Ajker Patrika

গভর্নর কুককে সরানোর চেষ্টায় ট্রাম্প, ফেডের সঙ্গে জড়ালেন নজিরবিহীন দ্বন্দ্বে

রয়টার্স
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ২৩: ৪৬
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও লিসা কুক। ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও লিসা কুক। ছবি: সংগৃহীত

গভর্নর লিসা কুককে বরখাস্ত করার উদ্যোগ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বকে নজিরবিহীন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তাঁর এ পদক্ষেপ দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের সূচনা করতে পারে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা ও মুদ্রানীতিতে প্রেসিডেন্টের সংশ্লিষ্টতার দীর্ঘদিনের অনুসৃত নিয়মকে নাড়িয়ে দিতে পারে।

ট্রাম্পের এ পদক্ষেপ যে বৈশ্বিক আর্থিক বাজারকে বিশৃঙ্খলায় ঠেলে দেবে, তা অনেকে আগে থেকেই আশঙ্কা করেছিলেন। তবে বন্ধক জালিয়াতির অভিযোগ তুলে গতকাল সোমবার রাতে ট্রাম্প অবিলম্বে কুককে অপসারণের ঘোষণা দিলেও আজ মঙ্গলবার বাজার তুলনামূলকভাবে শান্তই ছিল। ওয়াল স্ট্রিটের প্রধান সূচকগুলো সামান্য নিম্নমুখী হয়, বন্ড বাজারে নিকট ভবিষ্যতে ফেডের সুদের হার কমার প্রত্যাশা দেখা যায়। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আত্মবিশ্বাস কিছুটা কমে যায়। তবে সম্পদ বাজারে আতঙ্কের কোনো সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায়নি।

কুককে পাঠানো এক চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, আপনাকে ‘অপসারণ করার যথেষ্ট কারণ’ রয়েছে। কারণ, ২০২১ সালের নথিতে মিশিগান ও জর্জিয়ার দুটি বাড়ির জন্য বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছিলেন, দুটি বাড়িই তাঁর প্রধান আবাসন হিসেবে তালিকাভুক্ত। ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডে প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান নারী হচ্ছেন লিসা কুক।

কয়েক ঘণ্টা পর আইনজীবী অ্যাবি লওয়েলের মাধ্যমে সাংবাদিকদের পাঠানো বিবৃতিতে ট্রাম্পের উদ্দেশে কুক বলেন, ‘আমাকে অপসারণ করার তাঁর আইনগত ক্ষমতা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকার অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে আমি আমার দায়িত্ব পালন করে যাব।’ লওয়েল জানান, ট্রাম্পের দাবির ‘যথাযথ’ প্রক্রিয়া ও আইনি ভিত্তি নেই। বেআইনি পদক্ষেপ ঠেকাতে তাঁরা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবেন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী কর্মকর্তাকে উচ্চপদ থেকে অপসারণ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছেন লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের প্রধান ও ন্যাশনাল লেবার রিলেশনস বোর্ডের চেয়ারপারসন। এ ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসন তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ এনেছে—যেমন নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিটিয়া জেমস, যিনি কৃষ্ণাঙ্গ নারী। গত বছর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অর্ধ-বিলিয়ন ডলারের দেওয়ানি জালিয়াতির রায় তিনিই নিশ্চিত করেছিলেন। গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক আপিল কোর্ট সে জরিমানা বাতিল করে দিলেও মামলা এখনো বহাল রেখেছে।

গত সপ্তাহে ফেডারেল হাউজিং ফাইন্যান্স এজেন্সির পরিচালক উইলিয়াম পুল্টে প্রথম কুকের বন্ধক ঋণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং বিষয়টি তদন্তের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল পামেলা বন্ডিকে পাঠান। ফেড গভর্নরদের মেয়াদ সাধারণত প্রেসিডেন্টের মেয়াদের চেয়ে অনেক দীর্ঘ হয়; কুকের মেয়াদ ২০৩৮ সাল পর্যন্ত। তবে ফেডারেল রিজার্ভ আইনে বলা আছে, কোনো গভর্নরকে ‘যথাযথ কারণ’ দেখিয়ে অপসারণ করা যেতে পারে। কিন্তু এ ধারা কখনোই ব্যবহার হয়নি। বিশেষ করে, ১৯৭০-এর দশক থেকে প্রেসিডেন্টরা সাধারণত ফেডের বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি মেনে চলেছেন, যাতে মার্কিন মুদ্রানীতির ওপর আস্থা বজায় থাকে।

আইনবিদ ও ইতিহাসবিদদের মতে, এ পদক্ষেপ ঘিরে আইনি চ্যালেঞ্জে নির্বাহী ক্ষমতা, ফেডের বিশেষ আংশিক-বেসরকারি কাঠামো, ইতিহাস ও কুকের কাজ আদৌ অপসারণের ‘যথাযথ কারণ’ হিসেবে গণ্য হয় কি না—সবগুলো একসঙ্গে জড়িয়ে যাবে।

ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার ফেড ইতিহাসবিদ পিটার কন্টি-ব্রাউন বলেন, কুকের বন্ধক লেনদেন তাঁর ফেডে যোগদানের আগেই হয়েছিল এবং সিনেটে নিশ্চিত হওয়ার সময় তা প্রকাশ্য নথিতে ছিল। তাঁর ভাষায়, ‘এমন কর্মকর্তারা আমাদের প্রেসিডেন্ট ও সিনেটের মাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে আসেন। এর মানে, ব্যক্তিগত জীবনে তাঁদের করা সবকিছুই আগে যাচাই হয়ে গেছে। তাই পরে আগের ঘটনা ধরে অপসারণের ভিত্তি বানানো আইনত ‘‘যথাযথ কারণ’’ হতে পারে না।’

চিঠিতে কুকের বিরুদ্ধ ‘আর্থিক বিষয়ে প্রতারণাপূর্ণ ও অপরাধমূলক আচরণের’ অভিযোগ তোলেন এবং তাঁর সততার প্রতি আস্থা না থাকার কথা জানান ট্রাম্প। তিনি লেখেন, ‘অন্ততপক্ষে আর্থিক লেনদেনে এ ধরনের অবহেলা আপনার যোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।’ তিনি দাবি করেন, মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ ও ১৯১৩ সালের ফেডারেল রিজার্ভ আইনের অধীনে তিনি কুককে বরখাস্ত করার ক্ষমতা রাখেন।

সুদের হার না কমানোর জন্য ট্রাম্প বারবার ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের সমালোচনা করেছেন। যদিও মেয়াদ শেষের নয় মাস বাকি থাকায় তাঁকে বরখাস্তের হুমকি আপাতত দিচ্ছেন না তিনি। কুকের বিদায় হলে ফেডের সাত সদস্যের বোর্ডে নিজের চতুর্থ নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন ট্রাম্প। এর মধ্যে দুজন বর্তমান সদস্য রয়েছেন আর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান স্টিফেন মিরানকে একটি শূন্য আসনের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।

২০২১ সালে কুক যখন বন্ধক ঋণ নিয়েছিলেন, তখন তিনি একাডেমিক ছিলেন। ২০২৪ সালের আনুষ্ঠানিক আর্থিক প্রকাশ ফরমে তাঁর তিনটি বন্ধক ঋণের তথ্য রয়েছে, যার মধ্যে দুটি ব্যক্তিগত বাসভবন হিসেবে দেখানো। প্রধান আবাসনের বিপরীতে নেওয়া ঋণে সাধারণত কম সুদ ধার্য হয়, যেখানে বিনিয়োগ সম্পত্তির ঋণে বেশি সুদ নেওয়া হয়।

মার্কিন সরকারে বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচিকে টার্গেট করার ট্রাম্প প্রশাসনের বৃহত্তর প্রচেষ্টার মধ্যে কুকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলা হলো। ইতিমধ্যে কয়েকজন বিশিষ্ট নারী ও সংখ্যালঘু কর্মকর্তা পদ ছেড়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত