Ajker Patrika

চার্লি কার্ক হত্যা: গোপন নোটে স্বীকারোক্তি দিয়ে গেছেন রবিনসন, দাবি প্রসিকিউশনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চার্লি কার্ক। ছবি: সংগৃহীত
চার্লি কার্ক। ছবি: সংগৃহীত

ডানপন্থী রাজনৈতিক কর্মী ও বিতর্কিত বক্তা চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ড ঘিরে নতুন তথ্য সামনে এনেছে প্রসিকিউশন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিযুক্ত টাইলার রবিনসন (২২) নাকি গোপনে নিজের রুমমেটকে স্বীকারোক্তি লিখে দিয়ে গিয়েছিলেন। প্রসিকিউশনের মতে, হত্যার প্রমাণ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এটি।

গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ইউটাহ কাউন্টির অ্যাটর্নি জেফ্রি গ্রে জানান, অভিযুক্তের কিবোর্ডের নিচে একটি নোট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘কার্ককে সরানোর সুযোগ পেয়েছিলাম, আর আমি তা-ই করেছি।’ গ্রে আরও জানান, রবিনসনের রুমমেট যিনি একই সঙ্গে তাঁর রোম্যান্টিক সঙ্গীও, তার কাছেও বেশ কয়েকটি বার্তা পাঠানো হয়েছিল। ওইসব বার্তায় হত্যার দায় স্বীকার করে তিনি লিখেছেন, ‘আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না। কিছু ঘৃণা আলোচনার মাধ্যমে শেষ করা যায় না।’

গত বুধবার ইউটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক জনসভায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন চার্লি কার্ক। হঠাৎ গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন কার্ক। নিকটবর্তী একটি ভবন থেকে ছোড়া হয়েছিল গুলিটি।

এ ঘটনায় রবিনসনের বিরুদ্ধে হত্যার পরিকল্পনা, অবৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার, বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত করা, সাক্ষীদের প্রভাবিত করা ও শিশুদের উপস্থিতিতে সহিংস অপরাধ ঘটানোর মতো সাতটি অভিযোগ গঠন করেছে প্রসিকিউশন। প্রসিকিউটর গ্রে জানিয়েছেন, তাঁরা রবিনসনের মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করবেন। তবে তিনি একই সঙ্গে জোর দিয়ে বলেন, আদালতে দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত আইনের চোখে নির্দোষ।

অভিযুক্তের রুমমেট, যিনি একজন ট্রান্সজেন্ডার নারী, পুলিশি তদন্তে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত বার্তালাপে দেখা যায়, রবিনসন রুমমেটকে প্রথমে বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম এই গোপন কথা মৃত্যু পর্যন্ত নিজের মধ্যে রাখতে। কিন্তু তোমাকে জড়িয়ে ফেলেছি বলে দুঃখিত।’ এতে রুমমেট হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি তো আসলেই এটা করোনি, তাই তো?’ জবাবে রবিনসন নাকি সোজাসুজি উত্তর দেন, ‘আমি-ই করেছি। দুঃখিত।’

প্রসিকিউটরের দাবি, এ বার্তাগুলো মুছে ফেলতে রুমমেটকে নির্দেশ দিয়েছিলেন অভিযুক্ত। এ কারণে সাক্ষীকে প্রভাবিত করার অভিযোগও আনা হয়েছে।

রবিনসনের পরিবারও শুরু থেকেই ছেলের ওপর সন্দেহ করছিল। মা এক ভিডিওতে ছেলের মতো চেহারা দেখে স্বামীকে জানান। এরপর বাবা ফোন করে তাঁকে প্রশ্ন করলে রবিনসন প্রথমে অস্বীকার করেন, দাবি করেন তিনি অসুস্থ হয়ে বাসায় ছিলেন। কিন্তু পরে যখন চাপ বাড়তে থাকে, তখন আত্মহত্যার ইঙ্গিত দেন।

গ্রে জানান, শেষ পর্যন্ত পারিবারিক বন্ধু সাবেক ডেপুটি শেরিফের সহায়তায় বাবা-মা ছেলেকে আত্মসমর্পণে রাজি করান। হামলার প্রায় ৩৩ ঘণ্টা পর গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

প্রসিকিউশন বলছে, গুলিবর্ষণে ব্যবহৃত যে রাইফেলটি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, তার ট্রিগারে রবিনসনের ডিএনএ পাওয়া গেছে। অভিযুক্তের বাবা দাবি করেছেন, অস্ত্রটি একসময় তাঁর বাবার ছিল। হত্যাকাণ্ডের পর তিনি ছেলের কাছে রাইফেলের ছবি চাইলে কোনো উত্তর দেননি।

চার্লি কার্ক যুক্তরাষ্ট্রে ডানপন্থী রাজনীতির এক আলোচিত মুখ। হত্যার সময় তিনি নাকি ট্রান্সজেন্ডারদের দ্বারা সংঘটিত ম্যাস শ্যুটিং বা বন্দুক সহিংসতার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। প্রসিকিউটরেরা বলছেন, এটি কাকতালীয় নাকি পূর্বপরিকল্পিত, সেটি আদালতে বিচার হবে। রবিনসনের মা জানিয়েছেন, ছেলে সম্প্রতি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এ ছাড়া, রবিনসন সমকামী ও ট্রান্সজেন্ডার অধিকারের সমর্থক ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি একটি ট্রান্সজেন্ডার নারীর সঙ্গে সম্পর্কেও ছিলেন।

অ্যাটর্নি গ্রে বলেছেন, ‘এ মামলার প্রতিটি বিষয় শেষ পর্যন্ত জুরির সামনে উপস্থাপন করা হবে। আমাদের কাছে স্বীকারোক্তির নোট, ফোন বার্তা, ডিএনএ প্রমাণসহ শক্তিশালী উপাদান রয়েছে। তবে অভিযুক্ত দোষী কি না, সেই সিদ্ধান্ত আদালতই নেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত