Ajker Patrika

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী কে এই ‘মুসলিম’ মামদানি

অনলাইন ডেস্ক
জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত
জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদের প্রাথমিক নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন জোহরান মামদানি। মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক দলের পদপ্রার্থী হিসেবে জোহরান মামদানির কাছে পরাজয় মেনে নিয়েছেন সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুমো। এ ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এক বড় চমক হিসেবে দেখা হচ্ছে। ৩৩ বছর বয়সী রাজ্যের অ্যাসেম্বলি সদস্য জোহরান মামদানি যদি জয়ী হন, তবে তিনিই হবেন শহরের প্রথম মুসলিম মেয়র।

৯৫ শতাংশ ব্যালট গণনা শেষে মামদানি ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে ৪৩ শতাংশ বনাম ৩৬ শতাংশ ভোটে পরাজিত করেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে তাঁর তৃণমূলভিত্তিক আন্দোলন ও স্পষ্ট বামঘেঁষা নীতি।

ব্যালট গণনা শেষে মামদানি তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ রাতে আমরা ইতিহাস গড়েছি। আমি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে আপনার ডেমোক্রেটিক প্রার্থী।’ নিউইয়র্কের র‍্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিং সিস্টেমে চূড়ান্ত ফলাফলে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে, কিন্তু মামদানির বড় ব্যবধানের জয় ও রাজনৈতিক গতি দৃশ্যত নির্ধারিত বলেই মনে হচ্ছে।

উগান্ডার কামপালায় জন্ম নেওয়া মামদানি মাত্র সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে নিউইয়র্কে আসেন। ব্রঙ্কস সায়েন্স হাই স্কুলে পড়াশোনা করে পরে বোডোয়েন কলেজ থেকে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক সম্পন্ন করেন। সেখানে তিনি ‘স্টুডেন্ট ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন’ নামের একটি সংগঠনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

তিনি নিজেকে ‘অর্গানাইজার’ বা সংগঠক হিসেবে তুলে ধরেন—চলচ্চিত্র, র‍্যাপ ও লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত থেকেও সব সময় যুক্ত ছিলেন সামাজিক সংগঠনে। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে মামদানি কুইন্সে নির্বাসিত ব্যক্তিদের জন্য কাজ করতেন হাউজিং কাউন্সেলর হিসেবে।

তাঁর স্ত্রী রামা দুওয়াজি একজন সিরীয় বংশোদ্ভূত শিল্পী। তাঁরা একে অপরকে খুঁজে পান ডেটিং অ্যাপ হিন্জের (Hinge) মাধ্যমে।

মামদানির মা বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মিরা নায়ার। তিনি ‘সালাম বোম্বে’, ‘নেমসেক’, ‘মনসুন ওয়েডিং’-এর মতো জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের নির্মাতা। জোহরানের বাবা কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি। তাঁর বিখ্যাত বই ‘গুড মুসলিম, ব্যাড মুসলিম’। জোহরান মামদানি ২০২০ সালে কুইন্সের একটি জেলার প্রতিনিধিত্ব করে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

মামদানি তাঁর মুসলিম পরিচয়কে সাহসের সঙ্গে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘পাবলিকলি মুসলিম হিসেবে দাঁড়ানো মানে হচ্ছে কিছু নিরাপত্তা হারানো... কিন্তু এই ভয়কে আমরা জয় করব।’

তিনি নিউইয়র্কের জীবনযাত্রার খরচ, দারিদ্র্য ও খাদ্যসংকট নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন। তিনি একটি ভিডিওতে রোজা ভেঙেছেন সাবওয়ে ট্রেনে বসে, আবার আটলান্টিকে ঝাঁপ দিয়ে দিয়েছেন ভাড়া ফ্রিজ করার প্রতীকী বার্তা হিসেবে।

তাঁর মূল নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো হলো—মামদানির নির্বাচনী ইশতেহারে রয়েছে—নগরীতে বাস বিনা খরচে করা, সর্বজনীন শিশু পরিচর্যা, ভর্তুকিপ্রাপ্ত বাসাবাড়ির ভাড়া স্থগিত রাখা, নগর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিজস্ব গ্রোসারি দোকান চালু করা—যার খরচ আসবে ধনীদের ওপর নতুন কর বসিয়ে।

তবে নিউইয়র্ক টাইমস তাঁর এই প্রস্তাবগুলোকে অবাস্তব ও সমস্যাজনক হিসেবে অভিহিত করেছে।

মামদানিকে অভিজ্ঞতাহীন ও অতিরিক্ত বামঘেঁষা বলে সমালোচনা করেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কুমো, যিনি বিল ক্লিনটনসহ কেন্দ্রঘেঁষা প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন পেয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষক ট্রিপ ইয়াং বলেন, ‘মামদানির প্রচারণা একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এমন গ্রাসরুটস উত্তেজনা, হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী, লক্ষাধিক দাতাদের নিয়ে নিউইয়র্ক সিটির স্থানীয় নির্বাচন সচরাচর দেখা যায় না।’

মামদানির প্যালেস্টাইনের প্রতি সমর্থন ও ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান তাঁকে অনেক ডেমোক্রেটিক নেতার চেয়েও এগিয়ে রেখেছে। তিনি নিউইয়র্কে ইসরায়েলি বসতিগুলোর সঙ্গে যুক্ত কিছু দাতব্য সংস্থার করছাড় বাতিলের বিলও উত্থাপন করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘আমি এমন কোনো রাষ্ট্রকে সমর্থন করি না, যেখানে নাগরিকত্বের স্তর নির্ধারণ হয় ধর্মের ভিত্তিতে। আমার মতে, সমানাধিকার প্রতিটি দেশের মূলনীতি হওয়া উচিত।’ তবে তিনি ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকার স্বীকার করে বলেছেন, ‘প্রতিটি রাষ্ট্রের মতোই ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকার আছে—তবে অবশ্যই তা আন্তর্জাতিক আইন মেনে হতে হবে।’

মামদানির উত্থান শুধু নিউইয়র্কের রাজনীতিতে নয়, বরং জাতীয় পর্যায়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির ভবিষ্যৎ গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিচ্ছে। অভিবাসী, মুসলিম, দক্ষিণ এশীয়—এই তিন পরিচয়ের সংমিশ্রণে গড়া মামদানি এমন এক মুখ, যা ভবিষ্যতের মার্কিন রাজনীতির বহুত্ববাদ ও বাস্তবতা তুলে ধরছে। তিনি যদি জয়ী হন, তবে নিউইয়র্ক সিটি শুধু প্রথম মুসলিম মেয়র নয়, বরং নতুন এক প্রগতিশীল রাজনীতির পথিককেও পাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত