয়ে যায়। প্রতিটি প্রদর্শনীর আগে আমি নতুন করে ভয় পাই, এই ভয় আমাকে সৎ রাখে, জীবিত রাখে একজন অভিনেতা হিসেবে।
ভবিষ্যতে একক নাটক ও থিয়েটার নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
আমি চাই, থিয়েটার আরও স্থির হোক, আরও গভীর হোক। একক নাটক নিয়ে আরও গবেষণাধর্মী কাজ করতে চাই, যেখানে অভিনয় হবে আত্মানুসন্ধানের একটি মাধ্যম।
মঞ্চ ও টেলিভিশনের আসন্ন কাজ নিয়ে দর্শকদের জন্য কী বলতে চান?
আমার অভিনীত নাটকগুলোর নিয়মিত প্রদর্শনী চলছে। পাশাপাশি নতুন একটি রেপার্টরি নাটকে যুক্ত হচ্ছি। এ ছাড়া কয়েকটি টেলিভিশন নাটকের কাজও শেষের পথে। নাটকগুলো শিগগির দর্শকদের সামনে আসবে।

বদরুদ্দীন উমর লেখক, গবেষক ও বামপন্থী রাজনীতিক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিপিই ডিগ্রি পান। দেশে ফিরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। গভর্নর মোনায়েম খানের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে ১৯৬৮ সালে
১৭ মে ২০২৫
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ।
১৩ দিন আগে
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’।
০১ ডিসেম্বর ২০২৫
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
১৫ নভেম্বর ২০২৫
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ। তাঁর সঙ্গে কথা বলে পর্দার আড়ালের সেই অভিজ্ঞতাগুলোই তুলে ধরেছেন মনিরুল ইসলাম।
মনিরুল ইসলাম

কীভাবে আপনি সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন?
প্রতিটি স্বপ্নের পেছনে একটি করে গল্প থাকে। আমার সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার অনুপ্রেরণারও তেমনি একটি গল্প আছে। সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার আগেও ছোটবেলা থেকে আমার বড় মামাকে দেখেছি, তাঁর কথা বলার স্টাইল ছিল ভীষণ হৃদয়গ্রাহী, যা মানুষকে খুব কাছে টানত। ঠিক তখন থেকেই বড় মামা হয়ে যান আমার সুপার হিরো। আমিও চেষ্টা করতাম তেমন করে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। তারপর দেখলাম এর সেরা উপায় হলো সংবাদ উপস্থাপক হওয়া। তাঁদের সুন্দর করে কথা বলাটা আমার পছন্দ হতো। সেখান থেকেই মূলত অনুপ্রাণিত হওয়া। তা ছাড়া আমার মরহুম আব্বুর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাঁর উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা এবং আমার আম্মুর নীরব সমর্থন আমাকে এ পেশায় আসতে সহযোগিতা করেছে।
শুরুতে সংবাদ উপস্থাপনার প্রশিক্ষণ বা প্রস্তুতি কেমন ছিল?
ছোটবেলা থেকেই কবিতা আবৃত্তি করতাম। সেটাও বড় মামার হাত ধরেই। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই যখন নিউজ প্রেজেন্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম, তখন থেকেই চিন্তা করতাম এখানে শুদ্ধ উচ্চারণের বিকল্প নেই। তাই উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে টিএসসিভিত্তিক একটি আবৃত্তি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হই। সেখানেও নিউজ প্রেজেন্টেশনের ক্লাস হতো। তারপর শুধু নিউজ প্রেজেন্টেশনের জন্য একটা একাডেমিতে ভর্তি হই। সেখানে ভর্তি ফি ছিল ৭ হাজার টাকা। পুরোটা দেওয়ার সামর্থ্য তখন ছিল না। তাই তাদের বলেছিলাম, ইনশা আল্লাহ একদিন নিউজ প্রেজেন্টার হয়ে আপনাদের এখানে ফ্রি ক্লাস নেব। সেই থেকে মনের মধ্যে ইচ্ছাটাও প্রবল হয়েছিল।
প্রথমবার লাইভ নিউজ উপস্থাপন করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
প্রথমবার একটা অনলাইন টিভিতে নিউজ পড়েছিলাম। তাদেরও অভিষেক হয়েছিল আমাকে দিয়ে। তাই উচ্ছ্বাসটা দু’পক্ষেরই একটু বেশি ছিল। আমি তাদের গ্রুমিং করা প্রেজেন্টারদের মধ্যে প্রথম ছিলাম। নিজেকে প্রথম কোনো পর্দায় দেখে কি যে ভালো লেগেছিল, তা বলার ভাষা নেই।
উপস্থাপনায় ভাষা, উচ্চারণ ও টোন কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
এ পেশাটা অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে একটু আলাদা। এমনকি বাচিক যেকোনো পেশার চেয়েও। যেমন কাস্টমার কেয়ার, কিংবা কল সেন্টার থেকেও। এখানে ভুল উচ্চারণের কোনো মার্সি বা ক্ষমা নেই। তবে এখানে সংবাদের ভিন্নতার কারণে টোনের পরিবর্তন করতে হয়। নিউজের ভিন্ন ভিন্ন আবেদন টোনের ওঠানামায় ফুটিয়ে তুলতে হয়। টোনের ভেরিয়েশনের কারণে দর্শকের কানও প্রশান্তি পায়।
সংবাদ উপস্থাপনায় সময় ব্যবস্থাপনা বা কলাকৌশল কীভাবে পালন করেন?
এখানে সময় ব্যবস্থাপনাটা সবার আগে। প্রতিটি ন্যানো সেকেন্ডের মূল্য এখানে দিতে হয়। নিউজ শুরুর অনেক আগেই একজন প্রেজেন্টারকে স্টেশনে হাজির থাকতে হয়। সবকিছু বুঝে নিতে হয়। নিউজ শুরু হলে তো তাঁকে আরও বেশি প্রস্তুত থাকতে হয় সময় সম্পর্কে। কারণ প্রতিটি টাইমফ্রেম এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
লাইভ সম্প্রচারে হঠাৎ সময় পরিবর্তন হলে কীভাবে সামলান?
লাইভ নিউজে যেকোনো কিছুর জন্যই প্রস্তুত থাকতে হয়। প্রেজেন্টারদের কানে একটা গোপন টকব্যাক লাগানো থাকে। যার সঙ্গে পিসিআর অর্থাৎ প্রডিউসার কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হয়। প্রডিউসার যেকোনো আপডেট নিউজ টকব্যাকে জানিয়ে দেন। সেটার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। খুব ঠান্ডা মাথায় যেকোনো ব্রেকিং বুঝে তারপর ডেলিভারি দিতে হয়।
উপস্থাপনার সময় ঘড়ি বা প্রম্পটার দেখে কীভাবে সময় নিয়ন্ত্রণ করেন?
পুরো নিউজটা একটা টাইমফ্রেমে বাঁধা থাকে। বিশেষ কারণ ছাড়া এর বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রতিটি নিউজের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ থাকে। সেটা বিবেচনা করেই নিউজ পড়ার গতি নির্ধারণ করতে হয়। সময় কন্ট্রোল করার জন্য পিসিআর এবং এমসিআর-মাস্টার কন্ট্রোল রুম সদা তৎপর থাকে। সেভাবেই একজন নিউজ প্রেজেন্টারকে চলতে হয়।
ক্যামেরার সামনে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার কৌশল কী?
আত্মবিশ্বাসটা অনেক কিছুর সমন্বিত একটা রূপ। যেকোনো ভালো প্রিপারেশন আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এখানে একজন নিউজ প্রেজেন্টারের ভালো প্রিপারেশন অনেক কিছুর সমন্বয়ে হয়ে থাকে। যেমন তাঁর উচ্চারণ, নিউজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা। নিউজ রুম, পিসিআর, এমসিআর, রানডাউন (যেখানে নিউজের ধারাবাহিকতা সাজানো থাকে) সম্পর্কে ধারণা থাকলে তাঁর আত্মবিশ্বাস অটুট থাকে।
ভুল হয়ে গেলে কীভাবে পরিস্থিতি সামলান?
লাইভ নিউজে ভুল হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তবে বারবার একই ভুল যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। ভুল হলে দর্শকের কাছে বিনয়ের সঙ্গে সেটি উপস্থাপন করাটাও ভালো প্রেজেন্টারের কাজ। দর্শকের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখতে হয়।
লাইভ নিউজে হঠাৎ অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি এলে আপনার মানসিক কৌশল কেমন থাকে?
লাইভ নিউজে প্রতিটি সেকেন্ডই চ্যালেঞ্জের। যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে মাথা সম্পূর্ণ ঠান্ডা রেখে সামলাতে হয়। মানসিকভাবে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। আমি সব সময় একটা কথা বলি, একজন নিউজ প্রেজেন্টারকে একটা লোকাল বাসের ড্রাইভারের ভূমিকা পালন করতে হয়। লোকাল বাসের ড্রাইভারকে যেমনিভাবে হরেক রকমের যাত্রীর কথা শুনেও হেলপারের সহযোগিতায় সঠিকভাবে গাড়ি চালাতে হয়, তেমনি প্রেজেন্টারকেও পিসিআরের শত কথা কানে নিয়েও প্রডিউসারের সঠিক দিকনির্দেশনায় টিভি স্টেশন চালাতে হয়। মনে রাখতে হয়, একজন নিউজ প্রেজেন্টার একটি নিউজ বুলেটিনের লাস্ট গেটওয়ে। তাই তাঁকে অনেক সতর্ক থাকতে হয়।
দর্শকদের আগ্রহ ধরে রাখতে আপনি কীভাবে সংবাদ উপস্থাপন করেন?
আমি তো ভাবি, আমি একজন দর্শকের ঘরের লোক। ভাবি নিউজের মাধ্যমে আমি গ্রামের একজন চাষি থেকে শুরু করে দেশের প্রধানের সঙ্গেও নিউজের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকি। প্রতিটি সংবাদের আলাদা আবেদন আছে। চেষ্টা করি সেটাকে সেভাবেই উপস্থাপনের। দর্শক যেমন আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষ মনে করে, তেমনি সেভাবেই তার মনোজগতের কথা চিন্তা করে সংবাদ পরিবেশনের চেষ্টা করি।
সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে আপনি কতটা নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেন?
শিশু আর পাগল ছাড়া সবারই নিজস্ব মতাদর্শ আছে। এটা যেমন সঠিক, তেমনি সংবাদিকদেরও নিজস্ব মতাদর্শ থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু পেশাগত দায়িত্ব পালনে তাঁকে শতভাগ সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কারণ দর্শক পক্ষপাতদুষ্ট নিউজ প্রেজেন্টার কিংবা সাংবাদিক কাউকেই পছন্দ করেন না। সচেতন দর্শকও চান না তাঁর দলের হয়ে সাংবাদিক কথা বলুক। তিনিও চান সাংবাদিক তাঁর নিউজে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখুক। তাই এসব ব্যাপার মাথায় রেখেই আমাদের চলতে হয়।
যারা ভবিষ্যতে সংবাদ উপস্থাপক হতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। আমার মনে আছে, যখন থেকে সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য মনস্থির করেছি, তখন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেও নিউজের লিংক পড়তাম। চেষ্টা করতাম কতটা হৃদয়গ্রাহী করে একটা সংবাদ উপস্থাপন করা যায়। তাই আমার কাছে মনে হয়, সঠিক রাস্তা চিনে লেগে থাকতে পারলে সফলতা আসবেই। সেটা ভিন্নভাবে হলেও। তবে পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। সেটা কোনো না কোনোভাবে কাজে লাগে।
সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য কোন গুণ বা দক্ষতা সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন?
সবার আগে এটাকে পেশা হিসেবে নিতে মনস্থির করা। শখের বসে নয়। আপনাকে কোনো একটি পেশায় টিকে থাকতে হলে সে পেশার উপযোগী যত গুণ আছে, সেগুলো রপ্ত করার চেষ্টা করতে হবে। যেমন নিজের উচ্চারণ ঠিক রাখ, আঞ্চলিকতা পরিহার করা। সর্বোপরি নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।
কীভাবে আপনি সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন?
প্রতিটি স্বপ্নের পেছনে একটি করে গল্প থাকে। আমার সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার অনুপ্রেরণারও তেমনি একটি গল্প আছে। সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার আগেও ছোটবেলা থেকে আমার বড় মামাকে দেখেছি, তাঁর কথা বলার স্টাইল ছিল ভীষণ হৃদয়গ্রাহী, যা মানুষকে খুব কাছে টানত। ঠিক তখন থেকেই বড় মামা হয়ে যান আমার সুপার হিরো। আমিও চেষ্টা করতাম তেমন করে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। তারপর দেখলাম এর সেরা উপায় হলো সংবাদ উপস্থাপক হওয়া। তাঁদের সুন্দর করে কথা বলাটা আমার পছন্দ হতো। সেখান থেকেই মূলত অনুপ্রাণিত হওয়া। তা ছাড়া আমার মরহুম আব্বুর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাঁর উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা এবং আমার আম্মুর নীরব সমর্থন আমাকে এ পেশায় আসতে সহযোগিতা করেছে।
শুরুতে সংবাদ উপস্থাপনার প্রশিক্ষণ বা প্রস্তুতি কেমন ছিল?
ছোটবেলা থেকেই কবিতা আবৃত্তি করতাম। সেটাও বড় মামার হাত ধরেই। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই যখন নিউজ প্রেজেন্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম, তখন থেকেই চিন্তা করতাম এখানে শুদ্ধ উচ্চারণের বিকল্প নেই। তাই উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে টিএসসিভিত্তিক একটি আবৃত্তি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হই। সেখানেও নিউজ প্রেজেন্টেশনের ক্লাস হতো। তারপর শুধু নিউজ প্রেজেন্টেশনের জন্য একটা একাডেমিতে ভর্তি হই। সেখানে ভর্তি ফি ছিল ৭ হাজার টাকা। পুরোটা দেওয়ার সামর্থ্য তখন ছিল না। তাই তাদের বলেছিলাম, ইনশা আল্লাহ একদিন নিউজ প্রেজেন্টার হয়ে আপনাদের এখানে ফ্রি ক্লাস নেব। সেই থেকে মনের মধ্যে ইচ্ছাটাও প্রবল হয়েছিল।
প্রথমবার লাইভ নিউজ উপস্থাপন করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
প্রথমবার একটা অনলাইন টিভিতে নিউজ পড়েছিলাম। তাদেরও অভিষেক হয়েছিল আমাকে দিয়ে। তাই উচ্ছ্বাসটা দু’পক্ষেরই একটু বেশি ছিল। আমি তাদের গ্রুমিং করা প্রেজেন্টারদের মধ্যে প্রথম ছিলাম। নিজেকে প্রথম কোনো পর্দায় দেখে কি যে ভালো লেগেছিল, তা বলার ভাষা নেই।
উপস্থাপনায় ভাষা, উচ্চারণ ও টোন কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
এ পেশাটা অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে একটু আলাদা। এমনকি বাচিক যেকোনো পেশার চেয়েও। যেমন কাস্টমার কেয়ার, কিংবা কল সেন্টার থেকেও। এখানে ভুল উচ্চারণের কোনো মার্সি বা ক্ষমা নেই। তবে এখানে সংবাদের ভিন্নতার কারণে টোনের পরিবর্তন করতে হয়। নিউজের ভিন্ন ভিন্ন আবেদন টোনের ওঠানামায় ফুটিয়ে তুলতে হয়। টোনের ভেরিয়েশনের কারণে দর্শকের কানও প্রশান্তি পায়।
সংবাদ উপস্থাপনায় সময় ব্যবস্থাপনা বা কলাকৌশল কীভাবে পালন করেন?
এখানে সময় ব্যবস্থাপনাটা সবার আগে। প্রতিটি ন্যানো সেকেন্ডের মূল্য এখানে দিতে হয়। নিউজ শুরুর অনেক আগেই একজন প্রেজেন্টারকে স্টেশনে হাজির থাকতে হয়। সবকিছু বুঝে নিতে হয়। নিউজ শুরু হলে তো তাঁকে আরও বেশি প্রস্তুত থাকতে হয় সময় সম্পর্কে। কারণ প্রতিটি টাইমফ্রেম এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
লাইভ সম্প্রচারে হঠাৎ সময় পরিবর্তন হলে কীভাবে সামলান?
লাইভ নিউজে যেকোনো কিছুর জন্যই প্রস্তুত থাকতে হয়। প্রেজেন্টারদের কানে একটা গোপন টকব্যাক লাগানো থাকে। যার সঙ্গে পিসিআর অর্থাৎ প্রডিউসার কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হয়। প্রডিউসার যেকোনো আপডেট নিউজ টকব্যাকে জানিয়ে দেন। সেটার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। খুব ঠান্ডা মাথায় যেকোনো ব্রেকিং বুঝে তারপর ডেলিভারি দিতে হয়।
উপস্থাপনার সময় ঘড়ি বা প্রম্পটার দেখে কীভাবে সময় নিয়ন্ত্রণ করেন?
পুরো নিউজটা একটা টাইমফ্রেমে বাঁধা থাকে। বিশেষ কারণ ছাড়া এর বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রতিটি নিউজের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ থাকে। সেটা বিবেচনা করেই নিউজ পড়ার গতি নির্ধারণ করতে হয়। সময় কন্ট্রোল করার জন্য পিসিআর এবং এমসিআর-মাস্টার কন্ট্রোল রুম সদা তৎপর থাকে। সেভাবেই একজন নিউজ প্রেজেন্টারকে চলতে হয়।
ক্যামেরার সামনে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার কৌশল কী?
আত্মবিশ্বাসটা অনেক কিছুর সমন্বিত একটা রূপ। যেকোনো ভালো প্রিপারেশন আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এখানে একজন নিউজ প্রেজেন্টারের ভালো প্রিপারেশন অনেক কিছুর সমন্বয়ে হয়ে থাকে। যেমন তাঁর উচ্চারণ, নিউজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা। নিউজ রুম, পিসিআর, এমসিআর, রানডাউন (যেখানে নিউজের ধারাবাহিকতা সাজানো থাকে) সম্পর্কে ধারণা থাকলে তাঁর আত্মবিশ্বাস অটুট থাকে।
ভুল হয়ে গেলে কীভাবে পরিস্থিতি সামলান?
লাইভ নিউজে ভুল হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তবে বারবার একই ভুল যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। ভুল হলে দর্শকের কাছে বিনয়ের সঙ্গে সেটি উপস্থাপন করাটাও ভালো প্রেজেন্টারের কাজ। দর্শকের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখতে হয়।
লাইভ নিউজে হঠাৎ অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি এলে আপনার মানসিক কৌশল কেমন থাকে?
লাইভ নিউজে প্রতিটি সেকেন্ডই চ্যালেঞ্জের। যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে মাথা সম্পূর্ণ ঠান্ডা রেখে সামলাতে হয়। মানসিকভাবে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। আমি সব সময় একটা কথা বলি, একজন নিউজ প্রেজেন্টারকে একটা লোকাল বাসের ড্রাইভারের ভূমিকা পালন করতে হয়। লোকাল বাসের ড্রাইভারকে যেমনিভাবে হরেক রকমের যাত্রীর কথা শুনেও হেলপারের সহযোগিতায় সঠিকভাবে গাড়ি চালাতে হয়, তেমনি প্রেজেন্টারকেও পিসিআরের শত কথা কানে নিয়েও প্রডিউসারের সঠিক দিকনির্দেশনায় টিভি স্টেশন চালাতে হয়। মনে রাখতে হয়, একজন নিউজ প্রেজেন্টার একটি নিউজ বুলেটিনের লাস্ট গেটওয়ে। তাই তাঁকে অনেক সতর্ক থাকতে হয়।
দর্শকদের আগ্রহ ধরে রাখতে আপনি কীভাবে সংবাদ উপস্থাপন করেন?
আমি তো ভাবি, আমি একজন দর্শকের ঘরের লোক। ভাবি নিউজের মাধ্যমে আমি গ্রামের একজন চাষি থেকে শুরু করে দেশের প্রধানের সঙ্গেও নিউজের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকি। প্রতিটি সংবাদের আলাদা আবেদন আছে। চেষ্টা করি সেটাকে সেভাবেই উপস্থাপনের। দর্শক যেমন আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষ মনে করে, তেমনি সেভাবেই তার মনোজগতের কথা চিন্তা করে সংবাদ পরিবেশনের চেষ্টা করি।
সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে আপনি কতটা নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেন?
শিশু আর পাগল ছাড়া সবারই নিজস্ব মতাদর্শ আছে। এটা যেমন সঠিক, তেমনি সংবাদিকদেরও নিজস্ব মতাদর্শ থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু পেশাগত দায়িত্ব পালনে তাঁকে শতভাগ সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কারণ দর্শক পক্ষপাতদুষ্ট নিউজ প্রেজেন্টার কিংবা সাংবাদিক কাউকেই পছন্দ করেন না। সচেতন দর্শকও চান না তাঁর দলের হয়ে সাংবাদিক কথা বলুক। তিনিও চান সাংবাদিক তাঁর নিউজে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখুক। তাই এসব ব্যাপার মাথায় রেখেই আমাদের চলতে হয়।
যারা ভবিষ্যতে সংবাদ উপস্থাপক হতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। আমার মনে আছে, যখন থেকে সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য মনস্থির করেছি, তখন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেও নিউজের লিংক পড়তাম। চেষ্টা করতাম কতটা হৃদয়গ্রাহী করে একটা সংবাদ উপস্থাপন করা যায়। তাই আমার কাছে মনে হয়, সঠিক রাস্তা চিনে লেগে থাকতে পারলে সফলতা আসবেই। সেটা ভিন্নভাবে হলেও। তবে পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। সেটা কোনো না কোনোভাবে কাজে লাগে।
সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য কোন গুণ বা দক্ষতা সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন?
সবার আগে এটাকে পেশা হিসেবে নিতে মনস্থির করা। শখের বসে নয়। আপনাকে কোনো একটি পেশায় টিকে থাকতে হলে সে পেশার উপযোগী যত গুণ আছে, সেগুলো রপ্ত করার চেষ্টা করতে হবে। যেমন নিজের উচ্চারণ ঠিক রাখ, আঞ্চলিকতা পরিহার করা। সর্বোপরি নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।

বদরুদ্দীন উমর লেখক, গবেষক ও বামপন্থী রাজনীতিক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিপিই ডিগ্রি পান। দেশে ফিরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। গভর্নর মোনায়েম খানের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে ১৯৬৮ সালে
১৭ মে ২০২৫
নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান।
৬ ঘণ্টা আগে
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’।
০১ ডিসেম্বর ২০২৫
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
১৫ নভেম্বর ২০২৫
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’। আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশে প্যানোরামা বিভাগে জায়গা করে নিয়েছে বর্ষণ অভিনীত দুটি সিনেমা। ইমতিয়াজ বর্ষণের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শিহাব আহমেদ।
শিহাব আহমেদ

দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর অবশেষে মুক্তি পাচ্ছে ওয়েব ফিল্ম অমীমাংসিত। কেমন লাগছে?
আমরা অভিনয়শিল্পীরা কাজ করি দর্শকের জন্য। সেই কাজটা অনেক দিন আটকে থাকা অবশ্যই কষ্টের। অবশেষে ওয়েব ফিল্মটি দর্শক দেখতে পারবেন, এটাই সবচেয়ে ভালো লাগার। সিনেমাটিতে রহস্যের গন্ধ রয়েছে। রহস্যজনকভাবে কে বা কারা খুন করেছে, এর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। এটি বানিয়েছেন রায়হান রাফী। ভিজ্যুয়াল লুকেও দর্শক নতুনত্ব পাবেন।
ওটিটি কনটেন্ট হওয়ার পরেও গত বছর তৎকালীন সেন্সর বোর্ড আটকে দিয়েছিল সিনেমাটি। অনেকেই বলছেন এটি নির্মিত হয়েছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে। আপনিও কি মনে করেন এই কারণেই এটি আটকে দেওয়া হয়েছিল?
একদম তাই। সবাই যেটা ধারণা করেছে, সেই কারণেই সিনেমাটি এত দিন আটকে ছিল। তৎকালীন সেন্সর বোর্ড গল্পটি সেনসেটিভ ভেবে সিনেমাটি আটকে দিয়েছিল। মুক্তির আগে এর বেশি এখন বলতে চাই না।
এটা নিয়ে প্রথম থেকেই অনেক আলোচনা। দর্শকেরও আলাদা আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছেন?
প্রতিটি কাজই শিল্পী ও নির্মাতাদের একধরনের প্রেশার ক্রিয়েট করে। আমি নিজেও যেকোনো কাজ মুক্তির আগে চাপ অনুভব করি। দর্শক কীভাবে নেবেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে। আমরা তো আসলে দর্শকদের ভালো লাগার জন্য, তাঁদের বিনোদন দেওয়ার জন্য কাজ করি। দর্শকের সন্তুষ্টি আমাদের জন্য আশীর্বাদ। অভিনেতা হিসেবে সব সময় আশা রাখি আমার কাজটি যেন দর্শকের ভালো লাগে, গুণে মানে যেন সবার মনঃপূত হয়।
ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহেও আপনার সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। সেই সিনেমা নিয়ে কিছু বলুন।
‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’ নামের সিনেমাটি বানিয়েছেন আহমেদ হাসান সানি। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন, এর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ের গল্প নিয়ে সিনেমা। আমাদের দেশের রাজনীতির হালচাল দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ফুটে উঠেছে রাজনীতি নিয়ে মানুষের ভাবনা। আমাদের দেশে অনেক রেস্টুরেন্ট বা আড্ডার স্থানে লেখা থাকে এখানে রাজনৈতিক আলাপ নিষিদ্ধ বা করা যাবে না। আমি মনে করি, এটা মিস কনসেপ্ট। রাজনৈতিক আলাপ প্রতিটি জায়গায় হওয়া উচিত। কারণ, আমরা কেউ রাজনীতির বাইরে নই। প্রতিটি মানুষ রাজনীতির অংশ। সেটা সচেতনভাবে হোক কিংবা অসচেতনভাবে। যারা সচেতন, তারা একটু দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সক্রিয় থাকে। কিন্তু যারা রাজনৈতিকভাবে অসচেতন বা কেয়ারলেস, তাদেরও একটা ভূমিকা থাকে।
এটা আহমেদ হাসান সানির প্রথম সিনেমা। নির্মাতা হিসেবে কেমন লাগল তাঁকে?
এর আগে আহমেদ হাসান সানির নির্দেশনায় বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। তবে নির্মাতা হিসেবে আগে থেকেই তাঁকে চিনি। উনি একজন আধুনিক নির্মাতা, তাঁর ভাবনাও আধুনিক। ছোটখাটো বিষয়েও সমান খেয়াল রাখেন তিনি। চিত্রনাট্য, অ্যাক্টিং, সেট—সব ব্যাপারেই তিনি খুঁতখুঁতে। এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি সিনেমাটি দেখার সময় দর্শক তাঁর যত্নের ছাপ দেখতে পাবেন। আমি বিশ্বাস করি, ওনার কাছ থেকে ভালো মানের আরও কাজ পাওয়া যাবে।
সম্প্রতি ছাড়পত্র পেয়েছে আপনার আরেক সিনেমা ‘যাপিত জীবন’। সেই সিনেমার গল্প কী নিয়ে?
এটি একটি পিরিয়ডিকাল সিনেমা। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গল্প। এই সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন, রোকেয়া প্রাচী, আশনা হাবিব ভাবনা প্রমুখ। পরিচালনা করেছেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব।
এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি এবং যাপিত জীবন সিনেমা দুটি ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে প্রদর্শিত হবে। কেমন অনুভূতি?
২০২০ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছর ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমার কোনো না কোনো সিনেমা প্রদর্শিত হয়। এটা আমার জন্য আনন্দের ও গর্বের। এ বছর দুটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে। শুনছি দুটি সিনেমাই ডিসেম্বরে মুক্তি পাবে। এটা নিয়ে আমার আপত্তি আছে। ভিন্ন সময়ে সিনেমা দুটি মুক্তি পেলে ভালো হতো।
সিনেমা মুক্তি নিয়ে এই আপত্তির কথা জানিয়েছেন নির্মাতাদের?
এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি নিয়ে নির্মাতার সঙ্গে আলাপ হয়েছে। ওনারা সিনেমার মুক্তি ও প্রমোশন নিয়ে তাঁদের পরিকল্পনার কথা আমাকে জানিয়েছেন। যাপিত জীবন নিয়ে আমি অফিশিয়ালি এখনো কিছু জানি না। তাই কথা হয়নি।
‘রবি ইন ঢাকা’ নামের সিনেমার শুটিং করছেন। এ সিনেমাটি নিয়ে বলুন।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই সিনেমার শুটিং শিডিউল আছে। এরপর একটা বিরতি নিয়ে শুরু হবে পরের লটের শুটিং। এই সিনেমার গল্পটিও সমকালীন। নতুন প্রজন্মের কথা আছে। আসলে আমরা যেই সময়েই বসবাস করি না কেন, দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। এই শহরে অনেক মানুষ দেখি যাদের দূর থেকে দেখলে মনে হয় সুখে আছে। কিন্তু আসলে তাদের ভেতরে অনেক কষ্ট। নানা ধরনের কষ্টের মাঝেও আমরা এই শহরে আনন্দ খুঁজে বেড়াই। এমন একটা গল্প নিয়েই রবি ইন ঢাকা। গল্পে মিস্ট্রি আছে, সাসপেন্সও আছে। পরিচালনা করছেন রাজীব সালেহীন।
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর অবশেষে মুক্তি পাচ্ছে ওয়েব ফিল্ম অমীমাংসিত। কেমন লাগছে?
আমরা অভিনয়শিল্পীরা কাজ করি দর্শকের জন্য। সেই কাজটা অনেক দিন আটকে থাকা অবশ্যই কষ্টের। অবশেষে ওয়েব ফিল্মটি দর্শক দেখতে পারবেন, এটাই সবচেয়ে ভালো লাগার। সিনেমাটিতে রহস্যের গন্ধ রয়েছে। রহস্যজনকভাবে কে বা কারা খুন করেছে, এর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। এটি বানিয়েছেন রায়হান রাফী। ভিজ্যুয়াল লুকেও দর্শক নতুনত্ব পাবেন।
ওটিটি কনটেন্ট হওয়ার পরেও গত বছর তৎকালীন সেন্সর বোর্ড আটকে দিয়েছিল সিনেমাটি। অনেকেই বলছেন এটি নির্মিত হয়েছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে। আপনিও কি মনে করেন এই কারণেই এটি আটকে দেওয়া হয়েছিল?
একদম তাই। সবাই যেটা ধারণা করেছে, সেই কারণেই সিনেমাটি এত দিন আটকে ছিল। তৎকালীন সেন্সর বোর্ড গল্পটি সেনসেটিভ ভেবে সিনেমাটি আটকে দিয়েছিল। মুক্তির আগে এর বেশি এখন বলতে চাই না।
এটা নিয়ে প্রথম থেকেই অনেক আলোচনা। দর্শকেরও আলাদা আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছেন?
প্রতিটি কাজই শিল্পী ও নির্মাতাদের একধরনের প্রেশার ক্রিয়েট করে। আমি নিজেও যেকোনো কাজ মুক্তির আগে চাপ অনুভব করি। দর্শক কীভাবে নেবেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে। আমরা তো আসলে দর্শকদের ভালো লাগার জন্য, তাঁদের বিনোদন দেওয়ার জন্য কাজ করি। দর্শকের সন্তুষ্টি আমাদের জন্য আশীর্বাদ। অভিনেতা হিসেবে সব সময় আশা রাখি আমার কাজটি যেন দর্শকের ভালো লাগে, গুণে মানে যেন সবার মনঃপূত হয়।
ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহেও আপনার সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। সেই সিনেমা নিয়ে কিছু বলুন।
‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’ নামের সিনেমাটি বানিয়েছেন আহমেদ হাসান সানি। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন, এর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ের গল্প নিয়ে সিনেমা। আমাদের দেশের রাজনীতির হালচাল দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ফুটে উঠেছে রাজনীতি নিয়ে মানুষের ভাবনা। আমাদের দেশে অনেক রেস্টুরেন্ট বা আড্ডার স্থানে লেখা থাকে এখানে রাজনৈতিক আলাপ নিষিদ্ধ বা করা যাবে না। আমি মনে করি, এটা মিস কনসেপ্ট। রাজনৈতিক আলাপ প্রতিটি জায়গায় হওয়া উচিত। কারণ, আমরা কেউ রাজনীতির বাইরে নই। প্রতিটি মানুষ রাজনীতির অংশ। সেটা সচেতনভাবে হোক কিংবা অসচেতনভাবে। যারা সচেতন, তারা একটু দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সক্রিয় থাকে। কিন্তু যারা রাজনৈতিকভাবে অসচেতন বা কেয়ারলেস, তাদেরও একটা ভূমিকা থাকে।
এটা আহমেদ হাসান সানির প্রথম সিনেমা। নির্মাতা হিসেবে কেমন লাগল তাঁকে?
এর আগে আহমেদ হাসান সানির নির্দেশনায় বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। তবে নির্মাতা হিসেবে আগে থেকেই তাঁকে চিনি। উনি একজন আধুনিক নির্মাতা, তাঁর ভাবনাও আধুনিক। ছোটখাটো বিষয়েও সমান খেয়াল রাখেন তিনি। চিত্রনাট্য, অ্যাক্টিং, সেট—সব ব্যাপারেই তিনি খুঁতখুঁতে। এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি সিনেমাটি দেখার সময় দর্শক তাঁর যত্নের ছাপ দেখতে পাবেন। আমি বিশ্বাস করি, ওনার কাছ থেকে ভালো মানের আরও কাজ পাওয়া যাবে।
সম্প্রতি ছাড়পত্র পেয়েছে আপনার আরেক সিনেমা ‘যাপিত জীবন’। সেই সিনেমার গল্প কী নিয়ে?
এটি একটি পিরিয়ডিকাল সিনেমা। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গল্প। এই সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন, রোকেয়া প্রাচী, আশনা হাবিব ভাবনা প্রমুখ। পরিচালনা করেছেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব।
এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি এবং যাপিত জীবন সিনেমা দুটি ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে প্রদর্শিত হবে। কেমন অনুভূতি?
২০২০ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছর ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমার কোনো না কোনো সিনেমা প্রদর্শিত হয়। এটা আমার জন্য আনন্দের ও গর্বের। এ বছর দুটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে। শুনছি দুটি সিনেমাই ডিসেম্বরে মুক্তি পাবে। এটা নিয়ে আমার আপত্তি আছে। ভিন্ন সময়ে সিনেমা দুটি মুক্তি পেলে ভালো হতো।
সিনেমা মুক্তি নিয়ে এই আপত্তির কথা জানিয়েছেন নির্মাতাদের?
এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি নিয়ে নির্মাতার সঙ্গে আলাপ হয়েছে। ওনারা সিনেমার মুক্তি ও প্রমোশন নিয়ে তাঁদের পরিকল্পনার কথা আমাকে জানিয়েছেন। যাপিত জীবন নিয়ে আমি অফিশিয়ালি এখনো কিছু জানি না। তাই কথা হয়নি।
‘রবি ইন ঢাকা’ নামের সিনেমার শুটিং করছেন। এ সিনেমাটি নিয়ে বলুন।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই সিনেমার শুটিং শিডিউল আছে। এরপর একটা বিরতি নিয়ে শুরু হবে পরের লটের শুটিং। এই সিনেমার গল্পটিও সমকালীন। নতুন প্রজন্মের কথা আছে। আসলে আমরা যেই সময়েই বসবাস করি না কেন, দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। এই শহরে অনেক মানুষ দেখি যাদের দূর থেকে দেখলে মনে হয় সুখে আছে। কিন্তু আসলে তাদের ভেতরে অনেক কষ্ট। নানা ধরনের কষ্টের মাঝেও আমরা এই শহরে আনন্দ খুঁজে বেড়াই। এমন একটা গল্প নিয়েই রবি ইন ঢাকা। গল্পে মিস্ট্রি আছে, সাসপেন্সও আছে। পরিচালনা করছেন রাজীব সালেহীন।

বদরুদ্দীন উমর লেখক, গবেষক ও বামপন্থী রাজনীতিক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিপিই ডিগ্রি পান। দেশে ফিরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। গভর্নর মোনায়েম খানের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে ১৯৬৮ সালে
১৭ মে ২০২৫
নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান।
৬ ঘণ্টা আগে
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ।
১৩ দিন আগে
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
১৫ নভেম্বর ২০২৫
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। নিলয় বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি নিজের অসামান্য কৃতিত্বের নেপথ্যের গল্প জানিয়েছেন আজকের পত্রিকাকে। তার কথাগুলো শুনেছেন ইলিয়াস শান্ত।
ইলিয়াস শান্ত

গত ২৭ অক্টোবর আইইউটির ৩৭ তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আপনি এতে অংশ নিয়েছেন। আপনার বিভাগ ও ফলাফল সম্পর্কে বলুন।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে আমি গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছি। প্রথম সেমিস্টারে একটি কোর্সে এ+ পাইনি। তাই সেই সেমিস্টারে আমার জিপিএ ছিল ৩.৯৭। তবে এরপরের সাতটি সেমিস্টারেই আমি ধারাবাহিকভাবে ৪.০০ পেয়েছি।
দ্বিতীয় সেমিস্টারে ৪ পাওয়ার পর আমার সিজিপিএ দাঁড়ায় ৩.৯৮। তৃতীয় সেমিস্টারের পর হয় ৩.৯৯। চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ সেমিস্টারে ৪ ধরে রাখতে পারলেও সিজিপিএ তখনও ৩.৯৯ ছিল। শেষ পর্যন্ত সপ্তম সেমিস্টারে ৪ পাওয়ার পর সিজিপিএ অবশেষে ৪–এ পৌঁছায়। তখন সত্যিই আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। এরপর শেষ বা অষ্টম সেমিস্টারেও একই পারফরম্যান্স ধরে রাখার চেষ্টা করি। আলহামদুলিল্লাহ সেটাও সম্ভব হয়। ফলে আমি সিজিপিএ ৪ নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করতে পেরেছি।
এমন সাফল্যের কৃতিত্ব কাকে দিতে চান?
সবার আগে আমি আমার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ জানাচ্ছি। তারা সবসময় আমার পাশে থেকেছে। প্রতিটি মুহূর্তে আমাকে সাহস আর অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এরপর আমার শিক্ষকদের কথা, যাদের দিকনির্দেশনা ও আন্তরিক সহযোগিতা আমাকে প্রতিটি ধাপে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আর আমার বন্ধুদের কথাও বলতে হবে। এই চার বছরের যাত্রায় আমার বন্ধুরা সবসময় পাশে থেকেছে–কখনো সহায়তায়, কখনো বা মোটিভেশনে। সবার সম্মিলিত সহযোগিতা আর আমার প্রচেষ্টায় এ জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
আপনার বড় বোনের কথা শুনেছি। তাঁর অবদান কতটুকু?
হ্যাঁ, আমার দুজন বড় বোন আছেন। একজন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন। অন্যজন আইইউটির ছাত্রী ছিলেন। তিনি আইইউটির ১৭ তম ব্যাচের বিজনেস টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তিনি শুরু থেকেই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার একজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তিনি আমাকে পড়াশোনার প্রতি সিরিয়াস থাকতে উৎসাহ দিয়েছেন। বিশেষ করে তিনি আমাকে বোঝাতেন নিয়মিত উপস্থিতি বজায় রাখা, কুইজ ও মিডটার্মের মতো মূল্যায়নগুলো গুরুত্ব সহকারে দেওয়া কতটা জরুরি। এগুলোই আসলে একটি ভালো ফলের ভিত্তি তৈরি করেছে। তার দেওয়া পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা আমার পুরো চার বছরের যাত্রায় দারুণভাবে কাজে দিয়েছে।
স্বর্ণপদক পাওয়ার খবরে আপনার বাবা–মা কী বলেছিলেন?
তারা উভয়েই খুব খুশি হয়েছিলেন। তাঁদের মুখে আনন্দের হাসিটা দেখে মনে হয়েছিল, এই মুহূর্তের জন্যই হয়তো তারা এত বছর ধরে পরিশ্রম আর ত্যাগ স্বীকার করে এসেছেন। আমার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার। জীবনে তিনি সবসময় নিয়ম, অধ্যবসায় আর সততার মূল্য শিখিয়েছেন। আর মা একজন গৃহিণী। মা আমাদের পরিবারের মূল শক্তি। ছোটবেলা থেকেই তিনি আমাদেরকে শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারূপ করেছেন। সবসময় পাশে থেকেছেন, কখনো ক্লান্ত হননি।
এমন অসামান্য ফলাফল অর্জনে নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছিলেন, পড়ালেখার ধরন কেমন ছিল?
প্রথম থেকেই আমি জানতাম সিএসই এমন একটি বিষয়, যেখানে ধারাবাহিক পরিশ্রম ও মনোযোগ ছাড়া ভালো ফল করা সম্ভব নয়। যেহেতু ভর্তি হওয়ার আগে আমার কোডিং নিয়ে তেমন কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই আমি নিজের ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা শুরু করেছি। ইউটিউবে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে প্রোগ্রামিংয়ের বেসিকগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করে নিয়েছি। আর সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে ধীরে ধীরে নিজের দক্ষতা বাড়িয়েছি।
আমার পড়ালেখার ধরনটা ছিল বেশ দলভিত্তিক। আমি সবসময় বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ স্টাডি করতাম। এতে করে অনেক কঠিন বিষয় সহজে বোঝা যেত। আর কাউকে কোনো বিষয় বুঝিয়ে বলতে গিয়ে নিজের বোঝাটাও আরও মজবুত হতো। এই সহযোগিতামূলক পরিবেশটাই আসলে আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। এ ছাড়া আমি ক্লাসের উপস্থিতি, কুইজ ও মিডটার্ম পরীক্ষাগুলোতে বেশ গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ এগুলোই মূলত চূড়ান্ত ফলে বড় ভূমিকা রাখে। সিনিয়র ভাইদের তৈরি করা নোটগুলোও অনেক সময় কাজে দিয়েছে, বিশেষ করে প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে। সবশেষে, প্রতিটি প্রজেক্টও আমি সমান গুরুত্ব দিয়ে করতাম। যেন শুধু নম্বরের জন্য নয়, শেখার জন্যও কাজটা সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।
সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়ে আপনি এখন গ্র্যাজুয়েট। আপনি ওআইসি স্বর্ণপদক পেয়েছেন। অন্য শিক্ষার্থীরা কীভাবে প্রস্তুতি নিলে এমন ফল করতে পারতেন, তাদের প্রস্তুতির কোন কোন জায়গায় ঘাটতি ছিল বলে মনে হয়?
আসলে প্রত্যেকের পড়ার ধরনটা আলাদা হয়। এখানে যে ধরন একজনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর, সেটা অন্য কারও জন্য নাও হতে পারে। তাই একেবারে নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন যে, কে কীভাবে পড়লে এমন ফল করতে পারতেন। তবুও আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কয়েকটা জিনিস নিয়মিতভাবে মেনে চললে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। সবচেয়ে আগে, ক্লাসের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারপর কুইজ আর মিডটার্ম। অনেকে এগুলোকে হালকাভাবে নেন। আমি মনে করি ফলাফলে এগুলোই আসলে মূল ভিত্তি তৈরি করে দেয়। যদি আগে থেকেই কুইজ ও মিডটার্মে ভালো করা যায়, তাহলে ফাইনাল পরীক্ষার সময় চাপ অনেকটাই কমে যায়। আমার গ্রুপ স্টাডির কথা তো আগেই বলেছি। গ্রুপ স্টাডি শেখার পরিবেশটাকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে। কেউ নির্দিষ্ট কোনো বিষয় না বুঝলে অন্য সেটা কেউ বুঝিয়ে দিতে পারছে। এতে পারস্পরিকভাবে সবারই উপকার হয়।
আপনার শৈশব, মাধ্যমিক–উচ্চ মাধ্যমিক ও পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই।
আমাদের পারিবারিক শেকড় বরিশালে। তবে আমার শৈশবের একটা অংশ কেটেছে ফরিদপুরে। সেখানে আমি সানরাইজ স্কুলে পড়ালেখা করেছি। পরে পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসি। উত্তরায় আসার পর আমি ক্লাস ৩–৫ শ্রেণি পর্যন্ত মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে পড়েছি। এরপর ৬–৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে। পরবর্তীতে আমি আবার মাইলস্টোন কলেজে ভর্তি হই এবং সেখান থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করি। নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছি। এখানে আমার কলেজ জীবনের সুন্দর দুইটি বছর কেটেছে।
ছোটবেলায় আপনার কি হওয়ার স্বপ্ন ছিল?
ছোটবেলায় আকাশে প্লেন উড়তে দেখলেই মনে হতো, ‘ইশ! একদিন যদি আমিও এমন করে উড়তে পারতাম!’ তখন পাইলট হওয়ার স্বপ্নটাই ছিল সবচেয়ে বড়। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, আর বাস্তবতা একটু একটু করে বুঝতে শুরু করার পর সেই স্বপ্নটা বদলে গেছে। এটা অনেকের ক্ষেত্রেই হয়। এখন আমার স্বপ্ন একটু অন্যরকম।
পরবর্তী লক্ষ্য কী, কেমন জব অফার পাচ্ছেন?
এখন আমার মূল লক্ষ্য হলো আইইউটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করা। এজন্যই আমি নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করছি। যাতে ক্লাসে পড়ানো এবং গবেষণার কাজ–দুটোই ভালোভাবে করতে পারি। একইসঙ্গে গবেষণার মাধ্যমে নতুন কিছু আবিষ্কার করতে চাই। শেখা আর শেখানোর এই প্রক্রিয়াটার ভেতরেই আমি এখন সবচেয়ে বেশি আনন্দ খুঁজে পাই। দূরদৃষ্টি হিসেবে আমার আরও বড় লক্ষ্য হলো–ভবিষ্যতে বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা, বিশেষ করে পিএইচডি করা। আমি গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন বিষয় জানা ও শেখার সুযোগকে আরও প্রসারিত করতে চাই। আমার বিশ্বাস, এই প্রচেষ্টা আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজে দেবে।
আইইউটিতে ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগদানে আগ্রহীদের কোন কোন বিষয়গুলো বেশি বিবেচনায় নেওয়া হয়?
আমার জানা মতে, নির্দিষ্ট কিছু বিষয়কে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো: একাডেমিক রেজাল্ট, অর্থাৎ শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পূর্ববর্তী ফলাফল। এছাড়া গবেষণার অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
দেশের বাস্তবতায় সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির সুযোগ কেমন?
বর্তমান বাজারে সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের জন্য চাকরি সুযোগ খুবই প্রশস্ত। তবে এতে প্রতিযোগিতা রয়েছে। আমি বলবো, প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকলে চাকরি পাওয়া কঠিন কিছু নয়। আমার বন্ধুবান্ধবের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা তাদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার আগেই চাকরি পেয়ে গেছেন। এটা আইইউটির ঐতিহ্য। আইইউটি শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার আগেই চাকরির অফার পাওয়ার বেশ নজির আছে। এটা ভালো একাডেমিক পরিবেশ, যুগোপযোগী সিলেবাস এবং শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টার কারণে সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানি এন্ট্রি লেভেলের চাকরির জন্যেও আইইউটি গ্র্যাজুয়েটদের ভালো বেতন অফার করে থাকে।
উচ্চশিক্ষার জন্য আপনি আইইউটিকে কেন বেছে নিয়েছিলেন?
কলেজ লাইফ শুরুর আগে আমার স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়ার। তবে তখনো নির্দিষ্ট করে ভাবিনি কোন বিষয়ে পড়বো। এইচএসসির পর আইইউটিতে পরীক্ষা দিয়ে সিএসই বিভাগে চান্স পাই। এরপর বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায়ও সাফল্য আসে। সেখানে পেয়েছিলাম ইইই বিভাগ। কিন্তু ততদিন বুয়েটের ক্লাস শুরু করতে করতে আইইউটিতে আমার প্রথম সেমিস্টারের বেশিরভাগ সময় পার যায়। ওই সময়টায় আমি উপলব্ধি করি, কম্পিউটার সায়েন্সের প্রতি আমার গভীর ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। আমি এতে ভালোও করছি। আইইউটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো দীর্ঘ সেশনজট নেই। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডিগ্রি সম্পন্ন করা যায়। একাডেমিক জীবনটা অনেক বেশি সুসংগঠিত থাকে। সবমিলিয়ে আমি বুঝতে পারি, একটি বিষয়ের প্রতি ভালোবাসা এবং একটি অনুকূল একাডেমিক পরিবেশই সর্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই বুয়েটের ইইই–এর পরিবর্তে আইইউটির সিএসইতে স্থির হয়ে যাই।
স্নাতকের পুরো জার্নিতে পড়ালেখার পাশাপাশি আপনি আর কি কি করেছিলেন?
পড়ালেখার পাশাপাশি আমি বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছি। নতুন নতুন জায়গা ঘুরে দেখেছি। মাঝে মাঝে ফুটবল, ক্যারমের মতো খেলা খেলেছি। এছাড়া কম্পিউটারে গেমও খেলেছি। পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু সময় টিউশনি করেছি। যা নিজের ধারণাকে পরিষ্কার করতে এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহায়ক হয়েছে।
সিএসই নিয়ে পড়তে আসা নবীন শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনার কি বার্তা থাকবে?
নিজেকে শুধুমাত্র একাডেমিক সিলেবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। প্রথম থেকেই নিজের মধ্যে বাড়তি শেখার আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে হবে। কোড ফোর্স, হ্যাকার র্যাঙ্ক–এর মতো প্ল্যাটফর্মের কনটেস্টে নিয়মিত অংশ নিতে হবে। এ ছাড়া কম্পেটিটিভ প্রোগ্রামিংয়ে মনোযোগ দিলে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি যুক্তির গভীরতাও শাণিত হবে। ইউটিউবেও পছন্দের বিষয়গুলোর অসংখ্য টিউটোরিয়াল রয়েছে। সেগুলো কাজে লাগিয়ে শেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, চাকরির ক্ষেত্রে যে স্কিলগুলো সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে, তা অনেক সময় একাডেমিক পড়ালেখার চেয়ে কিছুটা আলাদা। একাডেমিক প্রোজেক্টগুলোও কখনই হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। এগুলো যতটা সম্ভব ভালোভাবে করতে হবে। কারণ ভবিষ্যতে সেগুলোই সিভিতে স্থান করবে এবং দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকার জন্যেও শুভকামনা রইলো।
গত ২৭ অক্টোবর আইইউটির ৩৭ তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আপনি এতে অংশ নিয়েছেন। আপনার বিভাগ ও ফলাফল সম্পর্কে বলুন।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে আমি গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছি। প্রথম সেমিস্টারে একটি কোর্সে এ+ পাইনি। তাই সেই সেমিস্টারে আমার জিপিএ ছিল ৩.৯৭। তবে এরপরের সাতটি সেমিস্টারেই আমি ধারাবাহিকভাবে ৪.০০ পেয়েছি।
দ্বিতীয় সেমিস্টারে ৪ পাওয়ার পর আমার সিজিপিএ দাঁড়ায় ৩.৯৮। তৃতীয় সেমিস্টারের পর হয় ৩.৯৯। চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ সেমিস্টারে ৪ ধরে রাখতে পারলেও সিজিপিএ তখনও ৩.৯৯ ছিল। শেষ পর্যন্ত সপ্তম সেমিস্টারে ৪ পাওয়ার পর সিজিপিএ অবশেষে ৪–এ পৌঁছায়। তখন সত্যিই আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। এরপর শেষ বা অষ্টম সেমিস্টারেও একই পারফরম্যান্স ধরে রাখার চেষ্টা করি। আলহামদুলিল্লাহ সেটাও সম্ভব হয়। ফলে আমি সিজিপিএ ৪ নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করতে পেরেছি।
এমন সাফল্যের কৃতিত্ব কাকে দিতে চান?
সবার আগে আমি আমার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ জানাচ্ছি। তারা সবসময় আমার পাশে থেকেছে। প্রতিটি মুহূর্তে আমাকে সাহস আর অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এরপর আমার শিক্ষকদের কথা, যাদের দিকনির্দেশনা ও আন্তরিক সহযোগিতা আমাকে প্রতিটি ধাপে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আর আমার বন্ধুদের কথাও বলতে হবে। এই চার বছরের যাত্রায় আমার বন্ধুরা সবসময় পাশে থেকেছে–কখনো সহায়তায়, কখনো বা মোটিভেশনে। সবার সম্মিলিত সহযোগিতা আর আমার প্রচেষ্টায় এ জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
আপনার বড় বোনের কথা শুনেছি। তাঁর অবদান কতটুকু?
হ্যাঁ, আমার দুজন বড় বোন আছেন। একজন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন। অন্যজন আইইউটির ছাত্রী ছিলেন। তিনি আইইউটির ১৭ তম ব্যাচের বিজনেস টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তিনি শুরু থেকেই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার একজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তিনি আমাকে পড়াশোনার প্রতি সিরিয়াস থাকতে উৎসাহ দিয়েছেন। বিশেষ করে তিনি আমাকে বোঝাতেন নিয়মিত উপস্থিতি বজায় রাখা, কুইজ ও মিডটার্মের মতো মূল্যায়নগুলো গুরুত্ব সহকারে দেওয়া কতটা জরুরি। এগুলোই আসলে একটি ভালো ফলের ভিত্তি তৈরি করেছে। তার দেওয়া পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা আমার পুরো চার বছরের যাত্রায় দারুণভাবে কাজে দিয়েছে।
স্বর্ণপদক পাওয়ার খবরে আপনার বাবা–মা কী বলেছিলেন?
তারা উভয়েই খুব খুশি হয়েছিলেন। তাঁদের মুখে আনন্দের হাসিটা দেখে মনে হয়েছিল, এই মুহূর্তের জন্যই হয়তো তারা এত বছর ধরে পরিশ্রম আর ত্যাগ স্বীকার করে এসেছেন। আমার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার। জীবনে তিনি সবসময় নিয়ম, অধ্যবসায় আর সততার মূল্য শিখিয়েছেন। আর মা একজন গৃহিণী। মা আমাদের পরিবারের মূল শক্তি। ছোটবেলা থেকেই তিনি আমাদেরকে শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারূপ করেছেন। সবসময় পাশে থেকেছেন, কখনো ক্লান্ত হননি।
এমন অসামান্য ফলাফল অর্জনে নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছিলেন, পড়ালেখার ধরন কেমন ছিল?
প্রথম থেকেই আমি জানতাম সিএসই এমন একটি বিষয়, যেখানে ধারাবাহিক পরিশ্রম ও মনোযোগ ছাড়া ভালো ফল করা সম্ভব নয়। যেহেতু ভর্তি হওয়ার আগে আমার কোডিং নিয়ে তেমন কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই আমি নিজের ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা শুরু করেছি। ইউটিউবে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে প্রোগ্রামিংয়ের বেসিকগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করে নিয়েছি। আর সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে ধীরে ধীরে নিজের দক্ষতা বাড়িয়েছি।
আমার পড়ালেখার ধরনটা ছিল বেশ দলভিত্তিক। আমি সবসময় বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ স্টাডি করতাম। এতে করে অনেক কঠিন বিষয় সহজে বোঝা যেত। আর কাউকে কোনো বিষয় বুঝিয়ে বলতে গিয়ে নিজের বোঝাটাও আরও মজবুত হতো। এই সহযোগিতামূলক পরিবেশটাই আসলে আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। এ ছাড়া আমি ক্লাসের উপস্থিতি, কুইজ ও মিডটার্ম পরীক্ষাগুলোতে বেশ গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ এগুলোই মূলত চূড়ান্ত ফলে বড় ভূমিকা রাখে। সিনিয়র ভাইদের তৈরি করা নোটগুলোও অনেক সময় কাজে দিয়েছে, বিশেষ করে প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে। সবশেষে, প্রতিটি প্রজেক্টও আমি সমান গুরুত্ব দিয়ে করতাম। যেন শুধু নম্বরের জন্য নয়, শেখার জন্যও কাজটা সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।
সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়ে আপনি এখন গ্র্যাজুয়েট। আপনি ওআইসি স্বর্ণপদক পেয়েছেন। অন্য শিক্ষার্থীরা কীভাবে প্রস্তুতি নিলে এমন ফল করতে পারতেন, তাদের প্রস্তুতির কোন কোন জায়গায় ঘাটতি ছিল বলে মনে হয়?
আসলে প্রত্যেকের পড়ার ধরনটা আলাদা হয়। এখানে যে ধরন একজনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর, সেটা অন্য কারও জন্য নাও হতে পারে। তাই একেবারে নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন যে, কে কীভাবে পড়লে এমন ফল করতে পারতেন। তবুও আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কয়েকটা জিনিস নিয়মিতভাবে মেনে চললে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। সবচেয়ে আগে, ক্লাসের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারপর কুইজ আর মিডটার্ম। অনেকে এগুলোকে হালকাভাবে নেন। আমি মনে করি ফলাফলে এগুলোই আসলে মূল ভিত্তি তৈরি করে দেয়। যদি আগে থেকেই কুইজ ও মিডটার্মে ভালো করা যায়, তাহলে ফাইনাল পরীক্ষার সময় চাপ অনেকটাই কমে যায়। আমার গ্রুপ স্টাডির কথা তো আগেই বলেছি। গ্রুপ স্টাডি শেখার পরিবেশটাকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে। কেউ নির্দিষ্ট কোনো বিষয় না বুঝলে অন্য সেটা কেউ বুঝিয়ে দিতে পারছে। এতে পারস্পরিকভাবে সবারই উপকার হয়।
আপনার শৈশব, মাধ্যমিক–উচ্চ মাধ্যমিক ও পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই।
আমাদের পারিবারিক শেকড় বরিশালে। তবে আমার শৈশবের একটা অংশ কেটেছে ফরিদপুরে। সেখানে আমি সানরাইজ স্কুলে পড়ালেখা করেছি। পরে পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসি। উত্তরায় আসার পর আমি ক্লাস ৩–৫ শ্রেণি পর্যন্ত মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে পড়েছি। এরপর ৬–৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে। পরবর্তীতে আমি আবার মাইলস্টোন কলেজে ভর্তি হই এবং সেখান থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করি। নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছি। এখানে আমার কলেজ জীবনের সুন্দর দুইটি বছর কেটেছে।
ছোটবেলায় আপনার কি হওয়ার স্বপ্ন ছিল?
ছোটবেলায় আকাশে প্লেন উড়তে দেখলেই মনে হতো, ‘ইশ! একদিন যদি আমিও এমন করে উড়তে পারতাম!’ তখন পাইলট হওয়ার স্বপ্নটাই ছিল সবচেয়ে বড়। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, আর বাস্তবতা একটু একটু করে বুঝতে শুরু করার পর সেই স্বপ্নটা বদলে গেছে। এটা অনেকের ক্ষেত্রেই হয়। এখন আমার স্বপ্ন একটু অন্যরকম।
পরবর্তী লক্ষ্য কী, কেমন জব অফার পাচ্ছেন?
এখন আমার মূল লক্ষ্য হলো আইইউটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করা। এজন্যই আমি নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করছি। যাতে ক্লাসে পড়ানো এবং গবেষণার কাজ–দুটোই ভালোভাবে করতে পারি। একইসঙ্গে গবেষণার মাধ্যমে নতুন কিছু আবিষ্কার করতে চাই। শেখা আর শেখানোর এই প্রক্রিয়াটার ভেতরেই আমি এখন সবচেয়ে বেশি আনন্দ খুঁজে পাই। দূরদৃষ্টি হিসেবে আমার আরও বড় লক্ষ্য হলো–ভবিষ্যতে বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা, বিশেষ করে পিএইচডি করা। আমি গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন বিষয় জানা ও শেখার সুযোগকে আরও প্রসারিত করতে চাই। আমার বিশ্বাস, এই প্রচেষ্টা আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজে দেবে।
আইইউটিতে ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগদানে আগ্রহীদের কোন কোন বিষয়গুলো বেশি বিবেচনায় নেওয়া হয়?
আমার জানা মতে, নির্দিষ্ট কিছু বিষয়কে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো: একাডেমিক রেজাল্ট, অর্থাৎ শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পূর্ববর্তী ফলাফল। এছাড়া গবেষণার অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
দেশের বাস্তবতায় সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির সুযোগ কেমন?
বর্তমান বাজারে সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের জন্য চাকরি সুযোগ খুবই প্রশস্ত। তবে এতে প্রতিযোগিতা রয়েছে। আমি বলবো, প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকলে চাকরি পাওয়া কঠিন কিছু নয়। আমার বন্ধুবান্ধবের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা তাদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার আগেই চাকরি পেয়ে গেছেন। এটা আইইউটির ঐতিহ্য। আইইউটি শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার আগেই চাকরির অফার পাওয়ার বেশ নজির আছে। এটা ভালো একাডেমিক পরিবেশ, যুগোপযোগী সিলেবাস এবং শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টার কারণে সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানি এন্ট্রি লেভেলের চাকরির জন্যেও আইইউটি গ্র্যাজুয়েটদের ভালো বেতন অফার করে থাকে।
উচ্চশিক্ষার জন্য আপনি আইইউটিকে কেন বেছে নিয়েছিলেন?
কলেজ লাইফ শুরুর আগে আমার স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়ার। তবে তখনো নির্দিষ্ট করে ভাবিনি কোন বিষয়ে পড়বো। এইচএসসির পর আইইউটিতে পরীক্ষা দিয়ে সিএসই বিভাগে চান্স পাই। এরপর বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায়ও সাফল্য আসে। সেখানে পেয়েছিলাম ইইই বিভাগ। কিন্তু ততদিন বুয়েটের ক্লাস শুরু করতে করতে আইইউটিতে আমার প্রথম সেমিস্টারের বেশিরভাগ সময় পার যায়। ওই সময়টায় আমি উপলব্ধি করি, কম্পিউটার সায়েন্সের প্রতি আমার গভীর ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। আমি এতে ভালোও করছি। আইইউটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো দীর্ঘ সেশনজট নেই। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডিগ্রি সম্পন্ন করা যায়। একাডেমিক জীবনটা অনেক বেশি সুসংগঠিত থাকে। সবমিলিয়ে আমি বুঝতে পারি, একটি বিষয়ের প্রতি ভালোবাসা এবং একটি অনুকূল একাডেমিক পরিবেশই সর্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই বুয়েটের ইইই–এর পরিবর্তে আইইউটির সিএসইতে স্থির হয়ে যাই।
স্নাতকের পুরো জার্নিতে পড়ালেখার পাশাপাশি আপনি আর কি কি করেছিলেন?
পড়ালেখার পাশাপাশি আমি বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছি। নতুন নতুন জায়গা ঘুরে দেখেছি। মাঝে মাঝে ফুটবল, ক্যারমের মতো খেলা খেলেছি। এছাড়া কম্পিউটারে গেমও খেলেছি। পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু সময় টিউশনি করেছি। যা নিজের ধারণাকে পরিষ্কার করতে এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহায়ক হয়েছে।
সিএসই নিয়ে পড়তে আসা নবীন শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনার কি বার্তা থাকবে?
নিজেকে শুধুমাত্র একাডেমিক সিলেবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। প্রথম থেকেই নিজের মধ্যে বাড়তি শেখার আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে হবে। কোড ফোর্স, হ্যাকার র্যাঙ্ক–এর মতো প্ল্যাটফর্মের কনটেস্টে নিয়মিত অংশ নিতে হবে। এ ছাড়া কম্পেটিটিভ প্রোগ্রামিংয়ে মনোযোগ দিলে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি যুক্তির গভীরতাও শাণিত হবে। ইউটিউবেও পছন্দের বিষয়গুলোর অসংখ্য টিউটোরিয়াল রয়েছে। সেগুলো কাজে লাগিয়ে শেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, চাকরির ক্ষেত্রে যে স্কিলগুলো সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে, তা অনেক সময় একাডেমিক পড়ালেখার চেয়ে কিছুটা আলাদা। একাডেমিক প্রোজেক্টগুলোও কখনই হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। এগুলো যতটা সম্ভব ভালোভাবে করতে হবে। কারণ ভবিষ্যতে সেগুলোই সিভিতে স্থান করবে এবং দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকার জন্যেও শুভকামনা রইলো।

বদরুদ্দীন উমর লেখক, গবেষক ও বামপন্থী রাজনীতিক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিপিই ডিগ্রি পান। দেশে ফিরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। গভর্নর মোনায়েম খানের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে ১৯৬৮ সালে
১৭ মে ২০২৫
নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান।
৬ ঘণ্টা আগে
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ।
১৩ দিন আগে
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’।
০১ ডিসেম্বর ২০২৫